Ajker Patrika

অধ্যাদেশ অনুমোদন: রঙিন ব্যালটে হবে গণভোট

  • আজ-কালের মধ্যে অধ্যাদেশ জারির আশা আইন উপদেষ্টার।
  • সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল একই সঙ্গে ঘোষণা হবে।
  • সংসদ নির্বাচনের ব্যালট হবে সাদাকালো, গণভোটের রঙিন।
  • গণভোটের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচার শুরু হবে।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেওয়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ফাইল ছবি
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেওয়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ফাইল ছবি

জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলোর আইনি বৈধতা দিতে গণভোট করার জন্য প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশ অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে ‘গণভোট অধ্যাদেশ, ২০২৫’ চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতির বিষয়গুলো তুলে ধরেন। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দিন এই গণভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিলও একই সঙ্গে ঘোষণা করা হবে। সংসদ নির্বাচনের ব্যালট হবে আগের মতো সাদাকালো, গণভোটের ব্যালট হবে রঙিন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ অনুসারে জুলাই সনদে বর্ণিত সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের মতামত বা সম্মতি জানার জন্য গণভোট অনুষ্ঠানে গণভোট অধ্যাদেশ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আজ-কালের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি হবে।’ তিনি জানান, অধ্যাদেশ অনুযায়ী গণভোটে একটি প্রশ্ন থাকবে। সেখানে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ বক্স থাকবে। যাঁরা সম্মতি জানাবেন তাঁরা ‘হ্যাঁ’ এবং যাঁরা সম্মতি জানবেন না, তাঁরা ‘না’ ভোট দেবেন। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের উল্লেখিত চারটি প্রস্তাবের জন্য এই ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোট হবে।

অধ্যাদেশের বিধানগুলো তুলে ধরে অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা ভোটকেন্দ্রই হবে গণভোটের ভোটকেন্দ্র। সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ভোট গ্রহণকারী সব কর্মকর্তা গণভোটেরও ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ভোট গ্রহণের সময়ও হবে এক। ভোটাররা যাতে বিভ্রান্ত না হন, সে জন্য গণভোটের ব্যালট রঙিন হবে। সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত সিলমোহর গণভোটেও ব্যবহার হবে।

জাতীয় সংসদের মতো গণভোটেও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়া যাবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ভোট গণনা, ফলাফল ঘোষণাসহ অন্য বিষয়গুলোও জাতীয় নির্বাচনের যে বিধান রয়েছে, গণভোটে তা প্রযোজ্য হবে। কোনো কারণে কোনো কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত হলে নির্বাচন কমিশন (গণভোটের ক্ষেত্রে) যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন, অন্যান্য ভোটকেন্দ্রের ফলাফল দিয়ে গণভোটের ফলাফল নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, তখনই শুধু কমিশন ওই সব কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের নির্দেশ দেবে। কমিশন যদি মনে করে, যেসব কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি, তা বিবেচনা না করলেও গণভোটের ফলাফল নির্ধারণ করা যায়, তাহলে ওই সব কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের দরকার পড়বে না।

গণভোট অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় বিধি, নির্দেশনা ও পরিপত্র প্রণয়ন করতে পারবে বলে অধ্যাদেশে উল্লেখ রয়েছে।

নোট অব ডিসেন্টের (আপত্তি) বিষয়গুলো গণভোটে অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারেরও কিছুটা ভূমিকার বিষয় রয়েছে। জনগণের সংস্কারের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় রয়েছে। উচ্চকক্ষের বিষয়টি অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে করা হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য আমরা অসহনীয় কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দল বা অন্যরা যে যার মতো করে ব্যাখ্যা করেন। তবে আমরা আমাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রতিটি শব্দের মধ্যে স্পষ্ট করা হয়েছে। কে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার।’

গণভোটে যে ৪টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা বিবেচনা করে ভোট দেবেন। এ ক্ষেত্রে অধিকতর সম্মত হলে ‘হ্যাঁ’ দেবেন, অধিকতর অসম্মত হলে ‘না’ দেবেন।

নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে ইসির সচিব আখতার আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাঁরা কেন্দ্রভিত্তিক ভোটার তালিকা প্রস্তুত শুরু করেছেন। আশা করছেন ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এটি চূড়ান্ত করতে পারবেন। নির্বাচনী সব সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়ে জড়ো করে উপজেলা পর্যায়ে পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হবে।

সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে করতে ভোটকেন্দ্র বা বুথ বাড়ানোর প্রয়োজন হবে কি না, তা পর্যালোচনা করতে ২৯ নভেম্বর মক (মহড়া) ভোটের আয়োজন করা হবে জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘ওই মক ভোটে কতটুকু সময় প্রয়োজন হবে, সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এ ক্ষেত্রে আমাদের ভোটকেন্দ্র বাড়াতে হবে, না বুথ বাড়াতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

একই দিনে গণভোট ও সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এবার আমাদের চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়। তবে আমরা দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর যে উৎসাহ দেখছি, তাতে আমরা চ্যালেঞ্জটি ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারব বলে আশা করি।’

চারটি প্রশ্নে গণভোটে জনগণ বিভ্রান্ত হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, গণভোটের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে এটি শুরু হবে। নির্বাচন কমিশন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সরকারের তরফ থেকেও এটি করা হবে। প্রত্যেক মানুষ যেন বুঝতে পারেন, সেই মাত্রায় প্রচারণা চালানো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যাঁদের নিরক্ষর ভোটার বলছেন, তাঁরাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন। তাঁদের পলিটিক্যাল জাজমেন্ট আমার-আপনার চেয়েও অনেকাংশে বেশি। তাঁরা যাতে প্রশ্নটি (গণভোট) বোঝেন, সে জন্য তিন মাসব্যাপী প্রচার করব।’

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ থাকলেও আশা করি, আমরা একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর ভোট করতে পারব।’

পোস্টাল ভোটের বিষয়ে ইসির সচিব জানান, পোস্টাল ভোটের জন্য প্রবাসীদের নিবন্ধন কার্যক্রমে আশাব্যঞ্জক সাড়া মিলছে। দেশের ক্ষেত্রে আরও একটু পরে এটি শুরু করা হবে।

এ পর্যন্ত ৩১ হাজার ৮০১ জন প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন করেছেন উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা জানান, ‘আশা করি, এই সংখ্যা কয়েক লাখে ছাড়িয়ে যাবে।’ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ভারতে থাকা নেতা-কর্মীদের বিষয়ে ইঙ্গিত করে এক গণমাধ্যমকর্মী জানতে চান, ভারতে প্রবাসীরা ভোট দেবেন কি না? এ প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি ভারতে প্রবাসী কয়েকজনের ব্যাপারে হয়তো জানতে চাচ্ছেন। এটা নির্বাচন কমিশন দেখবে। আমার মনে হয় না, তাঁরা ভোট দিতে নিবন্ধিত হবেন।’

একই বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে ইসির সচিব বলেন, অ্যাপটা সর্বজনীন। এখানে যাঁদের সুযোগ আছে, তাঁরা আবেদন করবেন। তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র ‘লকড’ আছে। যাঁদের পরিচয়পত্র ‘লকড’, তাঁদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ