সাইফুল মাসুম, চকরিয়া (কক্সবাজার) থেকে ফিরে

‘আমার একটি নদী ছিল’র মতো হৃদয়স্পর্শী আরেকটি গান হতে পারে- ‘চকরিয়ায় একটি সুন্দরবন ছিল’। এই বনের আয়তন ছিল সাড়ে ৪৫ হাজার একর; আসল সুন্দরবনের প্রায় ৭ ভাগের এক ভাগ। এই বনেও ছিল কেওড়া, বাইন, সুন্দরীর মতো শ্বাসমূলীয় গাছপালা। বনে ঘুরে বেড়াতো হরিণ, বানর, বাঘ। নদী-খালের নোনাজলে ছিল মাছ, কাঁকড়া, কুমির। এই চকরিয়া সুন্দরবনও দেশের একটি বিশাল জনপদকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচিয়ে দিত নিজের বুক পেতে। কিন্তু আজ আর কিছুই নেই।
কেন নেই? কীভাবে নেই? কারা ‘নেই’ করল সব? প্রশ্নগুলো মাথায় নিয়ে মাঠে নেমেই জানা যায়, মানুষের হাতেই ধ্বংসের সূত্রপাত এই সুন্দরবনের। আর ধ্বংসের ষোলোকলা পূর্ণ করে অন্য কেউ নয়, দেশের মানুষ ও সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব নেওয়া সরকারগুলোই। নিজেদের সমর্থকগোষ্ঠী প্রভাবশালী লোকজনের কাছে ইজারা দিয়ে সেখানে চিংড়ি চাষের ব্যবস্থা করে উজাড় করা হয় আস্ত একটা সুন্দরবন। একটা দেশের সরকারের হাতে প্রকৃতি ধ্বংসের এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার কথা আগেই জানা গেলেও গত তিন মাসের অনুসন্ধানে আমরা খুঁজে দেখেছি, এখন সেখানে কী চলছে! দেখা গেছে, একসময় যে মাটিতে দৃঢ় শ্বাসমূল-ঠেসমূলের ওপর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ছিল ম্যানগ্রোভ গাছের গহিন বন; এখন সেখানে শুধুই নোনাপানির ঘের আর তার গভীরে ঘটে চলা অনিয়ম-দুর্নীতি আর দখল-রাহাজানির এক কালো অধ্যায়।
উপকূলের এই দ্বিতীয় প্রহরীখ্যাত কক্সবাজারের চকরিয়া সুন্দরবনে প্রথম সরকারি কোপ পড়ে ১৯৭৮ সালে। দেশে চিংড়ি চাষ প্রসারের কথা বলে রামপুর মৌজায় প্যারাবনের (এই অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ বন) বেশির ভাগ জমি ইজারা দেয় তখনকার বিএনপি সরকার। পরে ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকার আবার সেই ইজারা বাতিল করে নতুন করে দুই দফায় মোট ৭ হাজার একর বনভূমি ইজারা দেয়। ইজারাদাররা যার যার অংশের বন উজাড় করে মাটি কেটে পাড় বেঁধে তৈরি করেন চিংড়ি ঘের। ২ থেকে ৫ ফুট গভীরতার সেই সব ঘের এখনো আছে; কিন্তু যে উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল, তা প্রায় ভেস্তে গেছে। ঘের ব্যবস্থাপনার জন্য নীতিমালা করা হলেও তা রয়ে গেছে কাগজেই। ইজারাদাররা কেউ চিংড়ি চাষ না করে নীতিমালা ভেঙে ঘেরগুলো অন্যদের কাছে সাবলিজ দিয়ে অর্থ আয় করছেন। ঘের ঘিরে গড়ে উঠেছে সন্ত্রাসী চক্র। সব আমলে ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সন্ত্রাসীরা সেখানে ‘যা খুশি তাই’ করে চলেছে। আর সব অপকর্মের দোসর হয়ে ফায়দা লুটছে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। অনুসন্ধানকালে চকরিয়া চিংড়ি ঘেরের ১৫ জন ইজারদার; সাবলিজ নেওয়া ৫০ জন চিংড়ি চাষি; মৎস্য অধিদপ্তরের ১০ জন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঘের সংশ্লিষ্ট অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা হয়েছে আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদকের।
নীতিমালার পাত্তা নেই
চকরিয়ার বদরখালী এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন খান বেসরকারি সংস্থা ‘উবিনীগ’-এর কক্সবাজার জেলার আঞ্চলিক সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি তাঁর শৈশবে ঘাস সংগ্রহকারীদের সঙ্গে একাধিকবার বনে ঢুকেছেন। তিনি বলেন, তখন এই চকরিয়া সুন্দরবন ঘিরে অনেক মানুষের জীবিকা নির্বাহ হতো। এখন তো বনের কোনো চিহ্নই নেই। তিনি জানান, উবিনীগ ১৯৯৩ সালে মহেশখালী চ্যানেল ও মাতামহুরী নদীর ৭ কিলোমিটার এলাকায় গাছ লাগিয়েছিল। সেগুলোরও বেশির ভাগ উজাড় করে ঘের করা হয়েছে।’
চকরিয়া বন বিভাগের তথ্য অনুসারে, স্বাধীনতার পর চকরিয়া সুন্দরবনের আয়তন ছিল ২১ হাজার একর। এর মধ্যে সংরক্ষিত বনভূমি ছিল ১৮ হাজার ৫০০ আর রক্ষিত বনভূমি (মালিকানায় জেলা প্রশাসন, ব্যবস্থাপনায় বন বিভাগ) ছিল ২ হাজার ৫০০ একর। পরে মৎস্য অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরকে হস্তান্তর করা হয় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার একর। সেই হিসাবে কাগজে অবশিষ্ট বনভূমি থাকার কথা সাড়ে ৮ হাজার একর। তবে চকরিয়া সুন্দরবনের রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহারাজ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাস্তবে এখানে আর কোনো বনভূমি নেই। সব জবরদখল ও উজাড় হয়ে গেছে। রেঞ্জ অফিস থাকলেও আমাদের কোনো কার্যক্রম নেই।’
মূলত মৎস্য অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা বনভূমিতেই চিংড়ি চাষের পরিকল্পনা করা হয়। ১৯৭৮ সালে চকরিয়ার রামপুর মৌজায় চিংড়ি এস্টেটের কার্যক্রম শুরু হয়। ঘেরের ইজারা ও ব্যবস্থাপনা চলে দুটি আলাদা প্রকল্প ও অফিস আদেশের মাধ্যমে। পরে ঘের পরিচালনায় প্রথম নীতিমালা করা হয় ২০১১ সালে। ২০১৩ সালে সেটা সংস্কার করা হয়। নীতিমালায় বলা আছে, প্রকৃত চিংড়ি চাষিরাই শুধু ইজারা পাবেন। এ ক্ষেত্রে মৎস্য বিজ্ঞানে ডিপ্লোমাধারী, গ্র্যাজুয়েট বা প্রশিক্ষিত বেকার যুবক ও যুবতিরা অগ্রাধিকার পাবেন। ইজারাপ্রাপ্ত জমি কোনো অবস্থাতেই অন্য কারও কাছে বর্গা, সাবলিজ বা বন্ধক দেওয়া যাবে না।
কিন্তু ইজারাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের তালিকা যাচাই করে দেখা গেছে, অধিকাংশই চিংড়ি চাষের সঙ্গে জড়িত নন এবং তাঁরা ক্ষমতাধর রাজনীতিক ও আমলা বা তাদের আশীর্বাদপুষ্ট লোকজন। তাদের বড় অংশের ঠিকানা কক্সবাজারের বাইরে ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলে। নীতিমালায় সাবলিজ দিলে ইজারা বাতিলের কথা স্পষ্টভাবে বলা থাকলেও গত ৩৯ বছরে কাউকে নোটিশ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অথচ অনুসন্ধানকালে একজন মূল ইজারাদারকেও ঘেরে চিংড়ি চাষ করতে দেখা যায়নি। তবে এ রকম দুই-চারজন আছেন বলে শোনা গেছে। হাতেগোনা এই ক’জন বাদে আর সবাই যার যার ঘের সাবলিজ দিয়ে দিয়েছেন। আর এসব ঘটছে মৎস্য অধিদপ্তরের নাকের ডগায়। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চিংড়ি চাষিদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান, উন্নত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও সরেজমিনে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। নীতিমালা বাস্তবায়নেও তাদের কোনো তৎপরতা নেই। অধিদপ্তরের প্রদর্শনী ঘেরে আগে অফিস থাকলেও এখন তা নেই।
ইজারা পেয়েছেন কারা
নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯৭৮ সালে জিয়া সরকারের নির্দেশে ৩৯ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে চিংড়ি চাষের জন্য চকরিয়া সুন্দরবনের প্রায় পাঁচ হাজার একর বনভূমি ইজারা দেয় মৎস্য অধিদপ্তর। তখন ১৭ জনকে দেড় শ’ ও ২২ জনকে এক শ’ একর করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরের বছর একই উদ্দেশ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহযোগিতায় আরও দুই হাজার একর প্যারাবন ১১ একর করে ১১৯টি প্লটে ভাগে করে ১১৯ ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়া হয়।
পরে ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) প্রকল্পের আওতায় পাঁচ হাজার একরে আগের ৩৯ জনের ইজারা বাতিল করা হয় এবং ১০ একর করে ৪৬৭ প্লটে ভাগ করে ইজারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩২৫ ব্যক্তি ও ৪২টি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন পায় ৪৫১টি প্লট। মামলা ও বিরোধের কারণে ১৬টি প্লটের ইজারা বাতিল অবস্থায় আছে। মৎস্য অধিদপ্তরের ৪৮ একরের প্রদর্শনী প্লটসহ ১০ একরের ঘের এলাকায় মোট ৪৬৮টি প্লট রয়েছে। প্রথম মেয়াদে ১০ বছর, দ্বিতীয় মেয়াদে ১৫ বছর আর তৃতীয় মেয়াদে ২০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। ইজারায় প্রতি একরের জন্য বার্ষিক রাজস্ব ধরা হয় ২ হাজার টাকা করে। পাঁচ বছর পরপর ২ শতাংশ হারে রাজস্ব বৃদ্ধির কথাও বলা আছে নীতিমালায়।
তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, ১০ একরের ৪৮ নং প্লট ইজারা পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা। ১০৯ নং প্লট ইজারা পেয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও বড়ইতলি ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী ইয়াছমিন চৌধুরী জলি। ২২০ নং প্লট পেয়েছেন কক্সবাজার জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রয়াত জালাল আহমেদ চৌধুরীর ছেলে এম রেজাউল করিম চৌধুরী। ৩৩৬ নং প্লট কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ; ৩৩৩-৩৩৫ তিনটি প্লট ডুলাহাজারা ইউপির দুইবারের চেয়ারম্যান ও চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী (খোকন মিয়া); ৩৩৯-৩৪১ তিনটি প্লট চিরিংগা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এম সালাহ উদ্দিন; ৩২৭-৩২৯ প্লট তিনটি বিএনপি মাতামুহুরি সাংগঠনিক উপজেলা সভাপতি জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী।
১১ একরের ৩৪ নং প্লট ইজারা পেয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খোরশেদ আরা হক। ৪৩ নং প্লট চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহানারা পারভীন; ৬২ নং প্লট মহেশখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহীম; ১১৮ নং প্লট ইজারা পেয়েছেন চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ সালাউদ্দিন মাহমুদ।
জানা গেছে, এফবিসিসিআই এর তালিকাভুক্ত ‘বাংলাদেশ ১০-১১ একর চিংড়ি প্রজেক্ট মালিক অ্যাসোসিয়েশন’ নামে চকরিয়া চিংড়ি ঘেরের ইজারাদারদের একটি সংগঠন রয়েছে। সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন রাবেয়া আজিজ। তিনি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এম এ আজিজের স্ত্রী। ইজারা পাওয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশন। ১০ একর চিংড়ি এস্টেটের ৪৩৮-৪৬৭ নম্বরের ৩০টি প্লটে মোট ৩০০ একর ইজারা পেয়েছে এই ফাউন্ডেশন।
চুক্তি করে সাবলিজ
দফায় দফায় চকরিয়ায় গিয়ে যে ৫০ জন চিংড়ি চাষির সঙ্গে কথা হয়, তারা কেউ ইজারাদার নন। বছরে ঘেরপ্রতি দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তিতে সাবলিজ নিয়ে তারা চিংড়ি চাষ করছেন। সাবলিজের ১৫টি চুক্তিপত্র সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। ১০০ ও ৫০ টাকার স্ট্যাম্পে বেশির ভাগ চুক্তিপত্রে লেখার ধরন একই। ১০ একর চিংড়ি ঘেরের ১০০ নম্বর প্লটের ইজারাদার বাঁশখালীর বাসিন্দা জাফর আহমদ। চকরিয়ার করাইয়াঘোনার বাসিন্দা জসিম উদ্দিনকে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে প্লটটি তিনি সাবলিজ দিয়েছেন। এর জন্য বছরে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার চুক্তি হয়। দুই বছরের অগ্রিম টাকাও নেন জাফর। জানতে চাইলে জাফর আহমদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টাকার প্রয়োজন হওয়ায় কয়েক বছরের সাবলিজ দিয়েছি।’
২১৭ ও ২১৮ নম্বর প্লটে ১০ বছর ধরে চিংড়ি চাষ করেন চকরিয়ার ছোঁয়াফাড়ি এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মালেক (৪২)। তিনি জানান, প্লট দুটি মূলত তার মামা হেলাল সওদাগর ২০০৯ সাল সাবলিজ নিয়েছেন। ২০১৪ সালে মামার কাছ থেকে তিনি প্লট দুটো বর্গা নেন। আব্দুল মালেক জানান, প্রতি বছর সাবলিজের দুই লাখ করে চার লাখ টাকা তার মামা হেলালের মাধ্যমে মূল ইজারাদারদের কাছে পাঠিয়ে দেন। সাবলিজের দুই লাখ টাকা, চাঁদা, মাটিকাটা ও চিংড়ি চাষ বাবদ ১০ একরের একটি ঘেরে বছরে প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ হয়। মাছের উৎপাদন ভালো হলে খরচ বাদে পাঁচ লাখ টাকারও বেশি লাভ থাকে।
২১৭ নং প্লটের ইজারাদার দেওয়ান জহির আহমেদ ও ২১৮ নম্বর প্লটের ইজারাদার কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী। দেওয়ান জহির আহমেদের বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে হলেও তিনি চকরিয়ার চিরিংগা ইউনিয়নের ঠিকানা দিয়েছেন। কারণ জানতে চাইলে বলেন, আগে চকরিয়ায় তিনি লবণের ব্যবসা করতেন। ১০ একর ঘেরের ৩ নম্বর প্লটের ইজারা পেয়েছেন ঢাকার শ্যামপুরের বাসিন্দা ও সোনালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেগম রাশেদা আউয়াল। ১৯৮৬ সালে সরকারি ব্যাংকে চাকরি করা অবস্থায় তিনি চিংড়ির প্লট ইজারা পান। তাঁর ঘেরে চিংড়ি ও লবণ চাষ করেন বদরখালীর বাসিন্দা গিয়াসউদ্দিন। তিনি জানান, ছোঁয়াফাড়ির হাবিবুর রহমান থেকে বছরে চার লাখ ৬৫ হাজার টাকায় ঘের সাবলিজ নিয়েছেন। রাশেদা আউয়ালের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই।
সাবলিজ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদা আউয়াল বলেন, ‘এ রকম অনেকেই করে।’ তাঁর প্লটে কে চিংড়ি চাষ করে প্রশ্ন করলে তিনি নাম বলতে পারেননি। চকরিয়া চিংড়ি ঘেরে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন মৎস্য কর্মকর্তা খন্দকার হাবিবুর রহমান। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘সব ভুয়া লোকজনকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। কেউ রাজনৈতিক প্রভাবে, কেউ টাকা পয়সা দিয়ে ইজারা পেয়েছেন। যে উদ্দেশ্যে চিংড়ির ঘের করা হয়েছে, তার কিছুই হয়নি। ইজারাদাররা সবাই সাবলিজ দিয়ে টাকা খাচ্ছে।’
ঘের দখলের পালা
চকরিয়া চিংড়ি ঘেরে দিনের চিত্র এক রকম, রাতের চিত্র আরেক রকম। ঘের দখল আর মাছ লুট নিয়মিত ঘটনা। একটি সশস্ত্র ডাকাত বাহিনীও গড়ে উঠেছে এখানে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা। তাই সরকার বদলের পর দখলের চিত্রও পাল্টে যায়। রেহাই পায়নি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠানের চিংড়ি ঘেরও। জানা গেছে, ২০২১ সালের ৫ জুলাই রাতে গ্রামীণের ঘের দখল করে নেয় আওয়ামী লীগের এমপি জাফর আলমের বাহিনী। ওই ঘটনায় মারধরের শিকার হওয়া ফাউন্ডেশন কর্মী কবির আহমেদ (৫২) আজকের পত্রিকাকে বলেন, সন্ত্রাসীরা তিনতলা ভবনের অনেক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। ঘরভর্তি মালামাল ছিল, সব নিয়ে গেছে। দখলের পর ওই ঘর হয়ে ওঠে ডাকাতদের আস্তানা। তবে ৫ আগস্ট সরকার বদলের পর দখলমুক্ত হয় গ্রামীণের ঘেরগুলো।
তবে এখনো বেদখলে রয়েছে অনেক প্লট। ১০ একরের ২৪২ নং প্লটের ইজারাদার নারায়ণগঞ্জের দেওভোগের বাসিন্দা নাছরিন আক্তার জানান, করোনার পর থেকে জাফর আলমের সাঙ্গপাঙ্গরা তাঁর প্লট দখল করে রেখেছে। সেখানে তারা ঘরও তুলেছে। ২৩৬ নম্বর প্লট সাবলিজ নিয়ে চিংড়ির চাষ করেন শাহানবিল ইউনিয়নের কোরালখালীর বাসিন্দা নুরুল আলম। তিনি বলেন, প্রতি জোতে ডাকাতদের প্লটপ্রতি এক হাজার টাকা করে দিতে হয়। মাসে দুইবার টাকা না দিলে ওরা মাছ লুট করে নিয়ে যায়।
সম্প্রতি জাহাঙ্গীর নামে এক ডাকাত সরদার গ্রেপ্তার হয়েছে। চকরিয়া থানা-পুলিশের তালিকাভুক্ত ডাকাতের মধ্যে আরও আছে আব্দুস সালাম, নেজাম উদ্দিন, মো. ইব্রাহিম, আব্দুল জলিল, রুহুল আমিন, আব্দুল কাদের, রায়হান মিয়া, আব্দুর সবুর, পুতু মেম্বার, সোহেল অন্যতম। গত ১৫ বছর এই ডাকাতদের পৃষ্ঠপোষকতা করার অভিযোগ রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমের বিরুদ্ধে। সরকার বদলের পর আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মুছা বলেন, কিছু নেতা ও জনপ্রতিনিধি জাফর আলমের নাম ব্যবহার করে নিজেরা ঘের দখল করেছে।’
৫ আগস্টের পর চকরিয়ার চিংড়ি ঘের নিয়ন্ত্রণে কয়েকজন বিএনপি নেতা জড়িয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী (খোকন মিয়া), বিএনপি মাতামুহুরি সাংগঠনিক উপজেলার সভাপতি জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সদস্যসচিব ফখরুউদ্দিন ফরাজী, নজরুল ইসলাম (ব্যাঙ নজরুল), আলী আহমেদ। জানতে চাইলে ফখরুউদ্দিন ফরাজী আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিগত সরকারের সময় সাধারণ মানুষের চিংড়ির প্লট বেদখল ছিল। এখন তা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
স্লুইস গেটে সিন্ডিকেট
চকরিয়ার চিংড়ি এস্টেটে বয়ে যাওয়া নদী-খালে ২৭টি স্লুইচ গেট আছে। জোয়ার-ভাটার সময় এসব গেট দিয়ে চিংড়ি ঘেরে নোনা পানি যাওয়া-আসা করে। ২০-২৫টি ঘেরের জন্য একটি করে গেট। নীতিমালায় বলা আছে, ঘেরগুলোর ইজাদাররা কমিটি করে স্লুইচ গেটের ব্যবস্থাপনা ঠিক করবেন। কিন্তু ইজারাদাররা যেহেতু চিংড়ি চাষ থেকে দূরে, ঘেরগুলো তারা সাবলিজ দিয়ে রেখেছেন; তাই সেখানে কোনো বৈধ কমিটি তৈরি হয়নি। আর এই সুযোগে গেটগুলো কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তারা বিভিন্ন অজুহাতে স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গার্ড পদে আবেদন করিয়ে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে নিয়োগ আদায় করে। পরে তাদের মাধ্যমেই স্লুইস গেটগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চাঁদাবাজি, মাছ লুটের মতো অবৈধ কর্মকাণ্ডে মেতে ওঠে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই গার্ড নিয়োগে মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেন হয়। এ রকম পাঁচটি কাগজ আজকের পত্রিকার কাছে এসেছে, যেখানে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গার্ড নিয়োগের কথা লেখা আছে। কাগজগুলোতে স্বাক্ষর রয়েছে কক্সবাজার চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণের আঞ্চলিক মৎস্য কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলামের। কাগজগুলো মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেখালে তাঁরা জানান, এভাবে গার্ড নিয়োগের কোনো আইনি ভিত্তি নেই।
অনুসন্ধান বলছে, গার্ড নিয়োগের নামে আসলে অতি গুরুত্বপূর্ণ স্লুইচ গেটগুলোকে একধরনের ইজারা দিয়ে রেখেছেন মৎস্য কর্মকর্তারা। একেকটি স্লুইস গেটের ‘ইজারা মূল্য’ বছরে দুই থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত। যারা ইজারা নেন, তারা গেটে নিষিদ্ধ বিন্দিজাল বসিয়ে মাছ ধরেন। বদরখালী এলাকার এক বাসিন্দা জানান, তিনি চার লাখ টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য স্লুইস গেট ইজারা পেয়েছেন। আরেক ‘ইজারাদার’ বজল কবির বলেন, আঞ্চলিক মৎস্য কর্মকর্তা তৌফিককে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে স্লুইচ গেট নিলেও তিনি এখনো দখলে যেতে পারেননি। এই মৎস্য কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ইজারা বাতিল হওয়া কিছু প্লটে মৌখিক ইজারা দিয়ে টাকা কামাইয়ের অভিযোগও আছে। শাহানবিল ইউনিয়নের কোরালখালীর বাসিন্দা চিংড়ি চাষি জুনায়েদ ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইজারা বাতিল হওয়া ১০ একর ঘেরের ৩১৮, ৩১৯ ও ৩২০ নম্বর প্লট মৌখিক ইজারা দিয়ে ২০২৩ সালে তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নেন তৌফিক। ২০২৪ সালের জন্য আবার দুই লাখ টাকা নিলেও সরকার বদলের সুযোগে ওই তিনটি প্লট অন্য আরেক ব্যক্তিকে মৌখিক ইজারা দেন তৌফিক। জুনায়েদ বলেন, ‘তৌফিক সাহেব কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে আমার হাত থেকে টাকাটা নিয়েছেন। অনেক সময় তিনি টাকা সংগ্রহে ব্যবহার করেছেন চকরিয়ার আলমগীর ও মারুফ নামের দুই দালালকে।’
আটজন চিংড়ি চাষি গত ১৫ সেপ্টেম্বর তৌফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে মৎস্য অধিদপ্তর এখনো তদন্ত শুরু করেনি। জানতে চাইলে অভিযোগকারীদের একজন রায়হান কাইছার রিগান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তৌফিক সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগসাজশ রেখে কৌশলে টাকা আদায় করেন। তার আর্থিক অবস্থা নিয়ে তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।’ এই অভিযুক্ত কর্মকর্তা তৌফিক তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে একই পদে রয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে আঞ্চলিক মৎস্য কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অস্থায়ী গার্ড নিয়োগের আবেদনপত্রে প্রথমে কয়েকটিতে স্বাক্ষর করেছি। পরে আর কাউকে দিইনি। কিন্তু পরে অনেকে আমার স্বাক্ষর নকল করে নিয়োগের কাগজ বানিয়ে নিয়েছে।’
‘আপনার স্বাক্ষরিত গার্ড নিয়োগের কাগজগুলো; ঘের মৌখিক ইজারা দিয়ে টাকা নেওয়া এবং চিংড়ি চাষিদের কাছ থেকে মাছ আদায়ের মেসেজ আদান-প্রদানের স্ক্রিনশট আমাদের কাছে আছে’ জানালে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে আবার হোয়াটসঅ্যাপে কল করে বলেন, ‘আগের এমপি জাফর আলম অনেক বিষয়ে রিকোয়েস্ট করত। চাকরি বাঁচাতে কিছু রিকোয়েস্ট রাখতে হতো। না রাখলে ওই এলাকায় যাওয়াও সমস্যা হতো।’ এরপর তৌফিক বলেন, ‘যদি কোনো কিছু করা লাগে, কক্সবাজার আইসেন আমি চেষ্টা করব। বদির রিসোর্ট আছে। আপনার ভালোই লাগবে। কাজ করতে গেলে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি তো হয়ই।’
মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (চিংড়ি) মো. আয়নাল হক বলেন, ‘দুর্নীতির কিছু তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পর তৌফিককে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছি।’ পদাধিকার বলে চিংড়ি ঘেরের স্লুইচ গেটসহ অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি চকরিয়ার ইউএনও। কিন্তু কমিটিতে দায়িত্বে থাকার বিষয়ে কিছুই জানেন না- দাবি করেছেন সদ্য সাবেক ইউএনও মো. ফখরুল ইসলাম।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইজারাদাররা শর্তভঙ্গ করে সাবলিজ দেওয়ায় চিংড়ি ঘেরে সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি। ইজারা পুনর্মূল্যায়ন করে প্রকৃত চিংড়ি চাষি রেখে বাকিদের ইজারা বাতিল করা উচিত। যারা বিশ্বাসভঙ্গ করে সাবলিজ দিয়েছে, শাস্তির পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা উচিত। অনিয়মের সঙ্গে সরকারের যে কর্তাব্যক্তিরা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’ ভবিষ্যতে চিংড়ি ঘের যেন দুর্নীতির ক্ষেত্র হয়ে না ওঠে, তা আইনে যুক্ত করা যেতে পারে বলে এই আইনজ্ঞের মত। সার্বিক বিষয় অবগত করে জানতে চাইলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ‘খোঁজ নেবেন’ বলে জানান। (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর দুর্নীতিবিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ফেলোশিপ-২০২৪ এর আওতায় প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।)

‘আমার একটি নদী ছিল’র মতো হৃদয়স্পর্শী আরেকটি গান হতে পারে- ‘চকরিয়ায় একটি সুন্দরবন ছিল’। এই বনের আয়তন ছিল সাড়ে ৪৫ হাজার একর; আসল সুন্দরবনের প্রায় ৭ ভাগের এক ভাগ। এই বনেও ছিল কেওড়া, বাইন, সুন্দরীর মতো শ্বাসমূলীয় গাছপালা। বনে ঘুরে বেড়াতো হরিণ, বানর, বাঘ। নদী-খালের নোনাজলে ছিল মাছ, কাঁকড়া, কুমির। এই চকরিয়া সুন্দরবনও দেশের একটি বিশাল জনপদকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচিয়ে দিত নিজের বুক পেতে। কিন্তু আজ আর কিছুই নেই।
কেন নেই? কীভাবে নেই? কারা ‘নেই’ করল সব? প্রশ্নগুলো মাথায় নিয়ে মাঠে নেমেই জানা যায়, মানুষের হাতেই ধ্বংসের সূত্রপাত এই সুন্দরবনের। আর ধ্বংসের ষোলোকলা পূর্ণ করে অন্য কেউ নয়, দেশের মানুষ ও সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব নেওয়া সরকারগুলোই। নিজেদের সমর্থকগোষ্ঠী প্রভাবশালী লোকজনের কাছে ইজারা দিয়ে সেখানে চিংড়ি চাষের ব্যবস্থা করে উজাড় করা হয় আস্ত একটা সুন্দরবন। একটা দেশের সরকারের হাতে প্রকৃতি ধ্বংসের এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার কথা আগেই জানা গেলেও গত তিন মাসের অনুসন্ধানে আমরা খুঁজে দেখেছি, এখন সেখানে কী চলছে! দেখা গেছে, একসময় যে মাটিতে দৃঢ় শ্বাসমূল-ঠেসমূলের ওপর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ছিল ম্যানগ্রোভ গাছের গহিন বন; এখন সেখানে শুধুই নোনাপানির ঘের আর তার গভীরে ঘটে চলা অনিয়ম-দুর্নীতি আর দখল-রাহাজানির এক কালো অধ্যায়।
উপকূলের এই দ্বিতীয় প্রহরীখ্যাত কক্সবাজারের চকরিয়া সুন্দরবনে প্রথম সরকারি কোপ পড়ে ১৯৭৮ সালে। দেশে চিংড়ি চাষ প্রসারের কথা বলে রামপুর মৌজায় প্যারাবনের (এই অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ বন) বেশির ভাগ জমি ইজারা দেয় তখনকার বিএনপি সরকার। পরে ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকার আবার সেই ইজারা বাতিল করে নতুন করে দুই দফায় মোট ৭ হাজার একর বনভূমি ইজারা দেয়। ইজারাদাররা যার যার অংশের বন উজাড় করে মাটি কেটে পাড় বেঁধে তৈরি করেন চিংড়ি ঘের। ২ থেকে ৫ ফুট গভীরতার সেই সব ঘের এখনো আছে; কিন্তু যে উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল, তা প্রায় ভেস্তে গেছে। ঘের ব্যবস্থাপনার জন্য নীতিমালা করা হলেও তা রয়ে গেছে কাগজেই। ইজারাদাররা কেউ চিংড়ি চাষ না করে নীতিমালা ভেঙে ঘেরগুলো অন্যদের কাছে সাবলিজ দিয়ে অর্থ আয় করছেন। ঘের ঘিরে গড়ে উঠেছে সন্ত্রাসী চক্র। সব আমলে ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সন্ত্রাসীরা সেখানে ‘যা খুশি তাই’ করে চলেছে। আর সব অপকর্মের দোসর হয়ে ফায়দা লুটছে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। অনুসন্ধানকালে চকরিয়া চিংড়ি ঘেরের ১৫ জন ইজারদার; সাবলিজ নেওয়া ৫০ জন চিংড়ি চাষি; মৎস্য অধিদপ্তরের ১০ জন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঘের সংশ্লিষ্ট অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা হয়েছে আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদকের।
নীতিমালার পাত্তা নেই
চকরিয়ার বদরখালী এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন খান বেসরকারি সংস্থা ‘উবিনীগ’-এর কক্সবাজার জেলার আঞ্চলিক সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি তাঁর শৈশবে ঘাস সংগ্রহকারীদের সঙ্গে একাধিকবার বনে ঢুকেছেন। তিনি বলেন, তখন এই চকরিয়া সুন্দরবন ঘিরে অনেক মানুষের জীবিকা নির্বাহ হতো। এখন তো বনের কোনো চিহ্নই নেই। তিনি জানান, উবিনীগ ১৯৯৩ সালে মহেশখালী চ্যানেল ও মাতামহুরী নদীর ৭ কিলোমিটার এলাকায় গাছ লাগিয়েছিল। সেগুলোরও বেশির ভাগ উজাড় করে ঘের করা হয়েছে।’
চকরিয়া বন বিভাগের তথ্য অনুসারে, স্বাধীনতার পর চকরিয়া সুন্দরবনের আয়তন ছিল ২১ হাজার একর। এর মধ্যে সংরক্ষিত বনভূমি ছিল ১৮ হাজার ৫০০ আর রক্ষিত বনভূমি (মালিকানায় জেলা প্রশাসন, ব্যবস্থাপনায় বন বিভাগ) ছিল ২ হাজার ৫০০ একর। পরে মৎস্য অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরকে হস্তান্তর করা হয় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার একর। সেই হিসাবে কাগজে অবশিষ্ট বনভূমি থাকার কথা সাড়ে ৮ হাজার একর। তবে চকরিয়া সুন্দরবনের রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহারাজ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাস্তবে এখানে আর কোনো বনভূমি নেই। সব জবরদখল ও উজাড় হয়ে গেছে। রেঞ্জ অফিস থাকলেও আমাদের কোনো কার্যক্রম নেই।’
মূলত মৎস্য অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা বনভূমিতেই চিংড়ি চাষের পরিকল্পনা করা হয়। ১৯৭৮ সালে চকরিয়ার রামপুর মৌজায় চিংড়ি এস্টেটের কার্যক্রম শুরু হয়। ঘেরের ইজারা ও ব্যবস্থাপনা চলে দুটি আলাদা প্রকল্প ও অফিস আদেশের মাধ্যমে। পরে ঘের পরিচালনায় প্রথম নীতিমালা করা হয় ২০১১ সালে। ২০১৩ সালে সেটা সংস্কার করা হয়। নীতিমালায় বলা আছে, প্রকৃত চিংড়ি চাষিরাই শুধু ইজারা পাবেন। এ ক্ষেত্রে মৎস্য বিজ্ঞানে ডিপ্লোমাধারী, গ্র্যাজুয়েট বা প্রশিক্ষিত বেকার যুবক ও যুবতিরা অগ্রাধিকার পাবেন। ইজারাপ্রাপ্ত জমি কোনো অবস্থাতেই অন্য কারও কাছে বর্গা, সাবলিজ বা বন্ধক দেওয়া যাবে না।
কিন্তু ইজারাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের তালিকা যাচাই করে দেখা গেছে, অধিকাংশই চিংড়ি চাষের সঙ্গে জড়িত নন এবং তাঁরা ক্ষমতাধর রাজনীতিক ও আমলা বা তাদের আশীর্বাদপুষ্ট লোকজন। তাদের বড় অংশের ঠিকানা কক্সবাজারের বাইরে ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলে। নীতিমালায় সাবলিজ দিলে ইজারা বাতিলের কথা স্পষ্টভাবে বলা থাকলেও গত ৩৯ বছরে কাউকে নোটিশ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অথচ অনুসন্ধানকালে একজন মূল ইজারাদারকেও ঘেরে চিংড়ি চাষ করতে দেখা যায়নি। তবে এ রকম দুই-চারজন আছেন বলে শোনা গেছে। হাতেগোনা এই ক’জন বাদে আর সবাই যার যার ঘের সাবলিজ দিয়ে দিয়েছেন। আর এসব ঘটছে মৎস্য অধিদপ্তরের নাকের ডগায়। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চিংড়ি চাষিদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান, উন্নত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও সরেজমিনে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। নীতিমালা বাস্তবায়নেও তাদের কোনো তৎপরতা নেই। অধিদপ্তরের প্রদর্শনী ঘেরে আগে অফিস থাকলেও এখন তা নেই।
ইজারা পেয়েছেন কারা
নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯৭৮ সালে জিয়া সরকারের নির্দেশে ৩৯ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে চিংড়ি চাষের জন্য চকরিয়া সুন্দরবনের প্রায় পাঁচ হাজার একর বনভূমি ইজারা দেয় মৎস্য অধিদপ্তর। তখন ১৭ জনকে দেড় শ’ ও ২২ জনকে এক শ’ একর করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরের বছর একই উদ্দেশ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহযোগিতায় আরও দুই হাজার একর প্যারাবন ১১ একর করে ১১৯টি প্লটে ভাগে করে ১১৯ ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়া হয়।
পরে ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) প্রকল্পের আওতায় পাঁচ হাজার একরে আগের ৩৯ জনের ইজারা বাতিল করা হয় এবং ১০ একর করে ৪৬৭ প্লটে ভাগ করে ইজারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩২৫ ব্যক্তি ও ৪২টি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন পায় ৪৫১টি প্লট। মামলা ও বিরোধের কারণে ১৬টি প্লটের ইজারা বাতিল অবস্থায় আছে। মৎস্য অধিদপ্তরের ৪৮ একরের প্রদর্শনী প্লটসহ ১০ একরের ঘের এলাকায় মোট ৪৬৮টি প্লট রয়েছে। প্রথম মেয়াদে ১০ বছর, দ্বিতীয় মেয়াদে ১৫ বছর আর তৃতীয় মেয়াদে ২০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। ইজারায় প্রতি একরের জন্য বার্ষিক রাজস্ব ধরা হয় ২ হাজার টাকা করে। পাঁচ বছর পরপর ২ শতাংশ হারে রাজস্ব বৃদ্ধির কথাও বলা আছে নীতিমালায়।
তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, ১০ একরের ৪৮ নং প্লট ইজারা পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা। ১০৯ নং প্লট ইজারা পেয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও বড়ইতলি ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী ইয়াছমিন চৌধুরী জলি। ২২০ নং প্লট পেয়েছেন কক্সবাজার জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রয়াত জালাল আহমেদ চৌধুরীর ছেলে এম রেজাউল করিম চৌধুরী। ৩৩৬ নং প্লট কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ; ৩৩৩-৩৩৫ তিনটি প্লট ডুলাহাজারা ইউপির দুইবারের চেয়ারম্যান ও চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী (খোকন মিয়া); ৩৩৯-৩৪১ তিনটি প্লট চিরিংগা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এম সালাহ উদ্দিন; ৩২৭-৩২৯ প্লট তিনটি বিএনপি মাতামুহুরি সাংগঠনিক উপজেলা সভাপতি জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী।
১১ একরের ৩৪ নং প্লট ইজারা পেয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খোরশেদ আরা হক। ৪৩ নং প্লট চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহানারা পারভীন; ৬২ নং প্লট মহেশখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহীম; ১১৮ নং প্লট ইজারা পেয়েছেন চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ সালাউদ্দিন মাহমুদ।
জানা গেছে, এফবিসিসিআই এর তালিকাভুক্ত ‘বাংলাদেশ ১০-১১ একর চিংড়ি প্রজেক্ট মালিক অ্যাসোসিয়েশন’ নামে চকরিয়া চিংড়ি ঘেরের ইজারাদারদের একটি সংগঠন রয়েছে। সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন রাবেয়া আজিজ। তিনি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এম এ আজিজের স্ত্রী। ইজারা পাওয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশন। ১০ একর চিংড়ি এস্টেটের ৪৩৮-৪৬৭ নম্বরের ৩০টি প্লটে মোট ৩০০ একর ইজারা পেয়েছে এই ফাউন্ডেশন।
চুক্তি করে সাবলিজ
দফায় দফায় চকরিয়ায় গিয়ে যে ৫০ জন চিংড়ি চাষির সঙ্গে কথা হয়, তারা কেউ ইজারাদার নন। বছরে ঘেরপ্রতি দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তিতে সাবলিজ নিয়ে তারা চিংড়ি চাষ করছেন। সাবলিজের ১৫টি চুক্তিপত্র সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। ১০০ ও ৫০ টাকার স্ট্যাম্পে বেশির ভাগ চুক্তিপত্রে লেখার ধরন একই। ১০ একর চিংড়ি ঘেরের ১০০ নম্বর প্লটের ইজারাদার বাঁশখালীর বাসিন্দা জাফর আহমদ। চকরিয়ার করাইয়াঘোনার বাসিন্দা জসিম উদ্দিনকে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে প্লটটি তিনি সাবলিজ দিয়েছেন। এর জন্য বছরে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার চুক্তি হয়। দুই বছরের অগ্রিম টাকাও নেন জাফর। জানতে চাইলে জাফর আহমদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টাকার প্রয়োজন হওয়ায় কয়েক বছরের সাবলিজ দিয়েছি।’
২১৭ ও ২১৮ নম্বর প্লটে ১০ বছর ধরে চিংড়ি চাষ করেন চকরিয়ার ছোঁয়াফাড়ি এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মালেক (৪২)। তিনি জানান, প্লট দুটি মূলত তার মামা হেলাল সওদাগর ২০০৯ সাল সাবলিজ নিয়েছেন। ২০১৪ সালে মামার কাছ থেকে তিনি প্লট দুটো বর্গা নেন। আব্দুল মালেক জানান, প্রতি বছর সাবলিজের দুই লাখ করে চার লাখ টাকা তার মামা হেলালের মাধ্যমে মূল ইজারাদারদের কাছে পাঠিয়ে দেন। সাবলিজের দুই লাখ টাকা, চাঁদা, মাটিকাটা ও চিংড়ি চাষ বাবদ ১০ একরের একটি ঘেরে বছরে প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ হয়। মাছের উৎপাদন ভালো হলে খরচ বাদে পাঁচ লাখ টাকারও বেশি লাভ থাকে।
২১৭ নং প্লটের ইজারাদার দেওয়ান জহির আহমেদ ও ২১৮ নম্বর প্লটের ইজারাদার কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী। দেওয়ান জহির আহমেদের বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে হলেও তিনি চকরিয়ার চিরিংগা ইউনিয়নের ঠিকানা দিয়েছেন। কারণ জানতে চাইলে বলেন, আগে চকরিয়ায় তিনি লবণের ব্যবসা করতেন। ১০ একর ঘেরের ৩ নম্বর প্লটের ইজারা পেয়েছেন ঢাকার শ্যামপুরের বাসিন্দা ও সোনালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেগম রাশেদা আউয়াল। ১৯৮৬ সালে সরকারি ব্যাংকে চাকরি করা অবস্থায় তিনি চিংড়ির প্লট ইজারা পান। তাঁর ঘেরে চিংড়ি ও লবণ চাষ করেন বদরখালীর বাসিন্দা গিয়াসউদ্দিন। তিনি জানান, ছোঁয়াফাড়ির হাবিবুর রহমান থেকে বছরে চার লাখ ৬৫ হাজার টাকায় ঘের সাবলিজ নিয়েছেন। রাশেদা আউয়ালের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই।
সাবলিজ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদা আউয়াল বলেন, ‘এ রকম অনেকেই করে।’ তাঁর প্লটে কে চিংড়ি চাষ করে প্রশ্ন করলে তিনি নাম বলতে পারেননি। চকরিয়া চিংড়ি ঘেরে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন মৎস্য কর্মকর্তা খন্দকার হাবিবুর রহমান। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘সব ভুয়া লোকজনকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। কেউ রাজনৈতিক প্রভাবে, কেউ টাকা পয়সা দিয়ে ইজারা পেয়েছেন। যে উদ্দেশ্যে চিংড়ির ঘের করা হয়েছে, তার কিছুই হয়নি। ইজারাদাররা সবাই সাবলিজ দিয়ে টাকা খাচ্ছে।’
ঘের দখলের পালা
চকরিয়া চিংড়ি ঘেরে দিনের চিত্র এক রকম, রাতের চিত্র আরেক রকম। ঘের দখল আর মাছ লুট নিয়মিত ঘটনা। একটি সশস্ত্র ডাকাত বাহিনীও গড়ে উঠেছে এখানে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা। তাই সরকার বদলের পর দখলের চিত্রও পাল্টে যায়। রেহাই পায়নি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠানের চিংড়ি ঘেরও। জানা গেছে, ২০২১ সালের ৫ জুলাই রাতে গ্রামীণের ঘের দখল করে নেয় আওয়ামী লীগের এমপি জাফর আলমের বাহিনী। ওই ঘটনায় মারধরের শিকার হওয়া ফাউন্ডেশন কর্মী কবির আহমেদ (৫২) আজকের পত্রিকাকে বলেন, সন্ত্রাসীরা তিনতলা ভবনের অনেক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। ঘরভর্তি মালামাল ছিল, সব নিয়ে গেছে। দখলের পর ওই ঘর হয়ে ওঠে ডাকাতদের আস্তানা। তবে ৫ আগস্ট সরকার বদলের পর দখলমুক্ত হয় গ্রামীণের ঘেরগুলো।
তবে এখনো বেদখলে রয়েছে অনেক প্লট। ১০ একরের ২৪২ নং প্লটের ইজারাদার নারায়ণগঞ্জের দেওভোগের বাসিন্দা নাছরিন আক্তার জানান, করোনার পর থেকে জাফর আলমের সাঙ্গপাঙ্গরা তাঁর প্লট দখল করে রেখেছে। সেখানে তারা ঘরও তুলেছে। ২৩৬ নম্বর প্লট সাবলিজ নিয়ে চিংড়ির চাষ করেন শাহানবিল ইউনিয়নের কোরালখালীর বাসিন্দা নুরুল আলম। তিনি বলেন, প্রতি জোতে ডাকাতদের প্লটপ্রতি এক হাজার টাকা করে দিতে হয়। মাসে দুইবার টাকা না দিলে ওরা মাছ লুট করে নিয়ে যায়।
সম্প্রতি জাহাঙ্গীর নামে এক ডাকাত সরদার গ্রেপ্তার হয়েছে। চকরিয়া থানা-পুলিশের তালিকাভুক্ত ডাকাতের মধ্যে আরও আছে আব্দুস সালাম, নেজাম উদ্দিন, মো. ইব্রাহিম, আব্দুল জলিল, রুহুল আমিন, আব্দুল কাদের, রায়হান মিয়া, আব্দুর সবুর, পুতু মেম্বার, সোহেল অন্যতম। গত ১৫ বছর এই ডাকাতদের পৃষ্ঠপোষকতা করার অভিযোগ রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমের বিরুদ্ধে। সরকার বদলের পর আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মুছা বলেন, কিছু নেতা ও জনপ্রতিনিধি জাফর আলমের নাম ব্যবহার করে নিজেরা ঘের দখল করেছে।’
৫ আগস্টের পর চকরিয়ার চিংড়ি ঘের নিয়ন্ত্রণে কয়েকজন বিএনপি নেতা জড়িয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী (খোকন মিয়া), বিএনপি মাতামুহুরি সাংগঠনিক উপজেলার সভাপতি জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সদস্যসচিব ফখরুউদ্দিন ফরাজী, নজরুল ইসলাম (ব্যাঙ নজরুল), আলী আহমেদ। জানতে চাইলে ফখরুউদ্দিন ফরাজী আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিগত সরকারের সময় সাধারণ মানুষের চিংড়ির প্লট বেদখল ছিল। এখন তা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
স্লুইস গেটে সিন্ডিকেট
চকরিয়ার চিংড়ি এস্টেটে বয়ে যাওয়া নদী-খালে ২৭টি স্লুইচ গেট আছে। জোয়ার-ভাটার সময় এসব গেট দিয়ে চিংড়ি ঘেরে নোনা পানি যাওয়া-আসা করে। ২০-২৫টি ঘেরের জন্য একটি করে গেট। নীতিমালায় বলা আছে, ঘেরগুলোর ইজাদাররা কমিটি করে স্লুইচ গেটের ব্যবস্থাপনা ঠিক করবেন। কিন্তু ইজারাদাররা যেহেতু চিংড়ি চাষ থেকে দূরে, ঘেরগুলো তারা সাবলিজ দিয়ে রেখেছেন; তাই সেখানে কোনো বৈধ কমিটি তৈরি হয়নি। আর এই সুযোগে গেটগুলো কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তারা বিভিন্ন অজুহাতে স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গার্ড পদে আবেদন করিয়ে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে নিয়োগ আদায় করে। পরে তাদের মাধ্যমেই স্লুইস গেটগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চাঁদাবাজি, মাছ লুটের মতো অবৈধ কর্মকাণ্ডে মেতে ওঠে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই গার্ড নিয়োগে মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেন হয়। এ রকম পাঁচটি কাগজ আজকের পত্রিকার কাছে এসেছে, যেখানে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গার্ড নিয়োগের কথা লেখা আছে। কাগজগুলোতে স্বাক্ষর রয়েছে কক্সবাজার চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণের আঞ্চলিক মৎস্য কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলামের। কাগজগুলো মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেখালে তাঁরা জানান, এভাবে গার্ড নিয়োগের কোনো আইনি ভিত্তি নেই।
অনুসন্ধান বলছে, গার্ড নিয়োগের নামে আসলে অতি গুরুত্বপূর্ণ স্লুইচ গেটগুলোকে একধরনের ইজারা দিয়ে রেখেছেন মৎস্য কর্মকর্তারা। একেকটি স্লুইস গেটের ‘ইজারা মূল্য’ বছরে দুই থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত। যারা ইজারা নেন, তারা গেটে নিষিদ্ধ বিন্দিজাল বসিয়ে মাছ ধরেন। বদরখালী এলাকার এক বাসিন্দা জানান, তিনি চার লাখ টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য স্লুইস গেট ইজারা পেয়েছেন। আরেক ‘ইজারাদার’ বজল কবির বলেন, আঞ্চলিক মৎস্য কর্মকর্তা তৌফিককে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে স্লুইচ গেট নিলেও তিনি এখনো দখলে যেতে পারেননি। এই মৎস্য কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ইজারা বাতিল হওয়া কিছু প্লটে মৌখিক ইজারা দিয়ে টাকা কামাইয়ের অভিযোগও আছে। শাহানবিল ইউনিয়নের কোরালখালীর বাসিন্দা চিংড়ি চাষি জুনায়েদ ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইজারা বাতিল হওয়া ১০ একর ঘেরের ৩১৮, ৩১৯ ও ৩২০ নম্বর প্লট মৌখিক ইজারা দিয়ে ২০২৩ সালে তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নেন তৌফিক। ২০২৪ সালের জন্য আবার দুই লাখ টাকা নিলেও সরকার বদলের সুযোগে ওই তিনটি প্লট অন্য আরেক ব্যক্তিকে মৌখিক ইজারা দেন তৌফিক। জুনায়েদ বলেন, ‘তৌফিক সাহেব কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে আমার হাত থেকে টাকাটা নিয়েছেন। অনেক সময় তিনি টাকা সংগ্রহে ব্যবহার করেছেন চকরিয়ার আলমগীর ও মারুফ নামের দুই দালালকে।’
আটজন চিংড়ি চাষি গত ১৫ সেপ্টেম্বর তৌফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে মৎস্য অধিদপ্তর এখনো তদন্ত শুরু করেনি। জানতে চাইলে অভিযোগকারীদের একজন রায়হান কাইছার রিগান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তৌফিক সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগসাজশ রেখে কৌশলে টাকা আদায় করেন। তার আর্থিক অবস্থা নিয়ে তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।’ এই অভিযুক্ত কর্মকর্তা তৌফিক তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে একই পদে রয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে আঞ্চলিক মৎস্য কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অস্থায়ী গার্ড নিয়োগের আবেদনপত্রে প্রথমে কয়েকটিতে স্বাক্ষর করেছি। পরে আর কাউকে দিইনি। কিন্তু পরে অনেকে আমার স্বাক্ষর নকল করে নিয়োগের কাগজ বানিয়ে নিয়েছে।’
‘আপনার স্বাক্ষরিত গার্ড নিয়োগের কাগজগুলো; ঘের মৌখিক ইজারা দিয়ে টাকা নেওয়া এবং চিংড়ি চাষিদের কাছ থেকে মাছ আদায়ের মেসেজ আদান-প্রদানের স্ক্রিনশট আমাদের কাছে আছে’ জানালে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে আবার হোয়াটসঅ্যাপে কল করে বলেন, ‘আগের এমপি জাফর আলম অনেক বিষয়ে রিকোয়েস্ট করত। চাকরি বাঁচাতে কিছু রিকোয়েস্ট রাখতে হতো। না রাখলে ওই এলাকায় যাওয়াও সমস্যা হতো।’ এরপর তৌফিক বলেন, ‘যদি কোনো কিছু করা লাগে, কক্সবাজার আইসেন আমি চেষ্টা করব। বদির রিসোর্ট আছে। আপনার ভালোই লাগবে। কাজ করতে গেলে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি তো হয়ই।’
মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (চিংড়ি) মো. আয়নাল হক বলেন, ‘দুর্নীতির কিছু তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পর তৌফিককে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছি।’ পদাধিকার বলে চিংড়ি ঘেরের স্লুইচ গেটসহ অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি চকরিয়ার ইউএনও। কিন্তু কমিটিতে দায়িত্বে থাকার বিষয়ে কিছুই জানেন না- দাবি করেছেন সদ্য সাবেক ইউএনও মো. ফখরুল ইসলাম।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইজারাদাররা শর্তভঙ্গ করে সাবলিজ দেওয়ায় চিংড়ি ঘেরে সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি। ইজারা পুনর্মূল্যায়ন করে প্রকৃত চিংড়ি চাষি রেখে বাকিদের ইজারা বাতিল করা উচিত। যারা বিশ্বাসভঙ্গ করে সাবলিজ দিয়েছে, শাস্তির পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা উচিত। অনিয়মের সঙ্গে সরকারের যে কর্তাব্যক্তিরা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’ ভবিষ্যতে চিংড়ি ঘের যেন দুর্নীতির ক্ষেত্র হয়ে না ওঠে, তা আইনে যুক্ত করা যেতে পারে বলে এই আইনজ্ঞের মত। সার্বিক বিষয় অবগত করে জানতে চাইলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ‘খোঁজ নেবেন’ বলে জানান। (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর দুর্নীতিবিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ফেলোশিপ-২০২৪ এর আওতায় প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।)

আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি...
৫ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়।
৮ ঘণ্টা আগে
বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।
১১ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, নিয়োগ পেলে চীনা কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত ঝুঁকিগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে তাঁর
১২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবারের পর ঐকমত্য কমিশন গতকালও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করলেও কোনো সমাধান মেলেনি। এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার কমিশন আবার নিজেরা বৈঠক করবে এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার বসবে।
ঐকমত্য কমিশনের জাতীয় সংসদ ভবনের কার্যালয়ে গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকটি বেলা দেড়টার পর শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টার পরে শেষ হয়। প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠকেও সংবিধান নিয়ে সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার উপায় বের হয়নি।
সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কমিশনের সিদ্ধান্ত হলো, গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করা হবে। তার অধীনে জারি হবে গণভোট-বিষয়ক একটি অধ্যাদেশ। এর ভিত্তিতেই হবে গণভোট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যেই সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে। প্রসঙ্গত, একই সময় এ পরিষদ নিয়মিত সংসদ হিসেবেও কাজ করবে। সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায়ই সংবিধান সংস্কার হবে।
গতকালের আলোচনা বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা ২৭০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না করলে সনদে থাকা বিষয়গুলো কী হবে—সেখানেই আটকে যাচ্ছে আলোচনা। কারণ আমরা তেমন সমাধান দিতে পারছি না। দেশে অতীতে এ-সংক্রান্ত কোনো উদাহরণ নেই। দেশের বাইরেও এ ধরনের উদাহরণ পাইনি।’
কোনো দল আগামী নির্বাচনে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সংবিধান সংস্কার কীভাবে হবে, এ প্রশ্নও আছে। বিষয়টি তখন মূলত নির্ভর করবে বেশি আসন পাওয়া কয়েকটি দলের সদিচ্ছার ওপর। কিন্তু কমিশন চাইছে এ অনিশ্চয়তার অবকাশ না রেখে এমন কোনো বিধান করা, যা সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেবে।
গতকালের বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা একাধিক মত দিয়ে বলেছেন, সেগুলো আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না তাঁ। একটি মত হলো,নির্ধারিত সময়ে সংস্কার বাস্তবায়ন করা না হলে সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটি আইনগতভাবে ঠিক হলেও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সংসদ এভাবে বিলুপ্ত হলে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা।
আরও যে কয়েকটি মত গতকাল এসেছে তার মধ্যে রয়েছে, প্রথমত, পরিষদে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সনদের বিষয়গুলো বাস্তবায়ন না হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাওয়া এবং দ্বিতীয়ত, আগে সংবিধান সংস্কার পরিষদ বৈঠকে বসে সনদের সংযুক্তি বাস্তবায়ন করবে এবং তারপর সংসদ বসবে। কিন্তু এগুলোও কার্যকর বা বাস্তবসম্মত মনে করেননি বিশেষজ্ঞদের সবাই।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, সময়সীমার মধ্যে না সম্পন্ন করলে আপনা থেকেই সংবিধানে বিষয়গুলো যুক্ত হওয়ার ধারণা বাস্তবসম্মত না। কারণ বিলগুলোর খসড়া তৈরি করা নেই। এটা করা বিশেষজ্ঞদের কাজ না। সংসদে আলোচনা করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই এ সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরও বলেন, সনদের একটি বিধান হচ্ছে, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ করা হবে। কিন্তু কোন মৌলিক অধিকারটি সম্প্রসারণ করা হবে, তা বলা নেই। সংসদ সদস্যদের আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এসব কারণে আমরা সিদ্ধান্ত দিতে পারিনি। কমিশন জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বৈঠক করবেন, প্রয়োজনে আমাদের সহযোগিতা নেবেন।’
গতকালের বৈঠকে আগে সংবিধান সংস্কার পরিষদ বসে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার যে প্রস্তাব আসে তার পক্ষে বলা হয়, এতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত সনদ বাস্তবায়নে কাজ করবেন। কারণ তাঁরা বিলম্ব না করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে চাইবেন। একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হলেও বেশির ভাগের মত, এটিও বাস্তবসম্মত নয়। কারণ জনপ্রতিনিধিদের শপথের মাধ্যমে সংসদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্বে থেকে যেতে হবে। এটা প্রধান উপদেষ্টাই মানবেন না।
এ অবস্থায় সমাধান কী হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমরা আদৌ কোনো বাধ্যবাধকতা তৈরি করে দিতে পারব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ এমন আইনি ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্য সমাধান পাইনি। তাই বিষয়টি আমাদের সুপারিশে না-ও থাকতে পারে।’
সনদ-বিষয়ক আদেশের খুঁটিনাটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। গণভোটের দিনক্ষণ সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কমিশন সূত্র জানায়, আজ সকালে নিজেরা বৈঠক করার পর প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আবার বৈঠক করা হবে। ৩১ অক্টোবরের মেয়াদের মধ্যেই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন।
এনসিপির সঙ্গে বৈঠক
গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসার আগে কমিশনের সদস্যরা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করেন। ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হলেও দলটি সই করেনি। এনসিপি বলেছিল, বাস্তবায়নের আদেশের চূড়ান্ত খসড়া না দেখে তারা স্বাক্ষর করবে না।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, গতকালের বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধিরা ‘স্পষ্টভাবে’ জানিয়েছেন যে তাঁরা স্বাক্ষর করতে চান। তাঁরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন, যা কমিশন আইনি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়েছে। এনসিপির প্রস্তাবে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই দিকই আছে। সেই বিষয়গুলো বিবেচনা করে কমিশন এগোচ্ছে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে, যেন সবাই স্বাক্ষরের দিকে আসে।
বিশেষজ্ঞ হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন।
আলোচনায় কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবারের পর ঐকমত্য কমিশন গতকালও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করলেও কোনো সমাধান মেলেনি। এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার কমিশন আবার নিজেরা বৈঠক করবে এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার বসবে।
ঐকমত্য কমিশনের জাতীয় সংসদ ভবনের কার্যালয়ে গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকটি বেলা দেড়টার পর শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টার পরে শেষ হয়। প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠকেও সংবিধান নিয়ে সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার উপায় বের হয়নি।
সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কমিশনের সিদ্ধান্ত হলো, গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করা হবে। তার অধীনে জারি হবে গণভোট-বিষয়ক একটি অধ্যাদেশ। এর ভিত্তিতেই হবে গণভোট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যেই সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে। প্রসঙ্গত, একই সময় এ পরিষদ নিয়মিত সংসদ হিসেবেও কাজ করবে। সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায়ই সংবিধান সংস্কার হবে।
গতকালের আলোচনা বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা ২৭০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না করলে সনদে থাকা বিষয়গুলো কী হবে—সেখানেই আটকে যাচ্ছে আলোচনা। কারণ আমরা তেমন সমাধান দিতে পারছি না। দেশে অতীতে এ-সংক্রান্ত কোনো উদাহরণ নেই। দেশের বাইরেও এ ধরনের উদাহরণ পাইনি।’
কোনো দল আগামী নির্বাচনে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সংবিধান সংস্কার কীভাবে হবে, এ প্রশ্নও আছে। বিষয়টি তখন মূলত নির্ভর করবে বেশি আসন পাওয়া কয়েকটি দলের সদিচ্ছার ওপর। কিন্তু কমিশন চাইছে এ অনিশ্চয়তার অবকাশ না রেখে এমন কোনো বিধান করা, যা সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেবে।
গতকালের বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা একাধিক মত দিয়ে বলেছেন, সেগুলো আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না তাঁ। একটি মত হলো,নির্ধারিত সময়ে সংস্কার বাস্তবায়ন করা না হলে সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটি আইনগতভাবে ঠিক হলেও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সংসদ এভাবে বিলুপ্ত হলে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা।
আরও যে কয়েকটি মত গতকাল এসেছে তার মধ্যে রয়েছে, প্রথমত, পরিষদে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সনদের বিষয়গুলো বাস্তবায়ন না হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাওয়া এবং দ্বিতীয়ত, আগে সংবিধান সংস্কার পরিষদ বৈঠকে বসে সনদের সংযুক্তি বাস্তবায়ন করবে এবং তারপর সংসদ বসবে। কিন্তু এগুলোও কার্যকর বা বাস্তবসম্মত মনে করেননি বিশেষজ্ঞদের সবাই।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, সময়সীমার মধ্যে না সম্পন্ন করলে আপনা থেকেই সংবিধানে বিষয়গুলো যুক্ত হওয়ার ধারণা বাস্তবসম্মত না। কারণ বিলগুলোর খসড়া তৈরি করা নেই। এটা করা বিশেষজ্ঞদের কাজ না। সংসদে আলোচনা করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই এ সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরও বলেন, সনদের একটি বিধান হচ্ছে, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ করা হবে। কিন্তু কোন মৌলিক অধিকারটি সম্প্রসারণ করা হবে, তা বলা নেই। সংসদ সদস্যদের আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এসব কারণে আমরা সিদ্ধান্ত দিতে পারিনি। কমিশন জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বৈঠক করবেন, প্রয়োজনে আমাদের সহযোগিতা নেবেন।’
গতকালের বৈঠকে আগে সংবিধান সংস্কার পরিষদ বসে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার যে প্রস্তাব আসে তার পক্ষে বলা হয়, এতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত সনদ বাস্তবায়নে কাজ করবেন। কারণ তাঁরা বিলম্ব না করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে চাইবেন। একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হলেও বেশির ভাগের মত, এটিও বাস্তবসম্মত নয়। কারণ জনপ্রতিনিধিদের শপথের মাধ্যমে সংসদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্বে থেকে যেতে হবে। এটা প্রধান উপদেষ্টাই মানবেন না।
এ অবস্থায় সমাধান কী হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমরা আদৌ কোনো বাধ্যবাধকতা তৈরি করে দিতে পারব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ এমন আইনি ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্য সমাধান পাইনি। তাই বিষয়টি আমাদের সুপারিশে না-ও থাকতে পারে।’
সনদ-বিষয়ক আদেশের খুঁটিনাটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। গণভোটের দিনক্ষণ সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কমিশন সূত্র জানায়, আজ সকালে নিজেরা বৈঠক করার পর প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আবার বৈঠক করা হবে। ৩১ অক্টোবরের মেয়াদের মধ্যেই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন।
এনসিপির সঙ্গে বৈঠক
গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসার আগে কমিশনের সদস্যরা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করেন। ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হলেও দলটি সই করেনি। এনসিপি বলেছিল, বাস্তবায়নের আদেশের চূড়ান্ত খসড়া না দেখে তারা স্বাক্ষর করবে না।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, গতকালের বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধিরা ‘স্পষ্টভাবে’ জানিয়েছেন যে তাঁরা স্বাক্ষর করতে চান। তাঁরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন, যা কমিশন আইনি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়েছে। এনসিপির প্রস্তাবে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই দিকই আছে। সেই বিষয়গুলো বিবেচনা করে কমিশন এগোচ্ছে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে, যেন সবাই স্বাক্ষরের দিকে আসে।
বিশেষজ্ঞ হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন।
আলোচনায় কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

‘আমার একটি নদী ছিল’র মতো হৃদয়স্পর্শী আরেকটি গান হতে পারে- ‘চকরিয়ায় একটি সুন্দরবন ছিল’। এই বনের আয়তন ছিল সাড়ে ৪৫ হাজার একর; আসল সুন্দরবনের প্রায় ৭ ভাগের এক ভাগ। এই বনেও ছিল কেওড়া, বাইন, সুন্দরীর মতো শ্বাসমূলীয় গাছপালা। বনে ঘুরে বেড়াতো হরিণ, বানর, বাঘ। নদী-খালের নোনাজলে ছিল মাছ, কাঁকড়া, কুমির...
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়।
৮ ঘণ্টা আগে
বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।
১১ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, নিয়োগ পেলে চীনা কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত ঝুঁকিগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে তাঁর
১২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যুক্ত করা হয়েছে নতুন বিধান, আবার কিছু কিছু বিধান আরপিও থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইভিএম ব্যবহার বাতিল, ‘না ভোট’ পুনর্বহাল, প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয় ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশের বাধ্যবাধকতা এবং পলাতক আসামিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা।
সংশোধিত আরপিওর গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:
আদালত কর্তৃক ফেরারি বা পলাতক আসামি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে তাঁকে না ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। নির্বাচনে না ভোট বেশি হলে সেখানে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন হবে। তবে দ্বিতীয়বারও একক প্রার্থী হলে সেই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে তাঁকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
ভোট গণনার সময় সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার বিধানটিও যুক্ত করা হয়েছে। তবে ভোট গণনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেখানে থাকতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জেলাভিত্তিক নির্বাচন অফিসগুলোতে দায়িত্ব পালন করবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। প্রার্থীদের দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে আয় ও সম্পত্তির বিবরণ হলফনামায় দিতে হবে, যা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করা হবে।
আগে দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে জোটের যেকোনো দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারত। সেটি সংশোধন করা হয়েছে। জোটভুক্ত হলেও প্রার্থীকে নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ভোটের সময় অনেকে জোটভুক্ত হলে জনপ্রিয় বা বড় দলের মার্কায় ভোট করতেন। এখন আর সে সুযোগ থাকছে না।
প্রবাসী বাংলাদেশি, নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিধানটি আরপিওতে যুক্ত করা হয়েছে। এবার আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং চালু করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের পাশাপাশি আইনি হেফাজতে থাকা, সরকারি কর্মকর্তা, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা ভোট দিতে পারবেন।
প্রার্থীর জামানত বাড়ানো হয়েছে। আগে ২০ হাজার টাকা ছিল, তা বাড়িয়ে ৫০ হাজার করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো রাজনৈতিক দলকে ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান দিতে চাইলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। যিনি অনুদান দেবেন, তাঁর ট্যাক্স রিটার্নও দিতে হবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন পুরো আসনের ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা কমিয়েছিল। সংশোধিত আরপিওতে শুধু ভোটকেন্দ্র নয়, অনিয়ম হলে ইসি পুরো আসনের ভোট বন্ধ করতে পারবে, সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রার্থীর হলফনামায় আগে শুধু দেশের সম্পদের হিসাব দেওয়া হতো। সংশোধিত আরপিওতে শুধু দেশের নয়, বিদেশের আয়ের উৎস, সম্পত্তির বিবরণ দিতে হবে।
এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-সংক্রান্ত বিধানটি সংশোধিত আরপিও থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যুক্ত করা হয়েছে নতুন বিধান, আবার কিছু কিছু বিধান আরপিও থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইভিএম ব্যবহার বাতিল, ‘না ভোট’ পুনর্বহাল, প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয় ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশের বাধ্যবাধকতা এবং পলাতক আসামিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা।
সংশোধিত আরপিওর গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:
আদালত কর্তৃক ফেরারি বা পলাতক আসামি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে তাঁকে না ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। নির্বাচনে না ভোট বেশি হলে সেখানে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন হবে। তবে দ্বিতীয়বারও একক প্রার্থী হলে সেই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে তাঁকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
ভোট গণনার সময় সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার বিধানটিও যুক্ত করা হয়েছে। তবে ভোট গণনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেখানে থাকতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জেলাভিত্তিক নির্বাচন অফিসগুলোতে দায়িত্ব পালন করবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। প্রার্থীদের দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে আয় ও সম্পত্তির বিবরণ হলফনামায় দিতে হবে, যা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করা হবে।
আগে দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে জোটের যেকোনো দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারত। সেটি সংশোধন করা হয়েছে। জোটভুক্ত হলেও প্রার্থীকে নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ভোটের সময় অনেকে জোটভুক্ত হলে জনপ্রিয় বা বড় দলের মার্কায় ভোট করতেন। এখন আর সে সুযোগ থাকছে না।
প্রবাসী বাংলাদেশি, নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিধানটি আরপিওতে যুক্ত করা হয়েছে। এবার আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং চালু করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের পাশাপাশি আইনি হেফাজতে থাকা, সরকারি কর্মকর্তা, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা ভোট দিতে পারবেন।
প্রার্থীর জামানত বাড়ানো হয়েছে। আগে ২০ হাজার টাকা ছিল, তা বাড়িয়ে ৫০ হাজার করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো রাজনৈতিক দলকে ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান দিতে চাইলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। যিনি অনুদান দেবেন, তাঁর ট্যাক্স রিটার্নও দিতে হবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন পুরো আসনের ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা কমিয়েছিল। সংশোধিত আরপিওতে শুধু ভোটকেন্দ্র নয়, অনিয়ম হলে ইসি পুরো আসনের ভোট বন্ধ করতে পারবে, সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রার্থীর হলফনামায় আগে শুধু দেশের সম্পদের হিসাব দেওয়া হতো। সংশোধিত আরপিওতে শুধু দেশের নয়, বিদেশের আয়ের উৎস, সম্পত্তির বিবরণ দিতে হবে।
এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-সংক্রান্ত বিধানটি সংশোধিত আরপিও থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

‘আমার একটি নদী ছিল’র মতো হৃদয়স্পর্শী আরেকটি গান হতে পারে- ‘চকরিয়ায় একটি সুন্দরবন ছিল’। এই বনের আয়তন ছিল সাড়ে ৪৫ হাজার একর; আসল সুন্দরবনের প্রায় ৭ ভাগের এক ভাগ। এই বনেও ছিল কেওড়া, বাইন, সুন্দরীর মতো শ্বাসমূলীয় গাছপালা। বনে ঘুরে বেড়াতো হরিণ, বানর, বাঘ। নদী-খালের নোনাজলে ছিল মাছ, কাঁকড়া, কুমির...
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি...
৫ ঘণ্টা আগে
বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।
১১ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, নিয়োগ পেলে চীনা কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত ঝুঁকিগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে তাঁর
১২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গুম হত্যার চেয়েও নিকৃষ্টতম অপরাধ। গুম প্রতিরোধে শুধু আইনগত সংস্কার নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও।
আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল আমারিতে অনুষ্ঠিত ‘Ensuring Justice: The Role of the Judiciary in Addressing Enforced Disappearances’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গুম-সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির উদ্যোগে এবং ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় আসিফ নজরুল বলেন, ‘অনেক প্রাণ ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ একটি পরিবর্তিত পরিবেশে অবস্থান করছি। এই পরিবর্তন স্থায়ী করতে হলে গুমের বিচার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।’
বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রায় লেখা একটি সৃজনশীল শিল্প। তাই বিচারকেরা হলেন সৃজনশীল শিল্পী। তাঁদের শিল্পকর্মই তাঁদের রায়।
তিনি বলেন, গুম প্রতিরোধে বিচার বিভাগ, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবাধিকার কাঠামোর মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতা অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও তদন্ত সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি গুমের বিচার নিশ্চিতের মূল চাবিকাঠি।
কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী বলেন, গুম-সংক্রান্ত মামলাগুলোর কার্যকর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখন সময়ের দাবি। কমিশন এরই মধ্যে বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে গুম-সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, সাক্ষী সুরক্ষা ও ভুক্তভোগী পরিবারের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে।
কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা এবং ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার-বিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গুম হত্যার চেয়েও নিকৃষ্টতম অপরাধ। গুম প্রতিরোধে শুধু আইনগত সংস্কার নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও।
আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল আমারিতে অনুষ্ঠিত ‘Ensuring Justice: The Role of the Judiciary in Addressing Enforced Disappearances’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গুম-সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির উদ্যোগে এবং ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় আসিফ নজরুল বলেন, ‘অনেক প্রাণ ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ একটি পরিবর্তিত পরিবেশে অবস্থান করছি। এই পরিবর্তন স্থায়ী করতে হলে গুমের বিচার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।’
বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রায় লেখা একটি সৃজনশীল শিল্প। তাই বিচারকেরা হলেন সৃজনশীল শিল্পী। তাঁদের শিল্পকর্মই তাঁদের রায়।
তিনি বলেন, গুম প্রতিরোধে বিচার বিভাগ, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবাধিকার কাঠামোর মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতা অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও তদন্ত সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি গুমের বিচার নিশ্চিতের মূল চাবিকাঠি।
কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী বলেন, গুম-সংক্রান্ত মামলাগুলোর কার্যকর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখন সময়ের দাবি। কমিশন এরই মধ্যে বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে গুম-সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, সাক্ষী সুরক্ষা ও ভুক্তভোগী পরিবারের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে।
কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা এবং ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার-বিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান।

‘আমার একটি নদী ছিল’র মতো হৃদয়স্পর্শী আরেকটি গান হতে পারে- ‘চকরিয়ায় একটি সুন্দরবন ছিল’। এই বনের আয়তন ছিল সাড়ে ৪৫ হাজার একর; আসল সুন্দরবনের প্রায় ৭ ভাগের এক ভাগ। এই বনেও ছিল কেওড়া, বাইন, সুন্দরীর মতো শ্বাসমূলীয় গাছপালা। বনে ঘুরে বেড়াতো হরিণ, বানর, বাঘ। নদী-খালের নোনাজলে ছিল মাছ, কাঁকড়া, কুমির...
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি...
৫ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়।
৮ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, নিয়োগ পেলে চীনা কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত ঝুঁকিগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে তাঁর
১২ ঘণ্টা আগেসিনেটে শুনানিতে ট্রাম্প–মনোনীত রাষ্ট্রদূত
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, নিয়োগ পেলে চীনা কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত ঝুঁকিগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে তাঁর মনোনয়ন নিয়ে শুনানিতে প্রশ্নোত্তর পর্বে একথা বলেন ক্রিস্টেনসেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মমোনীত এই কূটনীতিক বলেন, রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেলে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে সামরিক সহযোগিতা, সামুদ্রিক কর্মকাণ্ড এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে সম্পৃক্ততাসহ চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরবনে। পাশাপাশি সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারত্ব ঘনিষ্ঠ করার জন্য কাজ করারও প্রতিশ্রুতি দেন ক্রিস্টেনসেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনকে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দেন। সিনেট কমিটির অনুমোদনের পরই তাঁর নিয়োগ চূড়ান্ত হবে। এই মনোনয়ন নিয়ে শুনানিতে চার রাষ্ট্রদূত প্রার্থী লিখিত বিবৃতি তুলে ধরেন। পরে তাঁরা সিনেট সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ তুলে ধরে নেব্রাস্কার রিপাবলিকান সিনেটর জন পিটার রিকেটস শুনানিতে বলেন, ‘আমরা এখন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মুখে। বাংলাদেশ ও চীনের সামরিক সহযোগিতা দ্রুত বাড়ছে। যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন রাখার জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি কৌশলগত সাবমেরিন ঘাঁটি আধুনিকায়ন করেছে চীন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি নতুন সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল ও দূরপাল্লার রাডার কেনার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ পেলে চীনা সামরিক সরঞ্জামের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে ক্রিস্টেনসেন কীভাবে কাজ করবেন, তা জানতে চান সিনেটর রিকেটস।

জবাবে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব নিয়ে আপনাদের মতো উদ্বেগ আমারও। রাষ্ট্রদূত নিয়োগ আমি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থেকে চীনের কার্যক্রমের ঝুঁকি ব্যাখ্যা করব। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীর অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা তুলে ধরব, যা দুই দেশের সামরিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে।’
এ সময় সিনেটর রিকেটস বলেন, ‘এই শুনানির আগের দিনই সিনেট পররাষ্ট্র কমিটি সর্বসম্মতভাবে ‘থিংক টোয়াইস অ্যাক্ট’ পাস করেছে। এই আইন যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণাঙ্গ কৌশল নিতে বাধ্য করবে, যাতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশকে চীনা অস্ত্র কেনা থেকে বিরত রাখা যায়। আমরা আশা করি, আপনিও এই আইনের সহায়তা নিয়ে কাজ করবেন। তাহলে অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তার প্রতিরোধ সম্ভব হবে।’
তাঁর এই মন্তব্যের সূত্র ধরে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘সামরিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চমূল্যের সামরিক সরঞ্জামের বিকল্প হিসেবে মিত্রদেশগুলোর তৈরি সাশ্রয়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আমরা বাংলাদেশকে জানাতে পারি। পাশাপাশি যৌথ সামরিক মহড়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্ল্যাটফর্মগুলোকে অন্যান্য মিত্র বাহিনীর সঙ্গে আরও সমন্বিত ও কার্যকর করতে পারি।’
শুনানির শুরুতে লিখিত বিবৃতিতে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। ২০২৪ সালের আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে যে গণআন্দোলন হয়েছিল, তা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা সরকারকে পতন ঘটায়। আগামী বছর বাংলাদেশের জনগণ ভোটে যাবে, যা দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের যাত্রায় পাশে থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অনেক সময় তাঁর প্রাপ্য মনোযোগ পায় না, বড় প্রতিবেশীদের আড়ালে গুরুত্ব হারিয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রসেবায় আমার দুই দশকের অভিজ্ঞতা, যার মধ্যে ঢাকার কর্মকালও রয়েছে। তাই, আমি বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সম্পর্কে গভীরভাবে অবগত। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থান বাংলাদেশকে উন্মুক্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার করে তুলেছে।’

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, নিয়োগ পেলে চীনা কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত ঝুঁকিগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে তাঁর মনোনয়ন নিয়ে শুনানিতে প্রশ্নোত্তর পর্বে একথা বলেন ক্রিস্টেনসেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মমোনীত এই কূটনীতিক বলেন, রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেলে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে সামরিক সহযোগিতা, সামুদ্রিক কর্মকাণ্ড এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে সম্পৃক্ততাসহ চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরবনে। পাশাপাশি সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারত্ব ঘনিষ্ঠ করার জন্য কাজ করারও প্রতিশ্রুতি দেন ক্রিস্টেনসেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনকে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দেন। সিনেট কমিটির অনুমোদনের পরই তাঁর নিয়োগ চূড়ান্ত হবে। এই মনোনয়ন নিয়ে শুনানিতে চার রাষ্ট্রদূত প্রার্থী লিখিত বিবৃতি তুলে ধরেন। পরে তাঁরা সিনেট সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ তুলে ধরে নেব্রাস্কার রিপাবলিকান সিনেটর জন পিটার রিকেটস শুনানিতে বলেন, ‘আমরা এখন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মুখে। বাংলাদেশ ও চীনের সামরিক সহযোগিতা দ্রুত বাড়ছে। যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন রাখার জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি কৌশলগত সাবমেরিন ঘাঁটি আধুনিকায়ন করেছে চীন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি নতুন সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল ও দূরপাল্লার রাডার কেনার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ পেলে চীনা সামরিক সরঞ্জামের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে ক্রিস্টেনসেন কীভাবে কাজ করবেন, তা জানতে চান সিনেটর রিকেটস।

জবাবে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব নিয়ে আপনাদের মতো উদ্বেগ আমারও। রাষ্ট্রদূত নিয়োগ আমি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থেকে চীনের কার্যক্রমের ঝুঁকি ব্যাখ্যা করব। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীর অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা তুলে ধরব, যা দুই দেশের সামরিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে।’
এ সময় সিনেটর রিকেটস বলেন, ‘এই শুনানির আগের দিনই সিনেট পররাষ্ট্র কমিটি সর্বসম্মতভাবে ‘থিংক টোয়াইস অ্যাক্ট’ পাস করেছে। এই আইন যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণাঙ্গ কৌশল নিতে বাধ্য করবে, যাতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশকে চীনা অস্ত্র কেনা থেকে বিরত রাখা যায়। আমরা আশা করি, আপনিও এই আইনের সহায়তা নিয়ে কাজ করবেন। তাহলে অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তার প্রতিরোধ সম্ভব হবে।’
তাঁর এই মন্তব্যের সূত্র ধরে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘সামরিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চমূল্যের সামরিক সরঞ্জামের বিকল্প হিসেবে মিত্রদেশগুলোর তৈরি সাশ্রয়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আমরা বাংলাদেশকে জানাতে পারি। পাশাপাশি যৌথ সামরিক মহড়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্ল্যাটফর্মগুলোকে অন্যান্য মিত্র বাহিনীর সঙ্গে আরও সমন্বিত ও কার্যকর করতে পারি।’
শুনানির শুরুতে লিখিত বিবৃতিতে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। ২০২৪ সালের আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে যে গণআন্দোলন হয়েছিল, তা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা সরকারকে পতন ঘটায়। আগামী বছর বাংলাদেশের জনগণ ভোটে যাবে, যা দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের যাত্রায় পাশে থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অনেক সময় তাঁর প্রাপ্য মনোযোগ পায় না, বড় প্রতিবেশীদের আড়ালে গুরুত্ব হারিয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রসেবায় আমার দুই দশকের অভিজ্ঞতা, যার মধ্যে ঢাকার কর্মকালও রয়েছে। তাই, আমি বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সম্পর্কে গভীরভাবে অবগত। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থান বাংলাদেশকে উন্মুক্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার করে তুলেছে।’

‘আমার একটি নদী ছিল’র মতো হৃদয়স্পর্শী আরেকটি গান হতে পারে- ‘চকরিয়ায় একটি সুন্দরবন ছিল’। এই বনের আয়তন ছিল সাড়ে ৪৫ হাজার একর; আসল সুন্দরবনের প্রায় ৭ ভাগের এক ভাগ। এই বনেও ছিল কেওড়া, বাইন, সুন্দরীর মতো শ্বাসমূলীয় গাছপালা। বনে ঘুরে বেড়াতো হরিণ, বানর, বাঘ। নদী-খালের নোনাজলে ছিল মাছ, কাঁকড়া, কুমির...
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি...
৫ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়।
৮ ঘণ্টা আগে
বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।
১১ ঘণ্টা আগে