আজকের পত্রিকা ডেস্ক

সংবিধান সংস্কার
বর্তমান বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। সেটি পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রাখার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সেই সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
গতকাল বুধবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এতে সাতটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে একগুচ্ছ সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়গুলো হলো: ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, প্রধানমন্ত্রী পদের একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাস, অন্তর্বর্তী সরকারকাঠামোর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সুনিশ্চিতকরণ এবং মৌলিক অধিকারের আওতা সম্প্রসারণ, সাংবিধানিক সুরক্ষা ও বলবৎযোগ্যতা নিশ্চিতকরণ।
সংবিধান সংস্কারের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল সুস্পষ্ট। কার্যকর গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার সুনিশ্চিতকরণ এবং জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা। সেদিক থেকে বিবেচনা করে সংবিধানে যে ধারা ও বিষয়গুলোর সংস্কার করা দরকার, তা বলেছি। আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের যে জন-আকাঙ্ক্ষা, তার প্রতিফলন হিসেবে রাষ্ট্রের পাঁচটি মূলনীতির সুপারিশ করেছি। সেগুলো হচ্ছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র।’
কমিশন রাষ্ট্র পরিচালনার বিদ্যমান মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এবং এ সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া সংবিধানের প্রযোজ্য সব ক্ষেত্রে ‘প্রজাতন্ত্র’-এর পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ এবং ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলো ব্যবহারের সুপারিশ করেছে। তবে ইংরেজি সংস্করণে ‘Republic’ এবং ‘Peoples Republic of Bangladesh’ শব্দগুলো থাকবে। ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি...’ কমিশন এই বিধান বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে। সংবিধানের বর্তমান অনুচ্ছেদ ৬(২) সংশোধন করে ‘বাংলাদেশের নাগরিকগণ “বাংলাদেশি” বলে পরিচিত হবেন’ হিসেবে প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করেছে কমিশন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশকে যেভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বলা হয়, তার মধ্যে প্রজাতন্ত্রের কথার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছি। আমরা বলেছি, বাংলাদেশ পরিচিত হওয়া উচিত জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে।’
সংস্কার কমিশন একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে নিম্নকক্ষ জাতীয় সংসদ এবং উচ্চকক্ষ সিনেট নামে পরিচিত হবে। উভয় কক্ষের মেয়াদ হবে চার বছর। নিম্নকক্ষ গঠিত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সরাসরি নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে। ৪০০ আসন নিয়ে নিম্নকক্ষ গঠিত হবে। এর মধ্যে ১০০টি থাকবে নারী আসন। অন্যদিকে উচ্চকক্ষ মোট ১০৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রীয় কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনয়ন এবং রাষ্ট্রীয় অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করার জন্য একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশ করেছে। এই কাউন্সিল হবে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। আর এই কাউন্সিলের সদস্য হবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার, উচ্চকক্ষের স্পিকার, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, বিরোধী দল মনোনীত নিম্নকক্ষের ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দল মনোনীত উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতার প্রতিনিধিত্বকারী সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের উভয় কক্ষের সদস্যরা ব্যতীত, আইনসভার উভয় কক্ষের বাকি সকল সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে তাঁদের মধ্য থেকে মনোনীত ১ জন সদস্য।
সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সুপারিশ করেছে। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হবে চার বছর। রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ দুবারের বেশি অধিষ্ঠিত থাকবেন না। রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাবে। নিম্নকক্ষ থেকে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
একই ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হওয়ার বিধানের সুপারিশ করে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।
সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদনের পর গণভোটের মাধ্যমে করার সুপারিশ করা হয়। আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের পুনরুদ্ধার বা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বলেছি।
বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারকে সুগম ও মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হলে বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। সুপ্রিম কোর্টের একক চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে দেশের সকল বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বিভাগের মর্যাদাসম্পন্ন একটি স্থায়ী আসন প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছি।

অংশীজনদের প্রায় সবাই শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জোর দিয়েছেন উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছি। জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে সমন্বয় কাউন্সিল গঠনের কথা বলেছি। মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণের কথা বলেছি। সেটা সাংবিধানিক সুরক্ষা ও বলবৎ হয়, তা নিশ্চিতের জন্য সমন্বিত একক সনদের কথা বলেছি।
এ ছাড়া সাংবিধানিকভাবে চার বছর মেয়াদি মানবাধিকার, নির্বাচন, সরকারি কর্ম কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেয় কমিশন। জরুরি অবস্থা জারির জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের সুপারিশে রাষ্ট্রপতিকে ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে যাতে নাগরিক অধিকার রদ বা স্থগিত এবং আদালতের যাওয়ার অধিকার বন্ধ বা স্থগিত করা যাবে না বলে প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। এই ক্ষেত্রে বর্তমান সংবিধানের ১৪১খ ও গ অনুচ্ছেদ বাতিলের সুপারিশ করেছে কমিশন।
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, এইগুলো একটা খসড়া প্রস্তাবনা হয়েছে। তাঁরা যেটা মনে করছেন যে সংবিধানের এই জায়গায় পরিবর্তন আসা দরকার। এখন এটা নিয়ে আলোচনা হবে, চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এগুলো গ্রহণ করবে কি না।
দ্বিকক্ষ সংসদের প্রস্তাবটি নতুন উল্লেখ করে শাহদীন মালিক বলেন, এগুলো অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ঠিক আছে, তারা আলোচনা সূত্রপাতের জন্য একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এখন এটা নিয়ে আন্দোলনে যারা জড়িত, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে আলোচনা শুরু হলে তারপর এটার সুরাহা হবে।
নির্বাচন সংস্কার: ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনরায় নির্বাচন
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে ১৫০টির মতো সুপারিশ করেছে কমিশন। এর মধ্যে আছে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনরায় নির্বাচন হবে। ‘না ভোট’-এর ব্যবস্থা রাখা এবং না ভোট বিজয়ী হলে নির্বাচন বাতিল। এই ভোটের প্রার্থীরা পরের ধাপে প্রার্থী হতে পারবেন না।
এমন সব সুপারিশ করে গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে গেছে। সেটিকে ঠিক করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। নির্বাচনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় যা করা দরকার, সেটাই করার চেষ্টা করেছি। একই সঙ্গে সব অংশীজনের দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভোটারদের ভোট দেওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার প্রস্তাব দিয়েছি।’
বদিউল আলম আরও বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনে যারা নির্বাচনব্যবস্থাকে নির্বাসনে নিয়েছে, শুধু কর্মকর্তা নয়, আমাদের কমিশনের সদস্যের বিষয়ে তদন্ত করা দরকার। বিশেষত ২০১৮ সালে মধ্যরাতে যে অভূতপূর্ব কাণ্ড ঘটেছে, সে ব্যাপারে একটি তদন্ত করে তাদের বিচারের আওতায় আনা গুরুত্বপূর্ণ।’
কমিশনের সুপারিশের মধ্যে বড়দাগে আছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা ও দুবারের বেশি কেউ যেন প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন, সেই প্রস্তাব। তবে দুবার প্রধানমন্ত্রী হলে পরে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন। এ ছাড়া একই ব্যক্তি একই সঙ্গে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা যাতে না হতে পারেন, সেই প্রস্তাবও দিয়েছে কমিশন।
সরাসরি নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত যেসব বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেছে কমিশন, তার মধ্যে আছে—অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা। প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতায় ঋণ-বিলখেলাপিদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা। প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে তিন বছর আগে অবসর গ্রহণ-সংক্রান্ত আরপিওর বিধান বাতিল করা। গুরুতর মানবাধিকার (বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অমানবিক নির্যাতন, সাংবাদিক/মানবাধিকারকর্মীর ওপর হামলা) এবং গুরুতর দুর্নীতি, অর্থ পাচারের অভিযোগে গুম কমিশন বা দুর্নীতি দমন কমিশন বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত হলে তাঁদের সংবিধানের ৬৬(২)(ছ) অনুচ্ছেদের অধীনে একটি বিশেষ আইন প্রণয়ন করে সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য করা।
এ ছাড়া নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিধান বাতিল করা; নির্বাচনের সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করা।
সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ১০০ আসন নিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টির সুপারিশ করেছে কমিশন। সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের হারের ভিত্তিতে (সংখ্যানুপাতিকভাবে) আসন বণ্টন করার কথা বলেছে কমিশন।
উচ্চকক্ষের নির্বাচনের বিষয়ে কমিশনের মত, নিম্নকক্ষে দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে তাদের জন্য উচ্চকক্ষে ৫০ শতাংশ আসন বরাদ্দ। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ আসন নির্দলীয় ভিত্তিতে নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, মানবসেবা প্রদানকারী, শ্রমজীবীদের প্রতিনিধি, নারী উন্নয়নকর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে সংখ্যানুপাতিক হারে পূরণ করা। তবে উচ্চকক্ষে সব মিলিয়ে নারীদের জন্য কমপক্ষে ৩০ শতাংশ আসন নিশ্চিত করতে হবে। উচ্চকক্ষের সদস্যদের বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক নির্ধারণ করার কথা বলেছে কমিশন।
সংসদের নিম্নকক্ষের আসন ১০০ বাড়িয়ে ৪০০ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে নারীর জন্য নির্ধারিত রাখতে হবে ১০০ আসন। এই ১০০ আসন নির্ধারণ করা যেতে পারে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে।
এ ছাড়া একটি স্থায়ী ‘স্থানীয় সরকার কমিশন’ গঠন করা, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করার জন্য আইন সংশোধন করা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০২৩ জরুরি ভিত্তিতে বাতিল করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
পুলিশ সংস্কার: প্রাণহানি কমাতে পুলিশ বল প্রয়োগ করবে ৫ স্তরে
বেআইনি সমাবেশ ও শোভাযাত্রা ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে পাঁচ ধাপে বলপ্রয়োগের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কমিশন উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে। কমিশন একটি নিরপেক্ষ পুলিশ কমিশন গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল বুধবার জমা দেওয়া পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে পুলিশ বাহিনী নিয়ে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন জমা দেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন। প্রতিবেদনে থানায় নারী আসামির জন্য ২৪ ঘণ্টা নারী পুলিশ ডেস্ক রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের জন্য ২২টি আইনের সংশোধন ও পরিমার্জনের প্রস্তাব করেছে কমিশন।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় সফর রাজ হোসেন বলেন, ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি পুলিশকে তিন হাজারের বেশি আইন নিয়ে কাজ করতে হয়। সব আইন খুঁটিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। তবে এ ২২টি আইনের সংশোধন, পরিমার্জন বা কোনো ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে হবে।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ভিড় বা জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কিছু নিয়মকানুন আছে। এ ক্ষেত্রে ইউরোপের মডেল অনুসরণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। বেআইনি সমাবেশ ও শোভাযাত্রা ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে পাঁচ স্তরে বলপ্রয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঝুঁকি এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে।
গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমাতে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান, নির্বাচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতো পুলিশ সংস্কার কমিশনও গঠন করে। গতকাল ছিল কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার দিন।
কমিশনের প্রতিবেদনে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সফর রাজ হোসেন বলেন, দুটি ক্ষেত্রেই হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের কিছু নির্দেশনা আছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে হয়তো জনসাধারণের কষ্ট লাঘব হতো। সরকারের রিভিউ আবেদনের কারণে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাঁরা এই আবেদন প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছেন।
প্রতিটি থানায় নারী আসামির জন্য পুলিশের নারী উপপরিদর্শক, সহকারী উপপরিদর্শক ও কনস্টেবলকে দিয়ে ২৪ ঘণ্টার জন্য ডেস্ক করার সুপারিশ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। দীর্ঘ সময় লাগলেও এই সুপারিশ বাস্তবায়নযোগ্য বলে মনে করে কমিশন।
চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। তবে চাকরিপ্রার্থী দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব-সংক্রান্ত কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তা ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হতে হবে। এটিও হতে হবে এক মাসের মধ্যে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্তভার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দিতে জোরালো সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে সংস্কার কমিশন নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করেছে। পুলিশে নিয়োগ-পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা করা, পুলিশে আলাদা মেডিকেল কোর ও টেকনিক্যাল কোর করারও সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে থানায় জিডি নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে। কোনোভাবেই জিডি প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। প্রতিবেদনে ফৌজদারি মামলার তদন্তে একটি বিশেষায়িত দল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
দুদক সংস্কার: দুদককে ‘স্বাধীন ও কার্যকর’ করতে ৪৭ সুপারিশ
ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থে সুবিধা আদায়ে ব্যবহৃত আইন বাতিল এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ‘স্বাধীন’ ও ‘সাংবিধানিক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়াসহ সংস্থাটির সংস্কারে মোট ৪৭টি সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন। গতকাল বুধবার দুপুরে সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তাদের সুপারিশ-সংবলিত প্রতিবেদন হস্তান্তর করে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনতে দুই দফায় দুদকসহ ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। দুদক-সংক্রান্ত কমিশনটি গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের একটি। দীর্ঘদিন দুর্নীতির ওপর নজরদারি করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের দায়িত্বে থাকা ড. ইফতেখারুজ্জামানকে এর প্রধান করা হয়।
কমিশন দুদককে একটি কার্যকর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে এবং প্রতিষ্ঠানটির আমূল সংস্কারে সুপারিশগুলো করেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, আইন পরিবর্তনসহ ১০টি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। সংস্কার কমিশনের বক্তব্য হচ্ছে, দুর্নীতি প্রতিরোধ দুদকের একার কাজ নয়; দুর্নীতি নির্মূলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি।
সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও আইনি সংস্কার, দুর্নীতি কমিশনের মর্যাদা ও গঠন; অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, অনুসন্ধান, তদন্ত ও বিচার; দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম এই কয়েকটি উপশিরোনামের অধীনে ৪৭টি সুপারিশ তুলে ধরেছে।
প্রতিবেদনে দুদকের ওপর থেকে রাজনৈতিক, আমলাতান্ত্রিক প্রভাব ও সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, অনিয়মসহ অনাচারগুলো দূর করতে টাস্কফোর্স গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রভাবের কারণে দুদকে সৃষ্ট পেশাগত বৈষম্য দূর করতে সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ রয়েছে এতে।
শুরুতেই ‘রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও আইনি সংস্কার’ উপশিরোনামের আওতায় রয়েছে ১০টি সুপারিশ। এর প্রথমটিতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করে লিখতে হবে: কোনো ব্যক্তি যাতে ব্যক্তিগত স্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার করতে বা অনুপার্জিত আয় ভোগ করতে না পারে। অনুপার্জিত আয় বৈধ করার রাষ্ট্রীয় চর্চা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।
জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন করে তা প্রতিপালিত হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণের জন্য সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন নিয়ে কোনো আইন না থাকার কারণে রাষ্ট্রীয় বা সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার হয়ে থাকে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে ‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে হবে। বেনামি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ পাচার প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক চর্চার অনুরূপ সব ধরনের কোম্পানি, ট্রাস্ট বা ফাউন্ডেশন-জাতীয় প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিকানা জনস্বার্থে প্রকাশ করার জন্য আইন করা।
দুদকের সংস্কার বিষয়ে
সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে দুদককে ‘সাংবিধানিক’ প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি দিতে বলা হয়েছে। তিন সদস্যের পরিবর্তে ‘পরিসর’ বাড়িয়ে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির পরিবর্তে ‘বাছাই ও পর্যবেক্ষণ’ কমিটি করা; দুদকের বিতর্কিত চাকরিবিধি ৫৪-এর ২ ধারা বাতিল; সচিব, মহাপরিচালক ও পরিচালক পদে নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ৬০ ও ৭৫ শতাংশ পদায়ন ইত্যাদি সুপারিশ করা হয়।
দুদকের কর্মকাণ্ডকে স্বচ্ছ করতে জনগণের কাছে জবাবদিহি করা এবং দুদকের কর্মীদের দুর্নীতির বিষয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করা, দোষীদের অপসারণ ও যথাযথ জবাবদিহির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। দুদকের কর্মীদের প্রণোদনার হার সরকারি স্কেলের চেয়ে দ্বিগুণ করতে বলা হয়েছে।
সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুদক একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আছে। এটাকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। আমরা চাই দুদক যেন স্বাধীন ও কার্যকর হয়। আমরা একটি পরিপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ তৈরি করেছি।’
সংস্কার কমিশন বলেছে, তাদের সুপারিশগুলো তিনভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এসব সুপারিশের মধ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্বল্পমেয়াদিগুলো ছয় মাসে, মধ্য মেয়াদিগুলো ১৮ মাসে এবং দীর্ঘমেয়াদিগুলো ৪৮ মাসে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

সংবিধান সংস্কার
বর্তমান বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। সেটি পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রাখার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সেই সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
গতকাল বুধবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এতে সাতটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে একগুচ্ছ সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়গুলো হলো: ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, প্রধানমন্ত্রী পদের একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাস, অন্তর্বর্তী সরকারকাঠামোর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সুনিশ্চিতকরণ এবং মৌলিক অধিকারের আওতা সম্প্রসারণ, সাংবিধানিক সুরক্ষা ও বলবৎযোগ্যতা নিশ্চিতকরণ।
সংবিধান সংস্কারের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল সুস্পষ্ট। কার্যকর গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার সুনিশ্চিতকরণ এবং জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা। সেদিক থেকে বিবেচনা করে সংবিধানে যে ধারা ও বিষয়গুলোর সংস্কার করা দরকার, তা বলেছি। আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের যে জন-আকাঙ্ক্ষা, তার প্রতিফলন হিসেবে রাষ্ট্রের পাঁচটি মূলনীতির সুপারিশ করেছি। সেগুলো হচ্ছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র।’
কমিশন রাষ্ট্র পরিচালনার বিদ্যমান মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এবং এ সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া সংবিধানের প্রযোজ্য সব ক্ষেত্রে ‘প্রজাতন্ত্র’-এর পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ এবং ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলো ব্যবহারের সুপারিশ করেছে। তবে ইংরেজি সংস্করণে ‘Republic’ এবং ‘Peoples Republic of Bangladesh’ শব্দগুলো থাকবে। ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি...’ কমিশন এই বিধান বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে। সংবিধানের বর্তমান অনুচ্ছেদ ৬(২) সংশোধন করে ‘বাংলাদেশের নাগরিকগণ “বাংলাদেশি” বলে পরিচিত হবেন’ হিসেবে প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করেছে কমিশন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশকে যেভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বলা হয়, তার মধ্যে প্রজাতন্ত্রের কথার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছি। আমরা বলেছি, বাংলাদেশ পরিচিত হওয়া উচিত জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে।’
সংস্কার কমিশন একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে নিম্নকক্ষ জাতীয় সংসদ এবং উচ্চকক্ষ সিনেট নামে পরিচিত হবে। উভয় কক্ষের মেয়াদ হবে চার বছর। নিম্নকক্ষ গঠিত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সরাসরি নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে। ৪০০ আসন নিয়ে নিম্নকক্ষ গঠিত হবে। এর মধ্যে ১০০টি থাকবে নারী আসন। অন্যদিকে উচ্চকক্ষ মোট ১০৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রীয় কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনয়ন এবং রাষ্ট্রীয় অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করার জন্য একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশ করেছে। এই কাউন্সিল হবে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। আর এই কাউন্সিলের সদস্য হবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার, উচ্চকক্ষের স্পিকার, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, বিরোধী দল মনোনীত নিম্নকক্ষের ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দল মনোনীত উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতার প্রতিনিধিত্বকারী সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের উভয় কক্ষের সদস্যরা ব্যতীত, আইনসভার উভয় কক্ষের বাকি সকল সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে তাঁদের মধ্য থেকে মনোনীত ১ জন সদস্য।
সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সুপারিশ করেছে। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হবে চার বছর। রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ দুবারের বেশি অধিষ্ঠিত থাকবেন না। রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাবে। নিম্নকক্ষ থেকে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
একই ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হওয়ার বিধানের সুপারিশ করে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।
সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদনের পর গণভোটের মাধ্যমে করার সুপারিশ করা হয়। আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের পুনরুদ্ধার বা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বলেছি।
বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারকে সুগম ও মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হলে বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। সুপ্রিম কোর্টের একক চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে দেশের সকল বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বিভাগের মর্যাদাসম্পন্ন একটি স্থায়ী আসন প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছি।

অংশীজনদের প্রায় সবাই শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জোর দিয়েছেন উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছি। জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে সমন্বয় কাউন্সিল গঠনের কথা বলেছি। মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণের কথা বলেছি। সেটা সাংবিধানিক সুরক্ষা ও বলবৎ হয়, তা নিশ্চিতের জন্য সমন্বিত একক সনদের কথা বলেছি।
এ ছাড়া সাংবিধানিকভাবে চার বছর মেয়াদি মানবাধিকার, নির্বাচন, সরকারি কর্ম কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেয় কমিশন। জরুরি অবস্থা জারির জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের সুপারিশে রাষ্ট্রপতিকে ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে যাতে নাগরিক অধিকার রদ বা স্থগিত এবং আদালতের যাওয়ার অধিকার বন্ধ বা স্থগিত করা যাবে না বলে প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। এই ক্ষেত্রে বর্তমান সংবিধানের ১৪১খ ও গ অনুচ্ছেদ বাতিলের সুপারিশ করেছে কমিশন।
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, এইগুলো একটা খসড়া প্রস্তাবনা হয়েছে। তাঁরা যেটা মনে করছেন যে সংবিধানের এই জায়গায় পরিবর্তন আসা দরকার। এখন এটা নিয়ে আলোচনা হবে, চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এগুলো গ্রহণ করবে কি না।
দ্বিকক্ষ সংসদের প্রস্তাবটি নতুন উল্লেখ করে শাহদীন মালিক বলেন, এগুলো অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ঠিক আছে, তারা আলোচনা সূত্রপাতের জন্য একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এখন এটা নিয়ে আন্দোলনে যারা জড়িত, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে আলোচনা শুরু হলে তারপর এটার সুরাহা হবে।
নির্বাচন সংস্কার: ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনরায় নির্বাচন
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে ১৫০টির মতো সুপারিশ করেছে কমিশন। এর মধ্যে আছে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনরায় নির্বাচন হবে। ‘না ভোট’-এর ব্যবস্থা রাখা এবং না ভোট বিজয়ী হলে নির্বাচন বাতিল। এই ভোটের প্রার্থীরা পরের ধাপে প্রার্থী হতে পারবেন না।
এমন সব সুপারিশ করে গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে গেছে। সেটিকে ঠিক করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। নির্বাচনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় যা করা দরকার, সেটাই করার চেষ্টা করেছি। একই সঙ্গে সব অংশীজনের দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভোটারদের ভোট দেওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার প্রস্তাব দিয়েছি।’
বদিউল আলম আরও বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনে যারা নির্বাচনব্যবস্থাকে নির্বাসনে নিয়েছে, শুধু কর্মকর্তা নয়, আমাদের কমিশনের সদস্যের বিষয়ে তদন্ত করা দরকার। বিশেষত ২০১৮ সালে মধ্যরাতে যে অভূতপূর্ব কাণ্ড ঘটেছে, সে ব্যাপারে একটি তদন্ত করে তাদের বিচারের আওতায় আনা গুরুত্বপূর্ণ।’
কমিশনের সুপারিশের মধ্যে বড়দাগে আছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা ও দুবারের বেশি কেউ যেন প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন, সেই প্রস্তাব। তবে দুবার প্রধানমন্ত্রী হলে পরে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন। এ ছাড়া একই ব্যক্তি একই সঙ্গে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা যাতে না হতে পারেন, সেই প্রস্তাবও দিয়েছে কমিশন।
সরাসরি নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত যেসব বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেছে কমিশন, তার মধ্যে আছে—অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা। প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতায় ঋণ-বিলখেলাপিদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা। প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে তিন বছর আগে অবসর গ্রহণ-সংক্রান্ত আরপিওর বিধান বাতিল করা। গুরুতর মানবাধিকার (বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অমানবিক নির্যাতন, সাংবাদিক/মানবাধিকারকর্মীর ওপর হামলা) এবং গুরুতর দুর্নীতি, অর্থ পাচারের অভিযোগে গুম কমিশন বা দুর্নীতি দমন কমিশন বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত হলে তাঁদের সংবিধানের ৬৬(২)(ছ) অনুচ্ছেদের অধীনে একটি বিশেষ আইন প্রণয়ন করে সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য করা।
এ ছাড়া নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিধান বাতিল করা; নির্বাচনের সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করা।
সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ১০০ আসন নিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টির সুপারিশ করেছে কমিশন। সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের হারের ভিত্তিতে (সংখ্যানুপাতিকভাবে) আসন বণ্টন করার কথা বলেছে কমিশন।
উচ্চকক্ষের নির্বাচনের বিষয়ে কমিশনের মত, নিম্নকক্ষে দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে তাদের জন্য উচ্চকক্ষে ৫০ শতাংশ আসন বরাদ্দ। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ আসন নির্দলীয় ভিত্তিতে নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, মানবসেবা প্রদানকারী, শ্রমজীবীদের প্রতিনিধি, নারী উন্নয়নকর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে সংখ্যানুপাতিক হারে পূরণ করা। তবে উচ্চকক্ষে সব মিলিয়ে নারীদের জন্য কমপক্ষে ৩০ শতাংশ আসন নিশ্চিত করতে হবে। উচ্চকক্ষের সদস্যদের বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক নির্ধারণ করার কথা বলেছে কমিশন।
সংসদের নিম্নকক্ষের আসন ১০০ বাড়িয়ে ৪০০ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে নারীর জন্য নির্ধারিত রাখতে হবে ১০০ আসন। এই ১০০ আসন নির্ধারণ করা যেতে পারে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে।
এ ছাড়া একটি স্থায়ী ‘স্থানীয় সরকার কমিশন’ গঠন করা, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করার জন্য আইন সংশোধন করা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০২৩ জরুরি ভিত্তিতে বাতিল করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
পুলিশ সংস্কার: প্রাণহানি কমাতে পুলিশ বল প্রয়োগ করবে ৫ স্তরে
বেআইনি সমাবেশ ও শোভাযাত্রা ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে পাঁচ ধাপে বলপ্রয়োগের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কমিশন উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে। কমিশন একটি নিরপেক্ষ পুলিশ কমিশন গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল বুধবার জমা দেওয়া পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে পুলিশ বাহিনী নিয়ে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন জমা দেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন। প্রতিবেদনে থানায় নারী আসামির জন্য ২৪ ঘণ্টা নারী পুলিশ ডেস্ক রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের জন্য ২২টি আইনের সংশোধন ও পরিমার্জনের প্রস্তাব করেছে কমিশন।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় সফর রাজ হোসেন বলেন, ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি পুলিশকে তিন হাজারের বেশি আইন নিয়ে কাজ করতে হয়। সব আইন খুঁটিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। তবে এ ২২টি আইনের সংশোধন, পরিমার্জন বা কোনো ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে হবে।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ভিড় বা জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কিছু নিয়মকানুন আছে। এ ক্ষেত্রে ইউরোপের মডেল অনুসরণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। বেআইনি সমাবেশ ও শোভাযাত্রা ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে পাঁচ স্তরে বলপ্রয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঝুঁকি এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে।
গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমাতে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান, নির্বাচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতো পুলিশ সংস্কার কমিশনও গঠন করে। গতকাল ছিল কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার দিন।
কমিশনের প্রতিবেদনে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সফর রাজ হোসেন বলেন, দুটি ক্ষেত্রেই হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের কিছু নির্দেশনা আছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে হয়তো জনসাধারণের কষ্ট লাঘব হতো। সরকারের রিভিউ আবেদনের কারণে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাঁরা এই আবেদন প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছেন।
প্রতিটি থানায় নারী আসামির জন্য পুলিশের নারী উপপরিদর্শক, সহকারী উপপরিদর্শক ও কনস্টেবলকে দিয়ে ২৪ ঘণ্টার জন্য ডেস্ক করার সুপারিশ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। দীর্ঘ সময় লাগলেও এই সুপারিশ বাস্তবায়নযোগ্য বলে মনে করে কমিশন।
চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। তবে চাকরিপ্রার্থী দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব-সংক্রান্ত কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তা ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হতে হবে। এটিও হতে হবে এক মাসের মধ্যে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্তভার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দিতে জোরালো সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে সংস্কার কমিশন নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করেছে। পুলিশে নিয়োগ-পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা করা, পুলিশে আলাদা মেডিকেল কোর ও টেকনিক্যাল কোর করারও সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে থানায় জিডি নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে। কোনোভাবেই জিডি প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। প্রতিবেদনে ফৌজদারি মামলার তদন্তে একটি বিশেষায়িত দল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
দুদক সংস্কার: দুদককে ‘স্বাধীন ও কার্যকর’ করতে ৪৭ সুপারিশ
ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থে সুবিধা আদায়ে ব্যবহৃত আইন বাতিল এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ‘স্বাধীন’ ও ‘সাংবিধানিক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়াসহ সংস্থাটির সংস্কারে মোট ৪৭টি সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন। গতকাল বুধবার দুপুরে সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তাদের সুপারিশ-সংবলিত প্রতিবেদন হস্তান্তর করে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনতে দুই দফায় দুদকসহ ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। দুদক-সংক্রান্ত কমিশনটি গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের একটি। দীর্ঘদিন দুর্নীতির ওপর নজরদারি করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের দায়িত্বে থাকা ড. ইফতেখারুজ্জামানকে এর প্রধান করা হয়।
কমিশন দুদককে একটি কার্যকর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে এবং প্রতিষ্ঠানটির আমূল সংস্কারে সুপারিশগুলো করেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, আইন পরিবর্তনসহ ১০টি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। সংস্কার কমিশনের বক্তব্য হচ্ছে, দুর্নীতি প্রতিরোধ দুদকের একার কাজ নয়; দুর্নীতি নির্মূলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি।
সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও আইনি সংস্কার, দুর্নীতি কমিশনের মর্যাদা ও গঠন; অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, অনুসন্ধান, তদন্ত ও বিচার; দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম এই কয়েকটি উপশিরোনামের অধীনে ৪৭টি সুপারিশ তুলে ধরেছে।
প্রতিবেদনে দুদকের ওপর থেকে রাজনৈতিক, আমলাতান্ত্রিক প্রভাব ও সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, অনিয়মসহ অনাচারগুলো দূর করতে টাস্কফোর্স গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রভাবের কারণে দুদকে সৃষ্ট পেশাগত বৈষম্য দূর করতে সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ রয়েছে এতে।
শুরুতেই ‘রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও আইনি সংস্কার’ উপশিরোনামের আওতায় রয়েছে ১০টি সুপারিশ। এর প্রথমটিতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করে লিখতে হবে: কোনো ব্যক্তি যাতে ব্যক্তিগত স্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার করতে বা অনুপার্জিত আয় ভোগ করতে না পারে। অনুপার্জিত আয় বৈধ করার রাষ্ট্রীয় চর্চা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।
জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন করে তা প্রতিপালিত হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণের জন্য সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন নিয়ে কোনো আইন না থাকার কারণে রাষ্ট্রীয় বা সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার হয়ে থাকে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে ‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে হবে। বেনামি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ পাচার প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক চর্চার অনুরূপ সব ধরনের কোম্পানি, ট্রাস্ট বা ফাউন্ডেশন-জাতীয় প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিকানা জনস্বার্থে প্রকাশ করার জন্য আইন করা।
দুদকের সংস্কার বিষয়ে
সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে দুদককে ‘সাংবিধানিক’ প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি দিতে বলা হয়েছে। তিন সদস্যের পরিবর্তে ‘পরিসর’ বাড়িয়ে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির পরিবর্তে ‘বাছাই ও পর্যবেক্ষণ’ কমিটি করা; দুদকের বিতর্কিত চাকরিবিধি ৫৪-এর ২ ধারা বাতিল; সচিব, মহাপরিচালক ও পরিচালক পদে নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ৬০ ও ৭৫ শতাংশ পদায়ন ইত্যাদি সুপারিশ করা হয়।
দুদকের কর্মকাণ্ডকে স্বচ্ছ করতে জনগণের কাছে জবাবদিহি করা এবং দুদকের কর্মীদের দুর্নীতির বিষয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করা, দোষীদের অপসারণ ও যথাযথ জবাবদিহির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। দুদকের কর্মীদের প্রণোদনার হার সরকারি স্কেলের চেয়ে দ্বিগুণ করতে বলা হয়েছে।
সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুদক একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আছে। এটাকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। আমরা চাই দুদক যেন স্বাধীন ও কার্যকর হয়। আমরা একটি পরিপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ তৈরি করেছি।’
সংস্কার কমিশন বলেছে, তাদের সুপারিশগুলো তিনভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এসব সুপারিশের মধ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্বল্পমেয়াদিগুলো ছয় মাসে, মধ্য মেয়াদিগুলো ১৮ মাসে এবং দীর্ঘমেয়াদিগুলো ৪৮ মাসে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

সংবিধান সংস্কার
বর্তমান বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। সেটি পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রাখার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সেই সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
গতকাল বুধবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এতে সাতটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে একগুচ্ছ সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়গুলো হলো: ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, প্রধানমন্ত্রী পদের একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাস, অন্তর্বর্তী সরকারকাঠামোর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সুনিশ্চিতকরণ এবং মৌলিক অধিকারের আওতা সম্প্রসারণ, সাংবিধানিক সুরক্ষা ও বলবৎযোগ্যতা নিশ্চিতকরণ।
সংবিধান সংস্কারের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল সুস্পষ্ট। কার্যকর গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার সুনিশ্চিতকরণ এবং জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা। সেদিক থেকে বিবেচনা করে সংবিধানে যে ধারা ও বিষয়গুলোর সংস্কার করা দরকার, তা বলেছি। আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের যে জন-আকাঙ্ক্ষা, তার প্রতিফলন হিসেবে রাষ্ট্রের পাঁচটি মূলনীতির সুপারিশ করেছি। সেগুলো হচ্ছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র।’
কমিশন রাষ্ট্র পরিচালনার বিদ্যমান মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এবং এ সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া সংবিধানের প্রযোজ্য সব ক্ষেত্রে ‘প্রজাতন্ত্র’-এর পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ এবং ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলো ব্যবহারের সুপারিশ করেছে। তবে ইংরেজি সংস্করণে ‘Republic’ এবং ‘Peoples Republic of Bangladesh’ শব্দগুলো থাকবে। ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি...’ কমিশন এই বিধান বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে। সংবিধানের বর্তমান অনুচ্ছেদ ৬(২) সংশোধন করে ‘বাংলাদেশের নাগরিকগণ “বাংলাদেশি” বলে পরিচিত হবেন’ হিসেবে প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করেছে কমিশন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশকে যেভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বলা হয়, তার মধ্যে প্রজাতন্ত্রের কথার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছি। আমরা বলেছি, বাংলাদেশ পরিচিত হওয়া উচিত জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে।’
সংস্কার কমিশন একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে নিম্নকক্ষ জাতীয় সংসদ এবং উচ্চকক্ষ সিনেট নামে পরিচিত হবে। উভয় কক্ষের মেয়াদ হবে চার বছর। নিম্নকক্ষ গঠিত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সরাসরি নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে। ৪০০ আসন নিয়ে নিম্নকক্ষ গঠিত হবে। এর মধ্যে ১০০টি থাকবে নারী আসন। অন্যদিকে উচ্চকক্ষ মোট ১০৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রীয় কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনয়ন এবং রাষ্ট্রীয় অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করার জন্য একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশ করেছে। এই কাউন্সিল হবে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। আর এই কাউন্সিলের সদস্য হবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার, উচ্চকক্ষের স্পিকার, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, বিরোধী দল মনোনীত নিম্নকক্ষের ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দল মনোনীত উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতার প্রতিনিধিত্বকারী সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের উভয় কক্ষের সদস্যরা ব্যতীত, আইনসভার উভয় কক্ষের বাকি সকল সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে তাঁদের মধ্য থেকে মনোনীত ১ জন সদস্য।
সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সুপারিশ করেছে। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হবে চার বছর। রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ দুবারের বেশি অধিষ্ঠিত থাকবেন না। রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাবে। নিম্নকক্ষ থেকে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
একই ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হওয়ার বিধানের সুপারিশ করে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।
সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদনের পর গণভোটের মাধ্যমে করার সুপারিশ করা হয়। আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের পুনরুদ্ধার বা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বলেছি।
বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারকে সুগম ও মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হলে বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। সুপ্রিম কোর্টের একক চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে দেশের সকল বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বিভাগের মর্যাদাসম্পন্ন একটি স্থায়ী আসন প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছি।

অংশীজনদের প্রায় সবাই শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জোর দিয়েছেন উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছি। জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে সমন্বয় কাউন্সিল গঠনের কথা বলেছি। মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণের কথা বলেছি। সেটা সাংবিধানিক সুরক্ষা ও বলবৎ হয়, তা নিশ্চিতের জন্য সমন্বিত একক সনদের কথা বলেছি।
এ ছাড়া সাংবিধানিকভাবে চার বছর মেয়াদি মানবাধিকার, নির্বাচন, সরকারি কর্ম কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেয় কমিশন। জরুরি অবস্থা জারির জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের সুপারিশে রাষ্ট্রপতিকে ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে যাতে নাগরিক অধিকার রদ বা স্থগিত এবং আদালতের যাওয়ার অধিকার বন্ধ বা স্থগিত করা যাবে না বলে প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। এই ক্ষেত্রে বর্তমান সংবিধানের ১৪১খ ও গ অনুচ্ছেদ বাতিলের সুপারিশ করেছে কমিশন।
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, এইগুলো একটা খসড়া প্রস্তাবনা হয়েছে। তাঁরা যেটা মনে করছেন যে সংবিধানের এই জায়গায় পরিবর্তন আসা দরকার। এখন এটা নিয়ে আলোচনা হবে, চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এগুলো গ্রহণ করবে কি না।
দ্বিকক্ষ সংসদের প্রস্তাবটি নতুন উল্লেখ করে শাহদীন মালিক বলেন, এগুলো অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ঠিক আছে, তারা আলোচনা সূত্রপাতের জন্য একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এখন এটা নিয়ে আন্দোলনে যারা জড়িত, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে আলোচনা শুরু হলে তারপর এটার সুরাহা হবে।
নির্বাচন সংস্কার: ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনরায় নির্বাচন
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে ১৫০টির মতো সুপারিশ করেছে কমিশন। এর মধ্যে আছে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনরায় নির্বাচন হবে। ‘না ভোট’-এর ব্যবস্থা রাখা এবং না ভোট বিজয়ী হলে নির্বাচন বাতিল। এই ভোটের প্রার্থীরা পরের ধাপে প্রার্থী হতে পারবেন না।
এমন সব সুপারিশ করে গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে গেছে। সেটিকে ঠিক করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। নির্বাচনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় যা করা দরকার, সেটাই করার চেষ্টা করেছি। একই সঙ্গে সব অংশীজনের দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভোটারদের ভোট দেওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার প্রস্তাব দিয়েছি।’
বদিউল আলম আরও বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনে যারা নির্বাচনব্যবস্থাকে নির্বাসনে নিয়েছে, শুধু কর্মকর্তা নয়, আমাদের কমিশনের সদস্যের বিষয়ে তদন্ত করা দরকার। বিশেষত ২০১৮ সালে মধ্যরাতে যে অভূতপূর্ব কাণ্ড ঘটেছে, সে ব্যাপারে একটি তদন্ত করে তাদের বিচারের আওতায় আনা গুরুত্বপূর্ণ।’
কমিশনের সুপারিশের মধ্যে বড়দাগে আছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা ও দুবারের বেশি কেউ যেন প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন, সেই প্রস্তাব। তবে দুবার প্রধানমন্ত্রী হলে পরে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন। এ ছাড়া একই ব্যক্তি একই সঙ্গে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা যাতে না হতে পারেন, সেই প্রস্তাবও দিয়েছে কমিশন।
সরাসরি নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত যেসব বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেছে কমিশন, তার মধ্যে আছে—অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা। প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতায় ঋণ-বিলখেলাপিদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা। প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে তিন বছর আগে অবসর গ্রহণ-সংক্রান্ত আরপিওর বিধান বাতিল করা। গুরুতর মানবাধিকার (বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অমানবিক নির্যাতন, সাংবাদিক/মানবাধিকারকর্মীর ওপর হামলা) এবং গুরুতর দুর্নীতি, অর্থ পাচারের অভিযোগে গুম কমিশন বা দুর্নীতি দমন কমিশন বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত হলে তাঁদের সংবিধানের ৬৬(২)(ছ) অনুচ্ছেদের অধীনে একটি বিশেষ আইন প্রণয়ন করে সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য করা।
এ ছাড়া নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিধান বাতিল করা; নির্বাচনের সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করা।
সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ১০০ আসন নিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টির সুপারিশ করেছে কমিশন। সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের হারের ভিত্তিতে (সংখ্যানুপাতিকভাবে) আসন বণ্টন করার কথা বলেছে কমিশন।
উচ্চকক্ষের নির্বাচনের বিষয়ে কমিশনের মত, নিম্নকক্ষে দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে তাদের জন্য উচ্চকক্ষে ৫০ শতাংশ আসন বরাদ্দ। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ আসন নির্দলীয় ভিত্তিতে নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, মানবসেবা প্রদানকারী, শ্রমজীবীদের প্রতিনিধি, নারী উন্নয়নকর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে সংখ্যানুপাতিক হারে পূরণ করা। তবে উচ্চকক্ষে সব মিলিয়ে নারীদের জন্য কমপক্ষে ৩০ শতাংশ আসন নিশ্চিত করতে হবে। উচ্চকক্ষের সদস্যদের বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক নির্ধারণ করার কথা বলেছে কমিশন।
সংসদের নিম্নকক্ষের আসন ১০০ বাড়িয়ে ৪০০ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে নারীর জন্য নির্ধারিত রাখতে হবে ১০০ আসন। এই ১০০ আসন নির্ধারণ করা যেতে পারে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে।
এ ছাড়া একটি স্থায়ী ‘স্থানীয় সরকার কমিশন’ গঠন করা, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করার জন্য আইন সংশোধন করা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০২৩ জরুরি ভিত্তিতে বাতিল করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
পুলিশ সংস্কার: প্রাণহানি কমাতে পুলিশ বল প্রয়োগ করবে ৫ স্তরে
বেআইনি সমাবেশ ও শোভাযাত্রা ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে পাঁচ ধাপে বলপ্রয়োগের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কমিশন উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে। কমিশন একটি নিরপেক্ষ পুলিশ কমিশন গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল বুধবার জমা দেওয়া পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে পুলিশ বাহিনী নিয়ে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন জমা দেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন। প্রতিবেদনে থানায় নারী আসামির জন্য ২৪ ঘণ্টা নারী পুলিশ ডেস্ক রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের জন্য ২২টি আইনের সংশোধন ও পরিমার্জনের প্রস্তাব করেছে কমিশন।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় সফর রাজ হোসেন বলেন, ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি পুলিশকে তিন হাজারের বেশি আইন নিয়ে কাজ করতে হয়। সব আইন খুঁটিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। তবে এ ২২টি আইনের সংশোধন, পরিমার্জন বা কোনো ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে হবে।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ভিড় বা জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কিছু নিয়মকানুন আছে। এ ক্ষেত্রে ইউরোপের মডেল অনুসরণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। বেআইনি সমাবেশ ও শোভাযাত্রা ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে পাঁচ স্তরে বলপ্রয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঝুঁকি এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে।
গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমাতে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান, নির্বাচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতো পুলিশ সংস্কার কমিশনও গঠন করে। গতকাল ছিল কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার দিন।
কমিশনের প্রতিবেদনে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সফর রাজ হোসেন বলেন, দুটি ক্ষেত্রেই হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের কিছু নির্দেশনা আছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে হয়তো জনসাধারণের কষ্ট লাঘব হতো। সরকারের রিভিউ আবেদনের কারণে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাঁরা এই আবেদন প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছেন।
প্রতিটি থানায় নারী আসামির জন্য পুলিশের নারী উপপরিদর্শক, সহকারী উপপরিদর্শক ও কনস্টেবলকে দিয়ে ২৪ ঘণ্টার জন্য ডেস্ক করার সুপারিশ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। দীর্ঘ সময় লাগলেও এই সুপারিশ বাস্তবায়নযোগ্য বলে মনে করে কমিশন।
চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। তবে চাকরিপ্রার্থী দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব-সংক্রান্ত কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তা ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হতে হবে। এটিও হতে হবে এক মাসের মধ্যে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্তভার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দিতে জোরালো সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে সংস্কার কমিশন নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করেছে। পুলিশে নিয়োগ-পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা করা, পুলিশে আলাদা মেডিকেল কোর ও টেকনিক্যাল কোর করারও সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে থানায় জিডি নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে। কোনোভাবেই জিডি প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। প্রতিবেদনে ফৌজদারি মামলার তদন্তে একটি বিশেষায়িত দল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
দুদক সংস্কার: দুদককে ‘স্বাধীন ও কার্যকর’ করতে ৪৭ সুপারিশ
ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থে সুবিধা আদায়ে ব্যবহৃত আইন বাতিল এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ‘স্বাধীন’ ও ‘সাংবিধানিক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়াসহ সংস্থাটির সংস্কারে মোট ৪৭টি সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন। গতকাল বুধবার দুপুরে সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তাদের সুপারিশ-সংবলিত প্রতিবেদন হস্তান্তর করে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনতে দুই দফায় দুদকসহ ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। দুদক-সংক্রান্ত কমিশনটি গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের একটি। দীর্ঘদিন দুর্নীতির ওপর নজরদারি করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের দায়িত্বে থাকা ড. ইফতেখারুজ্জামানকে এর প্রধান করা হয়।
কমিশন দুদককে একটি কার্যকর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে এবং প্রতিষ্ঠানটির আমূল সংস্কারে সুপারিশগুলো করেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, আইন পরিবর্তনসহ ১০টি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। সংস্কার কমিশনের বক্তব্য হচ্ছে, দুর্নীতি প্রতিরোধ দুদকের একার কাজ নয়; দুর্নীতি নির্মূলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি।
সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও আইনি সংস্কার, দুর্নীতি কমিশনের মর্যাদা ও গঠন; অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, অনুসন্ধান, তদন্ত ও বিচার; দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম এই কয়েকটি উপশিরোনামের অধীনে ৪৭টি সুপারিশ তুলে ধরেছে।
প্রতিবেদনে দুদকের ওপর থেকে রাজনৈতিক, আমলাতান্ত্রিক প্রভাব ও সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, অনিয়মসহ অনাচারগুলো দূর করতে টাস্কফোর্স গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রভাবের কারণে দুদকে সৃষ্ট পেশাগত বৈষম্য দূর করতে সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ রয়েছে এতে।
শুরুতেই ‘রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও আইনি সংস্কার’ উপশিরোনামের আওতায় রয়েছে ১০টি সুপারিশ। এর প্রথমটিতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করে লিখতে হবে: কোনো ব্যক্তি যাতে ব্যক্তিগত স্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার করতে বা অনুপার্জিত আয় ভোগ করতে না পারে। অনুপার্জিত আয় বৈধ করার রাষ্ট্রীয় চর্চা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।
জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন করে তা প্রতিপালিত হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণের জন্য সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন নিয়ে কোনো আইন না থাকার কারণে রাষ্ট্রীয় বা সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার হয়ে থাকে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে ‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে হবে। বেনামি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ পাচার প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক চর্চার অনুরূপ সব ধরনের কোম্পানি, ট্রাস্ট বা ফাউন্ডেশন-জাতীয় প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিকানা জনস্বার্থে প্রকাশ করার জন্য আইন করা।
দুদকের সংস্কার বিষয়ে
সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে দুদককে ‘সাংবিধানিক’ প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি দিতে বলা হয়েছে। তিন সদস্যের পরিবর্তে ‘পরিসর’ বাড়িয়ে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির পরিবর্তে ‘বাছাই ও পর্যবেক্ষণ’ কমিটি করা; দুদকের বিতর্কিত চাকরিবিধি ৫৪-এর ২ ধারা বাতিল; সচিব, মহাপরিচালক ও পরিচালক পদে নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ৬০ ও ৭৫ শতাংশ পদায়ন ইত্যাদি সুপারিশ করা হয়।
দুদকের কর্মকাণ্ডকে স্বচ্ছ করতে জনগণের কাছে জবাবদিহি করা এবং দুদকের কর্মীদের দুর্নীতির বিষয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করা, দোষীদের অপসারণ ও যথাযথ জবাবদিহির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। দুদকের কর্মীদের প্রণোদনার হার সরকারি স্কেলের চেয়ে দ্বিগুণ করতে বলা হয়েছে।
সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুদক একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আছে। এটাকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। আমরা চাই দুদক যেন স্বাধীন ও কার্যকর হয়। আমরা একটি পরিপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ তৈরি করেছি।’
সংস্কার কমিশন বলেছে, তাদের সুপারিশগুলো তিনভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এসব সুপারিশের মধ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্বল্পমেয়াদিগুলো ছয় মাসে, মধ্য মেয়াদিগুলো ১৮ মাসে এবং দীর্ঘমেয়াদিগুলো ৪৮ মাসে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

সংবিধান সংস্কার
বর্তমান বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। সেটি পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রাখার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সেই সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
গতকাল বুধবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এতে সাতটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে একগুচ্ছ সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়গুলো হলো: ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, প্রধানমন্ত্রী পদের একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাস, অন্তর্বর্তী সরকারকাঠামোর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সুনিশ্চিতকরণ এবং মৌলিক অধিকারের আওতা সম্প্রসারণ, সাংবিধানিক সুরক্ষা ও বলবৎযোগ্যতা নিশ্চিতকরণ।
সংবিধান সংস্কারের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল সুস্পষ্ট। কার্যকর গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার সুনিশ্চিতকরণ এবং জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা। সেদিক থেকে বিবেচনা করে সংবিধানে যে ধারা ও বিষয়গুলোর সংস্কার করা দরকার, তা বলেছি। আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের যে জন-আকাঙ্ক্ষা, তার প্রতিফলন হিসেবে রাষ্ট্রের পাঁচটি মূলনীতির সুপারিশ করেছি। সেগুলো হচ্ছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র।’
কমিশন রাষ্ট্র পরিচালনার বিদ্যমান মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এবং এ সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া সংবিধানের প্রযোজ্য সব ক্ষেত্রে ‘প্রজাতন্ত্র’-এর পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ এবং ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলো ব্যবহারের সুপারিশ করেছে। তবে ইংরেজি সংস্করণে ‘Republic’ এবং ‘Peoples Republic of Bangladesh’ শব্দগুলো থাকবে। ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি...’ কমিশন এই বিধান বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে। সংবিধানের বর্তমান অনুচ্ছেদ ৬(২) সংশোধন করে ‘বাংলাদেশের নাগরিকগণ “বাংলাদেশি” বলে পরিচিত হবেন’ হিসেবে প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করেছে কমিশন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশকে যেভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বলা হয়, তার মধ্যে প্রজাতন্ত্রের কথার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছি। আমরা বলেছি, বাংলাদেশ পরিচিত হওয়া উচিত জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে।’
সংস্কার কমিশন একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে নিম্নকক্ষ জাতীয় সংসদ এবং উচ্চকক্ষ সিনেট নামে পরিচিত হবে। উভয় কক্ষের মেয়াদ হবে চার বছর। নিম্নকক্ষ গঠিত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সরাসরি নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে। ৪০০ আসন নিয়ে নিম্নকক্ষ গঠিত হবে। এর মধ্যে ১০০টি থাকবে নারী আসন। অন্যদিকে উচ্চকক্ষ মোট ১০৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রীয় কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনয়ন এবং রাষ্ট্রীয় অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করার জন্য একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশ করেছে। এই কাউন্সিল হবে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। আর এই কাউন্সিলের সদস্য হবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার, উচ্চকক্ষের স্পিকার, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, বিরোধী দল মনোনীত নিম্নকক্ষের ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দল মনোনীত উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতার প্রতিনিধিত্বকারী সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের উভয় কক্ষের সদস্যরা ব্যতীত, আইনসভার উভয় কক্ষের বাকি সকল সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে তাঁদের মধ্য থেকে মনোনীত ১ জন সদস্য।
সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সুপারিশ করেছে। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হবে চার বছর। রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ দুবারের বেশি অধিষ্ঠিত থাকবেন না। রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাবে। নিম্নকক্ষ থেকে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
একই ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হওয়ার বিধানের সুপারিশ করে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।
সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদনের পর গণভোটের মাধ্যমে করার সুপারিশ করা হয়। আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের পুনরুদ্ধার বা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বলেছি।
বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারকে সুগম ও মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হলে বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। সুপ্রিম কোর্টের একক চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে দেশের সকল বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বিভাগের মর্যাদাসম্পন্ন একটি স্থায়ী আসন প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছি।

অংশীজনদের প্রায় সবাই শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জোর দিয়েছেন উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছি। জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে সমন্বয় কাউন্সিল গঠনের কথা বলেছি। মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণের কথা বলেছি। সেটা সাংবিধানিক সুরক্ষা ও বলবৎ হয়, তা নিশ্চিতের জন্য সমন্বিত একক সনদের কথা বলেছি।
এ ছাড়া সাংবিধানিকভাবে চার বছর মেয়াদি মানবাধিকার, নির্বাচন, সরকারি কর্ম কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেয় কমিশন। জরুরি অবস্থা জারির জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের সুপারিশে রাষ্ট্রপতিকে ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে যাতে নাগরিক অধিকার রদ বা স্থগিত এবং আদালতের যাওয়ার অধিকার বন্ধ বা স্থগিত করা যাবে না বলে প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। এই ক্ষেত্রে বর্তমান সংবিধানের ১৪১খ ও গ অনুচ্ছেদ বাতিলের সুপারিশ করেছে কমিশন।
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, এইগুলো একটা খসড়া প্রস্তাবনা হয়েছে। তাঁরা যেটা মনে করছেন যে সংবিধানের এই জায়গায় পরিবর্তন আসা দরকার। এখন এটা নিয়ে আলোচনা হবে, চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এগুলো গ্রহণ করবে কি না।
দ্বিকক্ষ সংসদের প্রস্তাবটি নতুন উল্লেখ করে শাহদীন মালিক বলেন, এগুলো অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ঠিক আছে, তারা আলোচনা সূত্রপাতের জন্য একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এখন এটা নিয়ে আন্দোলনে যারা জড়িত, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে আলোচনা শুরু হলে তারপর এটার সুরাহা হবে।
নির্বাচন সংস্কার: ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনরায় নির্বাচন
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে ১৫০টির মতো সুপারিশ করেছে কমিশন। এর মধ্যে আছে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনরায় নির্বাচন হবে। ‘না ভোট’-এর ব্যবস্থা রাখা এবং না ভোট বিজয়ী হলে নির্বাচন বাতিল। এই ভোটের প্রার্থীরা পরের ধাপে প্রার্থী হতে পারবেন না।
এমন সব সুপারিশ করে গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে গেছে। সেটিকে ঠিক করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। নির্বাচনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় যা করা দরকার, সেটাই করার চেষ্টা করেছি। একই সঙ্গে সব অংশীজনের দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভোটারদের ভোট দেওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার প্রস্তাব দিয়েছি।’
বদিউল আলম আরও বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনে যারা নির্বাচনব্যবস্থাকে নির্বাসনে নিয়েছে, শুধু কর্মকর্তা নয়, আমাদের কমিশনের সদস্যের বিষয়ে তদন্ত করা দরকার। বিশেষত ২০১৮ সালে মধ্যরাতে যে অভূতপূর্ব কাণ্ড ঘটেছে, সে ব্যাপারে একটি তদন্ত করে তাদের বিচারের আওতায় আনা গুরুত্বপূর্ণ।’
কমিশনের সুপারিশের মধ্যে বড়দাগে আছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা ও দুবারের বেশি কেউ যেন প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন, সেই প্রস্তাব। তবে দুবার প্রধানমন্ত্রী হলে পরে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন। এ ছাড়া একই ব্যক্তি একই সঙ্গে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা যাতে না হতে পারেন, সেই প্রস্তাবও দিয়েছে কমিশন।
সরাসরি নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত যেসব বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেছে কমিশন, তার মধ্যে আছে—অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা। প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতায় ঋণ-বিলখেলাপিদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা। প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে তিন বছর আগে অবসর গ্রহণ-সংক্রান্ত আরপিওর বিধান বাতিল করা। গুরুতর মানবাধিকার (বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অমানবিক নির্যাতন, সাংবাদিক/মানবাধিকারকর্মীর ওপর হামলা) এবং গুরুতর দুর্নীতি, অর্থ পাচারের অভিযোগে গুম কমিশন বা দুর্নীতি দমন কমিশন বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত হলে তাঁদের সংবিধানের ৬৬(২)(ছ) অনুচ্ছেদের অধীনে একটি বিশেষ আইন প্রণয়ন করে সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য করা।
এ ছাড়া নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিধান বাতিল করা; নির্বাচনের সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করা।
সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ১০০ আসন নিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টির সুপারিশ করেছে কমিশন। সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের হারের ভিত্তিতে (সংখ্যানুপাতিকভাবে) আসন বণ্টন করার কথা বলেছে কমিশন।
উচ্চকক্ষের নির্বাচনের বিষয়ে কমিশনের মত, নিম্নকক্ষে দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে তাদের জন্য উচ্চকক্ষে ৫০ শতাংশ আসন বরাদ্দ। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ আসন নির্দলীয় ভিত্তিতে নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, মানবসেবা প্রদানকারী, শ্রমজীবীদের প্রতিনিধি, নারী উন্নয়নকর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে সংখ্যানুপাতিক হারে পূরণ করা। তবে উচ্চকক্ষে সব মিলিয়ে নারীদের জন্য কমপক্ষে ৩০ শতাংশ আসন নিশ্চিত করতে হবে। উচ্চকক্ষের সদস্যদের বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক নির্ধারণ করার কথা বলেছে কমিশন।
সংসদের নিম্নকক্ষের আসন ১০০ বাড়িয়ে ৪০০ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে নারীর জন্য নির্ধারিত রাখতে হবে ১০০ আসন। এই ১০০ আসন নির্ধারণ করা যেতে পারে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে।
এ ছাড়া একটি স্থায়ী ‘স্থানীয় সরকার কমিশন’ গঠন করা, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করার জন্য আইন সংশোধন করা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০২৩ জরুরি ভিত্তিতে বাতিল করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
পুলিশ সংস্কার: প্রাণহানি কমাতে পুলিশ বল প্রয়োগ করবে ৫ স্তরে
বেআইনি সমাবেশ ও শোভাযাত্রা ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে পাঁচ ধাপে বলপ্রয়োগের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কমিশন উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে। কমিশন একটি নিরপেক্ষ পুলিশ কমিশন গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল বুধবার জমা দেওয়া পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে পুলিশ বাহিনী নিয়ে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন জমা দেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন। প্রতিবেদনে থানায় নারী আসামির জন্য ২৪ ঘণ্টা নারী পুলিশ ডেস্ক রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের জন্য ২২টি আইনের সংশোধন ও পরিমার্জনের প্রস্তাব করেছে কমিশন।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় সফর রাজ হোসেন বলেন, ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি পুলিশকে তিন হাজারের বেশি আইন নিয়ে কাজ করতে হয়। সব আইন খুঁটিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। তবে এ ২২টি আইনের সংশোধন, পরিমার্জন বা কোনো ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে হবে।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ভিড় বা জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কিছু নিয়মকানুন আছে। এ ক্ষেত্রে ইউরোপের মডেল অনুসরণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। বেআইনি সমাবেশ ও শোভাযাত্রা ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে পাঁচ স্তরে বলপ্রয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঝুঁকি এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে।
গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমাতে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান, নির্বাচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতো পুলিশ সংস্কার কমিশনও গঠন করে। গতকাল ছিল কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার দিন।
কমিশনের প্রতিবেদনে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সফর রাজ হোসেন বলেন, দুটি ক্ষেত্রেই হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের কিছু নির্দেশনা আছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে হয়তো জনসাধারণের কষ্ট লাঘব হতো। সরকারের রিভিউ আবেদনের কারণে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাঁরা এই আবেদন প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছেন।
প্রতিটি থানায় নারী আসামির জন্য পুলিশের নারী উপপরিদর্শক, সহকারী উপপরিদর্শক ও কনস্টেবলকে দিয়ে ২৪ ঘণ্টার জন্য ডেস্ক করার সুপারিশ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। দীর্ঘ সময় লাগলেও এই সুপারিশ বাস্তবায়নযোগ্য বলে মনে করে কমিশন।
চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। তবে চাকরিপ্রার্থী দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব-সংক্রান্ত কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তা ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হতে হবে। এটিও হতে হবে এক মাসের মধ্যে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্তভার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দিতে জোরালো সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে সংস্কার কমিশন নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করেছে। পুলিশে নিয়োগ-পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা করা, পুলিশে আলাদা মেডিকেল কোর ও টেকনিক্যাল কোর করারও সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে থানায় জিডি নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে। কোনোভাবেই জিডি প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। প্রতিবেদনে ফৌজদারি মামলার তদন্তে একটি বিশেষায়িত দল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
দুদক সংস্কার: দুদককে ‘স্বাধীন ও কার্যকর’ করতে ৪৭ সুপারিশ
ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থে সুবিধা আদায়ে ব্যবহৃত আইন বাতিল এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ‘স্বাধীন’ ও ‘সাংবিধানিক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়াসহ সংস্থাটির সংস্কারে মোট ৪৭টি সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন। গতকাল বুধবার দুপুরে সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তাদের সুপারিশ-সংবলিত প্রতিবেদন হস্তান্তর করে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনতে দুই দফায় দুদকসহ ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। দুদক-সংক্রান্ত কমিশনটি গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের একটি। দীর্ঘদিন দুর্নীতির ওপর নজরদারি করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের দায়িত্বে থাকা ড. ইফতেখারুজ্জামানকে এর প্রধান করা হয়।
কমিশন দুদককে একটি কার্যকর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে এবং প্রতিষ্ঠানটির আমূল সংস্কারে সুপারিশগুলো করেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, আইন পরিবর্তনসহ ১০টি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। সংস্কার কমিশনের বক্তব্য হচ্ছে, দুর্নীতি প্রতিরোধ দুদকের একার কাজ নয়; দুর্নীতি নির্মূলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি।
সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও আইনি সংস্কার, দুর্নীতি কমিশনের মর্যাদা ও গঠন; অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, অনুসন্ধান, তদন্ত ও বিচার; দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম এই কয়েকটি উপশিরোনামের অধীনে ৪৭টি সুপারিশ তুলে ধরেছে।
প্রতিবেদনে দুদকের ওপর থেকে রাজনৈতিক, আমলাতান্ত্রিক প্রভাব ও সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, অনিয়মসহ অনাচারগুলো দূর করতে টাস্কফোর্স গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রভাবের কারণে দুদকে সৃষ্ট পেশাগত বৈষম্য দূর করতে সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ রয়েছে এতে।
শুরুতেই ‘রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও আইনি সংস্কার’ উপশিরোনামের আওতায় রয়েছে ১০টি সুপারিশ। এর প্রথমটিতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করে লিখতে হবে: কোনো ব্যক্তি যাতে ব্যক্তিগত স্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার করতে বা অনুপার্জিত আয় ভোগ করতে না পারে। অনুপার্জিত আয় বৈধ করার রাষ্ট্রীয় চর্চা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।
জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন করে তা প্রতিপালিত হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণের জন্য সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন নিয়ে কোনো আইন না থাকার কারণে রাষ্ট্রীয় বা সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার হয়ে থাকে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে ‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে হবে। বেনামি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ পাচার প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক চর্চার অনুরূপ সব ধরনের কোম্পানি, ট্রাস্ট বা ফাউন্ডেশন-জাতীয় প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিকানা জনস্বার্থে প্রকাশ করার জন্য আইন করা।
দুদকের সংস্কার বিষয়ে
সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে দুদককে ‘সাংবিধানিক’ প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি দিতে বলা হয়েছে। তিন সদস্যের পরিবর্তে ‘পরিসর’ বাড়িয়ে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির পরিবর্তে ‘বাছাই ও পর্যবেক্ষণ’ কমিটি করা; দুদকের বিতর্কিত চাকরিবিধি ৫৪-এর ২ ধারা বাতিল; সচিব, মহাপরিচালক ও পরিচালক পদে নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ৬০ ও ৭৫ শতাংশ পদায়ন ইত্যাদি সুপারিশ করা হয়।
দুদকের কর্মকাণ্ডকে স্বচ্ছ করতে জনগণের কাছে জবাবদিহি করা এবং দুদকের কর্মীদের দুর্নীতির বিষয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করা, দোষীদের অপসারণ ও যথাযথ জবাবদিহির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। দুদকের কর্মীদের প্রণোদনার হার সরকারি স্কেলের চেয়ে দ্বিগুণ করতে বলা হয়েছে।
সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুদক একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আছে। এটাকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। আমরা চাই দুদক যেন স্বাধীন ও কার্যকর হয়। আমরা একটি পরিপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ তৈরি করেছি।’
সংস্কার কমিশন বলেছে, তাদের সুপারিশগুলো তিনভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এসব সুপারিশের মধ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্বল্পমেয়াদিগুলো ছয় মাসে, মধ্য মেয়াদিগুলো ১৮ মাসে এবং দীর্ঘমেয়াদিগুলো ৪৮ মাসে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গণভোটের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদে বাস্তবায়ন আদেশ পাস হয়ে গেলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ থাকতে পারে বলে একাধিক সূত্
৩ ঘণ্টা আগে
সহকারী উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সহকারী উপজেলা ও থানা ইলেকশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার গ্রাহকপ্রতি মোবাইল সিম কার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রোববার দুপুরে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। বৈঠকে ত্রয়োদশ
৮ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ মতবিনিময় ও প্রস্তুতিমূলক সভা ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বেলা ৩টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের বৈঠক
তানিম আহমেদ, ঢাকা

রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গণভোটের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদে বাস্তবায়ন আদেশ পাস হয়ে গেলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ থাকতে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। নতুন সংসদ নির্ধারিত ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার বাস্তবায়ন না করলে কী হবে, সে বিষয়েও একটি বিকল্প ভাবা হচ্ছে।
সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশের খসড়া তৈরির কাজ গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। প্রস্তাবিত সময়ের মধ্যে নতুন সংসদ সংস্কার বাস্তবায়ন না করলে করণীয় কী হবে, তা গতকাল রাত বা আজ (সোমবার) সকালের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। আজ সকালে কমিশনের আবার বৈঠকের মাধ্যমে সুপারিশ চূড়ান্ত করে দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
সনদ বাস্তবায়নে কমিশন সুপারিশের যে রূপরেখা ঠিক করেছে, তাতে প্রথমে গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করা হবে। তার অধীনে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে করা হবে গণভোট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যেই সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে।
কমিশন সূত্র জানায়, বাস্তবায়নের এই পুরো প্রক্রিয়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে উল্লেখ থাকবে। আদেশ জারির পর এর কিছু অংশ তাৎক্ষণিকভাবে এবং কিছু কিছু বিষয় পরবর্তী সময়ে কার্যকর হবে। আদেশের কোন ধারা কবে কার্যকর হবে, তা উল্লেখ থাকবে। জুলাই সনদের সর্বসম্মত ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব আদেশের পরিশিষ্টে উল্লেখ থাকবে। সেখানে কোনো দলের ভিন্নমতের উল্লেখ থাকবে না।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমরা সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করেছি। কমিশন আশা করছে, আগামীকালের (আজ সোমবার) মধ্যে সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া সম্ভব হবে।’
দ্বিকক্ষের সংসদ নিয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হলেও গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিমত আছে। বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের পক্ষে। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপিসহ সংলাপে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ দল পিআর ভোটের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের দাবি জানিয়েছে। আবার জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ ইসলামপন্থী কয়েকটি দল উভয় কক্ষেই পিআরের ভিত্তিতে ভোট চেয়েছে। একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপি পিআরে উচ্চকক্ষ মানলে নিম্নকক্ষের পিআরের দাবি থেকে দলগুলো সরে যাবে। বিষয়টি আদেশে আলাদা করে রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বৈঠক সূত্র জানায়, গণভোটে যদি সনদ বেশি ‘হ্যাঁ’ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়, তাহলে আগামী সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠন বাধ্যতামূলক হবে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি আদেশে আলাদা করে লেখা থাকবে। সংবিধান সংস্কার পরিষদেও সংস্কার প্রস্তাব পাস হলে এর পরের ১৫ দিনের মধ্যে দলগুলো তাদের উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে।
আগামী সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে সনদ বাস্তবায়ন না করলে কী হবে, সে বিষয়ে কমিশন নানা বিকল্প নিয়ে আলোচনা করেছে। গতকাল বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন, গণভোটে সংস্কার প্রস্তাবগুলো পাস হলে আগামী সংসদে সেগুলো বাস্তবায়ন করা বাধ্যতামূলক হবে। কমিশন এটিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। এর বাইরে কোনো নিশ্চয়তা বিধান করা যায় কি না, তা-ও কমিশনের বিবেচনায় আছে।
সংসদ বাস্তবায়ন না করলে কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘জুলাই সনদ যেহেতু রাজনৈতিক দলিল, তাই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়ন করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। রাজনীতিকদের ওপর আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে।’
কমিশনের পক্ষ থেকে আদেশের সঙ্গে বিকল্প একটি প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে বলে সূত্রে জানা গেছে। কমিশন সরকারকে গণভোট নিয়ে একটি আইন তৈরি করতে বলার কথা ভেবেছে। এতে সনদের সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো থাকবে। সে ক্ষেত্রে সব প্রস্তাবের সমন্বয়ে একটি আইন বানাতে হবে। গণভোটে এটা উঠবে। সমন্বিত আইনটি পাস হয়ে গেলে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান পরিষদ পুরো বাস্তবায়ন না করতে পারলেও আইনটি সংবিধানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে যাবে। তবে কমিশনের এই প্রস্তাবে বিশেষজ্ঞদের সায় নেই বলে জানা গেছে।
এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘কমিশনের বিকল্প প্রস্তাবে বিষয়টি থাকবে। তবে আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় আমরা এটা সমর্থন করিনি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ অনুমোদন করেন কি না’ এবং ‘সংস্কার প্রস্তাবের বাস্তবায়ন চান কি না’—গণভোটে এ রকম প্রশ্ন রাখার কথা বিবেচনা করছে ঐকমত্য কমিশন। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে ঐকমত্য কমিশন যেভাবে সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছে, সেভাবেই বাস্তবায়িত হবে। এখানে কোনো দলের ভিন্নমত গুরুত্ব পাবে না।
গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকলেও গণভোট কবে হবে, এর ভিত্তি কী হবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, এসব ক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে মতবিরোধ আছে। ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, গণভোটের দিন-তারিখ কবে হবে এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ রাষ্ট্রপতি, নাকি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জারি করবেন, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গতকাল তাদের সংসদ ভবনের কার্যালয় থেকে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করে। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যুক্ত হন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন। আলোচনায় কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। জাতীয় ঐকমত্য গঠনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও সভায় উপস্থিত ছিলেন।

রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গণভোটের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদে বাস্তবায়ন আদেশ পাস হয়ে গেলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ থাকতে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। নতুন সংসদ নির্ধারিত ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার বাস্তবায়ন না করলে কী হবে, সে বিষয়েও একটি বিকল্প ভাবা হচ্ছে।
সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশের খসড়া তৈরির কাজ গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। প্রস্তাবিত সময়ের মধ্যে নতুন সংসদ সংস্কার বাস্তবায়ন না করলে করণীয় কী হবে, তা গতকাল রাত বা আজ (সোমবার) সকালের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। আজ সকালে কমিশনের আবার বৈঠকের মাধ্যমে সুপারিশ চূড়ান্ত করে দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
সনদ বাস্তবায়নে কমিশন সুপারিশের যে রূপরেখা ঠিক করেছে, তাতে প্রথমে গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করা হবে। তার অধীনে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে করা হবে গণভোট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যেই সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে।
কমিশন সূত্র জানায়, বাস্তবায়নের এই পুরো প্রক্রিয়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে উল্লেখ থাকবে। আদেশ জারির পর এর কিছু অংশ তাৎক্ষণিকভাবে এবং কিছু কিছু বিষয় পরবর্তী সময়ে কার্যকর হবে। আদেশের কোন ধারা কবে কার্যকর হবে, তা উল্লেখ থাকবে। জুলাই সনদের সর্বসম্মত ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব আদেশের পরিশিষ্টে উল্লেখ থাকবে। সেখানে কোনো দলের ভিন্নমতের উল্লেখ থাকবে না।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমরা সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করেছি। কমিশন আশা করছে, আগামীকালের (আজ সোমবার) মধ্যে সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া সম্ভব হবে।’
দ্বিকক্ষের সংসদ নিয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হলেও গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিমত আছে। বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের পক্ষে। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপিসহ সংলাপে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ দল পিআর ভোটের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের দাবি জানিয়েছে। আবার জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ ইসলামপন্থী কয়েকটি দল উভয় কক্ষেই পিআরের ভিত্তিতে ভোট চেয়েছে। একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপি পিআরে উচ্চকক্ষ মানলে নিম্নকক্ষের পিআরের দাবি থেকে দলগুলো সরে যাবে। বিষয়টি আদেশে আলাদা করে রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বৈঠক সূত্র জানায়, গণভোটে যদি সনদ বেশি ‘হ্যাঁ’ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়, তাহলে আগামী সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠন বাধ্যতামূলক হবে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি আদেশে আলাদা করে লেখা থাকবে। সংবিধান সংস্কার পরিষদেও সংস্কার প্রস্তাব পাস হলে এর পরের ১৫ দিনের মধ্যে দলগুলো তাদের উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে।
আগামী সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে সনদ বাস্তবায়ন না করলে কী হবে, সে বিষয়ে কমিশন নানা বিকল্প নিয়ে আলোচনা করেছে। গতকাল বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন, গণভোটে সংস্কার প্রস্তাবগুলো পাস হলে আগামী সংসদে সেগুলো বাস্তবায়ন করা বাধ্যতামূলক হবে। কমিশন এটিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। এর বাইরে কোনো নিশ্চয়তা বিধান করা যায় কি না, তা-ও কমিশনের বিবেচনায় আছে।
সংসদ বাস্তবায়ন না করলে কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘জুলাই সনদ যেহেতু রাজনৈতিক দলিল, তাই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়ন করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। রাজনীতিকদের ওপর আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে।’
কমিশনের পক্ষ থেকে আদেশের সঙ্গে বিকল্প একটি প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে বলে সূত্রে জানা গেছে। কমিশন সরকারকে গণভোট নিয়ে একটি আইন তৈরি করতে বলার কথা ভেবেছে। এতে সনদের সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো থাকবে। সে ক্ষেত্রে সব প্রস্তাবের সমন্বয়ে একটি আইন বানাতে হবে। গণভোটে এটা উঠবে। সমন্বিত আইনটি পাস হয়ে গেলে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান পরিষদ পুরো বাস্তবায়ন না করতে পারলেও আইনটি সংবিধানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে যাবে। তবে কমিশনের এই প্রস্তাবে বিশেষজ্ঞদের সায় নেই বলে জানা গেছে।
এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘কমিশনের বিকল্প প্রস্তাবে বিষয়টি থাকবে। তবে আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় আমরা এটা সমর্থন করিনি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ অনুমোদন করেন কি না’ এবং ‘সংস্কার প্রস্তাবের বাস্তবায়ন চান কি না’—গণভোটে এ রকম প্রশ্ন রাখার কথা বিবেচনা করছে ঐকমত্য কমিশন। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে ঐকমত্য কমিশন যেভাবে সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছে, সেভাবেই বাস্তবায়িত হবে। এখানে কোনো দলের ভিন্নমত গুরুত্ব পাবে না।
গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকলেও গণভোট কবে হবে, এর ভিত্তি কী হবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, এসব ক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে মতবিরোধ আছে। ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, গণভোটের দিন-তারিখ কবে হবে এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ রাষ্ট্রপতি, নাকি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জারি করবেন, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গতকাল তাদের সংসদ ভবনের কার্যালয় থেকে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করে। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যুক্ত হন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন। আলোচনায় কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। জাতীয় ঐকমত্য গঠনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও সভায় উপস্থিত ছিলেন।

বর্তমান বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। সেটি পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রাখার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সেই সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবি
১৬ জানুয়ারি ২০২৫
সহকারী উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সহকারী উপজেলা ও থানা ইলেকশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার গ্রাহকপ্রতি মোবাইল সিম কার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রোববার দুপুরে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। বৈঠকে ত্রয়োদশ
৮ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ মতবিনিময় ও প্রস্তুতিমূলক সভা ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বেলা ৩টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
৮ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সহকারী উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সহকারী উপজেলা ও থানা ইলেকশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সম্প্রতি আগারগাঁওয়ের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) উপজেলা বা থানা বা সমমান ইলেকশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ আশফাকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গাজীপুর সদর উপজেলার সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলমকে সভাপতি এবং গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শরীফ আল রায়হানকে মহাসচিব করা হয়েছে।
এ ছাড়া কমিটিতে আরও যাঁরা যাঁরা আছেন—

সহকারী উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সহকারী উপজেলা ও থানা ইলেকশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সম্প্রতি আগারগাঁওয়ের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) উপজেলা বা থানা বা সমমান ইলেকশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ আশফাকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গাজীপুর সদর উপজেলার সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলমকে সভাপতি এবং গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শরীফ আল রায়হানকে মহাসচিব করা হয়েছে।
এ ছাড়া কমিটিতে আরও যাঁরা যাঁরা আছেন—

বর্তমান বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। সেটি পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রাখার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সেই সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবি
১৬ জানুয়ারি ২০২৫
রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গণভোটের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদে বাস্তবায়ন আদেশ পাস হয়ে গেলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ থাকতে পারে বলে একাধিক সূত্
৩ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার গ্রাহকপ্রতি মোবাইল সিম কার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রোববার দুপুরে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। বৈঠকে ত্রয়োদশ
৮ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ মতবিনিময় ও প্রস্তুতিমূলক সভা ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বেলা ৩টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
৮ ঘণ্টা আগেআইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার গ্রাহকপ্রতি মোবাইল সিম কার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রোববার দুপুরে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। বৈঠকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী একজন গ্রাহক তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে সর্বোচ্চ ১৫টি মোবাইল সিম নিবন্ধন করতে পারেন। ৩০ অক্টোবরের পর একটি এনআইডির বিপরীতে সিম নিবন্ধনের সংখ্যা ১০টিতে নামিয়ে আনা হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গ্রাহকপ্রতি সিমের সংখ্যা আরও কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, কোনো ঘটনা ঘটার পর দেখা যায়, সিমটি সেই ব্যক্তির নামে নিবন্ধন করা নয়। একজনের নামের সিম কার্ড অন্যজন ব্যবহার করে অপরাধ করে। এতে প্রকৃত দোষী ব্যক্তি অনেক সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। এ জন্য নির্বাচনের আগে ব্যক্তিপর্যায়ে নিবন্ধন করা সিম কার্ড কমিয়ে আনা হবে।
নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আপত্তি আসেনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আগেও ছিল, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোতে নিয়োগ ও পদায়নের ক্ষেত্রে কোনো পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি। কারও বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ ও পদায়ন করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু ও ভালোভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির এ বৈঠকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় উঠেছে। দেশব্যাপী চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতকারীদের কর্মকাণ্ড রোধ, জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলার রেকর্ড, তদন্ত অগ্রগতি, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী উসকানিমূলক সাইবার প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনগত ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
এ ছাড়া মাদকের অপব্যবহার রোধ, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিনপরবর্তী সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও প্রতিরোধ, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনগুলোর অপতৎপরতা রোধ, পোশাক কারখানা–ওষুধশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির তৎপরতা রোধ, অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান, সীমান্ত ও পার্বত্যাঞ্চল পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং মা ইলিশ সংরক্ষণ নিয়েও আলোচনা হয়।
ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার গ্রাহকপ্রতি মোবাইল সিম কার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রোববার দুপুরে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। বৈঠকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী একজন গ্রাহক তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে সর্বোচ্চ ১৫টি মোবাইল সিম নিবন্ধন করতে পারেন। ৩০ অক্টোবরের পর একটি এনআইডির বিপরীতে সিম নিবন্ধনের সংখ্যা ১০টিতে নামিয়ে আনা হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গ্রাহকপ্রতি সিমের সংখ্যা আরও কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, কোনো ঘটনা ঘটার পর দেখা যায়, সিমটি সেই ব্যক্তির নামে নিবন্ধন করা নয়। একজনের নামের সিম কার্ড অন্যজন ব্যবহার করে অপরাধ করে। এতে প্রকৃত দোষী ব্যক্তি অনেক সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। এ জন্য নির্বাচনের আগে ব্যক্তিপর্যায়ে নিবন্ধন করা সিম কার্ড কমিয়ে আনা হবে।
নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আপত্তি আসেনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আগেও ছিল, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোতে নিয়োগ ও পদায়নের ক্ষেত্রে কোনো পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি। কারও বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ ও পদায়ন করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু ও ভালোভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির এ বৈঠকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় উঠেছে। দেশব্যাপী চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতকারীদের কর্মকাণ্ড রোধ, জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলার রেকর্ড, তদন্ত অগ্রগতি, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী উসকানিমূলক সাইবার প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনগত ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
এ ছাড়া মাদকের অপব্যবহার রোধ, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিনপরবর্তী সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও প্রতিরোধ, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনগুলোর অপতৎপরতা রোধ, পোশাক কারখানা–ওষুধশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির তৎপরতা রোধ, অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান, সীমান্ত ও পার্বত্যাঞ্চল পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং মা ইলিশ সংরক্ষণ নিয়েও আলোচনা হয়।
ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বর্তমান বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। সেটি পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রাখার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সেই সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবি
১৬ জানুয়ারি ২০২৫
রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গণভোটের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদে বাস্তবায়ন আদেশ পাস হয়ে গেলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ থাকতে পারে বলে একাধিক সূত্
৩ ঘণ্টা আগে
সহকারী উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সহকারী উপজেলা ও থানা ইলেকশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ মতবিনিময় ও প্রস্তুতিমূলক সভা ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বেলা ৩টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
৮ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ মতবিনিময় ও প্রস্তুতিমূলক সভা ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বেলা ৩টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
আজ রোববার সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো সভার চিঠি থেকে জানা যায়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সভাটি অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। সভায় অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত থাকবেন।
চিঠিতে বলা হয়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় ও প্রাক-প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ইসির চিঠি অনুযায়ী, অন্তত ৩১ জন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাকে সভায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রিত কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন—মন্ত্রিপরিষদসচিব; স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, নৌপরিবহন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব; পররাষ্ট্র, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ (সমন্বয় ও সংস্কার), অর্থ বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবেরা। এর পাশাপাশি জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিবকেও বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর নির্বাহী পরিচালক বা উপযুক্ত কোনো কর্মকর্তাকে সভায় পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ডাক অধিদপ্তর, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস), ঢাকাকেও সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এর আগে ২০ অক্টোবর ইসি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা করেছে।
কমিশন গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করে। এর অংশ হিসেবে ২৮ সেপ্টেম্বর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয় এবং একই দিন শিক্ষকদের সঙ্গেও আলোচনা করে ইসি। সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গেও আরও সংলাপ আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ মতবিনিময় ও প্রস্তুতিমূলক সভা ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বেলা ৩টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
আজ রোববার সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো সভার চিঠি থেকে জানা যায়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সভাটি অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। সভায় অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত থাকবেন।
চিঠিতে বলা হয়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় ও প্রাক-প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ইসির চিঠি অনুযায়ী, অন্তত ৩১ জন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাকে সভায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রিত কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন—মন্ত্রিপরিষদসচিব; স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, নৌপরিবহন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব; পররাষ্ট্র, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ (সমন্বয় ও সংস্কার), অর্থ বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবেরা। এর পাশাপাশি জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিবকেও বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর নির্বাহী পরিচালক বা উপযুক্ত কোনো কর্মকর্তাকে সভায় পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ডাক অধিদপ্তর, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস), ঢাকাকেও সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এর আগে ২০ অক্টোবর ইসি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা করেছে।
কমিশন গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করে। এর অংশ হিসেবে ২৮ সেপ্টেম্বর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয় এবং একই দিন শিক্ষকদের সঙ্গেও আলোচনা করে ইসি। সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গেও আরও সংলাপ আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন।

বর্তমান বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। সেটি পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রাখার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সেই সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবি
১৬ জানুয়ারি ২০২৫
রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গণভোটের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদে বাস্তবায়ন আদেশ পাস হয়ে গেলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ থাকতে পারে বলে একাধিক সূত্
৩ ঘণ্টা আগে
সহকারী উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সহকারী উপজেলা ও থানা ইলেকশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার গ্রাহকপ্রতি মোবাইল সিম কার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রোববার দুপুরে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। বৈঠকে ত্রয়োদশ
৮ ঘণ্টা আগে