Ajker Patrika

বিশ্বসেরা পর্যটন গ্রামের তালিকায় ভিয়েতনামের দুই

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
ঐতিহ্যবাহী পোশাকে লো লো চাই গ্রামের নারীরা। ছবি: দ্য ভয়েস অব ভিয়েতনাম
ঐতিহ্যবাহী পোশাকে লো লো চাই গ্রামের নারীরা। ছবি: দ্য ভয়েস অব ভিয়েতনাম

এ বছরের ‘বিশ্বের সেরা’ পর্যটন গ্রামের তালিকা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বিশ্ব পর্যটন সংস্থা বা ইউএনডব্লিউটিও কর্তৃপক্ষ। এবারের পঞ্চম সংস্করণে জাতিসংঘ পর্যটন সদস্য ৬৫টি রাষ্ট্র থেকে আসা ২৭০টির বেশি আবেদনের মধ্য থেকে আফ্রিকা, আমেরিকা, এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের ৫২টি গ্রাম এই স্বীকৃতি পেয়েছে। উত্তর ভিয়েতনামের লো লো চাই ও কুয়িন সন নামের গ্রাম দুটি আছে সেই তালিকায়। ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ইউএনডব্লিউটিও কর্তৃক ভিয়েতনামের পাঁচটি গ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। অন্য তিনটি গ্রাম হলো থাই নগুয়েন প্রদেশের থাই হাই, কোয়াং ট্রি-এর টান হোয়া এবং ডা নাং-এর ত্রা কুয়ে।

একটি স্বাধীন উপদেষ্টা বোর্ড মনোনীত গ্রামগুলোকে নয়টি মূল্যায়ন ক্ষেত্রের অধীনে বিচার করে। সেগুলো ছিল, সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক সম্পদ, সাংস্কৃতিক সম্পদের প্রচার ও সংরক্ষণ, অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব, সামাজিক স্থায়িত্ব, পরিবেশগত স্থায়িত্ব, পর্যটন উন্নয়ন ও ভ্যালু চেইন ইন্টিগ্রেশন, পর্যটনের সুশাসন ও অগ্রাধিকার প্রদান, অবকাঠামো ও সংযোগ, স্বাস্থ্য, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা। ইউএনডব্লিউটিওর মহাসচিব জুরাব পোলোলিকাশভিলি বলেছেন, ‘এ বছরের সেরা পর্যটন গ্রামগুলো সেই সব কমিউনিটিকে তুলে ধরেছে, যারা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং পর্যটনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করতে কাজ করছে। এই গ্রামগুলো দেখিয়েছে, পর্যটনকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে তারা সামাজিক অন্তর্ভুক্তি প্রচার করতে পারে; পাশাপাশি এমন একটি ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারে, যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।’

পাহাড়ি উপত্যকায় এক শান্ত সরল জীবন

টুয়েন কোয়াং প্রদেশের লুং কু কমিউনের কোলে লুকিয়ে থাকা গ্রাম লো লো চাই। ছবি: দ্য ভয়েস অব ভিয়েতনাম
টুয়েন কোয়াং প্রদেশের লুং কু কমিউনের কোলে লুকিয়ে থাকা গ্রাম লো লো চাই। ছবি: দ্য ভয়েস অব ভিয়েতনাম

দূষণ আর ছুটে চলা যান্ত্রিক শহর থেকে মুক্তি পেতে একটি ঠিকানার সন্ধান করছেন? টুয়েন কোয়াং প্রদেশের লুং কু কমিউনের কোলে লুকিয়ে থাকা লো লো চাই গ্রামটি হতে পারে এর জন্য এক আদর্শ গন্তব্য। রূপকথার গল্পের মতো শান্ত, সরল আর অতিথিপরায়ণ এই গ্রামে খুঁজে পাওয়া যায় জীবনের এক নতুন ছন্দ। এটি ভিয়েতনামের উত্তরতম বিন্দু লুং কু ফ্ল্যাগপোল থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে। তাই পর্যটকেরা চাইলেই এক সফরে এই দুটি আকর্ষণ একসঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন। গ্রামটিতে পৌঁছানোর জন্য ভালো উপায় হলো মোটরসাইকেল ব্যবহার করা অথবা কোনো স্থানীয় চালককে ভাড়া করা। সেখানে যাওয়ার আরও সহজ পথ হলো একটি মোটরসাইকেল ট্যুর বুক করা।

লো লো চাই গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষই লো লো জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত। তাদের রয়েছে নিজস্ব সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, যা আজও এই গ্রামে সুরক্ষিত। এই সম্প্রদায়ের জীবন অত্যন্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও রঙিন। সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও জীবনধারার কারণে লো লো চাইয়ের লোকেরা একজন বংশীয় প্রধান নির্বাচন করে, যিনি ‘বিড আংকেল’ বা ‘বিমাউ’ নামে পরিচিত। তিনি পূজা-অর্চনা ও সামাজিক রীতিনীতি বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করেন। লো লো সম্প্রদায়ের মানুষজন ভিয়েতনামের ভাষার পাশাপাশি লো লো (বা ডি) ভাষায় কথা বলে, যা সাইনো-তিব্বতীয় ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।

লো লো মানুষের প্রধান খাদ্য সাদা ভাত এবং ভুট্টার আটা। এ খাবার মহিষের বা গরুর মাংসের মতো কিছু মাংসের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। লো লো নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক তাদের তিনটি প্রধান গোষ্ঠীর (ফুল লট, কালো লট, সাদা লট) জন্য তিন ধরনের। পুরুষেরা সাধারণত ছোট ব্লাউজের মতো জামা ও ঢোলা প্যান্ট পরে। এই প্যান্ট নীল রঙের কাপড় দিয়ে সেলাই করা হয়। এই গ্রামে যাওয়ার উপযুক্ত সময় শীতকাল।

১০০ বছরের স্থাপত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে কুয়িন সন

উত্তর ভিয়েতনামের লাং সন প্রদেশের সবুজ উপত্যকায় অবস্থিত কুয়িন সন একটি কমিউনিটিভিত্তিক পর্যটন গ্রাম। গ্রামটি তার জাতিগোষ্ঠীর বহু প্রজন্ম ধরে চলে আসা সংস্কৃতি, ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য এবং প্রাচীন হস্তশিল্পের এক জীবন্ত প্রদর্শনী। এই গ্রামে ৪০০টি ঐতিহ্যবাহী স্তম্ভ ঘর রয়েছে, যা মজবুত লোহা ও কাঠ দিয়ে তৈরি। বাড়ির গোলাকার বা বর্গাকার খুঁটিগুলো পাথরের ব্লকের ওপর স্থাপিত এবং ছাদ ইন-ইয়াং টাইলসে ঢাকা। এটি লাং সন প্রদেশের একমাত্র গ্রাম, যেখানে প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো ইন-ইয়াং টাইলস তৈরির ঐতিহ্য আজও প্রচলিত আছে। এখানকার স্থানীয় খাবার তাজা উপাদান এবং বিশেষ মসলার সংমিশ্রণে অনন্য।

কুয়িন সন গ্রামে ৪০০টি ঐতিহ্যবাহী স্তম্ভ ঘর রয়েছে। ছবি: অরিজিন ভিয়েতনাম
কুয়িন সন গ্রামে ৪০০টি ঐতিহ্যবাহী স্তম্ভ ঘর রয়েছে। ছবি: অরিজিন ভিয়েতনাম

পর্যটকেরা এ গ্রামের মানুষদের সঙ্গে হাতে-কলমে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী কাজে অংশ নিতে পারে। কুয়িন সনের মানুষ তাদের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য, সংস্কৃতি ও কারুশিল্প সংরক্ষণের গুরুত্ব বোঝে। গ্রামটিতে আরও পর্যটক আকর্ষণ করার জন্য যৌথ অবকাঠামো নির্মাণ, পর্যটন আবাসন ও ট্যুর তৈরি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য উল্লেখযোগ্য অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে।

সূত্র: এশিয়া কিং ট্রাভেল, দ্য ভয়েস অব ভিয়েতনাম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত