রিমন রহমান, রাজশাহী
ভাগীরথী নদীতীরে ১২ বিঘা জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি প্যালেস। কিন্তু অনেকে হয়ত জানেন না, আমাদের দেশেও একটি হাজারদুয়ারি আছে। আর সেটি ১২ বিঘা নয়, ৫০ বিঘা জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে এখনো। রাজশাহীর এক নিভৃত পল্লিতে এর অবস্থান। তবে অনাদরে দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই জমিদারবাড়ি।
জমিদারবাড়ির ইতিহাস
নওগাঁর আত্রাইয়ের আমরুল ডিহির রাজা ছিলেন গোপাল ধাম। তিনি ভারতের কাশী থেকে আসা বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর মেয়ে প্রভাতী বালার বিয়ে দেন। বীরেশ্বরের ডাকনাম ছিল বিরুবাবু। ওই সময় পার্শ্ববর্তী বাগমারার বীরকুৎসা ছিল গোপাল ধামের একটি পরগনা। প্রভাতী বালা ও বিরুবাবুর বিয়ের পর রাজা গোপাল ধাম তাঁর এই পরগনা মেয়ে-জামাতার নামে লিখে দেন। পরে শৌখিন রাজকন্যা প্রভাতী বালার পছন্দমতো বিরুবাবু বীরকুৎসায় এই অট্টালিকা গড়ে তোলেন। বিরুবাবুর দুই ভাই রামাবাবু ও দুর্গাবাবুও থাকতেন এই প্রাসাদে। জমিদার বিরুবাবুর ছিল হাতি ও ঘোড়া। হাতিতে চড়ে তিনি জমিদারি দেখাশোনা করতেন। খাজনা আদায়ের জন্য তাঁর ছিল পর্যাপ্ত নায়েব। পাশেই ছিল খাজনা আদায়ের ঘর।
এখন এটি হয়ে গেছে ভূমি অফিস। আর জমিদারবাড়ির পূজামণ্ডপটি হয়ে গেছে পোস্ট অফিস। প্রাসাদের পশ্চিমে খিড়কি দরজা পার হয়ে শানবাঁধানো পুকুর। এই পুকুরে শুধু জমিদার পরিবারই স্নান করত। প্রাসাদের ভেতরে আছে জলসাঘর। এখানে গানবাজনা করতে আসত কলকাতার ভোলানাথ অপেরা। প্রাসাদের সামনে ছিল ফুলের বাগান। এখন সেখানে দোকানপাট। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর বিশাল অট্টালিকা ও জমিজমা ফেলে বিরুবাবু সপরিবারে ভারতের হুগলি
জেলার চন্দননগরে চলে যান। এরপর প্রাসাদের সম্পত্তি চলে যায় সরকারের হাতে। এটি জমিদারবাড়ি হলেও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে
এর নাম ‘বীরকুৎসা রাজবাড়ী’।
সরেজমিনে একদিন
রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়ন ঘেঁষে একদিকে নাটোরের নলডাঙ্গা, অন্যদিকে নওগাঁর আত্রাই উপজেলা। এই যোগীপাড়ার বীরকুৎসা গ্রামে রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত দোতলা হাজারদুয়ারি জমিদারবাড়ি। এই বিশাল পলেস্তারা খসে পড়া রংচটা বাড়িটির সামনে দাঁড়ালে মনে পড়বে, এককালে কত নায়েব-পাইক-বরকন্দাজে মুখর ছিল বীরকুৎসা গ্রাম। এখন যে আধুনিক অফিস সিস্টেম, তার সবই ছিল এখানে, তাদের নিজস্ব নিয়মে। ভবনের মাঝখান দিয়ে নিচতলা থেকে সিঁড়ি চলে গেছে দোতলার ছাদ পর্যন্ত। নিচতলা ও দোতলায় রয়েছে ছোট-বড় বেশ কিছু ঘর। এসব ঘরের সামনে ও পেছনে দুপাশ দিয়েই চলে গেছে লম্বা খোলা বারান্দা। দোতলায় ভবনের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দুটি করে চারটি ঘর। এসব ঘরের একদিকে দরজা, অন্য তিন দিকেই জানালা দিয়ে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা ছিল। চুন-সুরকির দালান। নিচতলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতে উঠতে কেবলই মনে হলো, এই চুন-সুরকি আর ইটের দোতলা দালানের প্রতিটি স্তরে এক সমৃদ্ধ বাংলার স্মৃতি লেগে আছে! মূল ভবনের পূর্ব দিকে রয়েছে আরেকটি একতলা ভবন, প্রায় মুখোমুখি। ভবনটিতে মূল ভবনের নিচতলা ও একতলার ছাদ থেকেও যাওয়া যায়।
এই পুরো বাড়ির দরজা ছিল এক হাজার, সে জন্যই এর নাম হয়েছিল হাজারদুয়ারি। এমন একটি গল্প প্রচলিত আছে বীরকুৎসায়। প্রতিটি দুয়ারে ছিল সেগুন কাঠের কারুকার্যখচিত দরজা। একসময় দরজাগুলো ছিল তিন স্তরে আবৃত। এর প্রথম স্তরে ছিল কাঠ। এরপর ছিল লোহার গ্রিল। শেষ দরজাটি ছিল দামি কাচে তৈরি। এখন সেগুলোর ভাঙা অংশই দেখা যাবে। লোহার গ্রিল কিংবা কাচের কিছুই নেই এখন। তবে ইতিহাস আছে। আর আছে প্রায় ৫০ বিঘা জমির ওপর দাঁড়ানো বিশাল হাজারদুয়ারি।
যেভাবে যাওয়া যায়
রাজশাহী শহর থেকে বাসে বাগমারা উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জে আসার পর অটোরিকশায় হাজারদুয়ারি জমিদারবাড়ি যাওয়া যায়। ভবানীগঞ্জ থেকে এটি ১৮ কিলোমিটার দূরে। নওগাঁ কিংবা নাটোর থেকে নলডাঙ্গা হয়েও সড়কপথে যাওয়া যায়। জমিদারবাড়ির পাশেই রয়েছে বীরকুৎসা রেলস্টেশন। এই স্টেশন থেকে হেঁটে কিংবা ভ্যান-অটোরিকশায় যাওয়া যাবে জমিদারবাড়ি দেখতে। তবে এই স্টেশনে সব ট্রেনের যাত্রাবিরতি নেই। এ জন্য নওগাঁর আত্রাই বা নাটোরের মাধনগর স্টেশনে নেমে অন্য বাহনে জমিদারবাড়ি যাওয়া যাবে আধা ঘণ্টায়।
ভাগীরথী নদীতীরে ১২ বিঘা জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি প্যালেস। কিন্তু অনেকে হয়ত জানেন না, আমাদের দেশেও একটি হাজারদুয়ারি আছে। আর সেটি ১২ বিঘা নয়, ৫০ বিঘা জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে এখনো। রাজশাহীর এক নিভৃত পল্লিতে এর অবস্থান। তবে অনাদরে দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই জমিদারবাড়ি।
জমিদারবাড়ির ইতিহাস
নওগাঁর আত্রাইয়ের আমরুল ডিহির রাজা ছিলেন গোপাল ধাম। তিনি ভারতের কাশী থেকে আসা বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর মেয়ে প্রভাতী বালার বিয়ে দেন। বীরেশ্বরের ডাকনাম ছিল বিরুবাবু। ওই সময় পার্শ্ববর্তী বাগমারার বীরকুৎসা ছিল গোপাল ধামের একটি পরগনা। প্রভাতী বালা ও বিরুবাবুর বিয়ের পর রাজা গোপাল ধাম তাঁর এই পরগনা মেয়ে-জামাতার নামে লিখে দেন। পরে শৌখিন রাজকন্যা প্রভাতী বালার পছন্দমতো বিরুবাবু বীরকুৎসায় এই অট্টালিকা গড়ে তোলেন। বিরুবাবুর দুই ভাই রামাবাবু ও দুর্গাবাবুও থাকতেন এই প্রাসাদে। জমিদার বিরুবাবুর ছিল হাতি ও ঘোড়া। হাতিতে চড়ে তিনি জমিদারি দেখাশোনা করতেন। খাজনা আদায়ের জন্য তাঁর ছিল পর্যাপ্ত নায়েব। পাশেই ছিল খাজনা আদায়ের ঘর।
এখন এটি হয়ে গেছে ভূমি অফিস। আর জমিদারবাড়ির পূজামণ্ডপটি হয়ে গেছে পোস্ট অফিস। প্রাসাদের পশ্চিমে খিড়কি দরজা পার হয়ে শানবাঁধানো পুকুর। এই পুকুরে শুধু জমিদার পরিবারই স্নান করত। প্রাসাদের ভেতরে আছে জলসাঘর। এখানে গানবাজনা করতে আসত কলকাতার ভোলানাথ অপেরা। প্রাসাদের সামনে ছিল ফুলের বাগান। এখন সেখানে দোকানপাট। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর বিশাল অট্টালিকা ও জমিজমা ফেলে বিরুবাবু সপরিবারে ভারতের হুগলি
জেলার চন্দননগরে চলে যান। এরপর প্রাসাদের সম্পত্তি চলে যায় সরকারের হাতে। এটি জমিদারবাড়ি হলেও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে
এর নাম ‘বীরকুৎসা রাজবাড়ী’।
সরেজমিনে একদিন
রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়ন ঘেঁষে একদিকে নাটোরের নলডাঙ্গা, অন্যদিকে নওগাঁর আত্রাই উপজেলা। এই যোগীপাড়ার বীরকুৎসা গ্রামে রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত দোতলা হাজারদুয়ারি জমিদারবাড়ি। এই বিশাল পলেস্তারা খসে পড়া রংচটা বাড়িটির সামনে দাঁড়ালে মনে পড়বে, এককালে কত নায়েব-পাইক-বরকন্দাজে মুখর ছিল বীরকুৎসা গ্রাম। এখন যে আধুনিক অফিস সিস্টেম, তার সবই ছিল এখানে, তাদের নিজস্ব নিয়মে। ভবনের মাঝখান দিয়ে নিচতলা থেকে সিঁড়ি চলে গেছে দোতলার ছাদ পর্যন্ত। নিচতলা ও দোতলায় রয়েছে ছোট-বড় বেশ কিছু ঘর। এসব ঘরের সামনে ও পেছনে দুপাশ দিয়েই চলে গেছে লম্বা খোলা বারান্দা। দোতলায় ভবনের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দুটি করে চারটি ঘর। এসব ঘরের একদিকে দরজা, অন্য তিন দিকেই জানালা দিয়ে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা ছিল। চুন-সুরকির দালান। নিচতলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতে উঠতে কেবলই মনে হলো, এই চুন-সুরকি আর ইটের দোতলা দালানের প্রতিটি স্তরে এক সমৃদ্ধ বাংলার স্মৃতি লেগে আছে! মূল ভবনের পূর্ব দিকে রয়েছে আরেকটি একতলা ভবন, প্রায় মুখোমুখি। ভবনটিতে মূল ভবনের নিচতলা ও একতলার ছাদ থেকেও যাওয়া যায়।
এই পুরো বাড়ির দরজা ছিল এক হাজার, সে জন্যই এর নাম হয়েছিল হাজারদুয়ারি। এমন একটি গল্প প্রচলিত আছে বীরকুৎসায়। প্রতিটি দুয়ারে ছিল সেগুন কাঠের কারুকার্যখচিত দরজা। একসময় দরজাগুলো ছিল তিন স্তরে আবৃত। এর প্রথম স্তরে ছিল কাঠ। এরপর ছিল লোহার গ্রিল। শেষ দরজাটি ছিল দামি কাচে তৈরি। এখন সেগুলোর ভাঙা অংশই দেখা যাবে। লোহার গ্রিল কিংবা কাচের কিছুই নেই এখন। তবে ইতিহাস আছে। আর আছে প্রায় ৫০ বিঘা জমির ওপর দাঁড়ানো বিশাল হাজারদুয়ারি।
যেভাবে যাওয়া যায়
রাজশাহী শহর থেকে বাসে বাগমারা উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জে আসার পর অটোরিকশায় হাজারদুয়ারি জমিদারবাড়ি যাওয়া যায়। ভবানীগঞ্জ থেকে এটি ১৮ কিলোমিটার দূরে। নওগাঁ কিংবা নাটোর থেকে নলডাঙ্গা হয়েও সড়কপথে যাওয়া যায়। জমিদারবাড়ির পাশেই রয়েছে বীরকুৎসা রেলস্টেশন। এই স্টেশন থেকে হেঁটে কিংবা ভ্যান-অটোরিকশায় যাওয়া যাবে জমিদারবাড়ি দেখতে। তবে এই স্টেশনে সব ট্রেনের যাত্রাবিরতি নেই। এ জন্য নওগাঁর আত্রাই বা নাটোরের মাধনগর স্টেশনে নেমে অন্য বাহনে জমিদারবাড়ি যাওয়া যাবে আধা ঘণ্টায়।
পিসির ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা এক স্টোরিতে দেখা গেছে, এলইডি লাইট থেরাপি মাস্ক পরে উড়োজাহাজে দিব্যি আরাম করছেন। যেন রূপচর্চা আর আরামের একেবারে আদর্শ যুগলবন্দী!
১০ ঘণ্টা আগেসময়ের সঙ্গে পরিবেশ বদলায়, আর পরিবেশের সঙ্গে বদলায় চুলের যত্নের ধরন। চুলে নিয়মিত তেল-শ্যাম্পু ব্যবহার এবং মাসে দুদিন হেয়ারপ্যাক ব্যবহার এখন যথেষ্ট নয়। আগের তুলনায় গ্রীষ্মকালে গরম আরও বেড়েছে, বেড়েছে দূষণ। সেই সঙ্গে বেড়েছে চুল আর মাথার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাও।
২ দিন আগেশিশুর বয়স ছয় মাস হওয়া পর্যন্ত তেমন ভাবনা নেই। নরম সুতির ফিতে দেওয়া নিমা পরেই দিন পার হয় ছেলে কিংবা মেয়েশিশুর। কিন্তু সে যখন বসে বসে খেলতে শেখে বা একটু হেঁটে বেড়ায়, যখন পুরো ঘরই তার জন্য এক বিস্ময়ের জগৎ। সারা বাড়ি ঘুরে দেখা, এটা-ওটা ধরে খেলা করতে গিয়ে ঘাম হয়...
২ দিন আগেবৈশাখের শুরুতে আবহাওয়ার যা মেজাজ দেখা যাচ্ছে, তাতে বলা যায়, গরমে নাভিশ্বাস উঠবে এবার। আবহাওয়া যা-ই হোক, বাইরে যাওয়া তো আর বন্ধ রাখা যাবে না। তাই চট করে তৈরি হয়ে বের হওয়ার জন্য এমন কিছু কাপড় ওয়ার্ডরোবে গুছিয়ে রাখুন, যাতে আরাম ও স্টাইল—দুটোই মেলে। আবার ভাঁজে ভাঁজে...
২ দিন আগে