ছন্দা ব্যানার্জি
কিছু ব্যক্তিত্ব আমাদের জীবনে থাকেন, যাঁরা চিরস্মরণীয় তো বটেই, এমনকি প্রাতঃস্মরণীয়। তাঁদের যে শুধু জন্মদিন, প্রয়াণ দিবস বা বিশেষ দিনেই মনে পড়ে, তা নয়। তাঁরা জড়িয়ে থাকেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, যাপনে, অভ্যাসে, শখে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
তোমার হলো শুরু...
‘সহজ পাঠের’ হাত ধরে সেই শিশুকালে রবিঠাকুরের সঙ্গে পরিচয়। পড়া শুরু হতেই মনে হয়, আমরাও তো এ রকম ভাবি। শুধু এমন করে বলতে পারি না। সেই শুরু। লম্বা সাদা দাড়িওয়ালা লোকটা অনায়াসে আমাদের রবিদাদু হয়ে গেল সেই ছোটবেলায়। তাঁর লেখায় আমাদের কল্পনা আর বাস্তবের তেপান্তরের মাঠ থেকে ভুবনডাঙার মাঠ, ছোট নদী, তালগাছ, গ্রামের পথ, নৌকা, মাঝি, দইওয়ালা থেকে কাবুলিওয়ালা—মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল। সেই থেকে মনে গেঁথে যায়, আমাদের শ্রেষ্ঠ কবি তিনিই।
একটু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রবিদাদুর পড়ার বিষয়গুলো অন্য রকম হয়ে ওঠে। ছোটবেলায় যে ভাবনায় পড়েছিলাম, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝি এক একটি গল্প, কবিতা, গান—সবকিছু যেন অন্য অর্থে, অন্য রূপে আমাদের কাছে ধরা দিচ্ছে।
‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই ছোট সে তরী
আমারই সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণ গগন ঘিরে ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে রহিলো পড়ি—
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।’
স্বপ্নের ঘোরে পড়া কবিতা অন্য অর্থ নিয়ে ধরা দেয় আমাদের জীবনে পরবর্তী সময়ে। সহজ-সরল ভাষায় জীবনের চরম সত্যটা বলে দেওয়া। ছোটদের কবিতা কিন্তু এই যে আমাদের কাজটাই সব, আমাদের কাজটুকু মানেই আমরা। এ কাজ বাদ দিলে আমি বলে কিছু নেই, তাই ঠাঁই নেই আমাদের। কত বড় দর্শন একটা ছোট্ট কবিতার মধ্যে লুকিয়ে আছে।
হে বন্ধু, হে প্রিয়
সুখে, দুঃখে, আনন্দে, আবেগে, প্রেমে, বিরহে, বিচ্ছেদে, অবসাদে বাঁচার আশ্রয় যেন রবিঠাকুরের সৃষ্টিগুলো। তাঁর প্রেম আর প্রার্থনা পর্যায়ের গান আলাদা করা যায় না। তাই আমাদের জীবনের চর্চায়, মননে রবিঠাকুর কারও কাছে চির সখা, কারও কাছে পরম শক্তি, কারও কাছে প্রতিষ্ঠান, কারও কাছে প্রাণের ঠাকুর, কারও কাছে জীবনের শেষ আশ্রয়। তাঁর মতো করেই মন বলতে লাগে, ‘হে মহা জীবন, হে মহা মরণ/ লইনু শরণ, লইনু শরণ।’
রয়েছ জড়ায়ে জড়ায়ে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্ট চরিত্রগুলোর যে সাজপোশাকের বর্ণনা, আসবাবের বর্ণনা এবং সৃজনশীলতার কথা আমরা পড়ি, সেগুলোই আমাদের নিত্যজীবনে প্রচ্ছন্ন প্রভাব ফেলেছে। ঠাকুরবাড়ির অঙ্গসজ্জা ও অন্দরমহলের কর্মকাণ্ড, শান্তিনিকেতনের পঠনপাঠন, পাঠ্যক্রম এবং পাঠক্রমবহির্ভূত কার্যক্রমের প্রভাবে বঙ্গবাসীর জীবনযাপনের স্টাইল স্টেটমেন্টটা অনেকাংশেই রাবীন্দ্রিক। সেটা নিয়ে আজও গবেষণা এবং চর্চা চলছে। শান্তিনিকেতনের আলপনা, বাটিকের কাজ, কাঁথার কাজ, হাতের কাজের নানা গয়না আর ঘর সাজানোর জিনিসের প্রভাব এখন শুধু বঙ্গজীবনে নয়, তার বাইরেও সুদূরপ্রসারী। আর আমরা এখন যেভাবে শাড়ি পরছি, তা তো ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলেরই চেষ্টা। এটাই রবীন্দ্র ঘরানা।
রসনাবিলাস
ঠাকুরবাড়ির রান্না এখন আমাদের কাছে ‘রেয়ার অ্যান্ড লস্ট রেসিপি’র মধ্যে পড়ে। খুব সামান্য, সাধারণ ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে যে কী অপূর্ব রান্নার স্বাদ আনা যেতে পারে, ঠাকুরবাড়ির রান্না থেকে তা আমরা জানতে পারি। ঠাকুরবাড়ির আমিষ রান্নার পাশাপাশি নিরামিষ রান্না এবং মিষ্টির ইনোভেটিভ রেসিপি আমাদের বঙ্গজীবনে এক অনন্য প্ল্যাটার ও ডেলিকেসি।
অবসরে
রবিঠাকুরের বহুমাত্রিক সাহিত্য আমাদের জীবনে এতটাই প্রভাব ফেলে যে রবীন্দ্র-পরবর্তী সিনেমা, থিয়েটার এবং নাটকেও তা সুস্পষ্ট। শুধু তা-ই নয়, পারফর্মিং আর্টের প্রতিটি গল্পে বা উপস্থাপনায় আমরা সব সময় রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা, চরিত্রায়ণ— সবকিছুতেই প্রভাবিত, অনুপ্রাণিত এবং আলোকিত। এমন ভাবনা বা সৃষ্টি শুধু রবীন্দ্রানুরাগী, রবীন্দ্র গবেষক বা রবীন্দ্রচর্চা করেন এমন মানুষের মধ্যেই যে সীমাবদ্ধ, তা নয়। জনসাধারণের কথায়, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সৃজনে, জীবনের রোজনামচায়, নিশ্বাসে-প্রশ্বাসে মিশে আছেন রবিঠাকুর।
আপনা মাঝে শক্তি ধরো
আমাদের মতো সাধারণ মানুষ রবিঠাকুরের কাছ থেকে যেটা শিখি, সেটা হলো মৃত্যুভয় ত্যাগ করতে পারা। জীবনের অমোঘ সত্যি ‘মৃত্যু’। মৃত্যুর পিছু পিছু আসে দুঃখ, বিচ্ছেদ, বিরহ। আমরা তাঁর কাছ থেকেই শিখি যে মৃত্যুর আঘাতে জীবনের সার্থকতার পরাজয় হয় না, মৃত্যুকে অমৃত করে নিতে হয়। রবীন্দ্র শব্দের মাধুর্য এবং মাদকতা আমাদের রক্তে মিশে গিয়ে জীবনের সহনশীলতা শিখিয়ে দিচ্ছে রোজ।
কিছু ব্যক্তিত্ব আমাদের জীবনে থাকেন, যাঁরা চিরস্মরণীয় তো বটেই, এমনকি প্রাতঃস্মরণীয়। তাঁদের যে শুধু জন্মদিন, প্রয়াণ দিবস বা বিশেষ দিনেই মনে পড়ে, তা নয়। তাঁরা জড়িয়ে থাকেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, যাপনে, অভ্যাসে, শখে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
তোমার হলো শুরু...
‘সহজ পাঠের’ হাত ধরে সেই শিশুকালে রবিঠাকুরের সঙ্গে পরিচয়। পড়া শুরু হতেই মনে হয়, আমরাও তো এ রকম ভাবি। শুধু এমন করে বলতে পারি না। সেই শুরু। লম্বা সাদা দাড়িওয়ালা লোকটা অনায়াসে আমাদের রবিদাদু হয়ে গেল সেই ছোটবেলায়। তাঁর লেখায় আমাদের কল্পনা আর বাস্তবের তেপান্তরের মাঠ থেকে ভুবনডাঙার মাঠ, ছোট নদী, তালগাছ, গ্রামের পথ, নৌকা, মাঝি, দইওয়ালা থেকে কাবুলিওয়ালা—মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল। সেই থেকে মনে গেঁথে যায়, আমাদের শ্রেষ্ঠ কবি তিনিই।
একটু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রবিদাদুর পড়ার বিষয়গুলো অন্য রকম হয়ে ওঠে। ছোটবেলায় যে ভাবনায় পড়েছিলাম, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝি এক একটি গল্প, কবিতা, গান—সবকিছু যেন অন্য অর্থে, অন্য রূপে আমাদের কাছে ধরা দিচ্ছে।
‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই ছোট সে তরী
আমারই সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণ গগন ঘিরে ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে রহিলো পড়ি—
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।’
স্বপ্নের ঘোরে পড়া কবিতা অন্য অর্থ নিয়ে ধরা দেয় আমাদের জীবনে পরবর্তী সময়ে। সহজ-সরল ভাষায় জীবনের চরম সত্যটা বলে দেওয়া। ছোটদের কবিতা কিন্তু এই যে আমাদের কাজটাই সব, আমাদের কাজটুকু মানেই আমরা। এ কাজ বাদ দিলে আমি বলে কিছু নেই, তাই ঠাঁই নেই আমাদের। কত বড় দর্শন একটা ছোট্ট কবিতার মধ্যে লুকিয়ে আছে।
হে বন্ধু, হে প্রিয়
সুখে, দুঃখে, আনন্দে, আবেগে, প্রেমে, বিরহে, বিচ্ছেদে, অবসাদে বাঁচার আশ্রয় যেন রবিঠাকুরের সৃষ্টিগুলো। তাঁর প্রেম আর প্রার্থনা পর্যায়ের গান আলাদা করা যায় না। তাই আমাদের জীবনের চর্চায়, মননে রবিঠাকুর কারও কাছে চির সখা, কারও কাছে পরম শক্তি, কারও কাছে প্রতিষ্ঠান, কারও কাছে প্রাণের ঠাকুর, কারও কাছে জীবনের শেষ আশ্রয়। তাঁর মতো করেই মন বলতে লাগে, ‘হে মহা জীবন, হে মহা মরণ/ লইনু শরণ, লইনু শরণ।’
রয়েছ জড়ায়ে জড়ায়ে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্ট চরিত্রগুলোর যে সাজপোশাকের বর্ণনা, আসবাবের বর্ণনা এবং সৃজনশীলতার কথা আমরা পড়ি, সেগুলোই আমাদের নিত্যজীবনে প্রচ্ছন্ন প্রভাব ফেলেছে। ঠাকুরবাড়ির অঙ্গসজ্জা ও অন্দরমহলের কর্মকাণ্ড, শান্তিনিকেতনের পঠনপাঠন, পাঠ্যক্রম এবং পাঠক্রমবহির্ভূত কার্যক্রমের প্রভাবে বঙ্গবাসীর জীবনযাপনের স্টাইল স্টেটমেন্টটা অনেকাংশেই রাবীন্দ্রিক। সেটা নিয়ে আজও গবেষণা এবং চর্চা চলছে। শান্তিনিকেতনের আলপনা, বাটিকের কাজ, কাঁথার কাজ, হাতের কাজের নানা গয়না আর ঘর সাজানোর জিনিসের প্রভাব এখন শুধু বঙ্গজীবনে নয়, তার বাইরেও সুদূরপ্রসারী। আর আমরা এখন যেভাবে শাড়ি পরছি, তা তো ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলেরই চেষ্টা। এটাই রবীন্দ্র ঘরানা।
রসনাবিলাস
ঠাকুরবাড়ির রান্না এখন আমাদের কাছে ‘রেয়ার অ্যান্ড লস্ট রেসিপি’র মধ্যে পড়ে। খুব সামান্য, সাধারণ ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে যে কী অপূর্ব রান্নার স্বাদ আনা যেতে পারে, ঠাকুরবাড়ির রান্না থেকে তা আমরা জানতে পারি। ঠাকুরবাড়ির আমিষ রান্নার পাশাপাশি নিরামিষ রান্না এবং মিষ্টির ইনোভেটিভ রেসিপি আমাদের বঙ্গজীবনে এক অনন্য প্ল্যাটার ও ডেলিকেসি।
অবসরে
রবিঠাকুরের বহুমাত্রিক সাহিত্য আমাদের জীবনে এতটাই প্রভাব ফেলে যে রবীন্দ্র-পরবর্তী সিনেমা, থিয়েটার এবং নাটকেও তা সুস্পষ্ট। শুধু তা-ই নয়, পারফর্মিং আর্টের প্রতিটি গল্পে বা উপস্থাপনায় আমরা সব সময় রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা, চরিত্রায়ণ— সবকিছুতেই প্রভাবিত, অনুপ্রাণিত এবং আলোকিত। এমন ভাবনা বা সৃষ্টি শুধু রবীন্দ্রানুরাগী, রবীন্দ্র গবেষক বা রবীন্দ্রচর্চা করেন এমন মানুষের মধ্যেই যে সীমাবদ্ধ, তা নয়। জনসাধারণের কথায়, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সৃজনে, জীবনের রোজনামচায়, নিশ্বাসে-প্রশ্বাসে মিশে আছেন রবিঠাকুর।
আপনা মাঝে শক্তি ধরো
আমাদের মতো সাধারণ মানুষ রবিঠাকুরের কাছ থেকে যেটা শিখি, সেটা হলো মৃত্যুভয় ত্যাগ করতে পারা। জীবনের অমোঘ সত্যি ‘মৃত্যু’। মৃত্যুর পিছু পিছু আসে দুঃখ, বিচ্ছেদ, বিরহ। আমরা তাঁর কাছ থেকেই শিখি যে মৃত্যুর আঘাতে জীবনের সার্থকতার পরাজয় হয় না, মৃত্যুকে অমৃত করে নিতে হয়। রবীন্দ্র শব্দের মাধুর্য এবং মাদকতা আমাদের রক্তে মিশে গিয়ে জীবনের সহনশীলতা শিখিয়ে দিচ্ছে রোজ।
সকাল সকাল স্মার্টফোনে অ্যালার্ম বাজতেই তড়িঘড়ি করে গোসল করতে দৌড়। এরপর আলমারি খুলে হাতের কাছে যা পাওয়া যায়, তাই পরে ব্যাগটা কাঁধে নিয়েই চম্পট। পাঁচ মিনিট দেরি হলেই বাস পাওয়া যাবে না। মেট্রো তো না-ই। যে মেয়েটার রোজ ক্লাস বা অফিস ধরতে এমনভাবে সকালটা যায়, বিশেষ দিনগুলোয় তার হালটা বোঝেন...
১ দিন আগেগরম মানেই প্রচণ্ড তাপ আর ঘাম। কিন্তু রোদে বের হলে ত্বক কেমন যেন শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে। আঙুলের ডগা, গোড়ালি এমনকি ঠোঁটও ফাটে এখনকার গ্রীষ্মকালে। ভাবা যায়? এর কারণ হলো, গরম পড়লেও বাতাসে আর্দ্রতা কম, ফলে ত্বকে টান টান অনুভব হয়, অতিরিক্ত শুষ্কতাও দেখা দেয়। গরমে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে বাড়তি যত্ন নেওয়া চাই।
১ দিন আগেএখন কাঁচা আমের সময়। নববর্ষের প্রথম দিন বানাতে পারেন কাঁচা আমের কয়েক রকমের পদ। রেসিপি ও ছবি দিয়েছেন আফরোজা খানম মুক্তা।
১ দিন আগেআমার গলা, ঘাড়ে ও পিঠে কিছু কালো ছোপ রয়েছে। দাগমুক্ত ত্বকের জন্য কী করতে পারি? নুসরাত জাহান, জয়পুরহাট
১ দিন আগে