আরপিও সংশোধনে ইসির চাওয়া
মো. হুমায়ূন কবীর, ঢাকা
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের আমলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বা বিনা ভোটে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের আগেই তাঁদের বিজয় নিশ্চিত করেছিল আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় বহাল থাকা। বিনা ভোটে এমপি হওয়ার সুযোগ আর রাখতে চায় না বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে ইসি।
ইসি সূত্র বলেছে, আরপিও সংশোধনের খসড়ায় বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পথ বন্ধ করার বিধান রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বন্ধের ক্ষমতা ইসির ফিরে পাওয়া, এক প্রার্থীর সর্বোচ্চ দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, জোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করাসহ বেশ কিছু বিধান যুক্ত হচ্ছে খসড়ায়। এ ছাড়া আরপিও থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা বাতিল হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করার প্রস্তাবও রয়েছে সংশোধনীতে।
আরপিও সংশোধনের বিষয়ে ১০ জুলাই কমিশন সভা হয়। ওই সভার পর নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব আলোচ্য-সূচিতে থাকলেও তা শুধু উপস্থাপন করা হয়, বিস্তারিত আলোচনা এগোয়নি। পরবর্তী বৈঠকে শুধু আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে।
দশম সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনেই প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এ জন্য ওই নির্বাচন বিনা ভোটের নির্বাচন হিসেবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। পরে শুধু সংসদ নয়, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনেও বিনা ভোটে অনেক প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি বিনা ভোটে বিজয়ের এই সুযোগ রাখতে চায় না। আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাব অনুযায়ী, কোনো আসনে একজনমাত্র প্রার্থী থাকলে তাঁকে ‘না’ ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। নির্বাচনে ‘না’ ভোট বিজয়ী হলে ওই আসনের জন্য আবার তফসিল ঘোষণা করে নতুনভাবে ভোট নেওয়া হবে।
এর আগে প্রয়াত সিইসি ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ‘না’ ভোট চালু করেছিল। তবে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সংসদে ওই বিধান পাস করেনি।
এ বিষয়ে নির্বাচন বিশ্লেষক ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য মো. আব্দুল আলীম বলেন, ২০০৮ সালের ‘না’ ভোট অর্থহীন ছিল। সেখানে ভোট বাতিলের বিধান ছিল না।
আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাবে ভোটে অনিয়ম হলে যেকোনো পর্যায়ে পুরো নির্বাচনী আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার বিধান রেখেছে কমিশন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, পুরো আসনের নির্বাচন বন্ধের ক্ষমতা আগে ইসির ছিল। সেটা বাদ দেওয়া হয়েছিল। এখন ইসির কেন্দ্রের ভোট বাতিলের ক্ষমতা আছে। পুরো আসনের নির্বাচন করার বিষয়টি ফেরত পাওয়ার জন্য তাঁরা প্রস্তাব করেছেন। আশা করছেন, এটা ফেরত পাবেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেন, আরপিও সংস্কারের মাধ্যমে ভোটের যেকোনো পর্যায়ে নির্বাচনী আসনের ভোট বন্ধের ক্ষমতা ফিরে পেলে ইসির ক্ষমতা আরও দৃশ্যমান হবে।
ইসির প্রস্তাবিত আরপিওর খসড়া অনুযায়ী, একজন প্রার্থী দুটির বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। দুটির বেশি আসনে কেউ প্রার্থী হলে তাঁর সব মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাবে। বিদ্যমান আরপিওতে একজন প্রার্থীর সর্বোচ্চ তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিধান রয়েছে।
সূত্র বলেছে, দুই বা ততোধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচনী জোট করলেও জোটভুক্ত দলগুলোকে নিজস্ব প্রতীক ব্যবহারের বিধান রাখা হচ্ছে সংশোধনীতে। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ১৪ দলের প্রার্থীদের বেশির ভাগ নিজ দলীয় প্রতীকের বদলে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। এতে নামসর্বস্ব দলের প্রার্থী নৌকা প্রতীকের কারণে বিজয়ী হয়েছেন এবং অন্য দলগুলো দলীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন বৈঠকেও জোটের ভোটে দলগুলোর নিজ নিজ প্রতীক ব্যবহারের পক্ষে মত এসেছে।
সংশোধনী প্রস্তাবে দুই বা ততোধিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সমান ভোট পেলে তাঁদের মধ্যে পরে আবার ভোট করার বিধান যুক্ত হচ্ছে। বর্তমানে এক বা একাধিক প্রার্থী সমান ভোট পেলে লটারির মাধ্যমে বিজয়ী নির্বাচন করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ইভিএমের বিষয়টি নেই উল্লেখ করে আবুল ফজুল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ইভিএম সামনে কোনো নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে না।’
সূত্র বলেছে, সংশোধিত আরপিওর খসড়ায় নির্বাচনী সহায়তার বিষয়ে সরকার ও ইসির মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে ইসির চাহিদাকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের কোনো বিভাগ ও কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তব্যে অবহেলা করলে তাঁদের বিরুদ্ধে ইসির শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক করা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যক্তিগত নথি, চাকরির বহি ও বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনেও তার উল্লেখ থাকার বিধান থাকছে। সর্বশেষ গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন পুরোপুরি বন্ধ করার পরও দায়ীদের বিরুদ্ধে ইসির সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। নতুন এই বিধান যুক্ত হলে অনিয়মকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় ইসির এখতিয়ার বাড়বে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিদ্যমান সংজ্ঞায় পুলিশ বাহিনী, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), আনসার বাহিনী, ব্যাটালিয়ন আনসার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, বিএনসিসির নাম রয়েছে। এখন এর সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগের নাম যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে ইসি।
খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল নিষ্পত্তির পর ইসির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। এ ছাড়া সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর থেকে অথবা তফসিল ঘোষণার ৪৫ দিন আগে থেকে ফলাফল ঘোষণার ১৫ দিন পর পর্যন্ত ইসির অনুমতি ছাড়া জেলা থেকে বিভাগীয় প্রশাসন-পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বদলি করা যাবে না। এর মধ্যে পুলিশের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) বিষয়টি আগে ছিল না। সংশোধনী প্রস্তাবে তফসিল ঘোষণার পর থেকে এই কর্তৃত্বের সুযোগ রয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, কোনো কর্মকর্তাকে বদলি বা প্রত্যাহারের প্রয়োজন হলে ইসি চিঠি দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
এ ছাড়া সংশোধিত আরপিওর খসড়ায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা অন্য কোনো পদে থাকলে প্রার্থী হতে ন্যূনতম স্নাতক পাস; হলফনামায় দেশে ও বিদেশে আয়ের উৎস জানানো; হলফনামায় সর্বশেষ সার্টিফিকেট দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্দিষ্ট করা নেই। ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দির মধ্যে অনুমোদন নেই এমন ব্যক্তি ঘোরাফেরা করলে গ্রেপ্তার করা; প্রার্থীদের ব্যয় মনিটরিং, প্রার্থীদের ব্যয় অডিট করা এবং রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয় অডিট করার ক্ষমতা ইসিকে দেওয়া; নির্বাচনে জয়ের পরও আর্থিক অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এমপি পদ বাতিল করার ক্ষমতা; নির্বাচনে কেউ অসত্য তথ্য দিয়ে অভিযোগ করার বিষয়টি প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে মামলা করা; নির্বাচনী অপরাধ এবং আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের ব্যবস্থা নেওয়া; সরাসরি ও অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা; কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা এক অর্থবছরে দলকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিতে পারবে, তবে ব্যক্তির ট্যাক্স রিটার্ন দেখাতে হবে; প্রস্তাবিত আচরণবিধির সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিধি লঙ্ঘনে অর্থদণ্ড ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আরপিও সংশোধনের বিষয়ে ইসির আইন সংস্কার কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘আরপিও পর্যালোচনা চলছে। আমরা ঐকমত্য কমিশনের মতামতকে প্রাধান্য দিচ্ছি। ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেসব বিষয় আসবে, সেগুলো এখানে যুক্ত করা হবে।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের আমলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বা বিনা ভোটে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের আগেই তাঁদের বিজয় নিশ্চিত করেছিল আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় বহাল থাকা। বিনা ভোটে এমপি হওয়ার সুযোগ আর রাখতে চায় না বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে ইসি।
ইসি সূত্র বলেছে, আরপিও সংশোধনের খসড়ায় বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পথ বন্ধ করার বিধান রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বন্ধের ক্ষমতা ইসির ফিরে পাওয়া, এক প্রার্থীর সর্বোচ্চ দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, জোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করাসহ বেশ কিছু বিধান যুক্ত হচ্ছে খসড়ায়। এ ছাড়া আরপিও থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা বাতিল হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করার প্রস্তাবও রয়েছে সংশোধনীতে।
আরপিও সংশোধনের বিষয়ে ১০ জুলাই কমিশন সভা হয়। ওই সভার পর নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব আলোচ্য-সূচিতে থাকলেও তা শুধু উপস্থাপন করা হয়, বিস্তারিত আলোচনা এগোয়নি। পরবর্তী বৈঠকে শুধু আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে।
দশম সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনেই প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এ জন্য ওই নির্বাচন বিনা ভোটের নির্বাচন হিসেবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। পরে শুধু সংসদ নয়, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনেও বিনা ভোটে অনেক প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি বিনা ভোটে বিজয়ের এই সুযোগ রাখতে চায় না। আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাব অনুযায়ী, কোনো আসনে একজনমাত্র প্রার্থী থাকলে তাঁকে ‘না’ ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। নির্বাচনে ‘না’ ভোট বিজয়ী হলে ওই আসনের জন্য আবার তফসিল ঘোষণা করে নতুনভাবে ভোট নেওয়া হবে।
এর আগে প্রয়াত সিইসি ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ‘না’ ভোট চালু করেছিল। তবে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সংসদে ওই বিধান পাস করেনি।
এ বিষয়ে নির্বাচন বিশ্লেষক ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য মো. আব্দুল আলীম বলেন, ২০০৮ সালের ‘না’ ভোট অর্থহীন ছিল। সেখানে ভোট বাতিলের বিধান ছিল না।
আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাবে ভোটে অনিয়ম হলে যেকোনো পর্যায়ে পুরো নির্বাচনী আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার বিধান রেখেছে কমিশন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, পুরো আসনের নির্বাচন বন্ধের ক্ষমতা আগে ইসির ছিল। সেটা বাদ দেওয়া হয়েছিল। এখন ইসির কেন্দ্রের ভোট বাতিলের ক্ষমতা আছে। পুরো আসনের নির্বাচন করার বিষয়টি ফেরত পাওয়ার জন্য তাঁরা প্রস্তাব করেছেন। আশা করছেন, এটা ফেরত পাবেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেন, আরপিও সংস্কারের মাধ্যমে ভোটের যেকোনো পর্যায়ে নির্বাচনী আসনের ভোট বন্ধের ক্ষমতা ফিরে পেলে ইসির ক্ষমতা আরও দৃশ্যমান হবে।
ইসির প্রস্তাবিত আরপিওর খসড়া অনুযায়ী, একজন প্রার্থী দুটির বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। দুটির বেশি আসনে কেউ প্রার্থী হলে তাঁর সব মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাবে। বিদ্যমান আরপিওতে একজন প্রার্থীর সর্বোচ্চ তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিধান রয়েছে।
সূত্র বলেছে, দুই বা ততোধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচনী জোট করলেও জোটভুক্ত দলগুলোকে নিজস্ব প্রতীক ব্যবহারের বিধান রাখা হচ্ছে সংশোধনীতে। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ১৪ দলের প্রার্থীদের বেশির ভাগ নিজ দলীয় প্রতীকের বদলে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। এতে নামসর্বস্ব দলের প্রার্থী নৌকা প্রতীকের কারণে বিজয়ী হয়েছেন এবং অন্য দলগুলো দলীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন বৈঠকেও জোটের ভোটে দলগুলোর নিজ নিজ প্রতীক ব্যবহারের পক্ষে মত এসেছে।
সংশোধনী প্রস্তাবে দুই বা ততোধিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সমান ভোট পেলে তাঁদের মধ্যে পরে আবার ভোট করার বিধান যুক্ত হচ্ছে। বর্তমানে এক বা একাধিক প্রার্থী সমান ভোট পেলে লটারির মাধ্যমে বিজয়ী নির্বাচন করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ইভিএমের বিষয়টি নেই উল্লেখ করে আবুল ফজুল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ইভিএম সামনে কোনো নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে না।’
সূত্র বলেছে, সংশোধিত আরপিওর খসড়ায় নির্বাচনী সহায়তার বিষয়ে সরকার ও ইসির মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে ইসির চাহিদাকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের কোনো বিভাগ ও কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তব্যে অবহেলা করলে তাঁদের বিরুদ্ধে ইসির শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক করা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যক্তিগত নথি, চাকরির বহি ও বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনেও তার উল্লেখ থাকার বিধান থাকছে। সর্বশেষ গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন পুরোপুরি বন্ধ করার পরও দায়ীদের বিরুদ্ধে ইসির সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। নতুন এই বিধান যুক্ত হলে অনিয়মকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় ইসির এখতিয়ার বাড়বে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিদ্যমান সংজ্ঞায় পুলিশ বাহিনী, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), আনসার বাহিনী, ব্যাটালিয়ন আনসার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, বিএনসিসির নাম রয়েছে। এখন এর সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগের নাম যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে ইসি।
খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল নিষ্পত্তির পর ইসির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। এ ছাড়া সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর থেকে অথবা তফসিল ঘোষণার ৪৫ দিন আগে থেকে ফলাফল ঘোষণার ১৫ দিন পর পর্যন্ত ইসির অনুমতি ছাড়া জেলা থেকে বিভাগীয় প্রশাসন-পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বদলি করা যাবে না। এর মধ্যে পুলিশের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) বিষয়টি আগে ছিল না। সংশোধনী প্রস্তাবে তফসিল ঘোষণার পর থেকে এই কর্তৃত্বের সুযোগ রয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, কোনো কর্মকর্তাকে বদলি বা প্রত্যাহারের প্রয়োজন হলে ইসি চিঠি দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
এ ছাড়া সংশোধিত আরপিওর খসড়ায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা অন্য কোনো পদে থাকলে প্রার্থী হতে ন্যূনতম স্নাতক পাস; হলফনামায় দেশে ও বিদেশে আয়ের উৎস জানানো; হলফনামায় সর্বশেষ সার্টিফিকেট দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্দিষ্ট করা নেই। ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দির মধ্যে অনুমোদন নেই এমন ব্যক্তি ঘোরাফেরা করলে গ্রেপ্তার করা; প্রার্থীদের ব্যয় মনিটরিং, প্রার্থীদের ব্যয় অডিট করা এবং রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয় অডিট করার ক্ষমতা ইসিকে দেওয়া; নির্বাচনে জয়ের পরও আর্থিক অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এমপি পদ বাতিল করার ক্ষমতা; নির্বাচনে কেউ অসত্য তথ্য দিয়ে অভিযোগ করার বিষয়টি প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে মামলা করা; নির্বাচনী অপরাধ এবং আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের ব্যবস্থা নেওয়া; সরাসরি ও অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা; কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা এক অর্থবছরে দলকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিতে পারবে, তবে ব্যক্তির ট্যাক্স রিটার্ন দেখাতে হবে; প্রস্তাবিত আচরণবিধির সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিধি লঙ্ঘনে অর্থদণ্ড ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আরপিও সংশোধনের বিষয়ে ইসির আইন সংস্কার কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘আরপিও পর্যালোচনা চলছে। আমরা ঐকমত্য কমিশনের মতামতকে প্রাধান্য দিচ্ছি। ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেসব বিষয় আসবে, সেগুলো এখানে যুক্ত করা হবে।’
দেশের থানাগুলোতে ৫ মাস ধরে প্রতি মাসে ১ হাজার ৮০০-এর বেশি নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে। সেই হিসাবে দিনে ৬০টি এবং প্রতি ২৪ মিনিটে একটি মামলা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতনের অনেক ঘটনায়ই মামলা হয় না—এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিলে অপরাধের প্রকৃত মাত্রা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
৬ ঘণ্টা আগেগোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচি ঘিরে হতাহতের ঘটনায় নিন্দা এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন শিক্ষক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মীসহ ২১ বিশিষ্ট নাগরিক। আজ শনিবার (১৯ জুলাই) গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠানো হয়।
১১ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি রাজনৈতিক দলকে তাদের কর্মসূচির জন্য বাস সরবরাহ করেছে। বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
১২ ঘণ্টা আগেজাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর), বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষায় রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রধান সংস্থা হিসেবে কাজ করে। ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা জাতিসংঘ সচিবালয়ের একটি বিভাগ হিসেবে পরিচালিত হয়। এ সংস্থার ম্যান্ডেট জাতিসংঘের সনদ...
১৭ ঘণ্টা আগে