শিমুল খালেদ

সকালবেলার চন্দ্রঘোনা। কুয়াশার আচ্ছাদন থেকে চারপাশ আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠতে শুরু করেছে কেবল। রাঙ্গুনিয়া লিচুবাগান হয়ে আমরা যখন চন্দ্রঘোনা বাজারে পৌঁছাই, বেলা বাড়ার সঙ্গে মফস্বল শহরটিও ব্যস্ত হয়ে উঠছে। দূর পাহাড়ের জুমে ফলানো আনারস এক জায়গায় স্তূপ করে রাখা; গায়ের চাদর একপাশে রেখে মিঠে রোদ গায়ে মাখতে মাখতে মধ্যবয়সী বিক্রেতা বেতের মোড়া পেতে বসেছেন। ধাতব শব্দ তুলে দোকানের শাটার একটা-দুটো করে উঠতে শুরু করেছে।
দীর্ঘ ভ্রমণের পর আড়ষ্ট হয়ে থাকা শরীর এক-আধটু কসরতের জন্য মুখিয়ে ছিল। তবে সেই আশায় গুঁড়েবালি। সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের তাড়া—তড়িঘড়ি ওঠে পড়তে হবে। তিন চাকায় চড়িয়ে নিয়ে যাবে আমাদের গন্তব্যস্থল কাপ্তাইয়ে, কর্ণফুলী নদীর তীরসংলগ্ন ক্যাম্পসাইটে। সারা রাত সিলেট-চট্টগ্রাম ট্রেন ভ্রমণের পর ভোরবেলায় বাস, অতঃপর অটোরিকশায় প্রায় ষোলো ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রা শেষ হচ্ছে। রাঙামাটিতে এটা আমার প্রথম ভ্রমণ এবং এই আসাটাও হুটহাট করেই।
সপ্তাহের মাঝামাঝি এক সকালবেলার কথা। সেদিন সকাল সকাল অচেনা নম্বর থেকে ফোনে একটা এসএমএস আসে। আমেরিকাপ্রবাসী বন্ধু রাফাত আনসারী সেটি পাঠিয়েছে। মেসেজের সারমর্ম, সে দুই দিন আগে দেশে ছুটিতে এসেছে এবং সপ্তাহের শেষ দিকে কয়েকজন মিলে রাঙামাটি বেড়াতে যাচ্ছে। আমাকেও সেই দলের সদস্য ধরে নিয়ে ইতিমধ্যে ট্রেনের টিকিটও কেটে ফেলেছে। আমি যেন অমত না করি!
পাহাড়ের গা পেঁচিয়ে ফিতার মতো চলে যাওয়া পিচঢালা পথ ধরে ছোট বাহনজোড়া চলতে থাকল। মাঝে মাঝে একটা-দুটো সিঁড়িপথ চোখে পড়ল, মূল পথ থেকে ওপরের দিকে উঠে গেছে, পাহাড়ের চূড়ায় বাংলো আকৃতির একটা-দুটো কুটির। যেতে যেতে পথের দুপাশ ঘন সবুজ হয়ে ওঠে। বনানীর চেহারাও পাল্টায়। পাহাড়জুড়ে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা বনের ঠাসবুনোট, বনতলে লতাগুল্ম কন্দজাতীয় উদ্ভিদের আচ্ছাদন। আন্দাজ করি, কাপ্তাইয়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমায় চলে এসেছি। পথের ধারে সাঁটানো সাইনবোর্ড দেখে নিশ্চিত হলাম কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান হয়েই যাচ্ছি।
অরণ্যের বুনো স্পর্শ মেখে চোখেমুখে আছড়ে পড়ছে পৌষের বাতাস। গন্তব্যস্থল কাপ্তাই প্রশান্তি পার্কের ফটকের সামনে ইতিমধ্যে এসে পড়েছি। ঘড়ির কাঁটা বলছে, সবে দুপুর হতে চলেছে। আমরা এসেছি ক্যাম্পিং ট্যুরে। তাই আপাতত বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সবার ব্যাগ-ব্যাগেজ রাখার জন্য একটা রুম পাওয়া গেল। সেখানে ব্যাগপত্র রেখে ছাউনিতে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে চলে গেলাম নদীর একদম তীরে।
খরস্রোতা কর্ণফুলীর কলকল স্রোত বয়ে চলেছে জীবনের উচ্ছ্বাসে। নদীর একদম পাশ ঘেঁষে পার্ক কর্তৃপক্ষের বানানো একটা মাচাঘর। ওপরে শণ ও বেত, মেঝে মুলিবাঁশ দিয়ে তৈরি। ক্লান্ত শরীর নিয়ে সাত-পাঁচ না ভেবেই মাচার মেঝেতে শুয়ে পড়ি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দল ভারী করতে যোগ দেয় রাফাত ও রুবেল। শীত ঋতুর শান্ত সৌম্য কর্ণফুলী। উজ্জ্বল সূর্যালোকে ঝলমল করছে ছোট ছোট ঢেউ কিংবা অল্পস্বল্প নড়াচড়া।
নদী পেরিয়ে ওই পাশে শিলাপাথরের পাহাড়, তার গায়ে ঘন পাহাড়ি বন। দীর্ঘ ভ্রমণের পর গা এলানোর সুযোগ পেয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে, শীতে দুপুরের ফুরফুরে শীতল হাওয়া গায়ে মেখে কতক্ষণ শুয়ে ছিলাম ঠিক জানি না। বছর ষোলোর ছিপছিপে গড়নের এক কিশোরের গলার আওয়াজে সংবিৎ ফিরল। ঘাটে কায়াক প্রস্তুত; আমাদের কায়াকিংয়ের সময় হয়ে গেছে। মরা ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শুকনো একটি গাছের নিচে অপেক্ষমাণ রংবেরঙের কয়েকটি কায়াক। চারটি নৌকার প্রতিটিতে দুজন করে ভাগ হয়ে আমরা আটজন চেপে কর্ণফুলীর টলমলে জলে নেমে পড়ি।
একদম প্রথম বোটের সামনের সিটে আমি, পেছনের সিটে সঙ্গী সুমন। বোটগুলোর প্রতিটির জন্য একটা করেই বইঠা বরাদ্দ। দুপাশে পাখা লাগানো বইঠা ঠেলতে ঠেলতে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছিল। এ এক আজব জলতরি, যেটার পেটের ভেতরে ঢুকলে অর্ধেক শরীর ঢুকে যায় আন্ডারওয়াটার বা পানির তলায়! বেশ রোমাঞ্চ লাগছিল। পানিতে বইঠার চাপে কায়াক ছুটতে থাকে। ভাটি ধরে যেতে যেতে আমরা দেখতে থাকি নদীতীরের দিনযাপন। পানিতে হাপুস-হুপুস করছিল ছেলেপুলেদের একটা দল। আরেকটু সামনে যেতেই দেখলাম ছোট জাল নদী থেকে তুলে তা থেকে মাছ ধরে খলুইতে রাখছেন এক জেলে দম্পতি।
বইঠা বাইতে বাইতে খেয়াল করলাম, নদীর ঠিক মাঝামাঝি চলে এসেছি। আর সেখান থেকে চোখের সামনে দৃশ্যমান হয় মনোমুগ্ধকর এক দৃশ্যপট। নদীর মাঝ বরাবর পানির সমতলের দেড়-দুই ফুট ওপর থেকে সামনে তাকালে ভাটির পানে বয়ে যাওয়া জলস্রোত পেরিয়ে দুই পাড়জুড়ে ঘন অরণ্যঢাকা পাহাড়শ্রেণি। নদীর গা ঘেঁষা সেই পাহাড় পেরিয়ে পেছনে উঁকি দিচ্ছে আরও উঁচু পাহাড়। তারপর আরও উঁচু পাহাড় স্তর। অপূর্ব সেই দৃশ্য!
সীতা পাহাড় আর রাম পাহাড় নামের এই পাহাড়ের মধ্য দিয়েই খরস্রোতা কর্ণফুলী প্রবাহিত হয়েছে। কর্ণফুলীর উচ্ছল স্রোতোধারা আর চারপাশের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট জন্ম দিয়েছে না জানি কত শত ছন্দ আর কবিতার! প্রেমের কবি নজরুল তাই তো কর্ণফুলীকে ভালোবেসে লিখেছিলেন, ‘তোমার সলিলে পড়েছিল কবে কার কানফুল খুলি, তোমার স্রোতের উজান ঠেলিয়া কোন তরুণী কে জানে, সাম্পান নায়ে ফিরেছিল তার-দয়িতের সন্ধানে, আনমনে তার খুলে গেল খোঁপা, কানফুল গেল খুলি, সে ফুল যতনে পরিয়া কর্ণে হলে কি কর্ণফুলী?’
কর্ণফুলী নদীর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে নানা কাহিনি শোনা যায়। তবে সবচেয়ে প্রচলিত গল্পটি হচ্ছে—আরাকানের এক রাজকন্যা চট্টগ্রামের এক রাজপুত্রের প্রেমে পড়ে। এক জ্যোৎস্না রাতে তারা দুজন এই নদীতে নৌভ্রমণ উপভোগ করছিল। নদীর পানিতে চাঁদের প্রতিফলন দেখার সময় রাজকন্যার কানে গোঁজা একটি ফুল পানিতে পড়ে যায়। ফুলটি হারিয়ে কাতর রাজকন্যা সেটি উদ্ধারের জন্য পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু প্রবল স্রোতে রাজকন্যা ভেসে যায়, তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
রাজপুত্র রাজকন্যাকে বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপ দেয়, কিন্তু সফল হয়নি। প্রিয়তমার শোকে রাজপুত্র পানিতে ডুবে আত্মাহুতি দেয়। করুণ এই কাহিনি থেকেই নদীটির নাম হয় কর্ণফুলী। মারমা জনগোষ্ঠীর কাছে এর নাম কিনসা খিয়ং। উজানে সীমান্তের ওপারে মিজোরামে কর্ণফুলীকে ডাকা হয় খাওৎলাং তুইপুই নামে।
বইঠা থামিয়ে মাঝ নদীতে থেমে ভরদুপুরের মৌনতা কিছুক্ষণ উপভোগ করে তারপর কায়াকের মাথা নদীর অপর পাশ অভিমুখে ঘুরালাম। সেখানে কয়েকজন জেলে পাথুরে পাহাড়ের দেয়াল ঘেঁষে নৌকা নিয়ে একদম স্থির বসে ছিল। চোখে শ্যেনদৃষ্টি; নিবদ্ধ নদীর পানির দিকে। যেন স্রোতের ভেতরে কোনো বিশেষ নড়াচড়ার অপেক্ষায়। পাহাড়ের পাথুরে শিলা উপরিভাগে যতটা দৃশ্যমান হয়; তার চেয়েও নদীর তলদেশে লুকিয়ে থাকা অংশ খুব একটা কম নয়। জেলেদের সঙ্গে আলাপে জানলাম, নদীর এই অংশে গভীরতা ৩৫-৪০ ফুটের মতো।
খেয়াল করলাম, নদীর অপরাপর দিকে পানি বাতাসে মৃদু ঢেউ খেলানো থাকলেও এখানে একদম স্থির। উজান থেকে নেমে আসা স্রোতে পাথুরে দেয়ালে বাধা পেয়ে ঘূর্ণিপাক খাচ্ছিল। লাইফ জ্যাকেট পরা থাকলেও সঙ্গী সুমন সাঁতার জানেন না। তাই সেখান থেকে তড়িঘড়ি করে এপাশে ঘাটের দিকে চলে আসি। কায়াক পর্ব শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর লাঞ্চের ডাক পড়ে। পরের গন্তব্য কাপ্তাই হ্রদ।
পার্কের ফটক থেকে কাপ্তাই সদর অভিমুখে চলে যাওয়া পথের পুরোটাই ক্রমশ ওপরের দিকে উঠে গেছে। এক পাশে সংরক্ষিত পাহাড়ি বনভূমি, অপর পাশে বেশ নিচে কর্ণফুলী। কাপ্তাই সদরে বাহন থেকে মাটিতে পা ফেলার আগেই চোখে পড়ল কাপ্তাই হ্রদের অবারিত জলরাশি। নৌকাঘাট সামনেই। ডানের রাস্তাটি চলে গেছে জলবিদ্যুৎ বাঁধের দিকে। বাহন থেকে নেমে প্রথমেই কানে এল মধ্যবয়সী এক নারীকণ্ঠ—মামা, লেকে ঘুরবেন, সাম্পান দিয়া?
ঘাটে গিয়ে দরদাম শেষে আটজনের দলের জন্য একটা জুতসই লঞ্চ নেওয়া হলো। লঞ্চের চালকই গাইড। কাপ্তাই হ্রদের জলরাশিতে আলোড়ন তুলে ছুটে চলল জলযান। দূরে এক-দুটো সাম্পান নৌকা ভাসতে দেখলাম। নৌকার দুপাশে একজোড়া বইঠা। বইঠা দুটো গলুইয়ের দুপাশ থেকে উঠে গিয়ে তার হাতল একসঙ্গে বাঁধা হয়েছে কোমরসমান উঁচুতে। মাঝিকে তাই দাঁড়িয়ে ঠেলতে হচ্ছিল বইঠাযুগল। ছোট নৌকা, তাই দুজন করেই যাত্রী দেখলাম। লঞ্চ আস্তে আস্তে হ্রদের গভীরের দিকে যাচ্ছে আর আমরা যেন ক্রমশ ঢুকে যাচ্ছি নীলাভ কোনো রাজ্যপাটে!
হ্রদের নীল জল যেন সুনয়নার নীলচক্ষু! জলরাশির মাঝে সবুজ দ্বীপের মতো জেগে আছে একেকটা টিলা। টিলাগুলোর বেশির ভাগেই জনবসতি নেই। নীল আর সবুজ মিলেমিশে দৃষ্টিতে মুগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দিতে থাকল। ভাসতে ভাসতে অন্য নৌকায় যাত্রী হওয়া পাহাড়ের স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় হয়। দূরে, বহু দূরে আবছা অবয়বে কয়েক স্তরের পাহাড়শ্রেণি। মাঝি বলল, পাহাড়ের ওই গহিনে মিজোরাম সীমান্ত। আরও কিছুক্ষণ হ্রদে ভাসার পর একটি টিলার পাশে লঞ্চ নোঙর করা হলো।
একটা বয়সী পাকুড়গাছ দাঁড়িয়ে আছে পাকা সিঁড়ি বাঁধানো ঘাটে। টিলার ওপর একটা বাজার। নেমে পা বাড়াই সেদিকে। বাজারটির ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই চাকমা। ছোট ছোট দোকান। বয়সী কয়েকজন প্রৌঢ় এক জায়গায় জটলা বেঁধে গল্প জুড়ে দিয়েছেন। কথা চলছিল তাঁদের মাতৃভাষায়। টিলার ওপর বাজারের শেষ মাথায় অল্পনা চাকমা দিদির ছোট্ট খাবারের দোকান। কড়াইয়ের গরম তেলে পিঠা ভাজা হচ্ছিল। নারকেলের টুকরো আর গুড়ের সঙ্গে ময়দার মিশ্রণে বানানো লালচে রঙের সেই পিঠার স্বাদ মুখে লেগে আছে এখনো।
রাঙামাটির মগবান ইউনিয়নে পড়েছে এই বাজার। নাম নতুন বাজার। টিলার অন্য পাশে চাকমাদের পাড়াটার নাম দোখাইয়াপাড়া। দোকানগুলোর টিনের দেয়ালে সাঁটানো নির্বাচনী পোস্টার। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলছিল তখন। হ্রদে নৌকায় করে মাইকে চলছিল প্রার্থীদের প্রচার। এ রকম এক মাইক থেকে কানে আসে, ‘পাহাড়ি বাঙালি ভাই ভাই, আনারস মার্কায় ভোট চাই’। নৌকায় ফিরে আরও কিছুক্ষণ নৌযাত্রার পর আমরা প্রবেশ করলাম জীবনতলী ইউনিয়নে। বিকেল গড়াচ্ছে, রোদও মিঠে মিঠে হচ্ছে। মাঝি এবার নোঙর করল এক বৌদ্ধবিহারের টিলার পাদদেশে।
টিলার চূড়ায় সোনালি রঙের বুদ্ধমূর্তি। বেশ দূর থেকেও স্পষ্ট চোখে পড়ে। টিলার সিঁড়ি বেয়ে আমরা ওপরে উঠে এলাম। বৌদ্ধমন্দিরে পুণ্যার্থীদের ভিড়। প্রার্থনাকক্ষের ভেতরে মৃদু আলোয় যেন অন্যরকম আবহ! ফুরফুরে বাতাস উঠে আসছে হ্রদ থেকে। ধনপাতা বনবিহার থেকে নৌকায় ফিরে এলাম আমরা; মাঝিও আবার নোঙর তুললেন।
কাপ্তাই হ্রদ এবার সেজেছে অন্যরকম চেহারায়। সূর্য পাটে যাচ্ছে। গোধূলির সোনা রঙে নৈসর্গিক মুগ্ধতায় সেজেছে পুরো হ্রদ। চারপাশজুড়ে অপূর্ব এক নীরবতা। অনুভব করতে জানলে মৌনতারও প্রগাঢ় কোনো ভাষা থাকে! ফুরোমন পাহাড়ের রাজ্যপাটে পৌষের শীতলতা ভর করতে শুরু করেছে। সন্ধ্যার ছাই রং আস্তে আস্তে চারপাশের সোনালি জলরাশির ওপর আঁধারের চাদর ফেলে ঢেকে দিচ্ছে। কাপ্তাই নৌকাঘাটে ফেরার আগেই গ্রাস করল ঘুটঘুটে অন্ধকার।
ঘাটে নেমে সেখানের এক টংদোকানে চায়ের পর্ব সেরে ফিরে এলাম আস্তানায়। ক্যাম্পসাইটে তাঁবু বসানো হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। রাতের খাবারের ডাক পড়ল একটু আগেভাগেই। উদরপূর্তির পর তাঁবুতে ফিরে টের পেলাম হাড় কাঁপানো ঠান্ডা চেপে ধরছে। শীতে কাঁপতে কাঁপতে নদীর পাড়ে বসে কিছুক্ষণ চলল আড্ডা-গল্প। কিছু ফানুস আমরা সঙ্গে করে নিয়েছিলাম। সেগুলো ওড়াতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হলো। নদী থেকে আসা বাতাসের দাপটে দেশলাইয়ের কাঠিতে আগুন জ্বালানো যাচ্ছিল না। কয়েকবারের প্রচেষ্টার পর ওড়ানো গেল। রঙিন কাপড়ের ভেতরে আলোর প্রদীপ জ্বলতে জ্বলতে ওপরে উঠে যেতে থাকে। ঘাড় পেছনে বাঁকিয়ে একটানা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় তারাদের ভিড়ে কোনটা ফানুস সেটা আর ঠাহর করতে পারলাম না।
রাত বাড়ছে; ক্যাম্পিংয়ে আসা প্রায় সবাই ইতিমধ্যে ঢুকে পড়েছে যার যার তাঁবুতে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে গেছে নদীর অন্য পাশের ঘন বন। বন্যপ্রাণীবিষয়ক এক লেখকের বয়ানে জেনেছিলাম, কাপ্তাইয়ের ওই পাহাড়ি বনভূমিতে বসবাস করে বিড়াল গোত্রের সুন্দরতম এক সদস্য ক্লাউডেড লেপার্ড বা মেঘলা চিতা। স্থানীয়রা যাকে ডাকে লতা বাঘ বা গেছোবাঘ নামে। সারা দিন কোনো গাছের ডালে অলস শুয়ে থেকে নিশ্চয় তার সময় হয়েছে শিকারের সন্ধানে বের হওয়ার! নদীপাড়ের পাথরের চাতালে থাবার শক্ত নখে ভারসাম্য রক্ষা করে সামনে ঝুঁকে তৃষ্ণা মেটাতে মেটাতে দেখছে কি অন্য পাড়ের মনুষ্য ক্রিয়াকলাপ?
তাঁবুতে ঢুকে পড়ার পর শীত যেন আরও জেঁকে বসল। নদী থেকে ধেয়ে আসা বাতাসের সঙ্গে হাড় কাঁপানো শীত; দাঁতে দাঁত বাড়ি লাগছিল যেন। বেড হিসেবে প্রতিটি তাঁবুর মেঝেতে দেওয়া হয়েছে দুই ফালি ককশিট। নিচ থেকে ওঠা ঠান্ডা আটকানোর জন্য তা যথেষ্ট না হওয়ায় রাফাত তাঁবু থেকে বের হয়ে কোত্থেকে জানি আরও দুই ফালি ককশিট নিয়ে এল। এবার বেডটা মোটামুটি আরামদায়ক হয়ে উঠল। ঝিম ধরে থাকা শীতের রাতে নিস্তব্ধতা ছাপিয়ে কানে আসছিল ফোঁটা ফোঁটা কুয়াশা দলা বেঁধে তাঁবুর গায়ে আছড়ে পড়ার শব্দ। দূর থেকে থেমে থেমে কানে আসছিল একপাল শেয়ালের হুক্কাহুয়া।
ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে রাত কাটানোর পর ঘুম ভাঙল বেশ ভোরে। তাঁবুর চেইন খুলে বাইরে বেরিয়ে দেখি ইতিমধ্যে দলের অনেকেই উঠে পড়েছে। ভোরের কর্ণফুলী সবে আড়মোড়া ভাঙছে। কুয়াশার দঙ্গল সারা রাত নদীর ওপর ঘাপটি মেরে বসে থাকার পর আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। নদীর শান্ত জলে ছুঁয়ে ছুঁয়ে কুয়াশার অস্থির ছুটে চলার সঙ্গে যোগ দেয় একট-দুটো পানকৌড়ি। নদীর ওপর পাশের বনের চেহারাও হয়ে গেছে কুয়াশাময়।
জেলেরা তাঁদের নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন সেই ভোরেই। কোনোটা ছইওয়ালা, আবার কোনোটা খোলা ছোট নৌকা। হাড় কাঁপানো এমন শীতও যেন তাঁদের থোড়াই কেয়ার! আগের দিন কায়াকিংয়ের সময় জেলেদের কাছে জেনেছিলাম, নদীর অপর পাশের পাথুরে পাহাড়ের খাড়ির অংশ বেশি গভীর। ক্যাটফিশ গোত্রীয় মাছের আবাসস্থল সেই পাথুরে তলদেশে। আর পুরো নদীতেই চলাফেরা করে কার্পজাতীয় মাছ। এসব নিয়ে যখন ভাবছিলাম, হঠাৎই একটা বড়সড় মাছের ঘাই নদীর মাঝ বরাবর আলোড়ন তুলল! শান্ত পানিতে তৈরি হওয়া ঢেউয়ের গোলাকার বলয় চারপাশে প্রসারিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ল মিলিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
ক্যাম্পসাইট থেকে ফিরে নাশতার জন্য রেস্তোরাঁয় ডাক পড়ল। ডিম ভুনার সঙ্গে গরম-গরম খিচুড়িতে পেট পুরে নাশতা সেরে ঝটপট গোছগাছ সেরে বেরিয়ে পড়তে হলো। আমাদের পরের গন্তব্য রাঙামাটি শহর। কাপ্তাই হ্রদের পাশজুড়ে শৈল্পিক রেখা টেনে চলে গেছে যে পাহাড়শ্রেণি, তার ওপর দিয়ে চলে যাওয়া চড়াই-উতরাই পথ ধরে আমরা যাব। বাহনে চেপে বসার আগে ঘাড় ফিরিয়ে আরেকবার কর্ণফুলীর দিকে চোখ রেখে অস্ফুটে বললাম, ভালো থেকো কাপ্তাই; আবার দেখা হবে নিশ্চয়!
লেখক: ব্যাংক কর্মকর্তা

সকালবেলার চন্দ্রঘোনা। কুয়াশার আচ্ছাদন থেকে চারপাশ আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠতে শুরু করেছে কেবল। রাঙ্গুনিয়া লিচুবাগান হয়ে আমরা যখন চন্দ্রঘোনা বাজারে পৌঁছাই, বেলা বাড়ার সঙ্গে মফস্বল শহরটিও ব্যস্ত হয়ে উঠছে। দূর পাহাড়ের জুমে ফলানো আনারস এক জায়গায় স্তূপ করে রাখা; গায়ের চাদর একপাশে রেখে মিঠে রোদ গায়ে মাখতে মাখতে মধ্যবয়সী বিক্রেতা বেতের মোড়া পেতে বসেছেন। ধাতব শব্দ তুলে দোকানের শাটার একটা-দুটো করে উঠতে শুরু করেছে।
দীর্ঘ ভ্রমণের পর আড়ষ্ট হয়ে থাকা শরীর এক-আধটু কসরতের জন্য মুখিয়ে ছিল। তবে সেই আশায় গুঁড়েবালি। সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের তাড়া—তড়িঘড়ি ওঠে পড়তে হবে। তিন চাকায় চড়িয়ে নিয়ে যাবে আমাদের গন্তব্যস্থল কাপ্তাইয়ে, কর্ণফুলী নদীর তীরসংলগ্ন ক্যাম্পসাইটে। সারা রাত সিলেট-চট্টগ্রাম ট্রেন ভ্রমণের পর ভোরবেলায় বাস, অতঃপর অটোরিকশায় প্রায় ষোলো ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রা শেষ হচ্ছে। রাঙামাটিতে এটা আমার প্রথম ভ্রমণ এবং এই আসাটাও হুটহাট করেই।
সপ্তাহের মাঝামাঝি এক সকালবেলার কথা। সেদিন সকাল সকাল অচেনা নম্বর থেকে ফোনে একটা এসএমএস আসে। আমেরিকাপ্রবাসী বন্ধু রাফাত আনসারী সেটি পাঠিয়েছে। মেসেজের সারমর্ম, সে দুই দিন আগে দেশে ছুটিতে এসেছে এবং সপ্তাহের শেষ দিকে কয়েকজন মিলে রাঙামাটি বেড়াতে যাচ্ছে। আমাকেও সেই দলের সদস্য ধরে নিয়ে ইতিমধ্যে ট্রেনের টিকিটও কেটে ফেলেছে। আমি যেন অমত না করি!
পাহাড়ের গা পেঁচিয়ে ফিতার মতো চলে যাওয়া পিচঢালা পথ ধরে ছোট বাহনজোড়া চলতে থাকল। মাঝে মাঝে একটা-দুটো সিঁড়িপথ চোখে পড়ল, মূল পথ থেকে ওপরের দিকে উঠে গেছে, পাহাড়ের চূড়ায় বাংলো আকৃতির একটা-দুটো কুটির। যেতে যেতে পথের দুপাশ ঘন সবুজ হয়ে ওঠে। বনানীর চেহারাও পাল্টায়। পাহাড়জুড়ে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা বনের ঠাসবুনোট, বনতলে লতাগুল্ম কন্দজাতীয় উদ্ভিদের আচ্ছাদন। আন্দাজ করি, কাপ্তাইয়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমায় চলে এসেছি। পথের ধারে সাঁটানো সাইনবোর্ড দেখে নিশ্চিত হলাম কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান হয়েই যাচ্ছি।
অরণ্যের বুনো স্পর্শ মেখে চোখেমুখে আছড়ে পড়ছে পৌষের বাতাস। গন্তব্যস্থল কাপ্তাই প্রশান্তি পার্কের ফটকের সামনে ইতিমধ্যে এসে পড়েছি। ঘড়ির কাঁটা বলছে, সবে দুপুর হতে চলেছে। আমরা এসেছি ক্যাম্পিং ট্যুরে। তাই আপাতত বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সবার ব্যাগ-ব্যাগেজ রাখার জন্য একটা রুম পাওয়া গেল। সেখানে ব্যাগপত্র রেখে ছাউনিতে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে চলে গেলাম নদীর একদম তীরে।
খরস্রোতা কর্ণফুলীর কলকল স্রোত বয়ে চলেছে জীবনের উচ্ছ্বাসে। নদীর একদম পাশ ঘেঁষে পার্ক কর্তৃপক্ষের বানানো একটা মাচাঘর। ওপরে শণ ও বেত, মেঝে মুলিবাঁশ দিয়ে তৈরি। ক্লান্ত শরীর নিয়ে সাত-পাঁচ না ভেবেই মাচার মেঝেতে শুয়ে পড়ি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দল ভারী করতে যোগ দেয় রাফাত ও রুবেল। শীত ঋতুর শান্ত সৌম্য কর্ণফুলী। উজ্জ্বল সূর্যালোকে ঝলমল করছে ছোট ছোট ঢেউ কিংবা অল্পস্বল্প নড়াচড়া।
নদী পেরিয়ে ওই পাশে শিলাপাথরের পাহাড়, তার গায়ে ঘন পাহাড়ি বন। দীর্ঘ ভ্রমণের পর গা এলানোর সুযোগ পেয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে, শীতে দুপুরের ফুরফুরে শীতল হাওয়া গায়ে মেখে কতক্ষণ শুয়ে ছিলাম ঠিক জানি না। বছর ষোলোর ছিপছিপে গড়নের এক কিশোরের গলার আওয়াজে সংবিৎ ফিরল। ঘাটে কায়াক প্রস্তুত; আমাদের কায়াকিংয়ের সময় হয়ে গেছে। মরা ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শুকনো একটি গাছের নিচে অপেক্ষমাণ রংবেরঙের কয়েকটি কায়াক। চারটি নৌকার প্রতিটিতে দুজন করে ভাগ হয়ে আমরা আটজন চেপে কর্ণফুলীর টলমলে জলে নেমে পড়ি।
একদম প্রথম বোটের সামনের সিটে আমি, পেছনের সিটে সঙ্গী সুমন। বোটগুলোর প্রতিটির জন্য একটা করেই বইঠা বরাদ্দ। দুপাশে পাখা লাগানো বইঠা ঠেলতে ঠেলতে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছিল। এ এক আজব জলতরি, যেটার পেটের ভেতরে ঢুকলে অর্ধেক শরীর ঢুকে যায় আন্ডারওয়াটার বা পানির তলায়! বেশ রোমাঞ্চ লাগছিল। পানিতে বইঠার চাপে কায়াক ছুটতে থাকে। ভাটি ধরে যেতে যেতে আমরা দেখতে থাকি নদীতীরের দিনযাপন। পানিতে হাপুস-হুপুস করছিল ছেলেপুলেদের একটা দল। আরেকটু সামনে যেতেই দেখলাম ছোট জাল নদী থেকে তুলে তা থেকে মাছ ধরে খলুইতে রাখছেন এক জেলে দম্পতি।
বইঠা বাইতে বাইতে খেয়াল করলাম, নদীর ঠিক মাঝামাঝি চলে এসেছি। আর সেখান থেকে চোখের সামনে দৃশ্যমান হয় মনোমুগ্ধকর এক দৃশ্যপট। নদীর মাঝ বরাবর পানির সমতলের দেড়-দুই ফুট ওপর থেকে সামনে তাকালে ভাটির পানে বয়ে যাওয়া জলস্রোত পেরিয়ে দুই পাড়জুড়ে ঘন অরণ্যঢাকা পাহাড়শ্রেণি। নদীর গা ঘেঁষা সেই পাহাড় পেরিয়ে পেছনে উঁকি দিচ্ছে আরও উঁচু পাহাড়। তারপর আরও উঁচু পাহাড় স্তর। অপূর্ব সেই দৃশ্য!
সীতা পাহাড় আর রাম পাহাড় নামের এই পাহাড়ের মধ্য দিয়েই খরস্রোতা কর্ণফুলী প্রবাহিত হয়েছে। কর্ণফুলীর উচ্ছল স্রোতোধারা আর চারপাশের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট জন্ম দিয়েছে না জানি কত শত ছন্দ আর কবিতার! প্রেমের কবি নজরুল তাই তো কর্ণফুলীকে ভালোবেসে লিখেছিলেন, ‘তোমার সলিলে পড়েছিল কবে কার কানফুল খুলি, তোমার স্রোতের উজান ঠেলিয়া কোন তরুণী কে জানে, সাম্পান নায়ে ফিরেছিল তার-দয়িতের সন্ধানে, আনমনে তার খুলে গেল খোঁপা, কানফুল গেল খুলি, সে ফুল যতনে পরিয়া কর্ণে হলে কি কর্ণফুলী?’
কর্ণফুলী নদীর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে নানা কাহিনি শোনা যায়। তবে সবচেয়ে প্রচলিত গল্পটি হচ্ছে—আরাকানের এক রাজকন্যা চট্টগ্রামের এক রাজপুত্রের প্রেমে পড়ে। এক জ্যোৎস্না রাতে তারা দুজন এই নদীতে নৌভ্রমণ উপভোগ করছিল। নদীর পানিতে চাঁদের প্রতিফলন দেখার সময় রাজকন্যার কানে গোঁজা একটি ফুল পানিতে পড়ে যায়। ফুলটি হারিয়ে কাতর রাজকন্যা সেটি উদ্ধারের জন্য পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু প্রবল স্রোতে রাজকন্যা ভেসে যায়, তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
রাজপুত্র রাজকন্যাকে বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপ দেয়, কিন্তু সফল হয়নি। প্রিয়তমার শোকে রাজপুত্র পানিতে ডুবে আত্মাহুতি দেয়। করুণ এই কাহিনি থেকেই নদীটির নাম হয় কর্ণফুলী। মারমা জনগোষ্ঠীর কাছে এর নাম কিনসা খিয়ং। উজানে সীমান্তের ওপারে মিজোরামে কর্ণফুলীকে ডাকা হয় খাওৎলাং তুইপুই নামে।
বইঠা থামিয়ে মাঝ নদীতে থেমে ভরদুপুরের মৌনতা কিছুক্ষণ উপভোগ করে তারপর কায়াকের মাথা নদীর অপর পাশ অভিমুখে ঘুরালাম। সেখানে কয়েকজন জেলে পাথুরে পাহাড়ের দেয়াল ঘেঁষে নৌকা নিয়ে একদম স্থির বসে ছিল। চোখে শ্যেনদৃষ্টি; নিবদ্ধ নদীর পানির দিকে। যেন স্রোতের ভেতরে কোনো বিশেষ নড়াচড়ার অপেক্ষায়। পাহাড়ের পাথুরে শিলা উপরিভাগে যতটা দৃশ্যমান হয়; তার চেয়েও নদীর তলদেশে লুকিয়ে থাকা অংশ খুব একটা কম নয়। জেলেদের সঙ্গে আলাপে জানলাম, নদীর এই অংশে গভীরতা ৩৫-৪০ ফুটের মতো।
খেয়াল করলাম, নদীর অপরাপর দিকে পানি বাতাসে মৃদু ঢেউ খেলানো থাকলেও এখানে একদম স্থির। উজান থেকে নেমে আসা স্রোতে পাথুরে দেয়ালে বাধা পেয়ে ঘূর্ণিপাক খাচ্ছিল। লাইফ জ্যাকেট পরা থাকলেও সঙ্গী সুমন সাঁতার জানেন না। তাই সেখান থেকে তড়িঘড়ি করে এপাশে ঘাটের দিকে চলে আসি। কায়াক পর্ব শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর লাঞ্চের ডাক পড়ে। পরের গন্তব্য কাপ্তাই হ্রদ।
পার্কের ফটক থেকে কাপ্তাই সদর অভিমুখে চলে যাওয়া পথের পুরোটাই ক্রমশ ওপরের দিকে উঠে গেছে। এক পাশে সংরক্ষিত পাহাড়ি বনভূমি, অপর পাশে বেশ নিচে কর্ণফুলী। কাপ্তাই সদরে বাহন থেকে মাটিতে পা ফেলার আগেই চোখে পড়ল কাপ্তাই হ্রদের অবারিত জলরাশি। নৌকাঘাট সামনেই। ডানের রাস্তাটি চলে গেছে জলবিদ্যুৎ বাঁধের দিকে। বাহন থেকে নেমে প্রথমেই কানে এল মধ্যবয়সী এক নারীকণ্ঠ—মামা, লেকে ঘুরবেন, সাম্পান দিয়া?
ঘাটে গিয়ে দরদাম শেষে আটজনের দলের জন্য একটা জুতসই লঞ্চ নেওয়া হলো। লঞ্চের চালকই গাইড। কাপ্তাই হ্রদের জলরাশিতে আলোড়ন তুলে ছুটে চলল জলযান। দূরে এক-দুটো সাম্পান নৌকা ভাসতে দেখলাম। নৌকার দুপাশে একজোড়া বইঠা। বইঠা দুটো গলুইয়ের দুপাশ থেকে উঠে গিয়ে তার হাতল একসঙ্গে বাঁধা হয়েছে কোমরসমান উঁচুতে। মাঝিকে তাই দাঁড়িয়ে ঠেলতে হচ্ছিল বইঠাযুগল। ছোট নৌকা, তাই দুজন করেই যাত্রী দেখলাম। লঞ্চ আস্তে আস্তে হ্রদের গভীরের দিকে যাচ্ছে আর আমরা যেন ক্রমশ ঢুকে যাচ্ছি নীলাভ কোনো রাজ্যপাটে!
হ্রদের নীল জল যেন সুনয়নার নীলচক্ষু! জলরাশির মাঝে সবুজ দ্বীপের মতো জেগে আছে একেকটা টিলা। টিলাগুলোর বেশির ভাগেই জনবসতি নেই। নীল আর সবুজ মিলেমিশে দৃষ্টিতে মুগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দিতে থাকল। ভাসতে ভাসতে অন্য নৌকায় যাত্রী হওয়া পাহাড়ের স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় হয়। দূরে, বহু দূরে আবছা অবয়বে কয়েক স্তরের পাহাড়শ্রেণি। মাঝি বলল, পাহাড়ের ওই গহিনে মিজোরাম সীমান্ত। আরও কিছুক্ষণ হ্রদে ভাসার পর একটি টিলার পাশে লঞ্চ নোঙর করা হলো।
একটা বয়সী পাকুড়গাছ দাঁড়িয়ে আছে পাকা সিঁড়ি বাঁধানো ঘাটে। টিলার ওপর একটা বাজার। নেমে পা বাড়াই সেদিকে। বাজারটির ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই চাকমা। ছোট ছোট দোকান। বয়সী কয়েকজন প্রৌঢ় এক জায়গায় জটলা বেঁধে গল্প জুড়ে দিয়েছেন। কথা চলছিল তাঁদের মাতৃভাষায়। টিলার ওপর বাজারের শেষ মাথায় অল্পনা চাকমা দিদির ছোট্ট খাবারের দোকান। কড়াইয়ের গরম তেলে পিঠা ভাজা হচ্ছিল। নারকেলের টুকরো আর গুড়ের সঙ্গে ময়দার মিশ্রণে বানানো লালচে রঙের সেই পিঠার স্বাদ মুখে লেগে আছে এখনো।
রাঙামাটির মগবান ইউনিয়নে পড়েছে এই বাজার। নাম নতুন বাজার। টিলার অন্য পাশে চাকমাদের পাড়াটার নাম দোখাইয়াপাড়া। দোকানগুলোর টিনের দেয়ালে সাঁটানো নির্বাচনী পোস্টার। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলছিল তখন। হ্রদে নৌকায় করে মাইকে চলছিল প্রার্থীদের প্রচার। এ রকম এক মাইক থেকে কানে আসে, ‘পাহাড়ি বাঙালি ভাই ভাই, আনারস মার্কায় ভোট চাই’। নৌকায় ফিরে আরও কিছুক্ষণ নৌযাত্রার পর আমরা প্রবেশ করলাম জীবনতলী ইউনিয়নে। বিকেল গড়াচ্ছে, রোদও মিঠে মিঠে হচ্ছে। মাঝি এবার নোঙর করল এক বৌদ্ধবিহারের টিলার পাদদেশে।
টিলার চূড়ায় সোনালি রঙের বুদ্ধমূর্তি। বেশ দূর থেকেও স্পষ্ট চোখে পড়ে। টিলার সিঁড়ি বেয়ে আমরা ওপরে উঠে এলাম। বৌদ্ধমন্দিরে পুণ্যার্থীদের ভিড়। প্রার্থনাকক্ষের ভেতরে মৃদু আলোয় যেন অন্যরকম আবহ! ফুরফুরে বাতাস উঠে আসছে হ্রদ থেকে। ধনপাতা বনবিহার থেকে নৌকায় ফিরে এলাম আমরা; মাঝিও আবার নোঙর তুললেন।
কাপ্তাই হ্রদ এবার সেজেছে অন্যরকম চেহারায়। সূর্য পাটে যাচ্ছে। গোধূলির সোনা রঙে নৈসর্গিক মুগ্ধতায় সেজেছে পুরো হ্রদ। চারপাশজুড়ে অপূর্ব এক নীরবতা। অনুভব করতে জানলে মৌনতারও প্রগাঢ় কোনো ভাষা থাকে! ফুরোমন পাহাড়ের রাজ্যপাটে পৌষের শীতলতা ভর করতে শুরু করেছে। সন্ধ্যার ছাই রং আস্তে আস্তে চারপাশের সোনালি জলরাশির ওপর আঁধারের চাদর ফেলে ঢেকে দিচ্ছে। কাপ্তাই নৌকাঘাটে ফেরার আগেই গ্রাস করল ঘুটঘুটে অন্ধকার।
ঘাটে নেমে সেখানের এক টংদোকানে চায়ের পর্ব সেরে ফিরে এলাম আস্তানায়। ক্যাম্পসাইটে তাঁবু বসানো হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। রাতের খাবারের ডাক পড়ল একটু আগেভাগেই। উদরপূর্তির পর তাঁবুতে ফিরে টের পেলাম হাড় কাঁপানো ঠান্ডা চেপে ধরছে। শীতে কাঁপতে কাঁপতে নদীর পাড়ে বসে কিছুক্ষণ চলল আড্ডা-গল্প। কিছু ফানুস আমরা সঙ্গে করে নিয়েছিলাম। সেগুলো ওড়াতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হলো। নদী থেকে আসা বাতাসের দাপটে দেশলাইয়ের কাঠিতে আগুন জ্বালানো যাচ্ছিল না। কয়েকবারের প্রচেষ্টার পর ওড়ানো গেল। রঙিন কাপড়ের ভেতরে আলোর প্রদীপ জ্বলতে জ্বলতে ওপরে উঠে যেতে থাকে। ঘাড় পেছনে বাঁকিয়ে একটানা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় তারাদের ভিড়ে কোনটা ফানুস সেটা আর ঠাহর করতে পারলাম না।
রাত বাড়ছে; ক্যাম্পিংয়ে আসা প্রায় সবাই ইতিমধ্যে ঢুকে পড়েছে যার যার তাঁবুতে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে গেছে নদীর অন্য পাশের ঘন বন। বন্যপ্রাণীবিষয়ক এক লেখকের বয়ানে জেনেছিলাম, কাপ্তাইয়ের ওই পাহাড়ি বনভূমিতে বসবাস করে বিড়াল গোত্রের সুন্দরতম এক সদস্য ক্লাউডেড লেপার্ড বা মেঘলা চিতা। স্থানীয়রা যাকে ডাকে লতা বাঘ বা গেছোবাঘ নামে। সারা দিন কোনো গাছের ডালে অলস শুয়ে থেকে নিশ্চয় তার সময় হয়েছে শিকারের সন্ধানে বের হওয়ার! নদীপাড়ের পাথরের চাতালে থাবার শক্ত নখে ভারসাম্য রক্ষা করে সামনে ঝুঁকে তৃষ্ণা মেটাতে মেটাতে দেখছে কি অন্য পাড়ের মনুষ্য ক্রিয়াকলাপ?
তাঁবুতে ঢুকে পড়ার পর শীত যেন আরও জেঁকে বসল। নদী থেকে ধেয়ে আসা বাতাসের সঙ্গে হাড় কাঁপানো শীত; দাঁতে দাঁত বাড়ি লাগছিল যেন। বেড হিসেবে প্রতিটি তাঁবুর মেঝেতে দেওয়া হয়েছে দুই ফালি ককশিট। নিচ থেকে ওঠা ঠান্ডা আটকানোর জন্য তা যথেষ্ট না হওয়ায় রাফাত তাঁবু থেকে বের হয়ে কোত্থেকে জানি আরও দুই ফালি ককশিট নিয়ে এল। এবার বেডটা মোটামুটি আরামদায়ক হয়ে উঠল। ঝিম ধরে থাকা শীতের রাতে নিস্তব্ধতা ছাপিয়ে কানে আসছিল ফোঁটা ফোঁটা কুয়াশা দলা বেঁধে তাঁবুর গায়ে আছড়ে পড়ার শব্দ। দূর থেকে থেমে থেমে কানে আসছিল একপাল শেয়ালের হুক্কাহুয়া।
ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে রাত কাটানোর পর ঘুম ভাঙল বেশ ভোরে। তাঁবুর চেইন খুলে বাইরে বেরিয়ে দেখি ইতিমধ্যে দলের অনেকেই উঠে পড়েছে। ভোরের কর্ণফুলী সবে আড়মোড়া ভাঙছে। কুয়াশার দঙ্গল সারা রাত নদীর ওপর ঘাপটি মেরে বসে থাকার পর আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। নদীর শান্ত জলে ছুঁয়ে ছুঁয়ে কুয়াশার অস্থির ছুটে চলার সঙ্গে যোগ দেয় একট-দুটো পানকৌড়ি। নদীর ওপর পাশের বনের চেহারাও হয়ে গেছে কুয়াশাময়।
জেলেরা তাঁদের নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন সেই ভোরেই। কোনোটা ছইওয়ালা, আবার কোনোটা খোলা ছোট নৌকা। হাড় কাঁপানো এমন শীতও যেন তাঁদের থোড়াই কেয়ার! আগের দিন কায়াকিংয়ের সময় জেলেদের কাছে জেনেছিলাম, নদীর অপর পাশের পাথুরে পাহাড়ের খাড়ির অংশ বেশি গভীর। ক্যাটফিশ গোত্রীয় মাছের আবাসস্থল সেই পাথুরে তলদেশে। আর পুরো নদীতেই চলাফেরা করে কার্পজাতীয় মাছ। এসব নিয়ে যখন ভাবছিলাম, হঠাৎই একটা বড়সড় মাছের ঘাই নদীর মাঝ বরাবর আলোড়ন তুলল! শান্ত পানিতে তৈরি হওয়া ঢেউয়ের গোলাকার বলয় চারপাশে প্রসারিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ল মিলিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
ক্যাম্পসাইট থেকে ফিরে নাশতার জন্য রেস্তোরাঁয় ডাক পড়ল। ডিম ভুনার সঙ্গে গরম-গরম খিচুড়িতে পেট পুরে নাশতা সেরে ঝটপট গোছগাছ সেরে বেরিয়ে পড়তে হলো। আমাদের পরের গন্তব্য রাঙামাটি শহর। কাপ্তাই হ্রদের পাশজুড়ে শৈল্পিক রেখা টেনে চলে গেছে যে পাহাড়শ্রেণি, তার ওপর দিয়ে চলে যাওয়া চড়াই-উতরাই পথ ধরে আমরা যাব। বাহনে চেপে বসার আগে ঘাড় ফিরিয়ে আরেকবার কর্ণফুলীর দিকে চোখ রেখে অস্ফুটে বললাম, ভালো থেকো কাপ্তাই; আবার দেখা হবে নিশ্চয়!
লেখক: ব্যাংক কর্মকর্তা
শিমুল খালেদ

সকালবেলার চন্দ্রঘোনা। কুয়াশার আচ্ছাদন থেকে চারপাশ আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠতে শুরু করেছে কেবল। রাঙ্গুনিয়া লিচুবাগান হয়ে আমরা যখন চন্দ্রঘোনা বাজারে পৌঁছাই, বেলা বাড়ার সঙ্গে মফস্বল শহরটিও ব্যস্ত হয়ে উঠছে। দূর পাহাড়ের জুমে ফলানো আনারস এক জায়গায় স্তূপ করে রাখা; গায়ের চাদর একপাশে রেখে মিঠে রোদ গায়ে মাখতে মাখতে মধ্যবয়সী বিক্রেতা বেতের মোড়া পেতে বসেছেন। ধাতব শব্দ তুলে দোকানের শাটার একটা-দুটো করে উঠতে শুরু করেছে।
দীর্ঘ ভ্রমণের পর আড়ষ্ট হয়ে থাকা শরীর এক-আধটু কসরতের জন্য মুখিয়ে ছিল। তবে সেই আশায় গুঁড়েবালি। সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের তাড়া—তড়িঘড়ি ওঠে পড়তে হবে। তিন চাকায় চড়িয়ে নিয়ে যাবে আমাদের গন্তব্যস্থল কাপ্তাইয়ে, কর্ণফুলী নদীর তীরসংলগ্ন ক্যাম্পসাইটে। সারা রাত সিলেট-চট্টগ্রাম ট্রেন ভ্রমণের পর ভোরবেলায় বাস, অতঃপর অটোরিকশায় প্রায় ষোলো ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রা শেষ হচ্ছে। রাঙামাটিতে এটা আমার প্রথম ভ্রমণ এবং এই আসাটাও হুটহাট করেই।
সপ্তাহের মাঝামাঝি এক সকালবেলার কথা। সেদিন সকাল সকাল অচেনা নম্বর থেকে ফোনে একটা এসএমএস আসে। আমেরিকাপ্রবাসী বন্ধু রাফাত আনসারী সেটি পাঠিয়েছে। মেসেজের সারমর্ম, সে দুই দিন আগে দেশে ছুটিতে এসেছে এবং সপ্তাহের শেষ দিকে কয়েকজন মিলে রাঙামাটি বেড়াতে যাচ্ছে। আমাকেও সেই দলের সদস্য ধরে নিয়ে ইতিমধ্যে ট্রেনের টিকিটও কেটে ফেলেছে। আমি যেন অমত না করি!
পাহাড়ের গা পেঁচিয়ে ফিতার মতো চলে যাওয়া পিচঢালা পথ ধরে ছোট বাহনজোড়া চলতে থাকল। মাঝে মাঝে একটা-দুটো সিঁড়িপথ চোখে পড়ল, মূল পথ থেকে ওপরের দিকে উঠে গেছে, পাহাড়ের চূড়ায় বাংলো আকৃতির একটা-দুটো কুটির। যেতে যেতে পথের দুপাশ ঘন সবুজ হয়ে ওঠে। বনানীর চেহারাও পাল্টায়। পাহাড়জুড়ে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা বনের ঠাসবুনোট, বনতলে লতাগুল্ম কন্দজাতীয় উদ্ভিদের আচ্ছাদন। আন্দাজ করি, কাপ্তাইয়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমায় চলে এসেছি। পথের ধারে সাঁটানো সাইনবোর্ড দেখে নিশ্চিত হলাম কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান হয়েই যাচ্ছি।
অরণ্যের বুনো স্পর্শ মেখে চোখেমুখে আছড়ে পড়ছে পৌষের বাতাস। গন্তব্যস্থল কাপ্তাই প্রশান্তি পার্কের ফটকের সামনে ইতিমধ্যে এসে পড়েছি। ঘড়ির কাঁটা বলছে, সবে দুপুর হতে চলেছে। আমরা এসেছি ক্যাম্পিং ট্যুরে। তাই আপাতত বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সবার ব্যাগ-ব্যাগেজ রাখার জন্য একটা রুম পাওয়া গেল। সেখানে ব্যাগপত্র রেখে ছাউনিতে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে চলে গেলাম নদীর একদম তীরে।
খরস্রোতা কর্ণফুলীর কলকল স্রোত বয়ে চলেছে জীবনের উচ্ছ্বাসে। নদীর একদম পাশ ঘেঁষে পার্ক কর্তৃপক্ষের বানানো একটা মাচাঘর। ওপরে শণ ও বেত, মেঝে মুলিবাঁশ দিয়ে তৈরি। ক্লান্ত শরীর নিয়ে সাত-পাঁচ না ভেবেই মাচার মেঝেতে শুয়ে পড়ি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দল ভারী করতে যোগ দেয় রাফাত ও রুবেল। শীত ঋতুর শান্ত সৌম্য কর্ণফুলী। উজ্জ্বল সূর্যালোকে ঝলমল করছে ছোট ছোট ঢেউ কিংবা অল্পস্বল্প নড়াচড়া।
নদী পেরিয়ে ওই পাশে শিলাপাথরের পাহাড়, তার গায়ে ঘন পাহাড়ি বন। দীর্ঘ ভ্রমণের পর গা এলানোর সুযোগ পেয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে, শীতে দুপুরের ফুরফুরে শীতল হাওয়া গায়ে মেখে কতক্ষণ শুয়ে ছিলাম ঠিক জানি না। বছর ষোলোর ছিপছিপে গড়নের এক কিশোরের গলার আওয়াজে সংবিৎ ফিরল। ঘাটে কায়াক প্রস্তুত; আমাদের কায়াকিংয়ের সময় হয়ে গেছে। মরা ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শুকনো একটি গাছের নিচে অপেক্ষমাণ রংবেরঙের কয়েকটি কায়াক। চারটি নৌকার প্রতিটিতে দুজন করে ভাগ হয়ে আমরা আটজন চেপে কর্ণফুলীর টলমলে জলে নেমে পড়ি।
একদম প্রথম বোটের সামনের সিটে আমি, পেছনের সিটে সঙ্গী সুমন। বোটগুলোর প্রতিটির জন্য একটা করেই বইঠা বরাদ্দ। দুপাশে পাখা লাগানো বইঠা ঠেলতে ঠেলতে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছিল। এ এক আজব জলতরি, যেটার পেটের ভেতরে ঢুকলে অর্ধেক শরীর ঢুকে যায় আন্ডারওয়াটার বা পানির তলায়! বেশ রোমাঞ্চ লাগছিল। পানিতে বইঠার চাপে কায়াক ছুটতে থাকে। ভাটি ধরে যেতে যেতে আমরা দেখতে থাকি নদীতীরের দিনযাপন। পানিতে হাপুস-হুপুস করছিল ছেলেপুলেদের একটা দল। আরেকটু সামনে যেতেই দেখলাম ছোট জাল নদী থেকে তুলে তা থেকে মাছ ধরে খলুইতে রাখছেন এক জেলে দম্পতি।
বইঠা বাইতে বাইতে খেয়াল করলাম, নদীর ঠিক মাঝামাঝি চলে এসেছি। আর সেখান থেকে চোখের সামনে দৃশ্যমান হয় মনোমুগ্ধকর এক দৃশ্যপট। নদীর মাঝ বরাবর পানির সমতলের দেড়-দুই ফুট ওপর থেকে সামনে তাকালে ভাটির পানে বয়ে যাওয়া জলস্রোত পেরিয়ে দুই পাড়জুড়ে ঘন অরণ্যঢাকা পাহাড়শ্রেণি। নদীর গা ঘেঁষা সেই পাহাড় পেরিয়ে পেছনে উঁকি দিচ্ছে আরও উঁচু পাহাড়। তারপর আরও উঁচু পাহাড় স্তর। অপূর্ব সেই দৃশ্য!
সীতা পাহাড় আর রাম পাহাড় নামের এই পাহাড়ের মধ্য দিয়েই খরস্রোতা কর্ণফুলী প্রবাহিত হয়েছে। কর্ণফুলীর উচ্ছল স্রোতোধারা আর চারপাশের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট জন্ম দিয়েছে না জানি কত শত ছন্দ আর কবিতার! প্রেমের কবি নজরুল তাই তো কর্ণফুলীকে ভালোবেসে লিখেছিলেন, ‘তোমার সলিলে পড়েছিল কবে কার কানফুল খুলি, তোমার স্রোতের উজান ঠেলিয়া কোন তরুণী কে জানে, সাম্পান নায়ে ফিরেছিল তার-দয়িতের সন্ধানে, আনমনে তার খুলে গেল খোঁপা, কানফুল গেল খুলি, সে ফুল যতনে পরিয়া কর্ণে হলে কি কর্ণফুলী?’
কর্ণফুলী নদীর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে নানা কাহিনি শোনা যায়। তবে সবচেয়ে প্রচলিত গল্পটি হচ্ছে—আরাকানের এক রাজকন্যা চট্টগ্রামের এক রাজপুত্রের প্রেমে পড়ে। এক জ্যোৎস্না রাতে তারা দুজন এই নদীতে নৌভ্রমণ উপভোগ করছিল। নদীর পানিতে চাঁদের প্রতিফলন দেখার সময় রাজকন্যার কানে গোঁজা একটি ফুল পানিতে পড়ে যায়। ফুলটি হারিয়ে কাতর রাজকন্যা সেটি উদ্ধারের জন্য পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু প্রবল স্রোতে রাজকন্যা ভেসে যায়, তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
রাজপুত্র রাজকন্যাকে বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপ দেয়, কিন্তু সফল হয়নি। প্রিয়তমার শোকে রাজপুত্র পানিতে ডুবে আত্মাহুতি দেয়। করুণ এই কাহিনি থেকেই নদীটির নাম হয় কর্ণফুলী। মারমা জনগোষ্ঠীর কাছে এর নাম কিনসা খিয়ং। উজানে সীমান্তের ওপারে মিজোরামে কর্ণফুলীকে ডাকা হয় খাওৎলাং তুইপুই নামে।
বইঠা থামিয়ে মাঝ নদীতে থেমে ভরদুপুরের মৌনতা কিছুক্ষণ উপভোগ করে তারপর কায়াকের মাথা নদীর অপর পাশ অভিমুখে ঘুরালাম। সেখানে কয়েকজন জেলে পাথুরে পাহাড়ের দেয়াল ঘেঁষে নৌকা নিয়ে একদম স্থির বসে ছিল। চোখে শ্যেনদৃষ্টি; নিবদ্ধ নদীর পানির দিকে। যেন স্রোতের ভেতরে কোনো বিশেষ নড়াচড়ার অপেক্ষায়। পাহাড়ের পাথুরে শিলা উপরিভাগে যতটা দৃশ্যমান হয়; তার চেয়েও নদীর তলদেশে লুকিয়ে থাকা অংশ খুব একটা কম নয়। জেলেদের সঙ্গে আলাপে জানলাম, নদীর এই অংশে গভীরতা ৩৫-৪০ ফুটের মতো।
খেয়াল করলাম, নদীর অপরাপর দিকে পানি বাতাসে মৃদু ঢেউ খেলানো থাকলেও এখানে একদম স্থির। উজান থেকে নেমে আসা স্রোতে পাথুরে দেয়ালে বাধা পেয়ে ঘূর্ণিপাক খাচ্ছিল। লাইফ জ্যাকেট পরা থাকলেও সঙ্গী সুমন সাঁতার জানেন না। তাই সেখান থেকে তড়িঘড়ি করে এপাশে ঘাটের দিকে চলে আসি। কায়াক পর্ব শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর লাঞ্চের ডাক পড়ে। পরের গন্তব্য কাপ্তাই হ্রদ।
পার্কের ফটক থেকে কাপ্তাই সদর অভিমুখে চলে যাওয়া পথের পুরোটাই ক্রমশ ওপরের দিকে উঠে গেছে। এক পাশে সংরক্ষিত পাহাড়ি বনভূমি, অপর পাশে বেশ নিচে কর্ণফুলী। কাপ্তাই সদরে বাহন থেকে মাটিতে পা ফেলার আগেই চোখে পড়ল কাপ্তাই হ্রদের অবারিত জলরাশি। নৌকাঘাট সামনেই। ডানের রাস্তাটি চলে গেছে জলবিদ্যুৎ বাঁধের দিকে। বাহন থেকে নেমে প্রথমেই কানে এল মধ্যবয়সী এক নারীকণ্ঠ—মামা, লেকে ঘুরবেন, সাম্পান দিয়া?
ঘাটে গিয়ে দরদাম শেষে আটজনের দলের জন্য একটা জুতসই লঞ্চ নেওয়া হলো। লঞ্চের চালকই গাইড। কাপ্তাই হ্রদের জলরাশিতে আলোড়ন তুলে ছুটে চলল জলযান। দূরে এক-দুটো সাম্পান নৌকা ভাসতে দেখলাম। নৌকার দুপাশে একজোড়া বইঠা। বইঠা দুটো গলুইয়ের দুপাশ থেকে উঠে গিয়ে তার হাতল একসঙ্গে বাঁধা হয়েছে কোমরসমান উঁচুতে। মাঝিকে তাই দাঁড়িয়ে ঠেলতে হচ্ছিল বইঠাযুগল। ছোট নৌকা, তাই দুজন করেই যাত্রী দেখলাম। লঞ্চ আস্তে আস্তে হ্রদের গভীরের দিকে যাচ্ছে আর আমরা যেন ক্রমশ ঢুকে যাচ্ছি নীলাভ কোনো রাজ্যপাটে!
হ্রদের নীল জল যেন সুনয়নার নীলচক্ষু! জলরাশির মাঝে সবুজ দ্বীপের মতো জেগে আছে একেকটা টিলা। টিলাগুলোর বেশির ভাগেই জনবসতি নেই। নীল আর সবুজ মিলেমিশে দৃষ্টিতে মুগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দিতে থাকল। ভাসতে ভাসতে অন্য নৌকায় যাত্রী হওয়া পাহাড়ের স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় হয়। দূরে, বহু দূরে আবছা অবয়বে কয়েক স্তরের পাহাড়শ্রেণি। মাঝি বলল, পাহাড়ের ওই গহিনে মিজোরাম সীমান্ত। আরও কিছুক্ষণ হ্রদে ভাসার পর একটি টিলার পাশে লঞ্চ নোঙর করা হলো।
একটা বয়সী পাকুড়গাছ দাঁড়িয়ে আছে পাকা সিঁড়ি বাঁধানো ঘাটে। টিলার ওপর একটা বাজার। নেমে পা বাড়াই সেদিকে। বাজারটির ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই চাকমা। ছোট ছোট দোকান। বয়সী কয়েকজন প্রৌঢ় এক জায়গায় জটলা বেঁধে গল্প জুড়ে দিয়েছেন। কথা চলছিল তাঁদের মাতৃভাষায়। টিলার ওপর বাজারের শেষ মাথায় অল্পনা চাকমা দিদির ছোট্ট খাবারের দোকান। কড়াইয়ের গরম তেলে পিঠা ভাজা হচ্ছিল। নারকেলের টুকরো আর গুড়ের সঙ্গে ময়দার মিশ্রণে বানানো লালচে রঙের সেই পিঠার স্বাদ মুখে লেগে আছে এখনো।
রাঙামাটির মগবান ইউনিয়নে পড়েছে এই বাজার। নাম নতুন বাজার। টিলার অন্য পাশে চাকমাদের পাড়াটার নাম দোখাইয়াপাড়া। দোকানগুলোর টিনের দেয়ালে সাঁটানো নির্বাচনী পোস্টার। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলছিল তখন। হ্রদে নৌকায় করে মাইকে চলছিল প্রার্থীদের প্রচার। এ রকম এক মাইক থেকে কানে আসে, ‘পাহাড়ি বাঙালি ভাই ভাই, আনারস মার্কায় ভোট চাই’। নৌকায় ফিরে আরও কিছুক্ষণ নৌযাত্রার পর আমরা প্রবেশ করলাম জীবনতলী ইউনিয়নে। বিকেল গড়াচ্ছে, রোদও মিঠে মিঠে হচ্ছে। মাঝি এবার নোঙর করল এক বৌদ্ধবিহারের টিলার পাদদেশে।
টিলার চূড়ায় সোনালি রঙের বুদ্ধমূর্তি। বেশ দূর থেকেও স্পষ্ট চোখে পড়ে। টিলার সিঁড়ি বেয়ে আমরা ওপরে উঠে এলাম। বৌদ্ধমন্দিরে পুণ্যার্থীদের ভিড়। প্রার্থনাকক্ষের ভেতরে মৃদু আলোয় যেন অন্যরকম আবহ! ফুরফুরে বাতাস উঠে আসছে হ্রদ থেকে। ধনপাতা বনবিহার থেকে নৌকায় ফিরে এলাম আমরা; মাঝিও আবার নোঙর তুললেন।
কাপ্তাই হ্রদ এবার সেজেছে অন্যরকম চেহারায়। সূর্য পাটে যাচ্ছে। গোধূলির সোনা রঙে নৈসর্গিক মুগ্ধতায় সেজেছে পুরো হ্রদ। চারপাশজুড়ে অপূর্ব এক নীরবতা। অনুভব করতে জানলে মৌনতারও প্রগাঢ় কোনো ভাষা থাকে! ফুরোমন পাহাড়ের রাজ্যপাটে পৌষের শীতলতা ভর করতে শুরু করেছে। সন্ধ্যার ছাই রং আস্তে আস্তে চারপাশের সোনালি জলরাশির ওপর আঁধারের চাদর ফেলে ঢেকে দিচ্ছে। কাপ্তাই নৌকাঘাটে ফেরার আগেই গ্রাস করল ঘুটঘুটে অন্ধকার।
ঘাটে নেমে সেখানের এক টংদোকানে চায়ের পর্ব সেরে ফিরে এলাম আস্তানায়। ক্যাম্পসাইটে তাঁবু বসানো হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। রাতের খাবারের ডাক পড়ল একটু আগেভাগেই। উদরপূর্তির পর তাঁবুতে ফিরে টের পেলাম হাড় কাঁপানো ঠান্ডা চেপে ধরছে। শীতে কাঁপতে কাঁপতে নদীর পাড়ে বসে কিছুক্ষণ চলল আড্ডা-গল্প। কিছু ফানুস আমরা সঙ্গে করে নিয়েছিলাম। সেগুলো ওড়াতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হলো। নদী থেকে আসা বাতাসের দাপটে দেশলাইয়ের কাঠিতে আগুন জ্বালানো যাচ্ছিল না। কয়েকবারের প্রচেষ্টার পর ওড়ানো গেল। রঙিন কাপড়ের ভেতরে আলোর প্রদীপ জ্বলতে জ্বলতে ওপরে উঠে যেতে থাকে। ঘাড় পেছনে বাঁকিয়ে একটানা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় তারাদের ভিড়ে কোনটা ফানুস সেটা আর ঠাহর করতে পারলাম না।
রাত বাড়ছে; ক্যাম্পিংয়ে আসা প্রায় সবাই ইতিমধ্যে ঢুকে পড়েছে যার যার তাঁবুতে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে গেছে নদীর অন্য পাশের ঘন বন। বন্যপ্রাণীবিষয়ক এক লেখকের বয়ানে জেনেছিলাম, কাপ্তাইয়ের ওই পাহাড়ি বনভূমিতে বসবাস করে বিড়াল গোত্রের সুন্দরতম এক সদস্য ক্লাউডেড লেপার্ড বা মেঘলা চিতা। স্থানীয়রা যাকে ডাকে লতা বাঘ বা গেছোবাঘ নামে। সারা দিন কোনো গাছের ডালে অলস শুয়ে থেকে নিশ্চয় তার সময় হয়েছে শিকারের সন্ধানে বের হওয়ার! নদীপাড়ের পাথরের চাতালে থাবার শক্ত নখে ভারসাম্য রক্ষা করে সামনে ঝুঁকে তৃষ্ণা মেটাতে মেটাতে দেখছে কি অন্য পাড়ের মনুষ্য ক্রিয়াকলাপ?
তাঁবুতে ঢুকে পড়ার পর শীত যেন আরও জেঁকে বসল। নদী থেকে ধেয়ে আসা বাতাসের সঙ্গে হাড় কাঁপানো শীত; দাঁতে দাঁত বাড়ি লাগছিল যেন। বেড হিসেবে প্রতিটি তাঁবুর মেঝেতে দেওয়া হয়েছে দুই ফালি ককশিট। নিচ থেকে ওঠা ঠান্ডা আটকানোর জন্য তা যথেষ্ট না হওয়ায় রাফাত তাঁবু থেকে বের হয়ে কোত্থেকে জানি আরও দুই ফালি ককশিট নিয়ে এল। এবার বেডটা মোটামুটি আরামদায়ক হয়ে উঠল। ঝিম ধরে থাকা শীতের রাতে নিস্তব্ধতা ছাপিয়ে কানে আসছিল ফোঁটা ফোঁটা কুয়াশা দলা বেঁধে তাঁবুর গায়ে আছড়ে পড়ার শব্দ। দূর থেকে থেমে থেমে কানে আসছিল একপাল শেয়ালের হুক্কাহুয়া।
ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে রাত কাটানোর পর ঘুম ভাঙল বেশ ভোরে। তাঁবুর চেইন খুলে বাইরে বেরিয়ে দেখি ইতিমধ্যে দলের অনেকেই উঠে পড়েছে। ভোরের কর্ণফুলী সবে আড়মোড়া ভাঙছে। কুয়াশার দঙ্গল সারা রাত নদীর ওপর ঘাপটি মেরে বসে থাকার পর আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। নদীর শান্ত জলে ছুঁয়ে ছুঁয়ে কুয়াশার অস্থির ছুটে চলার সঙ্গে যোগ দেয় একট-দুটো পানকৌড়ি। নদীর ওপর পাশের বনের চেহারাও হয়ে গেছে কুয়াশাময়।
জেলেরা তাঁদের নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন সেই ভোরেই। কোনোটা ছইওয়ালা, আবার কোনোটা খোলা ছোট নৌকা। হাড় কাঁপানো এমন শীতও যেন তাঁদের থোড়াই কেয়ার! আগের দিন কায়াকিংয়ের সময় জেলেদের কাছে জেনেছিলাম, নদীর অপর পাশের পাথুরে পাহাড়ের খাড়ির অংশ বেশি গভীর। ক্যাটফিশ গোত্রীয় মাছের আবাসস্থল সেই পাথুরে তলদেশে। আর পুরো নদীতেই চলাফেরা করে কার্পজাতীয় মাছ। এসব নিয়ে যখন ভাবছিলাম, হঠাৎই একটা বড়সড় মাছের ঘাই নদীর মাঝ বরাবর আলোড়ন তুলল! শান্ত পানিতে তৈরি হওয়া ঢেউয়ের গোলাকার বলয় চারপাশে প্রসারিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ল মিলিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
ক্যাম্পসাইট থেকে ফিরে নাশতার জন্য রেস্তোরাঁয় ডাক পড়ল। ডিম ভুনার সঙ্গে গরম-গরম খিচুড়িতে পেট পুরে নাশতা সেরে ঝটপট গোছগাছ সেরে বেরিয়ে পড়তে হলো। আমাদের পরের গন্তব্য রাঙামাটি শহর। কাপ্তাই হ্রদের পাশজুড়ে শৈল্পিক রেখা টেনে চলে গেছে যে পাহাড়শ্রেণি, তার ওপর দিয়ে চলে যাওয়া চড়াই-উতরাই পথ ধরে আমরা যাব। বাহনে চেপে বসার আগে ঘাড় ফিরিয়ে আরেকবার কর্ণফুলীর দিকে চোখ রেখে অস্ফুটে বললাম, ভালো থেকো কাপ্তাই; আবার দেখা হবে নিশ্চয়!
লেখক: ব্যাংক কর্মকর্তা

সকালবেলার চন্দ্রঘোনা। কুয়াশার আচ্ছাদন থেকে চারপাশ আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠতে শুরু করেছে কেবল। রাঙ্গুনিয়া লিচুবাগান হয়ে আমরা যখন চন্দ্রঘোনা বাজারে পৌঁছাই, বেলা বাড়ার সঙ্গে মফস্বল শহরটিও ব্যস্ত হয়ে উঠছে। দূর পাহাড়ের জুমে ফলানো আনারস এক জায়গায় স্তূপ করে রাখা; গায়ের চাদর একপাশে রেখে মিঠে রোদ গায়ে মাখতে মাখতে মধ্যবয়সী বিক্রেতা বেতের মোড়া পেতে বসেছেন। ধাতব শব্দ তুলে দোকানের শাটার একটা-দুটো করে উঠতে শুরু করেছে।
দীর্ঘ ভ্রমণের পর আড়ষ্ট হয়ে থাকা শরীর এক-আধটু কসরতের জন্য মুখিয়ে ছিল। তবে সেই আশায় গুঁড়েবালি। সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের তাড়া—তড়িঘড়ি ওঠে পড়তে হবে। তিন চাকায় চড়িয়ে নিয়ে যাবে আমাদের গন্তব্যস্থল কাপ্তাইয়ে, কর্ণফুলী নদীর তীরসংলগ্ন ক্যাম্পসাইটে। সারা রাত সিলেট-চট্টগ্রাম ট্রেন ভ্রমণের পর ভোরবেলায় বাস, অতঃপর অটোরিকশায় প্রায় ষোলো ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রা শেষ হচ্ছে। রাঙামাটিতে এটা আমার প্রথম ভ্রমণ এবং এই আসাটাও হুটহাট করেই।
সপ্তাহের মাঝামাঝি এক সকালবেলার কথা। সেদিন সকাল সকাল অচেনা নম্বর থেকে ফোনে একটা এসএমএস আসে। আমেরিকাপ্রবাসী বন্ধু রাফাত আনসারী সেটি পাঠিয়েছে। মেসেজের সারমর্ম, সে দুই দিন আগে দেশে ছুটিতে এসেছে এবং সপ্তাহের শেষ দিকে কয়েকজন মিলে রাঙামাটি বেড়াতে যাচ্ছে। আমাকেও সেই দলের সদস্য ধরে নিয়ে ইতিমধ্যে ট্রেনের টিকিটও কেটে ফেলেছে। আমি যেন অমত না করি!
পাহাড়ের গা পেঁচিয়ে ফিতার মতো চলে যাওয়া পিচঢালা পথ ধরে ছোট বাহনজোড়া চলতে থাকল। মাঝে মাঝে একটা-দুটো সিঁড়িপথ চোখে পড়ল, মূল পথ থেকে ওপরের দিকে উঠে গেছে, পাহাড়ের চূড়ায় বাংলো আকৃতির একটা-দুটো কুটির। যেতে যেতে পথের দুপাশ ঘন সবুজ হয়ে ওঠে। বনানীর চেহারাও পাল্টায়। পাহাড়জুড়ে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা বনের ঠাসবুনোট, বনতলে লতাগুল্ম কন্দজাতীয় উদ্ভিদের আচ্ছাদন। আন্দাজ করি, কাপ্তাইয়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমায় চলে এসেছি। পথের ধারে সাঁটানো সাইনবোর্ড দেখে নিশ্চিত হলাম কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান হয়েই যাচ্ছি।
অরণ্যের বুনো স্পর্শ মেখে চোখেমুখে আছড়ে পড়ছে পৌষের বাতাস। গন্তব্যস্থল কাপ্তাই প্রশান্তি পার্কের ফটকের সামনে ইতিমধ্যে এসে পড়েছি। ঘড়ির কাঁটা বলছে, সবে দুপুর হতে চলেছে। আমরা এসেছি ক্যাম্পিং ট্যুরে। তাই আপাতত বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সবার ব্যাগ-ব্যাগেজ রাখার জন্য একটা রুম পাওয়া গেল। সেখানে ব্যাগপত্র রেখে ছাউনিতে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে চলে গেলাম নদীর একদম তীরে।
খরস্রোতা কর্ণফুলীর কলকল স্রোত বয়ে চলেছে জীবনের উচ্ছ্বাসে। নদীর একদম পাশ ঘেঁষে পার্ক কর্তৃপক্ষের বানানো একটা মাচাঘর। ওপরে শণ ও বেত, মেঝে মুলিবাঁশ দিয়ে তৈরি। ক্লান্ত শরীর নিয়ে সাত-পাঁচ না ভেবেই মাচার মেঝেতে শুয়ে পড়ি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দল ভারী করতে যোগ দেয় রাফাত ও রুবেল। শীত ঋতুর শান্ত সৌম্য কর্ণফুলী। উজ্জ্বল সূর্যালোকে ঝলমল করছে ছোট ছোট ঢেউ কিংবা অল্পস্বল্প নড়াচড়া।
নদী পেরিয়ে ওই পাশে শিলাপাথরের পাহাড়, তার গায়ে ঘন পাহাড়ি বন। দীর্ঘ ভ্রমণের পর গা এলানোর সুযোগ পেয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে, শীতে দুপুরের ফুরফুরে শীতল হাওয়া গায়ে মেখে কতক্ষণ শুয়ে ছিলাম ঠিক জানি না। বছর ষোলোর ছিপছিপে গড়নের এক কিশোরের গলার আওয়াজে সংবিৎ ফিরল। ঘাটে কায়াক প্রস্তুত; আমাদের কায়াকিংয়ের সময় হয়ে গেছে। মরা ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শুকনো একটি গাছের নিচে অপেক্ষমাণ রংবেরঙের কয়েকটি কায়াক। চারটি নৌকার প্রতিটিতে দুজন করে ভাগ হয়ে আমরা আটজন চেপে কর্ণফুলীর টলমলে জলে নেমে পড়ি।
একদম প্রথম বোটের সামনের সিটে আমি, পেছনের সিটে সঙ্গী সুমন। বোটগুলোর প্রতিটির জন্য একটা করেই বইঠা বরাদ্দ। দুপাশে পাখা লাগানো বইঠা ঠেলতে ঠেলতে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছিল। এ এক আজব জলতরি, যেটার পেটের ভেতরে ঢুকলে অর্ধেক শরীর ঢুকে যায় আন্ডারওয়াটার বা পানির তলায়! বেশ রোমাঞ্চ লাগছিল। পানিতে বইঠার চাপে কায়াক ছুটতে থাকে। ভাটি ধরে যেতে যেতে আমরা দেখতে থাকি নদীতীরের দিনযাপন। পানিতে হাপুস-হুপুস করছিল ছেলেপুলেদের একটা দল। আরেকটু সামনে যেতেই দেখলাম ছোট জাল নদী থেকে তুলে তা থেকে মাছ ধরে খলুইতে রাখছেন এক জেলে দম্পতি।
বইঠা বাইতে বাইতে খেয়াল করলাম, নদীর ঠিক মাঝামাঝি চলে এসেছি। আর সেখান থেকে চোখের সামনে দৃশ্যমান হয় মনোমুগ্ধকর এক দৃশ্যপট। নদীর মাঝ বরাবর পানির সমতলের দেড়-দুই ফুট ওপর থেকে সামনে তাকালে ভাটির পানে বয়ে যাওয়া জলস্রোত পেরিয়ে দুই পাড়জুড়ে ঘন অরণ্যঢাকা পাহাড়শ্রেণি। নদীর গা ঘেঁষা সেই পাহাড় পেরিয়ে পেছনে উঁকি দিচ্ছে আরও উঁচু পাহাড়। তারপর আরও উঁচু পাহাড় স্তর। অপূর্ব সেই দৃশ্য!
সীতা পাহাড় আর রাম পাহাড় নামের এই পাহাড়ের মধ্য দিয়েই খরস্রোতা কর্ণফুলী প্রবাহিত হয়েছে। কর্ণফুলীর উচ্ছল স্রোতোধারা আর চারপাশের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট জন্ম দিয়েছে না জানি কত শত ছন্দ আর কবিতার! প্রেমের কবি নজরুল তাই তো কর্ণফুলীকে ভালোবেসে লিখেছিলেন, ‘তোমার সলিলে পড়েছিল কবে কার কানফুল খুলি, তোমার স্রোতের উজান ঠেলিয়া কোন তরুণী কে জানে, সাম্পান নায়ে ফিরেছিল তার-দয়িতের সন্ধানে, আনমনে তার খুলে গেল খোঁপা, কানফুল গেল খুলি, সে ফুল যতনে পরিয়া কর্ণে হলে কি কর্ণফুলী?’
কর্ণফুলী নদীর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে নানা কাহিনি শোনা যায়। তবে সবচেয়ে প্রচলিত গল্পটি হচ্ছে—আরাকানের এক রাজকন্যা চট্টগ্রামের এক রাজপুত্রের প্রেমে পড়ে। এক জ্যোৎস্না রাতে তারা দুজন এই নদীতে নৌভ্রমণ উপভোগ করছিল। নদীর পানিতে চাঁদের প্রতিফলন দেখার সময় রাজকন্যার কানে গোঁজা একটি ফুল পানিতে পড়ে যায়। ফুলটি হারিয়ে কাতর রাজকন্যা সেটি উদ্ধারের জন্য পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু প্রবল স্রোতে রাজকন্যা ভেসে যায়, তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
রাজপুত্র রাজকন্যাকে বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপ দেয়, কিন্তু সফল হয়নি। প্রিয়তমার শোকে রাজপুত্র পানিতে ডুবে আত্মাহুতি দেয়। করুণ এই কাহিনি থেকেই নদীটির নাম হয় কর্ণফুলী। মারমা জনগোষ্ঠীর কাছে এর নাম কিনসা খিয়ং। উজানে সীমান্তের ওপারে মিজোরামে কর্ণফুলীকে ডাকা হয় খাওৎলাং তুইপুই নামে।
বইঠা থামিয়ে মাঝ নদীতে থেমে ভরদুপুরের মৌনতা কিছুক্ষণ উপভোগ করে তারপর কায়াকের মাথা নদীর অপর পাশ অভিমুখে ঘুরালাম। সেখানে কয়েকজন জেলে পাথুরে পাহাড়ের দেয়াল ঘেঁষে নৌকা নিয়ে একদম স্থির বসে ছিল। চোখে শ্যেনদৃষ্টি; নিবদ্ধ নদীর পানির দিকে। যেন স্রোতের ভেতরে কোনো বিশেষ নড়াচড়ার অপেক্ষায়। পাহাড়ের পাথুরে শিলা উপরিভাগে যতটা দৃশ্যমান হয়; তার চেয়েও নদীর তলদেশে লুকিয়ে থাকা অংশ খুব একটা কম নয়। জেলেদের সঙ্গে আলাপে জানলাম, নদীর এই অংশে গভীরতা ৩৫-৪০ ফুটের মতো।
খেয়াল করলাম, নদীর অপরাপর দিকে পানি বাতাসে মৃদু ঢেউ খেলানো থাকলেও এখানে একদম স্থির। উজান থেকে নেমে আসা স্রোতে পাথুরে দেয়ালে বাধা পেয়ে ঘূর্ণিপাক খাচ্ছিল। লাইফ জ্যাকেট পরা থাকলেও সঙ্গী সুমন সাঁতার জানেন না। তাই সেখান থেকে তড়িঘড়ি করে এপাশে ঘাটের দিকে চলে আসি। কায়াক পর্ব শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর লাঞ্চের ডাক পড়ে। পরের গন্তব্য কাপ্তাই হ্রদ।
পার্কের ফটক থেকে কাপ্তাই সদর অভিমুখে চলে যাওয়া পথের পুরোটাই ক্রমশ ওপরের দিকে উঠে গেছে। এক পাশে সংরক্ষিত পাহাড়ি বনভূমি, অপর পাশে বেশ নিচে কর্ণফুলী। কাপ্তাই সদরে বাহন থেকে মাটিতে পা ফেলার আগেই চোখে পড়ল কাপ্তাই হ্রদের অবারিত জলরাশি। নৌকাঘাট সামনেই। ডানের রাস্তাটি চলে গেছে জলবিদ্যুৎ বাঁধের দিকে। বাহন থেকে নেমে প্রথমেই কানে এল মধ্যবয়সী এক নারীকণ্ঠ—মামা, লেকে ঘুরবেন, সাম্পান দিয়া?
ঘাটে গিয়ে দরদাম শেষে আটজনের দলের জন্য একটা জুতসই লঞ্চ নেওয়া হলো। লঞ্চের চালকই গাইড। কাপ্তাই হ্রদের জলরাশিতে আলোড়ন তুলে ছুটে চলল জলযান। দূরে এক-দুটো সাম্পান নৌকা ভাসতে দেখলাম। নৌকার দুপাশে একজোড়া বইঠা। বইঠা দুটো গলুইয়ের দুপাশ থেকে উঠে গিয়ে তার হাতল একসঙ্গে বাঁধা হয়েছে কোমরসমান উঁচুতে। মাঝিকে তাই দাঁড়িয়ে ঠেলতে হচ্ছিল বইঠাযুগল। ছোট নৌকা, তাই দুজন করেই যাত্রী দেখলাম। লঞ্চ আস্তে আস্তে হ্রদের গভীরের দিকে যাচ্ছে আর আমরা যেন ক্রমশ ঢুকে যাচ্ছি নীলাভ কোনো রাজ্যপাটে!
হ্রদের নীল জল যেন সুনয়নার নীলচক্ষু! জলরাশির মাঝে সবুজ দ্বীপের মতো জেগে আছে একেকটা টিলা। টিলাগুলোর বেশির ভাগেই জনবসতি নেই। নীল আর সবুজ মিলেমিশে দৃষ্টিতে মুগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দিতে থাকল। ভাসতে ভাসতে অন্য নৌকায় যাত্রী হওয়া পাহাড়ের স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় হয়। দূরে, বহু দূরে আবছা অবয়বে কয়েক স্তরের পাহাড়শ্রেণি। মাঝি বলল, পাহাড়ের ওই গহিনে মিজোরাম সীমান্ত। আরও কিছুক্ষণ হ্রদে ভাসার পর একটি টিলার পাশে লঞ্চ নোঙর করা হলো।
একটা বয়সী পাকুড়গাছ দাঁড়িয়ে আছে পাকা সিঁড়ি বাঁধানো ঘাটে। টিলার ওপর একটা বাজার। নেমে পা বাড়াই সেদিকে। বাজারটির ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই চাকমা। ছোট ছোট দোকান। বয়সী কয়েকজন প্রৌঢ় এক জায়গায় জটলা বেঁধে গল্প জুড়ে দিয়েছেন। কথা চলছিল তাঁদের মাতৃভাষায়। টিলার ওপর বাজারের শেষ মাথায় অল্পনা চাকমা দিদির ছোট্ট খাবারের দোকান। কড়াইয়ের গরম তেলে পিঠা ভাজা হচ্ছিল। নারকেলের টুকরো আর গুড়ের সঙ্গে ময়দার মিশ্রণে বানানো লালচে রঙের সেই পিঠার স্বাদ মুখে লেগে আছে এখনো।
রাঙামাটির মগবান ইউনিয়নে পড়েছে এই বাজার। নাম নতুন বাজার। টিলার অন্য পাশে চাকমাদের পাড়াটার নাম দোখাইয়াপাড়া। দোকানগুলোর টিনের দেয়ালে সাঁটানো নির্বাচনী পোস্টার। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলছিল তখন। হ্রদে নৌকায় করে মাইকে চলছিল প্রার্থীদের প্রচার। এ রকম এক মাইক থেকে কানে আসে, ‘পাহাড়ি বাঙালি ভাই ভাই, আনারস মার্কায় ভোট চাই’। নৌকায় ফিরে আরও কিছুক্ষণ নৌযাত্রার পর আমরা প্রবেশ করলাম জীবনতলী ইউনিয়নে। বিকেল গড়াচ্ছে, রোদও মিঠে মিঠে হচ্ছে। মাঝি এবার নোঙর করল এক বৌদ্ধবিহারের টিলার পাদদেশে।
টিলার চূড়ায় সোনালি রঙের বুদ্ধমূর্তি। বেশ দূর থেকেও স্পষ্ট চোখে পড়ে। টিলার সিঁড়ি বেয়ে আমরা ওপরে উঠে এলাম। বৌদ্ধমন্দিরে পুণ্যার্থীদের ভিড়। প্রার্থনাকক্ষের ভেতরে মৃদু আলোয় যেন অন্যরকম আবহ! ফুরফুরে বাতাস উঠে আসছে হ্রদ থেকে। ধনপাতা বনবিহার থেকে নৌকায় ফিরে এলাম আমরা; মাঝিও আবার নোঙর তুললেন।
কাপ্তাই হ্রদ এবার সেজেছে অন্যরকম চেহারায়। সূর্য পাটে যাচ্ছে। গোধূলির সোনা রঙে নৈসর্গিক মুগ্ধতায় সেজেছে পুরো হ্রদ। চারপাশজুড়ে অপূর্ব এক নীরবতা। অনুভব করতে জানলে মৌনতারও প্রগাঢ় কোনো ভাষা থাকে! ফুরোমন পাহাড়ের রাজ্যপাটে পৌষের শীতলতা ভর করতে শুরু করেছে। সন্ধ্যার ছাই রং আস্তে আস্তে চারপাশের সোনালি জলরাশির ওপর আঁধারের চাদর ফেলে ঢেকে দিচ্ছে। কাপ্তাই নৌকাঘাটে ফেরার আগেই গ্রাস করল ঘুটঘুটে অন্ধকার।
ঘাটে নেমে সেখানের এক টংদোকানে চায়ের পর্ব সেরে ফিরে এলাম আস্তানায়। ক্যাম্পসাইটে তাঁবু বসানো হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। রাতের খাবারের ডাক পড়ল একটু আগেভাগেই। উদরপূর্তির পর তাঁবুতে ফিরে টের পেলাম হাড় কাঁপানো ঠান্ডা চেপে ধরছে। শীতে কাঁপতে কাঁপতে নদীর পাড়ে বসে কিছুক্ষণ চলল আড্ডা-গল্প। কিছু ফানুস আমরা সঙ্গে করে নিয়েছিলাম। সেগুলো ওড়াতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হলো। নদী থেকে আসা বাতাসের দাপটে দেশলাইয়ের কাঠিতে আগুন জ্বালানো যাচ্ছিল না। কয়েকবারের প্রচেষ্টার পর ওড়ানো গেল। রঙিন কাপড়ের ভেতরে আলোর প্রদীপ জ্বলতে জ্বলতে ওপরে উঠে যেতে থাকে। ঘাড় পেছনে বাঁকিয়ে একটানা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় তারাদের ভিড়ে কোনটা ফানুস সেটা আর ঠাহর করতে পারলাম না।
রাত বাড়ছে; ক্যাম্পিংয়ে আসা প্রায় সবাই ইতিমধ্যে ঢুকে পড়েছে যার যার তাঁবুতে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে গেছে নদীর অন্য পাশের ঘন বন। বন্যপ্রাণীবিষয়ক এক লেখকের বয়ানে জেনেছিলাম, কাপ্তাইয়ের ওই পাহাড়ি বনভূমিতে বসবাস করে বিড়াল গোত্রের সুন্দরতম এক সদস্য ক্লাউডেড লেপার্ড বা মেঘলা চিতা। স্থানীয়রা যাকে ডাকে লতা বাঘ বা গেছোবাঘ নামে। সারা দিন কোনো গাছের ডালে অলস শুয়ে থেকে নিশ্চয় তার সময় হয়েছে শিকারের সন্ধানে বের হওয়ার! নদীপাড়ের পাথরের চাতালে থাবার শক্ত নখে ভারসাম্য রক্ষা করে সামনে ঝুঁকে তৃষ্ণা মেটাতে মেটাতে দেখছে কি অন্য পাড়ের মনুষ্য ক্রিয়াকলাপ?
তাঁবুতে ঢুকে পড়ার পর শীত যেন আরও জেঁকে বসল। নদী থেকে ধেয়ে আসা বাতাসের সঙ্গে হাড় কাঁপানো শীত; দাঁতে দাঁত বাড়ি লাগছিল যেন। বেড হিসেবে প্রতিটি তাঁবুর মেঝেতে দেওয়া হয়েছে দুই ফালি ককশিট। নিচ থেকে ওঠা ঠান্ডা আটকানোর জন্য তা যথেষ্ট না হওয়ায় রাফাত তাঁবু থেকে বের হয়ে কোত্থেকে জানি আরও দুই ফালি ককশিট নিয়ে এল। এবার বেডটা মোটামুটি আরামদায়ক হয়ে উঠল। ঝিম ধরে থাকা শীতের রাতে নিস্তব্ধতা ছাপিয়ে কানে আসছিল ফোঁটা ফোঁটা কুয়াশা দলা বেঁধে তাঁবুর গায়ে আছড়ে পড়ার শব্দ। দূর থেকে থেমে থেমে কানে আসছিল একপাল শেয়ালের হুক্কাহুয়া।
ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে রাত কাটানোর পর ঘুম ভাঙল বেশ ভোরে। তাঁবুর চেইন খুলে বাইরে বেরিয়ে দেখি ইতিমধ্যে দলের অনেকেই উঠে পড়েছে। ভোরের কর্ণফুলী সবে আড়মোড়া ভাঙছে। কুয়াশার দঙ্গল সারা রাত নদীর ওপর ঘাপটি মেরে বসে থাকার পর আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। নদীর শান্ত জলে ছুঁয়ে ছুঁয়ে কুয়াশার অস্থির ছুটে চলার সঙ্গে যোগ দেয় একট-দুটো পানকৌড়ি। নদীর ওপর পাশের বনের চেহারাও হয়ে গেছে কুয়াশাময়।
জেলেরা তাঁদের নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন সেই ভোরেই। কোনোটা ছইওয়ালা, আবার কোনোটা খোলা ছোট নৌকা। হাড় কাঁপানো এমন শীতও যেন তাঁদের থোড়াই কেয়ার! আগের দিন কায়াকিংয়ের সময় জেলেদের কাছে জেনেছিলাম, নদীর অপর পাশের পাথুরে পাহাড়ের খাড়ির অংশ বেশি গভীর। ক্যাটফিশ গোত্রীয় মাছের আবাসস্থল সেই পাথুরে তলদেশে। আর পুরো নদীতেই চলাফেরা করে কার্পজাতীয় মাছ। এসব নিয়ে যখন ভাবছিলাম, হঠাৎই একটা বড়সড় মাছের ঘাই নদীর মাঝ বরাবর আলোড়ন তুলল! শান্ত পানিতে তৈরি হওয়া ঢেউয়ের গোলাকার বলয় চারপাশে প্রসারিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ল মিলিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
ক্যাম্পসাইট থেকে ফিরে নাশতার জন্য রেস্তোরাঁয় ডাক পড়ল। ডিম ভুনার সঙ্গে গরম-গরম খিচুড়িতে পেট পুরে নাশতা সেরে ঝটপট গোছগাছ সেরে বেরিয়ে পড়তে হলো। আমাদের পরের গন্তব্য রাঙামাটি শহর। কাপ্তাই হ্রদের পাশজুড়ে শৈল্পিক রেখা টেনে চলে গেছে যে পাহাড়শ্রেণি, তার ওপর দিয়ে চলে যাওয়া চড়াই-উতরাই পথ ধরে আমরা যাব। বাহনে চেপে বসার আগে ঘাড় ফিরিয়ে আরেকবার কর্ণফুলীর দিকে চোখ রেখে অস্ফুটে বললাম, ভালো থেকো কাপ্তাই; আবার দেখা হবে নিশ্চয়!
লেখক: ব্যাংক কর্মকর্তা

বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন...
১২ ঘণ্টা আগে
এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত।
১৬ ঘণ্টা আগে
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন।
১৭ ঘণ্টা আগে
অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি...
১৭ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। এই গ্রামগুলো শুধু সুন্দর নয়, একই সঙ্গে সামাজিক ও পরিবেশগত সচেতনতার অনন্য উদাহরণ।
পেংলিপুরান, ইন্দোনেশিয়া
বালির ব্যাংলি জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম পরিচ্ছন্ন গ্রাম পেংলিপুরান। এখানে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের বাড়ি, পাথরের রাস্তা, ফুল-বাগানসহ গ্রামীণ পরিবেশ অত্যন্ত যত্নসহকারে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। গ্রামটির প্রতিটি পরিবারের সবাই পরিবেশ বিষয়ে সচেতন। তারা বর্জ্য পুনর্ব্যবহার এবং জৈব বর্জ্য সার ব্যবহার করে। সেখানে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ। গ্রামটিতে গাড়ি প্রবেশ নিষিদ্ধ। এর পাশাপাশি পর্যটকের সংখ্যা সীমিত রাখার কারণে সেখানকার পরিবেশ ও শান্তি ঠিক নির্বিঘ্ন আছে। পেংলিপুরান গ্রামের অধিবাসীদের ঐতিহ্যের অংশ পেনজোর ও বান্টেন উৎসব। এসব গ্রামের হোমস্টেগুলোতে থাকলে স্থানীয়দের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া যায়। সুযোগ পাওয়া যায় তাদের সংস্কৃতি ও জীবনধারা দেখার। সব মিলিয়ে পরিচ্ছন্নতা ধরে রাখায় পেংলিপুরান গ্রাম পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
গিয়েথুর্ন, নেদারল্যান্ডস

‘উত্তরের ভেনিস’ বলে খ্যাত নেদারল্যান্ডসের গিয়েথুর্ন গ্রাম। সেখানে পাওয়া যায় না গাড়ির শব্দ, নেই রাস্তাঘাটে ব্যস্ততা। আছে শুধু শান্ত পানিপথ, ফুলে ভরা বাগান আর ছোট ছোট বাড়ি। গ্রামটিতে চলাচলের জন্য পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় নৌকার ওপর। আরেকটি ব্যবস্থা আছে, সেটা হলো হাঁটা। স্থানীয়রা পরিবেশ রক্ষায় বেশ সচেতন। গ্রামটির খালে পানিও থাকে বারো মাস। পুরো গ্রাম ঘুরেও কোনো প্লাস্টিক বর্জ্য চোখে পড়বে না। এ গ্রামের মানুষ প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট না করতে পর্যটকদের অনুরোধ করে থাকে সব সময়। শীতকালে বরফে জমে যাওয়া খালে জমে ওঠে স্থানীয় মানুষদের স্কেটিং। গিয়েথুর্ন যেন আধুনিক সভ্যতার কোলাহলের বাইরে প্রকৃতির কোলে শান্ত জীবনের এক নিদর্শন।
মাওলাইনং, ভারত
এশিয়ার পরিচ্ছন্নতম গ্রাম হিসেবে খ্যাত মাওলাইনং। গ্রামটিতে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয় এবং ব্যবহার করা হয় বাঁশের ডাস্টবিন। স্থানীয়রা নিয়মিত গ্রামের সবকিছু পরিষ্কার রাখে। গ্রামের প্রতিটি রাস্তা দেখলেই সেখানকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতার কথা উপলব্ধি করা যায়। গ্রামীণ সৌন্দর্যের উপভোগের পাশাপাশি সেখানকার পরিবেশ-সচেতনতা দেখতেও পর্যটকেরা ভিড় জমায় প্রতিবছর।

ইয়ানা, ভারত
দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের আছে ইয়ানা নামের এই গ্রাম। ঘন জঙ্গলের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা কালো চুনাপাথরের বিশাল শিলাখণ্ড ভৈরবেশ্বর ও মহাশক্তি শিখর গ্রামটির প্রধান আকর্ষণ। এখানের বাতাসে ভেসে বেড়ায় আসে বৃষ্টির গন্ধ আর পাখির ডাক। ইয়ানার বাসিন্দারা পরিচ্ছন্নতা ও প্রকৃতি রক্ষায় অত্যন্ত সচেতন। গ্রামটিতে প্লাস্টিক ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পর্যটকদেরও বর্জ্য নিজের সঙ্গে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। স্থানীয়রা পরিবেশবান্ধব পর্যটনকে উৎসাহিত করে, যাতে গ্রামের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক থাকে। গ্রামজুড়ে হাঁটার পথগুলো ঝকঝকে পরিষ্কার। আশপাশের ঝরনা ও পাহাড়ের দৃশ্য মিলিয়ে ইয়ানা ভ্রমণ বেশ উপভোগ্য অভিজ্ঞতা দেয়।
খোনোমা, ভারত

‘গ্রিন ভিলেজ’ নামে পরিচিত ভারতের নাগাল্যান্ডের খোনোমা গ্রাম। এটি ভারতের প্রথম পরিবেশবান্ধব গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। পাহাড় ঘেরা এই গ্রামের জনগণ একসময় শিকারনির্ভর জীবনে অভ্যস্ত ছিল। এখন গ্রামজুড়ে পরিষ্কার রাস্তা, কাঠের ছাদের ঐতিহ্যবাহী ঘর আর সবুজ ধানখেত মিলে তৈরি করেছে পোস্টকার্ডের মতো দৃশ্য। গ্রামটির মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস করে, তারা অতিথিপরায়ণ এবং নিজেদের সংস্কৃতি গর্বের সঙ্গে তুলে ধরে।
এই গ্রামগুলো শুধু ভ্রমণের জন্যই পরিচিতি পায়নি। এসব গ্রাম আমাদের শিখিয়েছে, আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শুধু সরকারের নির্দেশ থাকলেই হয় না। কমিউনিটি উদ্যোগ, সচেতনতা ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে পরিবেশ ও জীবনধারা পরিচ্ছন্ন তো বটেই, উন্নত করাও সম্ভব।
সূত্র: ট্রিপ অ্যাডভাইজার, ফোর্বস, ইন্ডিয়া ট্রাভেল

বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। এই গ্রামগুলো শুধু সুন্দর নয়, একই সঙ্গে সামাজিক ও পরিবেশগত সচেতনতার অনন্য উদাহরণ।
পেংলিপুরান, ইন্দোনেশিয়া
বালির ব্যাংলি জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম পরিচ্ছন্ন গ্রাম পেংলিপুরান। এখানে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের বাড়ি, পাথরের রাস্তা, ফুল-বাগানসহ গ্রামীণ পরিবেশ অত্যন্ত যত্নসহকারে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। গ্রামটির প্রতিটি পরিবারের সবাই পরিবেশ বিষয়ে সচেতন। তারা বর্জ্য পুনর্ব্যবহার এবং জৈব বর্জ্য সার ব্যবহার করে। সেখানে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ। গ্রামটিতে গাড়ি প্রবেশ নিষিদ্ধ। এর পাশাপাশি পর্যটকের সংখ্যা সীমিত রাখার কারণে সেখানকার পরিবেশ ও শান্তি ঠিক নির্বিঘ্ন আছে। পেংলিপুরান গ্রামের অধিবাসীদের ঐতিহ্যের অংশ পেনজোর ও বান্টেন উৎসব। এসব গ্রামের হোমস্টেগুলোতে থাকলে স্থানীয়দের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া যায়। সুযোগ পাওয়া যায় তাদের সংস্কৃতি ও জীবনধারা দেখার। সব মিলিয়ে পরিচ্ছন্নতা ধরে রাখায় পেংলিপুরান গ্রাম পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
গিয়েথুর্ন, নেদারল্যান্ডস

‘উত্তরের ভেনিস’ বলে খ্যাত নেদারল্যান্ডসের গিয়েথুর্ন গ্রাম। সেখানে পাওয়া যায় না গাড়ির শব্দ, নেই রাস্তাঘাটে ব্যস্ততা। আছে শুধু শান্ত পানিপথ, ফুলে ভরা বাগান আর ছোট ছোট বাড়ি। গ্রামটিতে চলাচলের জন্য পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় নৌকার ওপর। আরেকটি ব্যবস্থা আছে, সেটা হলো হাঁটা। স্থানীয়রা পরিবেশ রক্ষায় বেশ সচেতন। গ্রামটির খালে পানিও থাকে বারো মাস। পুরো গ্রাম ঘুরেও কোনো প্লাস্টিক বর্জ্য চোখে পড়বে না। এ গ্রামের মানুষ প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট না করতে পর্যটকদের অনুরোধ করে থাকে সব সময়। শীতকালে বরফে জমে যাওয়া খালে জমে ওঠে স্থানীয় মানুষদের স্কেটিং। গিয়েথুর্ন যেন আধুনিক সভ্যতার কোলাহলের বাইরে প্রকৃতির কোলে শান্ত জীবনের এক নিদর্শন।
মাওলাইনং, ভারত
এশিয়ার পরিচ্ছন্নতম গ্রাম হিসেবে খ্যাত মাওলাইনং। গ্রামটিতে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয় এবং ব্যবহার করা হয় বাঁশের ডাস্টবিন। স্থানীয়রা নিয়মিত গ্রামের সবকিছু পরিষ্কার রাখে। গ্রামের প্রতিটি রাস্তা দেখলেই সেখানকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতার কথা উপলব্ধি করা যায়। গ্রামীণ সৌন্দর্যের উপভোগের পাশাপাশি সেখানকার পরিবেশ-সচেতনতা দেখতেও পর্যটকেরা ভিড় জমায় প্রতিবছর।

ইয়ানা, ভারত
দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের আছে ইয়ানা নামের এই গ্রাম। ঘন জঙ্গলের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা কালো চুনাপাথরের বিশাল শিলাখণ্ড ভৈরবেশ্বর ও মহাশক্তি শিখর গ্রামটির প্রধান আকর্ষণ। এখানের বাতাসে ভেসে বেড়ায় আসে বৃষ্টির গন্ধ আর পাখির ডাক। ইয়ানার বাসিন্দারা পরিচ্ছন্নতা ও প্রকৃতি রক্ষায় অত্যন্ত সচেতন। গ্রামটিতে প্লাস্টিক ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পর্যটকদেরও বর্জ্য নিজের সঙ্গে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। স্থানীয়রা পরিবেশবান্ধব পর্যটনকে উৎসাহিত করে, যাতে গ্রামের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক থাকে। গ্রামজুড়ে হাঁটার পথগুলো ঝকঝকে পরিষ্কার। আশপাশের ঝরনা ও পাহাড়ের দৃশ্য মিলিয়ে ইয়ানা ভ্রমণ বেশ উপভোগ্য অভিজ্ঞতা দেয়।
খোনোমা, ভারত

‘গ্রিন ভিলেজ’ নামে পরিচিত ভারতের নাগাল্যান্ডের খোনোমা গ্রাম। এটি ভারতের প্রথম পরিবেশবান্ধব গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। পাহাড় ঘেরা এই গ্রামের জনগণ একসময় শিকারনির্ভর জীবনে অভ্যস্ত ছিল। এখন গ্রামজুড়ে পরিষ্কার রাস্তা, কাঠের ছাদের ঐতিহ্যবাহী ঘর আর সবুজ ধানখেত মিলে তৈরি করেছে পোস্টকার্ডের মতো দৃশ্য। গ্রামটির মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস করে, তারা অতিথিপরায়ণ এবং নিজেদের সংস্কৃতি গর্বের সঙ্গে তুলে ধরে।
এই গ্রামগুলো শুধু ভ্রমণের জন্যই পরিচিতি পায়নি। এসব গ্রাম আমাদের শিখিয়েছে, আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শুধু সরকারের নির্দেশ থাকলেই হয় না। কমিউনিটি উদ্যোগ, সচেতনতা ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে পরিবেশ ও জীবনধারা পরিচ্ছন্ন তো বটেই, উন্নত করাও সম্ভব।
সূত্র: ট্রিপ অ্যাডভাইজার, ফোর্বস, ইন্ডিয়া ট্রাভেল

পাহাড়ের গা পেঁচিয়ে ফিতার মতো চলে যাওয়া পিচঢালা পথ ধরে চলছে গাড়ি। যেতে যেতে পথের দুপাশ ঘন সবুজ হয়ে ওঠে। আন্দাজ করি, কাপ্তাইয়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমায় চলে এসেছি। আমাদের গন্তব্যস্থল কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীর তীরসংলগ্ন একটি ক্যাম্পসাইট। আমরা এসেছি ক্যাম্পিং ট্যুরে।
১৫ মার্চ ২০২৩
এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত।
১৬ ঘণ্টা আগে
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন।
১৭ ঘণ্টা আগে
অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি...
১৭ ঘণ্টা আগেছন্দা ব্যানার্জি

এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত। এই রূপ শুধু প্রকৃতিতেই নয়, বাঙালির খাবারের ঐতিহ্যেও ফুটে উঠেছে।
হেমন্তের খাবার বাঙালির কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। এই সময় নতুন ফসলের আমেজ নিয়ে আসে নতুন স্বাদ ও গন্ধ। নতুন চালের ভাত বাঙালির কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। এখন যে সবজির ফলন হয়, ফুল ফোটে, ফল হয়, তা দুই বাংলার মানুষের বিশেষ আকর্ষণ আর ঐতিহ্যেরও বটে।
বাংলায় হেমন্তের খাদ্য উৎসব শুরু হয় আশ্বিনের সংক্রান্তি থেকে। কথায় আছে, আশ্বিনে রাঁধে কার্তিকে খায়। কেউ কেউ বলেন ডাকসংক্রান্তি, আবার কেউ নলসংক্রান্তি। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে রাঢ়বঙ্গের দেশঘরে, ব্রত আর পার্বণের দিন শুরু হয় সে সময় থেকে। কৃষিজীবন আর অ-কৃষিজাত শাকসবজি, আনাজের কাছে ফিরে যাওয়ার দিন শুরু হয়। প্রায় হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাসের মধ্যে ভেসে ওঠে খানিকটা খড়কুটোর মতো—গাডুর ডাল, সজলান্ন কিংবা ব্রতের ভাত।
গোলাভরা আউশের আশ্বাস আর খেতভরা আমনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে গর্ভিণী ধানের সাধভক্ষণ—নলসংক্রান্তি। এই ধান্য লক্ষ্মীর পূজা আসলে পৃথিবীর কাছে ফিরে যাওয়ার দিন। গ্রাম-বাংলার অ-কৃষিজাত কন্দমূল ও গাছগাছালিকে চিনে নেওয়ার সময়ও হেমন্তকাল। বাংলাদেশে কত রকমের যে কচু ছিল, সেই সব দিয়ে, শালুকের গোড়া, মটর বা খেসারির ডাল দিয়ে যে গাডুর ডাল রান্না হয়, সেই ডালকে মানুষ বলে ‘আসমবারি’।
এই হেমন্তের শুরুতে আসে ধন্বন্তরি বা অশ্বিনী দেবের পূজা। এদের ডাকপুরুষও বলে। সেই পূজার উপোস ভাঙতে এই ডাল আর ব্রতের ভাত খাওয়া হয়। ব্রতের ভাত রান্না হয় শ্যামা চালে। রেসিপি আলাদা। এই ভাতের সঙ্গে ডাল, নারকেল, পাকা কলা, গুড়, গ্রাম-বাংলার চালের পিঠা সব দেবতাকে নিবেদন করে তারপর খাওয়া হয়। আসলে হেমন্ত ঋতুতে এই পূজাগুলো আমাদের শেখায়, কোন শস্য কখন খেতে হয়, কোন শস্য বিষাক্ত কোন সময়ে।
হেমন্ত ঋতুতে ফসল কাটাকে কেন্দ্র করে নবান্ন উৎসব হয়। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব এই নবান্ন। নতুন আমন ধান কাটার পর তা থেকে চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব এটি। কাঁচা দুধ, ছোট-বড় ছোলা, মটর, গোটা মটর, গোটা সবুজ মুগসহ ভেজানো ডালজাতীয় সব শস্যদানা, কামরাঙা, পানিফল, পেয়ারা, কমলালেবু, নারকেল ইত্যাদি হেমন্তে উৎপাদিত নানান ফলের টুকরা আর আমন ধান থেকে হওয়া নতুন চাল দিয়ে নবান্ন উৎসব হয়।
বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ফসল তোলার পরের দিনেই নতুন চালের পায়েস, ক্ষীর, পিঠা আত্মীয়স্বজন এবং পড়শিদের ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়। হেমন্ত ঋতুর শুরুতে খেজুর ও তালগাছের রস গ্রাম-বাংলার অত্যন্ত প্রিয় পানীয়। ভোরে সূর্যের তেজ বাড়ার আগেই তা করতে হয় এই পানীয়। এই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় খেজুর বা তালের গুড়।
হেমন্তে নতুন চাল থেকে তৈরি হয় খই। নতুন গুড় ও খই তৈরি হয় মোয়া, খেজুরের নতুন গুড়ের পায়েস, ক্ষীর, পিঠের আয়োজনে উৎসব শুরু হয়ে যায় পৌষ পার্বণের আগেই। এ ছাড়া হেমন্তকালের শুরুতে নদী, নালা, পুকুর, খাল, বিল—এসবের জল শুকিয়ে যেতে শুরু করে। এই সময় অন্যান্য পরিচিত মাছের সঙ্গে পুঁটি, চাঁদা, খলসে, গেঁড়ি গুগলি এবং কাঁকড়া পাওয়া যায় প্রচুর। তাই সাধারণ বাঙালি ঘরে এসব দিয়ে রান্না করা হয় বিভিন্ন পদ। এসব খাবার শরীরে পুষ্টি ও প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করে পুরো বছরের জন্য।
এই সবকিছু মিলিয়ে হেমন্তের সুঘ্রাণ দুই বাংলায় ছড়িয়ে থাকে।
ছন্দা ব্যানার্জি, রন্ধনশিল্পী ও খাদ্যবিষয়ক লেখক

এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত। এই রূপ শুধু প্রকৃতিতেই নয়, বাঙালির খাবারের ঐতিহ্যেও ফুটে উঠেছে।
হেমন্তের খাবার বাঙালির কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। এই সময় নতুন ফসলের আমেজ নিয়ে আসে নতুন স্বাদ ও গন্ধ। নতুন চালের ভাত বাঙালির কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। এখন যে সবজির ফলন হয়, ফুল ফোটে, ফল হয়, তা দুই বাংলার মানুষের বিশেষ আকর্ষণ আর ঐতিহ্যেরও বটে।
বাংলায় হেমন্তের খাদ্য উৎসব শুরু হয় আশ্বিনের সংক্রান্তি থেকে। কথায় আছে, আশ্বিনে রাঁধে কার্তিকে খায়। কেউ কেউ বলেন ডাকসংক্রান্তি, আবার কেউ নলসংক্রান্তি। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে রাঢ়বঙ্গের দেশঘরে, ব্রত আর পার্বণের দিন শুরু হয় সে সময় থেকে। কৃষিজীবন আর অ-কৃষিজাত শাকসবজি, আনাজের কাছে ফিরে যাওয়ার দিন শুরু হয়। প্রায় হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাসের মধ্যে ভেসে ওঠে খানিকটা খড়কুটোর মতো—গাডুর ডাল, সজলান্ন কিংবা ব্রতের ভাত।
গোলাভরা আউশের আশ্বাস আর খেতভরা আমনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে গর্ভিণী ধানের সাধভক্ষণ—নলসংক্রান্তি। এই ধান্য লক্ষ্মীর পূজা আসলে পৃথিবীর কাছে ফিরে যাওয়ার দিন। গ্রাম-বাংলার অ-কৃষিজাত কন্দমূল ও গাছগাছালিকে চিনে নেওয়ার সময়ও হেমন্তকাল। বাংলাদেশে কত রকমের যে কচু ছিল, সেই সব দিয়ে, শালুকের গোড়া, মটর বা খেসারির ডাল দিয়ে যে গাডুর ডাল রান্না হয়, সেই ডালকে মানুষ বলে ‘আসমবারি’।
এই হেমন্তের শুরুতে আসে ধন্বন্তরি বা অশ্বিনী দেবের পূজা। এদের ডাকপুরুষও বলে। সেই পূজার উপোস ভাঙতে এই ডাল আর ব্রতের ভাত খাওয়া হয়। ব্রতের ভাত রান্না হয় শ্যামা চালে। রেসিপি আলাদা। এই ভাতের সঙ্গে ডাল, নারকেল, পাকা কলা, গুড়, গ্রাম-বাংলার চালের পিঠা সব দেবতাকে নিবেদন করে তারপর খাওয়া হয়। আসলে হেমন্ত ঋতুতে এই পূজাগুলো আমাদের শেখায়, কোন শস্য কখন খেতে হয়, কোন শস্য বিষাক্ত কোন সময়ে।
হেমন্ত ঋতুতে ফসল কাটাকে কেন্দ্র করে নবান্ন উৎসব হয়। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব এই নবান্ন। নতুন আমন ধান কাটার পর তা থেকে চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব এটি। কাঁচা দুধ, ছোট-বড় ছোলা, মটর, গোটা মটর, গোটা সবুজ মুগসহ ভেজানো ডালজাতীয় সব শস্যদানা, কামরাঙা, পানিফল, পেয়ারা, কমলালেবু, নারকেল ইত্যাদি হেমন্তে উৎপাদিত নানান ফলের টুকরা আর আমন ধান থেকে হওয়া নতুন চাল দিয়ে নবান্ন উৎসব হয়।
বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ফসল তোলার পরের দিনেই নতুন চালের পায়েস, ক্ষীর, পিঠা আত্মীয়স্বজন এবং পড়শিদের ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়। হেমন্ত ঋতুর শুরুতে খেজুর ও তালগাছের রস গ্রাম-বাংলার অত্যন্ত প্রিয় পানীয়। ভোরে সূর্যের তেজ বাড়ার আগেই তা করতে হয় এই পানীয়। এই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় খেজুর বা তালের গুড়।
হেমন্তে নতুন চাল থেকে তৈরি হয় খই। নতুন গুড় ও খই তৈরি হয় মোয়া, খেজুরের নতুন গুড়ের পায়েস, ক্ষীর, পিঠের আয়োজনে উৎসব শুরু হয়ে যায় পৌষ পার্বণের আগেই। এ ছাড়া হেমন্তকালের শুরুতে নদী, নালা, পুকুর, খাল, বিল—এসবের জল শুকিয়ে যেতে শুরু করে। এই সময় অন্যান্য পরিচিত মাছের সঙ্গে পুঁটি, চাঁদা, খলসে, গেঁড়ি গুগলি এবং কাঁকড়া পাওয়া যায় প্রচুর। তাই সাধারণ বাঙালি ঘরে এসব দিয়ে রান্না করা হয় বিভিন্ন পদ। এসব খাবার শরীরে পুষ্টি ও প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করে পুরো বছরের জন্য।
এই সবকিছু মিলিয়ে হেমন্তের সুঘ্রাণ দুই বাংলায় ছড়িয়ে থাকে।
ছন্দা ব্যানার্জি, রন্ধনশিল্পী ও খাদ্যবিষয়ক লেখক

পাহাড়ের গা পেঁচিয়ে ফিতার মতো চলে যাওয়া পিচঢালা পথ ধরে চলছে গাড়ি। যেতে যেতে পথের দুপাশ ঘন সবুজ হয়ে ওঠে। আন্দাজ করি, কাপ্তাইয়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমায় চলে এসেছি। আমাদের গন্তব্যস্থল কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীর তীরসংলগ্ন একটি ক্যাম্পসাইট। আমরা এসেছি ক্যাম্পিং ট্যুরে।
১৫ মার্চ ২০২৩
বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন...
১২ ঘণ্টা আগে
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন।
১৭ ঘণ্টা আগে
অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি...
১৭ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মেষ
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন। যদি ভাবা সম্ভব না হয়, তবে ভাবুন, ‘হতে পারে এটা আমার জীবনের সেরা কেনাকাটা!’ জ্যোতিষীরা বলছেন, প্রিয়জনের কুকর্মের জন্য বাড়িতে বিবাদ হতে পারে। সম্ভবত আপনার প্রিয়জন লুকিয়ে রাখা চকলেট বা রিমোট কন্ট্রোল চুরি করেছে—এর চেয়ে বড় কুকর্ম আর কী হতে পারে! কেউ যদি ‘বিনিয়োগ করুন, দ্বিগুণ হবে’ বলে, তবে দৌড়ে পালান। দৌড়াতে না পারলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকুন।
বৃষ
অফিসে কোনো সহকর্মীর সঙ্গে বিবাদ হতে পারে। মনে রাখবেন, বৃষ রাশির জাতক হিসেবে আপনার জেদ বা একগুঁয়েমি ষাঁড়ের মতোই খ্যাত! অফিসের ঝগড়াটা সম্ভবত বড় কোনো বিষয় নিয়ে হবে না—হতে পারে কে এসির তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি কমিয়েছিল, অথবা কে শেষ বিস্কুটটা খেলো। যদি কেউ কোনো ‘অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে অধিক চর্চা’ করতে নিষেধ করে, তবে ধরে নিন সে আপনার নতুন প্রতিভাবান সহকর্মী, যে আপনার কফির বয়াম চুরি করতে পারে। অবসাদ এড়াতে, দুপুরে একটা শর্ট ন্যাপ নিন। যদি বস ধরে ফেলে, বলুন—ধ্যান করছিলাম, নক্ষত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছিলাম। আজ শান্ত থাকুন। যদি খুব রাগ হয়, তবে চেঁচানোর বদলে মনে মনে রবীন্দ্রসংগীত শুনুন।
মিথুন
নতুন প্রকল্পে কাজ শুরুর আগে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করে নিন। আপনার শত্রু আজ সক্রিয় থাকবে, কিন্তু আর্থিক লাভের সম্ভাবনাও রয়েছে। আপনার ‘নতুন প্রকল্প’ যদি হয় ফ্রিজের পুরোনো খাবার পরিষ্কার করা, তবে সত্যিই ভালোভাবে চিন্তা করুন—গ্যাস মাস্ক লাগবে কি না। বন্ধুরা আজ আপনার সঙ্গে ভালো সময় কাটাবে, কারণ আপনার নতুন আয়ের খবর তারা জেনে গেছে। শত্রু সক্রিয় মানে এই নয় যে কেউ আপনার ক্ষতি করবে; হতে পারে সে শুধু আপনার ফেসবুক পোস্টগুলোতে ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দিয়ে যাবে। এর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক আর কী আছে! আজ দ্বৈত-চরিত্রটি কাজে লাগান। এক মিথুন কাজ করবে, অন্য মিথুন হিসাব রাখবে।
কর্কট
দাম্পত্য জীবন সুখে কাটবে এবং প্রায় সব কাজই পূর্ণ হবে। তবে কথা বলার সময় সাবধান থাকুন। আপনার দাম্পত্য জীবন সুখে কাটবে কারণ...সম্ভবত সঙ্গী আজ সারা দিন ব্যস্ত থাকবেন এবং রিমোট কন্ট্রোলটির ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য পাবেন। আপনার সব কাজ পূর্ণ হবে, এমনকি সেই কাজটিও—যেটা গত তিন সপ্তাহ ধরে ‘পরে করব’ বলে ফেলে রেখেছিলেন। সাবধানতা অবলম্বন করে কথা বলুন—বিশেষ করে যখন কেউ জিজ্ঞেস করবে, ‘তুমি কি আমার জন্য কিছু কিনেছ?’ মিথ্যা বলা বারণ। যাত্রা শুভ।
সিংহ
পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন। অন্য কারও বিবাদে জড়াবেন না। আয় বাড়বে। আয় বাড়ার সুসংবাদ শুনেছেন, তাই আজ নিজেকে রাজা বা রানির মতো অনুভব করবেন। তবে অন্য কারও বিবাদে জড়াবেন না। কারণ, যেই মুহূর্তে মাঝখানে মধ্যস্থতা করতে যাবেন, সবাই আপনার বিরুদ্ধেই জোট বাঁধবে—সিংহ মশাই, সাবধান! ‘সামাজিক কাজে অংশ নিতে পারেন’ মানে সম্ভবত পাড়ার কোনো জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রচুর খাবার খেতে পারেন। আপনার মনোমুগ্ধকর মনোভাব আজ কাজে লাগান—কিন্তু বিল মেটানোর সময় ভেজা বিড়াল হয়ে থাকুন।
কন্যা
আলস্য করবেন না। অচেনা ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকুন। ব্যবসা সংক্রান্ত কাজ পূর্ণ হবে। গ্রহরা যেন আজ আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে শাসিয়ে গেছে—‘আলস্য নৈব নৈব চ!’ যদি সকালে অ্যালার্ম বাজানোর পরও বিছানায় থাকার চেষ্টা করেন, তবে ধরে নিন, গ্রহদের কাছ থেকে কড়া বার্তা আসবে। অচেনা ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকুন, কারণ আজকের দিনে আপনার সবচেয়ে অচেনা ব্যক্তিটি হতে পারে সেই যিনি নিজেকে ‘ডায়েট চার্ট’ বা ‘ব্যালেন্স শিট’ বলে দাবি করছেন। আলস্য না করে অন্তত একবার টেবিল গুছিয়ে নিন—সেটাই আজ আপনার সবচেয়ে বড় সাফল্য। পরিবারে আনন্দের পরিবেশ থাকবে, কারণ আপনি অবশেষে কাজ শুরু করেছেন!
তুলা
চাকরিজীবীরা সুখবর পাবেন। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। ঝুঁকি নেবেন না। চাকরিজীবীরা সুখবর পাবেন, যেমন—বস অবশেষে আপনার পাঠানো ই-মেলের রিপ্লাই দিয়েছেন। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন, কিন্তু সাবধান—সেটা যেন টিভি দেখার প্রতিযোগিতা না হয়। ‘ঝুঁকি নেবেন না’ মানে হলো, আজ কোনোমতেই সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করবেন না যে তার ওজন বেড়েছে কিনা। নতুন মানুষদের সঙ্গে দেখা হতে পারে, কিন্তু তারা আপনাকে নতুন দায়িত্বের ফাঁদে ফেলতে পারে—তাই হাসি-খুশি থাকুন, কিন্তু নীরব। আনন্দে দিন কাটবে, যদি আপনি মনের ভেতরের বিচারপতিকে আজ ছুটি দিতে পারেন।
বৃশ্চিক
আবেগগত যোগাযোগে আরও ভালো থাকবেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হবে এবং শুভ সংবাদ পাবেন। আজ আবেগগতভাবে এত ভালো থাকবেন যে পথে কুকুর দেখলেও তাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করতে পারে! আপনার ‘শুভ সংবাদ’ সম্ভবত এটাই যে আপনি পুরোনো প্যান্টের পকেটে কিছু টাকা খুঁজে পেয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হবে—যেমন ধরুন, আপনি ইউটিউবের শর্টস দেখা শেষ করে অবশেষে মূল বা লং ভিডিও দেখা শুরু করবেন। অন্যদের আকৃষ্ট করার জন্য কথা বলার সময় সুন্দর থাকুন। তবে সুন্দর কথাগুলো যেন লোন বা ধার চাওয়ার জন্য ব্যবহার না হয়। আর্থিক বিষয়গুলো গতি পাবে, তাই আজই পুরোনো লোনগুলো পরিশোধ করার কথা ভাবুন...যদি পকেটে কিছু থাকে।
ধনু
নিজেকে অস্বস্তিকর ও চাপের মধ্যে অনুভব করতে পারেন। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকুন এবং খাওয়া-দাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন। আপনি অস্বস্তিকর বোধ করবেন কারণ আপনার মন আপনাকে সারা বিশ্বে ঘোরার জন্য চাপ দিচ্ছে, কিন্তু আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ঘরে বসে নেটফ্লিক্স দেখতে বলছে। ‘খাওয়া-দাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন’ এই পরামর্শটি আপনার জন্য আজ সম্পূর্ণ হাস্যকর। গ্রহরা কি জানে না যে, পৃথিবীতে এত মুখরোচক খাবার থাকতে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব? নেতিবাচক আবেগ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন, যেমন ধরুন—অন্যের খাবার শেষ হয়ে গেলেও আপনার প্লেটে আরও আছে, এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। ইতিবাচক থাকুন! আজ আপনি যা কিছু খাবেন, সেটাই আপনার জন্য শক্তি—এই সহজ সত্যিটা মেনে নিন।
মকর
লক্ষ্যের ওপর মনোযোগ বজায় থাকবে। কাঙ্ক্ষিত অফার পাবেন এবং কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। মকর রাশির জাতক হিসেবে আপনার লক্ষ্যের ওপর মনোযোগ বজায় থাকবে—বিশেষ করে, যদি লক্ষ্যটি হয় সময়মতো রাতের খাবার খাওয়া। আর আপনি কাঙ্ক্ষিত অফার পাবেন! সম্ভবত কোনো প্রিয় রেস্টুরেন্টে বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি-এর অফার। কাজের গতি কার্যকর থাকবে, যার ফলে অফিস থেকে সবার আগে বেরোনোর সুযোগ পাবেন। পেশাগত স্বাচ্ছন্দ্য বাড়বে— চেয়ারটা আজ আপনাকে সবচেয়ে বেশি আরাম দেবে। ব্যক্তিগত জীবনে ধৈর্য ও ধর্ম নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে—বিশেষ করে যখন কেউ আপনাকে কাজ শেখাতে আসে।
কুম্ভ
কাজের ব্যস্ততা বাড়তে পারে। স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন এবং পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিন। কাজের ব্যস্ততা বাড়বে, কারণ সমস্ত কাজ ফেলে রেখে নতুন করে কাজ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আজ যোগব্যায়াম করুন। যদি যোগব্যায়াম করতে আলস্য লাগে, তবে অন্তত ফ্রিজ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করুন, সেটাও একপ্রকার ব্যায়াম। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিন—কিন্তু তার আগে নিশ্চিত হন যে, তাদের টিভি সিরিয়ালের সময়টা নষ্ট করছেন না। আজকের দিনটি স্বাভাবিক হতে চলেছে, মানে কোনো অলৌকিক ঘটনা না ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। ক্যারিয়ারে রাজনীতির শিকার হওয়া এড়িয়ে চলুন। অর্থাৎ, বসের কানের কাছে কোনো গসিপ করতে যাবেন না।
মীন
প্রেমের জীবনে আজ একটি চমকের সম্মুখীন হতে পারেন। আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো। শরীরকে বিশ্রাম দিন। প্রেমের জীবনে ‘চমক’ হয়তো এটাই যে, আপনার সঙ্গী আজ নিজেই শেষ চকলেটটি না খেয়ে আপনার জন্য রেখে দিয়েছে। আপনার আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো, কিন্তু সেটার ব্যবহার করে একটা লটারি না কেটে বরং নিজের জন্য একটা ভালো কফি কিনুন। শরীরকে বিশ্রাম দিন—কিন্তু বিশ্রাম নিতে নিতে যদি ঘুমিয়ে পড়েন, তবে গ্রহরা আপনাকে দোষ দেবে না। কর্মক্ষেত্রের কাজ দ্রুত শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরুন। জ্যোতিষীরা বলছেন, পরিবারের সঙ্গে পার্কে বা সিনেমা দেখতে যেতে পারেন। যদি সিনেমা দেখতে ভালো না লাগে, তবে একাই বারান্দায় বসে প্রকৃতির নাটক দেখতে পারেন! আপনার নেওয়া একটি দৃঢ় পদক্ষেপ আজ ইতিবাচক ফল দেবে। হয়তো অবশেষে জামাকাপড় কাচার কাজটা শুরু করে দিয়েছেন!

মেষ
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন। যদি ভাবা সম্ভব না হয়, তবে ভাবুন, ‘হতে পারে এটা আমার জীবনের সেরা কেনাকাটা!’ জ্যোতিষীরা বলছেন, প্রিয়জনের কুকর্মের জন্য বাড়িতে বিবাদ হতে পারে। সম্ভবত আপনার প্রিয়জন লুকিয়ে রাখা চকলেট বা রিমোট কন্ট্রোল চুরি করেছে—এর চেয়ে বড় কুকর্ম আর কী হতে পারে! কেউ যদি ‘বিনিয়োগ করুন, দ্বিগুণ হবে’ বলে, তবে দৌড়ে পালান। দৌড়াতে না পারলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকুন।
বৃষ
অফিসে কোনো সহকর্মীর সঙ্গে বিবাদ হতে পারে। মনে রাখবেন, বৃষ রাশির জাতক হিসেবে আপনার জেদ বা একগুঁয়েমি ষাঁড়ের মতোই খ্যাত! অফিসের ঝগড়াটা সম্ভবত বড় কোনো বিষয় নিয়ে হবে না—হতে পারে কে এসির তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি কমিয়েছিল, অথবা কে শেষ বিস্কুটটা খেলো। যদি কেউ কোনো ‘অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে অধিক চর্চা’ করতে নিষেধ করে, তবে ধরে নিন সে আপনার নতুন প্রতিভাবান সহকর্মী, যে আপনার কফির বয়াম চুরি করতে পারে। অবসাদ এড়াতে, দুপুরে একটা শর্ট ন্যাপ নিন। যদি বস ধরে ফেলে, বলুন—ধ্যান করছিলাম, নক্ষত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছিলাম। আজ শান্ত থাকুন। যদি খুব রাগ হয়, তবে চেঁচানোর বদলে মনে মনে রবীন্দ্রসংগীত শুনুন।
মিথুন
নতুন প্রকল্পে কাজ শুরুর আগে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করে নিন। আপনার শত্রু আজ সক্রিয় থাকবে, কিন্তু আর্থিক লাভের সম্ভাবনাও রয়েছে। আপনার ‘নতুন প্রকল্প’ যদি হয় ফ্রিজের পুরোনো খাবার পরিষ্কার করা, তবে সত্যিই ভালোভাবে চিন্তা করুন—গ্যাস মাস্ক লাগবে কি না। বন্ধুরা আজ আপনার সঙ্গে ভালো সময় কাটাবে, কারণ আপনার নতুন আয়ের খবর তারা জেনে গেছে। শত্রু সক্রিয় মানে এই নয় যে কেউ আপনার ক্ষতি করবে; হতে পারে সে শুধু আপনার ফেসবুক পোস্টগুলোতে ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দিয়ে যাবে। এর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক আর কী আছে! আজ দ্বৈত-চরিত্রটি কাজে লাগান। এক মিথুন কাজ করবে, অন্য মিথুন হিসাব রাখবে।
কর্কট
দাম্পত্য জীবন সুখে কাটবে এবং প্রায় সব কাজই পূর্ণ হবে। তবে কথা বলার সময় সাবধান থাকুন। আপনার দাম্পত্য জীবন সুখে কাটবে কারণ...সম্ভবত সঙ্গী আজ সারা দিন ব্যস্ত থাকবেন এবং রিমোট কন্ট্রোলটির ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য পাবেন। আপনার সব কাজ পূর্ণ হবে, এমনকি সেই কাজটিও—যেটা গত তিন সপ্তাহ ধরে ‘পরে করব’ বলে ফেলে রেখেছিলেন। সাবধানতা অবলম্বন করে কথা বলুন—বিশেষ করে যখন কেউ জিজ্ঞেস করবে, ‘তুমি কি আমার জন্য কিছু কিনেছ?’ মিথ্যা বলা বারণ। যাত্রা শুভ।
সিংহ
পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন। অন্য কারও বিবাদে জড়াবেন না। আয় বাড়বে। আয় বাড়ার সুসংবাদ শুনেছেন, তাই আজ নিজেকে রাজা বা রানির মতো অনুভব করবেন। তবে অন্য কারও বিবাদে জড়াবেন না। কারণ, যেই মুহূর্তে মাঝখানে মধ্যস্থতা করতে যাবেন, সবাই আপনার বিরুদ্ধেই জোট বাঁধবে—সিংহ মশাই, সাবধান! ‘সামাজিক কাজে অংশ নিতে পারেন’ মানে সম্ভবত পাড়ার কোনো জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রচুর খাবার খেতে পারেন। আপনার মনোমুগ্ধকর মনোভাব আজ কাজে লাগান—কিন্তু বিল মেটানোর সময় ভেজা বিড়াল হয়ে থাকুন।
কন্যা
আলস্য করবেন না। অচেনা ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকুন। ব্যবসা সংক্রান্ত কাজ পূর্ণ হবে। গ্রহরা যেন আজ আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে শাসিয়ে গেছে—‘আলস্য নৈব নৈব চ!’ যদি সকালে অ্যালার্ম বাজানোর পরও বিছানায় থাকার চেষ্টা করেন, তবে ধরে নিন, গ্রহদের কাছ থেকে কড়া বার্তা আসবে। অচেনা ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকুন, কারণ আজকের দিনে আপনার সবচেয়ে অচেনা ব্যক্তিটি হতে পারে সেই যিনি নিজেকে ‘ডায়েট চার্ট’ বা ‘ব্যালেন্স শিট’ বলে দাবি করছেন। আলস্য না করে অন্তত একবার টেবিল গুছিয়ে নিন—সেটাই আজ আপনার সবচেয়ে বড় সাফল্য। পরিবারে আনন্দের পরিবেশ থাকবে, কারণ আপনি অবশেষে কাজ শুরু করেছেন!
তুলা
চাকরিজীবীরা সুখবর পাবেন। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। ঝুঁকি নেবেন না। চাকরিজীবীরা সুখবর পাবেন, যেমন—বস অবশেষে আপনার পাঠানো ই-মেলের রিপ্লাই দিয়েছেন। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন, কিন্তু সাবধান—সেটা যেন টিভি দেখার প্রতিযোগিতা না হয়। ‘ঝুঁকি নেবেন না’ মানে হলো, আজ কোনোমতেই সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করবেন না যে তার ওজন বেড়েছে কিনা। নতুন মানুষদের সঙ্গে দেখা হতে পারে, কিন্তু তারা আপনাকে নতুন দায়িত্বের ফাঁদে ফেলতে পারে—তাই হাসি-খুশি থাকুন, কিন্তু নীরব। আনন্দে দিন কাটবে, যদি আপনি মনের ভেতরের বিচারপতিকে আজ ছুটি দিতে পারেন।
বৃশ্চিক
আবেগগত যোগাযোগে আরও ভালো থাকবেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হবে এবং শুভ সংবাদ পাবেন। আজ আবেগগতভাবে এত ভালো থাকবেন যে পথে কুকুর দেখলেও তাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করতে পারে! আপনার ‘শুভ সংবাদ’ সম্ভবত এটাই যে আপনি পুরোনো প্যান্টের পকেটে কিছু টাকা খুঁজে পেয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হবে—যেমন ধরুন, আপনি ইউটিউবের শর্টস দেখা শেষ করে অবশেষে মূল বা লং ভিডিও দেখা শুরু করবেন। অন্যদের আকৃষ্ট করার জন্য কথা বলার সময় সুন্দর থাকুন। তবে সুন্দর কথাগুলো যেন লোন বা ধার চাওয়ার জন্য ব্যবহার না হয়। আর্থিক বিষয়গুলো গতি পাবে, তাই আজই পুরোনো লোনগুলো পরিশোধ করার কথা ভাবুন...যদি পকেটে কিছু থাকে।
ধনু
নিজেকে অস্বস্তিকর ও চাপের মধ্যে অনুভব করতে পারেন। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকুন এবং খাওয়া-দাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন। আপনি অস্বস্তিকর বোধ করবেন কারণ আপনার মন আপনাকে সারা বিশ্বে ঘোরার জন্য চাপ দিচ্ছে, কিন্তু আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ঘরে বসে নেটফ্লিক্স দেখতে বলছে। ‘খাওয়া-দাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন’ এই পরামর্শটি আপনার জন্য আজ সম্পূর্ণ হাস্যকর। গ্রহরা কি জানে না যে, পৃথিবীতে এত মুখরোচক খাবার থাকতে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব? নেতিবাচক আবেগ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন, যেমন ধরুন—অন্যের খাবার শেষ হয়ে গেলেও আপনার প্লেটে আরও আছে, এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। ইতিবাচক থাকুন! আজ আপনি যা কিছু খাবেন, সেটাই আপনার জন্য শক্তি—এই সহজ সত্যিটা মেনে নিন।
মকর
লক্ষ্যের ওপর মনোযোগ বজায় থাকবে। কাঙ্ক্ষিত অফার পাবেন এবং কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। মকর রাশির জাতক হিসেবে আপনার লক্ষ্যের ওপর মনোযোগ বজায় থাকবে—বিশেষ করে, যদি লক্ষ্যটি হয় সময়মতো রাতের খাবার খাওয়া। আর আপনি কাঙ্ক্ষিত অফার পাবেন! সম্ভবত কোনো প্রিয় রেস্টুরেন্টে বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি-এর অফার। কাজের গতি কার্যকর থাকবে, যার ফলে অফিস থেকে সবার আগে বেরোনোর সুযোগ পাবেন। পেশাগত স্বাচ্ছন্দ্য বাড়বে— চেয়ারটা আজ আপনাকে সবচেয়ে বেশি আরাম দেবে। ব্যক্তিগত জীবনে ধৈর্য ও ধর্ম নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে—বিশেষ করে যখন কেউ আপনাকে কাজ শেখাতে আসে।
কুম্ভ
কাজের ব্যস্ততা বাড়তে পারে। স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন এবং পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিন। কাজের ব্যস্ততা বাড়বে, কারণ সমস্ত কাজ ফেলে রেখে নতুন করে কাজ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আজ যোগব্যায়াম করুন। যদি যোগব্যায়াম করতে আলস্য লাগে, তবে অন্তত ফ্রিজ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করুন, সেটাও একপ্রকার ব্যায়াম। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিন—কিন্তু তার আগে নিশ্চিত হন যে, তাদের টিভি সিরিয়ালের সময়টা নষ্ট করছেন না। আজকের দিনটি স্বাভাবিক হতে চলেছে, মানে কোনো অলৌকিক ঘটনা না ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। ক্যারিয়ারে রাজনীতির শিকার হওয়া এড়িয়ে চলুন। অর্থাৎ, বসের কানের কাছে কোনো গসিপ করতে যাবেন না।
মীন
প্রেমের জীবনে আজ একটি চমকের সম্মুখীন হতে পারেন। আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো। শরীরকে বিশ্রাম দিন। প্রেমের জীবনে ‘চমক’ হয়তো এটাই যে, আপনার সঙ্গী আজ নিজেই শেষ চকলেটটি না খেয়ে আপনার জন্য রেখে দিয়েছে। আপনার আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো, কিন্তু সেটার ব্যবহার করে একটা লটারি না কেটে বরং নিজের জন্য একটা ভালো কফি কিনুন। শরীরকে বিশ্রাম দিন—কিন্তু বিশ্রাম নিতে নিতে যদি ঘুমিয়ে পড়েন, তবে গ্রহরা আপনাকে দোষ দেবে না। কর্মক্ষেত্রের কাজ দ্রুত শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরুন। জ্যোতিষীরা বলছেন, পরিবারের সঙ্গে পার্কে বা সিনেমা দেখতে যেতে পারেন। যদি সিনেমা দেখতে ভালো না লাগে, তবে একাই বারান্দায় বসে প্রকৃতির নাটক দেখতে পারেন! আপনার নেওয়া একটি দৃঢ় পদক্ষেপ আজ ইতিবাচক ফল দেবে। হয়তো অবশেষে জামাকাপড় কাচার কাজটা শুরু করে দিয়েছেন!

পাহাড়ের গা পেঁচিয়ে ফিতার মতো চলে যাওয়া পিচঢালা পথ ধরে চলছে গাড়ি। যেতে যেতে পথের দুপাশ ঘন সবুজ হয়ে ওঠে। আন্দাজ করি, কাপ্তাইয়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমায় চলে এসেছি। আমাদের গন্তব্যস্থল কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীর তীরসংলগ্ন একটি ক্যাম্পসাইট। আমরা এসেছি ক্যাম্পিং ট্যুরে।
১৫ মার্চ ২০২৩
বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন...
১২ ঘণ্টা আগে
এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত।
১৬ ঘণ্টা আগে
অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি...
১৭ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি ও ছবি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
উপকরণ
ইলিশের রিং পিস ৫ থেকে ৬ টুকরা, হলুদগুঁড়া এক চা-চামচ, শুকনা মরিচ ৭ থেকে ৮টি, রসুনের কোয়া ১২ থেকে ১৪টি, সিরকা ৬ থেকে ৭ টেবিল চামচ, সরিষাবাটা ৪ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, সরিষার তেল ৬ থেকে ৭ টেবিল চামচ।
প্রণালি
রিং পিস করা ইলিশ মাছ লবণ মাখিয়ে নেওয়ার পর ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর শুকনা মরিচ, রসুনের কোয়া, সরিষাবাটা, লবণ, হলুদগুঁড়া, সিরকা দিয়ে ব্লেন্ডারে অথবা পাটায় পেস্ট করে নিন। এবার হাঁড়িতে সরিষার তেল দিন। তারপর পেস্ট করা মিশ্রণটি দিয়ে নেড়ে নিন। এরপর লবণ দিয়ে মাখা মাছ দিয়ে এপিঠ-ওপিঠ করে হালকা ভেজে ঢাকনা দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে রান্না করুন ১০ মিনিট। তারপর নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন ইলিশের উল্লাস।

অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি ও ছবি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
উপকরণ
ইলিশের রিং পিস ৫ থেকে ৬ টুকরা, হলুদগুঁড়া এক চা-চামচ, শুকনা মরিচ ৭ থেকে ৮টি, রসুনের কোয়া ১২ থেকে ১৪টি, সিরকা ৬ থেকে ৭ টেবিল চামচ, সরিষাবাটা ৪ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, সরিষার তেল ৬ থেকে ৭ টেবিল চামচ।
প্রণালি
রিং পিস করা ইলিশ মাছ লবণ মাখিয়ে নেওয়ার পর ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর শুকনা মরিচ, রসুনের কোয়া, সরিষাবাটা, লবণ, হলুদগুঁড়া, সিরকা দিয়ে ব্লেন্ডারে অথবা পাটায় পেস্ট করে নিন। এবার হাঁড়িতে সরিষার তেল দিন। তারপর পেস্ট করা মিশ্রণটি দিয়ে নেড়ে নিন। এরপর লবণ দিয়ে মাখা মাছ দিয়ে এপিঠ-ওপিঠ করে হালকা ভেজে ঢাকনা দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে রান্না করুন ১০ মিনিট। তারপর নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন ইলিশের উল্লাস।

পাহাড়ের গা পেঁচিয়ে ফিতার মতো চলে যাওয়া পিচঢালা পথ ধরে চলছে গাড়ি। যেতে যেতে পথের দুপাশ ঘন সবুজ হয়ে ওঠে। আন্দাজ করি, কাপ্তাইয়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমায় চলে এসেছি। আমাদের গন্তব্যস্থল কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীর তীরসংলগ্ন একটি ক্যাম্পসাইট। আমরা এসেছি ক্যাম্পিং ট্যুরে।
১৫ মার্চ ২০২৩
বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন...
১২ ঘণ্টা আগে
এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত।
১৬ ঘণ্টা আগে
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন।
১৭ ঘণ্টা আগে