নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে বাধ্য হয়ে মামলা করা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এই অভিযোগ করেছেন সাঈদীর বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী ও সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মাহবুবুল আলম হাওলাদার।
এ সময় মো. মাহবুবুল আলম হাওলাদারের সঙ্গে ছিলেন সাক্ষী আলতাফ হাওলাদার, সাক্ষী মাহাতাব উদ্দিন হাওলাদার ও সাক্ষী মধুসূদন ঘরামীর নাতি সুমন্ত মিস্ত্রি।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়াল, বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, তৎকালীন আইনপ্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির, বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম, তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন, সাবেক প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত, প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, প্রসিকিউটর সাইদুর রহমান, তৎকালীন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক সানাউল হকসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে মাহবুবুল আলম হাওলাদার বলেন, ‘উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে আমার সঙ্গে তৎকালীন স্থানীয় এমপি এ কে এম আবদুল আউয়ালের ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। ২০০৯ সালের ৩১ আগস্ট ডেকে নিয়ে তিনি আমাকে সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেন। আমি বললাম, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারব না। তখন আউয়াল উত্তেজিত হয়ে বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ। তবুও আমি বলি, সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করতে পারব না। এই কথা শুনে আউয়াল সাহেব চেয়ার থেকে উঠে এসে আমাকে চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। ব্যথায় আমি চিৎকার করলে বাইরে থেকে হঠাৎ করে তানভীর মুজিব অভি, মিজানুর রহমান তালুকদারসহ কয়েকজন দল বেঁধে ঢুকে আমাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে এবং তারা বলতে থাকে, ‘‘তোকে মামলা করতেই হবে। না হয় তোকে মেরেই ফেলব।’’ আসামিদের অত্যাচারের একপর্যায়ে আমি কিছু সময়ের জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরলে আমাকে টেনেহিঁচড়ে আউয়াল তাঁর গাড়িতে করে নিয়ে যান পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন পিপি আলাউদ্দিনের চেম্বারে।’
মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ‘আলাউদ্দিন আগে থেকেই মামলার কাগজ প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। তিনি আমাকে কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। আমি স্বাক্ষর করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘‘সাঈদীর বিরুদ্ধে একটা মামলা করতে হবে, এটা সেই মামলার কাগজ। তুমি সই করো, বাকিটা আমি দেখব।’ আমি রাজী না হলে তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং মামলার কাগজে স্বাক্ষর না করলে হত্যার হুমকি দেন। একপর্যায়ে আলাউদ্দিন আমার গলা চেপে ধরেন। সেখানে আরও অনেকে উপস্তিত ছিল। তারা আমার মাথায় অস্ত্র ঠেকায়। মামলার কাগজে স্বাক্ষর না করলে গুলি করার হুমকি দেয়। আমি মৃত্যুভয় পেয়ে বাধ্য হয়ে মামলার কাগজে স্বাক্ষর করি এবং কোর্টে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আলাউদ্দিন, অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট দিলিপ কুমার, অ্যাডভোকেট শহিদুল হক পান্না ও অ্যাডভোকেট তরুণ ভট্টাচার্যের শেখানোমতে জবানবন্দি দিই। মামলা করার পর তাঁরাই আমাকে তাঁদের শেখানোমতে মামলার বিষয়টি নিয়ে মিডিয়াতে সাক্ষাৎকার দিতে বাধ্য করেন।’
মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ‘২০১০ সালে এ কে এম আবদুল আউয়াল ও তাঁর ভাই হাবিবুর রহমান মালেকের নির্দেশে কয়েকজন লোক গিয়ে আমাকে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিতে বলেন। না গেলে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয়। সারা রাত নির্ঘুম কাটানোর পর ২০১০ সালের ২২ জুলাই আমাকে ঢাকায় নেওয়ার জন্য দুই মাইক্রোবাস ভর্তি করে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের লোকেরা আসে। তখন আমি জানের ভয়ে ঢাকায় আসতে বাধ্য হই। ঢাকায় নিযে এসে তারা আমাকে ধানমন্ডির একটি বাসায় রেখে কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। পরে জানতে পেরেছি, ওই বাসা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার অফিস আর উক্ত কাগজটি সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মামলার কাগজ।’
সাঈদীর বিষয়ে মাহবুবুল আলম হাওলাদার বলেন, ‘একদিন আমাকে রাজলক্ষ্মী স্কুলে নিয়ে যায়। সেখানে মানিক পসারী, সুখরঞ্জন বালি, রুহুল আমিন নবীন, মধুসূদন ঘরামী, সুলতান, মফিজ পসারী, বাবুল পণ্ডিত, জলিল শেখ, গৌরাঙ্গসহ আরও অনেককে আমি দেখতে পাই। তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আমাদের কাছে পিরোজপুর শহর ও ইন্দুরকানী থানায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালের সব ঘটনা জানতে চান। আমরা সব খুলে বলি। কিন্তু আমরা সেখানে কেউই সাঈদীর বিরুদ্ধে কিছু বলিনি। তিনি রাজাকার ছিলেন না। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আমাদের বলেন, ‘তোমরা পিরোজপুর শহর ও ইন্দুরকানীর যেসব ঘটনা বলেছ, সেসব ঘটনায় অন্য সব রাজাকারের নামের সঙ্গে সাঈদীর নামও বলতে হবে। তাইলে তোমাদের আর বেশি শেখানো লাগবে না। ঘটনা তো ঠিকই ঘটেছে, খালি ওই ঘটনায় সাঈদীর নামটা ঢুকিয়ে দিবা।’ আমরা একসঙ্গে সবাই বলে উঠি, ‘এটা আমরা পারব না।’ তখন হেলাল উদ্দিন পুলিশের মোটা লাঠি দিয়ে আমাদের মারতে শুরু করেন।’
সুখরঞ্জন বালির বিষয়ে মাহবুবুল আলম হাওলাদার বলেন, ‘১৯৭১ সালে পাকসেনারা সুখরঞ্জন বালির ভাই বিশেষশ্বর বালিকে (বিশাবালি) হত্যা করে। হেলাল উদ্দিন সুখরঞ্জন বালিকে তার ভাই বিশাবালি হত্যার জন্য সাঈদী হুজুরকে দায়ী করে জবানবন্দি দিতে বলেন। কিন্তু সুখরঞ্জন বালি রাজি না হওয়ায় তাকে হেলাল উদ্দিন ও উপস্থিত অন্যরা চরম অত্যাচার শুরু করেন। তারপরও সে রাজি না হওয়ায় তাকে পাশের রুমে নিয়ে যান। আমরা এই রুমে বসে সুখরঞ্জন বালির ডাকচিৎকার শুনতে পাই। আমাদের ওপর করা নির্যাতন সইতে না পেরে এবং মেরে ফেলার হুমকিতে ভয় পেয়ে আমরা তাঁদের শেখানোমতে মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারদের করা সব অপকর্মের ঘটনায় সাঈদী সাহেবের নাম বলতে রাজি হই। মেরে ফেলার হমকি দিয়ে জোরপূর্বক ঢাকার গোলাপবাগে অবস্থিত একটি সেফ হাউসে আটকে রেখে আমাদের সাজানো মিথ্যা জবানবন্দি মুখস্ত করানো হয়।’
মধুসূদন ঘরামীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাক্ষী মধুসূদন ঘরামীকে ১৯৭১ সালে তাঁর স্ত্রী শেফালী ঘরামীকে সাঈদী ধর্ষণ করেছেন—এ মর্মে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বলা হলে সে রাজি হয়নি এবং সে সেফ হাউস থেকে পালিয়ে যায়। পরে তাকে আবার ধরে নিয়ে হেলাল উদ্দিন, রানা দাশ গুপ্ত, সাইদুর রহমান, সানাউল হক, মোখলেছুর রহমান রাতভর অমানবিক নির্যাতন করেন। এরপরও সে সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় তৎকালীন পিরোজপুরের এসপির নেতৃত্বে পুলিশের আরও কিছু লোকজন মধু ঘরামীর নাতি সুমনকে পিরোজপুর থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর মধু ঘরামীর সামনে সুমনকে উপস্থিত করে তার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। অতঃপর মধু ঘরামী তাঁর নাতির জীবন বাঁচাতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়।’
ট্রাইব্যুনালের প্রসঙ্গে মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমাদের একদিন ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর সেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির ও ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শাহিনুর ইসলাম আসেন। গোলাম আরিফ টিপু (বর্তমানে মৃত) ও সানাউল হক তখন নিজামুল হক নাসিমের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলে তিনি আমাদের বলেন যে, ‘তোমাদের যেভাবে শেখায়ে পড়ায়ে আনছে, সেভাবে সাক্ষী দেবা, তাইলে পুরস্কার পাবা। তুমি ভুল সাক্ষী দিলেও আমি ঠিক কইরা নিব। কিন্তু সাঈদীর নাম না কইলে তোমাদের রক্ষা নাই। শেখানো সাক্ষ্য দেবা, তাইলে পুরস্কার পাবা। তোমরা খালি নাম কইবা, সাঈদীকে ফাঁসি দেওয়ার দায়িত্ব আমার। তোমাগো কোনো ভয় নাই।’
মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ‘এ টি এম ফজলে কবির আমাদের একইভাবে শেখানো সাক্ষ্য না দিলে হত্যার হুমকি দেন। হত্যার হুমকি দিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য আদায় করে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাটি ছিল মূলত সম্পূর্ণ সাজানো, মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে বাধ্য হয়ে মামলা করা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এই অভিযোগ করেছেন সাঈদীর বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী ও সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মাহবুবুল আলম হাওলাদার।
এ সময় মো. মাহবুবুল আলম হাওলাদারের সঙ্গে ছিলেন সাক্ষী আলতাফ হাওলাদার, সাক্ষী মাহাতাব উদ্দিন হাওলাদার ও সাক্ষী মধুসূদন ঘরামীর নাতি সুমন্ত মিস্ত্রি।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়াল, বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, তৎকালীন আইনপ্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির, বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম, তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন, সাবেক প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত, প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, প্রসিকিউটর সাইদুর রহমান, তৎকালীন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক সানাউল হকসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে মাহবুবুল আলম হাওলাদার বলেন, ‘উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে আমার সঙ্গে তৎকালীন স্থানীয় এমপি এ কে এম আবদুল আউয়ালের ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। ২০০৯ সালের ৩১ আগস্ট ডেকে নিয়ে তিনি আমাকে সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেন। আমি বললাম, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারব না। তখন আউয়াল উত্তেজিত হয়ে বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ। তবুও আমি বলি, সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করতে পারব না। এই কথা শুনে আউয়াল সাহেব চেয়ার থেকে উঠে এসে আমাকে চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। ব্যথায় আমি চিৎকার করলে বাইরে থেকে হঠাৎ করে তানভীর মুজিব অভি, মিজানুর রহমান তালুকদারসহ কয়েকজন দল বেঁধে ঢুকে আমাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে এবং তারা বলতে থাকে, ‘‘তোকে মামলা করতেই হবে। না হয় তোকে মেরেই ফেলব।’’ আসামিদের অত্যাচারের একপর্যায়ে আমি কিছু সময়ের জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরলে আমাকে টেনেহিঁচড়ে আউয়াল তাঁর গাড়িতে করে নিয়ে যান পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন পিপি আলাউদ্দিনের চেম্বারে।’
মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ‘আলাউদ্দিন আগে থেকেই মামলার কাগজ প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। তিনি আমাকে কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। আমি স্বাক্ষর করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘‘সাঈদীর বিরুদ্ধে একটা মামলা করতে হবে, এটা সেই মামলার কাগজ। তুমি সই করো, বাকিটা আমি দেখব।’ আমি রাজী না হলে তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং মামলার কাগজে স্বাক্ষর না করলে হত্যার হুমকি দেন। একপর্যায়ে আলাউদ্দিন আমার গলা চেপে ধরেন। সেখানে আরও অনেকে উপস্তিত ছিল। তারা আমার মাথায় অস্ত্র ঠেকায়। মামলার কাগজে স্বাক্ষর না করলে গুলি করার হুমকি দেয়। আমি মৃত্যুভয় পেয়ে বাধ্য হয়ে মামলার কাগজে স্বাক্ষর করি এবং কোর্টে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আলাউদ্দিন, অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট দিলিপ কুমার, অ্যাডভোকেট শহিদুল হক পান্না ও অ্যাডভোকেট তরুণ ভট্টাচার্যের শেখানোমতে জবানবন্দি দিই। মামলা করার পর তাঁরাই আমাকে তাঁদের শেখানোমতে মামলার বিষয়টি নিয়ে মিডিয়াতে সাক্ষাৎকার দিতে বাধ্য করেন।’
মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ‘২০১০ সালে এ কে এম আবদুল আউয়াল ও তাঁর ভাই হাবিবুর রহমান মালেকের নির্দেশে কয়েকজন লোক গিয়ে আমাকে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিতে বলেন। না গেলে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয়। সারা রাত নির্ঘুম কাটানোর পর ২০১০ সালের ২২ জুলাই আমাকে ঢাকায় নেওয়ার জন্য দুই মাইক্রোবাস ভর্তি করে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের লোকেরা আসে। তখন আমি জানের ভয়ে ঢাকায় আসতে বাধ্য হই। ঢাকায় নিযে এসে তারা আমাকে ধানমন্ডির একটি বাসায় রেখে কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। পরে জানতে পেরেছি, ওই বাসা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার অফিস আর উক্ত কাগজটি সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মামলার কাগজ।’
সাঈদীর বিষয়ে মাহবুবুল আলম হাওলাদার বলেন, ‘একদিন আমাকে রাজলক্ষ্মী স্কুলে নিয়ে যায়। সেখানে মানিক পসারী, সুখরঞ্জন বালি, রুহুল আমিন নবীন, মধুসূদন ঘরামী, সুলতান, মফিজ পসারী, বাবুল পণ্ডিত, জলিল শেখ, গৌরাঙ্গসহ আরও অনেককে আমি দেখতে পাই। তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আমাদের কাছে পিরোজপুর শহর ও ইন্দুরকানী থানায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালের সব ঘটনা জানতে চান। আমরা সব খুলে বলি। কিন্তু আমরা সেখানে কেউই সাঈদীর বিরুদ্ধে কিছু বলিনি। তিনি রাজাকার ছিলেন না। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আমাদের বলেন, ‘তোমরা পিরোজপুর শহর ও ইন্দুরকানীর যেসব ঘটনা বলেছ, সেসব ঘটনায় অন্য সব রাজাকারের নামের সঙ্গে সাঈদীর নামও বলতে হবে। তাইলে তোমাদের আর বেশি শেখানো লাগবে না। ঘটনা তো ঠিকই ঘটেছে, খালি ওই ঘটনায় সাঈদীর নামটা ঢুকিয়ে দিবা।’ আমরা একসঙ্গে সবাই বলে উঠি, ‘এটা আমরা পারব না।’ তখন হেলাল উদ্দিন পুলিশের মোটা লাঠি দিয়ে আমাদের মারতে শুরু করেন।’
সুখরঞ্জন বালির বিষয়ে মাহবুবুল আলম হাওলাদার বলেন, ‘১৯৭১ সালে পাকসেনারা সুখরঞ্জন বালির ভাই বিশেষশ্বর বালিকে (বিশাবালি) হত্যা করে। হেলাল উদ্দিন সুখরঞ্জন বালিকে তার ভাই বিশাবালি হত্যার জন্য সাঈদী হুজুরকে দায়ী করে জবানবন্দি দিতে বলেন। কিন্তু সুখরঞ্জন বালি রাজি না হওয়ায় তাকে হেলাল উদ্দিন ও উপস্থিত অন্যরা চরম অত্যাচার শুরু করেন। তারপরও সে রাজি না হওয়ায় তাকে পাশের রুমে নিয়ে যান। আমরা এই রুমে বসে সুখরঞ্জন বালির ডাকচিৎকার শুনতে পাই। আমাদের ওপর করা নির্যাতন সইতে না পেরে এবং মেরে ফেলার হুমকিতে ভয় পেয়ে আমরা তাঁদের শেখানোমতে মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারদের করা সব অপকর্মের ঘটনায় সাঈদী সাহেবের নাম বলতে রাজি হই। মেরে ফেলার হমকি দিয়ে জোরপূর্বক ঢাকার গোলাপবাগে অবস্থিত একটি সেফ হাউসে আটকে রেখে আমাদের সাজানো মিথ্যা জবানবন্দি মুখস্ত করানো হয়।’
মধুসূদন ঘরামীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাক্ষী মধুসূদন ঘরামীকে ১৯৭১ সালে তাঁর স্ত্রী শেফালী ঘরামীকে সাঈদী ধর্ষণ করেছেন—এ মর্মে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বলা হলে সে রাজি হয়নি এবং সে সেফ হাউস থেকে পালিয়ে যায়। পরে তাকে আবার ধরে নিয়ে হেলাল উদ্দিন, রানা দাশ গুপ্ত, সাইদুর রহমান, সানাউল হক, মোখলেছুর রহমান রাতভর অমানবিক নির্যাতন করেন। এরপরও সে সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় তৎকালীন পিরোজপুরের এসপির নেতৃত্বে পুলিশের আরও কিছু লোকজন মধু ঘরামীর নাতি সুমনকে পিরোজপুর থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর মধু ঘরামীর সামনে সুমনকে উপস্থিত করে তার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। অতঃপর মধু ঘরামী তাঁর নাতির জীবন বাঁচাতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়।’
ট্রাইব্যুনালের প্রসঙ্গে মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমাদের একদিন ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর সেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির ও ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শাহিনুর ইসলাম আসেন। গোলাম আরিফ টিপু (বর্তমানে মৃত) ও সানাউল হক তখন নিজামুল হক নাসিমের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলে তিনি আমাদের বলেন যে, ‘তোমাদের যেভাবে শেখায়ে পড়ায়ে আনছে, সেভাবে সাক্ষী দেবা, তাইলে পুরস্কার পাবা। তুমি ভুল সাক্ষী দিলেও আমি ঠিক কইরা নিব। কিন্তু সাঈদীর নাম না কইলে তোমাদের রক্ষা নাই। শেখানো সাক্ষ্য দেবা, তাইলে পুরস্কার পাবা। তোমরা খালি নাম কইবা, সাঈদীকে ফাঁসি দেওয়ার দায়িত্ব আমার। তোমাগো কোনো ভয় নাই।’
মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ‘এ টি এম ফজলে কবির আমাদের একইভাবে শেখানো সাক্ষ্য না দিলে হত্যার হুমকি দেন। হত্যার হুমকি দিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য আদায় করে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাটি ছিল মূলত সম্পূর্ণ সাজানো, মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
চিকিৎসক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স আগের মতো সাধারণ প্রার্থীদের থেকে দুই বছর বেশি (৩৪ বছর) নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে বিভিন্ন করপোরেশন ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে পঞ্চম ও ষষ্ঠ গ্রেডসহ বিশেষায়িত কিছু পদে সরাসরি নিয়োগের বয়সসীমাও আগের মতো...
৯ ঘণ্টা আগেনেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সদস্যদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো, নূর আলম এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
১১ ঘণ্টা আগেনেপালের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার। সেখানে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক জানিয়ে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছে।
১২ ঘণ্টা আগেনেপালে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাজনিত কারণে ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট আগামীকাল বুধবার বেলা ২টা পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সংস্থাটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগে