Ajker Patrika

ছুটি না নিয়েই লাপাত্তা ৯১ প্রাথমিক শিক্ষক

  • অধিকাংশ শিক্ষক বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন
  • তাঁদের মধ্যে ৬৮ জন বরখাস্ত হয়েছেন
  • বিভাগীয় মামলা তদন্তাধীন ২৯ জনের বিরুদ্ধে
  • একই সময়ে চাকরি ছেড়েছেন ৯২ জন
  • বেশি চাকরি ছেড়েছে বিয়ানীবাজারে
লবীব আহমদ, সিলেট 
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৪: ৫৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ছুটি না নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন সিলেটের ৯১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ছয়জন আবার ছুটি নিয়েও কর্মস্থলে ফেরেননি। পরে তাঁদের মধ্য থেকে ৬৮ জনকে বরখাস্ত করা হয়। বাকি ২৯ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লাপাত্তা হওয়ার এ তথ্য গত তিন বছরের। একই সময়ে চাকরি ছেড়েছেন ৯২ জন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাপাত্তা হওয়া অধিকাংশই উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় জানায়, জেলায় ১ হাজার ৪৭৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এতে শিক্ষকের জন্য সৃষ্ট পদ রয়েছে সাড়ে ৭ হাজার। বর্তমানে ৮ শতাধিক পদ শূন্য। এমতাবস্থায় কোনো প্রকার ছুটি না নিয়ে ২০২২ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন ৯১ সহকারী শিক্ষক। ছয়জন ছুটি নিয়ে পরে আর আসেননি। ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা শিক্ষকদের মধ্যে একজন বালাগঞ্জের রাধাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মৃণালিনী চক্রবর্তী। ২০২৫ সালের মে মাসে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। এভাবে বাকিদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়। এরই মধ্যে ৬৮ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাকিদের মামলাও তদন্তাধীন।

ছুটি নিয়ে গিয়ে লাপাত্তা হওয়া শিক্ষকদের মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলার ৫ জন ও সিলেট সদরের ১ জন রয়েছেন। বাকি ৯১ জনের মধ্যে বিশ্বনাথে ১৬, ওসমানীনগরে ১৩, বিয়ানীবাজারে ১১, সদরে ৯, দক্ষিণ সুরমায় ৯, বালাগঞ্জে ৮, কানাইঘাটে ৭, জকিগঞ্জে ৭, গোলাপগঞ্জে ৪, গোয়াইনঘাটে ৩, ফেঞ্চুগঞ্জে ২, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরে একজন করে।

সিলেটে সবচেয়ে বেশি চাকরি ছেড়েছেন প্রবাসী-অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার উপজেলার শিক্ষকেরা। সেখানে ২৬ জন শিক্ষক চাকরি ছেড়েছেন। আর গোলাপগঞ্জে ২০, জকিগঞ্জে ১৩, বালাগঞ্জে ৯, সদরে ৬, ফেঞ্চুগঞ্জে ৫, গোয়াইনঘাটে ৩, বিশ্বনাথ, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও ওসমানীনগরে দুজন করে, জৈন্তাপুর ও দক্ষিণ সুরমায় একজন করে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, সরকারি অন্য চাকরি বা অন্য কাজে লম্বা ছুটিতে যেতে হলে নানান ঝামেলায় পড়তে হয়। নির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে সেখানে বিভিন্ন কাগজপত্র জমা দিতে হয়। তাই অনেকে এসব সমস্যা এড়াতে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে চাকরি ছেড়ে দেন। আবার অনেকে না জানিয়ে কাজে বা দেশের বাইরে চলে যান। এতে করে তাঁদের চাকরি ছাড়ার নির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে জানা যায় না। তবে সিলেটের বেশির ভাগ শিক্ষক বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন।

দক্ষিণ সুরমার গোপশহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক এরই মধ্যে দেশ ছেড়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং আরেকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল গফুর মজুমদার বলেন, ‘আমার স্কুলের রেবেকা ইয়াছমিন চৌধুরী ইতিমধ্যে কানাডায় চলে গেছেন। তিনি মাত্র ১৫ দিনের ছুটি নিয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়ে এখন তদন্ত চলছে। আর মো. আব্দুল কাদির নামের যে শিক্ষককে আমার স্কুলের বলা হয়েছে, তিনি একসময় আমার এখানে ছিলেন। পরে আরেক স্কুলে গিয়ে সেখান থেকে লন্ডনে চলে গেছেন। আমার স্কুলে এখন দুজন শিক্ষকের সংকট রয়েছে। স্কুলও এক শিফটের। সুতরাং পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশেদ বলেন, ‘সিলেট প্রবাসী-অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এখানকার মানুষ দেশে তেমন চাকরি করতে চান না। একটু সুযোগ-সুবিধা পেলেই বিদেশে চলে যান। আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে। অনেকে না জানিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন। পরে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে এ পর্যন্ত অনেককে বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও অনেকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। শুরুতে সবাই বলেন, তাঁর এই চাকরি দরকার। কিন্তু পরে ভালো সুযোগ-সুবিধা পেলে তাঁরাই আবার না জানিয়ে চাকরি ছেড়ে চলে যান। এতে করে পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে। বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকের পদ খালি হচ্ছে। তবে কেউই বিদেশে চলে গিয়ে বা চাকরি ছেড়ে বেতন তুলতে পারবেন না।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ গ্রেপ্তার

বিহার নির্বাচন: লড়বেন না প্রশান্ত কিশোর, ‘নিশ্চিত পরাজয়’ দেখছেন বিজেপি জোটের

পায়ে নূপুর দেখে মেয়ের লাশ শনাক্ত করলেন বাবা

প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্ট চালু করছে চ্যাটজিপিটি, শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়

জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে শেষ মুহূর্তে এসে অনিশ্চয়তা, সন্ধ্যায় ‘অতি জরুরি’ বৈঠক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত