Ajker Patrika

মেট্রোরেল প্রকল্প: ডিটিসিএর সঙ্গে দ্বন্দ্ব ডিএমটিসিএলের

  • ডিএমটিসিএলের নানা বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিল ডিটিসিএ।
  • ডিটিসিএ-কে এড়িয়ে সরাসরি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের অভিযোগ।
  • ডিটিসিএর দাবি, সব কার্যক্রম তাদের মাধ্যমে করতে হবে।
  • ডিএমটিসিএল বলছে, ডিটিসিএর নিয়ন্ত্রণ মানা হচ্ছে, নিয়ম ভঙ্গ হয়নি।
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১১: ১৪
মেট্রোরেল প্রকল্প: ডিটিসিএর সঙ্গে দ্বন্দ্ব ডিএমটিসিএলের

রাজধানীতে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। ডিটিসিএর অভিযোগ, আইন অনুযায়ী ডিটিসিএর অধীন কোম্পানি হয়েও ডিএমটিসিএল সরাসরি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভ্রান্তি ও জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার ১১ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো চিঠিতে এসব বিষয় মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন। এ চিঠি থেকেই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।

চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে নীলিমা আখতার আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘চিঠি দেখে মন্তব্য করতে হবে। এখনই বলতে পারছি না। চিঠি দেখে আপনাকে জানাব।’

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ডিটিসিএর ওই চিঠিতে বলা হয়, ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি সরকারের অনুমোদনে মাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ডিএমটিসিএল গঠিত হয়। কোম্পানিটি প্রাথমিক পর্যায় থেকেই ডিটিসিএর অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছে। এতে করে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হিসেবে ডিটিসিএ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। মেট্রোরেল আইন অনুযায়ী ডিএমটিসিএল ডিটিসিএর অধীন একটি কোম্পানি। তাই মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের সব যোগাযোগ ডিটিসিএর মাধ্যমে হওয়া উচিত। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এ ধরনের প্রকল্পভিত্তিক কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অধীনে থেকে পরিচালিত হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের কারণে মেট্রোরেলের যাত্রী ও তৃতীয় পক্ষের বিমা না করা, লাইসেন্স গ্রহণে বিলম্ব, সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অনিয়মসহ একাধিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এ জন্য ভবিষ্যতে সব ধরনের সিদ্ধান্ত, নির্দেশনা ও কার্যক্রম ডিটিসিএর মাধ্যমে সম্পন্ন করার জন্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। এ ছাড়া চিঠিতে ডিএমটিসিএলকে অফিশিয়াল ব্যানার, সাইনবোর্ড ও প্রকাশনায় ‘ডিটিসিএর অধীন কোম্পানি’ উল্লেখ করার নির্দেশনা দিতে মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।

চিঠির অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলম আজকের পত্রিকাকে জানান, ডিএমটিসিএলের লাইসেন্সিং-সংক্রান্ত টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন অনুযায়ী যেসব কাগজপত্র রয়েছে, সেগুলো অবশ্যই ডিটিসিএর মাধ্যমেই পাঠানো হয়। তবে যেসব বিষয় তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, সেগুলো তাঁরা সরাসরি মন্ত্রণালয়ে পাঠান। সবকিছুই ডিটিসিএকে জানাতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কর্তৃপক্ষ হিসেবে ডিটিসিএর যে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তা তাঁরা মানছেন। তাঁরা কোনো নিয়ম ভঙ্গ করছেন বলে মনে করেন না।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের মেট্রোরেল আইন এবং ২০১৬ সালের বিধিমালা অনুযায়ী, মেট্রোরেল নির্মাণ ও রুট পরিবর্তনের জন্য ডিটিসিএ থেকে অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে এমআরটি-৬-এর মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত রুট সম্প্রসারণের জন্য ডিএমটিসিএল ডিটিসিএর অনুমোদন নেয়নি।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেট্রোরেল রাজধানীর গণপরিবহনে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে। তবে ডিএমটিসিএল এবং ডিটিসিএর দ্বন্দ্ব দ্রুত নিরসন না হলে প্রকল্পের কার্যকারিতা, যাত্রীসেবা ও ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ পরিকল্পনা সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুরু থেকে ডিটিসিএ-কে ক্ষমতাহীনভাবে তৈরি করা হয়েছে। পজিশনাল বা কারিগরি ক্ষমতা না থাকার কারণে ডিটিসিএ কার্যত একটি পঙ্গু প্রতিষ্ঠান। মূলত কিছু লোকের সুবিধার জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এই প্রতিষ্ঠান গঠন করেছে। বিশ্বে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের যে কাজ, তা আমাদের দেশে হয় না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

কর্মী নেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, নেই বয়সসীমা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সারা দেশে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ১৩৩৩ জন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে মোট ১ হাজার ৩৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯৯০ জন বিভিন্ন মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। অন্যান্য অভিযোগে আরও ৩৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আজ শনিবার (৬ ডিসেম্বর) পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন এ তথ্য জানান।

অভিযানে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও বিপজ্জনক সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে—একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, সাতটি গুলি, দুটি চায়নিজ কুড়াল, দুটি বার্মিজ চাকু, একটি ক্ষুর, চারটি হাঁসুয়া, দুটি রামদা, দুটি চাপাতি, একটি চাকু, দুটি ককটেল, দুটি দেশীয় তৈরি ওয়ান শুটারগান, একটি বিদেশি রিভলবার এবং দুটি গুলির খোসা।

শাহাদাত হোসাইন বলেন, এ ধরনের গ্রেপ্তার অভিযান চলমান থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

কর্মী নেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, নেই বয়সসীমা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তফসিল ঘোষণার দিন এখনো নির্ধারণ হয়নি: ইসি সচিব

বাসস, ঢাকা  
ইসি সচিব আখতার আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
ইসি সচিব আখতার আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এখন ‘শতভাগ প্রস্তুত’ থাকলেও তফসিল ঘোষণার তারিখ এখনো নির্ধারণ হয়নি বলে জানিয়েছেন ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।

আজ শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই), ইউএনডিপি ও রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি এ তথ্য জানান।

ইসি সচিব বলেন, ‘আমি আজ সকাল থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মিটিংয়ে ছিলাম। বৈঠকে নির্বাচনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’ এই পর্যায়ে ইসি কতভাগ প্রস্তুত, এ প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘এখন আমরা শতভাগ প্রস্তুত।’

এ সময় তফসিল ঘোষণার বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত তফসিল ঘোষণার দিন নির্ধারণ হয়নি।’

এর আগে ২৯ নভেম্বর শেরেবাংলা নগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে মক ভোটিং পরিদর্শন শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন আশা প্রকাশ করেন যে, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

কর্মী নেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, নেই বয়সসীমা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই আন্দোলনে নিহত অজ্ঞাত ১১৪ জনের লাশ উত্তোলন শুরু কাল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুলাই আন্দোলনে নিহত অজ্ঞাত ১১৪ জনের লাশ উত্তোলন শুরু কাল

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ অজ্ঞাতনামা ১১৪ জনের পরিচয় শনাক্তে তাঁদের লাশ তোলা হবে। আগামীকাল রোববার রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে তাঁদের লাশ উত্তোলন শুরু হবে।

আজ শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান। তিনি জানান, লাশ উত্তোলনের জন্য অনেক দিন ধরেই প্রস্তুতি চলছিল। রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় আনুষ্ঠানিকভাবে লাশ উত্তোলন শুরু হবে। তখন বিশেষজ্ঞ টিম লাশ শনাক্তের বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন।

লাশ উত্তোলনের অংশ হিসেবে কাল সকালে রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধসংলগ্ন কবরস্থান এলাকা পরিদর্শন করবেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ড. লুইস ফন্দেব্রিদার, সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহসহ সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সিআইডি জানিয়েছে, লাশগুলো উত্তোলনের পর ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা নিয়ে আবার যথাযথ প্রক্রিয়ায় দাফন করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করবে বিদেশি বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক টিম। /

এর আগে, পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রায়েরবাজার গণকবরে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে দাফন করা অজ্ঞাতনামা লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে এসব লাশ উত্তোলন করে ডিএনএ প্রোফাইল সংরক্ষণ করে লাশগুলোর পরিচিতি ও মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছিল পুলিশ।

জুলাই আন্দোলনে নিহত ১১৪ জনকে রায়েরবাজার কবরস্থানের যে জায়গায় দাফন করা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সে জায়গাটি বিশেষভাবে মার্বেল পাথর, টাইলস দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।

গত ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রায়েরবাজার কবরস্থানে গণকবর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, এখানে ১১৪ জনকে দাফন করা হয়েছে। যাঁদের পরিচয় শনাক্তের জন্য ডিএনএ প্রোফাইল দরকার এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ময়নাতদন্ত ও অন্যান্য কাজের জন্য প্রয়োজনে লাশ তোলা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

কর্মী নেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, নেই বয়সসীমা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিচারকদের নিরাপত্তায় গা ছাড়া ভাব

এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা  
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ২২
সম্প্রতি খুলনা আদালত চত্বরের প্রধান ফটকের সামনে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি খুলনা আদালত চত্বরের প্রধান ফটকের সামনে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজের ছেলেকে বাসায় গিয়ে খুন এবং স্ত্রীকে আহত করার ঘটনা দেশের বিচারক মহলে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। বিচারকেরা কলমবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে নিরাপত্তাহীনতার প্রতিবাদ জানান। এর আগে ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে জঙ্গি হামলায় দুই বিচারক নিহত হন। এ ছাড়া নানা সময়ে আদালত প্রাঙ্গণেও বিচারকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সবশেষ খুলনার আদালত থেকে হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার পর দুই ব্যক্তিকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনাও বিচারকদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

গত এক দশকে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বহুবার চিঠি পাঠালেও বিচারকদের নিরাপত্তায় কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। হাইকোর্ট একাধিকবার রিটের পর রুল জারি করে বিচারকদের বাসা, এজলাস, আদালত প্রাঙ্গণ ও যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি।

সবশেষ গত ১৮ নভেম্বর দেশের সব বিচারক এবং তাঁদের এজলাস ও বাসভবনের নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা রয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে কমিটি গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আদালত, আদালতের বিচারক ও আদালত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন উচ্চ আদালত।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিচারকদের নিরাপত্তা সর্বাধিক অগ্রাধিকার বিবেচনায় প্রধান বিচারপতি সর্বদাই সচেষ্ট। এ লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাগিদ দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গত বছরের নভেম্বরে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সমর্থকদের হামলায় নিহত হন রাষ্ট্রপক্ষের একজন আইনজীবী। সেই সঙ্গে আহত হন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। ওই ঘটনার পর শঙ্কামুক্ত পরিবেশে বিচারকার্য পরিচালনা এবং আদালত চত্বরে আইনজীবী ও জনসাধারণের স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষায়িত নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের দাবি জানান বিচারকেরা।

গত বছরের ২৭ নভেম্বর জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতিতে ওই দাবি জানায়। এরপর এ-সংক্রান্ত রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালতে স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিচার বিভাগের অধীন আদালত রক্ষী বা কোর্ট সিকিউরিটি (সিএফ) নামে বিশেষায়িত নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করতে চলতি বছরের ৩০ জুন রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

২০১৬ সালের ১৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট থেকে চিঠি পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে। চিঠিতে বলা হয়, বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের সব অধস্তন আদালতের বিচারক, কর্মচারী ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে প্রধান বিচারপতি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ উদ্বেগের বিষয় অবহিত করা হয়েছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের সহায়তায় দেশের প্রত্যেক আদালত প্রাঙ্গণ, বিচারকদের বাসভবন, বিচারক, কর্মচারীসহ আদালত-সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। একইভাবে ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট থেকে চিঠি দেওয়া হয়।

অধস্তন আদালতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি চিঠি দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। যেখানে ১১ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ঢাকার জেলা আদালত ও খুলনায় বোমা হামলার জেরে ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর চিঠি দেন সুপ্রিম কোর্ট। আইজিপিকে দেওয়া চিঠিতে সারা দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকদের গাড়ি, বাসভবনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে বলা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ২৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট থেকে আবারও চিঠি দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, আইজিপিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। চিঠিতে দেশের সব আদালত প্রাঙ্গণ, এজলাস, বিচারকদের বাসভবন, গাড়ি ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়।

রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজের ছেলেকে বাসায় গিয়ে খুন ও স্ত্রী আহতের ঘটনায় গত ১৪ নভেম্বর প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয় জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। সেখানে বলা হয়, সরকারের কাছে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বারবার পত্র প্রেরণ করা সত্ত্বে ও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বিচার বিভাগের সদস্যরা রাষ্ট্রের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করলেও তাঁরা এবং তাঁদের পরিবার অরক্ষিত ও নিরাপত্তাহীন। জেলা পর্যায়ের সব বিচারকের জন্য পর্যাপ্ত সরকারি আবাসন ও পরিবহনব্যবস্থা নেই। চৌকি আদালতে কর্মরত বিচারকদের অবস্থা আরও শোচনীয়। ফলে বিচারকদের বাধ্য হয়ে অরক্ষিত বাসায় ভাড়া থাকতে হয়, রিকশা-ভ্যানে করে এমনকি হেঁটেও যাতায়াত করতে হয়।

জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সারা দেশের বিচারকেরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিয়ে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ১৮৭ জন অতিরিক্ত জেলা জজের গাড়ি নেই এবং ২২৩ জন অতিরিক্ত জেলা জজের গানম্যান নেই। হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দিয়ে বিচারকেরা হেঁটে বাসায় ফিরছেন—এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।’

মাজহারুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পত্র প্রেরণের পরও বিচারকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সারা দেশের বিচারকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার বিচারকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবে।’

এদিকে জেলা জজ ও অতিরিক্ত জেলা জজদের অবিলম্বে গাড়ি ও গানম্যান সরবরাহ করতে অনুরোধ জানিয়ে গত ১৮ নভেম্বর জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আইন উপদেষ্টাকে চিঠি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ মামলা বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিচারকদের রিকুইজিশনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের জন্যও গানম্যান সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয় আইন উপদেষ্টাকে।

বিলুপ্ত হওয়া বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের সুপারিশ ছিল অধস্তন আদালতের বিচারকদের আবাসনের ব্যবস্থা করা। যাতে করে ভাড়া বাড়িতে তাঁদের থাকতে না হয়। সুপ্রিম কোর্ট বারবার চিঠি দিলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। কারণ, রাষ্ট্রব্যবস্থায় সব সময় বিচার বিভাগকে প্রশাসনের একটা কোনায় ঠেলে রাখার প্রবণতা দেখা যায়। এটা তারই বহিঃপ্রকাশ। প্রশাসনের লোকজন যত সুযোগ-সুবিধা নিজেরা নিয়ে নেয়, যেহেতু বাজেটের একটা বড় অংশ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিচার বিভাগের বাজেট সব সময়ই একটু অবহেলিত। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করা উচিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

কর্মী নেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, নেই বয়সসীমা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত