Ajker Patrika

অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনেরা: বিচার বিভাগ ব্যর্থ হলে সংস্কার টিকবে না

  • এলডিসির সুরক্ষিত খোলস ছেড়ে আসতে হবে: রেহমান সোবহান
  • দেড় দশকের উন্নয়ন বয়ানে লাভবান তিনটি গোষ্ঠী: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
  • পুনর্গঠনের সময় উচিত সঠিক পথ বেছে নেওয়া: তৌহিদ হোসেন
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৭: ৩৪
অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনেরা: বিচার বিভাগ ব্যর্থ হলে সংস্কার টিকবে না

সংবিধানই বিচার বিভাগের বৈধতার বাতিঘর। বিচার বিভাগ ব্যর্থ হলে কোনো সংস্কার টিকবে না বলে জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তাঁরা বলছেন, দেশের স্বার্থে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক পুনর্গঠনে ‘সঠিক পথ’ বেছে নেওয়া এবং স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদার সুরক্ষিত খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসা উচিত।

রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে গতকাল শনিবার ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন, বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) এই আয়োজন করে।

সিজিএসের সভাপতি এবং সম্মেলনের চেয়ার জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম এবং সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রমুখ। বিভিন্ন দেশের চিন্তাবিদ, রাজনীতিক, কূটনীতিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের নিয়ে চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ভাঙন, পুনর্গঠন’।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বিচার বিভাগ ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায়, কোনো সংস্কার টিকবে না। তাই বাংলাদেশ যখন একটি নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যতের পথে হাঁটছে, তখন বিচার বিভাগকে নীতিতে স্থির হওয়ার ওপর জোর দেন তিনি।

রেফাত আহমদ বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব সংবিধান বাতিলের কথা বলেনি। বরং জনজীবনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সাড়া দেওয়ার মানসিকতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংবিধানের সঙ্গে সম্পৃক্ততাকে শুদ্ধ করার চেষ্টা করেছে।’

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশকে তার সাংবিধানিক জীবনের ব্যাকরণ পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে। এটি রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে আইনের শাসন কোনো আমলাতান্ত্রিক রীতিনীতি বা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত অলংকার নয়। বরং আইনের শাসন হলো সাংবিধানিক ব্যবস্থার একটি নৈতিক পাঠ, যা ন্যায্যতা, যুক্তি এবং জনগণের সম্মতির ওপর ভিত্তি করে। এটি অধিকারের মাধ্যমে, সীমাবদ্ধতার মাধ্যমে, শাসিতদের যে মর্যাদা প্রদান করে, তার মাধ্যমে এর দিকে ইঙ্গিত করে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেন, দেশকে এলডিসি মর্যাদার সুরক্ষিত খোলস ছেড়ে আসতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকের বাজার ধরে রাখা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজার সুবিধা পেতে এলডিসি মর্যাদা আরও কিছুদিন ধরে রাখার চেষ্টাকে পুরোনো চিন্তা বলে সমালোচনা করেন তিনি।

রেহমান সোবহান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলারের মতো। কিন্তু সেই বাজার ক্রমেই রাজনৈতিক কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে; এই অনিশ্চয়তা অর্থনৈতিক কারণে নয়।

বিশ্ব ব্যবস্থার ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে মন্তব্য করে রেহমান সোবহান বলেন, একসময় সারা বিশ্ব পশ্চিমের শাসনে থাকলেও ক্ষমতার ভরকেন্দ্র এখন ক্রমেই পূর্ব দিকে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে তার অবস্থান নতুন করে সাজাতে হবে। যে বাজারে পুঁজি সবচেয়ে বেশি সহজলভ্য এবং যে বাজারে দীর্ঘস্থায়ী প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে, বাংলাদেশের সেদিকেই যাওয়া উচিত।

সামগ্রিক বিচারে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শীর্ষ জিডিপি হলেও চীন অনেকটাই ওপরে উঠে এসেছে; ভারত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে রেহমান সোবহান বলেন, বর্তমানে দক্ষিণের দেশগুলোর প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হচ্ছে চীন। বৈশ্বিক পুঁজির বড় একটি অংশ সরবরাহ করছে চীন। অনেক দেশ চীনের বাজারে প্রবেশ করছে এবং চীনের পুঁজি ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ তার নিকটবর্তী দুটি বড় বাজার ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারেনি। সেই দুটি বাজার হচ্ছে ভারত ও চীন।

ভূরাজনৈতিক পুনর্গঠনে ‘সঠিক পথ’ বেছে নিয়ে বাংলাদেশ দায়িত্বশীল সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূমিকায় থাকবে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, পুনর্গঠনের সময় অনেক রাষ্ট্র পক্ষ বেছে নিতে আগ্রহী হয়, কিন্তু আমাদের উচিত, প্রথমে ‘সঠিক পথ’ বেছে নেওয়া।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অংশ নেবে এবং জাতীয় স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, সেখানে যত বেশি ঘৃণাপূর্ণ মন্তব্য, যত বেশি তথ্যবিচ্যুতি, যত বেশি মিথ্যা, যত বেশি কারও বিরুদ্ধে উসকানিমূলক লেখা—তত বেশি ক্লিক, আর তত বেশি আয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তথ্যপ্রবাহের গণতন্ত্রীকরণ করেছে, এটা সত্য। এখন প্রতিটি মানুষ তার মতামত জানাতে পারে, কিন্তু এর নেতিবাচক দিক হলো এগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তথ্যভিত্তিক নয়, জ্ঞাননির্ভর নয়, যুক্তিশীলও নয়।

বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলোর জন্য বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে মাহ্‌ফুজ আনাম আরও বলেন, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আমরা অর্থ বা সামরিক শক্তিতে বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারব না; আমাদের একমাত্র প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্র হলো জ্ঞান ও দক্ষতা।

অনুষ্ঠানে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেড় দশকে উন্নয়নের যে বয়ান তৈরি করা হয়েছিল, তাতে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলা—এই তিনটি গোষ্ঠী লাভবান হয়েছে। ব্যাংক, বিদ্যুৎসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন খাতের নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছিল তাঁদের হাতেই। এই গোষ্ঠীগুলো প্রতিযোগিতা এড়িয়ে চলেছে। পরিণামে দেশে শুধু স্বজনতোষী পুঁজিবাদ সৃষ্টি হয়নি, হয়েছিল চৌর্যতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রূপের ঈর্ষায় ৩ মেয়েশিশুকে চুবিয়ে হত্যা, দেখে ফেলায় রেহাই পায়নি নিজের ছেলে

সিসিইউতে নিবিড় তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া, আশাবাদী চিকিৎসকেরা

ইউরোপ চাইলে রাশিয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত—পুতিনের এই মন্তব্যে ব্রিটেনের তীব্র প্রতিক্রিয়া

কে এই কৃষ্ণ নন্দী, তাঁকে জামায়াত প্রার্থী করল কেন

জামায়াতে ইসলামীর প্রথম হিন্দু প্রার্থী খুলনার কৃষ্ণ নন্দী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ