Ajker Patrika

ভ্রমণ /ঘুরতে গেলেও হতে পারে ত্বকের ক্যানসার

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৫, ০০: ৪৩
ভিয়েতনামে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে ইউভিআইয়ের মাত্রা ১১ তে পৌঁছে যায়। ছবি: সংগৃহীত
ভিয়েতনামে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে ইউভিআইয়ের মাত্রা ১১ তে পৌঁছে যায়। ছবি: সংগৃহীত

ঘুরতে গেলে ত্বকের ক্যানসার হতে পারে! বিষয়টি আতঙ্কজনক হলেও বিজ্ঞানীরা তেমনটাই জানাচ্ছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, বিশ্বের কোনো কোনো জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যে ঘুরতে গেলে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন ত্বকের ক্যানসারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ইউভিআই তিনের বেশি হলে সূর্যরশ্মি থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বিশ্বের অনেক জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যে নিয়মিতভাবে ইউভিআই থাকে ৮ থেকে ১১-এর মধ্যে। এমন জায়গায় গেলে বাড়তি সতর্কতা জরুরি। না হলে ত্বকের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

বিষয়টি সহজ করে বলি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ইউভিআই তিনের বেশি হলে সূর্যরশ্মি থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। অতি বেগুনি রশ্মির তীব্রতা পরিমাপ করার মানদণ্ড হলো আলট্রাভায়োলেট সূচক বা ইউভিআই। বিশ্বের অনেক জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য আছে, যেখানে নিয়মিতভাবে ইউভিআই থাকে ৮ থেকে ১১-এর মধ্যে। এমন জায়গায় গেলে বাড়তি সতর্কতা জরুরি। সেসব জায়গায় সঠিকভাবে শরীর ঢেকে না রাখলে ত্বকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

‘রিসার্চ গেট’-এর তথ্য অনুযায়ী, পেরু, বলিভিয়া ও চিলির আল্টিপ্লানো অঞ্চলে ইউভিআই প্রায়ই ২০-এর বেশি থাকে। যেখানে ইউভিআই ১১-এর ওপরে থাকলে তাকে সর্বোচ্চ মাত্রা বলে ধরে নিয়ে ঘরের ভেতরে থাকার কথা বলা হয়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেয়ারিক রিসার্চের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, পেরুর দক্ষিণাঞ্চলের কুসকো এলাকায় সর্বোচ্চ ইউভিআই রেকর্ড করা হয়েছে ২৫। আল্টিপ্লানোর বেশির ভাগ অংশ পড়ে বলিভিয়ায়।

পেরুর দক্ষিণাঞ্চলের কুসকো এলাকায় সর্বোচ্চ ইউভিআই রেকর্ড করা হয়েছে ২৫। মাচুপিচু, পেরু। ছবি: ইউনেসকো
পেরুর দক্ষিণাঞ্চলের কুসকো এলাকায় সর্বোচ্চ ইউভিআই রেকর্ড করা হয়েছে ২৫। মাচুপিচু, পেরু। ছবি: ইউনেসকো

তবে এর উত্তরাংশ পেরুতে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত পড়েছে চিলিতে। এই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি এখানে অতিমাত্রায় ইউভিআইয়ের জন্য দায়ী। তবে পৃথিবীতে এই অঞ্চলই একমাত্র স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ গন্তব্য নয়।

ইউভি রশ্মি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে। কারণ, সে অঞ্চলে সূর্য বেশি মাথার ওপর থাকে, ওজোন স্তর থাকে স্বাভাবিকের চেয়ে পাতলা। এই শর্তগুলো মিলে গেলে সেই দেশে ঘুরতে যাওয়া মানুষদের অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। শ্রীলঙ্কার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সেখানে নিয়মিতভাবে ইউভিআই ১১ বা তার বেশি রেকর্ড হয়।

থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনামে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে ইউভিআইয়ের মাত্রা ১১ তে পৌঁছে যায়। এটি ‘চরম’ হিসেবে বিবেচিত। কোহ-ইয়াও-ইয়াই, থাইল্যান্ড। ছবি: ইনথাইল্যান্ড ডট ট্রাভেল
থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনামে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে ইউভিআইয়ের মাত্রা ১১ তে পৌঁছে যায়। এটি ‘চরম’ হিসেবে বিবেচিত। কোহ-ইয়াও-ইয়াই, থাইল্যান্ড। ছবি: ইনথাইল্যান্ড ডট ট্রাভেল

থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনামে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে ইউভিআইয়ের মাত্রা ১১-তে পৌঁছে যায়। এটি ‘চরম’ হিসেবে বিবেচিত। আসলে পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলেই সূর্যের রোদ নিয়ে সতর্কতা জরুরি। জার্মানির ফেডারেল অফিস ফর রেডিয়েশন প্রোটেকশন উল্লেখ করেছে, পূর্ব ও পশ্চিম জাপানে গ্রীষ্মকালে অত্যন্ত গরম এবং আর্দ্রতা থাকে। সেখানে ইউভিআই সহজে ১০ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। ভারত উপমহাদেশে এই মাত্রা বিপজ্জনকভাবে উচ্চ থাকে। এমনকি চেন্নাইয়ে ১৫ আর মুম্বাইতে ১৬ মাত্রার ইউভিআই রেকর্ড অস্বাভাবিক বিষয় নয়।

মধ্য গ্রীষ্মে হংকংয়ে ইউভিআই মাত্রা ১০ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এনআইডব্লিউর তথ্যমতে, নিউজিল্যান্ডে ইউভিআই মাত্রা ১২ পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং উত্তর আইল্যান্ডের উত্তর অংশে এটি ১৩-তেও পৌঁছাতে পারে। গ্রীষ্মকালে অস্ট্রেলিয়ার বেশির ভাগ অংশে পরিষ্কার আকাশে গড় সর্বোচ্চ ইউভিআই মাত্রা চরম সীমায় (১১+) থাকে। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত মধ্য আমেরিকার দেশগুলোর ইউভিআই মাত্রা কম থাকে। তবু মেক্সিকোর মতো কিছু জায়গায় গরমের সময় এটি ১১ পর্যন্ত উঠতে পারে। পানামা, কিউবা, বার্বাডোজের মতো দেশগুলোতেও এই মাত্রা ১১-এর ওপরে থাকে সব সময়। জ্যামাইকায় ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সূর্যালোক থাকে সর্বোচ্চ। এ সময় সেখানকার আবহাওয়া থাকে গরম ও শুষ্ক এবং গড় ইউভিআই মাত্রা ১০।

যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় ভাবে ইউভিআই পরিমাপ করা হয় না। বিভিন্ন রাজ্য আলাদা ভাবে এটি নির্ণয় করে। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় ভাবে ইউভিআই পরিমাপ করা হয় না। বিভিন্ন রাজ্য আলাদা ভাবে এটি নির্ণয় করে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে অতিবেগুনি রশ্মি সূচক মূলত বিভিন্ন রাজ্যের ওপর নির্ভর করে। হাওয়াইয়ে গ্রীষ্মকালে গড় ইউভিআই মাত্রা হয় ১১ থেকে ১২। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, উচ্চভূমিতে; যেমন মৌনা লোয়া অবজারভেটরিতে ইউভিআই ২০ ছাড়িয়ে যেতে পারে! তাই ফ্লোরিডায় প্রায়ই ইউভিআই মাত্রা ১০ থেকে ১১-এর মধ্যে রেকর্ড করা হয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে গড়ে ইউভিআই মাত্রা ৯। আফ্রিকায় মৌসুম অনুসারে সাধারণত ইউভিআই মাত্রা উচ্চ থাকে। সূর্যরেখার ওপর অবস্থিত দেশ কেনিয়া। সেখানে ইউভিআই মাত্রা চরম হয় এবং ১১ বা তার বেশিতে পৌঁছায়। নাইজেরিয়া পুরোপুরি উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। এর তাপমাত্রাও অত্যন্ত গরম। সেখানে ইউভিআই মাত্রা উঠে যায় ১১ পর্যন্ত।

পৃথিবীর সবচেয়ে ঠান্ডা জায়গাগুলোর মধ্যে একটি অ্যান্টার্কটিক প্লাটো। সেখানেও অতিবেগুনি রশ্মি বিকিরণের সর্বোচ্চ মান ৮ পর্যন্ত পৌঁছেছিল।

সূত্র: ডব্লিউএইচও, রিসার্চ গেট, এনআইডব্লিউএ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত