Ajker Patrika

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে অনিশ্চিত প্রবাসীদের ভোট

  • পোস্টাল ব্যালট কার্যকর করা নিয়ে কমিশনেই সংশয়।
  • আস্থার জটিলতায় নির্বাচন বিতর্কিত হওয়ার আশঙ্কা।
  • আরপিওতে এ সুযোগ থাকলেও বেশ সময়সাপেক্ষ।
  • মতামতে অংশ নিতে প্রবাসীদের তেমন সাড়া মেলেনি।
মো. হুমায়ূন কবীর, ঢাকা 
Thumbnail image
ফাইল ছবি

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে বিভিন্ন মহল পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থা কার্যকর করার দাবি জানালেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তা অনিশ্চিত। কারণ, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনেরই কয়েকজন সদস্য এতে আস্থা পাচ্ছেন না। ফলে শুরুতে পোস্টাল ব্যালট কার্যকরে কমিশনের আগ্রহ থাকলেও এখন ভাটা পড়েছে।

সংস্কার কমিশনের পোস্টাল ব্যালট কার্যকর নিয়ে সংশয়ে থাকা সদস্যদের আশঙ্কা, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মতো পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থাও নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে পারে। পোস্টাল ব্যালট কার্যকর না হলে বিভিন্ন দেশে থাকা প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী ভোটারের পাশাপাশি নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা, কারাবন্দী এবং জীবিকার কারণে নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরে অবস্থান করা ভোটাররা আগামী নির্বাচনেও ভোট দিতে পারবেন না। সংস্কার কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে অনলাইনে বৈঠকে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রবাসীদের আবেদন আহ্বান করে তেমন সাড়া পায়নি কমিশন।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, পোস্টাল ব্যালট কার্যকরের বিষয়টি নিয়ে তাঁরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

কমিশনের একটি সূত্র জানায়, পোস্টাল ব্যালট কীভাবে কার্যকর করা যায়, সে বিষয়ে কমিশন সুপারিশ করতে পারে।

প্রবাসীদের ভোটের অধিকার নিশ্চিতে বিভিন্ন সময়ে পোস্টাল ব্যালট কার্যকরের দাবি ওঠে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছেও বিভিন্ন মহল প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারও এ বিষয়ে তাদের সদিচ্ছার কথা জানিয়েছে। ৩ অক্টোবর সরকার গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও শুরুতে পোস্টাল ব্যালট কার্যকরের বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিভিন্ন জটিলতার কারণে সেই আগ্রহে ক্রমেই ভাটা পড়েছে।

সংস্কার কমিশনের সূত্র বলেছে, পোস্টাল ব্যালট কার্যকর করতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সব মহলের আস্থা। কিন্তু এই আস্থা অর্জন নিয়েই সবচেয়ে বেশি জটিলতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, ইভিএমে ভোটে যেখানে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের আস্থা কম, সেখানে পোস্টাল ব্যালট বা ই-ভোটিংয়ে মানুষের আস্থা কতটুকু পাওয়া যাবে, তা নিয়ে কমিশনের সদস্যদের মধ্যেই সংশয় রয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, ভরসা কম থাকায় পোস্টাল ব্যালট কার্যকর করতে গেলে নির্বাচনই বিতর্কিত হওয়ার শঙ্কা থাকবে।

বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, বাংলাদেশি ভোটাররা দুভাবে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। একটি হচ্ছে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে সরাসরি ভোট দেওয়া, অন্যটি পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়া। পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ১৫ দিনের মধ্যে ভোটারকে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ব্যালট পেপারের জন্য আবেদন করতে হয়। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পর ডাকঘরের মাধ্যমে ব্যালট পেপার আবেদনকারী ভোটারের কাছে পৌঁছানো হয়। তিনি ভোট দিয়ে সিলগালা করে ব্যালট ডাকঘরের মাধ্যমে ৎনির্বাচনের দিন ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠান। এই প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ বলে তা কার্যকর নয় বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, জটিলতার কারণে পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থার বিকল্প বা এর পাশাপাশি কী ব্যবস্থা চালু করা যায়, তা নিয়ে কিছুটা ভেবেছিল কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। ওই কমিশন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৪ সালের শেষ দিকে অনলাইনে ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করার কথা ভেবেছিল, যাতে সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভোট দিতে পারেন। তবে ওই ভাবনা পরে আর আলোর মুখ দেখেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিদেশেই প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা চেয়ে তৎকালীন আইনমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। এর অনুলিপি তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছেও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এটি বাস্তবায়ন হয়নি।

জানা গেছে, কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থা সংস্কার ও কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছিল। তাঁরা পোস্টাল ব্যালটের ব্যালট অনলাইনে দিতে আরপিও ও বিধি সংশোধনের কাজেও হাত দিয়েছিলেন। তাঁদের পরিকল্পনা ছিল, নাগরিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় প্রতীক বরাদ্দের পর অনলাইনে একটি নির্দিষ্ট নম্বর দিয়ে একজনের জন্য একটি ব্যালট পেপার দেওয়া হবে। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট ভোটার একবারই ওই ব্যালট ডাউনলোডের পর প্রিন্ট করে পছন্দের প্রতীকে টিক চিহ্ন দিতে পারবেন। পরে সেটি ডাকঘরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন। কিন্তু নূরুল হুদা কমিশনের পর দায়িত্বে আসা সদ্য বিদায়ী কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন এ উদ্যোগের বিষয়ে অগ্রসর হয়নি।

সূত্র বলেছে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে মতামত দিতে অনলাইন সভায় অংশ নিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি ১৪ নভেম্বর সংস্কার কমিশনের ফেসবুক পেজে আহ্বান জানানো হয়। ২০ নভেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়। এতে তেমন সাড়া না পেয়ে ২১ নভেম্বর আবারও একই আহ্বান করা হয়। প্রবাসীদের তেমন সাড়া না পাওয়ায় অনলাইন সভাটি এখনো হয়নি।

পোস্টাল ব্যালট বাস্তবায়নের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং (ই-ভোটিং) ও ব্লকচেইন বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ সাদেক ফেরদৌস। প্রবাসীদের সঙ্গে অনলাইন বৈঠকের বিষয়ে ৯ ডিসেম্বর তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, সভায় অংশ নিতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে থাকা ৯০ জনের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি নিবন্ধন করেছেন। প্রতিটি দেশ থেকে এক বা দুজনকে বৈঠকে বক্তব্য দিতে সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা থাকবে।

বর্তমানে সাদেক ফেরদৌস বিদেশে থাকায় ওই সভার বিষয়ে তাঁর কাছ থেকে সর্বশেষ তথ্য জানা যায়নি। তিনি জানুয়ারিতে দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত