Ajker Patrika

ইচ্ছা হলেই নয়, ত্বক বুঝে ব্যবহার করুন ফেসওয়াশ

শোভন সাহা 
রিতু। ছবি: হাসান রাজা
রিতু। ছবি: হাসান রাজা

ত্বকের বিশেষ যত্নে হোক বা না হোক, কমবেশি সবাই রোজ ত্বকে দুই বেলা ব্যবহার করেন, এমন একটি প্রসাধনী হচ্ছে ফেসওয়াশ। সাধারণত এটি খুব ভেবেচিন্তে বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না মেনে পছন্দ হলেই কিনে ফেলি। কিন্তু কাজ হয় কি না, সেদিকে অনেক সময় খেয়ালও করি না। কিন্তু নালিশ করেই যাই, অমুক ব্র‍্যান্ডের ফেসওয়াশ ব্যবহার করেও ত্বক ভালো থাকছে না!

যত নামী ব্র‍্যান্ডেরই হোক, ফেসওয়াশ যদি ত্বকের ধরন বুঝে আপনি বাছাই না করেন, তাহলে কোনো কাজ হবে না। সে কারণে এটি কেনার আগে ত্বকের ধরন ও প্রয়োজন বোঝা জরুরি। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফেসওয়াশ পাওয়া যায়। ক্রিম, জেল, মেডিকেটেড, ওটিসি, ফোমিং, নন-ফোমিং ইত্যাদি। কোনটার কাজ কী, তা না জানলে গোড়াতেই কিন্তু গলদ থেকে যাবে। ফেসওয়াশ কেনার আগে কিছু বিষয় বিবেচনায় অবশ্যই রাখতে হবে।

সঠিক ফেসওয়াশ চিনবেন কীভাবে

ভাবছেন, ফেসওয়াশ আবিষ্কারের এত বছর পরে এই প্রশ্ন কেন? আমরা সবাই জানি, ফেসওয়াশের প্রাথমিক কাজ ত্বক পরিষ্কার করা। তবে ত্বক কিন্তু জানান দেয়, আপনি সঠিক ফেসওয়াশ ব্যবহার করছেন কি না। ফেসওয়াশ ব্যবহারের পর মুখ অতিরিক্ত শুষ্ক বা তেলতেলে লাগলে, লালচে ভাব, র‍্যাশ বা জ্বালা ভাব হলে বুঝবেন, সেটি আপনার জন্য নয়। তাহলে কীভাবে বুঝবেন ফেসওয়াশ ঠিকভাবে ত্বকে কাজ করছে? ত্বকের উপযোগী ফেসওয়াশ ব্যবহার করলে মুখ ধোয়ার পর ত্বক তরতাজা ও উজ্জ্বল দেখাবে। ত্বক অনেকটাই নরম ও কোমল থাকবে। আর সঠিক ফেসওয়াশ ব্যবহার করছেন কি না, তা বোঝার জন্য যেকোনো ফেসওয়াশ অন্তত এক সপ্তাহ ব্যবহার করতে হবে।

কোন ত্বকে কেমন ফেসওয়াশ

শুষ্ক ত্বক

শুষ্ক ত্বকের জন্য জেন্টল কিংবা মাইল্ড বলে পরিচিত ফেসওয়াশগুলো ব্যবহার করা উচিত। এগুলোতে সাধারণত পেট্রোলেটাম অথবা পেট্রোলিয়াম, সেরামাইড, গ্লিসারিন, ল্যানোলিন বা মিনারেল অয়েল থাকে। এসব উপাদান থাকার কারণে ত্বক আর্দ্রতা হারায় না।

শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের জন্য ফোমিং ফেসওয়াশ উপযোগী নয়। কারণ, এ ধরনের ফেসওয়াশ ত্বক আরও বেশি শুষ্ক করে তোলে। অতিরিক্ত সুগন্ধি, অ্যালকোহল নেই এমন ফেসওয়াশ এ ধরনের ত্বকের জন্য উপকারী। শুষ্ক ত্বকে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ফেসওয়াশ এড়িয়ে চলাই ভালো।

তৈলাক্ত ত্বক

তৈলাক্ত ত্বক যাঁদের, তাঁরা অ্যালোভেরা এবং টি-ট্রি অয়েলের মতো উপাদানসমৃদ্ধ ফেসওয়াশ কিনুন। এ ধরনের ফেসওয়াশ ত্বকের স্বাভাবিক তেল উৎপাদন বাধাগ্রস্ত না করে উপরিভাগের বাড়তি তেল অপসারণ করে। ত্বকের ভালোর জন্য স্বাভাবিক তেল উৎপাদন অব্যাহত রাখা জরুরি। ফেসওয়াশ কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে, তাতে অ্যালকোহল রয়েছে কি না। অ্যালকোহলের কারণে ত্বকের তেল চিটচিটে ভাব বাড়ে। অন্যদিকে তৈলাক্ত ব্রণপ্রবণ ত্বকের জন্য স্যালিসাইলিক অ্যাসিড রয়েছে এমন ফেসওয়াশ ব্যবহারে উপকার পাওয়া যাবে। ফেসওয়াশের প্যাকেটের গায়ে হাইড্রেটিং, নারিশিং, ভিটামিন এ, সি, ই-যুক্ত লেখা আছে কি না, তা দেখে নিতে ভুলবেন না। কারণ, এগুলো তৈলাক্ত ত্বকের জন্য জরুরি।

মিশ্র ও সংবেদনশীল ত্বক

এ ধরনের ত্বকের জন্য খুবই হালকা পরিষ্কারক প্রয়োজন পড়ে। ফোমিং ফেসওয়াশের পরিবর্তে ক্রিম-বেজড এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিকেটেড আলট্রা-জেন্টল ব্যবহার করা উচিত। এতে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব ও শুষ্কতা—দুটোর ভারসাম্য়ই ঠিক থাকবে। কেনার আগে দেখে নিন ফেসওয়াশটি প্যারাবেন, সোপ, সুগন্ধি অ্যালকোহল ও অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানমুক্ত কি না।

ত্বকে অতিরিক্ত ব্রণ থাকলে

ব্রণ হলে অনেকে ফোমিং ফেসওয়াশে ভরসা করেন। মনে করেন, অতিরিক্ত তেল অপসারণ হলেই বুঝি ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমে আসবে। অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব থেকে ব্রণ হয়, এ কথা মিথ্য়ে নয়। তবে ত্বক ধীরে ধীরে শুষ্ক হয়ে পড়লে কিন্তু সমস্যা কিছু কমবে না। তাই ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ও পানির ভারসাম্য ঠিক রাখতে ক্রিম-বেজড ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। মেডিকেটেড ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হলে বেনজোইল পার-অক্সাইড, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড অথবা সালফারের মতো উপাদানযুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। এতে পোরস ব্লকেজ ও ব্রেক আউট—দুটোই কমবে।

ফেসওয়াশ চিনবেন যেভাবে

কোমল ফেসওয়াশ

কোমল ফেসওয়াশে যে উপাদানগুলো থাকে, সেসব মূলত ত্বক স্বাভাবিকভাবে পরিষ্কার ও ময়শ্চারাইজ করে। এতে সাধারণত ভিটামিন ই, ল্যাকটিক অ্যাসিড, হায়ালুরনিক অ্যাসিড, সেরামাইড, ল্যানোলিন, প্রাকৃতিক তেল, অ্যালোভেরা, দুধ, মধু, জোজোবা তেল বা স্ট্রবেরির মতো উপাদান থাকে। এসব উপাদানযুক্ত ফেসওয়াশ শুষ্ক ত্বকের জন্য উপযোগী। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কোমল ফেসওয়াশ কিনতে হলে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, টি-ট্রি অয়েল, নিয়াসিনামাইড বা চারকোল রয়েছে, এমন কোমল ফেসওয়াশ বেছে নিতে পারেন।

ফোমিং ফেসওয়াশ

ত্বক ডিপ ক্লিন করার জন্য ফোমিং ফেসওয়াশ ব্যবহার করা হয়। এই ফেসওয়াশ রোমকূপের গভীরে প্রবেশ করে ময়লা, তেল ও মেকআপ অপসারণে সাহায্য করে, যা সাধারণ ফেসওয়াশ দিয়ে সম্ভব নয়। ফোমিং ফেসওয়াশের মূল উপাদান হলো সার্ফ্যাক্ট্যান্ট; যা ত্বক থেকে ময়লা, তেল ও দূষণ অপসারণে সাহায্য করে। এ ধরনের ফেসওয়াশে ডিসোডিয়াম লরেথ সালফোসাকিনেট, সোডিয়াম লরেথ সালফেট, সোডিয়াম লরয়েল সারকোসিনেট, ক্যাপ্রিলয়েল গ্লাইসিন, বেনজোফেনোন-৪ ইত্যাদি উপাদান থাকে।

নন-ফোমিং ফেসওয়াশ

নন-ফোমিং ফেসওয়াশ সাধারণত শুষ্ক, সংবেদনশীল বা ব্রণপ্রবণ ত্বকের জন্য ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের ক্লিনজারগুলো ত্বক শুষ্ক না করে ময়লা এবং মেকআপ অপসারণে সাহায্য করে। এগুলো ত্বকের প্রাকৃতিক তেল শোষণ করে না। এই ফেসওয়াশগুলোতে সাধারণত মৃদু সার্ফ্যাক্ট্যান্ট; যেমন কোকামিডোপ্রোপাইল বিটেইন অথবা গ্লিসারিন থাকে। এ ছাড়া কিছু নন-ফোমিং ফেসওয়াশে সেরোমাইড, হায়ালুরনিক অ্যাসিড এবং নিয়াসিনামাইডের মতো উপাদান থাকে, যেগুলো ত্বকের প্রাকৃতিক সুরক্ষা স্তর পুনরুদ্ধার করতে এবং ত্বক ময়শ্চারাইজ করতে সাহায্য করে।

মেডিকেটেড ফেসওয়াশ

এ ধরনের ফেসওয়াশ ত্বকের মৃত কোষ অপসারণ করে এবং ছিদ্র পরিষ্কার করে ব্রণের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া প্রদাহনাশক থাকায় ব্রণের কারণে হওয়া লাল ও ফোলা ভাব কমাতে পারে। এগুলোতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য থাকায় ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে এবং ত্বক ঠান্ডা রাখতে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মেডিকেটেড ফেসওয়াশের মূল উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, বেনজয়েল পার- অক্সাইড, টি-ট্রি অয়েল এবং প্রাকৃতিক উপাদান; যেমন অ্যালোভেরা ও নিমপাতা। এই উপাদানগুলো সাধারণত ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যা দূর করতে সহায়ক।

লেখক: কসমেটোলজিস্ট, স্বত্বাধিকারী, শোভন মেকওভার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফেল করায় বকা খেয়ে বাড়ি ছাড়ে বাংলাদেশি কিশোরী, ভারতে ৩ মাসে ২০০ লোকের ধর্ষণ

খালার সঙ্গে শত্রুতা মুহাম্মদ ইউনূসের, আমি ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’: টিউলিপ সিদ্দিক

রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আটক

‘কাল দেখা হইবে, ভালো থাকিস’—ছেলেকে বলেছিলেন গণপিটুনিতে নিহত প্রদীপ

দেখো, ওর থেকে আরও ৫ লাখ নিতে পারো কি না—মেসেঞ্জার কলে এনসিপি নেতা নিজাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত