Ajker Patrika

সংস্কার কমিশনে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নেই: ড. দেবপ্রিয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
টানা তৃতীয়বার জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্টের (সিডিপি) সদস্য হয়েছেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি
টানা তৃতীয়বার জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্টের (সিডিপি) সদস্য হয়েছেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি

নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকার যেসব সংস্কার কমিশন করেছে, সেখানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সঠিক প্রতিনিধিত্ব নেই। সংস্কার হবে আর পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নতি হবে না। তাহলে ওই সংস্কার দিয়ে জনগণ কী করবে?

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট (ভিএনআর) ২০২৫: পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশার অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কের দপ্তর ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।  

ড. দেবপ্রিয় বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু লোক নৈতিক খবরদারি করার দায়িত্ব নিয়েছে। তাদের সংখ্যা বড় নয়। কিন্তু তারা কাজটা করছে বড়ভাবে। আগামী নির্বাচনের আগে পিছিয়ে পড়া মানুষের ভোটার লিস্টে অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং তাদের ভোটের নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না বলে মত প্রকাশ করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।  

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি শুরু হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য প্রতিশ্রুতি আলাদাভাবে না থাকলে তারা ইশতেহার গ্রহণ করবে না।

সরকার বদল হলে শাসনপদ্ধতি বদল হয় না উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বর্তমান সময়ও সেটা দেখা যাচ্ছে। সরকার যা বলছে, আর বাস্তবতার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। গণতন্ত্রের অভাবের সময়ে যে বিপন্নতা ছিল, তা এখনো দূর হয়নি। নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী সকলে বিপন্নতার মধ্যে আছে। ফলে সরকার বদলেই কাঠামোগত বৈষম্য থেকে মুক্তি পায়নি বৃহৎ জনগোষ্ঠী। যারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অসুবিধাগ্রস্ত, তারা আগের তুলনায় এখনো যে নিরাপদ বোধ করছে, তা নয়।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা সবাই বললাম, এই পরিবর্তন বৈষম্যবিরোধী। কিন্তু সব বৈষম্য নিয়ে কি কথা হয়? লিঙ্গবৈষম্য, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈষম্য ও সুরক্ষা, নারীর বৈষম্য নিয়ে কি কথা হচ্ছে? হচ্ছে না।’

জনগণ এত দিন বিভ্রান্তিকর উন্নয়নের বয়ানে ছিল উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এখন প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার সময় এসেছে। বাংলাদেশের গড়ে উন্নতি হলেও পার্থক্য রয়ে গেছে। উন্নয়নের মধ্যে সকলে সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। সমাজের কোন অবস্থান থেকে, কোন গোত্র থেকে এসেছে, তার ওপর নির্ভর করেছে কে উন্নয়নের সুবিধা পাবে, আর কে পাবে না।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘গড় আয়ু বেড়েছে, কিন্তু গরিবদের গড় আয়ু বাড়েনি। স্কুলের অন্তর্ভুক্তি শতভাগ হয়েছে, কিন্তু গরিবদের সবাই স্কুলে যায় না। এ জন্য সঠিক পরিসংখ্যান দরকার। সঠিক পরিসংখ্যান না হলে সবাইকে নীতির মধ্যে আনা যাবে না।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ। তিনি বলেন, ‘এত দিন উন্নয়ন ঢাকা শহরের বাইরে যায়নি। প্রকৃত তথ্য তুলে ধরা হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী, শিশু, প্রতিবন্ধী আদিবাসী, দলিত, নারীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে সমস্যা রয়েছে। এগুলো থেকে উতরানোর চ্যালেঞ্জও অনেক।’

সরকার প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করে নীতি প্রণয়নের কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় এসডিজি রিপোর্টে (ভিএনআর) প্রকৃত তথ্য তুলে ধরা হবে।’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় ঢাকার জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খানসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত