Ajker Patrika

বিশ্বের বিখ্যাত পাঁচ জাদুঘরে রহস্যময় চুরির গল্প

ফিচার ডেস্ক
বিশ্বের বিখ্যাত পাঁচ জাদুঘরে রহস্যময় চুরির গল্প

১৯ অক্টোবর, রোববার এক দুঃসাহসিক চুরি সংঘটিত হয়েছে প্যারিসের লুভর মিউজিয়ামে! নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মাঝেই চুরি হয়েছে রাজা নেপোলিয়ন ও জোসেফাইনের ব্যবহৃত গয়নার মতো বহুমূল্য অলংকার। এ ঘটনার পর আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে লুভর মিউজিয়াম।

চলচ্চিত্রে কিংবা উপন্যাসে পড়া জাদুঘরে চুরির ঘটনা বেশ রোমাঞ্চকর মনে হয়। বাস্তবেও বিষয়টি কম নাটকীয় নয়। শতকের পর শতক পৃথিবীর বিখ্যাত জাদুঘরগুলোতে হয়েছে অসংখ্য চুরি। সেগুলো কখনো সফল, আবার কখনো ব্যর্থ হয়েছে। সেসব চুরির জন্য প্রয়োজন ছিল ব্যাপক সাহস, দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা আর নিখুঁত পরিকল্পনা। ঘটনার পর অনেক সময় অপরাধীরা ধরা পড়ে, আবার কখনো চুরি যাওয়া শিল্পকর্মের খোঁজই মেলে না। জেনে নেওয়া যাক ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত পাঁচ জাদুঘরের চুরির কাহিনি।

মোনালিসা চুরি

বিশ শতকের সবচেয়ে বিখ্যাত শিল্পকর্ম চুরি হিসেবে ধরা হয় লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা ‘মোনালিসা’ নামের শিল্পকর্ম চুরির ঘটনা। ১৯১১ সালের ২১ আগস্ট সকাল। জাদুঘরের সাবেক কর্মী ভিনসেনজো পেরুজিয়াসহ তিনজন ইতালীয় নাগরিক রাতে লুকিয়ে থেকে সকালে চিত্রকর্মটি দেয়াল থেকে খুলে নিয়ে যান। তাঁরা চিত্রকর্মটি একটি কম্বলে জড়িয়ে লুভর মিউজিয়াম থেকে বেরিয়ে পড়েন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, কেউই প্রথমে খেয়াল করেনি যে ছবিটি নেই। প্রায় ২৮ ঘণ্টা পর ফাঁকা দেয়ালটি দেখে সবাই আঁতকে ওঠে। চুরির আগে মোনালিসা তেমন পরিচিত ছিল না, এই ঘটনার পরই শিল্পকর্মটি বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। দুই বছর পর পেরুজিয়া ছবিটি বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়েন। ইতালির ফ্লোরেন্স থেকে মোনালিসাকে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে সেটি লুভর মিউজিয়ামেই প্রদর্শিত হচ্ছে।

ইসাবেলা স্টুয়ার্ট গার্ডনার মিউজিয়ামের চুরি

১৯৯০ সালের ১৮ মার্চ ভোর। দুই ব্যক্তি পুলিশ সেজে জাদুঘরের নিরাপত্তাকর্মীদের চোক ফাঁকি দিয়ে ভেতরে ঢোকেন। এরপর নিরাপত্তাকর্মীদের হাতকড়া পরিয়ে বেসমেন্টে আটকে রেখে ৮১ মিনিট ধরে ১৩টি মূল্যবান শিল্পকর্ম চুরি করেন। চুরি হওয়া ছবির মধ্যে ছিল রেমব্রান্ট, এডুয়ার্ড মানে ও ইয়োহানেস ভেরমিয়ারের ‘দ্য কনসার্ট’ নামের চিত্রকর্ম। এগুলোকে এখনো বিশ্বের সবচেয়ে দামি নিখোঁজ শিল্পকর্ম ধরা হয়। তদন্তে বহুবার নতুন সূত্র পাওয়া গেলেও রহস্য অমীমাংসিত আছে আজও। এখনো সেই খালি ফ্রেমগুলো ঝুলে আছে মিউজিয়ামের দেয়ালে। জাদুঘরের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া আছে, চুরি যাওয়া শিল্পকর্মের তথ্য দিতে পারলে ১ কোটি ডলার পুরস্কার দেওয়া হবে।

আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির রত্ন চুরি

এই কাহিনির নায়ক ‘মার্ফ দ্য সার্ফ’ নামে পরিচিত জ্যাক রোল্যান্ড মারফি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অ্যালান কুন ও রজার ক্লার্ক। তাঁরা প্রথমে জাদুঘরের ভেতরের নকশা হাতিয়ে নেন। তারপর ১৯৬৪ সালের ২৯ অক্টোবর রাতে ফায়ার এস্কেপ বেয়ে চতুর্থ তলার খোলা জানালা দিয়ে জাদুঘরের ভেতরে ঢুকে পড়েন। আশ্চর্যের ঘটনা হলো, তখন কোনো অ্যালার্ম সিস্টেমই কাজ করছিল না। তাঁরা চুরি করেন স্টার অব ইন্ডিয়া, ইগল ডায়মন্ড, ডিলং স্টার রুবিসহ বহু মূল্যবান রত্ন। এসবের বর্তমান মূল্য প্রায় ৩০ লাখ ডলার। কিন্তু চুরি করে পার পাননি চোরেরা। কিছুদিনের মধ্যেই তাঁরা ধরা পড়েন এবং বেশির ভাগ রত্ন উদ্ধার হয়। চুরির পরও মারফি সংবাদমাধ্যমের ছবির জন্য সিগারেট হাতে হাসিমুখে পোজ দেন, যেন কোনো দুঃসাহসিক অভিযানের নায়ক তিনি।

The-Dresden-Green-Vault-photo-wiki
The-Dresden-Green-Vault-photo-wiki

গ্রিন ভল্ট থেকে গয়না চুরি

ইউরোপের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী গয়নার জাদুঘর গ্রিন ভল্টে ঘটে এক বিশাল চুরি। ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর ভোরে চোরেরা প্রথমে একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারে আগুন লাগান, যাতে আশপাশ অন্ধকারে ঢেকে যায়। এরপর জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ১২৮ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ গয়না লুট করেন। পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্য তাঁরা পালানোর সময় আরেকটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। এক বছর তদন্তের পর বার্লিনে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২৩ সালে তাঁদের চার থেকে ছয় বছরের সাজা হলেও এখনো সব গয়না উদ্ধার হয়নি।

মন্ট্রিয়ল মিউজিয়াম অব ফাইন আর্টসে চুরি

১৯৭২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাত। এক ব্যক্তি স্কি মাস্ক ও কাঁটাযুক্ত ক্লাইম্বিং জুতা পরে গাছে উঠে জাদুঘরের ছাদে পৌঁছে যান। মই ফেলে দুই সহযোগীকে ওপরে তোলেন। এরপর দড়ি বেয়ে একটি খোলা স্কাইলাইট দিয়ে ভেতরে ঢোকেন। সেখানে গার্ডদের বেঁধে রেখে ১৮টি চিত্রকর্ম ও ৩৯টি নিদর্শন চুরি করেন। সেসবের মূল্য বর্তমান হিসাবে প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলার। তবে দুর্ঘটনাবশত অ্যালার্ম বেজে গেলে চোরেরা তড়িঘড়ি পালিয়ে যান, রেখে যান কিছু চিত্রকর্ম। তবে তাঁরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। দশকের পর দশক তদন্ত চললেও এই মামলা আজ পর্যন্ত অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

সূত্র: হিস্ট্রি ফ্যাক্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ