Ajker Patrika

কেন ফিনল্যান্ড সবচেয়ে সুখী দেশ, জেনে নিন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২: ০৫
সপিরবারে প্যাট্রিস পোলৎজার। ছবি: সূত্র সিএনবিসি
সপিরবারে প্যাট্রিস পোলৎজার। ছবি: সূত্র সিএনবিসি

পৃথিবীর সুখী দেশের তালিকায় গত আট বছর ফিনল্যান্ড নাম ধরে রেখেছে। এর কারণ কী? সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ও গবেষণার উচ্চহার—এগুলোই কি কারণ? বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন উত্তর।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ যতটা ভেবেছিল, বাস্তবে দুই গুণ বেশি অপরিচিত ব্যক্তিরা ফিরিয়ে দিয়েছে হারানো মানিব্যাগ। গবেষকেরা বলেন, ‘আপনি যদি মনে করেন, আপনার চারপাশের মানুষ সহানুভূতিশীল, আপনি তখনই সবচেয়ে সুখী।’

এ বছরের ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট’-এ শীর্ষে আছে ফিনল্যান্ড। এই অবস্থানে আসার মূল কারণগুলো হলো, উচ্চ জীবন সন্তুষ্টি, স্বচ্ছ প্রশাসন, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও শক্তিশালী সামাজিক সহায়তার সংস্কৃতি।

ফিনল্যান্ড আমাদের শেখায় যে সুখ শুধু সম্পদের ওপর নির্ভর করে না; বরং বিশ্বাস, সহমর্মিতা, মানসিক স্বাস্থ্য, প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক, সামাজিক নিরাপত্তা ও খোলামেলা সংস্কৃতি—এই সবকিছুর সম্মিলনেই জন্ম নেয় একটি সুখী সমাজ।

ফিনল্যান্ড কেন ব্যতিক্রম

গ্যালাপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলানা রন-লেভির মতে, ফিনল্যান্ডকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে এর সামাজিক বিশ্বাস, ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ও ব্যতিক্রমী সামাজিক সহায়তা নেটওয়ার্ক। এই উপাদানগুলো ফিনিশদের জীবনে স্থায়ী সুখ ও মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করে।

নিরাপদ ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা

ফিনল্যান্ডের বড় শক্তির একটি হলো তাদের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা। প্রায় বিনা মূল্যে নাগরিকদের মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দেয় দেশটি। এর মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তাও রয়েছে। বিষয়টি ফিনল্যান্ডের নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কুসংস্কার কমাতে সাহায্য করছে। পরিবারে ছুটি, ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স ও প্রাকৃতিকভাবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন—সব মিলিয়ে ফিনল্যান্ডে বসবাস অনেকটাই স্বস্তিদায়ক। দেশটিতে আছে খোলামেলা আবেগ প্রকাশের সংস্কৃতি। মেন্টাল হেলথ ফিনল্যান্ডের একজন বিশেষজ্ঞ মারি লারিভারা জানান, ফিনিশরা নিজেদের জীবনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। গবেষণা বলছে, এই অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করতে সহায়ক।

নিজের যত্ন নেওয়া ফিনিশদের কাছে প্রতিদিনের জীবনের অংশ। ছবি: পেক্সেলস
নিজের যত্ন নেওয়া ফিনিশদের কাছে প্রতিদিনের জীবনের অংশ। ছবি: পেক্সেলস

মানসিক স্বাস্থ্য অবহেলার বিষয় নয়

‘সেলফ-কেয়ার’ ফিনল্যান্ডে শুধু একটি ফ্যাশনেবল শব্দ নয়। ফিনল্যান্ডের মানুষ বিভিন্ন ঋতুতে সূর্যের আলো ভিন্ন রকমভাবে পায়। আর্কটিক সার্কেলের উত্তরে গ্রীষ্মকালে, অর্থাৎ মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত সূর্য অস্ত যায় না। আবার শীতকালে বা নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সূর্য একেবারে ওঠে না। দেশটির দক্ষিণে, শীতকালে দিনের আলো থাকে মাত্র ৬ ঘণ্টা, যেখানে গ্রীষ্মকালে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত আলো থাকতে পারে। এ বিষয়গুলো তাদের আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছে। ফিনিশরা কিছু অভ্যাস সক্রিয় রাখে সব সময়, যেমন প্রতিদিন বাইরে হাঁটা অথবা পবিত্র সাওনা অনুশীলন। তাদের কাছে নিজের যত্ন নেওয়া প্রতিদিনের জীবনের অংশ।

প্রকৃতি ও সৃষ্টিশীল জীবনের প্রাধান্য

ফিনল্যান্ডের সংস্কৃতিতে বন, হ্রদ, উপকূল—এই প্রাকৃতিক সম্পদগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। হাইকিং, সাঁতার, ক্যাম্পিংয়ের মতো আউটডোর কর্মকাণ্ড সেখানে সাধারণ বিষয়। এ ছাড়া সেখানে কম খরচে শিক্ষা ও সৃজনশীল কাজের সুযোগ রয়েছে, যা ব্যক্তিগত উন্নয়ন ও সামাজিক সংযোগ বাড়ায়।

সুখ মানে ধারাবাহিক শান্তি

তামপেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জুহো সায়রি বলেন, ‘ফিনিশদের সুখ মানে জাঁকজমকপূর্ণ আনন্দ নয়, বরং জীবনের ওপর একটি স্থিতিশীল সন্তুষ্টি।’ ওউলু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিরকা হিন্টসানেন মনে করেন, ‘ব্যক্তিগত মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাহ্যিক পরিবেশ, সামাজিক নীতি ও সরকারি ব্যবস্থাপনা মানুষকে সুখী করতে বড় ভূমিকা রাখে।’

কম সময় মানে ভালো ফোকাস

নিউইয়র্কপ্রবাসী প্যাট্রিস পোলৎজার গত বছর ডিসেম্বরে তাঁর স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে হেলসিংকি যান। ফিনল্যান্ডে সূর্যোদয় হয় দুপুরে আর সূর্যাস্ত হয় বেলা প্রায় সাড়ে ৩টায়! এই দৃশ্য দেখে প্যাট্রিস কিছুটা অবাক হয়ে ট্যাক্সিচালকের কাছে জানতে চান, এত কম আলোতেও সবাই এত সুখী কীভাবে?

ফিনল্যান্ডকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে এর সামাজিক বিশ্বাস, ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ও ব্যতিক্রমী সামাজিক সহায়তা নেটওয়ার্ক। ছবি: পেক্সেলস
ফিনল্যান্ডকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে এর সামাজিক বিশ্বাস, ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ও ব্যতিক্রমী সামাজিক সহায়তা নেটওয়ার্ক। ছবি: পেক্সেলস

চালক জানান, অন্ধকার শীতকালের মধ্য থেকেও ফিনল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম উদ্ভাবনমূলক একটি উৎপাদনশীল অর্থনীতি বজায় রেখেছে। প্যাট্রিস বুঝতে পারেন, দিনের দীর্ঘ পরিধি নয়, বরং সংক্ষিপ্ত সময় বেশি ফোকাসের সুযোগ দেয়। শীতকালের শক্তি আলাদা হয়। শীতকালে সবকিছু করতে পারা যাবে না, সেটা ঠিক। তবু এটাকে শক্তিতে পরিণত করে ফিনল্যান্ডের মানুষ।

কীভাবে পরিমাপ করা হয় সুখ

‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট’-এ ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ফিনল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের জীবন সম্পর্কে মূল্যায়ন সংগ্রহ করা হয়েছিল। মানুষকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ‘কান্ট্রিল লেডার’ নামক একটি স্কেলে, যেখানে শূন্য মানে সবচেয়ে খারাপ জীবন, আর ১০ মানে সবচেয়ে ভালো। এই স্কোরের সঙ্গে আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। সেগুলো হলো মাথাপিছু আয়, সামাজিক সহায়তা, স্বাস্থ্যকর জীবনের প্রত্যাশা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও উদারতা।

কোন দেশগুলো এগিয়ে

এ বছরের জাতিসংঘ প্রস্তাবিত ‘বিশ্ব সুখ’ রিপোর্টে ফিনল্যান্ডের পরে আছে ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ড। তবে লাতিন আমেরিকার দুটি দেশ, কোস্টারিকা ও মেক্সিকো এবার প্রথম শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এতে পারিবারিক সম্পর্ক বড় ভূমিকা রেখেছে।

সূত্র: বিবিসি, ইভিএন এক্সপ্রেস, সিএনবিসি

প্যাট্রিস পোলৎজারের ছবি, সূত্র: সিএনবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুলা দিয়ে মলা শুঁটকির ঝাল

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
মুলা দিয়ে মলা শুঁটকির ঝাল
মুলা দিয়ে মলা শুঁটকির ঝাল

শীতের সবজি মুলা উঠেছে বাজারে। মুলা দিয়ে কখনো শুঁটকি খেয়েছেন? আপনাদের জন্য মুলা দিয়ে শুঁটকির ঝালের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।

উপকরণ

সাদা বা লাল মুলা ১ কেজি, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, রসুনকুচি ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজকলি ১ মুঠ, কাঁচা মরিচ ফালি ৫ থেকে ৬টি, মলা শুঁটকি ১০০ গ্রাম, আদা ও রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ, মরিচ ও ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ করে, লবণ স্বাদমতো, ধনেপাতাকুচি ২ টেবিল চামচ, সয়াবিন তেল ৪ টেবিল চামচ, তেজপাতা ২টি।

প্রণালি

মুলা ও শুঁটকি শুকনা কড়াইতে ভেজে গরম পানিতে ধুয়ে নিন। পরে মুলার খোসা ফেলে গোল করে কেটে নিন। কড়াইতে সয়াবিন তেল গরম হলে পেঁয়াজ ও রসুনকুচি, মলা মাছের শুঁটকি আর তেজপাতা দিয়ে দু-তিন মিনিট ভেজে নিন। পরে আদা ও রসুনবাটা, হলুদ, মরিচ ও ধনেগুঁড়া এবং লবণ দিয়ে কষিয়ে নিন। ফুটে উঠলে কাঁচা মরিচ ফালি ও পেঁয়াজকলি দিয়ে আরও পাঁচ-সাত মিনিট রান্না করুন। এরপর ধনেপাতাকুচি ছড়িয়ে লবণ দেখে নামিয়ে নিন। এবার গরম-গরম পরিবেশন করুন মুলা দিয়ে শুঁটকির ঝাল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জেনে নিন মালদ্বীপ ভ্রমণের সেরা সময় কখন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ০১
নিরিবিলি পরিবেশে বিশ্রাম নিতে চাইলে মালদ্বীপ আদর্শ জায়গা। ছবি: উইকিপিডিয়া
নিরিবিলি পরিবেশে বিশ্রাম নিতে চাইলে মালদ্বীপ আদর্শ জায়গা। ছবি: উইকিপিডিয়া

উত্তর ভারত মহাসাগরের বুকে ছড়িয়ে থাকা মালদ্বীপ নীল-সবুজ পানি আর বিলাসবহুল রিসোর্টের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। প্রকৃত অর্থে নিরিবিলি বিশ্রাম চাইলে এই দ্বীপপুঞ্জ আদর্শ জায়গা। তবে সেরা অভিজ্ঞতা পেতে হলে মালদ্বীপ ভ্রমণের আদর্শ সময় কখন, সেই ধারণা আগে থেকে নিয়ে রাখা ভালো। মালদ্বীপে পর্যটন মৌসুমকে সাধারণত তিন ভাগ করা হয়—

পিক সিজন: নভেম্বর থেকে এপ্রিল

শোল্ডার সিজন: অক্টোবরের শেষ ও এপ্রিলের শেষ

লো সিজন: মে থেকে অক্টোবর

ওভার ওয়াটার বাংলোয় থাকার স্বপ্ন পূরণ করতে চাইলে আবহাওয়া, ভিড়, দাম সব দিক মিলিয়ে কোন সময়টি উপযুক্ত হবে, তা বিবেচনায় রাখা দরকার।

মালদ্বীপে পর্যটন মৌসুমকে পিক সিজন, শোল্ডার সিজন ও লো সিজন, সাধারণত এই তিন ভাগ করা হয়। ছবি: উইকিপিডিয়া
মালদ্বীপে পর্যটন মৌসুমকে পিক সিজন, শোল্ডার সিজন ও লো সিজন, সাধারণত এই তিন ভাগ করা হয়। ছবি: উইকিপিডিয়া

ভ্রমণের জন্য ভালো সময়

যাঁরা রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশ আর পরিষ্কার সমুদ্রের পানি দেখাকে অগ্রাধিকার দিতে চান, তাঁদের জন্য মালদ্বীপ ভ্রমণের সেরা সময় নভেম্বর থেকে এপ্রিল। মালদ্বীপের শুষ্ক মৌসুম এটি। তখন বৃষ্টি কম, ডাইভিংয়ে পানির দৃশ্যমানতা অত্যন্ত ভালো থাকে। তবে এটাই দ্বীপ দেশটিতে পর্যটনের ব্যস্ততম সময়। ফলে হোটেল ও ফ্লাইটের দাম থাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।

তাই কম খরচে ঘুরতে চাইলে মে থেকে অক্টোবরের বর্ষাকাল সবচেয়ে উপযোগী সময়। সে সময় বৃষ্টির আশঙ্কা বেশি থাকে। কিন্তু এই সময়ে অনেক ধরনের ছাড় পাওয়া যায়। ফলে খরচ অনেকটা কমে আসে। অক্টোবরের শেষ থেকে এপ্রিলের শেষ, ছোট এই দুই শোল্ডার সিজনে আবহাওয়া তুলনামূলক শুকনো থাকে। ফলে সবকিছুর দামও থাকে কিছুটা কম।

ভিড় এড়াতে চাইলে

মালদ্বীপে প্রায় ১ হাজার ২০০ দ্বীপ থাকায় বছরের যেকোনো সময়ে নিরিবিলি পরিবেশ পাওয়া যায়। তবে জনপ্রিয় রিসোর্ট বা ডাইভিং সাইটগুলো শুষ্ক মৌসুমে কিছুটা ব্যস্ত থাকে। সম্পূর্ণ নিরিবিলি অভিজ্ঞতা পেতে চাইলে মে থেকে অক্টোবর মালদ্বীপ ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। বিশেষ করে মে ও জুনে পর্যটকসংখ্যা সবচেয়ে কম থাকে সেখানে।

ভালো আবহাওয়ার জন্য সেরা সময়

মালদ্বীপে সারা বছরই গরম আর আর্দ্র আবহাওয়া থাকে। মৌসুমি আবহাওয়ার দিক থেকে দেশটিতে মূলত দুই ঋতু; শুষ্ক মৌসুম (নভেম্বর-এপ্রিল) এবং বর্ষা মৌসুম (মে-অক্টোবর)।

শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টি খুব কম। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আবহাওয়া থাকে সবচেয়ে ভালো। ফলে এটি পর্যটনের পিক সময় এবং এ সময় সবকিছুর দামও বেশি থাকে। বর্ষাকালে কিছু দ্বীপে মাসে ৯ ইঞ্চির মতো বৃষ্টি হতে পারে। প্রায়ই বিকেলে বৃষ্টি নামে, তবে পুরো দিন রোদ পাওয়াও অস্বাভাবিক নয়। তাই এ সময় ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে খরচ কিছু বাঁচতে পারে।

কম খরচে মালদ্বীপ ভ্রমণ

মে থেকে অক্টোবরের বর্ষাকালে থাকার জায়গা, ফ্লাইট, এমনকি ওভার ওয়াটার বাংলোগুলোর দামও কমে আসে। অগ্রিম বুকিং করলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। ফ্লাইট খরচ কমাতে সরাসরি রুটের বদলে এশিয়া বা ইউরোপের বড় কোনো শহরে ট্রানজিট নিতে পারেন। রিসোর্টে না থেকে স্থানীয়দের পরিচালিত গেস্টহাউস বা এয়ারবিএনবিতে উঠলেও বাজেটের মধ্যে ভ্রমণ সম্ভব।

ডাইভিং, সার্ফিং ও ওয়াটার স্পোর্টসের জন্য সেরা সময়

বর্ষাকাল সার্ফিংয়ের জন্য আদর্শ সময়। কারণ এ সময় ঢেউ বড় ও স্বভাবতই চঞ্চল থাকে। যদি বৃষ্টির ঝুঁকি এড়াতে চান, তাহলে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলও ভালো সময়। ডাইভিংয়ের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম সময় জানুয়ারি থেকে এপ্রিল। এ সময়ে সমুদ্রের পানির স্বচ্ছতা সবচেয়ে ভালো থাকে। ফলে রঙিন প্রবাল, মাছ আর বিখ্যাত ডাইভ সাইটগুলো উপভোগ করা যায় দারুণভাবে।

বায়োলুমিনেসেন্স দেখার সময়

বৃষ্টির মৌসুমে প্ল্যাঙ্কটনের পরিমাণ বাড়ে। তাই এ সময় সমুদ্রের ঢেউয়ে নীল রঙের বায়োলুমিনেসেন্স বেশি দেখা যায়। তবে এটি নির্দিষ্ট মাসের ওপর হয় না। বরং পানির তাপমাত্রা ও লবণাক্ততার ওপর বেশি নির্ভরশীল।

কোন সময়টি খারাপ

অনেকের মতে, মালদ্বীপ ভ্রমণের জন্য আগস্ট সবচেয়ে অস্বস্তিকর মাস। কারণ এটি বর্ষাকালের ঠিক মাঝামাঝি, যদিও সাধারণত অক্টোবরেই বেশি বৃষ্টিপাত হয়। তাই এই দুই মাস এড়িয়ে চললে আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূলে পাওয়া যায়।

বাজেট ভ্রমণকারীদের জন্য আবার নভেম্বর থেকে এপ্রিল সবচেয়ে খারাপ সময়। কারণ এ সময় সবকিছুর দাম থাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।

সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এ বছর রন্ধনশৈলীর তালিকায় শীর্ষ ৩০ দেশ

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ১৫
মধ্য ইউরোপের দেশ পোল্যান্ডের বিখ্যাত খাবার পিয়েরোগি বা ডাম্পলিং। ছবি: উইকিপিডিয়া
মধ্য ইউরোপের দেশ পোল্যান্ডের বিখ্যাত খাবার পিয়েরোগি বা ডাম্পলিং। ছবি: উইকিপিডিয়া

ভোজনরসিকেরা যতটা জম্পেশ করে, আগ্রহ নিয়ে খাবার খেয়ে থাকে, রন্ধনকৌশল জানতেও তারা ততটাই মাথা ঘামায়। তারা জানতে চায়, খাবারের ইতিহাস, তার রেসিপি, তার উপাদান ইত্যাদি। তাদের কথা বিবেচনায় রেখে প্রতিবছর প্রকাশিত হয় ‘টেস্ট অ্যাটলাস’-এর বার্ষিক র‍্যাঙ্কিং। এই তালিকা বিশ্বের সেরা রন্ধনশৈলীর এক তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে। প্রতিটি দেশের সুপরিচিত এবং সর্বোচ্চ রেট পাওয়া খাবার ও খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যায়নের ভিত্তিতে তৈরি হয় এই তালিকা।

২০২৫ সালের এই র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ত্রিশে স্থান করে নিয়েছে বিভিন্ন মহাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার। এই বৈশ্বিক র‍্যাঙ্কিং স্পষ্ট করে, প্রতিটি দেশের রন্ধনশৈলী নিজস্ব ইতিহাস, উপকরণ এবং আবেগ বহন করে। টেস্ট অ্যাটলাস ২০২৫-এর এই তালিকা খাদ্যপ্রেমীদের জন্য এক নতুন স্বাদ ভ্রমণের নিমন্ত্রণ।

ঐতিহ্যবাহী গ্রিলড খাবার কোকোরিটসি নিয়ে তালিকায় শীর্ষে আছে গ্রিস। ছবি: উইকিপিডিয়া
ঐতিহ্যবাহী গ্রিলড খাবার কোকোরিটসি নিয়ে তালিকায় শীর্ষে আছে গ্রিস। ছবি: উইকিপিডিয়া

শীর্ষ পাঁচে ভূমধ্যসাগরীয় সৌরভ ও মেক্সিকান জাদু

এবার তালিকার চূড়ায় রয়েছে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এবং মেক্সিকোর সুস্বাদু রন্ধনশৈলী। তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে গ্রিস। তাদের রেটিং দেওয়া হয়েছে ৪ দশমিক ৬০। তাদের ঐতিহ্যবাহী গ্রিল করা খাবার ‘কোকোরিটসি’ বিশ্ব স্বাদের জগতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দ্বিতীয় স্থানে আছে ইতালি। দেশটির রেটিং ৪ দশমিক ৫৯। পিৎজাসহ বিশ্বের অসংখ্য জনপ্রিয় খাবারের জন্মভূমি এই দেশ। তৃতীয় স্থান দখল করেছে মেক্সিকো, তাদের রেটিং ৪ দশমিক ৫২। দেশটি তাদের কার্নে আসাডা টাকোসের মতো প্রাণবন্ত ও মসলাদার স্ট্রিট ফুডের মাধ্যমে স্বাদের এক অনন্য জগৎ তৈরি করেছে। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান যথাক্রমে আছে স্পেন ও পর্তুগাল। দেশ দুটি একসঙ্গে ৪ দশমিক ৫০ রেটিং পেয়েছে। স্পেনের ঐতিহ্যবাহী রোস্ট ল্যাম্ব লেচাজো এবং পর্তুগালের মাংস, ক্ল্যাম ও আলুমিশ্রিত পদ কার্নে দে পোর্কো আ আলেন্তেজানা খাদ্যরসিকদের মন জয় করেছে।

প্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বিশেষ স্বাদ

এশীয় রন্ধনশৈলী মসলার জটিল ব্যবহার এবং সুগন্ধি খাবারের জন্য বিখ্যাত। তুরস্কের মতো ইউরেশীয় এবং আফ্রিকান দেশগুলোও এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। তালিকায় স্পেন ও পর্তুগালের র‍্যাঙ্কিংয়ের নম্বরে আছে তুরস্ক। ইস্কান্দার কেবাপ তাদের সেরা দশে জায়গা করে দিয়েছে। এরপর এশিয়ার দেশ হিসেবে আছে ইন্দোনেশিয়া ও জাপান। জাপান মূলত সুসির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পেয়েছে। তালিকায় দশম অবস্থানে আছে চীন। দেশটির হট পট বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। মসলাদার কারির দেশ ভারতের অবস্থান বারোতম। তাদের রেটিং দেওয়া হয়েছে ৪ দশমিক ৪২। বান মি থিতের জন্য পরিচিত ভিয়েতনামের অবস্থান ১৯তম।

ইস্কান্দার কেবাপ নিয়ে তুরস্ক আছে তালিকার ছয় নম্বরে। ছবি: উইকিপিডিয়া
ইস্কান্দার কেবাপ নিয়ে তুরস্ক আছে তালিকার ছয় নম্বরে। ছবি: উইকিপিডিয়া

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে থাইল্যান্ড আছে ২৮তম অবস্থানে। তাদের এই অবস্থান নিশ্চিত করেছে ফাট কাফরাও নামের খাবারটি। আফ্রিকার উত্তর প্রান্ত থেকে তালিকায় স্থান পেয়েছে আলজেরিয়া। তাদের অবস্থান একুশতম। এদিকে তিউনিসিয়ার অবস্থান ৩০তম। দেশটি নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পদ ব্রিক নিয়ে সেরা ৩০-এ জায়গা করে নিয়েছে।

ইউরোপের ঐতিহ্য ও বলকান অঞ্চলের গ্রিলড ফ্লেভার

হটপটের মতো জনপ্রিয় খাবার তালিকায় জায়গা করে দিয়েছে চীনকে। ছবি: উইকিপিডিয়া
হটপটের মতো জনপ্রিয় খাবার তালিকায় জায়গা করে দিয়েছে চীনকে। ছবি: উইকিপিডিয়া

ইউরোপের অন্যান্য অংশ এবং বলকান অঞ্চল তাদের ক্ল্যাসিক ও হৃদয়গ্রাহী খাবারের জন্য পরিচিত। তালিকায় অষ্টম অবস্থানে আছে ফ্রান্স। আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত রন্ধনশৈলী তাদের এই অবস্থানে তুলে এনেছে। মধ্য ইউরোপ থেকে ১১তম অবস্থানে আছে পোল্যান্ড। তাদের বিখ্যাত খাবার পিয়েরোগি বা ডাম্পলিং। হাঙ্গেরির বিশেষ স্ট্যু গুলাশ তার দীর্ঘ ঐতিহ্যের গুণে ২০তম অবস্থানে নিয়ে গেছে হাঙ্গেরিকে। বলকান অঞ্চলের দেশ সার্বিয়া আছে তালিকার ১৫তম অবস্থানে। আর এই অবস্থানে তাদের এনেছে প্লেজেস্কাবিকা নামের একটি খাবার। এটি সার্বিয়ার একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রিলড মাংসের পদ। ১৭তম অবস্থানে আছে ক্রোয়েশিয়া। জাগোরস্কি স্ট্রুক্লি নিয়ে তারা তাদের গ্রিলড ও প্যাস্ট্রিভিত্তিক খাবারের প্রতিনিধিত্ব করেছে। তালিকায় স্থান পাওয়া আরও ইউরোপিয়ান দেশগুলো হলো জার্মানি, রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র এবং জর্জিয়া।

আমেরিকা মহাদেশের স্বাদযাত্রা

উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলো তাদের বিখ্যাত মাংস এবং ঐতিহ্যবাহী খাবারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। উত্তর আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আছে ১৩তম অবস্থানে। সেদ্ধ মেইন লবস্টারের মতো আমেরিকান খাবারের মাধ্যমে ভালো রেটিং অর্জন করেছে দেশটি। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে কাউসা রেলেনা নিয়ে পেরুর অবস্থান ১৪তম। গরুর মাংসের বিখ্যাত কাট পিকানহা নিয়ে ১৬তম অবস্থানে আছে ব্রাজিল। ঐতিহ্যবাহী গ্রিলড মাংস আসাডো নিয়ে এই তালিকায় ২৫তম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে আর্জেন্টিনা।

সূত্র: স্টার্স ইনসাইডার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নেপালের অদেখা জগৎ

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
চিত্রা হরিণের পাল। ছবি: উইকিপিডিয়া
চিত্রা হরিণের পাল। ছবি: উইকিপিডিয়া

হিমালয়কন্যা নেপাল। দেশটির বরফঢাকা পাহাড়চূড়া, সবুজ উপত্যকা ও সংস্কৃতি একে আকর্ষণীয় করে তুলেছে পর্যটকদের কাছে। এই সৌন্দর্য যে পুরোটাই প্রাকৃতিক, মানুষের সৃষ্টি নয়, সেই তথ্য আমরা জানি। নেপালে হিমালয়, প্রাচীন মন্দির, আদিবাসী সংস্কৃতি, উপত্যকা ইত্যাদি দেখতে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ ভিড় করে। বিখ্যাত ভ্রমণ গন্তব্যগুলো গিজ গিজ করে মানুষে। এই জন-অরণ্য থেকে একটু সরে গেলে দেখা পাওয়া যাবে এক অদেখা নেপালের, যেখানে আছে নীরব প্রকৃতি, থারু অধিবাসীদের একেবারে নিস্তরঙ্গ জীবন, ন্যাশনাল পার্ক আর পার্কভর্তি বিভিন্ন বন্য প্রাণী। বলা হচ্ছে নেপালের দক্ষিণ প্রান্তের একটি অসম্ভব সুন্দর তরাই অঞ্চল অঞ্চলের কথা। নিম্নভূমি অঞ্চলটি নীরবে তুলে ধরে দেশটির এক ভিন্ন চিত্র। বন্য প্রাণী, জাতীয় উদ্যান এবং এক উদ্ভাবনী কমিউনিটি হোমস্টে নেটওয়ার্কের জন্য বিখ্যাত তরাই অঞ্চল। এটি নেপালের আদিবাসী থারু জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল।

নেপালের এই তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত অঞ্চলে ভ্রমণ করা মানেই খাঁটি অভিজ্ঞতা লাভ করা। এখানে থারু সংস্কৃতির প্রাচীন আতিথেয়তার মন্ত্র হলো ‘অতিথি দেব ভবঃ’, অর্থাৎ অতিথি দেবতা।

লুম্বিনী, যেখানে বুদ্ধের জন্ম হয়েছিল। ছবি: উইকিপিডিয়া কমনস
লুম্বিনী, যেখানে বুদ্ধের জন্ম হয়েছিল। ছবি: উইকিপিডিয়া কমনস

ধান্য উৎসব এবং থারু আতিথেয়তা

নেপাল-ভারত সীমান্তসংলগ্ন তরাই অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম ভাদা। সেখানে ধান কাটা শেষ আউলি নামের একটি উৎসব উদ্‌যাপিত হয় মূলত প্রকৃতিমাতাকে ধন্যবাদ জানাতে। এই গ্রাম্যের ঐতিহ্যবাহী রন্ধনশৈলীর মধ্যে আছে পেঁয়াজ, মরিচ ও কামরাঙার সঙ্গে চিনি, ধনে ও জিরা মিশিয়ে মসলাদার ফলের আচার তৈরি। আউলি উৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ধানখেতের ইঁদুর পুড়িয়ে রান্না করে তা ভোজ হিসেবে গ্রহণ করা। এটি দেবতার কাছে প্রতীকী নিবেদন করা হয়; যাতে আগামী বছরের ফসল ইঁদুরের উপদ্রব থেকে রক্ষা পায়। উৎসবে ছ্যাঙ নামে চাল বা বাটারগাছের শুকনো ফুল থেকে তৈরি মিষ্টিজাতীয় স্থানীয় পানীয় পরিবেশন করা হয়। এই গ্রামের হোমস্টেগুলো স্থানীয় নারীরা পরিচালনা করেন। এই উদ্যোগ তাদের আর্থিক স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। এই বিষয়গুলো তাদের সামাজিক স্বীকৃতি দিয়েছে।

বন্য প্রাণীর স্বর্গরাজ্য: তরাই জাতীয় উদ্যান

তরাই অঞ্চলের প্রধান আকর্ষণ থারু সংস্কৃতি। কিন্তু এটি ছাড়াও গ্রামটি সমৃদ্ধ বন্য প্রাণী নিয়ে। এখানকার তৃণভূমি, জলাভূমি এবং উপক্রান্তীয় অরণ্য সংরক্ষিত হয়েছে জাতীয় উদ্যানগুলোতে। এখানকার শুক্লা ফান্টা নামের পার্কে বিপুলসংখ্যক চিত্রল হরিণ। এটি বিশ্বের বৃহত্তম বারাশিঙ্গার আবাসস্থল। বারদিয়া উদ্যানটি বেঙ্গল টাইগারের জন্য বিখ্যাত। এ ছাড়া ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট চিতওয়ানে বাঘ, বুনো এশীয় হাতি এবং বৃহত্তর এক-শৃঙ্গ গন্ডারের সংখ্যা বাড়ছে।

সাফারি ও গন্ডার দর্শন

ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক। ছবি: উইকিপিডিয়া
ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক। ছবি: উইকিপিডিয়া

চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্কে প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক ভ্রমণে যায়। কিন্তু এর পার্শ্ববর্তী কমিউনিটি পরিচালিত বনগুলোতে পর্যটকের ভিড় কম থাকে। তবে ভিড় এড়িয়ে যদি বারাউলি গ্রামে যান, দেখতে পাবেন চারটি কমিউনিটি ফরেস্টের প্রবেশদ্বার। বারাউলিতে ১২টি হোমস্টে আছে। সেখানে প্রতিটি পরিবার যাতে সমানভাবে সুবিধা পায়, সে জন্য অতিথিদের ঘোরানো পদ্ধতিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই হোমস্টে ফির ৮০ শতাংশ পরিবারগুলো পায়। বাকিটা স্থানীয় উন্নয়নের জন্য একটি কমিউনিটি ফান্ডে জমা হয়। এই ফান্ড থেকে স্থানীয় স্কুলে ইংরেজি শিক্ষক নিয়োগের মতো কাজ করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় গাইডের সঙ্গে সাফারি করে নারায়ণী নদীর প্রাকৃতিক বাধা অতিক্রম করে কমিউনিটি ফরেস্টে প্রবেশ করা যায়। সেখানে বেঙ্গল টাইগারের সতর্কসংকেত থেকে শুরু করে বন্য শূকর, বারাশিঙ্গা, ময়ূর এবং হর্নবিল পাখি দেখা যায়। এই ভ্রমণের রোমাঞ্চকর অংশ হতে পারে একটি এক-শৃঙ্গ গন্ডার।

পরিবেশের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

কমিউনিটি ট্যুরিজমের কারণে স্থানীয়দের মধ্যে বন্য প্রাণী সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে। একসময় প্রাণীগুলোকে কেবল ফসল নষ্টকারী উপদ্রব হিসেবে দেখা হলেও এখন তারা একে মূল্যবান সম্পদ মনে করে এবং এর সুরক্ষা নিশ্চিত করে। ভ্রমণকারীরা যদি স্থানীয় মানুষ এবং পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ভ্রমণ করে, তবে সবাই উপকৃত হবে। তরাই অঞ্চল প্রমাণ করে, পর্যটনকে স্থানীয় মানুষ এবং প্রকৃতির উন্নতির জন্য কীভাবে এক আদর্শ মডেল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

সূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত