Ajker Patrika

অনুপ্রেরণার নাম ফারনাজ আলম

নাদিমা জাহান, ঢাকা
Thumbnail image

ফ্যাশন দুনিয়ার খবরাখবর যারা রাখেন, তাঁদের সঙ্গে আসলে বনেদি ফরাসি ফ্যাশন ম্যাগাজিন লোফিসিয়েলের নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। সেই গত শতকের বিশের দশকে যাত্রা করা এই বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিনের নজর কেড়েছেন আমাদের দেশের অনিন্দ্য সুন্দরী, অসাধারণ প্রতিভাময়ী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন উদীয়মান রূপবিশেষজ্ঞ ও মেক ওভার আর্টিস্ট ফারনাজ আলম। এই লোফিসিয়েলের আরব সংস্করণের প্রচ্ছদকন্যা হিসেবে এবার মনোনীত হয়েছেন তিনি। ফারনাজের জীবন, মতামত, আর কর্মযজ্ঞ নিয়ে তাঁরা একটি সচিত্র প্রতিবেদনও রেখেছে ম্যাগাজিনের এবারের সংখ্যায়।

প্রথমেই বাংলাদেশের এই তরুণ, অমিত সম্ভাবনাময় রূপ বিশেষজ্ঞ ফারনাজ আলম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। কিছুটা প্রচারবিমুখ ও অত্যন্ত বিনয়ী ফারনাজ আলমের বয়ানে উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য ভুবনে তাঁর প্রতিষ্ঠা লাভের উপাখ্যান, সৌন্দর্য জগতের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, দেশের মেক ওভার শিল্প এবং বিউটি ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা আর স্বপ্নের কথা।

সৌন্দর্যের আবেদন সর্বজনীন ও চিরন্তন। তবে যুগে যুগে এই সৌন্দর্যকে মেলে ধরতে এবং রূপ শৃঙ্গার ও অলংকরণে সৌন্দর্যশিল্পী এবং অ্যাসথেটিক বিশেষজ্ঞদের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু নিছক মেকআপ সামগ্রী দিয়ে মুখাবয়ব রাঙানো নয়, আপন সৌন্দর্যকেই মেক ওভারের মাধ্যমে আরও আকর্ষণীয় ও উদ্ভাসিত করে তোলাই এখনকার অ্যাসথেটিক বিশেষজ্ঞদের কাজ। এই ধারাবাহিকতায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে সৌন্দর্যের আধুনিক সংজ্ঞাটির নিরিখে যে কয়েকজন বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন, ফারনাজ আলম তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য।

উল্লেখ্য, ফারনাজের মা কনা আলম আমাদের দেশে সৌন্দর্যশিল্পী ও রূপবিশেষজ্ঞ পথিকৃৎদের একজন। সেই ৩০ বছর আগে তিনি ‘উইমেন্স ওয়ার্ল্ড’ নামের রূপ সদন গড়ে তুলেছিলেন, যা এখন বিশাল মহিরুহসম।

ফটোশুটের অনন্য লুক আর মেক ওভারে ফারনাজ আলম তাঁর নিজস্ব মেকআপ লাইনের সামগ্রী ব্যবহার করেছেনছোটবেলা থেকেই গুণী মায়ের সংস্পর্শে এসে এবং তাঁর কাজে সহায়তা করতে গিয়ে ফারনাজ ঝুঁকে পড়েন মেক ওভার শিল্পের দিকে। এর পর মাত্র ১৮ বছর বয়সে ল’রিয়েল প্যারিসের ‘ব্রাশ কনটেস্ট’ নামের মেক ওভারকেন্দ্রিক রিয়্যালিটি শো জিতে নেওয়ার পর তাঁকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। মালয়েশিয়ার টেইলর ইউনিভার্সিটি এবং তার পর বিলেতের নর্থাম্ব্রিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচারে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর তিনি সম্পূর্ণরূপে বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতেই মনোনিবেশ করেন। কানাডা থেকেও তিনি নিয়েছেন ত্বক ও সৌন্দর্যবিষয়ক প্রশিক্ষণ। বর্তমানে বিখ্যাত মেক ওভার সেলন উইমেন্স ওয়ার্ল্ড এবং ডব্লিউ-ডব্লিউ কসমেটিকসের সর্বাত্মক দায়িত্বে আছে। পাশাপাশি তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাঁর নিজস্ব মেকআপ সামগ্রীর কালেকশন ‘কনা বাই ফারনাজ আলম’-এর নতুন নতুন পণ্য বাজারে আনতে।

এই নিজস্ব মেকআপ লাইন প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মধ্য দিয়েই ফারনাজ প্রমাণ করেছেন তিনি ‘অনন্যা’। বাণিজ্যিক পর্যায়ে উৎপাদিত বড় বড় ব্র‍্যান্ডের মেকআপ সামগ্রী ব্যবহার করতে গিয়ে ফারনাজ যে সমস্যাগুলোর মধ্যে পড়েছেন নিজে, তা নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে ‘কনা বাই ফারনাজ আলম’ কালেকশনের প্রোডাক্টগুলো আরও বেশি ভোক্তাবান্ধব এবং সুবিধাজনক করে তোলাই তাঁর লক্ষ্য। এ ছাড়া আমাদের উপমহাদেশীয় ত্বকের ধরন ও বর্ণের জন্য অত্যন্ত উপযোগী এই মেকআপ সামগ্রীগুলো। এই মেকআপ লাইনে আছে ওষ্ঠ রঞ্জক, শিমার ও গ্লিটার বেইজড আই মেকআপ, আই শ্যাডো প্যালেট ও ফাউন্ডেশন। প্রতি সিজনেই আরও নতুন প্রোডাক্ট আনতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ফারনাজ।

বর্তমানে দুবাইকেন্দ্রিক বেশ কিছু বিশ্বখ্যাত প্রকাশনা, বহু আন্তর্জাতিক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, মডেল, ডিজাইনার, ইন্টারনেটকেন্দ্রিক ইনফ্লুয়েন্সার এবং বিখ্যাত ফ্যাশন ও রূপবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তিনি কাজ করছেন। বড় ব্যাপার হচ্ছে, ফারনাজ সব সময়ই তাঁর সব অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান এ দেশের সৌন্দর্য শিল্পে প্রয়োগের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের বিউটি ইন্ডাস্ট্রি, মিডিয়া ও জনগণের ভালোবাসাই তাঁর প্রেরণার উৎস।

ফারনাজ আলমের জীবনে তাঁর মা বিখ্যাত বিউটি এক্সপার্ট কনা আলমের ভূমিকা সুস্পষ্ট। এ ছাড়া গ্রিক দেবীদের সাজপোশাকের ধরন তাঁকে খুবই অনুপ্রেরণা দেয়। তিনি সব সময় এই গতিময় ও পরিবর্তনশীল বিউটি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে নিজেকেও সমান তালে সামনে এগিয়ে নিতে চান। অবশ্য এও মনে করেন যে, অতীতের বিভিন্ন হৃদমনোহর মেক ওভার স্টাইলের সঙ্গে বর্তমান যুগের জেন-জি মেকআপ প্রযুক্তি, অত্যাধুনিক মেকআপ সামগ্রীর সঠিক ফিউশন ঘটাতে পারলেই মিলবে সাফল্য।

ফারনাজ আলমফারনাজ আলম তাঁর প্রতিষ্ঠানের প্ল্যাটফর্মে সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের গুটিপোকা থেকে প্রজাপতি হওয়ার প্রক্রিয়ায় ডানা জুড়ে দেওয়ার কাজটি নিভৃতে করে যাচ্ছেন বহুদিন ধরে। আবার, এর মাঝেই তিনি যুক্ত হয়েছেন দেশের একটি স্বনামধন্য জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের মেক ওভার-সংক্রান্ত রিয়্যালিটি শোয়ের সঙ্গে। ‘কালার ইয়োর ড্রিমস’ নামের এই প্রতিযোগিতামূলক রিয়্যালিটি শোটি দেশের উদীয়মান সৌন্দর্য শিল্পীদের প্রতিভা, দক্ষতা ও সৃজনশীলতা প্রদর্শন ও প্রমাণে বড় সুযোগ তৈরি করবে। ফারনাজ আলম নিজেই এমন একটি টিভি রিয়্যালিটি শোয়ের মাধ্যমে নিজের লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছেন বলে তিনি সব সময় দেশের তরুণ ও ভবিষ্যৎ বিউটিশিয়ান ও মেক ওভার আর্টিস্টদের জন্য এমন কোনো উদ্যোগ নিতে সচেষ্ট ছিলেন।

লোফিসিয়েল ফারনাজ আলমের জীবনের পথ চলার প্রেরণাদায়ী গল্পগুলোকে ধরে রাখতে চেয়েছে দুই মলাটে। এখানে তাঁর ফটোশুটের অনন্য লুক ও মেক ওভারেও তিনি তাঁর নিজস্ব মেকআপ লাইনের সামগ্রী ব্যবহার করে প্রদর্শন করেছেন—কাজের প্রতি তিনি কতটা সৎ ও আন্তরিক। তাঁর সাফল্যগাথা আর জীবনাদর্শ অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো। দেশের বিউটি ইন্ডাস্ট্রি তাঁর মতো উদীয়মান প্রতিভাবান সৌন্দর্যশিল্পীদের হাত ধরেই সামনে এগিয়ে যাবে অনেকটা—এমন আশা করাই যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত