Ajker Patrika

দেবতাখুম ও টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
দেবতাখুম ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ছবি: আজকের পত্রিকা
দেবতাখুম ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ছবি: আজকের পত্রিকা

এক সময় আমাদের দেশের পর্যটন ছিল মূলত শীতকাল কেন্দ্রিক। তবে এখন সে ধারা বদলেছে। পুরো বছর বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। বর্ষাকালও তার ব্যতিক্রম নয়। বিশেষ করে হাওর ও পাহাড়ের বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্য এ সময় মুখরিত হয়ে ওঠে পর্যটকদের আনাগোনায়। তবে টানা বর্ষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে দেশের দুটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে সাময়িকভাবে ভ্রমণ সীমিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বান্দরবানের দেবতাখুম এবং সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর—এই দুটি জায়গায় পর্যটকদের চলাচলে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

দেবতাখুমে পাহাড় ধস ও ঝরনার ঢল, সাত দিনের নিষেধাজ্ঞা

টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি ছড়া ও ঝিরিতে পানির প্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দেবতাখুম পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি ছড়া ও ঝিরিতে পানির প্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দেবতাখুম পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার শীলবাঁধাপাড়ায় অবস্থিত দেবতাখুম পর্যটন কেন্দ্র নতুন করে আবারও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি ছড়া ও ঝিরিতে পানির প্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ১৮ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত পর্যটকদের দেবতাখুমে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রোয়াংছড়ি উপজেলা প্রশাসন। ইউএনও মো. সাইফুল ইসলাম জানান, পাহাড় ধসের আশঙ্কা এবং পানির তীব্র স্রোতের কারণে এই সময়ে দেবতাখুমে যাতায়াত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রশাসনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় এনে সবাইকে এই সময় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনা এড়াতে স্থানীয় পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা ও নজরদারির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানের কারণে প্রায় ১৫ মাস বন্ধ থাকার পর গত ১১ ফেব্রুয়ারি দেবতাখুম পর্যটকদের জন্য পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছিল। তবে বৈরী আবহাওয়া পরিস্থিতিতে আবারও বন্ধ হলো রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য দেবতাখুম।

টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউসবোট পার্কিংয়ে নিষেধাজ্ঞা

হাওরের প্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় ওয়াচ টাওয়ার ও তার আশপাশের এলাকায় হাউসবোট চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাওরের প্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় ওয়াচ টাওয়ার ও তার আশপাশের এলাকায় হাউসবোট চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

এদিকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকায়ও নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করেছে জেলা প্রশাসন। হাওরের প্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় ওয়াচ টাওয়ার ও তার আশপাশের এলাকায় হাউসবোট চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।

২২ জুন রাতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর যেকোনো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই এলাকায় হাউসবোট চলাচল বন্ধ থাকবে।

২১ জুন জেলা প্রশাসন একটি ১৩ দফা নির্দেশনা জারি করে। তাতে পর্যটকদের আচরণ, শব্দদূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সুনির্দিষ্ট বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, পর্যটকেরা এসব নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে এই নিষেধাজ্ঞা হাউসবোট ভ্রমণে নয় বলে জানান হাউসবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. আরাফাত হোসেন। তিনি ‘আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘হাউসবোট ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। এখানে সবার বোঝার কিছু ভুল আছে। মূলত বন ও ওয়াচ টাওয়ারের নিচে হাউসবোট পার্ক করা যাবে না। এটিই বলা হয়েছে।’

বর্তমান আবহাওয়াজনিত ও পরিবেশগত পরিস্থিতিতে দেশের পর্যটন স্পটগুলোতে প্রশাসনের এই ধরনের আগাম সতর্কতা প্রশংসনীয়। ভ্রমণ মানেই আনন্দ, কিন্তু তা হতে হবে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে।

পর্যটকদের উচিত নিজ নিজ আচরণ ও পরিকল্পনায় সচেতনতা রাখা এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলা— যাতে প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ভ্রমণ বজায় থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত