নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকে চিকিৎসা করতে দেওয়া হচ্ছে, এই তো বেশি। যে আপনাকে হত্যা করতে চায়, তাঁকে আপনি কি ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসবেন। আমাকে মারতে অনেক চেষ্টা করেছে। এর পর খালেদার ওপর আমায় মায়া দেখাতে বলেন। আমার হাতে যেটুকু আছে, তার মাধ্যেমে তাঁকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। ওনারা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের শেল্টার দিয়েছেন। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছেন।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে তাঁকে বাইরে পাঠানো নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমার হাতে যা ছিল, তা দিয়ে তাঁকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। এখন এটা সম্পূর্ণ বিচার বিভাগের বিষয়।’
আজ বুধবার গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া এ সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, অর্থনীতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ, তরুণ সমাজের কর্মসংস্থান, রাজনীতিসহ নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। দেড় ঘণ্টার বেশি স্থায়ী এ সংবাদ সম্মেলনের শেষ প্রশ্ন ছিল এটি। প্রশ্নটির জবাবের মধ্য দিয়েই সংবাদ সম্মেলন শেষ হয়।
সংগঠনই নেই ইলেকশন করবে কীভাবে: প্রধানমন্ত্রী
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিএনপি ইলেকশন নিয়ে প্রশ্ন করে কীভাবে। জিয়া হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে এসেছে। এর পর তাঁর অন্য নির্বাচনগুলো কি নির্বাচন ছিল? ১৯৮১ সালে নির্বাচনে কি হয়েছিল, তা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলে? ইলেকশন কীভাবে করবে তারা। করতে হলে সাংগঠনিক শক্তি দরকার, তা তো তাদের নাই। তৃণমূলে এমনভাবে উন্নয়ন করেছে আওয়ামী লীগ তাতে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কীভাব তারা ক্ষমতায় যাবে। তারা গ্রেনেড হামলা, গুপ্ত হত্যা ইত্যাদির মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। তারা ক্ষমতায় এসেছে অস্ত্রের মাধ্যমে। বিদেশ থেকে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে তাঁদের নেতারা।
কথায় কথায় হতাশ হবেন না: প্রধানমন্ত্রী
সদ্য শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কথায় কথায় এত হতাশ হবেন না। এটা অনেকটা মানসিক সমস্যার মতো। আমরা একটুতে হতাশ হই, একটুতে উৎফুল্ল হই।’
সংবাদ সম্মেলনে বারবারই ফিরে এসেছে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও এবং সেই সূত্রে গণপরিবহনে যাত্রীপ্রতি ভাড়া বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি। বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজের হেড অব নিউজ প্রভাস আমিন এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, ‘ডিজেলের ভাড়া ২৩ শতাংশ বাড়লেও যাত্রীপ্রতি ভাড়া বেড়েছে ২৭ শতাংশ। আবার এই জ্বালানি তেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন মালিকেরা ধর্মঘট না ডেকে পরিবহন বন্ধ রেখে জনগণকে জিম্মি করেন। এভাবে বারবারই তারা নিজেদের দাবি আদায় করে নিচ্ছে। এবারও তেমন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছে কিনা।’
এই প্রশ্নের সঙ্গেই প্রভাস আমিন আরেকটি প্রশ্ন জুড়ে দেন। এতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এই পারফরম্যান্স কি হতাশাজনক বলে মনে করেন কি?
এই প্রশ্নের উত্তরেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা এত হতাশ হচ্ছেন কেন। বাংলাদেশ আজকে বিশ্বকাপে খেলছে, দু-একটি দলকে হারাচ্ছে, এটাই তো বড় কথা। তারা খেলছে, এটাই অনেক। আমি চাচ্ছি তাদের আরও ট্রেনিং করানো। একটুতে হতাশ হওয়া যাবে না আবার বেশি উৎফুল্ল হওয়াও যাবে না। আগামীতে ভালো করবে।’
প্রতিরক্ষা খাতে আমার সরকার অন্যদের চেয়ে বেশি কাজ করেছে: প্রধানমন্ত্রী
ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন স্তরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করতে চাই না, শান্তি চাই। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে আমাদের সেনাবাহিনী কাজ করে। কোনো দিক দিয়ে যেন তারা পিছিয়ে না থাকে সেটা নিশ্চিত করতেই আমি কাজ করার কথা বলেছি। সব জ্ঞান যেন তারা পায়। দেখুন, অনেক সামরিক শাসক ক্ষমতায় ছিল; কিন্তু তারা সামরিক বাহিনীর জন্য যা করেনি, আমি তার চেয়ে বেশি করেছি। আমরা শুধু জাহাজ, অস্ত্র এসব কিনবই না, আমরা যেন প্রশিক্ষণও পাই—এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার সরকার প্রতিরক্ষা খাতে অন্য সকল সরকারের চেয়ে বেশি কাজ করছে।
উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে যুবসমাজের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন আর শুধু চাকরি নয়, যুবসমাজ গড়ে উঠবে উদ্যোক্তা হিসেবে। তারা চাকরি না খুঁজে চাকরি দেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে গড়ে উঠবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ সে সুযোগ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে দেশের যুবসমাজের প্রতি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার যুবসমাজের সৃজনশীল বিকাশের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ তরুণ সংসদ সদস্য ও নেতৃত্ব একটা দিকনির্দেশনা তৈরি করেছেন। এরই মধ্যে দেশের ডিজিটাল রূপান্তর হয়েছে। এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে ছেলেমেয়েরা আউটসোর্সিং করে আয় করছে। তারা ফ্রিল্যান্সিং করছে। শুধু দেশে নয়, ঘরে বসেই তারা সারা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এতে নয়টি ভাষা শেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এগুলোর সুবিধা এরই মধ্যে তরুণ-যুবারা নিতে শুরু করেছেন। তাঁরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই যুবসমাজ চাকরি খুঁজবে না শুধু, তারা চাকরি দেবে। তারা উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠবে।
ইউপি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে, মারামারি ও উসকানিও তারা দিচ্ছে
ইউনিয়ন পরিষদে প্রতীকের মাধ্যমে নির্বাচন করায় সহিংসতা বেশি হচ্ছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনে সহিংসতা কবে হয়নি? এর আগেও হয়েছে। কিন্তু আমরা এটা চাই না। আমাদের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য না। শুধু চেয়ারম্যানদের মধ্যে না, মেম্বারদের মধ্যে মারামারি হচ্ছে। চেয়ারম্যান (নির্বাচনে) প্রতীক দিচ্ছি বলে সংঘর্ষ হচ্ছে, তা কিন্তু না। বিএনপি সংঘর্ষ করছে, অন্যরাও করছে। আমার দলের মধ্যে যেখানে হচ্ছে সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
জ্বালানি খাতে সরকার ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে
জ্বালানি খাতে সরকার ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্লাসগোতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৬ থেকে ফিরে আজ বুধবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
গত ৩ নভেম্বর ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। অর্থাৎ, প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন মালিকেরা ধর্মঘট ডাকে। প্রায় অচল হয়ে পড়ে দেশ। এ অবস্থায় সরকার আলোচনায় বসে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ভাড়া ও ব্যয় সমন্বয় করে নতুন হার নির্ধারণ করে দেয়। এ নিয়ে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী ভর্তুকির প্রসঙ্গটি টানেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালানি খাতে সরকার বছরে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। শুধু ডিজেলেই ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। কৃষকের কথা মাথায় রেখে ডিজেল, সার, বিদ্যুৎ ইত্যাদি কম খরচায় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী করোনায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, করোনার সময় ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়েছে। তাদের সহায়তায় সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যেখানে অর্ধেক সুদে ঋণ প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকার এত ভর্তুকি কীভাবে দেবে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশেও ডিজেলের দাম বেড়েছে। সে অনুপাতে সরকার এখনো বিপুল অঙ্কের ভর্তুকি দিচ্ছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করতে চায় ফ্রান্স: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। এতে জলবায়ু সম্মেলনে হওয়া অগ্রগতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, সম্মেলনের এক ফাঁকে গত ৯ নভেম্বর তিনি ফ্রান্স সফর করেন। সেখানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানান। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ভবন এলিজি প্যালেসে আমন্ত্রিত হন তিনি। সেখানে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ নানা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে নিয়মিত কূটনৈতিক সংলাপ শুরুর জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এ প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা, অর্থনীতিসহ অন্যান্য খাতে দুই দেশের কার্যক্রম বাড়ানোর ব্যাপারে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একযোগে কাজ করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন তিনি।
একই দিনে ফরাসি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ।’ স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন থেকে ফিরে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। সম্মেলন চলাকালে ছয়টি বহুপক্ষীয় ও পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন তিনি। এসব বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্য শেষে ১৩ জন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর উত্তর প্রশ্নের ক্রমানুযায়ী তুলে ধরা হলো-
আবেদ খান (জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক): ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর যাদের হত্যা করা হয়েছিল, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এখন বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এসব হত্যার ঘটনা উদ্ঘাটনে আপনি কমিশন গঠনের কথা বলেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বিটিভির চার কর্মকর্তাকেও হত্যা করা হয়েছিল। এসব বিষয়ে কমিশন গঠন কিংবা ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের পর সংঘটিত বিভিন্ন ক্যুতে সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসার ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান সরাসরি এগুলোতে জড়িত ছিলেন। তাঁর নির্দেশে প্রহসনের বিচারের জন্য সামরিক আদালত বসানো হয়েছিল। কতো মানুষ মারা গিয়েছিলেন তার প্রকৃত সংখ্যা বের করা যায়নি। ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ভোররাতে বিমানবাহিনীতে সংঘটিত বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল। তখন সামরিক আদালতে ফাঁসি দেওয়া হয় ১১জন অফিসারসহ এক হাজার ৪৫০ বিমান সেনাকে। বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুত হন আরও চার হাজার সেনা। নিখোঁজ হন অসংখ্য। সামরিক আদালতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা সম্প্রতি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি জানিয়েছেন। ওই সময় আমার ফুপাতো ভাই ফিরোজ কবির চৌধুরী, যিনি ক্যামেরাম্যান ছিলেন, তাঁকেও হত্যা করা হয়। তাঁদের হত্যা করে বিলের পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। জেলখানায় যাদের ফাঁসি হয়েছে তাঁদের হয়তো খোঁজ পাব। কিন্তু কতজনকে যে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়েছে, জানি না। তবে আমরা তাঁদের বিষয়ে খোঁজ নেব। স্বজন হারানো অসহায়দের অবস্থা আমি জানি। আমিও তো আপনজন হারিয়েছি। ওই সময় নিহত অনেকের পরিবারের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের শাসনামলের এত বছর পর সেই সামরিক আদালত নিয়ে সরব হয়েছেন নাগরিক সমাজ। বিষয়টি তো এত দিন কেউ তুলে ধরেনি। তবুও ধন্যবাদ, এতো দিন পর কথা হচ্ছে।
শাহজাহান সরদার (বাংলাদেশ জার্নাল): ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন ধর্মঘট হয়। সাধারণ মানুষকে কষ্টভোগ করতে হয়। পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, জিনিসপত্রের দামও বেড়ে গেছে। ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষকও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের চিন্তাভাবনা আছে কিনা?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিনিসপত্রের দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। উৎপাদন বাড়ানোর সব ব্যবস্থা নিয়েছি। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। আমাদের তেল কিনে আনতে হয়। ডিজেলে ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। বিদ্যুৎসহ সব মিলিয়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকি। সবাই টাকা উপার্জন করে, কিন্তু ট্যাক্স কতজন দেয়? আমাদের চাল, ডাল, বাড়ি-গাড়ি সবই আছে তারপরও ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার দিকে নজর এবং এটাই বাস্তবতা। সরকারের টাকা আসবে কোথা থেকে? এখন বিদ্যুৎ সবার ঘরে ঘরে। এখানেও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন খরচ তুলতে পারছি না।
জ ই মামুন (এটিএন বাংলা): ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় কমপক্ষে ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। একজন মন্ত্রী বলেছেন, এই নির্বাচনের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হয়েই থাকে। আরেকজন বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী দরকার। তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা মনে করেন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় সহিংসতা বেড়ে গেছে। ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অব্যাহত রাখবেন কিনা? বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে কি ব্যবস্থা নেবেন। মন্ত্রী-এমপিদের আয়-ব্যয়ের হিসেব জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে বলেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনী সহিংসতা অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে এটা ঠিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা আগেও হয়েছে। এখনো হোক সেটা চাই না। একটা হানাহানি, ভোট দিতে গিয়ে মানুষের প্রাণ যাবে এটা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। তৃণমূলে দেখা যায় একজনকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে অনেকের আকাঙ্ক্ষা থাকে। নির্বাচন তো সবাই করছে, আমরা যেমন আওয়ামী লীগের নামে করছি, বিএনপি নাম ছাড়া করছে, অন্যান্য দলও করছে। এই যে হানাহানি মারামারি, কোথায় কোথায়, কাদের মধ্যে হচ্ছে সেটা আপনারা দেখেন। আমাদের দলের মধ্যে যেগুলো হবে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। শুধু ব্যবস্থা না, আমরা যাদের মনোনয়ন দিয়েছি, তাদের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করেছে, যতই ভালো প্রার্থী হোক, যারাই দলের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে, আমরা কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা নেব। আমরা কিন্তু ছাড়ব না। কিন্তু এদের (আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী) বাইরে যারা নির্বাচনে হানাহানি করল, এখন তো তারা দলীয়ভাবে নির্বাচনে আসছে না, সেদিক দিয়ে তারা চালাকিটা ভালোই করল। নির্বাচনও করছে মারামারিও করছে। উসকেও দিচ্ছে, আবার বিজয়ীকে সমর্থন দিয়ে আরেকটা মারামারি বাঁধিয়ে দিচ্ছে। কাজেই সেটাও দেখতে হবে। কোনো প্রাণহানি হোক, এটা আমরা কখনো চাই না। এটা হওয়া উচিত না। এটা যেখানে যেখানে ঘটেছে সেখানে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, সেটা কিন্তু আমরা রক্ষা করে যাচ্ছি।
আয়-ব্যয়ের হিসেব প্রতিবার নির্বাচনের আগে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেটা প্রকাশও হচ্ছে। আপনারাই লিখছেন। আমরা বলেছি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হবে না, সেটা হচ্ছে না। কিন্তু ঘটনাচক্রে কিছু কিছু ঘটনা যখন হয়ে যায় তখন সঙ্গে সঙ্গে সেটার তদন্ত হয়। অন্যায়ভাবে যদি কেউ কোন ঘটনা ঘটায়, সে র্যাব হোক কিংবা পুলিশ হোক তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বিচারও হচ্ছে। এটা একেবার বন্ধ করে দেওয়া… পৃথিবীর কোনো দেশেই সম্ভব না হচ্ছে।
রাশেদ চৌধুরী (একুশে টিভি): যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে যুদ্ধাপরাধ যারা সংগঠন করেছিল তাঁদের জন্য একটা আইন করার কথা ছিল, সেটা আজও হয়নি। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে, এটা কিন্তু মনে রাখতে হবে। এখানে কিছু মানুষ হয়তো শান্তি কমিটিতে নাম লিখিয়েছিল। তারা পাকিস্তানি সেনা ও দোসরদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। যারা প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী ছিল বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বিচার বন্ধ করেছিল, ২২ হাজার বন্দীকে মুক্ত করে দিয়েছিল। ধর্মের নামে রাজনীতি ও যুদ্ধাপরাধীদের ভোটের অধিকার জিয়াউর রহমান দিয়েছিল।
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল (জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক): ইউনেসকো কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর নামে প্রবর্তিত উদ্ভাবনী পুরস্কার উগান্ডার পাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার চিন্তা আছে কিনা, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য তাঁর পরিবার কোনো আবেদন করছে কিনা এবং সরকার এ বিষয়ে কি ভাবছে তা জানতে চান তিনি। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নির্বাচন আইসিইউতে আর গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে বলে যে মন্তব্য করেছেন সে বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর মতামত জানতে চান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনেসকোর পুরস্কারপ্রাপ্তদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। এটা আমাদের দেশেও অনেকই করে থাকে। আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সিআরআইকে ধানমণ্ডিতে ভাড়া বাসায় পরিচালনা করতাম। খালেদা জিয়া অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে এটা বন্ধ করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা ট্রাস্ট করে এটা চালু করেছি। এটা গবেষণার কাজ করছে। ইয়াং বাংলার নামে অনেক যুব সমাজের কর্মসংস্থান করেছি। ছেলেমেয়েদের প্রেরণা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বলেছি, শুধু চাকরি চাকরি না করে নিজেরা চাকরি দেবে সেইভাবে নিজেদের তৈরি কর। যুব সমাজ একখানা ডিগ্রি নিয়ে চাকরির পিছে না ছুটে নিজেরা কিছু করুক, এটা আমরা চাই। আউট সোর্সিংয়ের টাকা যাতে সহজে নিতে পারে এই জন্য বাংলাদেশের আইনের পরিবর্তন করেছি। আমাদের যুব সমাজ যাতে উদ্যোক্তা হোক। তারা যাতে ইউনেসকোর পুরস্কার পাক।
নাইমুল ইসলাম খান (আমাদের নতুন সময়): ইউরোপের সঙ্গে অংশীদারত্ব নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে সামরিক বিষয়েও সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে এসেছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন কিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না, আমরা শান্তি চাই। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে যুদ্ধ নয়। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কাজ করে। আমার চেষ্টা ছিল যারা শান্তি কমিশনে যায় তাঁরা যেন প্রশিক্ষণ ও জ্ঞানে পিছিয়ে না থাকে। অনেক সামরিক শাসক ক্ষমতায় ছিল তারা যা করেননি আমি তাদের থেকে বেশি করেছি। স্বাধীন দেশে এটা প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রশিক্ষণের জন্য সরঞ্জাম কিনি। ইউরোপের সঙ্গেও আমাদের একটা যোগাযোগ আছে।
রফিকুল ইসলাম রতন (ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক): জলবায়ু সম্মেলনে আপনার প্রশংসা হয়েছে। জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন নিয়ে জানতে চান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ফ্রান্স শুধু আমাদের দেবে, তাঁদের সঙ্গে আমাদের সেটাই আলোচনা হয়েছে। প্যারিস ঘোষণায় ১০০ বিলিয়নের কথা বলা হয়েছিল। আমাদের দাবি, যে প্রতিশ্রুতি সেটা যেন ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো পায় সেদিকে তাঁদের দৃষ্টি দিতে হবে। হয়তো যেভাবে আমরা চেয়েছিলাম সেটা না হলেও যথেষ্ট অগ্রগতি আছে, অনেক প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। হয়তো ফান্ড আস্তে আস্তে আসতে থাকবে। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে টিকা পাব। টিকায় কোনো অসুবিধা হবে না। প্রতিদিনই আমরা টিকা দিচ্ছি। বস্তিতে শুরু করে দিয়েছি, শিক্ষার্থীদের দিচ্ছি, কেউ বাদ যাবে না। ২৫ কোটি টিকা কেনার মতো ব্যবস্থা করে রেখেছি। ৯ কোটির কাছাকাছি টিকা দেওয়া হয়েছে। সাড়ে ৪ কোটি ডাবল ডোজ। সব টিকা বিনা মূল্যে দিচ্ছি।
প্রভাষ আমিন (এটিএন বাংলা): ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন ধর্মঘট ডেকে মানুষকে জিম্মি করা হয়। টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশর পারফরমেন্স হতাশা করেছে।
প্রশ্ন শেষ না হতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত হতাশ হন কেন? আমি এই হতাশা দেখতে চাই না। কয়েকটা খেলা তো তারা চমৎকার খেলেছে। ক্রিকেট খেলেছেন কখনো, মাঠে গেছেন কখনো, ব্যাট-বল ধরছেন? ধরেননি, সে জন্য জানেন না। কখন যে ব্যাটে বলে ঠিকমতো লাগবে আর ছক্কা হবে সেটি সব সময় সব অর্থে মেলে না। এটি বাস্তব কথা যেটা আমরা আশা করেছিলাম হয়নি, ছেলেদের আমি কিন্তু হতাশ করি না, তাদের আমি বলি আরও ভালো খেল, আরও মনোযোগী হও, আরও প্র্যাকটিস করো। করোনার কারণে প্র্যাকটিস করতে পারেনি, তারপরেও বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলেছে, বেশ কয়েকটি দেশকে হারাতে পেরেছে এটাই তো সবচেয়ে বড় কথা। কথায় কথায় হতাশ হওয়া ঠিক না, এটি মানসিক রোগের মতো হয়ে গেছে, একটুতেই হতাশ আবার একটুতেই উৎফুল্ল। বেশি উৎফুল্ল হওয়া ভালো না আবার বেশি হতাশ হওয়াও ভালো না। ভবিষ্যতে নিশ্চয় ভালো করবে।
নাসিমা আক্তার মন্টি (আমাদের নতুন সময়): পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় শরিয়া আইনে হাত না দিয়ে উত্তরাধিকার আইনে কীভাবে তা দেওয়া যায় সেটি দেখতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেবামূলক কাজে সহযোগিতা দেওয়া হয়, সেটা অনেকে জানেন না।
মানুষ সম্পত্তির জন্য অন্ধ হয়ে যায়। বাবার সম্পত্তিতে মেয়ের অধিকার যেন নিশ্চিত করা হয়। সম্পত্তি আইনে হিজড়াদের অধিকার যাতে থাকে সেটা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিয়েছি। এমনিতে ধর্মকে কতটুকু মানুক না না মানুক সেটা যাই হোক সম্পত্তির দখল নেওয়ার সময় শরিয়া আইনটা খুব ভালোভাবে বুঝে নেয় এটা হলো বাস্তব কথা। পুরুষেরা কি বোনকে সম্পত্তি দেন? কয়টা ভাই আছে বোনদের অধিকার সংরক্ষণ করে? জাতীয়ভাবে একটা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
শাহারিয়ার আলম (বিজনেস স্টান্ডার্ড): কার্বন নিঃসরণ নিয়ে প্রশ্ন করেন।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কার্বন নিঃসরণ করি না। যত প্রকল্প হচ্ছে সেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুবিধা রেখেছি। কার্বন নিঃসরণ যাতে না হয়, দূষণ যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েই কাজ করছি। সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন, সেটা মাথায় রেখেই আমাদের সব পরিকল্পনা হচ্ছে।
তাসনিয়া রোমি আহমেদ (দ্য আওয়ার টাইমস): ধর্ষণ মামলায় রায়ে একজন নারী বিচারক যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগে তাঁদের মাইন্ডসেট নিয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন কিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী বিচারক নিয়োগ হয়। বিচারক নিয়োগের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির হাতে। তাঁদের নিয়োগে কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে মানসিকতার ওপর। যিনি অবজারভেশন দিয়েছেন এটি তার মানসিকতা, এটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার, ব্যক্তিগত মতামত। এটি সঙ্গে সঙ্গে অ্যাড্রেস করা হয়েছে, ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মানস ঘোষ (এশিয়ান টিভি): বিদেশে বসে বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে আপনি বলেছেন। আপনি আসলে কোন ধরনের ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা কি কিছুই টের পাননি? বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে, বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার সময় বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। জাতীয় পার্টি, বিএনপি-জমায়াত মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতা অবৈধভাবে দখল করে ক্ষমতায় বসে। আগে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কেন দেশকে উন্নত করতে পারেনি? কারণ তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন কখনো চাননি। বাংলাদেশকে আবার তারা ব্যর্থ রাষ্ট্র করতে চেয়েছিল। ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের যে উন্নয়ন এটা তাদের কাছে কখনো ভালো লাগবে না। যে কারণে তাদের ষড়যন্ত্রটা সব সময় হচ্ছে। আপনারা যদি চোখে না দেখেন আমার কিছু বলার নেই।
এরপর বিভিন্ন সরকারের সময় হামলা, নির্যাতন, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, সংখ্যালঘুর ওপর হামলা, বিবরণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান কি ইলেকশন করেছিল? সাতাত্তর সালে তার হ্যাঁ-না ভোট, ৭৮ সালে তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সংসদ নির্বাচন, সেটি কি কোনো নির্বাচন ছিল? ৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কত হত্যা হয়েছিল, কত মানুষের ঘরবাড়ি পুড়িয়েছিল? এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলবে? ২০১৪ সালে ইলেকশন করবে? ইলেকশন করবে কীভাবে? ইলেকশন করতে হলে যে সাংগঠনিক শক্তি দরকার হয় বা জনসমর্থন দরকার হয় সেটা যখন নাই তখন তারা নিজেদের দ্বৈন্যটাই প্রকাশ করে। সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকেই ভোট দেয়, আমাদের চায়। গ্রেনেড হামলা করল পারল না। ৭৪ কেজি বোমা ফিট করার পরেও বেঁচে গেলাম। সরাসরি গুলি করল, তাতেও বেঁচে গেলাম। গাড়ি আটকেও মারতে পারল না। এতবার চেষ্টা করেও সফল হতেও পারল না। তাদের সেই চেষ্টা তো অব্যাহত থাকবে। এখানো সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটাই তাদের চরিত্র। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। পয়সা দিয়ে ভাড়াটে দিয়েও করছে। চুরি করে টাকা নিয়ে গেছে। বোমা হামলা, জঙ্গি হামলা কারা নিয়ন্ত্রণ করে? তদন্তেই আসছে। আপনারা কি চান? এ দেশে নির্বাচন না হোক। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ থাক?
মাহমুদ আল ফয়সাল (মাই টিভি): আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা অংশ নেবে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের কোনো উদ্যোগ নেবেন কিনা? মঞ্জুরুল হাসান বুলবুল প্রশ্ন করেছিলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আপনি বিশেষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন কিনা?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে চান কীভাবে বলেনতো? খালেদা জিয়াকে যে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি এটাই কি বেশি না? আপনাকে যদি কেউ হত্যা করার চেষ্টা করত আপনি তাঁকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন? বলেন আমাকে? বা আপনার পরিবারের কাউকে যদি হত্যা করত। একজন হত্যাকারীকে যদি কেউ বিচার না করে পুরস্কৃত করে দূতাবাসে চাকরি দিত, তাদের জন্য আপনি কি করতেন? কর্নেল রশিদকে খালেদা জিয়া সংসদে বসিয়েছেন। খালেদ জামানকে রাষ্ট্রদূত করে পাঠালেন। বাশার মারা যাওয়ার পরেও ক্ষমতায় এসে তাঁকে পদোন্নতি দিয়ে সব ভাতা দিয়ে দিল। গ্রেনেড হামলার পর বলেছিলেন, আমি নিজেই ভেনিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলাম। কোটালিপাড়ায় বোমা পুতে বলেছিল, প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবেন না। রাখে আল্লাহ মারে কে, আর মারে আল্লাহ রাখে কে? তারপরেও তার ওপর দয়া দেখাতে হবে? কীভাবে প্রশ্নটা করলেন? যারা আমার বাপ-মা, ভাই-বোন, ছোট রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করেছে। তারপরেও আমরা অমানুষ না। অমানুষ না দেখেই তাকে আমরা অন্তত তার বাসায় থাকার ব্যবস্থাটুকু, এক্সিকিউটিভ অথোরিটি আমার হাতে যতটুকু আছে সেটি দিয়ে তাঁকে বাসায় থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাকিটুকু আইনগত ব্যাপার। তারা তো দুর্নীতি করে করে দেশকে একেবারে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। গ্রেনেড হামলা করে এতো আহত হলো, ২২ জন মানুষ মরে গেছে, পার্লামেন্টে সেটার ওপর আলোচনা করতে দেননি। এতো বড় অমানবিক যে তাকেও আমরা মানবিকতা দেখিয়েছি। আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার সেটুকু আমি দেখিয়েছি, আর কত চান? আর কত চান আমাকে বলেন? এখানে আমার কিছু করার নেই, আমার যতোটুকু করার আমি সেটুকু করেছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকে চিকিৎসা করতে দেওয়া হচ্ছে, এই তো বেশি। যে আপনাকে হত্যা করতে চায়, তাঁকে আপনি কি ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসবেন। আমাকে মারতে অনেক চেষ্টা করেছে। এর পর খালেদার ওপর আমায় মায়া দেখাতে বলেন। আমার হাতে যেটুকু আছে, তার মাধ্যেমে তাঁকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। ওনারা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের শেল্টার দিয়েছেন। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছেন।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে তাঁকে বাইরে পাঠানো নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমার হাতে যা ছিল, তা দিয়ে তাঁকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। এখন এটা সম্পূর্ণ বিচার বিভাগের বিষয়।’
আজ বুধবার গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া এ সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, অর্থনীতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ, তরুণ সমাজের কর্মসংস্থান, রাজনীতিসহ নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। দেড় ঘণ্টার বেশি স্থায়ী এ সংবাদ সম্মেলনের শেষ প্রশ্ন ছিল এটি। প্রশ্নটির জবাবের মধ্য দিয়েই সংবাদ সম্মেলন শেষ হয়।
সংগঠনই নেই ইলেকশন করবে কীভাবে: প্রধানমন্ত্রী
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিএনপি ইলেকশন নিয়ে প্রশ্ন করে কীভাবে। জিয়া হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে এসেছে। এর পর তাঁর অন্য নির্বাচনগুলো কি নির্বাচন ছিল? ১৯৮১ সালে নির্বাচনে কি হয়েছিল, তা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলে? ইলেকশন কীভাবে করবে তারা। করতে হলে সাংগঠনিক শক্তি দরকার, তা তো তাদের নাই। তৃণমূলে এমনভাবে উন্নয়ন করেছে আওয়ামী লীগ তাতে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কীভাব তারা ক্ষমতায় যাবে। তারা গ্রেনেড হামলা, গুপ্ত হত্যা ইত্যাদির মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। তারা ক্ষমতায় এসেছে অস্ত্রের মাধ্যমে। বিদেশ থেকে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে তাঁদের নেতারা।
কথায় কথায় হতাশ হবেন না: প্রধানমন্ত্রী
সদ্য শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কথায় কথায় এত হতাশ হবেন না। এটা অনেকটা মানসিক সমস্যার মতো। আমরা একটুতে হতাশ হই, একটুতে উৎফুল্ল হই।’
সংবাদ সম্মেলনে বারবারই ফিরে এসেছে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও এবং সেই সূত্রে গণপরিবহনে যাত্রীপ্রতি ভাড়া বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি। বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজের হেড অব নিউজ প্রভাস আমিন এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, ‘ডিজেলের ভাড়া ২৩ শতাংশ বাড়লেও যাত্রীপ্রতি ভাড়া বেড়েছে ২৭ শতাংশ। আবার এই জ্বালানি তেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন মালিকেরা ধর্মঘট না ডেকে পরিবহন বন্ধ রেখে জনগণকে জিম্মি করেন। এভাবে বারবারই তারা নিজেদের দাবি আদায় করে নিচ্ছে। এবারও তেমন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছে কিনা।’
এই প্রশ্নের সঙ্গেই প্রভাস আমিন আরেকটি প্রশ্ন জুড়ে দেন। এতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এই পারফরম্যান্স কি হতাশাজনক বলে মনে করেন কি?
এই প্রশ্নের উত্তরেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা এত হতাশ হচ্ছেন কেন। বাংলাদেশ আজকে বিশ্বকাপে খেলছে, দু-একটি দলকে হারাচ্ছে, এটাই তো বড় কথা। তারা খেলছে, এটাই অনেক। আমি চাচ্ছি তাদের আরও ট্রেনিং করানো। একটুতে হতাশ হওয়া যাবে না আবার বেশি উৎফুল্ল হওয়াও যাবে না। আগামীতে ভালো করবে।’
প্রতিরক্ষা খাতে আমার সরকার অন্যদের চেয়ে বেশি কাজ করেছে: প্রধানমন্ত্রী
ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন স্তরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করতে চাই না, শান্তি চাই। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে আমাদের সেনাবাহিনী কাজ করে। কোনো দিক দিয়ে যেন তারা পিছিয়ে না থাকে সেটা নিশ্চিত করতেই আমি কাজ করার কথা বলেছি। সব জ্ঞান যেন তারা পায়। দেখুন, অনেক সামরিক শাসক ক্ষমতায় ছিল; কিন্তু তারা সামরিক বাহিনীর জন্য যা করেনি, আমি তার চেয়ে বেশি করেছি। আমরা শুধু জাহাজ, অস্ত্র এসব কিনবই না, আমরা যেন প্রশিক্ষণও পাই—এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার সরকার প্রতিরক্ষা খাতে অন্য সকল সরকারের চেয়ে বেশি কাজ করছে।
উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে যুবসমাজের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন আর শুধু চাকরি নয়, যুবসমাজ গড়ে উঠবে উদ্যোক্তা হিসেবে। তারা চাকরি না খুঁজে চাকরি দেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে গড়ে উঠবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ সে সুযোগ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে দেশের যুবসমাজের প্রতি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার যুবসমাজের সৃজনশীল বিকাশের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ তরুণ সংসদ সদস্য ও নেতৃত্ব একটা দিকনির্দেশনা তৈরি করেছেন। এরই মধ্যে দেশের ডিজিটাল রূপান্তর হয়েছে। এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে ছেলেমেয়েরা আউটসোর্সিং করে আয় করছে। তারা ফ্রিল্যান্সিং করছে। শুধু দেশে নয়, ঘরে বসেই তারা সারা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এতে নয়টি ভাষা শেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এগুলোর সুবিধা এরই মধ্যে তরুণ-যুবারা নিতে শুরু করেছেন। তাঁরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই যুবসমাজ চাকরি খুঁজবে না শুধু, তারা চাকরি দেবে। তারা উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠবে।
ইউপি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে, মারামারি ও উসকানিও তারা দিচ্ছে
ইউনিয়ন পরিষদে প্রতীকের মাধ্যমে নির্বাচন করায় সহিংসতা বেশি হচ্ছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনে সহিংসতা কবে হয়নি? এর আগেও হয়েছে। কিন্তু আমরা এটা চাই না। আমাদের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য না। শুধু চেয়ারম্যানদের মধ্যে না, মেম্বারদের মধ্যে মারামারি হচ্ছে। চেয়ারম্যান (নির্বাচনে) প্রতীক দিচ্ছি বলে সংঘর্ষ হচ্ছে, তা কিন্তু না। বিএনপি সংঘর্ষ করছে, অন্যরাও করছে। আমার দলের মধ্যে যেখানে হচ্ছে সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
জ্বালানি খাতে সরকার ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে
জ্বালানি খাতে সরকার ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্লাসগোতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৬ থেকে ফিরে আজ বুধবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
গত ৩ নভেম্বর ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। অর্থাৎ, প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন মালিকেরা ধর্মঘট ডাকে। প্রায় অচল হয়ে পড়ে দেশ। এ অবস্থায় সরকার আলোচনায় বসে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ভাড়া ও ব্যয় সমন্বয় করে নতুন হার নির্ধারণ করে দেয়। এ নিয়ে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী ভর্তুকির প্রসঙ্গটি টানেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালানি খাতে সরকার বছরে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। শুধু ডিজেলেই ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। কৃষকের কথা মাথায় রেখে ডিজেল, সার, বিদ্যুৎ ইত্যাদি কম খরচায় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী করোনায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, করোনার সময় ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়েছে। তাদের সহায়তায় সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যেখানে অর্ধেক সুদে ঋণ প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকার এত ভর্তুকি কীভাবে দেবে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশেও ডিজেলের দাম বেড়েছে। সে অনুপাতে সরকার এখনো বিপুল অঙ্কের ভর্তুকি দিচ্ছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করতে চায় ফ্রান্স: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। এতে জলবায়ু সম্মেলনে হওয়া অগ্রগতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, সম্মেলনের এক ফাঁকে গত ৯ নভেম্বর তিনি ফ্রান্স সফর করেন। সেখানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানান। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ভবন এলিজি প্যালেসে আমন্ত্রিত হন তিনি। সেখানে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ নানা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে নিয়মিত কূটনৈতিক সংলাপ শুরুর জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এ প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা, অর্থনীতিসহ অন্যান্য খাতে দুই দেশের কার্যক্রম বাড়ানোর ব্যাপারে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একযোগে কাজ করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন তিনি।
একই দিনে ফরাসি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ।’ স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন থেকে ফিরে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। সম্মেলন চলাকালে ছয়টি বহুপক্ষীয় ও পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন তিনি। এসব বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্য শেষে ১৩ জন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর উত্তর প্রশ্নের ক্রমানুযায়ী তুলে ধরা হলো-
আবেদ খান (জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক): ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর যাদের হত্যা করা হয়েছিল, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এখন বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এসব হত্যার ঘটনা উদ্ঘাটনে আপনি কমিশন গঠনের কথা বলেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বিটিভির চার কর্মকর্তাকেও হত্যা করা হয়েছিল। এসব বিষয়ে কমিশন গঠন কিংবা ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের পর সংঘটিত বিভিন্ন ক্যুতে সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসার ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান সরাসরি এগুলোতে জড়িত ছিলেন। তাঁর নির্দেশে প্রহসনের বিচারের জন্য সামরিক আদালত বসানো হয়েছিল। কতো মানুষ মারা গিয়েছিলেন তার প্রকৃত সংখ্যা বের করা যায়নি। ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ভোররাতে বিমানবাহিনীতে সংঘটিত বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল। তখন সামরিক আদালতে ফাঁসি দেওয়া হয় ১১জন অফিসারসহ এক হাজার ৪৫০ বিমান সেনাকে। বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুত হন আরও চার হাজার সেনা। নিখোঁজ হন অসংখ্য। সামরিক আদালতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা সম্প্রতি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি জানিয়েছেন। ওই সময় আমার ফুপাতো ভাই ফিরোজ কবির চৌধুরী, যিনি ক্যামেরাম্যান ছিলেন, তাঁকেও হত্যা করা হয়। তাঁদের হত্যা করে বিলের পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। জেলখানায় যাদের ফাঁসি হয়েছে তাঁদের হয়তো খোঁজ পাব। কিন্তু কতজনকে যে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়েছে, জানি না। তবে আমরা তাঁদের বিষয়ে খোঁজ নেব। স্বজন হারানো অসহায়দের অবস্থা আমি জানি। আমিও তো আপনজন হারিয়েছি। ওই সময় নিহত অনেকের পরিবারের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের শাসনামলের এত বছর পর সেই সামরিক আদালত নিয়ে সরব হয়েছেন নাগরিক সমাজ। বিষয়টি তো এত দিন কেউ তুলে ধরেনি। তবুও ধন্যবাদ, এতো দিন পর কথা হচ্ছে।
শাহজাহান সরদার (বাংলাদেশ জার্নাল): ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন ধর্মঘট হয়। সাধারণ মানুষকে কষ্টভোগ করতে হয়। পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, জিনিসপত্রের দামও বেড়ে গেছে। ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষকও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের চিন্তাভাবনা আছে কিনা?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিনিসপত্রের দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। উৎপাদন বাড়ানোর সব ব্যবস্থা নিয়েছি। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। আমাদের তেল কিনে আনতে হয়। ডিজেলে ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। বিদ্যুৎসহ সব মিলিয়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকি। সবাই টাকা উপার্জন করে, কিন্তু ট্যাক্স কতজন দেয়? আমাদের চাল, ডাল, বাড়ি-গাড়ি সবই আছে তারপরও ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার দিকে নজর এবং এটাই বাস্তবতা। সরকারের টাকা আসবে কোথা থেকে? এখন বিদ্যুৎ সবার ঘরে ঘরে। এখানেও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন খরচ তুলতে পারছি না।
জ ই মামুন (এটিএন বাংলা): ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় কমপক্ষে ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। একজন মন্ত্রী বলেছেন, এই নির্বাচনের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হয়েই থাকে। আরেকজন বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী দরকার। তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা মনে করেন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় সহিংসতা বেড়ে গেছে। ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অব্যাহত রাখবেন কিনা? বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে কি ব্যবস্থা নেবেন। মন্ত্রী-এমপিদের আয়-ব্যয়ের হিসেব জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে বলেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনী সহিংসতা অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে এটা ঠিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা আগেও হয়েছে। এখনো হোক সেটা চাই না। একটা হানাহানি, ভোট দিতে গিয়ে মানুষের প্রাণ যাবে এটা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। তৃণমূলে দেখা যায় একজনকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে অনেকের আকাঙ্ক্ষা থাকে। নির্বাচন তো সবাই করছে, আমরা যেমন আওয়ামী লীগের নামে করছি, বিএনপি নাম ছাড়া করছে, অন্যান্য দলও করছে। এই যে হানাহানি মারামারি, কোথায় কোথায়, কাদের মধ্যে হচ্ছে সেটা আপনারা দেখেন। আমাদের দলের মধ্যে যেগুলো হবে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। শুধু ব্যবস্থা না, আমরা যাদের মনোনয়ন দিয়েছি, তাদের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করেছে, যতই ভালো প্রার্থী হোক, যারাই দলের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে, আমরা কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা নেব। আমরা কিন্তু ছাড়ব না। কিন্তু এদের (আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী) বাইরে যারা নির্বাচনে হানাহানি করল, এখন তো তারা দলীয়ভাবে নির্বাচনে আসছে না, সেদিক দিয়ে তারা চালাকিটা ভালোই করল। নির্বাচনও করছে মারামারিও করছে। উসকেও দিচ্ছে, আবার বিজয়ীকে সমর্থন দিয়ে আরেকটা মারামারি বাঁধিয়ে দিচ্ছে। কাজেই সেটাও দেখতে হবে। কোনো প্রাণহানি হোক, এটা আমরা কখনো চাই না। এটা হওয়া উচিত না। এটা যেখানে যেখানে ঘটেছে সেখানে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, সেটা কিন্তু আমরা রক্ষা করে যাচ্ছি।
আয়-ব্যয়ের হিসেব প্রতিবার নির্বাচনের আগে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেটা প্রকাশও হচ্ছে। আপনারাই লিখছেন। আমরা বলেছি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হবে না, সেটা হচ্ছে না। কিন্তু ঘটনাচক্রে কিছু কিছু ঘটনা যখন হয়ে যায় তখন সঙ্গে সঙ্গে সেটার তদন্ত হয়। অন্যায়ভাবে যদি কেউ কোন ঘটনা ঘটায়, সে র্যাব হোক কিংবা পুলিশ হোক তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বিচারও হচ্ছে। এটা একেবার বন্ধ করে দেওয়া… পৃথিবীর কোনো দেশেই সম্ভব না হচ্ছে।
রাশেদ চৌধুরী (একুশে টিভি): যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে যুদ্ধাপরাধ যারা সংগঠন করেছিল তাঁদের জন্য একটা আইন করার কথা ছিল, সেটা আজও হয়নি। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে, এটা কিন্তু মনে রাখতে হবে। এখানে কিছু মানুষ হয়তো শান্তি কমিটিতে নাম লিখিয়েছিল। তারা পাকিস্তানি সেনা ও দোসরদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। যারা প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী ছিল বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বিচার বন্ধ করেছিল, ২২ হাজার বন্দীকে মুক্ত করে দিয়েছিল। ধর্মের নামে রাজনীতি ও যুদ্ধাপরাধীদের ভোটের অধিকার জিয়াউর রহমান দিয়েছিল।
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল (জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক): ইউনেসকো কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর নামে প্রবর্তিত উদ্ভাবনী পুরস্কার উগান্ডার পাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার চিন্তা আছে কিনা, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য তাঁর পরিবার কোনো আবেদন করছে কিনা এবং সরকার এ বিষয়ে কি ভাবছে তা জানতে চান তিনি। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নির্বাচন আইসিইউতে আর গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে বলে যে মন্তব্য করেছেন সে বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর মতামত জানতে চান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনেসকোর পুরস্কারপ্রাপ্তদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। এটা আমাদের দেশেও অনেকই করে থাকে। আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সিআরআইকে ধানমণ্ডিতে ভাড়া বাসায় পরিচালনা করতাম। খালেদা জিয়া অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে এটা বন্ধ করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা ট্রাস্ট করে এটা চালু করেছি। এটা গবেষণার কাজ করছে। ইয়াং বাংলার নামে অনেক যুব সমাজের কর্মসংস্থান করেছি। ছেলেমেয়েদের প্রেরণা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বলেছি, শুধু চাকরি চাকরি না করে নিজেরা চাকরি দেবে সেইভাবে নিজেদের তৈরি কর। যুব সমাজ একখানা ডিগ্রি নিয়ে চাকরির পিছে না ছুটে নিজেরা কিছু করুক, এটা আমরা চাই। আউট সোর্সিংয়ের টাকা যাতে সহজে নিতে পারে এই জন্য বাংলাদেশের আইনের পরিবর্তন করেছি। আমাদের যুব সমাজ যাতে উদ্যোক্তা হোক। তারা যাতে ইউনেসকোর পুরস্কার পাক।
নাইমুল ইসলাম খান (আমাদের নতুন সময়): ইউরোপের সঙ্গে অংশীদারত্ব নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে সামরিক বিষয়েও সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে এসেছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন কিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না, আমরা শান্তি চাই। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে যুদ্ধ নয়। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কাজ করে। আমার চেষ্টা ছিল যারা শান্তি কমিশনে যায় তাঁরা যেন প্রশিক্ষণ ও জ্ঞানে পিছিয়ে না থাকে। অনেক সামরিক শাসক ক্ষমতায় ছিল তারা যা করেননি আমি তাদের থেকে বেশি করেছি। স্বাধীন দেশে এটা প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রশিক্ষণের জন্য সরঞ্জাম কিনি। ইউরোপের সঙ্গেও আমাদের একটা যোগাযোগ আছে।
রফিকুল ইসলাম রতন (ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক): জলবায়ু সম্মেলনে আপনার প্রশংসা হয়েছে। জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন নিয়ে জানতে চান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ফ্রান্স শুধু আমাদের দেবে, তাঁদের সঙ্গে আমাদের সেটাই আলোচনা হয়েছে। প্যারিস ঘোষণায় ১০০ বিলিয়নের কথা বলা হয়েছিল। আমাদের দাবি, যে প্রতিশ্রুতি সেটা যেন ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো পায় সেদিকে তাঁদের দৃষ্টি দিতে হবে। হয়তো যেভাবে আমরা চেয়েছিলাম সেটা না হলেও যথেষ্ট অগ্রগতি আছে, অনেক প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। হয়তো ফান্ড আস্তে আস্তে আসতে থাকবে। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে টিকা পাব। টিকায় কোনো অসুবিধা হবে না। প্রতিদিনই আমরা টিকা দিচ্ছি। বস্তিতে শুরু করে দিয়েছি, শিক্ষার্থীদের দিচ্ছি, কেউ বাদ যাবে না। ২৫ কোটি টিকা কেনার মতো ব্যবস্থা করে রেখেছি। ৯ কোটির কাছাকাছি টিকা দেওয়া হয়েছে। সাড়ে ৪ কোটি ডাবল ডোজ। সব টিকা বিনা মূল্যে দিচ্ছি।
প্রভাষ আমিন (এটিএন বাংলা): ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন ধর্মঘট ডেকে মানুষকে জিম্মি করা হয়। টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশর পারফরমেন্স হতাশা করেছে।
প্রশ্ন শেষ না হতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত হতাশ হন কেন? আমি এই হতাশা দেখতে চাই না। কয়েকটা খেলা তো তারা চমৎকার খেলেছে। ক্রিকেট খেলেছেন কখনো, মাঠে গেছেন কখনো, ব্যাট-বল ধরছেন? ধরেননি, সে জন্য জানেন না। কখন যে ব্যাটে বলে ঠিকমতো লাগবে আর ছক্কা হবে সেটি সব সময় সব অর্থে মেলে না। এটি বাস্তব কথা যেটা আমরা আশা করেছিলাম হয়নি, ছেলেদের আমি কিন্তু হতাশ করি না, তাদের আমি বলি আরও ভালো খেল, আরও মনোযোগী হও, আরও প্র্যাকটিস করো। করোনার কারণে প্র্যাকটিস করতে পারেনি, তারপরেও বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলেছে, বেশ কয়েকটি দেশকে হারাতে পেরেছে এটাই তো সবচেয়ে বড় কথা। কথায় কথায় হতাশ হওয়া ঠিক না, এটি মানসিক রোগের মতো হয়ে গেছে, একটুতেই হতাশ আবার একটুতেই উৎফুল্ল। বেশি উৎফুল্ল হওয়া ভালো না আবার বেশি হতাশ হওয়াও ভালো না। ভবিষ্যতে নিশ্চয় ভালো করবে।
নাসিমা আক্তার মন্টি (আমাদের নতুন সময়): পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় শরিয়া আইনে হাত না দিয়ে উত্তরাধিকার আইনে কীভাবে তা দেওয়া যায় সেটি দেখতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেবামূলক কাজে সহযোগিতা দেওয়া হয়, সেটা অনেকে জানেন না।
মানুষ সম্পত্তির জন্য অন্ধ হয়ে যায়। বাবার সম্পত্তিতে মেয়ের অধিকার যেন নিশ্চিত করা হয়। সম্পত্তি আইনে হিজড়াদের অধিকার যাতে থাকে সেটা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিয়েছি। এমনিতে ধর্মকে কতটুকু মানুক না না মানুক সেটা যাই হোক সম্পত্তির দখল নেওয়ার সময় শরিয়া আইনটা খুব ভালোভাবে বুঝে নেয় এটা হলো বাস্তব কথা। পুরুষেরা কি বোনকে সম্পত্তি দেন? কয়টা ভাই আছে বোনদের অধিকার সংরক্ষণ করে? জাতীয়ভাবে একটা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
শাহারিয়ার আলম (বিজনেস স্টান্ডার্ড): কার্বন নিঃসরণ নিয়ে প্রশ্ন করেন।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কার্বন নিঃসরণ করি না। যত প্রকল্প হচ্ছে সেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুবিধা রেখেছি। কার্বন নিঃসরণ যাতে না হয়, দূষণ যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েই কাজ করছি। সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন, সেটা মাথায় রেখেই আমাদের সব পরিকল্পনা হচ্ছে।
তাসনিয়া রোমি আহমেদ (দ্য আওয়ার টাইমস): ধর্ষণ মামলায় রায়ে একজন নারী বিচারক যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগে তাঁদের মাইন্ডসেট নিয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন কিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী বিচারক নিয়োগ হয়। বিচারক নিয়োগের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির হাতে। তাঁদের নিয়োগে কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে মানসিকতার ওপর। যিনি অবজারভেশন দিয়েছেন এটি তার মানসিকতা, এটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার, ব্যক্তিগত মতামত। এটি সঙ্গে সঙ্গে অ্যাড্রেস করা হয়েছে, ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মানস ঘোষ (এশিয়ান টিভি): বিদেশে বসে বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে আপনি বলেছেন। আপনি আসলে কোন ধরনের ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা কি কিছুই টের পাননি? বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে, বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার সময় বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। জাতীয় পার্টি, বিএনপি-জমায়াত মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতা অবৈধভাবে দখল করে ক্ষমতায় বসে। আগে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কেন দেশকে উন্নত করতে পারেনি? কারণ তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন কখনো চাননি। বাংলাদেশকে আবার তারা ব্যর্থ রাষ্ট্র করতে চেয়েছিল। ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের যে উন্নয়ন এটা তাদের কাছে কখনো ভালো লাগবে না। যে কারণে তাদের ষড়যন্ত্রটা সব সময় হচ্ছে। আপনারা যদি চোখে না দেখেন আমার কিছু বলার নেই।
এরপর বিভিন্ন সরকারের সময় হামলা, নির্যাতন, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, সংখ্যালঘুর ওপর হামলা, বিবরণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান কি ইলেকশন করেছিল? সাতাত্তর সালে তার হ্যাঁ-না ভোট, ৭৮ সালে তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সংসদ নির্বাচন, সেটি কি কোনো নির্বাচন ছিল? ৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কত হত্যা হয়েছিল, কত মানুষের ঘরবাড়ি পুড়িয়েছিল? এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলবে? ২০১৪ সালে ইলেকশন করবে? ইলেকশন করবে কীভাবে? ইলেকশন করতে হলে যে সাংগঠনিক শক্তি দরকার হয় বা জনসমর্থন দরকার হয় সেটা যখন নাই তখন তারা নিজেদের দ্বৈন্যটাই প্রকাশ করে। সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকেই ভোট দেয়, আমাদের চায়। গ্রেনেড হামলা করল পারল না। ৭৪ কেজি বোমা ফিট করার পরেও বেঁচে গেলাম। সরাসরি গুলি করল, তাতেও বেঁচে গেলাম। গাড়ি আটকেও মারতে পারল না। এতবার চেষ্টা করেও সফল হতেও পারল না। তাদের সেই চেষ্টা তো অব্যাহত থাকবে। এখানো সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটাই তাদের চরিত্র। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। পয়সা দিয়ে ভাড়াটে দিয়েও করছে। চুরি করে টাকা নিয়ে গেছে। বোমা হামলা, জঙ্গি হামলা কারা নিয়ন্ত্রণ করে? তদন্তেই আসছে। আপনারা কি চান? এ দেশে নির্বাচন না হোক। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ থাক?
মাহমুদ আল ফয়সাল (মাই টিভি): আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা অংশ নেবে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের কোনো উদ্যোগ নেবেন কিনা? মঞ্জুরুল হাসান বুলবুল প্রশ্ন করেছিলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আপনি বিশেষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন কিনা?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে চান কীভাবে বলেনতো? খালেদা জিয়াকে যে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি এটাই কি বেশি না? আপনাকে যদি কেউ হত্যা করার চেষ্টা করত আপনি তাঁকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন? বলেন আমাকে? বা আপনার পরিবারের কাউকে যদি হত্যা করত। একজন হত্যাকারীকে যদি কেউ বিচার না করে পুরস্কৃত করে দূতাবাসে চাকরি দিত, তাদের জন্য আপনি কি করতেন? কর্নেল রশিদকে খালেদা জিয়া সংসদে বসিয়েছেন। খালেদ জামানকে রাষ্ট্রদূত করে পাঠালেন। বাশার মারা যাওয়ার পরেও ক্ষমতায় এসে তাঁকে পদোন্নতি দিয়ে সব ভাতা দিয়ে দিল। গ্রেনেড হামলার পর বলেছিলেন, আমি নিজেই ভেনিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলাম। কোটালিপাড়ায় বোমা পুতে বলেছিল, প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবেন না। রাখে আল্লাহ মারে কে, আর মারে আল্লাহ রাখে কে? তারপরেও তার ওপর দয়া দেখাতে হবে? কীভাবে প্রশ্নটা করলেন? যারা আমার বাপ-মা, ভাই-বোন, ছোট রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করেছে। তারপরেও আমরা অমানুষ না। অমানুষ না দেখেই তাকে আমরা অন্তত তার বাসায় থাকার ব্যবস্থাটুকু, এক্সিকিউটিভ অথোরিটি আমার হাতে যতটুকু আছে সেটি দিয়ে তাঁকে বাসায় থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাকিটুকু আইনগত ব্যাপার। তারা তো দুর্নীতি করে করে দেশকে একেবারে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। গ্রেনেড হামলা করে এতো আহত হলো, ২২ জন মানুষ মরে গেছে, পার্লামেন্টে সেটার ওপর আলোচনা করতে দেননি। এতো বড় অমানবিক যে তাকেও আমরা মানবিকতা দেখিয়েছি। আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার সেটুকু আমি দেখিয়েছি, আর কত চান? আর কত চান আমাকে বলেন? এখানে আমার কিছু করার নেই, আমার যতোটুকু করার আমি সেটুকু করেছি।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকে চিকিৎসা করতে দেওয়া হচ্ছে, এই তো বেশি। যে আপনাকে হত্যা করতে চায়, তাঁকে আপনি কি ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসবেন। আমাকে মারতে অনেক চেষ্টা করেছে। এর পর খালেদার ওপর আমায় মায়া দেখাতে বলেন। আমার হাতে যেটুকু আছে, তার মাধ্যেমে তাঁকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। ওনারা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের শেল্টার দিয়েছেন। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছেন।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে তাঁকে বাইরে পাঠানো নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমার হাতে যা ছিল, তা দিয়ে তাঁকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। এখন এটা সম্পূর্ণ বিচার বিভাগের বিষয়।’
আজ বুধবার গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া এ সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, অর্থনীতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ, তরুণ সমাজের কর্মসংস্থান, রাজনীতিসহ নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। দেড় ঘণ্টার বেশি স্থায়ী এ সংবাদ সম্মেলনের শেষ প্রশ্ন ছিল এটি। প্রশ্নটির জবাবের মধ্য দিয়েই সংবাদ সম্মেলন শেষ হয়।
সংগঠনই নেই ইলেকশন করবে কীভাবে: প্রধানমন্ত্রী
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিএনপি ইলেকশন নিয়ে প্রশ্ন করে কীভাবে। জিয়া হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে এসেছে। এর পর তাঁর অন্য নির্বাচনগুলো কি নির্বাচন ছিল? ১৯৮১ সালে নির্বাচনে কি হয়েছিল, তা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলে? ইলেকশন কীভাবে করবে তারা। করতে হলে সাংগঠনিক শক্তি দরকার, তা তো তাদের নাই। তৃণমূলে এমনভাবে উন্নয়ন করেছে আওয়ামী লীগ তাতে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কীভাব তারা ক্ষমতায় যাবে। তারা গ্রেনেড হামলা, গুপ্ত হত্যা ইত্যাদির মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। তারা ক্ষমতায় এসেছে অস্ত্রের মাধ্যমে। বিদেশ থেকে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে তাঁদের নেতারা।
কথায় কথায় হতাশ হবেন না: প্রধানমন্ত্রী
সদ্য শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কথায় কথায় এত হতাশ হবেন না। এটা অনেকটা মানসিক সমস্যার মতো। আমরা একটুতে হতাশ হই, একটুতে উৎফুল্ল হই।’
সংবাদ সম্মেলনে বারবারই ফিরে এসেছে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও এবং সেই সূত্রে গণপরিবহনে যাত্রীপ্রতি ভাড়া বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি। বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজের হেড অব নিউজ প্রভাস আমিন এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, ‘ডিজেলের ভাড়া ২৩ শতাংশ বাড়লেও যাত্রীপ্রতি ভাড়া বেড়েছে ২৭ শতাংশ। আবার এই জ্বালানি তেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন মালিকেরা ধর্মঘট না ডেকে পরিবহন বন্ধ রেখে জনগণকে জিম্মি করেন। এভাবে বারবারই তারা নিজেদের দাবি আদায় করে নিচ্ছে। এবারও তেমন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছে কিনা।’
এই প্রশ্নের সঙ্গেই প্রভাস আমিন আরেকটি প্রশ্ন জুড়ে দেন। এতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এই পারফরম্যান্স কি হতাশাজনক বলে মনে করেন কি?
এই প্রশ্নের উত্তরেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা এত হতাশ হচ্ছেন কেন। বাংলাদেশ আজকে বিশ্বকাপে খেলছে, দু-একটি দলকে হারাচ্ছে, এটাই তো বড় কথা। তারা খেলছে, এটাই অনেক। আমি চাচ্ছি তাদের আরও ট্রেনিং করানো। একটুতে হতাশ হওয়া যাবে না আবার বেশি উৎফুল্ল হওয়াও যাবে না। আগামীতে ভালো করবে।’
প্রতিরক্ষা খাতে আমার সরকার অন্যদের চেয়ে বেশি কাজ করেছে: প্রধানমন্ত্রী
ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন স্তরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করতে চাই না, শান্তি চাই। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে আমাদের সেনাবাহিনী কাজ করে। কোনো দিক দিয়ে যেন তারা পিছিয়ে না থাকে সেটা নিশ্চিত করতেই আমি কাজ করার কথা বলেছি। সব জ্ঞান যেন তারা পায়। দেখুন, অনেক সামরিক শাসক ক্ষমতায় ছিল; কিন্তু তারা সামরিক বাহিনীর জন্য যা করেনি, আমি তার চেয়ে বেশি করেছি। আমরা শুধু জাহাজ, অস্ত্র এসব কিনবই না, আমরা যেন প্রশিক্ষণও পাই—এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার সরকার প্রতিরক্ষা খাতে অন্য সকল সরকারের চেয়ে বেশি কাজ করছে।
উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে যুবসমাজের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন আর শুধু চাকরি নয়, যুবসমাজ গড়ে উঠবে উদ্যোক্তা হিসেবে। তারা চাকরি না খুঁজে চাকরি দেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে গড়ে উঠবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ সে সুযোগ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে দেশের যুবসমাজের প্রতি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার যুবসমাজের সৃজনশীল বিকাশের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ তরুণ সংসদ সদস্য ও নেতৃত্ব একটা দিকনির্দেশনা তৈরি করেছেন। এরই মধ্যে দেশের ডিজিটাল রূপান্তর হয়েছে। এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে ছেলেমেয়েরা আউটসোর্সিং করে আয় করছে। তারা ফ্রিল্যান্সিং করছে। শুধু দেশে নয়, ঘরে বসেই তারা সারা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এতে নয়টি ভাষা শেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এগুলোর সুবিধা এরই মধ্যে তরুণ-যুবারা নিতে শুরু করেছেন। তাঁরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই যুবসমাজ চাকরি খুঁজবে না শুধু, তারা চাকরি দেবে। তারা উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠবে।
ইউপি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে, মারামারি ও উসকানিও তারা দিচ্ছে
ইউনিয়ন পরিষদে প্রতীকের মাধ্যমে নির্বাচন করায় সহিংসতা বেশি হচ্ছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনে সহিংসতা কবে হয়নি? এর আগেও হয়েছে। কিন্তু আমরা এটা চাই না। আমাদের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য না। শুধু চেয়ারম্যানদের মধ্যে না, মেম্বারদের মধ্যে মারামারি হচ্ছে। চেয়ারম্যান (নির্বাচনে) প্রতীক দিচ্ছি বলে সংঘর্ষ হচ্ছে, তা কিন্তু না। বিএনপি সংঘর্ষ করছে, অন্যরাও করছে। আমার দলের মধ্যে যেখানে হচ্ছে সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
জ্বালানি খাতে সরকার ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে
জ্বালানি খাতে সরকার ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্লাসগোতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৬ থেকে ফিরে আজ বুধবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
গত ৩ নভেম্বর ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। অর্থাৎ, প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন মালিকেরা ধর্মঘট ডাকে। প্রায় অচল হয়ে পড়ে দেশ। এ অবস্থায় সরকার আলোচনায় বসে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ভাড়া ও ব্যয় সমন্বয় করে নতুন হার নির্ধারণ করে দেয়। এ নিয়ে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী ভর্তুকির প্রসঙ্গটি টানেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালানি খাতে সরকার বছরে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। শুধু ডিজেলেই ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। কৃষকের কথা মাথায় রেখে ডিজেল, সার, বিদ্যুৎ ইত্যাদি কম খরচায় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী করোনায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, করোনার সময় ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়েছে। তাদের সহায়তায় সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যেখানে অর্ধেক সুদে ঋণ প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকার এত ভর্তুকি কীভাবে দেবে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশেও ডিজেলের দাম বেড়েছে। সে অনুপাতে সরকার এখনো বিপুল অঙ্কের ভর্তুকি দিচ্ছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করতে চায় ফ্রান্স: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। এতে জলবায়ু সম্মেলনে হওয়া অগ্রগতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, সম্মেলনের এক ফাঁকে গত ৯ নভেম্বর তিনি ফ্রান্স সফর করেন। সেখানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানান। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ভবন এলিজি প্যালেসে আমন্ত্রিত হন তিনি। সেখানে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ নানা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে নিয়মিত কূটনৈতিক সংলাপ শুরুর জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এ প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা, অর্থনীতিসহ অন্যান্য খাতে দুই দেশের কার্যক্রম বাড়ানোর ব্যাপারে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একযোগে কাজ করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন তিনি।
একই দিনে ফরাসি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ।’ স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন থেকে ফিরে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। সম্মেলন চলাকালে ছয়টি বহুপক্ষীয় ও পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন তিনি। এসব বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্য শেষে ১৩ জন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর উত্তর প্রশ্নের ক্রমানুযায়ী তুলে ধরা হলো-
আবেদ খান (জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক): ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর যাদের হত্যা করা হয়েছিল, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এখন বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এসব হত্যার ঘটনা উদ্ঘাটনে আপনি কমিশন গঠনের কথা বলেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বিটিভির চার কর্মকর্তাকেও হত্যা করা হয়েছিল। এসব বিষয়ে কমিশন গঠন কিংবা ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের পর সংঘটিত বিভিন্ন ক্যুতে সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসার ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান সরাসরি এগুলোতে জড়িত ছিলেন। তাঁর নির্দেশে প্রহসনের বিচারের জন্য সামরিক আদালত বসানো হয়েছিল। কতো মানুষ মারা গিয়েছিলেন তার প্রকৃত সংখ্যা বের করা যায়নি। ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ভোররাতে বিমানবাহিনীতে সংঘটিত বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল। তখন সামরিক আদালতে ফাঁসি দেওয়া হয় ১১জন অফিসারসহ এক হাজার ৪৫০ বিমান সেনাকে। বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুত হন আরও চার হাজার সেনা। নিখোঁজ হন অসংখ্য। সামরিক আদালতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা সম্প্রতি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি জানিয়েছেন। ওই সময় আমার ফুপাতো ভাই ফিরোজ কবির চৌধুরী, যিনি ক্যামেরাম্যান ছিলেন, তাঁকেও হত্যা করা হয়। তাঁদের হত্যা করে বিলের পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। জেলখানায় যাদের ফাঁসি হয়েছে তাঁদের হয়তো খোঁজ পাব। কিন্তু কতজনকে যে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়েছে, জানি না। তবে আমরা তাঁদের বিষয়ে খোঁজ নেব। স্বজন হারানো অসহায়দের অবস্থা আমি জানি। আমিও তো আপনজন হারিয়েছি। ওই সময় নিহত অনেকের পরিবারের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের শাসনামলের এত বছর পর সেই সামরিক আদালত নিয়ে সরব হয়েছেন নাগরিক সমাজ। বিষয়টি তো এত দিন কেউ তুলে ধরেনি। তবুও ধন্যবাদ, এতো দিন পর কথা হচ্ছে।
শাহজাহান সরদার (বাংলাদেশ জার্নাল): ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন ধর্মঘট হয়। সাধারণ মানুষকে কষ্টভোগ করতে হয়। পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, জিনিসপত্রের দামও বেড়ে গেছে। ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষকও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের চিন্তাভাবনা আছে কিনা?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিনিসপত্রের দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। উৎপাদন বাড়ানোর সব ব্যবস্থা নিয়েছি। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। আমাদের তেল কিনে আনতে হয়। ডিজেলে ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। বিদ্যুৎসহ সব মিলিয়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকি। সবাই টাকা উপার্জন করে, কিন্তু ট্যাক্স কতজন দেয়? আমাদের চাল, ডাল, বাড়ি-গাড়ি সবই আছে তারপরও ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার দিকে নজর এবং এটাই বাস্তবতা। সরকারের টাকা আসবে কোথা থেকে? এখন বিদ্যুৎ সবার ঘরে ঘরে। এখানেও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন খরচ তুলতে পারছি না।
জ ই মামুন (এটিএন বাংলা): ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় কমপক্ষে ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। একজন মন্ত্রী বলেছেন, এই নির্বাচনের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হয়েই থাকে। আরেকজন বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী দরকার। তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা মনে করেন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় সহিংসতা বেড়ে গেছে। ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অব্যাহত রাখবেন কিনা? বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে কি ব্যবস্থা নেবেন। মন্ত্রী-এমপিদের আয়-ব্যয়ের হিসেব জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে বলেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনী সহিংসতা অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে এটা ঠিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা আগেও হয়েছে। এখনো হোক সেটা চাই না। একটা হানাহানি, ভোট দিতে গিয়ে মানুষের প্রাণ যাবে এটা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। তৃণমূলে দেখা যায় একজনকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে অনেকের আকাঙ্ক্ষা থাকে। নির্বাচন তো সবাই করছে, আমরা যেমন আওয়ামী লীগের নামে করছি, বিএনপি নাম ছাড়া করছে, অন্যান্য দলও করছে। এই যে হানাহানি মারামারি, কোথায় কোথায়, কাদের মধ্যে হচ্ছে সেটা আপনারা দেখেন। আমাদের দলের মধ্যে যেগুলো হবে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। শুধু ব্যবস্থা না, আমরা যাদের মনোনয়ন দিয়েছি, তাদের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করেছে, যতই ভালো প্রার্থী হোক, যারাই দলের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে, আমরা কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা নেব। আমরা কিন্তু ছাড়ব না। কিন্তু এদের (আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী) বাইরে যারা নির্বাচনে হানাহানি করল, এখন তো তারা দলীয়ভাবে নির্বাচনে আসছে না, সেদিক দিয়ে তারা চালাকিটা ভালোই করল। নির্বাচনও করছে মারামারিও করছে। উসকেও দিচ্ছে, আবার বিজয়ীকে সমর্থন দিয়ে আরেকটা মারামারি বাঁধিয়ে দিচ্ছে। কাজেই সেটাও দেখতে হবে। কোনো প্রাণহানি হোক, এটা আমরা কখনো চাই না। এটা হওয়া উচিত না। এটা যেখানে যেখানে ঘটেছে সেখানে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, সেটা কিন্তু আমরা রক্ষা করে যাচ্ছি।
আয়-ব্যয়ের হিসেব প্রতিবার নির্বাচনের আগে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেটা প্রকাশও হচ্ছে। আপনারাই লিখছেন। আমরা বলেছি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হবে না, সেটা হচ্ছে না। কিন্তু ঘটনাচক্রে কিছু কিছু ঘটনা যখন হয়ে যায় তখন সঙ্গে সঙ্গে সেটার তদন্ত হয়। অন্যায়ভাবে যদি কেউ কোন ঘটনা ঘটায়, সে র্যাব হোক কিংবা পুলিশ হোক তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বিচারও হচ্ছে। এটা একেবার বন্ধ করে দেওয়া… পৃথিবীর কোনো দেশেই সম্ভব না হচ্ছে।
রাশেদ চৌধুরী (একুশে টিভি): যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে যুদ্ধাপরাধ যারা সংগঠন করেছিল তাঁদের জন্য একটা আইন করার কথা ছিল, সেটা আজও হয়নি। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে, এটা কিন্তু মনে রাখতে হবে। এখানে কিছু মানুষ হয়তো শান্তি কমিটিতে নাম লিখিয়েছিল। তারা পাকিস্তানি সেনা ও দোসরদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। যারা প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী ছিল বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বিচার বন্ধ করেছিল, ২২ হাজার বন্দীকে মুক্ত করে দিয়েছিল। ধর্মের নামে রাজনীতি ও যুদ্ধাপরাধীদের ভোটের অধিকার জিয়াউর রহমান দিয়েছিল।
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল (জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক): ইউনেসকো কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর নামে প্রবর্তিত উদ্ভাবনী পুরস্কার উগান্ডার পাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার চিন্তা আছে কিনা, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য তাঁর পরিবার কোনো আবেদন করছে কিনা এবং সরকার এ বিষয়ে কি ভাবছে তা জানতে চান তিনি। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নির্বাচন আইসিইউতে আর গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে বলে যে মন্তব্য করেছেন সে বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর মতামত জানতে চান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনেসকোর পুরস্কারপ্রাপ্তদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। এটা আমাদের দেশেও অনেকই করে থাকে। আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সিআরআইকে ধানমণ্ডিতে ভাড়া বাসায় পরিচালনা করতাম। খালেদা জিয়া অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে এটা বন্ধ করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা ট্রাস্ট করে এটা চালু করেছি। এটা গবেষণার কাজ করছে। ইয়াং বাংলার নামে অনেক যুব সমাজের কর্মসংস্থান করেছি। ছেলেমেয়েদের প্রেরণা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বলেছি, শুধু চাকরি চাকরি না করে নিজেরা চাকরি দেবে সেইভাবে নিজেদের তৈরি কর। যুব সমাজ একখানা ডিগ্রি নিয়ে চাকরির পিছে না ছুটে নিজেরা কিছু করুক, এটা আমরা চাই। আউট সোর্সিংয়ের টাকা যাতে সহজে নিতে পারে এই জন্য বাংলাদেশের আইনের পরিবর্তন করেছি। আমাদের যুব সমাজ যাতে উদ্যোক্তা হোক। তারা যাতে ইউনেসকোর পুরস্কার পাক।
নাইমুল ইসলাম খান (আমাদের নতুন সময়): ইউরোপের সঙ্গে অংশীদারত্ব নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে সামরিক বিষয়েও সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে এসেছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন কিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না, আমরা শান্তি চাই। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে যুদ্ধ নয়। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কাজ করে। আমার চেষ্টা ছিল যারা শান্তি কমিশনে যায় তাঁরা যেন প্রশিক্ষণ ও জ্ঞানে পিছিয়ে না থাকে। অনেক সামরিক শাসক ক্ষমতায় ছিল তারা যা করেননি আমি তাদের থেকে বেশি করেছি। স্বাধীন দেশে এটা প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রশিক্ষণের জন্য সরঞ্জাম কিনি। ইউরোপের সঙ্গেও আমাদের একটা যোগাযোগ আছে।
রফিকুল ইসলাম রতন (ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক): জলবায়ু সম্মেলনে আপনার প্রশংসা হয়েছে। জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন নিয়ে জানতে চান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ফ্রান্স শুধু আমাদের দেবে, তাঁদের সঙ্গে আমাদের সেটাই আলোচনা হয়েছে। প্যারিস ঘোষণায় ১০০ বিলিয়নের কথা বলা হয়েছিল। আমাদের দাবি, যে প্রতিশ্রুতি সেটা যেন ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো পায় সেদিকে তাঁদের দৃষ্টি দিতে হবে। হয়তো যেভাবে আমরা চেয়েছিলাম সেটা না হলেও যথেষ্ট অগ্রগতি আছে, অনেক প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। হয়তো ফান্ড আস্তে আস্তে আসতে থাকবে। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে টিকা পাব। টিকায় কোনো অসুবিধা হবে না। প্রতিদিনই আমরা টিকা দিচ্ছি। বস্তিতে শুরু করে দিয়েছি, শিক্ষার্থীদের দিচ্ছি, কেউ বাদ যাবে না। ২৫ কোটি টিকা কেনার মতো ব্যবস্থা করে রেখেছি। ৯ কোটির কাছাকাছি টিকা দেওয়া হয়েছে। সাড়ে ৪ কোটি ডাবল ডোজ। সব টিকা বিনা মূল্যে দিচ্ছি।
প্রভাষ আমিন (এটিএন বাংলা): ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন ধর্মঘট ডেকে মানুষকে জিম্মি করা হয়। টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশর পারফরমেন্স হতাশা করেছে।
প্রশ্ন শেষ না হতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত হতাশ হন কেন? আমি এই হতাশা দেখতে চাই না। কয়েকটা খেলা তো তারা চমৎকার খেলেছে। ক্রিকেট খেলেছেন কখনো, মাঠে গেছেন কখনো, ব্যাট-বল ধরছেন? ধরেননি, সে জন্য জানেন না। কখন যে ব্যাটে বলে ঠিকমতো লাগবে আর ছক্কা হবে সেটি সব সময় সব অর্থে মেলে না। এটি বাস্তব কথা যেটা আমরা আশা করেছিলাম হয়নি, ছেলেদের আমি কিন্তু হতাশ করি না, তাদের আমি বলি আরও ভালো খেল, আরও মনোযোগী হও, আরও প্র্যাকটিস করো। করোনার কারণে প্র্যাকটিস করতে পারেনি, তারপরেও বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলেছে, বেশ কয়েকটি দেশকে হারাতে পেরেছে এটাই তো সবচেয়ে বড় কথা। কথায় কথায় হতাশ হওয়া ঠিক না, এটি মানসিক রোগের মতো হয়ে গেছে, একটুতেই হতাশ আবার একটুতেই উৎফুল্ল। বেশি উৎফুল্ল হওয়া ভালো না আবার বেশি হতাশ হওয়াও ভালো না। ভবিষ্যতে নিশ্চয় ভালো করবে।
নাসিমা আক্তার মন্টি (আমাদের নতুন সময়): পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় শরিয়া আইনে হাত না দিয়ে উত্তরাধিকার আইনে কীভাবে তা দেওয়া যায় সেটি দেখতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেবামূলক কাজে সহযোগিতা দেওয়া হয়, সেটা অনেকে জানেন না।
মানুষ সম্পত্তির জন্য অন্ধ হয়ে যায়। বাবার সম্পত্তিতে মেয়ের অধিকার যেন নিশ্চিত করা হয়। সম্পত্তি আইনে হিজড়াদের অধিকার যাতে থাকে সেটা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিয়েছি। এমনিতে ধর্মকে কতটুকু মানুক না না মানুক সেটা যাই হোক সম্পত্তির দখল নেওয়ার সময় শরিয়া আইনটা খুব ভালোভাবে বুঝে নেয় এটা হলো বাস্তব কথা। পুরুষেরা কি বোনকে সম্পত্তি দেন? কয়টা ভাই আছে বোনদের অধিকার সংরক্ষণ করে? জাতীয়ভাবে একটা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
শাহারিয়ার আলম (বিজনেস স্টান্ডার্ড): কার্বন নিঃসরণ নিয়ে প্রশ্ন করেন।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কার্বন নিঃসরণ করি না। যত প্রকল্প হচ্ছে সেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুবিধা রেখেছি। কার্বন নিঃসরণ যাতে না হয়, দূষণ যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েই কাজ করছি। সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন, সেটা মাথায় রেখেই আমাদের সব পরিকল্পনা হচ্ছে।
তাসনিয়া রোমি আহমেদ (দ্য আওয়ার টাইমস): ধর্ষণ মামলায় রায়ে একজন নারী বিচারক যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগে তাঁদের মাইন্ডসেট নিয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন কিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী বিচারক নিয়োগ হয়। বিচারক নিয়োগের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির হাতে। তাঁদের নিয়োগে কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে মানসিকতার ওপর। যিনি অবজারভেশন দিয়েছেন এটি তার মানসিকতা, এটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার, ব্যক্তিগত মতামত। এটি সঙ্গে সঙ্গে অ্যাড্রেস করা হয়েছে, ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মানস ঘোষ (এশিয়ান টিভি): বিদেশে বসে বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে আপনি বলেছেন। আপনি আসলে কোন ধরনের ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা কি কিছুই টের পাননি? বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে, বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার সময় বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। জাতীয় পার্টি, বিএনপি-জমায়াত মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতা অবৈধভাবে দখল করে ক্ষমতায় বসে। আগে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কেন দেশকে উন্নত করতে পারেনি? কারণ তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন কখনো চাননি। বাংলাদেশকে আবার তারা ব্যর্থ রাষ্ট্র করতে চেয়েছিল। ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের যে উন্নয়ন এটা তাদের কাছে কখনো ভালো লাগবে না। যে কারণে তাদের ষড়যন্ত্রটা সব সময় হচ্ছে। আপনারা যদি চোখে না দেখেন আমার কিছু বলার নেই।
এরপর বিভিন্ন সরকারের সময় হামলা, নির্যাতন, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, সংখ্যালঘুর ওপর হামলা, বিবরণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান কি ইলেকশন করেছিল? সাতাত্তর সালে তার হ্যাঁ-না ভোট, ৭৮ সালে তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সংসদ নির্বাচন, সেটি কি কোনো নির্বাচন ছিল? ৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কত হত্যা হয়েছিল, কত মানুষের ঘরবাড়ি পুড়িয়েছিল? এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলবে? ২০১৪ সালে ইলেকশন করবে? ইলেকশন করবে কীভাবে? ইলেকশন করতে হলে যে সাংগঠনিক শক্তি দরকার হয় বা জনসমর্থন দরকার হয় সেটা যখন নাই তখন তারা নিজেদের দ্বৈন্যটাই প্রকাশ করে। সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকেই ভোট দেয়, আমাদের চায়। গ্রেনেড হামলা করল পারল না। ৭৪ কেজি বোমা ফিট করার পরেও বেঁচে গেলাম। সরাসরি গুলি করল, তাতেও বেঁচে গেলাম। গাড়ি আটকেও মারতে পারল না। এতবার চেষ্টা করেও সফল হতেও পারল না। তাদের সেই চেষ্টা তো অব্যাহত থাকবে। এখানো সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটাই তাদের চরিত্র। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। পয়সা দিয়ে ভাড়াটে দিয়েও করছে। চুরি করে টাকা নিয়ে গেছে। বোমা হামলা, জঙ্গি হামলা কারা নিয়ন্ত্রণ করে? তদন্তেই আসছে। আপনারা কি চান? এ দেশে নির্বাচন না হোক। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ থাক?
মাহমুদ আল ফয়সাল (মাই টিভি): আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা অংশ নেবে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের কোনো উদ্যোগ নেবেন কিনা? মঞ্জুরুল হাসান বুলবুল প্রশ্ন করেছিলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আপনি বিশেষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন কিনা?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে চান কীভাবে বলেনতো? খালেদা জিয়াকে যে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি এটাই কি বেশি না? আপনাকে যদি কেউ হত্যা করার চেষ্টা করত আপনি তাঁকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন? বলেন আমাকে? বা আপনার পরিবারের কাউকে যদি হত্যা করত। একজন হত্যাকারীকে যদি কেউ বিচার না করে পুরস্কৃত করে দূতাবাসে চাকরি দিত, তাদের জন্য আপনি কি করতেন? কর্নেল রশিদকে খালেদা জিয়া সংসদে বসিয়েছেন। খালেদ জামানকে রাষ্ট্রদূত করে পাঠালেন। বাশার মারা যাওয়ার পরেও ক্ষমতায় এসে তাঁকে পদোন্নতি দিয়ে সব ভাতা দিয়ে দিল। গ্রেনেড হামলার পর বলেছিলেন, আমি নিজেই ভেনিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলাম। কোটালিপাড়ায় বোমা পুতে বলেছিল, প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবেন না। রাখে আল্লাহ মারে কে, আর মারে আল্লাহ রাখে কে? তারপরেও তার ওপর দয়া দেখাতে হবে? কীভাবে প্রশ্নটা করলেন? যারা আমার বাপ-মা, ভাই-বোন, ছোট রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করেছে। তারপরেও আমরা অমানুষ না। অমানুষ না দেখেই তাকে আমরা অন্তত তার বাসায় থাকার ব্যবস্থাটুকু, এক্সিকিউটিভ অথোরিটি আমার হাতে যতটুকু আছে সেটি দিয়ে তাঁকে বাসায় থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাকিটুকু আইনগত ব্যাপার। তারা তো দুর্নীতি করে করে দেশকে একেবারে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। গ্রেনেড হামলা করে এতো আহত হলো, ২২ জন মানুষ মরে গেছে, পার্লামেন্টে সেটার ওপর আলোচনা করতে দেননি। এতো বড় অমানবিক যে তাকেও আমরা মানবিকতা দেখিয়েছি। আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার সেটুকু আমি দেখিয়েছি, আর কত চান? আর কত চান আমাকে বলেন? এখানে আমার কিছু করার নেই, আমার যতোটুকু করার আমি সেটুকু করেছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকে চিকিৎসা করতে দেওয়া হচ্ছে, এই তো বেশি। যে আপনাকে হত্যা করতে চায়, তাঁকে আপনি কি ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসবেন। আমাকে মারতে অনেক চেষ্টা করেছে। এর পর খালেদার ওপর আমায় মায়া দেখাতে বলেন। আমার হাতে যেটুকু আছে, তার মাধ্যেমে তাঁকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। ওনারা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের শেল্টার দিয়েছেন। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছেন।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে তাঁকে বাইরে পাঠানো নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমার হাতে যা ছিল, তা দিয়ে তাঁকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। এখন এটা সম্পূর্ণ বিচার বিভাগের বিষয়।’
আজ বুধবার গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া এ সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, অর্থনীতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ, তরুণ সমাজের কর্মসংস্থান, রাজনীতিসহ নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। দেড় ঘণ্টার বেশি স্থায়ী এ সংবাদ সম্মেলনের শেষ প্রশ্ন ছিল এটি। প্রশ্নটির জবাবের মধ্য দিয়েই সংবাদ সম্মেলন শেষ হয়।
সংগঠনই নেই ইলেকশন করবে কীভাবে: প্রধানমন্ত্রী
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিএনপি ইলেকশন নিয়ে প্রশ্ন করে কীভাবে। জিয়া হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে এসেছে। এর পর তাঁর অন্য নির্বাচনগুলো কি নির্বাচন ছিল? ১৯৮১ সালে নির্বাচনে কি হয়েছিল, তা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলে? ইলেকশন কীভাবে করবে তারা। করতে হলে সাংগঠনিক শক্তি দরকার, তা তো তাদের নাই। তৃণমূলে এমনভাবে উন্নয়ন করেছে আওয়ামী লীগ তাতে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কীভাব তারা ক্ষমতায় যাবে। তারা গ্রেনেড হামলা, গুপ্ত হত্যা ইত্যাদির মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। তারা ক্ষমতায় এসেছে অস্ত্রের মাধ্যমে। বিদেশ থেকে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে তাঁদের নেতারা।
কথায় কথায় হতাশ হবেন না: প্রধানমন্ত্রী
সদ্য শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কথায় কথায় এত হতাশ হবেন না। এটা অনেকটা মানসিক সমস্যার মতো। আমরা একটুতে হতাশ হই, একটুতে উৎফুল্ল হই।’
সংবাদ সম্মেলনে বারবারই ফিরে এসেছে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও এবং সেই সূত্রে গণপরিবহনে যাত্রীপ্রতি ভাড়া বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি। বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজের হেড অব নিউজ প্রভাস আমিন এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, ‘ডিজেলের ভাড়া ২৩ শতাংশ বাড়লেও যাত্রীপ্রতি ভাড়া বেড়েছে ২৭ শতাংশ। আবার এই জ্বালানি তেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন মালিকেরা ধর্মঘট না ডেকে পরিবহন বন্ধ রেখে জনগণকে জিম্মি করেন। এভাবে বারবারই তারা নিজেদের দাবি আদায় করে নিচ্ছে। এবারও তেমন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছে কিনা।’
এই প্রশ্নের সঙ্গেই প্রভাস আমিন আরেকটি প্রশ্ন জুড়ে দেন। এতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এই পারফরম্যান্স কি হতাশাজনক বলে মনে করেন কি?
এই প্রশ্নের উত্তরেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা এত হতাশ হচ্ছেন কেন। বাংলাদেশ আজকে বিশ্বকাপে খেলছে, দু-একটি দলকে হারাচ্ছে, এটাই তো বড় কথা। তারা খেলছে, এটাই অনেক। আমি চাচ্ছি তাদের আরও ট্রেনিং করানো। একটুতে হতাশ হওয়া যাবে না আবার বেশি উৎফুল্ল হওয়াও যাবে না। আগামীতে ভালো করবে।’
প্রতিরক্ষা খাতে আমার সরকার অন্যদের চেয়ে বেশি কাজ করেছে: প্রধানমন্ত্রী
ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন স্তরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করতে চাই না, শান্তি চাই। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে আমাদের সেনাবাহিনী কাজ করে। কোনো দিক দিয়ে যেন তারা পিছিয়ে না থাকে সেটা নিশ্চিত করতেই আমি কাজ করার কথা বলেছি। সব জ্ঞান যেন তারা পায়। দেখুন, অনেক সামরিক শাসক ক্ষমতায় ছিল; কিন্তু তারা সামরিক বাহিনীর জন্য যা করেনি, আমি তার চেয়ে বেশি করেছি। আমরা শুধু জাহাজ, অস্ত্র এসব কিনবই না, আমরা যেন প্রশিক্ষণও পাই—এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার সরকার প্রতিরক্ষা খাতে অন্য সকল সরকারের চেয়ে বেশি কাজ করছে।
উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে যুবসমাজের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন আর শুধু চাকরি নয়, যুবসমাজ গড়ে উঠবে উদ্যোক্তা হিসেবে। তারা চাকরি না খুঁজে চাকরি দেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে গড়ে উঠবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ সে সুযোগ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে দেশের যুবসমাজের প্রতি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার যুবসমাজের সৃজনশীল বিকাশের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ তরুণ সংসদ সদস্য ও নেতৃত্ব একটা দিকনির্দেশনা তৈরি করেছেন। এরই মধ্যে দেশের ডিজিটাল রূপান্তর হয়েছে। এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে ছেলেমেয়েরা আউটসোর্সিং করে আয় করছে। তারা ফ্রিল্যান্সিং করছে। শুধু দেশে নয়, ঘরে বসেই তারা সারা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এতে নয়টি ভাষা শেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এগুলোর সুবিধা এরই মধ্যে তরুণ-যুবারা নিতে শুরু করেছেন। তাঁরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই যুবসমাজ চাকরি খুঁজবে না শুধু, তারা চাকরি দেবে। তারা উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠবে।
ইউপি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে, মারামারি ও উসকানিও তারা দিচ্ছে
ইউনিয়ন পরিষদে প্রতীকের মাধ্যমে নির্বাচন করায় সহিংসতা বেশি হচ্ছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনে সহিংসতা কবে হয়নি? এর আগেও হয়েছে। কিন্তু আমরা এটা চাই না। আমাদের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য না। শুধু চেয়ারম্যানদের মধ্যে না, মেম্বারদের মধ্যে মারামারি হচ্ছে। চেয়ারম্যান (নির্বাচনে) প্রতীক দিচ্ছি বলে সংঘর্ষ হচ্ছে, তা কিন্তু না। বিএনপি সংঘর্ষ করছে, অন্যরাও করছে। আমার দলের মধ্যে যেখানে হচ্ছে সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
জ্বালানি খাতে সরকার ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে
জ্বালানি খাতে সরকার ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্লাসগোতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৬ থেকে ফিরে আজ বুধবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
গত ৩ নভেম্বর ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। অর্থাৎ, প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন মালিকেরা ধর্মঘট ডাকে। প্রায় অচল হয়ে পড়ে দেশ। এ অবস্থায় সরকার আলোচনায় বসে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ভাড়া ও ব্যয় সমন্বয় করে নতুন হার নির্ধারণ করে দেয়। এ নিয়ে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী ভর্তুকির প্রসঙ্গটি টানেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালানি খাতে সরকার বছরে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। শুধু ডিজেলেই ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। কৃষকের কথা মাথায় রেখে ডিজেল, সার, বিদ্যুৎ ইত্যাদি কম খরচায় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী করোনায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, করোনার সময় ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়েছে। তাদের সহায়তায় সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যেখানে অর্ধেক সুদে ঋণ প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকার এত ভর্তুকি কীভাবে দেবে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশেও ডিজেলের দাম বেড়েছে। সে অনুপাতে সরকার এখনো বিপুল অঙ্কের ভর্তুকি দিচ্ছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করতে চায় ফ্রান্স: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। এতে জলবায়ু সম্মেলনে হওয়া অগ্রগতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, সম্মেলনের এক ফাঁকে গত ৯ নভেম্বর তিনি ফ্রান্স সফর করেন। সেখানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানান। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ভবন এলিজি প্যালেসে আমন্ত্রিত হন তিনি। সেখানে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ নানা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে নিয়মিত কূটনৈতিক সংলাপ শুরুর জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এ প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা, অর্থনীতিসহ অন্যান্য খাতে দুই দেশের কার্যক্রম বাড়ানোর ব্যাপারে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একযোগে কাজ করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন তিনি।
একই দিনে ফরাসি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ।’ স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন থেকে ফিরে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। সম্মেলন চলাকালে ছয়টি বহুপক্ষীয় ও পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন তিনি। এসব বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্য শেষে ১৩ জন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর উত্তর প্রশ্নের ক্রমানুযায়ী তুলে ধরা হলো-
আবেদ খান (জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক): ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর যাদের হত্যা করা হয়েছিল, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এখন বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এসব হত্যার ঘটনা উদ্ঘাটনে আপনি কমিশন গঠনের কথা বলেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বিটিভির চার কর্মকর্তাকেও হত্যা করা হয়েছিল। এসব বিষয়ে কমিশন গঠন কিংবা ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের পর সংঘটিত বিভিন্ন ক্যুতে সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসার ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান সরাসরি এগুলোতে জড়িত ছিলেন। তাঁর নির্দেশে প্রহসনের বিচারের জন্য সামরিক আদালত বসানো হয়েছিল। কতো মানুষ মারা গিয়েছিলেন তার প্রকৃত সংখ্যা বের করা যায়নি। ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ভোররাতে বিমানবাহিনীতে সংঘটিত বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল। তখন সামরিক আদালতে ফাঁসি দেওয়া হয় ১১জন অফিসারসহ এক হাজার ৪৫০ বিমান সেনাকে। বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুত হন আরও চার হাজার সেনা। নিখোঁজ হন অসংখ্য। সামরিক আদালতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা সম্প্রতি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি জানিয়েছেন। ওই সময় আমার ফুপাতো ভাই ফিরোজ কবির চৌধুরী, যিনি ক্যামেরাম্যান ছিলেন, তাঁকেও হত্যা করা হয়। তাঁদের হত্যা করে বিলের পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। জেলখানায় যাদের ফাঁসি হয়েছে তাঁদের হয়তো খোঁজ পাব। কিন্তু কতজনকে যে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়েছে, জানি না। তবে আমরা তাঁদের বিষয়ে খোঁজ নেব। স্বজন হারানো অসহায়দের অবস্থা আমি জানি। আমিও তো আপনজন হারিয়েছি। ওই সময় নিহত অনেকের পরিবারের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের শাসনামলের এত বছর পর সেই সামরিক আদালত নিয়ে সরব হয়েছেন নাগরিক সমাজ। বিষয়টি তো এত দিন কেউ তুলে ধরেনি। তবুও ধন্যবাদ, এতো দিন পর কথা হচ্ছে।
শাহজাহান সরদার (বাংলাদেশ জার্নাল): ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন ধর্মঘট হয়। সাধারণ মানুষকে কষ্টভোগ করতে হয়। পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, জিনিসপত্রের দামও বেড়ে গেছে। ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষকও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের চিন্তাভাবনা আছে কিনা?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিনিসপত্রের দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। উৎপাদন বাড়ানোর সব ব্যবস্থা নিয়েছি। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। আমাদের তেল কিনে আনতে হয়। ডিজেলে ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। বিদ্যুৎসহ সব মিলিয়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকি। সবাই টাকা উপার্জন করে, কিন্তু ট্যাক্স কতজন দেয়? আমাদের চাল, ডাল, বাড়ি-গাড়ি সবই আছে তারপরও ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার দিকে নজর এবং এটাই বাস্তবতা। সরকারের টাকা আসবে কোথা থেকে? এখন বিদ্যুৎ সবার ঘরে ঘরে। এখানেও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন খরচ তুলতে পারছি না।
জ ই মামুন (এটিএন বাংলা): ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় কমপক্ষে ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। একজন মন্ত্রী বলেছেন, এই নির্বাচনের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হয়েই থাকে। আরেকজন বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী দরকার। তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা মনে করেন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় সহিংসতা বেড়ে গেছে। ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অব্যাহত রাখবেন কিনা? বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে কি ব্যবস্থা নেবেন। মন্ত্রী-এমপিদের আয়-ব্যয়ের হিসেব জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে বলেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনী সহিংসতা অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে এটা ঠিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা আগেও হয়েছে। এখনো হোক সেটা চাই না। একটা হানাহানি, ভোট দিতে গিয়ে মানুষের প্রাণ যাবে এটা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। তৃণমূলে দেখা যায় একজনকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে অনেকের আকাঙ্ক্ষা থাকে। নির্বাচন তো সবাই করছে, আমরা যেমন আওয়ামী লীগের নামে করছি, বিএনপি নাম ছাড়া করছে, অন্যান্য দলও করছে। এই যে হানাহানি মারামারি, কোথায় কোথায়, কাদের মধ্যে হচ্ছে সেটা আপনারা দেখেন। আমাদের দলের মধ্যে যেগুলো হবে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। শুধু ব্যবস্থা না, আমরা যাদের মনোনয়ন দিয়েছি, তাদের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করেছে, যতই ভালো প্রার্থী হোক, যারাই দলের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে, আমরা কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা নেব। আমরা কিন্তু ছাড়ব না। কিন্তু এদের (আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী) বাইরে যারা নির্বাচনে হানাহানি করল, এখন তো তারা দলীয়ভাবে নির্বাচনে আসছে না, সেদিক দিয়ে তারা চালাকিটা ভালোই করল। নির্বাচনও করছে মারামারিও করছে। উসকেও দিচ্ছে, আবার বিজয়ীকে সমর্থন দিয়ে আরেকটা মারামারি বাঁধিয়ে দিচ্ছে। কাজেই সেটাও দেখতে হবে। কোনো প্রাণহানি হোক, এটা আমরা কখনো চাই না। এটা হওয়া উচিত না। এটা যেখানে যেখানে ঘটেছে সেখানে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, সেটা কিন্তু আমরা রক্ষা করে যাচ্ছি।
আয়-ব্যয়ের হিসেব প্রতিবার নির্বাচনের আগে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেটা প্রকাশও হচ্ছে। আপনারাই লিখছেন। আমরা বলেছি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হবে না, সেটা হচ্ছে না। কিন্তু ঘটনাচক্রে কিছু কিছু ঘটনা যখন হয়ে যায় তখন সঙ্গে সঙ্গে সেটার তদন্ত হয়। অন্যায়ভাবে যদি কেউ কোন ঘটনা ঘটায়, সে র্যাব হোক কিংবা পুলিশ হোক তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বিচারও হচ্ছে। এটা একেবার বন্ধ করে দেওয়া… পৃথিবীর কোনো দেশেই সম্ভব না হচ্ছে।
রাশেদ চৌধুরী (একুশে টিভি): যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে যুদ্ধাপরাধ যারা সংগঠন করেছিল তাঁদের জন্য একটা আইন করার কথা ছিল, সেটা আজও হয়নি। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে, এটা কিন্তু মনে রাখতে হবে। এখানে কিছু মানুষ হয়তো শান্তি কমিটিতে নাম লিখিয়েছিল। তারা পাকিস্তানি সেনা ও দোসরদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। যারা প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী ছিল বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বিচার বন্ধ করেছিল, ২২ হাজার বন্দীকে মুক্ত করে দিয়েছিল। ধর্মের নামে রাজনীতি ও যুদ্ধাপরাধীদের ভোটের অধিকার জিয়াউর রহমান দিয়েছিল।
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল (জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক): ইউনেসকো কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর নামে প্রবর্তিত উদ্ভাবনী পুরস্কার উগান্ডার পাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার চিন্তা আছে কিনা, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য তাঁর পরিবার কোনো আবেদন করছে কিনা এবং সরকার এ বিষয়ে কি ভাবছে তা জানতে চান তিনি। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নির্বাচন আইসিইউতে আর গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে বলে যে মন্তব্য করেছেন সে বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর মতামত জানতে চান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনেসকোর পুরস্কারপ্রাপ্তদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। এটা আমাদের দেশেও অনেকই করে থাকে। আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সিআরআইকে ধানমণ্ডিতে ভাড়া বাসায় পরিচালনা করতাম। খালেদা জিয়া অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে এটা বন্ধ করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা ট্রাস্ট করে এটা চালু করেছি। এটা গবেষণার কাজ করছে। ইয়াং বাংলার নামে অনেক যুব সমাজের কর্মসংস্থান করেছি। ছেলেমেয়েদের প্রেরণা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বলেছি, শুধু চাকরি চাকরি না করে নিজেরা চাকরি দেবে সেইভাবে নিজেদের তৈরি কর। যুব সমাজ একখানা ডিগ্রি নিয়ে চাকরির পিছে না ছুটে নিজেরা কিছু করুক, এটা আমরা চাই। আউট সোর্সিংয়ের টাকা যাতে সহজে নিতে পারে এই জন্য বাংলাদেশের আইনের পরিবর্তন করেছি। আমাদের যুব সমাজ যাতে উদ্যোক্তা হোক। তারা যাতে ইউনেসকোর পুরস্কার পাক।
নাইমুল ইসলাম খান (আমাদের নতুন সময়): ইউরোপের সঙ্গে অংশীদারত্ব নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে সামরিক বিষয়েও সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে এসেছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন কিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না, আমরা শান্তি চাই। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে যুদ্ধ নয়। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কাজ করে। আমার চেষ্টা ছিল যারা শান্তি কমিশনে যায় তাঁরা যেন প্রশিক্ষণ ও জ্ঞানে পিছিয়ে না থাকে। অনেক সামরিক শাসক ক্ষমতায় ছিল তারা যা করেননি আমি তাদের থেকে বেশি করেছি। স্বাধীন দেশে এটা প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রশিক্ষণের জন্য সরঞ্জাম কিনি। ইউরোপের সঙ্গেও আমাদের একটা যোগাযোগ আছে।
রফিকুল ইসলাম রতন (ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক): জলবায়ু সম্মেলনে আপনার প্রশংসা হয়েছে। জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন নিয়ে জানতে চান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ফ্রান্স শুধু আমাদের দেবে, তাঁদের সঙ্গে আমাদের সেটাই আলোচনা হয়েছে। প্যারিস ঘোষণায় ১০০ বিলিয়নের কথা বলা হয়েছিল। আমাদের দাবি, যে প্রতিশ্রুতি সেটা যেন ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো পায় সেদিকে তাঁদের দৃষ্টি দিতে হবে। হয়তো যেভাবে আমরা চেয়েছিলাম সেটা না হলেও যথেষ্ট অগ্রগতি আছে, অনেক প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। হয়তো ফান্ড আস্তে আস্তে আসতে থাকবে। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে টিকা পাব। টিকায় কোনো অসুবিধা হবে না। প্রতিদিনই আমরা টিকা দিচ্ছি। বস্তিতে শুরু করে দিয়েছি, শিক্ষার্থীদের দিচ্ছি, কেউ বাদ যাবে না। ২৫ কোটি টিকা কেনার মতো ব্যবস্থা করে রেখেছি। ৯ কোটির কাছাকাছি টিকা দেওয়া হয়েছে। সাড়ে ৪ কোটি ডাবল ডোজ। সব টিকা বিনা মূল্যে দিচ্ছি।
প্রভাষ আমিন (এটিএন বাংলা): ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন ধর্মঘট ডেকে মানুষকে জিম্মি করা হয়। টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশর পারফরমেন্স হতাশা করেছে।
প্রশ্ন শেষ না হতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত হতাশ হন কেন? আমি এই হতাশা দেখতে চাই না। কয়েকটা খেলা তো তারা চমৎকার খেলেছে। ক্রিকেট খেলেছেন কখনো, মাঠে গেছেন কখনো, ব্যাট-বল ধরছেন? ধরেননি, সে জন্য জানেন না। কখন যে ব্যাটে বলে ঠিকমতো লাগবে আর ছক্কা হবে সেটি সব সময় সব অর্থে মেলে না। এটি বাস্তব কথা যেটা আমরা আশা করেছিলাম হয়নি, ছেলেদের আমি কিন্তু হতাশ করি না, তাদের আমি বলি আরও ভালো খেল, আরও মনোযোগী হও, আরও প্র্যাকটিস করো। করোনার কারণে প্র্যাকটিস করতে পারেনি, তারপরেও বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলেছে, বেশ কয়েকটি দেশকে হারাতে পেরেছে এটাই তো সবচেয়ে বড় কথা। কথায় কথায় হতাশ হওয়া ঠিক না, এটি মানসিক রোগের মতো হয়ে গেছে, একটুতেই হতাশ আবার একটুতেই উৎফুল্ল। বেশি উৎফুল্ল হওয়া ভালো না আবার বেশি হতাশ হওয়াও ভালো না। ভবিষ্যতে নিশ্চয় ভালো করবে।
নাসিমা আক্তার মন্টি (আমাদের নতুন সময়): পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় শরিয়া আইনে হাত না দিয়ে উত্তরাধিকার আইনে কীভাবে তা দেওয়া যায় সেটি দেখতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেবামূলক কাজে সহযোগিতা দেওয়া হয়, সেটা অনেকে জানেন না।
মানুষ সম্পত্তির জন্য অন্ধ হয়ে যায়। বাবার সম্পত্তিতে মেয়ের অধিকার যেন নিশ্চিত করা হয়। সম্পত্তি আইনে হিজড়াদের অধিকার যাতে থাকে সেটা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিয়েছি। এমনিতে ধর্মকে কতটুকু মানুক না না মানুক সেটা যাই হোক সম্পত্তির দখল নেওয়ার সময় শরিয়া আইনটা খুব ভালোভাবে বুঝে নেয় এটা হলো বাস্তব কথা। পুরুষেরা কি বোনকে সম্পত্তি দেন? কয়টা ভাই আছে বোনদের অধিকার সংরক্ষণ করে? জাতীয়ভাবে একটা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
শাহারিয়ার আলম (বিজনেস স্টান্ডার্ড): কার্বন নিঃসরণ নিয়ে প্রশ্ন করেন।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কার্বন নিঃসরণ করি না। যত প্রকল্প হচ্ছে সেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুবিধা রেখেছি। কার্বন নিঃসরণ যাতে না হয়, দূষণ যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েই কাজ করছি। সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন, সেটা মাথায় রেখেই আমাদের সব পরিকল্পনা হচ্ছে।
তাসনিয়া রোমি আহমেদ (দ্য আওয়ার টাইমস): ধর্ষণ মামলায় রায়ে একজন নারী বিচারক যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগে তাঁদের মাইন্ডসেট নিয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন কিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী বিচারক নিয়োগ হয়। বিচারক নিয়োগের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির হাতে। তাঁদের নিয়োগে কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে মানসিকতার ওপর। যিনি অবজারভেশন দিয়েছেন এটি তার মানসিকতা, এটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার, ব্যক্তিগত মতামত। এটি সঙ্গে সঙ্গে অ্যাড্রেস করা হয়েছে, ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মানস ঘোষ (এশিয়ান টিভি): বিদেশে বসে বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে আপনি বলেছেন। আপনি আসলে কোন ধরনের ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা কি কিছুই টের পাননি? বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে, বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার সময় বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। জাতীয় পার্টি, বিএনপি-জমায়াত মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতা অবৈধভাবে দখল করে ক্ষমতায় বসে। আগে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কেন দেশকে উন্নত করতে পারেনি? কারণ তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন কখনো চাননি। বাংলাদেশকে আবার তারা ব্যর্থ রাষ্ট্র করতে চেয়েছিল। ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের যে উন্নয়ন এটা তাদের কাছে কখনো ভালো লাগবে না। যে কারণে তাদের ষড়যন্ত্রটা সব সময় হচ্ছে। আপনারা যদি চোখে না দেখেন আমার কিছু বলার নেই।
এরপর বিভিন্ন সরকারের সময় হামলা, নির্যাতন, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, সংখ্যালঘুর ওপর হামলা, বিবরণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান কি ইলেকশন করেছিল? সাতাত্তর সালে তার হ্যাঁ-না ভোট, ৭৮ সালে তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সংসদ নির্বাচন, সেটি কি কোনো নির্বাচন ছিল? ৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কত হত্যা হয়েছিল, কত মানুষের ঘরবাড়ি পুড়িয়েছিল? এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলবে? ২০১৪ সালে ইলেকশন করবে? ইলেকশন করবে কীভাবে? ইলেকশন করতে হলে যে সাংগঠনিক শক্তি দরকার হয় বা জনসমর্থন দরকার হয় সেটা যখন নাই তখন তারা নিজেদের দ্বৈন্যটাই প্রকাশ করে। সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকেই ভোট দেয়, আমাদের চায়। গ্রেনেড হামলা করল পারল না। ৭৪ কেজি বোমা ফিট করার পরেও বেঁচে গেলাম। সরাসরি গুলি করল, তাতেও বেঁচে গেলাম। গাড়ি আটকেও মারতে পারল না। এতবার চেষ্টা করেও সফল হতেও পারল না। তাদের সেই চেষ্টা তো অব্যাহত থাকবে। এখানো সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটাই তাদের চরিত্র। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। পয়সা দিয়ে ভাড়াটে দিয়েও করছে। চুরি করে টাকা নিয়ে গেছে। বোমা হামলা, জঙ্গি হামলা কারা নিয়ন্ত্রণ করে? তদন্তেই আসছে। আপনারা কি চান? এ দেশে নির্বাচন না হোক। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ থাক?
মাহমুদ আল ফয়সাল (মাই টিভি): আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা অংশ নেবে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের কোনো উদ্যোগ নেবেন কিনা? মঞ্জুরুল হাসান বুলবুল প্রশ্ন করেছিলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আপনি বিশেষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন কিনা?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে চান কীভাবে বলেনতো? খালেদা জিয়াকে যে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি এটাই কি বেশি না? আপনাকে যদি কেউ হত্যা করার চেষ্টা করত আপনি তাঁকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন? বলেন আমাকে? বা আপনার পরিবারের কাউকে যদি হত্যা করত। একজন হত্যাকারীকে যদি কেউ বিচার না করে পুরস্কৃত করে দূতাবাসে চাকরি দিত, তাদের জন্য আপনি কি করতেন? কর্নেল রশিদকে খালেদা জিয়া সংসদে বসিয়েছেন। খালেদ জামানকে রাষ্ট্রদূত করে পাঠালেন। বাশার মারা যাওয়ার পরেও ক্ষমতায় এসে তাঁকে পদোন্নতি দিয়ে সব ভাতা দিয়ে দিল। গ্রেনেড হামলার পর বলেছিলেন, আমি নিজেই ভেনিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলাম। কোটালিপাড়ায় বোমা পুতে বলেছিল, প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবেন না। রাখে আল্লাহ মারে কে, আর মারে আল্লাহ রাখে কে? তারপরেও তার ওপর দয়া দেখাতে হবে? কীভাবে প্রশ্নটা করলেন? যারা আমার বাপ-মা, ভাই-বোন, ছোট রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করেছে। তারপরেও আমরা অমানুষ না। অমানুষ না দেখেই তাকে আমরা অন্তত তার বাসায় থাকার ব্যবস্থাটুকু, এক্সিকিউটিভ অথোরিটি আমার হাতে যতটুকু আছে সেটি দিয়ে তাঁকে বাসায় থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাকিটুকু আইনগত ব্যাপার। তারা তো দুর্নীতি করে করে দেশকে একেবারে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। গ্রেনেড হামলা করে এতো আহত হলো, ২২ জন মানুষ মরে গেছে, পার্লামেন্টে সেটার ওপর আলোচনা করতে দেননি। এতো বড় অমানবিক যে তাকেও আমরা মানবিকতা দেখিয়েছি। আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার সেটুকু আমি দেখিয়েছি, আর কত চান? আর কত চান আমাকে বলেন? এখানে আমার কিছু করার নেই, আমার যতোটুকু করার আমি সেটুকু করেছি।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে সরকার অধ্যাদেশ জারি করেছে। আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ থেকে গতকাল সোমবার অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
৩ ঘণ্টা আগে
আইন মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি ১১ শতাধিক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে পদোন্নতির প্যানেলভুক্ত করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় উঠছে। এ সভায় বিষয়টি অনুমোদিত হলে তা আবারও পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে। এরপর সময়ে সময়ে ওই প্যানেল থেকে পদোন্নতি দেওয়া
৯ ঘণ্টা আগে
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে গণভোট এবং নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) নিয়ে সৃষ্টি হওয়া সংকট সমাধানের ভার রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে সরকার নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত দেবে। গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউ
১০ ঘণ্টা আগে
প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি, আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানসহ ৩৪ জনের নামে পৃথক পাঁচটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
১৫ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে সরকার অধ্যাদেশ জারি করেছে। আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। তবে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ থেকে গতকাল সোমবার অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
সংশোধিত আরপিওতে জোটবদ্ধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতীক পছন্দের বিষয়ে বলা হয়েছে, দুই বা ততোধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে যারা নির্বাচনে যৌথ প্রার্থী মনোনীত করতে সম্মত হয়েছে, তারা প্রার্থী যে দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেই রাজনৈতিক দলের জন্য সংরক্ষিত প্রতীক বরাদ্দ করবে।
প্রস্তাবিত আরপিওতে জোট প্রার্থীর নিজস্ব দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছিল। এ বিষয়টি নিয়ে বিএনপি তীব্র আপত্তি জানায়। এটি সংশোধনের আবেদন জানিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠিও দিয়েছিল তারা। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামী বিধানটি রাখার পক্ষে।
আরপিওতে এবার ‘না’ ভোটের বিধানও যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যাচাই-বাছাই বা পর্যালোচনার পর একটি আসন থেকে সদস্য হিসেবে নির্বাচনের জন্য মাত্র একজন ব্যক্তি বৈধভাবে মনোনীত থাকেন অথবা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর মাত্র একজন প্রার্থী অবশিষ্ট থাকেন, সে ক্ষেত্রে নির্বাচনটি একক প্রার্থী এবং 'না ভোট' (No Vote) বিকল্পের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
যদি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কর্তৃক প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা 'না ভোট'-এর সংখ্যা অপেক্ষা বেশি হয়, তাহলে রিটার্নিং কর্মকর্তা জনবিজ্ঞপ্তি দ্বারা ওই প্রার্থীকে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করবেন।
যদি 'না ভোট'-এর সংখ্যা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কর্তৃক প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা অপেক্ষা বেশি হয়, তবে নতুন সময়সূচি ঘোষণা করে সেই নির্বাচনী এলাকায় নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে সরকার অধ্যাদেশ জারি করেছে। আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। তবে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ থেকে গতকাল সোমবার অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
সংশোধিত আরপিওতে জোটবদ্ধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতীক পছন্দের বিষয়ে বলা হয়েছে, দুই বা ততোধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে যারা নির্বাচনে যৌথ প্রার্থী মনোনীত করতে সম্মত হয়েছে, তারা প্রার্থী যে দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেই রাজনৈতিক দলের জন্য সংরক্ষিত প্রতীক বরাদ্দ করবে।
প্রস্তাবিত আরপিওতে জোট প্রার্থীর নিজস্ব দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছিল। এ বিষয়টি নিয়ে বিএনপি তীব্র আপত্তি জানায়। এটি সংশোধনের আবেদন জানিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠিও দিয়েছিল তারা। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামী বিধানটি রাখার পক্ষে।
আরপিওতে এবার ‘না’ ভোটের বিধানও যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যাচাই-বাছাই বা পর্যালোচনার পর একটি আসন থেকে সদস্য হিসেবে নির্বাচনের জন্য মাত্র একজন ব্যক্তি বৈধভাবে মনোনীত থাকেন অথবা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর মাত্র একজন প্রার্থী অবশিষ্ট থাকেন, সে ক্ষেত্রে নির্বাচনটি একক প্রার্থী এবং 'না ভোট' (No Vote) বিকল্পের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
যদি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কর্তৃক প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা 'না ভোট'-এর সংখ্যা অপেক্ষা বেশি হয়, তাহলে রিটার্নিং কর্মকর্তা জনবিজ্ঞপ্তি দ্বারা ওই প্রার্থীকে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করবেন।
যদি 'না ভোট'-এর সংখ্যা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কর্তৃক প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা অপেক্ষা বেশি হয়, তবে নতুন সময়সূচি ঘোষণা করে সেই নির্বাচনী এলাকায় নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্লাসগোতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৬ থেকে ফিরে আজ বুধবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
১৭ নভেম্বর ২০২১
আইন মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি ১১ শতাধিক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে পদোন্নতির প্যানেলভুক্ত করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় উঠছে। এ সভায় বিষয়টি অনুমোদিত হলে তা আবারও পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে। এরপর সময়ে সময়ে ওই প্যানেল থেকে পদোন্নতি দেওয়া
৯ ঘণ্টা আগে
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে গণভোট এবং নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) নিয়ে সৃষ্টি হওয়া সংকট সমাধানের ভার রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে সরকার নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত দেবে। গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউ
১০ ঘণ্টা আগে
প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি, আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানসহ ৩৪ জনের নামে পৃথক পাঁচটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
১৫ ঘণ্টা আগেএস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা

আইন মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি ১১ শতাধিক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে পদোন্নতির প্যানেলভুক্ত করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় উঠছে। এ সভায় বিষয়টি অনুমোদিত হলে তা আবারও পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে। এরপর সময়ে সময়ে ওই প্যানেল থেকে পদোন্নতি দেওয়া হবে।
বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য প্যানেল তৈরি করে রাখা হয়। পদ খালি হলে পর্যায়ক্রমে শূন্য পদে পদোন্নতি দেওয়া হয় ওই প্যানেল থেকে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতির অংশগ্রহণে আজ ফুলকোর্ট সভা ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। বেলা ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের কনফারেন্স রুমে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সুপ্রিম কোর্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদোন্নতির জন্য প্যানেলে রয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ থেকে জেলা ও দায়রা জজ পদের জন্য ৩৪৫ জন, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদে ২০৭ জন, সিনিয়র সহকারী জজ থেকে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ পদে ৫৫১ জন। সব মিলিয়ে এবারের পদোন্নতির প্যানেলে ১ হাজার ১০৩ জন বিচারিক কর্মকর্তার নাম রয়েছে।
এবারের পদোন্নতির প্যানেলে কয়েকজন বিতর্কিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার নাম রয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। তাঁদের পদোন্নতির বিষয়ে অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ফুলকোর্ট সভা। ফুলকোর্ট সভার মতামত অনুযায়ী পদোন্নতির বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
এবারের মতো এত বেশিসংখ্যক কর্মকর্তার নাম কখনো একসঙ্গে পদোন্নতির প্যানেলে পাঠানো হয়নি বলে জানিয়েছেন একাধিক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা। এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সম্প্রতি ১৯১টি জেলা জজের পদ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত পৃথক করায় নতুন আদালত সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণেই একসঙ্গে এত বিচারকের পদোন্নতির জন্য প্যানেল করে রাখতে হচ্ছে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোছাইনও কিছুটা অনুরূপ জবাব দেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, এবারের ফুলকোর্টে ২০২৬ সালের ক্যালেন্ডার ও পদোন্নতি-সংক্রান্ত কিছু বিষয় অনুমোদনের জন্য রয়েছে। ...আড়াই শর মতো নতুন পদ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাচের একসঙ্গে পদোন্নতির জন্য প্রস্তাব এসেছে। এ কারণে সংখ্যাটা বেশি মনে হচ্ছে। তবে এটি স্বাভাবিক।’
সব মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতির জন্য ডিপিসি (বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি) থাকে। এ কমিটি পদোন্নতির প্যানেল চূড়ান্ত করার পর তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে যায়। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে এক দিনেই প্যানেলের সবার পদোন্নতির আদেশ জারি করা হয়। তবে বিচারকদের ক্ষেত্রে প্যানেল চূড়ান্ত করার পর তা সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়। বাছাই কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় ওঠে। সভায় অনুমোদন দেওয়ার পর তা আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে যায়। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে ওই প্যানেল আইন মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত থাকে। এরপর পদ খালি হওয়া সাপেক্ষে সময়ে সময়ে আদেশ জারি করা হয়।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালা ২০০৭ অনুযায়ী সিনিয়র সহকারী জজ পদে পদোন্নতির জন্য সহকারী জজদের এই পদে চার বছর দায়িত্ব পালনের শর্ত পূরণ করতে হয়। সিনিয়র সহকারী জজদের যুগ্ম জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছর, যুগ্ম জেলা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছর এবং অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছরের শর্ত পূরণ করতে হয়। তবে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনেক সময় এই নিয়ম মানা হয় না। অনেকেই প্যানেলভুক্ত হয়ে থাকেন বছরের পর বছর।

আইন মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি ১১ শতাধিক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে পদোন্নতির প্যানেলভুক্ত করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় উঠছে। এ সভায় বিষয়টি অনুমোদিত হলে তা আবারও পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে। এরপর সময়ে সময়ে ওই প্যানেল থেকে পদোন্নতি দেওয়া হবে।
বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য প্যানেল তৈরি করে রাখা হয়। পদ খালি হলে পর্যায়ক্রমে শূন্য পদে পদোন্নতি দেওয়া হয় ওই প্যানেল থেকে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতির অংশগ্রহণে আজ ফুলকোর্ট সভা ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। বেলা ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের কনফারেন্স রুমে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সুপ্রিম কোর্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদোন্নতির জন্য প্যানেলে রয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ থেকে জেলা ও দায়রা জজ পদের জন্য ৩৪৫ জন, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদে ২০৭ জন, সিনিয়র সহকারী জজ থেকে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ পদে ৫৫১ জন। সব মিলিয়ে এবারের পদোন্নতির প্যানেলে ১ হাজার ১০৩ জন বিচারিক কর্মকর্তার নাম রয়েছে।
এবারের পদোন্নতির প্যানেলে কয়েকজন বিতর্কিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার নাম রয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। তাঁদের পদোন্নতির বিষয়ে অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ফুলকোর্ট সভা। ফুলকোর্ট সভার মতামত অনুযায়ী পদোন্নতির বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
এবারের মতো এত বেশিসংখ্যক কর্মকর্তার নাম কখনো একসঙ্গে পদোন্নতির প্যানেলে পাঠানো হয়নি বলে জানিয়েছেন একাধিক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা। এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সম্প্রতি ১৯১টি জেলা জজের পদ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত পৃথক করায় নতুন আদালত সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণেই একসঙ্গে এত বিচারকের পদোন্নতির জন্য প্যানেল করে রাখতে হচ্ছে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোছাইনও কিছুটা অনুরূপ জবাব দেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, এবারের ফুলকোর্টে ২০২৬ সালের ক্যালেন্ডার ও পদোন্নতি-সংক্রান্ত কিছু বিষয় অনুমোদনের জন্য রয়েছে। ...আড়াই শর মতো নতুন পদ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাচের একসঙ্গে পদোন্নতির জন্য প্রস্তাব এসেছে। এ কারণে সংখ্যাটা বেশি মনে হচ্ছে। তবে এটি স্বাভাবিক।’
সব মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতির জন্য ডিপিসি (বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি) থাকে। এ কমিটি পদোন্নতির প্যানেল চূড়ান্ত করার পর তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে যায়। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে এক দিনেই প্যানেলের সবার পদোন্নতির আদেশ জারি করা হয়। তবে বিচারকদের ক্ষেত্রে প্যানেল চূড়ান্ত করার পর তা সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়। বাছাই কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় ওঠে। সভায় অনুমোদন দেওয়ার পর তা আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে যায়। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে ওই প্যানেল আইন মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত থাকে। এরপর পদ খালি হওয়া সাপেক্ষে সময়ে সময়ে আদেশ জারি করা হয়।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালা ২০০৭ অনুযায়ী সিনিয়র সহকারী জজ পদে পদোন্নতির জন্য সহকারী জজদের এই পদে চার বছর দায়িত্ব পালনের শর্ত পূরণ করতে হয়। সিনিয়র সহকারী জজদের যুগ্ম জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছর, যুগ্ম জেলা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছর এবং অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছরের শর্ত পূরণ করতে হয়। তবে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনেক সময় এই নিয়ম মানা হয় না। অনেকেই প্যানেলভুক্ত হয়ে থাকেন বছরের পর বছর।

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্লাসগোতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৬ থেকে ফিরে আজ বুধবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
১৭ নভেম্বর ২০২১
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে সরকার অধ্যাদেশ জারি করেছে। আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ থেকে গতকাল সোমবার অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
৩ ঘণ্টা আগে
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে গণভোট এবং নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) নিয়ে সৃষ্টি হওয়া সংকট সমাধানের ভার রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে সরকার নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত দেবে। গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউ
১০ ঘণ্টা আগে
প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি, আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানসহ ৩৪ জনের নামে পৃথক পাঁচটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
১৫ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে গণভোট এবং নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) নিয়ে সৃষ্টি হওয়া সংকট সমাধানের ভার রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে সরকার নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত দেবে। গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হওয়া বৈঠক চলে প্রায় ২ ঘণ্টা। পরে বৈঠকের বিষয় নিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি জানান, জুলাই সনদের গুরুত্ব প্রস্তাবে ও গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
সংকট সমাধানে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সহযোগী দলগুলোকে নিজেদের উদ্যোগে বৈঠক করার আহ্বান জানিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। আসিফ নজরুল বলেন, ‘দলগুলোকে স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে (সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যে কোনো সুযোগ নেই, তা-ও আমাদের সবার বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।’
আদেশ কবে জারি হতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছে। তাঁদের কিছু সময় দিতে চায় সরকার। যেসব বিষয় উল্লেখ করেছি, সেগুলোতে তারা আলোচনা করে একমত হতে পারে কি না, আমরা দেখি।’
দলগুলো একমত না হলে সরকার কী করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করব, তারপর অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত (অ্যাক্ট) নেবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার আয়োজন সরকার করে দেবে না কি, এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘সরকারের আয়োজনে বহু আলোচনা হয়েছে। সরকার আর কোনো আয়োজন করতে যাচ্ছে না। ফ্যাসিবাদ- বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো গত ১৫ বছর নিজেরা নিজেরা আলোচনা করে বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁরা অত্যন্ত প্রতিকূল সময়ে একসঙ্গে আন্দোলন করেছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
এখন তাঁরা নিজ উদ্যোগে আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেবেন, এ প্রত্যাশা করছি। আমি কালকেই দেখলাম একটি দলের পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে—আমরা এটাকে স্বাগত জানাই।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ২৭ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে সুপারিশ জমা দেয়। যেখানে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারির কথা বলা হয়। পাশাপাশি সনদ বাস্তবায়নে দুটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গণভোটের আগে সরকার জাতীয় সনদের ভিত্তিতে একটি খসড়া বিল প্রস্তুত করবে, যা গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। ফল ইতিবাচক হলে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা একই সঙ্গে এমপি ও সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁরা প্রথম অধিবেশন থেকে ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করবেন। নির্ধারিত সময় পার হলে বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে বিলের কথা বলা নেই। এক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কার পরিষদকে গাঠনিক ক্ষমতা দেওয়া হয়। তবে তারা প্রথম অধিবেশন শুরুর ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার শেষ করবে এবং এরপর পরিষদের কার্যক্রম শেষ হবে। বাকি ধারাগুলো একই আছে। দুটি প্রস্তাবেই পরিষদের কার্যক্রম শেষ হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে পিআরের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে।
বাস্তবায়নের সুপারিশে নোট অব ডিসেন্ট না থাকায় এর সমালোচনা করছে বিএনপি। দলটি আপত্তির বিষয়টি সনদে যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে আদেশ জারি করতে হবে, দলটি গণভোটের প্রশ্নে ছাড় দিতে চায়।
গত সপ্তাহে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধন করা হয়। সেখানে বলা হয়, জোটভুক্ত দলগুলোকে নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে। বিষয়টিতেও রয়েছে আপত্তি বিএনপির। এটি সংশোধনে দলের পক্ষ থেকে আইন উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। জামায়াত ও এনসিপি জোটভুক্ত দলগুলোকে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করার পক্ষে, যা নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে দেশের রাজনীতিতে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
সংকট সমাধানে গত সপ্তাহ থেকে সরকারের চার উপদেষ্টা বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ একাধিক দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে। সেখানে আলোচনা হয়, পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপি আপত্তি প্রত্যাহার করলেই তারা ভোটের দিন গণভোট মেনে নেবে জামায়াত। এনসিপিও পিআরে উচ্চকক্ষের দাবি করে আসছে। অন্যদিকে বিএনপির দাবি অনুযায়ী, আরপিও সংশোধন করবে সরকার। তবে পিআরে উচ্চকক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছাড়া সনদে থাকা বিএনপির বাকি আপত্তিগুলোর কী হবে, সেটি নিয়ে সমাধান হয়নি। কমিশনের দ্বিতীয় প্রস্তাব অনুযায়ী, ২৭০ দিনের সময়সীমা উঠিয়ে দিয়ে আদেশ জারির পরিকল্পনা সরকার নিয়েছিল। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। আদেশ জারির পর নতুন সংকট সৃষ্টির পথ বন্ধ করতে দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে এক সপ্তাহ সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এক্ষেত্রে দলগুলো একমত না হলে আগামী সপ্তাহে সরকার আদেশ জারি করবে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে গণভোট এবং নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) নিয়ে সৃষ্টি হওয়া সংকট সমাধানের ভার রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে সরকার নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত দেবে। গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হওয়া বৈঠক চলে প্রায় ২ ঘণ্টা। পরে বৈঠকের বিষয় নিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি জানান, জুলাই সনদের গুরুত্ব প্রস্তাবে ও গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
সংকট সমাধানে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সহযোগী দলগুলোকে নিজেদের উদ্যোগে বৈঠক করার আহ্বান জানিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। আসিফ নজরুল বলেন, ‘দলগুলোকে স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে (সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যে কোনো সুযোগ নেই, তা-ও আমাদের সবার বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।’
আদেশ কবে জারি হতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছে। তাঁদের কিছু সময় দিতে চায় সরকার। যেসব বিষয় উল্লেখ করেছি, সেগুলোতে তারা আলোচনা করে একমত হতে পারে কি না, আমরা দেখি।’
দলগুলো একমত না হলে সরকার কী করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করব, তারপর অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত (অ্যাক্ট) নেবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার আয়োজন সরকার করে দেবে না কি, এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘সরকারের আয়োজনে বহু আলোচনা হয়েছে। সরকার আর কোনো আয়োজন করতে যাচ্ছে না। ফ্যাসিবাদ- বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো গত ১৫ বছর নিজেরা নিজেরা আলোচনা করে বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁরা অত্যন্ত প্রতিকূল সময়ে একসঙ্গে আন্দোলন করেছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
এখন তাঁরা নিজ উদ্যোগে আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেবেন, এ প্রত্যাশা করছি। আমি কালকেই দেখলাম একটি দলের পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে—আমরা এটাকে স্বাগত জানাই।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ২৭ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে সুপারিশ জমা দেয়। যেখানে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারির কথা বলা হয়। পাশাপাশি সনদ বাস্তবায়নে দুটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গণভোটের আগে সরকার জাতীয় সনদের ভিত্তিতে একটি খসড়া বিল প্রস্তুত করবে, যা গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। ফল ইতিবাচক হলে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা একই সঙ্গে এমপি ও সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁরা প্রথম অধিবেশন থেকে ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করবেন। নির্ধারিত সময় পার হলে বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে বিলের কথা বলা নেই। এক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কার পরিষদকে গাঠনিক ক্ষমতা দেওয়া হয়। তবে তারা প্রথম অধিবেশন শুরুর ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার শেষ করবে এবং এরপর পরিষদের কার্যক্রম শেষ হবে। বাকি ধারাগুলো একই আছে। দুটি প্রস্তাবেই পরিষদের কার্যক্রম শেষ হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে পিআরের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে।
বাস্তবায়নের সুপারিশে নোট অব ডিসেন্ট না থাকায় এর সমালোচনা করছে বিএনপি। দলটি আপত্তির বিষয়টি সনদে যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে আদেশ জারি করতে হবে, দলটি গণভোটের প্রশ্নে ছাড় দিতে চায়।
গত সপ্তাহে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধন করা হয়। সেখানে বলা হয়, জোটভুক্ত দলগুলোকে নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে। বিষয়টিতেও রয়েছে আপত্তি বিএনপির। এটি সংশোধনে দলের পক্ষ থেকে আইন উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। জামায়াত ও এনসিপি জোটভুক্ত দলগুলোকে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করার পক্ষে, যা নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে দেশের রাজনীতিতে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
সংকট সমাধানে গত সপ্তাহ থেকে সরকারের চার উপদেষ্টা বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ একাধিক দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে। সেখানে আলোচনা হয়, পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপি আপত্তি প্রত্যাহার করলেই তারা ভোটের দিন গণভোট মেনে নেবে জামায়াত। এনসিপিও পিআরে উচ্চকক্ষের দাবি করে আসছে। অন্যদিকে বিএনপির দাবি অনুযায়ী, আরপিও সংশোধন করবে সরকার। তবে পিআরে উচ্চকক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছাড়া সনদে থাকা বিএনপির বাকি আপত্তিগুলোর কী হবে, সেটি নিয়ে সমাধান হয়নি। কমিশনের দ্বিতীয় প্রস্তাব অনুযায়ী, ২৭০ দিনের সময়সীমা উঠিয়ে দিয়ে আদেশ জারির পরিকল্পনা সরকার নিয়েছিল। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। আদেশ জারির পর নতুন সংকট সৃষ্টির পথ বন্ধ করতে দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে এক সপ্তাহ সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এক্ষেত্রে দলগুলো একমত না হলে আগামী সপ্তাহে সরকার আদেশ জারি করবে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্লাসগোতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৬ থেকে ফিরে আজ বুধবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
১৭ নভেম্বর ২০২১
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে সরকার অধ্যাদেশ জারি করেছে। আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ থেকে গতকাল সোমবার অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
৩ ঘণ্টা আগে
আইন মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি ১১ শতাধিক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে পদোন্নতির প্যানেলভুক্ত করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় উঠছে। এ সভায় বিষয়টি অনুমোদিত হলে তা আবারও পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে। এরপর সময়ে সময়ে ওই প্যানেল থেকে পদোন্নতি দেওয়া
৯ ঘণ্টা আগে
প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি, আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানসহ ৩৪ জনের নামে পৃথক পাঁচটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
১৫ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি, আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানসহ ৩৪ জনের নামে পৃথক পাঁচটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মামলার বিষয়টি জানান কমিশনের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধান শেষে গত বৃহস্পতিবার মামলা করার আবেদন করলে কমিশন তা অনুমোদন করে।
দুদকের মহাপরিচালক বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে মামলাগুলো করা হয়।
এই পাঁচ মামলার বাদী হলেন দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন রহমান ও সাজ্জাদ হোসেন, উপসহকারী পরিচালক রোমান উদ্দিন ও এলমান আহম্মদ অনি।
মামলাগুলোতে সালমান এফ রহমান ছাড়াও তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, সালমানের ভাই এ এস এফ রহমান, তাঁর ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানসহ তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ১৮ জন ও রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ১২ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।
অন্য আসামিরা হলেন বেক্সিমকো লিমিটেডের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, এ বি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক, রীম এইচ শামসুদ্দোহা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওসমান কাওসার চৌধুরী, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি আনোয়ারুল বাশার, পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট অ্যাকসেসরিজ লিমিটেডের এমডি আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন, পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার, মোসা. নুসরাত হায়দার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন খান মজলিস, পরিচালক আব্দুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপারেলসের এমডি মাহফুজুর রহমান খান, পরিচালক সৈয়দ তানভীর এলাহী, পিয়ারলেস গার্মেন্টসের এমডি ওয়াসীউর রহমান, পরিচালক রিজিয়া আক্তার।
জনতা ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে তাঁরা হলেন ব্যাংকটির সাবেক এমডি ও সিইও আবদুস ছালাম আজাদ, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, উপমহাব্যবস্থাপক (অব.) মো. আব্দুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. শহিদুল ইসলাম, ডিজিএম (অব.) মো. মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক মো. সালেহ আহমেদ, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (অব.) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম মোহাম্মদ শাজাহান, ব্যবস্থাপক মো. হুমায়ুন কবির ঢালী ও ব্যবস্থাপক শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, পিয়ারলেস গার্মেন্টস ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস ১ কোটি ৮৯ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯ ডলার, কাঁচপুর অ্যাপারেলস ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৪৪ ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ ডলার এবং নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪৬ ডলারসহ মোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ ডলার বা (প্রতি ডলার ৯০ টাকা হারে) ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ৯৪ টাকা জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে ঋণের নামে আত্মসাৎ করে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।
সালমানের বিরুদ্ধে আরও ২০ মামলা হচ্ছে
জনতা ব্যাংক থেকে ঋণের নামে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সালমান এফ রহমানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আরও ২০টি মামলা করা হবে বলে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন।
দুদকের ওই কর্মকর্তা জানান, এসব মামলায় জনতা ব্যাংক থেকে এলসি সুবিধা নেওয়ার নামে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হবে।
মামলাগুলোতে সায়ান ফজলুর রহমান, সোহেল ফশিউর রহমানের (এ এস এফ রহমান), আহমেদ শাহরিয়ার রহমান ও জনতা ব্যাংকের সাবেক এমডি আবদুস ছালামসহ প্রায় ৬০০ জনকে আসামি করা হতে পারে।

প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি, আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানসহ ৩৪ জনের নামে পৃথক পাঁচটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মামলার বিষয়টি জানান কমিশনের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধান শেষে গত বৃহস্পতিবার মামলা করার আবেদন করলে কমিশন তা অনুমোদন করে।
দুদকের মহাপরিচালক বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে মামলাগুলো করা হয়।
এই পাঁচ মামলার বাদী হলেন দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন রহমান ও সাজ্জাদ হোসেন, উপসহকারী পরিচালক রোমান উদ্দিন ও এলমান আহম্মদ অনি।
মামলাগুলোতে সালমান এফ রহমান ছাড়াও তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, সালমানের ভাই এ এস এফ রহমান, তাঁর ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানসহ তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ১৮ জন ও রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ১২ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।
অন্য আসামিরা হলেন বেক্সিমকো লিমিটেডের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, এ বি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক, রীম এইচ শামসুদ্দোহা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওসমান কাওসার চৌধুরী, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি আনোয়ারুল বাশার, পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট অ্যাকসেসরিজ লিমিটেডের এমডি আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন, পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার, মোসা. নুসরাত হায়দার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন খান মজলিস, পরিচালক আব্দুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপারেলসের এমডি মাহফুজুর রহমান খান, পরিচালক সৈয়দ তানভীর এলাহী, পিয়ারলেস গার্মেন্টসের এমডি ওয়াসীউর রহমান, পরিচালক রিজিয়া আক্তার।
জনতা ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে তাঁরা হলেন ব্যাংকটির সাবেক এমডি ও সিইও আবদুস ছালাম আজাদ, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, উপমহাব্যবস্থাপক (অব.) মো. আব্দুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. শহিদুল ইসলাম, ডিজিএম (অব.) মো. মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক মো. সালেহ আহমেদ, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (অব.) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম মোহাম্মদ শাজাহান, ব্যবস্থাপক মো. হুমায়ুন কবির ঢালী ও ব্যবস্থাপক শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, পিয়ারলেস গার্মেন্টস ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস ১ কোটি ৮৯ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯ ডলার, কাঁচপুর অ্যাপারেলস ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৪৪ ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ ডলার এবং নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪৬ ডলারসহ মোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ ডলার বা (প্রতি ডলার ৯০ টাকা হারে) ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ৯৪ টাকা জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে ঋণের নামে আত্মসাৎ করে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।
সালমানের বিরুদ্ধে আরও ২০ মামলা হচ্ছে
জনতা ব্যাংক থেকে ঋণের নামে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সালমান এফ রহমানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আরও ২০টি মামলা করা হবে বলে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন।
দুদকের ওই কর্মকর্তা জানান, এসব মামলায় জনতা ব্যাংক থেকে এলসি সুবিধা নেওয়ার নামে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হবে।
মামলাগুলোতে সায়ান ফজলুর রহমান, সোহেল ফশিউর রহমানের (এ এস এফ রহমান), আহমেদ শাহরিয়ার রহমান ও জনতা ব্যাংকের সাবেক এমডি আবদুস ছালামসহ প্রায় ৬০০ জনকে আসামি করা হতে পারে।

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্লাসগোতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৬ থেকে ফিরে আজ বুধবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
১৭ নভেম্বর ২০২১
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে সরকার অধ্যাদেশ জারি করেছে। আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ থেকে গতকাল সোমবার অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
৩ ঘণ্টা আগে
আইন মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি ১১ শতাধিক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে পদোন্নতির প্যানেলভুক্ত করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় উঠছে। এ সভায় বিষয়টি অনুমোদিত হলে তা আবারও পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে। এরপর সময়ে সময়ে ওই প্যানেল থেকে পদোন্নতি দেওয়া
৯ ঘণ্টা আগে
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে গণভোট এবং নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) নিয়ে সৃষ্টি হওয়া সংকট সমাধানের ভার রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে সরকার নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত দেবে। গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউ
১০ ঘণ্টা আগে