Ajker Patrika

কাকেইবো: হাতখরচ বাঁচিয়ে অর্থ সঞ্চয়ের জাপানি কৌশল

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ৫৫
Thumbnail image

টাকা জমানোর অভ্যাস যেমন বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে, তেমনি পূরণ করা যায় অনেক অসাধ্য শখও। তবে অনেকেরই টাকা জমানোর ইচ্ছা থাকলেও খরুচে স্বভাবের কারণে তা আর হয়ে ওঠে না। এ সমস্যা উত্তরণে জাপানিরা দারুণ একটি উপায় খুঁজে বের করেছেন। অর্থ সঞ্চয়ের এ পদ্ধতিতে তাঁরা বলেন ‘কাকেইবো’। জীবনধারার ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্থ সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলাই ‘কাকেইবো’।

কাকেইবো পদ্ধতি ও অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন সিএনবিসির প্রদায়ক সারাহ হার্ভে।

তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে লন্ডনের এক প্রকাশনীর চাকরি ছেড়ে আমি জাপানে চলে আসি। টোকিওতে ছয় মাস থাকার পরই জাপানিদের দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট বিষয়, মননশীলতা ও একটু একটু করে পরিবর্তনের প্রতি গুরুত্ব দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই।’

‘আমার কখনো এমন কোনো অভিজ্ঞতা হয়নি। আমার জীবন যাপনে বেশ সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম পরিবর্তন এসেছিল। বিশেষ করে আমার বাজে ও হুটহাট খরচের অভ্যাস নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। আমি যখন জাপানের বাজেট পদ্ধতি কাকেইবো সম্পর্কে জানতে পারি, আমি বেশ কৌতূহলী হয়ে পড়ি ও এ পদ্ধতি কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিই।’ যোগ করেন সারাহ।

কাকেইবো: অর্থ সঞ্চয়ের জাপানি পদ্ধতি
কাকেইবো মানে হলো গৃহস্থালির খরচের খাতা। ১৯০৪ সালে হানি মতোকো নামের এক নারী এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তিনি জাপানের প্রথম নারী সাংবাদিক হিসেবে বেশ পরিচিত। কাকেইবো হলো আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সহজ, ঝঞ্ঝাটহীন পদ্ধতি। 

অনেকেই আছেন যারা বাড়তি খরচ ছাড়াই শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়েই সন্তুষ্টির সঙ্গে জীবন যাপন করতে পারেন। আর অনেকে আছেন যাদের প্রয়োজন ছাড়াই কেনাকাটা করতে ভালো লাগে। তাঁরা যখন মানসিক চাপে ভোগেন তখন কেনাকাটা করেন, যখন দুঃখে থাকেন তখনো কেনাকাটা করেন আবার আনন্দে থাকলেও কেনাকাটা করেন।   

আর্থিক অব্যবস্থাপনার বদঅভ্যাস পরিবর্তন করা সহজ নয়। এর একটি কারণ হতে পারে, খরচের অভ্যাস আমাদের দৈনন্দিনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এ ছাড়া খরচের অভ্যাস আমাদের আবেগের সঙ্গেও যুক্ত, যার থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়। 

এসব ক্ষেত্রে কাকেইবো আমাদের কার্যকরভাবে সাহায্য করতে পারে। কাকেইবো মূলত অর্থের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বুঝতে সাহায্য করে। তাই কোনো ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে নয় বরং খাতা কলমে প্রয়োজনীয় জিনিসের হিসাব লিখে রাখতে হবে।   

কোনো ধরনের বাজেটিং সফটওয়্যার, অ্যাপ বা এক্সেল শিটে নয় বরং টালি খাতায় লিখে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এটি খরচের অভ্যাস বোঝা ও পর্যবেক্ষণ করার একটি গভীর চিন্তামূলক উপায়। 

বিভিন্ন গবেষণায় হাতে লেখার অসংখ্য সুবিধা উঠে এসেছে। এটি মানুষের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে, মানুষকে বর্তমানে বেশি মনোযোগী ও সচেতন করে তোলে এবং খারাপ অভ্যাসগুলোর পেছনের কারণগুলো বুঝে উঠতে সাহায্য করে। 

কাকেইবো পদ্ধতিতে অপ্রয়োজনীয় কিছু কেনার আগে নিজেকে অবশ্যই কয়েকটি প্রশ্ন করতে হবে—

*আমি কী এটা ছাড়া থাকতে পারব?
*আমার কি এটা কেনার সামর্থ্য আছে?
*আমি কি এটা আসলেই ব্যবহার করব?
*আমার কি এটা রাখার মতো জায়গা আছে?
*প্রথমে আমি এটা সম্পর্কে কীভাবে জানলাম? (আমি কি এটা কোনো ম্যাগাজিনে দেখেছি? আমি কি এটা কোনো উপহারের দোকানে অযথাই ঘোরাঘুরির সময় দেখেছি?)
*আজ আমার আবেগীয় অবস্থা কেমন? (শান্ত? চাপযুক্ত? আনন্দিত? নিজের জন্য খারাপ লাগছে?)
*এটা কেনার সম্পর্কে আমার মনোভাব কেমন? (আনন্দিত? অধীর? নির্বিকার? এ অনুভূতি কতক্ষণ পর্যন্ত থাকবে?)

কাকেইবো মানুষকে তাদের খরচ এবং এর পেছনে কারণগুলো সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবতে শেখায়। এতে মানুষ তাদের প্রয়োজন ও চাহিদার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। ফলে তারা কোনো কিছু কেনার আগে দ্রুত এবং সহজেই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।   

খরচের বিষয়ে সতর্কতা ও সঞ্চয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ছোটখাটো অভ্যাস পরিবর্তনেই ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এটা মনে রাখা জরুরি, কাকেইবো মানে জীবন থেকে সব সুখ–স্বাচ্ছন্দ্য ছেঁটে ফেলা নয়। আপনার যদি মন খারাপ থাকে তবে মন ভালো করে দেওয়ার জন্য অত্যন্ত সুলভ একটি উপায় হলো ফুল। খুবই কঠোর কোনো পন্থায় না গিয়ে খরচ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার মাধ্যমে ও ধীরে ধীরে নিজের অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করার মাধ্যমে নিজের মধ্যে বড় একটি পরিবর্তন আনা সম্ভব। 

কীভাবে সচেতনভাবে খরচ করা যায়
সঞ্চয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে হলে, কোনো অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার আগে প্রথমেই নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো করতে হবে।   

সচেতনভাবে খরচ করার কয়েকটি কাকেইবো কৌশল হলো—

যে জিনিস কেনার ইচ্ছা জাগার পর ২৪ ঘণ্টা সময় নিন। এতে জিনিসটি আসলেই প্রয়োজন কিনা নাকি শুধু কিনতে ইচ্ছা করছে তা বোঝা সহজ হয়। ২৪ ঘণ্টা পরও আপনি যদি তা কিনতে চান তবে তা কিনে ফেলুন। এতে আপনি আপনার সিদ্ধান্তে সন্তোষ অনুভব করবেন। 

কোনো দোকানে ব্যাপক ছাড় দেখে লোভে পড়া যাবে না। এসব ফাঁদে পা দিলে কখনো ব্যবহার করা হবে না এমনসব জিনিসও কিনে ফেলা হয়। ছাড়ের সময় কোনো কিছু কেনার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, এর পুরো দামটাই রাখলে আপনি কি তা কিনতেন? 

নিয়মিত ব্যাংক ব্যালেন্স বা পার্স যাচাই করুন। নিয়মিত ব্যাংক ব্যালেন্স যাচাই করলে মানুষ ব্য়য়ের ক্ষেত্রে আরও নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। কারণ এতে খরচ করার জন্য আপনার কাছে কত টাকা আছে তা সম্পর্কে সচেতনতা এসে যায়।    

কার্ড ঘষে ব্য়য় করার চেয়ে নগদ অর্থ ব্য়য় করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। অন্যের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষ তুলনামূলক বেশি সতর্ক থাকে। তাই বাজেট করাও সহজ হয়। এ ক্ষেত্রে পুরো সপ্তাহে কত টাকা ব্য়য় করা হবে শুধু সে পরিমাণ টাকা হাতে রাখা যেতে পারে।  

এমন সব পরিবেশ বদলে ফেলুন যা আপনাকে দিয়ে বেশি খরচ করায়। আপনি যদি দেখেন কোনো একটি ইনস্টাগ্রাম মডেলের ছবিতে ক্লিক করলে আপনি তাঁর ব্র্যান্ড দেখে খরচ করেন তবে তাঁকে আনফলো বা আনসাবস্ক্রাইব করে দিন। আপনি যদি সময় কাটানোর জন্য পোশাক বা মেকআপ সামগ্রী কিনে থাকেন তবে সময় কাটানোর জন্য অন্য কোনো উপায় বের করুন। যেমন— পার্কে হাঁটতে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন বা নতুন কোনো কিছু শিখুন বা শখ চর্চা করুন।

এর মানে এ নয় যে শখের কোনো কিছু কেনা যাবে না। প্রয়োজনের বাইরে মনকে তৃপ্ত রাখার জন্য মাঝেমধ্যে নিজের জন্য কিছু কিনতে হবে। কাকেইবো মানে হলো এমনসব খরচের বিষয়ে সতর্ক হওয়া যা কেবল ক্ষণিকের জন্য মনে আনন্দ দেয়। এতে দ্রুত অর্থ সঞ্চয় করা যায় ও ব্য়য়ের বিষয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। এতে প্রয়োজনীয় জিনিসে বিনিয়োগ করা সহজ হয়ে ওঠে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত