Ajker Patrika

গুমের পর মাথায় গুলি, লাশ বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যায়

  • লাশ ডুবিয়ে দিতে সিমেন্টের ব্যাগের সঙ্গে বেঁধে ফেলা হতো নদীতে
  • লাশ ফেলতে ব্যবহৃত হয়েছে বুড়িগঙ্গা, কাঞ্চন ও পোস্তগোলা সেতু
  • গুমের পর জীবিত ফিরেছেন ৭৩%, এখনো নিখোঁজ ২৭ শতাংশ
  • গুমের পর ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে কয়েকজনকে
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার অনেককে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশন। হত্যার পর লাশ ডুবিয়ে দিতে সিমেন্টের ব্যাগের সঙ্গে বেঁধে তিনটি সেতু থেকে শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেওয়া হতো। গুমের শিকার ২৭ শতাংশ এখনো নিখোঁজ। গুমের পর ভারতে হস্তান্তরের অভিযোগও পেয়েছে কমিশন।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের গুম তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত শনিবার এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিশন। গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলেছে কমিশন। গুমের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) বিলুপ্তির সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, গুমের সঙ্গে শেখ হাসিনা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততাও পাওয়া গেছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গতকাল রোববার ওই প্রতিবেদনের প্রকাশযোগ্য অংশ গণমাধ্যমকে সরবরাহ করেছে। প্রতিবেদনে কমিশনের তদন্ত, ঘটনায় সম্পৃক্ত কর্মকর্তা এবং নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের বয়ানে উঠে এসেছে গুম ও নির্যাতনের রোমহর্ষ বর্ণনা।

কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত ১৫ বছরে ১ হাজার ৬৭৬টি জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ রেকর্ড হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৭৫৮টি অভিযোগ কমিশন পর্যালোচনা করেছে। ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ১৩০ গুমের ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত গুমের ২১টি অভিযোগ জমা পড়েছে।

দুই ধরনের পদ্ধতিতে গুম

গুম তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাউকে গুম করার ক্ষেত্রে দুই ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো। অনেক সময় প্রথমে কাউকে আটক করে নির্যাতন করে অন্যদের নাম বের করা হতো। পরে তাঁদেরও ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। পরে এঁদের সবাইকে গুম করা হতো। এ ছাড়া রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি বা নেতার সরাসরি নির্দেশেও গুম ও নির্যাতন করা হতো। উদাহরণ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় র‍্যাবের তৎকালীন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদের স্বীকারোক্তি তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গুমের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের অবস্থান চিহ্নিত করতে মোবাইল প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হতো। গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ন্যাশনাল মনিটরিং সেন্টার (এনএমসি) এবং পরবর্তী সময়ে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) মোবাইল নজরদারি পরিচালনা করেছে। সাধারণত সাদাপোশাকে ভুক্তভোগীদের তুলে নেওয়া হতো এবং নিজেদের পরিচয় গোপনের জন্য এক সংস্থা আরেক সংস্থার নাম ব্যবহার করত বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গুম করে ভয়াবহ নির্যাতন

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটক ব্যক্তিদের গোপন কারাগারে রাখা হতো, যেখানে তাঁদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো। আটক রাখার সময়কাল ৪৮ ঘণ্টা থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত হতো। বিভিন্ন স্থানে আটটি গোপন কারাগার ছিল, যেগুলো ডিজিএফআই, র‍্যাব, সিটিটিসি পরিচালনা করত। এসব কারাগারে আটক ব্যক্তিদের পেটানো, বৈদ্যুতিক শক দেওয়া এবং বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ভয়াবহ নির্যাতন করা হতো। ২০১০ সালে র‍্যাব এক যুবকের ঠোঁট সেলাই করেছিল। আরেক ভুক্তভোগীর কানে ও যৌনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল। গুম করা ব্যক্তিদের হত্যা করা হতো কিংবা বিচারবহির্ভূতভাবে মুক্তি দেওয়া হতো। বন্দিশালাগুলোতে নির্যাতনের জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হতো। এ ছাড়া ছিল সাউন্ডপ্রুফ কক্ষ এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের জন্য বিভিন্ন যন্ত্র।

গুমের পর মাথায় গুলি করে হত্যা

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুমের পর অনেক ভুক্তভোগীকে মাথায় গুলি করে হত্যা শেষে মরদেহ সিমেন্টের ব্যাগের সঙ্গে বেঁধে নদীতে ফেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অধিকাংশ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের মরদেহ বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যায় ফেলা হয়। এ কাজে কাঞ্চন সেতু, পোস্তগোলা ও বুড়িগঙ্গা সেতু ব্যবহার করা হতো।

এক সাক্ষীর তথ্য অনুযায়ী, র‍্যাবের একটি ওরিয়েন্টেশন সেশনে তাঁকে দুজন ভুক্তভোগীকে গুলি করে হত্যার ঘটনা দেখানো হয়। র‍্যাবে থাকা আরেক সেনাসদস্য জানান, এক ভুক্তভোগী পালানোর চেষ্টা করলে তাঁকে উদ্ধার করে গুলি করা হয়। অন্য এক ঘটনায় একজনের মরদেহ রেললাইনে ফেলে ট্রেনে কাটার পরিকল্পনার কথা জানান র‍্যাবে থাকা আরেক সেনাসদস্য। চলন্ত গাড়ির সামনে ফেলে হত্যার চেষ্টার কথাও উঠে এসেছে।

কমিশন জানায়, গুমের কার্যক্রম বিভিন্ন বাহিনী সুসংগঠিতভাবে পরিচালনা করত। অপহরণ, আটক ও হত্যা—প্রতিটি ধাপে আলাদা দল কাজ করত। অনেকে জানতেনও না, তাঁরা কাকে এবং কেন হত্যা করছেন।

প্রতিবেদনে ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমার ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়, তাঁকে প্রথমে ডিজিএফআইয়ের সেলে, পরে র‍্যাবের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয় এবং সর্বশেষ চট্টগ্রামে র‍্যাব-৭ তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের নির্মূল ও তাঁদের লাশ চিরতরে অদৃশ্য করার লক্ষ্যেই এসব ঘটনা ঘটানো হতো।

গুমের শিকার ২৭ শতাংশ এখনো নিখোঁজ

কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ জীবিত ফিরে এসেছেন; বাকি ২৭ শতাংশ এখনো নিখোঁজ। ফিরে আসা ভুক্তভোগীদের অনেকে জানিয়েছেন, গুম, নির্যাতন করার এবং বন্দী করে রাখার পর তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাস দমন আইন, অস্ত্র আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।

গুমের পর ভারতে হস্তান্তরের ঘটনাও ঘটেছে

কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে জোর করে গুমের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে র‍্যাব, ডিবি এবং সিটিটিসি মূল ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের সংশ্লিষ্টতার কথাও উল্লেখ রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গুমের ঘটনায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে শাস্তির বিধান থাকলেও অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিদেশে পালিয়ে গিয়ে জবাবদিহি এড়িয়ে গেছেন। গুমের ঘটনা শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, এটি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ।

প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে ২০১৫ সালে ঢাকার উত্তরা থেকে আটক করে ভারতে হস্তান্তর করা হয়। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী এটা আপনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছেন। আপনি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) ছেলে হাম্মাম কাদের চৌধুরী তাঁর বন্দিশালায় হিন্দিভাষী লোকদের কথা শোনার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। সুখরঞ্জন বালি ও অন্যদের ক্ষেত্রেও গুমের পর ভারতে স্থানান্তরের তথ্য উঠে এসেছে।

গুম তদন্ত কমিশন বলেছে, র‍্যাব ও ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী আন-অফিশিয়াল বন্দিবিনিময় করত।

কমিশনের প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী শনিবার বলেছেন, আগামী মার্চে কমিশন আরও একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেবে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে কমপক্ষে আরও এক বছর সময় প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শোকজ নোটিশ নয়, তিন বিচারপতির কাছে মামলার তথ্য চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি: সুপ্রিম কোর্ট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ৫০
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

তিন বিচারপতিকে কোনো শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এটি আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়। তাই আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে সত্যতা যাচাই করতে গণমাধ্যমের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিপুলসংখ্যক জামিন দেওয়ায় হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতিকে শোকজ করে তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্পেশাল অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এবং ফোন করে তিনজন বিচারপতি, যথা বিচারপতি আবু তাহের সাইফুর রহমান, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি জাকির হোসেনকে ওই নোটিশ সম্পর্কে অবহিত করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাস্তবে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ উল্লিখিত তিনজন বিচারপতিকে কোনো শোকজ বা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেননি, বরং প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন, যা আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার একটি নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়।

তথ্য চাওয়ার বিষয়টি আদালতের বিশেষ একটি যোগাযোগব্যবস্থা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নানা সংবাদে ব্যবহৃত তথ্যে মূল বিষয়টি বিকৃত ও ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে তা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা হচ্ছে, প্রতিটি গণমাধ্যম আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সংবাদ প্রচার করবে, যাতে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন থাকে এবং জনগণ বিভ্রান্ত না হয়।

কয়েক দিন আগে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উচ্চ আদালতের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা ওঠার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যেমন ধরেন, আপনারা জানেন সাম্প্রতিককালে আপনারা কেউ এটা ইনভেস্টিগেট (অনুসন্ধান) করেননি। আপনাদের অনুরোধ করব, ইনভেস্টিগেট করেন যে, একটা উচ্চ আদালতের একটা বেঞ্চ এক দিনে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় প্রায় ৮০০ মামলায় জামিন দিয়েছেন। জামিন তিনি দিতেই পারেন, কিন্তু চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় ৮০০ মামলা কি শোনা সম্ভব?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশে বৃহৎ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে ইইউ: রাষ্ট্রদূত মিলার

বাসস, ঢাকা  
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি বৃহৎ প্রতিনিধিদল পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)। ২০০৮ সালের পর এটিই হবে ইইউর প্রথম পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন।

আজ মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এ তথ্য জানান।

রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য থাকতে পারেন, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভোটের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে ও অন্যরা ভোটের এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন।

মিলার জানান, ২০০৮ সালের পর এই প্রথম ইইউ বাংলাদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে।

রাষ্ট্রদূত আরও জানান, ভোটের সময় স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিয়োগেও সহায়তা করবে ইইউ।

প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে উভয় পক্ষ সাংবিধানিক সংস্কার, নির্বাচন প্রস্তুতি, বিচার বিভাগ ও শ্রম খাতের সংস্কার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক এবং দেশের সার্বিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন।

রাষ্ট্রদূত মিলার জুলাই জাতীয় সনদকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এটি গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে মসৃণ করতে সহায়ক হবে।

সম্প্রতি অনুমোদিত শ্রম আইন সংস্কার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জোরদারের পদক্ষেপগুলোকে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।

‘এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’—উল্লেখ করে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনকে ইইউর অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

মিলার আসন্ন নির্বাচনকে ‘দেশের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের সুযোগ’ বলে মন্তব্য করেন।

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ইইউ বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়াকে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বৈঠকে উভয় পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে।

এর মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির সম্ভাবনা এবং বিমান ও নৌপরিবহন খাতে নতুন সুযোগ অনুসন্ধানের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ ছাড়া মানব পাচার ও অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার বিষয়ে তাঁরা একমত হন।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া টার্মিনালের উন্নয়ন ও পরিচালনায় বৈশ্বিক শিপিং কোম্পানি এ পি মোলারমায়ার্সকের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে।

রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ডেনমার্কের এই প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে লালদিয়াকে এই অঞ্চলের অন্যতম আধুনিক টার্মিনালে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে।

বৈঠকে নির্বাচনী পরিবেশ, প্রার্থীদের যোগ্যতা ও মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়েও আলোচনা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখছে ঢাকা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাসস, ঢাকা  
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ৫৬
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে ভারসাম্যপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে।

আজ মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকেরা চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং চীনের সঙ্গেও ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। আমি মনে করি, এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ, আমরা একটি ভারসাম্য বজায় রেখেছি।’

উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি পারস্পরিক সম্মান ও গঠনমূলক সহযোগিতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। সরকার কোনো নির্দিষ্ট দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ততা এড়িয়ে চলার প্রয়োজন মনে করে না।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতের সরকারও এই ভারসাম্যপূর্ণ নীতি বজায় রাখবে।

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশ তার আকার ও শক্তির তুলনায় আন্তর্জাতিকভাবে যথেষ্ট মনোযোগ পাচ্ছে। যারা আমাদের চেয়ে বড় ও শক্তিশালী, তারা স্বাভাবিকভাবেই বেশি দৃশ্যমান। তবে আমাদের অবস্থান বিবেচনায় আমাদের উপস্থিতি ছোট নয়—আমরা সর্বত্র দৃশ্যমানতা বজায় রাখছি।’

তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি বাস্তবসম্মত, অর্থনৈতিক কূটনীতি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।

সম্প্রতি মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির শুনানিতে বাংলাদেশের জন্য মনোনীত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হলে তিনি ঢাকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন এবং এই অঞ্চলে ‘চীনের কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত ঝুঁকি’ তুলে ধরবেন।

ক্রিস্টেনসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি উজ্জ্বল ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথে সমর্থন করে।

তিনি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের টিমকে নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী, যাতে অন্তর্বর্তী সরকার ও ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়।

বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান প্রসঙ্গে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতির অনুপাতে বৈশ্বিক অঙ্গনে দেশের মর্যাদা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিক্ষার্থীদের অর্থ আত্মসাৎ: বিএসবির খায়রুল বাশারকে আদালতে মারধর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার বাহার। ছবি: সংগৃহীত
বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার বাহার। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা শতাধিক মামলায় গ্রেপ্তার বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার বাহারকে আদালতের বারান্দায় মারধর করা হয়েছে।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় আজ মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী পারভেজ আহমেদ।

অর্থ আত্মসাতের মামলায় গ্রেপ্তার খায়রুল বাশারের জামিন আবেদন শুনানির জন্য তাঁকে আজ আদালতে হাজির করা হয়। তাঁকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরির পাশাপাশি মূল সড়ক ব্যবহার না করে কৌশলে অন্য পথ দিয়ে এজলাসে তোলার চেষ্টা করে পুলিশ।

ওই পথ ধরে এজলাসের দরজায় পৌঁছানোর সময় হঠাৎ কয়েকজন ব্যক্তি খায়রুল বাশারের ওপর হামলা চালান। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করে খায়রুল বাশারকে এজলাসের ভেতরে নিয়ে যায়।

পরে ৯৯টি মামলায় জামিন শুনানি করেন তাঁর আইনজীবীরা। আদালত ১৪ মামলায় জামিন দেন। অন্য ৭৫ মামলায় জামিন নামঞ্জুর করেন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান।

বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে তিন শর বেশি মামলা রয়েছে।

গত ১৪ জুলাই খায়রুল বাশারকে আটক করা হয়। পর্যায়ক্রমে তাঁকে শতাধিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। কয়েক মামলায় তাঁকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়।

খায়রুল বাশারকে আজ আদালতে হাজির করা হবে জেনে বেশ কয়েকজন অভিযোগকারী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরাই সুযোগ বুঝে তাঁর ওপর হামলা করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ভাইরাল সেই তরুণী গ্রেপ্তার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্যের প্রচেষ্টার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ: সালাহউদ্দিন

বিসিএসে রিপিট ক্যাডারে নিয়োগের পথ বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত