Ajker Patrika

ত্রিশের পর ত্বকের যত্নে যা করবেন

সানজিদা সামরিন, ঢাকা
আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩: ০৩
Thumbnail image

জীবনকে যদি কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করা হয় তাহলে ত্রিশ বছর বয়সকে বলা যায় জীবনের চূড়া। আর ত্বকের প্রসঙ্গ এলে, বলা ভালো, ত্রিশ হচ্ছে সেই বয়স যখন থেকে জৌলুশ ধরে রাখতে যুদ্ধের শুরু! কারণ এ সময় থেকে ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন কমতে থাকে। দেখা দেয় ত্বকের শুষ্কতা, বলিরেখাসহ নানা সমস্যা। আবার এত দিনের অনাদরের ফলও এ সময় থেকে ধীরে ধীরে দেখাতে শুরু করবে ত্বক। ফলে ত্বকের যত্নে ত্রিশ বছর থেকে পরের সময়গুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় অবহেলা না করে সচেতন হতে হবে। 

ত্রিশের পর ত্বকে যেসব সমস্যা দেখা দেয়
নিষ্প্রভ ত্বক: যাঁরা ত্রিশে পা রেখেছেন তাঁরা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন দিন দিন ত্বকের আর্দ্রতা কমছে। বাড়ছে মৃত কোষ। আর মরা কোষ মানেই ত্বকের জেল্লা কমে যাওয়া। 

শুষ্কতা: আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের সিবাম উৎপাদন কমতে থাকে। সিবাম ত্বক মসৃণ করে ও আর্দ্রতা ধরে রাখে। তাই আপনার ত্বক যদি স্বাভাবিকভাবে শুষ্ক না হয়েও থাকে তবুও খসখসে ভাব দেখা দিতে পারে। 

বয়সের ছাপ: আমাদের ত্বক প্রোটিন দিয়ে তৈরি। আর এই প্রোটিন ত্বকের নমনীয়তা ও উজ্জ্বলতা ধরে রাখে। কিন্তু ত্রিশের পর থেকে ত্বকে এই প্রোটিনের উৎপাদন কমে যায়। তা ছাড়া সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের এই প্রোটিন উৎপাদন ব্যাহত করে। যার কারণে ত্বকে বলিরেখা পড়তে থাকে। 

কালো ছোপ ছোপ দাগ: ত্রিশের পর অনেকেই লক্ষ্য করেন যে গালের দুপাশে কালচে ছোপ ছোপ দাগ স্পষ্ট হতে শুরু করছে। এর কারণ হচ্ছে, বছরের পর বছর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব। 

ত্রিশের পর ত্বকের যত্ন
এই বয়সে মানসিক চাপের কারণেও ত্বক ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে। অফিসের কাজ, পরিবারের দেখভাল, মাতৃত্ব, নিদ্রাহীনতা এসব কিছু থেকে তৈরি হওয়া মানসিক চাপ ত্বকের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তবে জীবনযাপন পদ্ধতি বদলালে এবং কিছু বিষয় মেনে চললে দীর্ঘদিন ত্বক সুন্দর রাখা যাবে। 

যা করতে হবে

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে পানিসমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। পানিসমৃদ্ধ ফল ও সবজির পাশাপাশি স্যুপ রাখতে পারেন খাদ্যতালিকায়। এর পাশাপাশি শর্করাজাতীয় খাবার যাতে কম খাওয়া হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

এক্সফলিয়েশন করা
সব ধরনের ত্বকের জন্যই এক্সফলিয়েশন জরুরি। এর ফলে ত্বকের ওপরে জমা হওয়া মারা কোষ সহজেই ঝরে যায়, আর ত্বক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের এক্সফলিয়েটর পাওয়া যায়। এমন এক্সফলিয়েটরের খোঁজ করুন যাতে হাইড্রক্সি অ্যাসিড রয়েছে। এর বাইরে রোজ গোসল করার সময় তোয়ালে দিয়ে শরীর রগড়ে নিলে উপকার পাবেন। 

নিয়মিত ময়েশ্চারাইজ করুন
ময়েশ্চারাইজার ত্বক আর্দ্র রাখে। এর ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল থাকে। এ ছাড়া এর প্রলেপ থাকলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে কিছুটা হলেও ত্বক সুরক্ষিত থাকে। তাই ত্বকের ধরন বুঝে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। 
 
পর্যাপ্ত ঘুম
দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম ত্বকের অনেক সমস্যাই কমিয়ে দেবে। একে তরতাজা ও প্রাণবন্ত রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় ঘুমের অভাবে চোখের ফোলা ভাব, চোখের কোণে কালি ও ত্বক নিষ্প্রভ হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

অ্যান্টি এজিং ক্রিমে বিনিয়োগ করুন
এখন থেকেই ভালো মানের অ্যান্টি এজিং ক্রিম ব্যবহার করুন। তবে এমন ক্রিম বেছে নিতে হবে যাতে রয়েছে রেটিনয়েড, ভিটামিন সি, হাইড্রক্সি অ্যাসিড ও নিয়াসিমাইড। কারণ এসব উপাদানসমৃদ্ধ নাইট ক্রিম ত্বকের বলিরেখা কমাতে, কোলাজেন বৃদ্ধিতে, জেল্লা বাড়াতে এবং ত্বক আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। 
 
মাসে একবার ফেসিয়াল করুন
নিয়মিত ফেসিয়াল ত্বককে আর্দ্র রাখে। এ ছাড়া ম্যাসাজের ফলে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতি মাসে অন্তত একবার হলেও বিশেষজ্ঞের হাতে ফেসিয়াল করে নেওয়া উচিত। 

ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর থেকে টক্সিন বেরিয়ে যায়। তাই ত্বকের লাবণ্যও বাড়ে। প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা ব্যায়াম করুন। সেটা জিমে গিয়ে হোক বা ফ্রি হ্যান্ড। এ ক্ষেত্রে যোগব্যায়াম ও সাঁতারও কাজে দেয়। 

সানস্ক্রিন এড়াবেন না
আগে যাই করেছেন এবার থামুন। এখন থেকে রোদে বাইরে বের হলে ত্বকে সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনে বাধা দেয়। তাই ত্বককে টান টান ও সুন্দর রাখতে ড্রেসিং টেবিলে সানস্ক্রিনকে জায়গা করে দিন। 

প্রসাধনী বদলে নিন
হতে পারে আপনি খুবই মিনিমালিস্ট। এটা ব্যবহার করি না, সেটা ব্যবহার করি না’র দলেও নন। তবুও এবার একটু বেছে ভালো প্রসাধনীই কিনুন। এমন প্রসাধনী ব্যবহার করুন যা আপনার ত্বকের আর্দ্রতা বাড়াতে সাহায্য করবে। ত্বকের উপযোগী সেরাটিই কিনুন। যাতে ত্বকের পেলবতা ও কমনীয়তা বজায় থাকে। সাবানের ক্ষেত্রেও একই। ত্বক যাতে অতিরিক্ত শুষ্ক না হয়ে ওঠে তাই ক্ষার একেবারেই নেই বা কম ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন। 
 
সূত্র: স্কিন ক্র‍্যাফট ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত