Ajker Patrika

পদ্মা রেলসেতু প্রকল্প

৩৮ হাজার কোটির প্রকল্পে এক রেকে চলবে দুই ট্রেন

সৌগত বসু, ঢাকা 
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫: ০০
Thumbnail image

ঢাকা-ভাঙ্গা অংশ উদ্বোধনের ১৪ মাস পর আজ মঙ্গলবার পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হচ্ছে। প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের নতুন এই রেলপথে আজ ঢাকা থেকে খুলনা, যশোর ও বেনাপোল রুটে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। যাত্রীসেবা বাড়াতে দুটি রুটে ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ এবং ‘রূপসী বাংলা’ নামের দুটি আন্তনগর ট্রেনও যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু নাম ভিন্ন হলেও ইঞ্জিন-কোচের সংকটে ট্রেন দুটি চলবে একটি রেক দিয়ে।

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন গত রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আজ সকালে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। এ সময় তিনি খুলনা থেকে ছেড়ে আসা নতুন আন্তনগর ট্রেন জাহানাবাদ এক্সপ্রেসকে বরণ করবেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবেন।

গত বছরের অক্টোবরে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশ উদ্বোধন করা হয়। এরপর এই অংশ দিয়ে খুলনা, যশোরের বেনাপোল ও রাজশাহীতে মাত্র চারটি ট্রেন চলছে।

রেলওয়ের সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে রেলপথে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনার দূরত্ব প্রায় ৪১২ কিলোমিটার। কারণ, ট্রেনগুলো পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর-কুষ্টিয়া-দর্শনা হয়ে খুলনায় যায়। কিন্তু পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প পুরো চালু হওয়ার পর ঢাকা-খুলনা পথের দূরত্ব দাঁড়িয়েছে ২৩৭ কিলোমিটার। বর্তমান পথে ঢাকা থেকে বেনাপোলের দূরত্ব ৩৫৬ কিলোমিটার। নতুন রেলপথে এই দূরত্ব কমে হচ্ছে ১৭২ কিলোমিটার। নতুন রেলপথে ঢাকা থেকে খুলনায় ট্রেনে যেতে লাগবে পৌনে চার ঘণ্টা, যেখানে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে এই যাত্রায় সময় লাগে সাড়ে ৯ ঘণ্টা। বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে বেনাপোলে যেতে ট্রেনে সময় লাগে সাড়ে সাত ঘণ্টা। নতুন রেলপথে যেতে লাগবে সাড়ে তিন ঘণ্টা। দূরত্ব ও যাত্রার সময় কমলেও ইঞ্জিন-কোচের স্বল্পতার কারণে আপাতত দুই জোড়ার বেশি নতুন ট্রেন চালানোর সক্ষমতা রেলওয়ের নেই।

প্রকল্প সূত্র বলছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৬ সালের ৩ মে একনেক সভায় পদ্মা সেতুর ওপর রেললাইন স্থাপনে ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন হয়।

প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। ২০১৮ সালের ২২ মে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা এবং মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন করা হয়। করোনার কারণে কাজের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হলে আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরে প্রকল্পের ব্যয় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা সংকোচন করা হয়।

আজ নতুন রেলপথে যে দুটি নতুন আন্তনগর ট্রেনের উদ্বোধন হবে, সেগুলোর সব টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়ে গেছে। জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনা-ঢাকা পথে এবং এটিই রূপসী বাংলা নামে ঢাকা-বেনাপোল পথে চলবে। একই নামে বেনাপোল থেকে ফিরে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস নামে খুলনায় যাবে। এই নামেই খুলনা থেকে ঢাকায় আসবে। অর্থাৎ একটি রেকে দুটি ট্রেন চলবে। দুটি ট্রেনই সপ্তাহে ছয় দিন চলবে। বন্ধ থাকবে প্রতি সোমবার।

রেলওয়ে সূত্র বলেছে, রেলওয়ের মহাপরিচালক গতকাল সোমবার খুলনায় গেছেন। জাহানাবাদ এক্সপ্রেস উদ্বোধনের জন্য ওই ট্রেনে করে তিনি আজ সকালে ঢাকায় ফিরবেন। জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনা থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছাবে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। ঢাকা থেকে খুলনার উদ্দেশে ছাড়বে রাত ৮টায় এবং পৌঁছাবে রাত ১১টা ৪০ মিনিটে। রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে বেনাপোলে পৌঁছাবে বেলা ২টা ৩০ মিনিটে। ফিরতি যাত্রায় এটি বেনাপোল ছাড়বে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে এবং ঢাকায় পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে।

বর্তমানে ঢাকা-খুলনা পথে সুন্দরবন এক্সপ্রেস এবং চিত্রা এক্সপ্রেস চলে। সুন্দরবন এক্সপ্রেস রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া হয়ে খুলনায় পৌঁছাতে সময় নেয় প্রায় আট ঘণ্টা। বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে চলা চিত্রা এক্সপ্রেসের সময় লাগে সাড়ে ৯ ঘণ্টা। বেনাপোল এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে বেনাপোলে পৌঁছাতে সময় নিচ্ছে প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত বছর পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত নতুন রেলপথ চালুর পর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেস এই পথে চলাচল শুরু করে। তবে এখন নতুন রেলপথে ট্রেন দুটি চালানোর পরিকল্পনা কুষ্টিয়ার মানুষের বিরোধিতার মুখে পড়েছে। ট্রেনের পথ পরিবর্তন করলে তাঁরা আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছেন। এ কারণে রেল কর্তৃপক্ষ সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেসকে নতুন রেলপথে নিচ্ছে না। ফলে ঢাকা থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেসে খুলনায় যেতে সাড়ে সাত ঘণ্টা লাগলেও নতুন রেলপথে জাহানাবাদ এক্সপ্রেসে লাগবে মাত্র পৌনে চার ঘণ্টা। একই চিত্র হবে বেনাপোল ও রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রে।

রেলের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, আগামী বছরের মে বা জুনে হয়তো নতুন কোচ ও ইঞ্জিন আসবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখন যেহেতু সময় কম লাগছে, তাই এক রেকেই দুই নামে ট্রেন চলবে। জুনে কুষ্টিয়া রুটে একটি ট্রেন চালু করে সুন্দরবন ও বেনাপোলকে নতুন রুটে নিয়ে আসা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত