জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা

আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে। সব মিলিয়ে উদ্বেগজনক বৈশ্বিক তাপমাত্রা, দায়িত্বজ্ঞানহীন স্বৈরশাসক, চরমপন্থার উত্থান, অধিকারের নতুন মাত্রা এবং সরকার ও করপোরেটের ধ্বংসাত্মক নীতি ক্রমেই মানবজাতিকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষের মধ্যে ক্রোধ, হতাশা এবং বিদ্রোহের দাবানলে ঘি ঢালছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
এক শতাংশের কম নারীযোদ্ধা
এই বিশৃঙ্খল বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে কিন্তু অনেক দৃঢ়চেতা নারীকে প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে দেখছি। আমাদের সামনে গ্রেটা থুনবার্গ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের মতো নারীদের উদাহরণ জ্বলজ্বল করছে। তাঁদের সাহসী পদক্ষেপ আমাদের আপ্লুত করছে। কিন্তু একজন নারী যদি আক্ষরিক অর্থেই একটি সশস্ত্র লড়াইয়ে যুক্ত হওয়ার সুযোগ বেছে নেন? নারীর এমন সাহসিকতা কিন্তু পুরুষশাসিত কর্তৃত্ববাদী সমাজ এখনো উদ্যাপন করার উদারতা অর্জন করতে পারেনি।
বিশ শতকের প্রথম দিকে ইউরোপ থেকে বহু তরুণ যুবক প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়ে যুদ্ধে গেছে। তারা কেউ ভুক্তভোগী, কেউ কঠিন পরিস্থিতির নায়ক অথবা অনুপ্রেরণা।
কিন্তু একজন নারী যদি নিজ ইচ্ছায় কোনো সহিংসতার কাছাকাছিও যান, এমনকি হাতে অস্ত্র তুলে না নিলেও এখনো ব্যাপক সামাজিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ান। কঠোর সমালোচনা এবং প্রায়ই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে।
তাহলে নারী ও সহিংসতা, তাঁর সহযোগী ভূমিকা এবং যুদ্ধের মধ্যে অনুমোদিত সীমানা আসলে কী? কখন একজন নারী সজ্ঞানে এবং পরিকল্পিতভাবে এবং পুরুষের মতো সহজাতভাবে নিজের বা তাঁর মূল্যবোধের প্রতিরক্ষায় অস্ত্র তুলে নিতে রাজি হতে পারবেন? নারীরা কি সহজাতভাবে তুলনামূলক বেশি শান্তিপ্রিয়? তারা কি সক্ষম সৈনিক হতে পারে?
যুদ্ধ বা সহিংসতা ও নারী প্রশ্নে এই প্রশ্নগুলো খুবই মোক্ষম।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক জোশুয়া গোল্ডস্টেইন তাঁর ‘ওয়ার অ্যান্ড জেন্ডার’ বইতে যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণের সঙ্গে আন্তঃসাংস্কৃতিক ঐতিহাসিক প্রমাণগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তিনি দেখেছেন ‘ইতিহাসের সমস্ত যোদ্ধার ১ শতাংশেরও কম নারী’।
আধুনিক স্থায়ী সেনাবাহিনীতে সৈনিকদের অধিকাংশই পুরুষ। যুদ্ধ একটি সামাজিকভাবে বৈচিত্র্যময় ঘটনা। প্রশ্ন করাই যায়, তাহলে কেন এখানে লিঙ্গ বৈচিত্র্য নেই হয়ে গেল? গোল্ডস্টেইন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘যুদ্ধে মানুষ হত্যার ব্যাপারটা লিঙ্গ নির্বিশেষে কোনো স্বাভাবিক প্রবণতা নয়। তবুও যুদ্ধের সম্ভাবনা কিন্তু সর্বজনীন। যুদ্ধের প্রতি সৈন্যদের অনীহার মনোভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্যই বিভিন্ন সংস্কৃতিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লিঙ্গের ভূমিকাকে বড় করে দেখানো হয়। একটি কঠিন পরিস্থিতিতে আরও কঠোরভাবে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোকে “পৌরুষদীপ্ত” কাজ বলা হয়!
আমরা ‘নারী যোদ্ধাকে’ গ্রহণ করতে খুব একটা স্বস্তি বোধ করি না। একটি দেশ এবং তার সামরিক বাহিনীর দায়িত্বে থাকা একজন নারী, বা যুদ্ধরত নারী সেনাপতি, প্রায়ই একটা যৌন অস্বাভাবিকতা হিসেবে দেখা হয়। যেমন ইতিহাসে আমরা অনেক বীরকে দেখি, যুদ্ধক্ষেত্রে নারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন না বলে চেচাচ্ছেন! ইতিহাসে হাতে গোনা যে কজন সফল নারী রাষ্ট্রপ্রধান বা যোদ্ধা, সেনাপতির কথা পাওয়া যায় সেগুলোর বর্ণনা এবং পাঠকদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়ি দেখলেই দৃষ্টিভঙ্গির এই অস্বস্তি ও অস্বাভাবিকতা অনুমান করা যায়।
সমাজে বা কর্মক্ষেত্রেও সামনের সারিতে সক্রিয় নারীরা যেন ‘সাপের গলায় ব্যাঙের’ মতো অস্বস্তি তৈরি করে। এই নারীদের সন্তান কত জন তা নিয়ে মিডিয়ার আগ্রহের শেষ নেই, তাঁর মাতৃত্বের বেপরোয়া অভাবকে তিরস্কার করা হয়। আর মৌলবাদের মতো ঘৃণিত মূল্যবোধের সঙ্গে তাঁর সংযোগ থাকলে তো কথাই নেই! ফ্যাসিবাদের সৈনিক হলেও মানা যায়, কিন্তু মৌলবাদী উগ্রপন্থীদের দলে গেলে তো তাকে দেশেই ঢুকতে দেওয়া হবে না!
আজকাল কম্পিউটার গেম, সিনেমা এবং ঢাউস আকৃতির সব বইয়ে ‘নারীশক্তিকে’ খুব মহিমান্বিত করা হয়। কিন্তু সেসব চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবতার খুব কমই মিল থাকে।
এই প্রশ্নগুলো শুধু পুরুষত্বের ধারণার সঙ্গেই নয়, নারীবাদের ধারণাগুলোর সঙ্গেও সম্পর্কিত। নারীর যুদ্ধে অংশগ্রহণ কী ‘পুরুষতান্ত্রিক সহিংসতা-বিরোধী’ নারীবাদী নীতিকে ক্ষুণ্ন করে? ইতিহাস বলে, আমেরিকার নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের অগ্রভাগের কেউ কেউ কংগ্রেসে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটানোর মতো কর্মসূচির পক্ষে ছিলেন। আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত অবশ্য শান্তিপূর্ণই ছিল।
যুদ্ধের সম্ভাব্য সকল ক্ষয়ক্ষতির অংশীদার হয় নারী। এর মধ্যে যুদ্ধের সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়-পরিকল্পিত হত্যা, সেটিরও প্রথম শিকার হয় নারীরা। নিপীড়ন বা প্রতিশোধ নিতে দুর্বল ও সহজ লক্ষ্য হিসেবে ইতিহাসের বিভিন্ন যুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা পাওয়া যায়। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় নারী সৈনিক কই?
নারীর কলমে যুদ্ধসাহিত্য প্রায় অনুপস্থিত
একটা যুদ্ধ পুরো সমাজকে গ্রাস করে, লিঙ্গ নির্বিশেষে যুদ্ধের আঁচ লাগে। কিন্তু নারীদের কলমে যুদ্ধের কথাসাহিত্য যেন অস্বাভাবিক ঘটনা। যেন যুদ্ধ নিয়ে কাল্পনিক কথাসাহিত্য তৈরির কল্পনা করার অধিকারটাও তাঁদের নেই!
মার্কিন ইতিহাসবিদ মার্গারেট ম্যাকমিলন বলেন, ‘সেনাবাহিনী এবং প্রতিষ্ঠান থেকে নারীদের বাদ দেওয়া একটা সাধারণ ঘটনা। ঐতিহাসিক নথি এবং শৈল্পিক প্রতিনিধিত্ব থেকেও তাদের বাদ দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ যা ঘটে-নারী যোদ্ধাদের উদাহরণ প্রায়ই অবিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে সন্দেহ জাগতে বাধ্য।’
সম্মুখ সমরে নারী যোদ্ধাদের অংশীদারত্ব বেশ কমই। কিন্তু যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রবণতা বলছে, বহু নারীই সংঘাতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। তারা যুদ্ধ, প্রযুক্তি এবং কূটনীতিতে বিভিন্ন পর্যায়ে ভূমিকা রেখেছেন, গোয়েন্দা, যুদ্ধাস্ত্র এবং গুপ্তচরবৃত্তিতে কাজ করেছেন। দগদগে ক্ষত হয়ে থাকা দুটি বিশ্বযুদ্ধ তার প্রমাণ।
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এক সময় শেষ হয়ে যায়, নারীরা বেঁচে থাকে এবং পরিণতির যন্ত্রণা বয়ে বেড়ায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নারীরা যুদ্ধের নির্লিপ্ত ভুক্তভোগী থাকে না। তারা স্বামী, সন্তান, ভাই হারানোর শোক করে, জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই করে, অনেকে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে বাধ্য হয়, পুরোনো পরিচয় ঝেড়ে ফেলে এবং যুদ্ধ তাদের ভাবনার নতুন আকৃতি দেয়।
এই ব্যাপারগুলো সরাসরি ভুক্তভোগীদের বয়ান থেকে বোঝার জন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক একটি তথ্যচিত্র করেছে। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি এই কাজটির পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। রেড ক্রস একটি প্রতিবেদনে বলছে, ‘এ ওম্যানস ওয়ার’ নামে তাদের প্রকল্পটি ‘নারী হিসেবে যুদ্ধের শিকার’ এমন গৎবাঁধা (স্টিরিওটাইপ) ধারণা ভেঙে দিয়েছে। নারীদের একাধিক জটিল এবং সংঘাতপূর্ণ ভূমিকা অন্বেষণ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে নারীরা যোদ্ধা, মানবতাবাদী, মা, কন্যা, শ্রমিক, সম্প্রদায়ের নেতা এবং বেঁচে ফেরা সংগ্রামী সত্তা।
নারী সৈন্যদের কাজগুলোকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নথিবদ্ধ করা হয়নি। এই কারণেই সাহিত্যে নোবেলজয়ী বেলারুশিয়ান সাংবাদিক সোভেৎলানা আলেক্সিভিচের বিবরণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত নারীদের যে ভূমিকা ও অবদান উঠে এসেছে তা সরকারি বয়ানে অনুপস্থিত। এই একটি কারণেই তাঁর ‘দ্য আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার’ বইটিকে অমূল্য সাহিত্যকর্ম বলা যায়।
ইরাক, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ নাইজেরিয়ার সংঘাত কবলিত এলাকার নারীদের অভিজ্ঞতা ও বয়ান রেকর্ড করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। অস্ত্র, গোলাবারুদের গর্জন থেমে গেলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গোষ্ঠীর আত্মপরিচয় যুদ্ধের মাধ্যমে নতুন রূপ ধারণ করতে থাকে। এ প্রক্রিয়া বহু দিন পর্যন্ত চলে। পেরুতে দেখা গেছে, স্প্যানিশ আগ্রাসনের বহু পুরোনো ক্ষত এখনো নিরাময় হয়নি।
চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কথাই ধরা যাক:
সূত্র: জাতিসংঘ
ওই সময় যুদ্ধে শ্রমিক হিসেবে সারা দেশ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রায় ১৪ লাখ নারী।
সূত্র: দ্য ওয়ার্ল্ডওয়াল ডটঅর্গ
ইউক্রেন পরিস্থিতি
জাতিসংঘের লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কেয়ারের ‘র্যাপিড জেন্ডার অ্যানালাইসিস ইন ইউক্রেন’ প্রতিবেদন অনুসারে, ইউক্রেনের বাধ্যতামূলক অভিবাসী হওয়া ৯০ শতাংশই নারী ও শিশু। যুদ্ধ যেহেতু চলমান এ সংখ্যা যে ক্রমে বাড়ছে তাতে সন্দেহ নেই।
এখন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট নানামুখী সমস্যা এবং অতিরিক্ত দায় ঘর কন্যার বোঝা টানা ইউক্রেনীয় নারীদের ঘাড়ে চেপেছে। কিন্তু এই ধরনের একটি অস্থির পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্ল্যাটফর্মে নারী কই? পরিস্থিতির উত্তেজনা প্রশমন, সংঘাত নিরসন এবং ইউক্রেন ও এর বাইরের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের বৈশ্বিক প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশ তো সেভাবে দৃশ্যমান নয়। এছাড়া লিঙ্গবৈষম্য ও গৃহনির্যাতনের অপরাধ ইউরোপের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ঘটে ইউক্রেনে। সক্ষম পুরুষেরা যুদ্ধের ময়দানে, একা নারী ভিন দেশে কীভাবে সব সামলাচ্ছেন!
লিঙ্গ ইস্যু নিয়ে কাজ করা এমনিতেই খুব জটিল। কারণ এটি বুঝতে চাইলে ক্ষমতা এবং বিশেষাধিকার, একটি সম্প্রদায়ের আচার এবং প্রত্যাশাকে একত্রে বুঝতে হয়। সংঘাত বিদ্যমান (লিঙ্গ) বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। যখন পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি-যিনি সাধারণত হোন একজন পুরুষ-যুদ্ধে যায় বা নিহত হয় তখন কী ঘটে? সামাজিক ভূমিকার পরিবর্তন হয়। পুরুষ প্রধান সমাজে তখন নারীদের জন্য এমন সুযোগ উন্মুক্ত হয় যা আগে কখনো ছিল না।
বলা যেতে পারে, যুদ্ধে নারীদের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাদের কাজকে সম্মানিত বা স্মরণ করা হয় না। এমনকি মানবাধিকার উন্নয়নের এই যুগে এসেও আমরা যুদ্ধে নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার ঘটনা দেখছি।
যুদ্ধ শেষে নারীদের ঘরে ফেরানো হয়, অধস্তন করে রাখা হয়। ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (এফএলএন) আলজেরীয় নারীদের পুরুষদের সমান বিপজ্জনক ভূমিকায় ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ ফেরত হিসেবে তার অধিকার এবং পেনশন থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।
নারী সৈন্যরা যুদ্ধ থেকে জীবিত ফিরে এলেও কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকেন। তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে অঙ্গীভূত করা হয় না। শুধু স্মৃতির সমতা নয়, যুদ্ধের একটি সামগ্রিক ‘চেতনা’, রোল মডেল এবং বিকল্প নায়িকা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এবং মানবীয় অভিজ্ঞতায় নারীর ক্ষমতার আলোকচ্ছটায় উজ্জ্বল হতে পারার একটি দারুণ সুযোগ সমাজ তার গভীরভাবে প্রোথিত সংস্কারের কারণে হাতছাড়া করে।
যুদ্ধ যদি অনিবার্যভাবেই মানবীয় ব্যাপার হয় তাহলে এটি তো নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রশ্ন হওয়ার কথা। ভারী অস্ত্র বহনের জন্য পুরুষের কাঁধ বিকশিত হয়েছে, এর সপক্ষে জৈবিক ব্যাখ্যা হাজির করা যেতে পারে কিন্তু হরমোনগত কারণে নারীরা শান্তিপ্রিয় স্নায়ুবিজ্ঞান এই ধারণাকে বাতিল করে দেয়। নারীরা সর্বদা শান্তিপ্রিয় বা শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী, ঘটনার শিকার, পুরুষকে কাপুরুষ বলে তাচ্ছিল্য করা অন্দর বাসিনী বা লাল লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙানো মনোবল বৃদ্ধিকারীনি নয়। সহিংসতা দিয়ে সহিংসতার সমাধান হয়তো কখনো হয়। কিন্তু লিঙ্গবৈষম্যের ধারণা কখনো জ্ঞান ও শান্তি বয়ে আনে না।
অবশ্য নানা যুদ্ধে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত নারীরা হলেন স্বাভাবিকতায় ফেরার নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব। তাঁদের কোমল হাত, দুর্বল কাঁধ যুদ্ধের ক্ষত সারিয়ে তুলতে সক্ষম।
তথ্যসূত্র: ইউএন উইমেন, দ্য গার্ডিয়ান, আইসিআরসি, ইউএনএফপিএ, এনপিআর

আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে। সব মিলিয়ে উদ্বেগজনক বৈশ্বিক তাপমাত্রা, দায়িত্বজ্ঞানহীন স্বৈরশাসক, চরমপন্থার উত্থান, অধিকারের নতুন মাত্রা এবং সরকার ও করপোরেটের ধ্বংসাত্মক নীতি ক্রমেই মানবজাতিকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষের মধ্যে ক্রোধ, হতাশা এবং বিদ্রোহের দাবানলে ঘি ঢালছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
এক শতাংশের কম নারীযোদ্ধা
এই বিশৃঙ্খল বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে কিন্তু অনেক দৃঢ়চেতা নারীকে প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে দেখছি। আমাদের সামনে গ্রেটা থুনবার্গ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের মতো নারীদের উদাহরণ জ্বলজ্বল করছে। তাঁদের সাহসী পদক্ষেপ আমাদের আপ্লুত করছে। কিন্তু একজন নারী যদি আক্ষরিক অর্থেই একটি সশস্ত্র লড়াইয়ে যুক্ত হওয়ার সুযোগ বেছে নেন? নারীর এমন সাহসিকতা কিন্তু পুরুষশাসিত কর্তৃত্ববাদী সমাজ এখনো উদ্যাপন করার উদারতা অর্জন করতে পারেনি।
বিশ শতকের প্রথম দিকে ইউরোপ থেকে বহু তরুণ যুবক প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়ে যুদ্ধে গেছে। তারা কেউ ভুক্তভোগী, কেউ কঠিন পরিস্থিতির নায়ক অথবা অনুপ্রেরণা।
কিন্তু একজন নারী যদি নিজ ইচ্ছায় কোনো সহিংসতার কাছাকাছিও যান, এমনকি হাতে অস্ত্র তুলে না নিলেও এখনো ব্যাপক সামাজিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ান। কঠোর সমালোচনা এবং প্রায়ই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে।
তাহলে নারী ও সহিংসতা, তাঁর সহযোগী ভূমিকা এবং যুদ্ধের মধ্যে অনুমোদিত সীমানা আসলে কী? কখন একজন নারী সজ্ঞানে এবং পরিকল্পিতভাবে এবং পুরুষের মতো সহজাতভাবে নিজের বা তাঁর মূল্যবোধের প্রতিরক্ষায় অস্ত্র তুলে নিতে রাজি হতে পারবেন? নারীরা কি সহজাতভাবে তুলনামূলক বেশি শান্তিপ্রিয়? তারা কি সক্ষম সৈনিক হতে পারে?
যুদ্ধ বা সহিংসতা ও নারী প্রশ্নে এই প্রশ্নগুলো খুবই মোক্ষম।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক জোশুয়া গোল্ডস্টেইন তাঁর ‘ওয়ার অ্যান্ড জেন্ডার’ বইতে যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণের সঙ্গে আন্তঃসাংস্কৃতিক ঐতিহাসিক প্রমাণগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তিনি দেখেছেন ‘ইতিহাসের সমস্ত যোদ্ধার ১ শতাংশেরও কম নারী’।
আধুনিক স্থায়ী সেনাবাহিনীতে সৈনিকদের অধিকাংশই পুরুষ। যুদ্ধ একটি সামাজিকভাবে বৈচিত্র্যময় ঘটনা। প্রশ্ন করাই যায়, তাহলে কেন এখানে লিঙ্গ বৈচিত্র্য নেই হয়ে গেল? গোল্ডস্টেইন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘যুদ্ধে মানুষ হত্যার ব্যাপারটা লিঙ্গ নির্বিশেষে কোনো স্বাভাবিক প্রবণতা নয়। তবুও যুদ্ধের সম্ভাবনা কিন্তু সর্বজনীন। যুদ্ধের প্রতি সৈন্যদের অনীহার মনোভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্যই বিভিন্ন সংস্কৃতিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লিঙ্গের ভূমিকাকে বড় করে দেখানো হয়। একটি কঠিন পরিস্থিতিতে আরও কঠোরভাবে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোকে “পৌরুষদীপ্ত” কাজ বলা হয়!
আমরা ‘নারী যোদ্ধাকে’ গ্রহণ করতে খুব একটা স্বস্তি বোধ করি না। একটি দেশ এবং তার সামরিক বাহিনীর দায়িত্বে থাকা একজন নারী, বা যুদ্ধরত নারী সেনাপতি, প্রায়ই একটা যৌন অস্বাভাবিকতা হিসেবে দেখা হয়। যেমন ইতিহাসে আমরা অনেক বীরকে দেখি, যুদ্ধক্ষেত্রে নারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন না বলে চেচাচ্ছেন! ইতিহাসে হাতে গোনা যে কজন সফল নারী রাষ্ট্রপ্রধান বা যোদ্ধা, সেনাপতির কথা পাওয়া যায় সেগুলোর বর্ণনা এবং পাঠকদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়ি দেখলেই দৃষ্টিভঙ্গির এই অস্বস্তি ও অস্বাভাবিকতা অনুমান করা যায়।
সমাজে বা কর্মক্ষেত্রেও সামনের সারিতে সক্রিয় নারীরা যেন ‘সাপের গলায় ব্যাঙের’ মতো অস্বস্তি তৈরি করে। এই নারীদের সন্তান কত জন তা নিয়ে মিডিয়ার আগ্রহের শেষ নেই, তাঁর মাতৃত্বের বেপরোয়া অভাবকে তিরস্কার করা হয়। আর মৌলবাদের মতো ঘৃণিত মূল্যবোধের সঙ্গে তাঁর সংযোগ থাকলে তো কথাই নেই! ফ্যাসিবাদের সৈনিক হলেও মানা যায়, কিন্তু মৌলবাদী উগ্রপন্থীদের দলে গেলে তো তাকে দেশেই ঢুকতে দেওয়া হবে না!
আজকাল কম্পিউটার গেম, সিনেমা এবং ঢাউস আকৃতির সব বইয়ে ‘নারীশক্তিকে’ খুব মহিমান্বিত করা হয়। কিন্তু সেসব চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবতার খুব কমই মিল থাকে।
এই প্রশ্নগুলো শুধু পুরুষত্বের ধারণার সঙ্গেই নয়, নারীবাদের ধারণাগুলোর সঙ্গেও সম্পর্কিত। নারীর যুদ্ধে অংশগ্রহণ কী ‘পুরুষতান্ত্রিক সহিংসতা-বিরোধী’ নারীবাদী নীতিকে ক্ষুণ্ন করে? ইতিহাস বলে, আমেরিকার নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের অগ্রভাগের কেউ কেউ কংগ্রেসে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটানোর মতো কর্মসূচির পক্ষে ছিলেন। আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত অবশ্য শান্তিপূর্ণই ছিল।
যুদ্ধের সম্ভাব্য সকল ক্ষয়ক্ষতির অংশীদার হয় নারী। এর মধ্যে যুদ্ধের সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়-পরিকল্পিত হত্যা, সেটিরও প্রথম শিকার হয় নারীরা। নিপীড়ন বা প্রতিশোধ নিতে দুর্বল ও সহজ লক্ষ্য হিসেবে ইতিহাসের বিভিন্ন যুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা পাওয়া যায়। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় নারী সৈনিক কই?
নারীর কলমে যুদ্ধসাহিত্য প্রায় অনুপস্থিত
একটা যুদ্ধ পুরো সমাজকে গ্রাস করে, লিঙ্গ নির্বিশেষে যুদ্ধের আঁচ লাগে। কিন্তু নারীদের কলমে যুদ্ধের কথাসাহিত্য যেন অস্বাভাবিক ঘটনা। যেন যুদ্ধ নিয়ে কাল্পনিক কথাসাহিত্য তৈরির কল্পনা করার অধিকারটাও তাঁদের নেই!
মার্কিন ইতিহাসবিদ মার্গারেট ম্যাকমিলন বলেন, ‘সেনাবাহিনী এবং প্রতিষ্ঠান থেকে নারীদের বাদ দেওয়া একটা সাধারণ ঘটনা। ঐতিহাসিক নথি এবং শৈল্পিক প্রতিনিধিত্ব থেকেও তাদের বাদ দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ যা ঘটে-নারী যোদ্ধাদের উদাহরণ প্রায়ই অবিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে সন্দেহ জাগতে বাধ্য।’
সম্মুখ সমরে নারী যোদ্ধাদের অংশীদারত্ব বেশ কমই। কিন্তু যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রবণতা বলছে, বহু নারীই সংঘাতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। তারা যুদ্ধ, প্রযুক্তি এবং কূটনীতিতে বিভিন্ন পর্যায়ে ভূমিকা রেখেছেন, গোয়েন্দা, যুদ্ধাস্ত্র এবং গুপ্তচরবৃত্তিতে কাজ করেছেন। দগদগে ক্ষত হয়ে থাকা দুটি বিশ্বযুদ্ধ তার প্রমাণ।
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এক সময় শেষ হয়ে যায়, নারীরা বেঁচে থাকে এবং পরিণতির যন্ত্রণা বয়ে বেড়ায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নারীরা যুদ্ধের নির্লিপ্ত ভুক্তভোগী থাকে না। তারা স্বামী, সন্তান, ভাই হারানোর শোক করে, জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই করে, অনেকে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে বাধ্য হয়, পুরোনো পরিচয় ঝেড়ে ফেলে এবং যুদ্ধ তাদের ভাবনার নতুন আকৃতি দেয়।
এই ব্যাপারগুলো সরাসরি ভুক্তভোগীদের বয়ান থেকে বোঝার জন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক একটি তথ্যচিত্র করেছে। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি এই কাজটির পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। রেড ক্রস একটি প্রতিবেদনে বলছে, ‘এ ওম্যানস ওয়ার’ নামে তাদের প্রকল্পটি ‘নারী হিসেবে যুদ্ধের শিকার’ এমন গৎবাঁধা (স্টিরিওটাইপ) ধারণা ভেঙে দিয়েছে। নারীদের একাধিক জটিল এবং সংঘাতপূর্ণ ভূমিকা অন্বেষণ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে নারীরা যোদ্ধা, মানবতাবাদী, মা, কন্যা, শ্রমিক, সম্প্রদায়ের নেতা এবং বেঁচে ফেরা সংগ্রামী সত্তা।
নারী সৈন্যদের কাজগুলোকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নথিবদ্ধ করা হয়নি। এই কারণেই সাহিত্যে নোবেলজয়ী বেলারুশিয়ান সাংবাদিক সোভেৎলানা আলেক্সিভিচের বিবরণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত নারীদের যে ভূমিকা ও অবদান উঠে এসেছে তা সরকারি বয়ানে অনুপস্থিত। এই একটি কারণেই তাঁর ‘দ্য আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার’ বইটিকে অমূল্য সাহিত্যকর্ম বলা যায়।
ইরাক, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ নাইজেরিয়ার সংঘাত কবলিত এলাকার নারীদের অভিজ্ঞতা ও বয়ান রেকর্ড করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। অস্ত্র, গোলাবারুদের গর্জন থেমে গেলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গোষ্ঠীর আত্মপরিচয় যুদ্ধের মাধ্যমে নতুন রূপ ধারণ করতে থাকে। এ প্রক্রিয়া বহু দিন পর্যন্ত চলে। পেরুতে দেখা গেছে, স্প্যানিশ আগ্রাসনের বহু পুরোনো ক্ষত এখনো নিরাময় হয়নি।
চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কথাই ধরা যাক:
সূত্র: জাতিসংঘ
ওই সময় যুদ্ধে শ্রমিক হিসেবে সারা দেশ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রায় ১৪ লাখ নারী।
সূত্র: দ্য ওয়ার্ল্ডওয়াল ডটঅর্গ
ইউক্রেন পরিস্থিতি
জাতিসংঘের লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কেয়ারের ‘র্যাপিড জেন্ডার অ্যানালাইসিস ইন ইউক্রেন’ প্রতিবেদন অনুসারে, ইউক্রেনের বাধ্যতামূলক অভিবাসী হওয়া ৯০ শতাংশই নারী ও শিশু। যুদ্ধ যেহেতু চলমান এ সংখ্যা যে ক্রমে বাড়ছে তাতে সন্দেহ নেই।
এখন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট নানামুখী সমস্যা এবং অতিরিক্ত দায় ঘর কন্যার বোঝা টানা ইউক্রেনীয় নারীদের ঘাড়ে চেপেছে। কিন্তু এই ধরনের একটি অস্থির পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্ল্যাটফর্মে নারী কই? পরিস্থিতির উত্তেজনা প্রশমন, সংঘাত নিরসন এবং ইউক্রেন ও এর বাইরের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের বৈশ্বিক প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশ তো সেভাবে দৃশ্যমান নয়। এছাড়া লিঙ্গবৈষম্য ও গৃহনির্যাতনের অপরাধ ইউরোপের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ঘটে ইউক্রেনে। সক্ষম পুরুষেরা যুদ্ধের ময়দানে, একা নারী ভিন দেশে কীভাবে সব সামলাচ্ছেন!
লিঙ্গ ইস্যু নিয়ে কাজ করা এমনিতেই খুব জটিল। কারণ এটি বুঝতে চাইলে ক্ষমতা এবং বিশেষাধিকার, একটি সম্প্রদায়ের আচার এবং প্রত্যাশাকে একত্রে বুঝতে হয়। সংঘাত বিদ্যমান (লিঙ্গ) বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। যখন পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি-যিনি সাধারণত হোন একজন পুরুষ-যুদ্ধে যায় বা নিহত হয় তখন কী ঘটে? সামাজিক ভূমিকার পরিবর্তন হয়। পুরুষ প্রধান সমাজে তখন নারীদের জন্য এমন সুযোগ উন্মুক্ত হয় যা আগে কখনো ছিল না।
বলা যেতে পারে, যুদ্ধে নারীদের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাদের কাজকে সম্মানিত বা স্মরণ করা হয় না। এমনকি মানবাধিকার উন্নয়নের এই যুগে এসেও আমরা যুদ্ধে নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার ঘটনা দেখছি।
যুদ্ধ শেষে নারীদের ঘরে ফেরানো হয়, অধস্তন করে রাখা হয়। ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (এফএলএন) আলজেরীয় নারীদের পুরুষদের সমান বিপজ্জনক ভূমিকায় ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ ফেরত হিসেবে তার অধিকার এবং পেনশন থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।
নারী সৈন্যরা যুদ্ধ থেকে জীবিত ফিরে এলেও কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকেন। তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে অঙ্গীভূত করা হয় না। শুধু স্মৃতির সমতা নয়, যুদ্ধের একটি সামগ্রিক ‘চেতনা’, রোল মডেল এবং বিকল্প নায়িকা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এবং মানবীয় অভিজ্ঞতায় নারীর ক্ষমতার আলোকচ্ছটায় উজ্জ্বল হতে পারার একটি দারুণ সুযোগ সমাজ তার গভীরভাবে প্রোথিত সংস্কারের কারণে হাতছাড়া করে।
যুদ্ধ যদি অনিবার্যভাবেই মানবীয় ব্যাপার হয় তাহলে এটি তো নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রশ্ন হওয়ার কথা। ভারী অস্ত্র বহনের জন্য পুরুষের কাঁধ বিকশিত হয়েছে, এর সপক্ষে জৈবিক ব্যাখ্যা হাজির করা যেতে পারে কিন্তু হরমোনগত কারণে নারীরা শান্তিপ্রিয় স্নায়ুবিজ্ঞান এই ধারণাকে বাতিল করে দেয়। নারীরা সর্বদা শান্তিপ্রিয় বা শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী, ঘটনার শিকার, পুরুষকে কাপুরুষ বলে তাচ্ছিল্য করা অন্দর বাসিনী বা লাল লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙানো মনোবল বৃদ্ধিকারীনি নয়। সহিংসতা দিয়ে সহিংসতার সমাধান হয়তো কখনো হয়। কিন্তু লিঙ্গবৈষম্যের ধারণা কখনো জ্ঞান ও শান্তি বয়ে আনে না।
অবশ্য নানা যুদ্ধে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত নারীরা হলেন স্বাভাবিকতায় ফেরার নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব। তাঁদের কোমল হাত, দুর্বল কাঁধ যুদ্ধের ক্ষত সারিয়ে তুলতে সক্ষম।
তথ্যসূত্র: ইউএন উইমেন, দ্য গার্ডিয়ান, আইসিআরসি, ইউএনএফপিএ, এনপিআর
জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা

আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে। সব মিলিয়ে উদ্বেগজনক বৈশ্বিক তাপমাত্রা, দায়িত্বজ্ঞানহীন স্বৈরশাসক, চরমপন্থার উত্থান, অধিকারের নতুন মাত্রা এবং সরকার ও করপোরেটের ধ্বংসাত্মক নীতি ক্রমেই মানবজাতিকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষের মধ্যে ক্রোধ, হতাশা এবং বিদ্রোহের দাবানলে ঘি ঢালছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
এক শতাংশের কম নারীযোদ্ধা
এই বিশৃঙ্খল বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে কিন্তু অনেক দৃঢ়চেতা নারীকে প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে দেখছি। আমাদের সামনে গ্রেটা থুনবার্গ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের মতো নারীদের উদাহরণ জ্বলজ্বল করছে। তাঁদের সাহসী পদক্ষেপ আমাদের আপ্লুত করছে। কিন্তু একজন নারী যদি আক্ষরিক অর্থেই একটি সশস্ত্র লড়াইয়ে যুক্ত হওয়ার সুযোগ বেছে নেন? নারীর এমন সাহসিকতা কিন্তু পুরুষশাসিত কর্তৃত্ববাদী সমাজ এখনো উদ্যাপন করার উদারতা অর্জন করতে পারেনি।
বিশ শতকের প্রথম দিকে ইউরোপ থেকে বহু তরুণ যুবক প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়ে যুদ্ধে গেছে। তারা কেউ ভুক্তভোগী, কেউ কঠিন পরিস্থিতির নায়ক অথবা অনুপ্রেরণা।
কিন্তু একজন নারী যদি নিজ ইচ্ছায় কোনো সহিংসতার কাছাকাছিও যান, এমনকি হাতে অস্ত্র তুলে না নিলেও এখনো ব্যাপক সামাজিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ান। কঠোর সমালোচনা এবং প্রায়ই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে।
তাহলে নারী ও সহিংসতা, তাঁর সহযোগী ভূমিকা এবং যুদ্ধের মধ্যে অনুমোদিত সীমানা আসলে কী? কখন একজন নারী সজ্ঞানে এবং পরিকল্পিতভাবে এবং পুরুষের মতো সহজাতভাবে নিজের বা তাঁর মূল্যবোধের প্রতিরক্ষায় অস্ত্র তুলে নিতে রাজি হতে পারবেন? নারীরা কি সহজাতভাবে তুলনামূলক বেশি শান্তিপ্রিয়? তারা কি সক্ষম সৈনিক হতে পারে?
যুদ্ধ বা সহিংসতা ও নারী প্রশ্নে এই প্রশ্নগুলো খুবই মোক্ষম।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক জোশুয়া গোল্ডস্টেইন তাঁর ‘ওয়ার অ্যান্ড জেন্ডার’ বইতে যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণের সঙ্গে আন্তঃসাংস্কৃতিক ঐতিহাসিক প্রমাণগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তিনি দেখেছেন ‘ইতিহাসের সমস্ত যোদ্ধার ১ শতাংশেরও কম নারী’।
আধুনিক স্থায়ী সেনাবাহিনীতে সৈনিকদের অধিকাংশই পুরুষ। যুদ্ধ একটি সামাজিকভাবে বৈচিত্র্যময় ঘটনা। প্রশ্ন করাই যায়, তাহলে কেন এখানে লিঙ্গ বৈচিত্র্য নেই হয়ে গেল? গোল্ডস্টেইন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘যুদ্ধে মানুষ হত্যার ব্যাপারটা লিঙ্গ নির্বিশেষে কোনো স্বাভাবিক প্রবণতা নয়। তবুও যুদ্ধের সম্ভাবনা কিন্তু সর্বজনীন। যুদ্ধের প্রতি সৈন্যদের অনীহার মনোভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্যই বিভিন্ন সংস্কৃতিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লিঙ্গের ভূমিকাকে বড় করে দেখানো হয়। একটি কঠিন পরিস্থিতিতে আরও কঠোরভাবে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোকে “পৌরুষদীপ্ত” কাজ বলা হয়!
আমরা ‘নারী যোদ্ধাকে’ গ্রহণ করতে খুব একটা স্বস্তি বোধ করি না। একটি দেশ এবং তার সামরিক বাহিনীর দায়িত্বে থাকা একজন নারী, বা যুদ্ধরত নারী সেনাপতি, প্রায়ই একটা যৌন অস্বাভাবিকতা হিসেবে দেখা হয়। যেমন ইতিহাসে আমরা অনেক বীরকে দেখি, যুদ্ধক্ষেত্রে নারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন না বলে চেচাচ্ছেন! ইতিহাসে হাতে গোনা যে কজন সফল নারী রাষ্ট্রপ্রধান বা যোদ্ধা, সেনাপতির কথা পাওয়া যায় সেগুলোর বর্ণনা এবং পাঠকদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়ি দেখলেই দৃষ্টিভঙ্গির এই অস্বস্তি ও অস্বাভাবিকতা অনুমান করা যায়।
সমাজে বা কর্মক্ষেত্রেও সামনের সারিতে সক্রিয় নারীরা যেন ‘সাপের গলায় ব্যাঙের’ মতো অস্বস্তি তৈরি করে। এই নারীদের সন্তান কত জন তা নিয়ে মিডিয়ার আগ্রহের শেষ নেই, তাঁর মাতৃত্বের বেপরোয়া অভাবকে তিরস্কার করা হয়। আর মৌলবাদের মতো ঘৃণিত মূল্যবোধের সঙ্গে তাঁর সংযোগ থাকলে তো কথাই নেই! ফ্যাসিবাদের সৈনিক হলেও মানা যায়, কিন্তু মৌলবাদী উগ্রপন্থীদের দলে গেলে তো তাকে দেশেই ঢুকতে দেওয়া হবে না!
আজকাল কম্পিউটার গেম, সিনেমা এবং ঢাউস আকৃতির সব বইয়ে ‘নারীশক্তিকে’ খুব মহিমান্বিত করা হয়। কিন্তু সেসব চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবতার খুব কমই মিল থাকে।
এই প্রশ্নগুলো শুধু পুরুষত্বের ধারণার সঙ্গেই নয়, নারীবাদের ধারণাগুলোর সঙ্গেও সম্পর্কিত। নারীর যুদ্ধে অংশগ্রহণ কী ‘পুরুষতান্ত্রিক সহিংসতা-বিরোধী’ নারীবাদী নীতিকে ক্ষুণ্ন করে? ইতিহাস বলে, আমেরিকার নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের অগ্রভাগের কেউ কেউ কংগ্রেসে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটানোর মতো কর্মসূচির পক্ষে ছিলেন। আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত অবশ্য শান্তিপূর্ণই ছিল।
যুদ্ধের সম্ভাব্য সকল ক্ষয়ক্ষতির অংশীদার হয় নারী। এর মধ্যে যুদ্ধের সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়-পরিকল্পিত হত্যা, সেটিরও প্রথম শিকার হয় নারীরা। নিপীড়ন বা প্রতিশোধ নিতে দুর্বল ও সহজ লক্ষ্য হিসেবে ইতিহাসের বিভিন্ন যুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা পাওয়া যায়। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় নারী সৈনিক কই?
নারীর কলমে যুদ্ধসাহিত্য প্রায় অনুপস্থিত
একটা যুদ্ধ পুরো সমাজকে গ্রাস করে, লিঙ্গ নির্বিশেষে যুদ্ধের আঁচ লাগে। কিন্তু নারীদের কলমে যুদ্ধের কথাসাহিত্য যেন অস্বাভাবিক ঘটনা। যেন যুদ্ধ নিয়ে কাল্পনিক কথাসাহিত্য তৈরির কল্পনা করার অধিকারটাও তাঁদের নেই!
মার্কিন ইতিহাসবিদ মার্গারেট ম্যাকমিলন বলেন, ‘সেনাবাহিনী এবং প্রতিষ্ঠান থেকে নারীদের বাদ দেওয়া একটা সাধারণ ঘটনা। ঐতিহাসিক নথি এবং শৈল্পিক প্রতিনিধিত্ব থেকেও তাদের বাদ দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ যা ঘটে-নারী যোদ্ধাদের উদাহরণ প্রায়ই অবিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে সন্দেহ জাগতে বাধ্য।’
সম্মুখ সমরে নারী যোদ্ধাদের অংশীদারত্ব বেশ কমই। কিন্তু যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রবণতা বলছে, বহু নারীই সংঘাতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। তারা যুদ্ধ, প্রযুক্তি এবং কূটনীতিতে বিভিন্ন পর্যায়ে ভূমিকা রেখেছেন, গোয়েন্দা, যুদ্ধাস্ত্র এবং গুপ্তচরবৃত্তিতে কাজ করেছেন। দগদগে ক্ষত হয়ে থাকা দুটি বিশ্বযুদ্ধ তার প্রমাণ।
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এক সময় শেষ হয়ে যায়, নারীরা বেঁচে থাকে এবং পরিণতির যন্ত্রণা বয়ে বেড়ায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নারীরা যুদ্ধের নির্লিপ্ত ভুক্তভোগী থাকে না। তারা স্বামী, সন্তান, ভাই হারানোর শোক করে, জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই করে, অনেকে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে বাধ্য হয়, পুরোনো পরিচয় ঝেড়ে ফেলে এবং যুদ্ধ তাদের ভাবনার নতুন আকৃতি দেয়।
এই ব্যাপারগুলো সরাসরি ভুক্তভোগীদের বয়ান থেকে বোঝার জন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক একটি তথ্যচিত্র করেছে। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি এই কাজটির পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। রেড ক্রস একটি প্রতিবেদনে বলছে, ‘এ ওম্যানস ওয়ার’ নামে তাদের প্রকল্পটি ‘নারী হিসেবে যুদ্ধের শিকার’ এমন গৎবাঁধা (স্টিরিওটাইপ) ধারণা ভেঙে দিয়েছে। নারীদের একাধিক জটিল এবং সংঘাতপূর্ণ ভূমিকা অন্বেষণ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে নারীরা যোদ্ধা, মানবতাবাদী, মা, কন্যা, শ্রমিক, সম্প্রদায়ের নেতা এবং বেঁচে ফেরা সংগ্রামী সত্তা।
নারী সৈন্যদের কাজগুলোকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নথিবদ্ধ করা হয়নি। এই কারণেই সাহিত্যে নোবেলজয়ী বেলারুশিয়ান সাংবাদিক সোভেৎলানা আলেক্সিভিচের বিবরণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত নারীদের যে ভূমিকা ও অবদান উঠে এসেছে তা সরকারি বয়ানে অনুপস্থিত। এই একটি কারণেই তাঁর ‘দ্য আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার’ বইটিকে অমূল্য সাহিত্যকর্ম বলা যায়।
ইরাক, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ নাইজেরিয়ার সংঘাত কবলিত এলাকার নারীদের অভিজ্ঞতা ও বয়ান রেকর্ড করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। অস্ত্র, গোলাবারুদের গর্জন থেমে গেলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গোষ্ঠীর আত্মপরিচয় যুদ্ধের মাধ্যমে নতুন রূপ ধারণ করতে থাকে। এ প্রক্রিয়া বহু দিন পর্যন্ত চলে। পেরুতে দেখা গেছে, স্প্যানিশ আগ্রাসনের বহু পুরোনো ক্ষত এখনো নিরাময় হয়নি।
চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কথাই ধরা যাক:
সূত্র: জাতিসংঘ
ওই সময় যুদ্ধে শ্রমিক হিসেবে সারা দেশ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রায় ১৪ লাখ নারী।
সূত্র: দ্য ওয়ার্ল্ডওয়াল ডটঅর্গ
ইউক্রেন পরিস্থিতি
জাতিসংঘের লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কেয়ারের ‘র্যাপিড জেন্ডার অ্যানালাইসিস ইন ইউক্রেন’ প্রতিবেদন অনুসারে, ইউক্রেনের বাধ্যতামূলক অভিবাসী হওয়া ৯০ শতাংশই নারী ও শিশু। যুদ্ধ যেহেতু চলমান এ সংখ্যা যে ক্রমে বাড়ছে তাতে সন্দেহ নেই।
এখন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট নানামুখী সমস্যা এবং অতিরিক্ত দায় ঘর কন্যার বোঝা টানা ইউক্রেনীয় নারীদের ঘাড়ে চেপেছে। কিন্তু এই ধরনের একটি অস্থির পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্ল্যাটফর্মে নারী কই? পরিস্থিতির উত্তেজনা প্রশমন, সংঘাত নিরসন এবং ইউক্রেন ও এর বাইরের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের বৈশ্বিক প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশ তো সেভাবে দৃশ্যমান নয়। এছাড়া লিঙ্গবৈষম্য ও গৃহনির্যাতনের অপরাধ ইউরোপের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ঘটে ইউক্রেনে। সক্ষম পুরুষেরা যুদ্ধের ময়দানে, একা নারী ভিন দেশে কীভাবে সব সামলাচ্ছেন!
লিঙ্গ ইস্যু নিয়ে কাজ করা এমনিতেই খুব জটিল। কারণ এটি বুঝতে চাইলে ক্ষমতা এবং বিশেষাধিকার, একটি সম্প্রদায়ের আচার এবং প্রত্যাশাকে একত্রে বুঝতে হয়। সংঘাত বিদ্যমান (লিঙ্গ) বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। যখন পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি-যিনি সাধারণত হোন একজন পুরুষ-যুদ্ধে যায় বা নিহত হয় তখন কী ঘটে? সামাজিক ভূমিকার পরিবর্তন হয়। পুরুষ প্রধান সমাজে তখন নারীদের জন্য এমন সুযোগ উন্মুক্ত হয় যা আগে কখনো ছিল না।
বলা যেতে পারে, যুদ্ধে নারীদের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাদের কাজকে সম্মানিত বা স্মরণ করা হয় না। এমনকি মানবাধিকার উন্নয়নের এই যুগে এসেও আমরা যুদ্ধে নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার ঘটনা দেখছি।
যুদ্ধ শেষে নারীদের ঘরে ফেরানো হয়, অধস্তন করে রাখা হয়। ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (এফএলএন) আলজেরীয় নারীদের পুরুষদের সমান বিপজ্জনক ভূমিকায় ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ ফেরত হিসেবে তার অধিকার এবং পেনশন থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।
নারী সৈন্যরা যুদ্ধ থেকে জীবিত ফিরে এলেও কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকেন। তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে অঙ্গীভূত করা হয় না। শুধু স্মৃতির সমতা নয়, যুদ্ধের একটি সামগ্রিক ‘চেতনা’, রোল মডেল এবং বিকল্প নায়িকা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এবং মানবীয় অভিজ্ঞতায় নারীর ক্ষমতার আলোকচ্ছটায় উজ্জ্বল হতে পারার একটি দারুণ সুযোগ সমাজ তার গভীরভাবে প্রোথিত সংস্কারের কারণে হাতছাড়া করে।
যুদ্ধ যদি অনিবার্যভাবেই মানবীয় ব্যাপার হয় তাহলে এটি তো নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রশ্ন হওয়ার কথা। ভারী অস্ত্র বহনের জন্য পুরুষের কাঁধ বিকশিত হয়েছে, এর সপক্ষে জৈবিক ব্যাখ্যা হাজির করা যেতে পারে কিন্তু হরমোনগত কারণে নারীরা শান্তিপ্রিয় স্নায়ুবিজ্ঞান এই ধারণাকে বাতিল করে দেয়। নারীরা সর্বদা শান্তিপ্রিয় বা শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী, ঘটনার শিকার, পুরুষকে কাপুরুষ বলে তাচ্ছিল্য করা অন্দর বাসিনী বা লাল লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙানো মনোবল বৃদ্ধিকারীনি নয়। সহিংসতা দিয়ে সহিংসতার সমাধান হয়তো কখনো হয়। কিন্তু লিঙ্গবৈষম্যের ধারণা কখনো জ্ঞান ও শান্তি বয়ে আনে না।
অবশ্য নানা যুদ্ধে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত নারীরা হলেন স্বাভাবিকতায় ফেরার নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব। তাঁদের কোমল হাত, দুর্বল কাঁধ যুদ্ধের ক্ষত সারিয়ে তুলতে সক্ষম।
তথ্যসূত্র: ইউএন উইমেন, দ্য গার্ডিয়ান, আইসিআরসি, ইউএনএফপিএ, এনপিআর

আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে। সব মিলিয়ে উদ্বেগজনক বৈশ্বিক তাপমাত্রা, দায়িত্বজ্ঞানহীন স্বৈরশাসক, চরমপন্থার উত্থান, অধিকারের নতুন মাত্রা এবং সরকার ও করপোরেটের ধ্বংসাত্মক নীতি ক্রমেই মানবজাতিকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষের মধ্যে ক্রোধ, হতাশা এবং বিদ্রোহের দাবানলে ঘি ঢালছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
এক শতাংশের কম নারীযোদ্ধা
এই বিশৃঙ্খল বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে কিন্তু অনেক দৃঢ়চেতা নারীকে প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে দেখছি। আমাদের সামনে গ্রেটা থুনবার্গ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের মতো নারীদের উদাহরণ জ্বলজ্বল করছে। তাঁদের সাহসী পদক্ষেপ আমাদের আপ্লুত করছে। কিন্তু একজন নারী যদি আক্ষরিক অর্থেই একটি সশস্ত্র লড়াইয়ে যুক্ত হওয়ার সুযোগ বেছে নেন? নারীর এমন সাহসিকতা কিন্তু পুরুষশাসিত কর্তৃত্ববাদী সমাজ এখনো উদ্যাপন করার উদারতা অর্জন করতে পারেনি।
বিশ শতকের প্রথম দিকে ইউরোপ থেকে বহু তরুণ যুবক প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়ে যুদ্ধে গেছে। তারা কেউ ভুক্তভোগী, কেউ কঠিন পরিস্থিতির নায়ক অথবা অনুপ্রেরণা।
কিন্তু একজন নারী যদি নিজ ইচ্ছায় কোনো সহিংসতার কাছাকাছিও যান, এমনকি হাতে অস্ত্র তুলে না নিলেও এখনো ব্যাপক সামাজিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ান। কঠোর সমালোচনা এবং প্রায়ই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে।
তাহলে নারী ও সহিংসতা, তাঁর সহযোগী ভূমিকা এবং যুদ্ধের মধ্যে অনুমোদিত সীমানা আসলে কী? কখন একজন নারী সজ্ঞানে এবং পরিকল্পিতভাবে এবং পুরুষের মতো সহজাতভাবে নিজের বা তাঁর মূল্যবোধের প্রতিরক্ষায় অস্ত্র তুলে নিতে রাজি হতে পারবেন? নারীরা কি সহজাতভাবে তুলনামূলক বেশি শান্তিপ্রিয়? তারা কি সক্ষম সৈনিক হতে পারে?
যুদ্ধ বা সহিংসতা ও নারী প্রশ্নে এই প্রশ্নগুলো খুবই মোক্ষম।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক জোশুয়া গোল্ডস্টেইন তাঁর ‘ওয়ার অ্যান্ড জেন্ডার’ বইতে যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণের সঙ্গে আন্তঃসাংস্কৃতিক ঐতিহাসিক প্রমাণগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তিনি দেখেছেন ‘ইতিহাসের সমস্ত যোদ্ধার ১ শতাংশেরও কম নারী’।
আধুনিক স্থায়ী সেনাবাহিনীতে সৈনিকদের অধিকাংশই পুরুষ। যুদ্ধ একটি সামাজিকভাবে বৈচিত্র্যময় ঘটনা। প্রশ্ন করাই যায়, তাহলে কেন এখানে লিঙ্গ বৈচিত্র্য নেই হয়ে গেল? গোল্ডস্টেইন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘যুদ্ধে মানুষ হত্যার ব্যাপারটা লিঙ্গ নির্বিশেষে কোনো স্বাভাবিক প্রবণতা নয়। তবুও যুদ্ধের সম্ভাবনা কিন্তু সর্বজনীন। যুদ্ধের প্রতি সৈন্যদের অনীহার মনোভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্যই বিভিন্ন সংস্কৃতিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লিঙ্গের ভূমিকাকে বড় করে দেখানো হয়। একটি কঠিন পরিস্থিতিতে আরও কঠোরভাবে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোকে “পৌরুষদীপ্ত” কাজ বলা হয়!
আমরা ‘নারী যোদ্ধাকে’ গ্রহণ করতে খুব একটা স্বস্তি বোধ করি না। একটি দেশ এবং তার সামরিক বাহিনীর দায়িত্বে থাকা একজন নারী, বা যুদ্ধরত নারী সেনাপতি, প্রায়ই একটা যৌন অস্বাভাবিকতা হিসেবে দেখা হয়। যেমন ইতিহাসে আমরা অনেক বীরকে দেখি, যুদ্ধক্ষেত্রে নারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন না বলে চেচাচ্ছেন! ইতিহাসে হাতে গোনা যে কজন সফল নারী রাষ্ট্রপ্রধান বা যোদ্ধা, সেনাপতির কথা পাওয়া যায় সেগুলোর বর্ণনা এবং পাঠকদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়ি দেখলেই দৃষ্টিভঙ্গির এই অস্বস্তি ও অস্বাভাবিকতা অনুমান করা যায়।
সমাজে বা কর্মক্ষেত্রেও সামনের সারিতে সক্রিয় নারীরা যেন ‘সাপের গলায় ব্যাঙের’ মতো অস্বস্তি তৈরি করে। এই নারীদের সন্তান কত জন তা নিয়ে মিডিয়ার আগ্রহের শেষ নেই, তাঁর মাতৃত্বের বেপরোয়া অভাবকে তিরস্কার করা হয়। আর মৌলবাদের মতো ঘৃণিত মূল্যবোধের সঙ্গে তাঁর সংযোগ থাকলে তো কথাই নেই! ফ্যাসিবাদের সৈনিক হলেও মানা যায়, কিন্তু মৌলবাদী উগ্রপন্থীদের দলে গেলে তো তাকে দেশেই ঢুকতে দেওয়া হবে না!
আজকাল কম্পিউটার গেম, সিনেমা এবং ঢাউস আকৃতির সব বইয়ে ‘নারীশক্তিকে’ খুব মহিমান্বিত করা হয়। কিন্তু সেসব চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবতার খুব কমই মিল থাকে।
এই প্রশ্নগুলো শুধু পুরুষত্বের ধারণার সঙ্গেই নয়, নারীবাদের ধারণাগুলোর সঙ্গেও সম্পর্কিত। নারীর যুদ্ধে অংশগ্রহণ কী ‘পুরুষতান্ত্রিক সহিংসতা-বিরোধী’ নারীবাদী নীতিকে ক্ষুণ্ন করে? ইতিহাস বলে, আমেরিকার নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের অগ্রভাগের কেউ কেউ কংগ্রেসে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটানোর মতো কর্মসূচির পক্ষে ছিলেন। আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত অবশ্য শান্তিপূর্ণই ছিল।
যুদ্ধের সম্ভাব্য সকল ক্ষয়ক্ষতির অংশীদার হয় নারী। এর মধ্যে যুদ্ধের সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়-পরিকল্পিত হত্যা, সেটিরও প্রথম শিকার হয় নারীরা। নিপীড়ন বা প্রতিশোধ নিতে দুর্বল ও সহজ লক্ষ্য হিসেবে ইতিহাসের বিভিন্ন যুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা পাওয়া যায়। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় নারী সৈনিক কই?
নারীর কলমে যুদ্ধসাহিত্য প্রায় অনুপস্থিত
একটা যুদ্ধ পুরো সমাজকে গ্রাস করে, লিঙ্গ নির্বিশেষে যুদ্ধের আঁচ লাগে। কিন্তু নারীদের কলমে যুদ্ধের কথাসাহিত্য যেন অস্বাভাবিক ঘটনা। যেন যুদ্ধ নিয়ে কাল্পনিক কথাসাহিত্য তৈরির কল্পনা করার অধিকারটাও তাঁদের নেই!
মার্কিন ইতিহাসবিদ মার্গারেট ম্যাকমিলন বলেন, ‘সেনাবাহিনী এবং প্রতিষ্ঠান থেকে নারীদের বাদ দেওয়া একটা সাধারণ ঘটনা। ঐতিহাসিক নথি এবং শৈল্পিক প্রতিনিধিত্ব থেকেও তাদের বাদ দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ যা ঘটে-নারী যোদ্ধাদের উদাহরণ প্রায়ই অবিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে সন্দেহ জাগতে বাধ্য।’
সম্মুখ সমরে নারী যোদ্ধাদের অংশীদারত্ব বেশ কমই। কিন্তু যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রবণতা বলছে, বহু নারীই সংঘাতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। তারা যুদ্ধ, প্রযুক্তি এবং কূটনীতিতে বিভিন্ন পর্যায়ে ভূমিকা রেখেছেন, গোয়েন্দা, যুদ্ধাস্ত্র এবং গুপ্তচরবৃত্তিতে কাজ করেছেন। দগদগে ক্ষত হয়ে থাকা দুটি বিশ্বযুদ্ধ তার প্রমাণ।
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এক সময় শেষ হয়ে যায়, নারীরা বেঁচে থাকে এবং পরিণতির যন্ত্রণা বয়ে বেড়ায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নারীরা যুদ্ধের নির্লিপ্ত ভুক্তভোগী থাকে না। তারা স্বামী, সন্তান, ভাই হারানোর শোক করে, জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই করে, অনেকে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে বাধ্য হয়, পুরোনো পরিচয় ঝেড়ে ফেলে এবং যুদ্ধ তাদের ভাবনার নতুন আকৃতি দেয়।
এই ব্যাপারগুলো সরাসরি ভুক্তভোগীদের বয়ান থেকে বোঝার জন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক একটি তথ্যচিত্র করেছে। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি এই কাজটির পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। রেড ক্রস একটি প্রতিবেদনে বলছে, ‘এ ওম্যানস ওয়ার’ নামে তাদের প্রকল্পটি ‘নারী হিসেবে যুদ্ধের শিকার’ এমন গৎবাঁধা (স্টিরিওটাইপ) ধারণা ভেঙে দিয়েছে। নারীদের একাধিক জটিল এবং সংঘাতপূর্ণ ভূমিকা অন্বেষণ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে নারীরা যোদ্ধা, মানবতাবাদী, মা, কন্যা, শ্রমিক, সম্প্রদায়ের নেতা এবং বেঁচে ফেরা সংগ্রামী সত্তা।
নারী সৈন্যদের কাজগুলোকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নথিবদ্ধ করা হয়নি। এই কারণেই সাহিত্যে নোবেলজয়ী বেলারুশিয়ান সাংবাদিক সোভেৎলানা আলেক্সিভিচের বিবরণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত নারীদের যে ভূমিকা ও অবদান উঠে এসেছে তা সরকারি বয়ানে অনুপস্থিত। এই একটি কারণেই তাঁর ‘দ্য আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার’ বইটিকে অমূল্য সাহিত্যকর্ম বলা যায়।
ইরাক, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ নাইজেরিয়ার সংঘাত কবলিত এলাকার নারীদের অভিজ্ঞতা ও বয়ান রেকর্ড করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। অস্ত্র, গোলাবারুদের গর্জন থেমে গেলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গোষ্ঠীর আত্মপরিচয় যুদ্ধের মাধ্যমে নতুন রূপ ধারণ করতে থাকে। এ প্রক্রিয়া বহু দিন পর্যন্ত চলে। পেরুতে দেখা গেছে, স্প্যানিশ আগ্রাসনের বহু পুরোনো ক্ষত এখনো নিরাময় হয়নি।
চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কথাই ধরা যাক:
সূত্র: জাতিসংঘ
ওই সময় যুদ্ধে শ্রমিক হিসেবে সারা দেশ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রায় ১৪ লাখ নারী।
সূত্র: দ্য ওয়ার্ল্ডওয়াল ডটঅর্গ
ইউক্রেন পরিস্থিতি
জাতিসংঘের লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কেয়ারের ‘র্যাপিড জেন্ডার অ্যানালাইসিস ইন ইউক্রেন’ প্রতিবেদন অনুসারে, ইউক্রেনের বাধ্যতামূলক অভিবাসী হওয়া ৯০ শতাংশই নারী ও শিশু। যুদ্ধ যেহেতু চলমান এ সংখ্যা যে ক্রমে বাড়ছে তাতে সন্দেহ নেই।
এখন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট নানামুখী সমস্যা এবং অতিরিক্ত দায় ঘর কন্যার বোঝা টানা ইউক্রেনীয় নারীদের ঘাড়ে চেপেছে। কিন্তু এই ধরনের একটি অস্থির পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্ল্যাটফর্মে নারী কই? পরিস্থিতির উত্তেজনা প্রশমন, সংঘাত নিরসন এবং ইউক্রেন ও এর বাইরের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের বৈশ্বিক প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশ তো সেভাবে দৃশ্যমান নয়। এছাড়া লিঙ্গবৈষম্য ও গৃহনির্যাতনের অপরাধ ইউরোপের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ঘটে ইউক্রেনে। সক্ষম পুরুষেরা যুদ্ধের ময়দানে, একা নারী ভিন দেশে কীভাবে সব সামলাচ্ছেন!
লিঙ্গ ইস্যু নিয়ে কাজ করা এমনিতেই খুব জটিল। কারণ এটি বুঝতে চাইলে ক্ষমতা এবং বিশেষাধিকার, একটি সম্প্রদায়ের আচার এবং প্রত্যাশাকে একত্রে বুঝতে হয়। সংঘাত বিদ্যমান (লিঙ্গ) বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। যখন পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি-যিনি সাধারণত হোন একজন পুরুষ-যুদ্ধে যায় বা নিহত হয় তখন কী ঘটে? সামাজিক ভূমিকার পরিবর্তন হয়। পুরুষ প্রধান সমাজে তখন নারীদের জন্য এমন সুযোগ উন্মুক্ত হয় যা আগে কখনো ছিল না।
বলা যেতে পারে, যুদ্ধে নারীদের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাদের কাজকে সম্মানিত বা স্মরণ করা হয় না। এমনকি মানবাধিকার উন্নয়নের এই যুগে এসেও আমরা যুদ্ধে নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার ঘটনা দেখছি।
যুদ্ধ শেষে নারীদের ঘরে ফেরানো হয়, অধস্তন করে রাখা হয়। ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (এফএলএন) আলজেরীয় নারীদের পুরুষদের সমান বিপজ্জনক ভূমিকায় ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ ফেরত হিসেবে তার অধিকার এবং পেনশন থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।
নারী সৈন্যরা যুদ্ধ থেকে জীবিত ফিরে এলেও কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকেন। তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে অঙ্গীভূত করা হয় না। শুধু স্মৃতির সমতা নয়, যুদ্ধের একটি সামগ্রিক ‘চেতনা’, রোল মডেল এবং বিকল্প নায়িকা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এবং মানবীয় অভিজ্ঞতায় নারীর ক্ষমতার আলোকচ্ছটায় উজ্জ্বল হতে পারার একটি দারুণ সুযোগ সমাজ তার গভীরভাবে প্রোথিত সংস্কারের কারণে হাতছাড়া করে।
যুদ্ধ যদি অনিবার্যভাবেই মানবীয় ব্যাপার হয় তাহলে এটি তো নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রশ্ন হওয়ার কথা। ভারী অস্ত্র বহনের জন্য পুরুষের কাঁধ বিকশিত হয়েছে, এর সপক্ষে জৈবিক ব্যাখ্যা হাজির করা যেতে পারে কিন্তু হরমোনগত কারণে নারীরা শান্তিপ্রিয় স্নায়ুবিজ্ঞান এই ধারণাকে বাতিল করে দেয়। নারীরা সর্বদা শান্তিপ্রিয় বা শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী, ঘটনার শিকার, পুরুষকে কাপুরুষ বলে তাচ্ছিল্য করা অন্দর বাসিনী বা লাল লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙানো মনোবল বৃদ্ধিকারীনি নয়। সহিংসতা দিয়ে সহিংসতার সমাধান হয়তো কখনো হয়। কিন্তু লিঙ্গবৈষম্যের ধারণা কখনো জ্ঞান ও শান্তি বয়ে আনে না।
অবশ্য নানা যুদ্ধে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত নারীরা হলেন স্বাভাবিকতায় ফেরার নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব। তাঁদের কোমল হাত, দুর্বল কাঁধ যুদ্ধের ক্ষত সারিয়ে তুলতে সক্ষম।
তথ্যসূত্র: ইউএন উইমেন, দ্য গার্ডিয়ান, আইসিআরসি, ইউএনএফপিএ, এনপিআর

বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন...
৫ ঘণ্টা আগে
এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত।
৯ ঘণ্টা আগে
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন।
৯ ঘণ্টা আগে
অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি...
১০ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। এই গ্রামগুলো শুধু সুন্দর নয়, একই সঙ্গে সামাজিক ও পরিবেশগত সচেতনতার অনন্য উদাহরণ।
পেংলিপুরান, ইন্দোনেশিয়া
বালির ব্যাংলি জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম পরিচ্ছন্ন গ্রাম পেংলিপুরান। এখানে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের বাড়ি, পাথরের রাস্তা, ফুল-বাগানসহ গ্রামীণ পরিবেশ অত্যন্ত যত্নসহকারে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। গ্রামটির প্রতিটি পরিবারের সবাই পরিবেশ বিষয়ে সচেতন। তারা বর্জ্য পুনর্ব্যবহার এবং জৈব বর্জ্য সার ব্যবহার করে। সেখানে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ। গ্রামটিতে গাড়ি প্রবেশ নিষিদ্ধ। এর পাশাপাশি পর্যটকের সংখ্যা সীমিত রাখার কারণে সেখানকার পরিবেশ ও শান্তি ঠিক নির্বিঘ্ন আছে। পেংলিপুরান গ্রামের অধিবাসীদের ঐতিহ্যের অংশ পেনজোর ও বান্টেন উৎসব। এসব গ্রামের হোমস্টেগুলোতে থাকলে স্থানীয়দের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া যায়। সুযোগ পাওয়া যায় তাদের সংস্কৃতি ও জীবনধারা দেখার। সব মিলিয়ে পরিচ্ছন্নতা ধরে রাখায় পেংলিপুরান গ্রাম পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
গিয়েথুর্ন, নেদারল্যান্ডস

‘উত্তরের ভেনিস’ বলে খ্যাত নেদারল্যান্ডসের গিয়েথুর্ন গ্রাম। সেখানে পাওয়া যায় না গাড়ির শব্দ, নেই রাস্তাঘাটে ব্যস্ততা। আছে শুধু শান্ত পানিপথ, ফুলে ভরা বাগান আর ছোট ছোট বাড়ি। গ্রামটিতে চলাচলের জন্য পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় নৌকার ওপর। আরেকটি ব্যবস্থা আছে, সেটা হলো হাঁটা। স্থানীয়রা পরিবেশ রক্ষায় বেশ সচেতন। গ্রামটির খালে পানিও থাকে বারো মাস। পুরো গ্রাম ঘুরেও কোনো প্লাস্টিক বর্জ্য চোখে পড়বে না। এ গ্রামের মানুষ প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট না করতে পর্যটকদের অনুরোধ করে থাকে সব সময়। শীতকালে বরফে জমে যাওয়া খালে জমে ওঠে স্থানীয় মানুষদের স্কেটিং। গিয়েথুর্ন যেন আধুনিক সভ্যতার কোলাহলের বাইরে প্রকৃতির কোলে শান্ত জীবনের এক নিদর্শন।
মাওলাইনং, ভারত
এশিয়ার পরিচ্ছন্নতম গ্রাম হিসেবে খ্যাত মাওলাইনং। গ্রামটিতে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয় এবং ব্যবহার করা হয় বাঁশের ডাস্টবিন। স্থানীয়রা নিয়মিত গ্রামের সবকিছু পরিষ্কার রাখে। গ্রামের প্রতিটি রাস্তা দেখলেই সেখানকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতার কথা উপলব্ধি করা যায়। গ্রামীণ সৌন্দর্যের উপভোগের পাশাপাশি সেখানকার পরিবেশ-সচেতনতা দেখতেও পর্যটকেরা ভিড় জমায় প্রতিবছর।

ইয়ানা, ভারত
দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের আছে ইয়ানা নামের এই গ্রাম। ঘন জঙ্গলের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা কালো চুনাপাথরের বিশাল শিলাখণ্ড ভৈরবেশ্বর ও মহাশক্তি শিখর গ্রামটির প্রধান আকর্ষণ। এখানের বাতাসে ভেসে বেড়ায় আসে বৃষ্টির গন্ধ আর পাখির ডাক। ইয়ানার বাসিন্দারা পরিচ্ছন্নতা ও প্রকৃতি রক্ষায় অত্যন্ত সচেতন। গ্রামটিতে প্লাস্টিক ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পর্যটকদেরও বর্জ্য নিজের সঙ্গে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। স্থানীয়রা পরিবেশবান্ধব পর্যটনকে উৎসাহিত করে, যাতে গ্রামের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক থাকে। গ্রামজুড়ে হাঁটার পথগুলো ঝকঝকে পরিষ্কার। আশপাশের ঝরনা ও পাহাড়ের দৃশ্য মিলিয়ে ইয়ানা ভ্রমণ বেশ উপভোগ্য অভিজ্ঞতা দেয়।
খোনোমা, ভারত

‘গ্রিন ভিলেজ’ নামে পরিচিত ভারতের নাগাল্যান্ডের খোনোমা গ্রাম। এটি ভারতের প্রথম পরিবেশবান্ধব গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। পাহাড় ঘেরা এই গ্রামের জনগণ একসময় শিকারনির্ভর জীবনে অভ্যস্ত ছিল। এখন গ্রামজুড়ে পরিষ্কার রাস্তা, কাঠের ছাদের ঐতিহ্যবাহী ঘর আর সবুজ ধানখেত মিলে তৈরি করেছে পোস্টকার্ডের মতো দৃশ্য। গ্রামটির মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস করে, তারা অতিথিপরায়ণ এবং নিজেদের সংস্কৃতি গর্বের সঙ্গে তুলে ধরে।
এই গ্রামগুলো শুধু ভ্রমণের জন্যই পরিচিতি পায়নি। এসব গ্রাম আমাদের শিখিয়েছে, আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শুধু সরকারের নির্দেশ থাকলেই হয় না। কমিউনিটি উদ্যোগ, সচেতনতা ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে পরিবেশ ও জীবনধারা পরিচ্ছন্ন তো বটেই, উন্নত করাও সম্ভব।
সূত্র: ট্রিপ অ্যাডভাইজার, ফোর্বস, ইন্ডিয়া ট্রাভেল

বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। এই গ্রামগুলো শুধু সুন্দর নয়, একই সঙ্গে সামাজিক ও পরিবেশগত সচেতনতার অনন্য উদাহরণ।
পেংলিপুরান, ইন্দোনেশিয়া
বালির ব্যাংলি জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম পরিচ্ছন্ন গ্রাম পেংলিপুরান। এখানে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের বাড়ি, পাথরের রাস্তা, ফুল-বাগানসহ গ্রামীণ পরিবেশ অত্যন্ত যত্নসহকারে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। গ্রামটির প্রতিটি পরিবারের সবাই পরিবেশ বিষয়ে সচেতন। তারা বর্জ্য পুনর্ব্যবহার এবং জৈব বর্জ্য সার ব্যবহার করে। সেখানে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ। গ্রামটিতে গাড়ি প্রবেশ নিষিদ্ধ। এর পাশাপাশি পর্যটকের সংখ্যা সীমিত রাখার কারণে সেখানকার পরিবেশ ও শান্তি ঠিক নির্বিঘ্ন আছে। পেংলিপুরান গ্রামের অধিবাসীদের ঐতিহ্যের অংশ পেনজোর ও বান্টেন উৎসব। এসব গ্রামের হোমস্টেগুলোতে থাকলে স্থানীয়দের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া যায়। সুযোগ পাওয়া যায় তাদের সংস্কৃতি ও জীবনধারা দেখার। সব মিলিয়ে পরিচ্ছন্নতা ধরে রাখায় পেংলিপুরান গ্রাম পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
গিয়েথুর্ন, নেদারল্যান্ডস

‘উত্তরের ভেনিস’ বলে খ্যাত নেদারল্যান্ডসের গিয়েথুর্ন গ্রাম। সেখানে পাওয়া যায় না গাড়ির শব্দ, নেই রাস্তাঘাটে ব্যস্ততা। আছে শুধু শান্ত পানিপথ, ফুলে ভরা বাগান আর ছোট ছোট বাড়ি। গ্রামটিতে চলাচলের জন্য পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় নৌকার ওপর। আরেকটি ব্যবস্থা আছে, সেটা হলো হাঁটা। স্থানীয়রা পরিবেশ রক্ষায় বেশ সচেতন। গ্রামটির খালে পানিও থাকে বারো মাস। পুরো গ্রাম ঘুরেও কোনো প্লাস্টিক বর্জ্য চোখে পড়বে না। এ গ্রামের মানুষ প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট না করতে পর্যটকদের অনুরোধ করে থাকে সব সময়। শীতকালে বরফে জমে যাওয়া খালে জমে ওঠে স্থানীয় মানুষদের স্কেটিং। গিয়েথুর্ন যেন আধুনিক সভ্যতার কোলাহলের বাইরে প্রকৃতির কোলে শান্ত জীবনের এক নিদর্শন।
মাওলাইনং, ভারত
এশিয়ার পরিচ্ছন্নতম গ্রাম হিসেবে খ্যাত মাওলাইনং। গ্রামটিতে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয় এবং ব্যবহার করা হয় বাঁশের ডাস্টবিন। স্থানীয়রা নিয়মিত গ্রামের সবকিছু পরিষ্কার রাখে। গ্রামের প্রতিটি রাস্তা দেখলেই সেখানকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতার কথা উপলব্ধি করা যায়। গ্রামীণ সৌন্দর্যের উপভোগের পাশাপাশি সেখানকার পরিবেশ-সচেতনতা দেখতেও পর্যটকেরা ভিড় জমায় প্রতিবছর।

ইয়ানা, ভারত
দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের আছে ইয়ানা নামের এই গ্রাম। ঘন জঙ্গলের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা কালো চুনাপাথরের বিশাল শিলাখণ্ড ভৈরবেশ্বর ও মহাশক্তি শিখর গ্রামটির প্রধান আকর্ষণ। এখানের বাতাসে ভেসে বেড়ায় আসে বৃষ্টির গন্ধ আর পাখির ডাক। ইয়ানার বাসিন্দারা পরিচ্ছন্নতা ও প্রকৃতি রক্ষায় অত্যন্ত সচেতন। গ্রামটিতে প্লাস্টিক ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পর্যটকদেরও বর্জ্য নিজের সঙ্গে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। স্থানীয়রা পরিবেশবান্ধব পর্যটনকে উৎসাহিত করে, যাতে গ্রামের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক থাকে। গ্রামজুড়ে হাঁটার পথগুলো ঝকঝকে পরিষ্কার। আশপাশের ঝরনা ও পাহাড়ের দৃশ্য মিলিয়ে ইয়ানা ভ্রমণ বেশ উপভোগ্য অভিজ্ঞতা দেয়।
খোনোমা, ভারত

‘গ্রিন ভিলেজ’ নামে পরিচিত ভারতের নাগাল্যান্ডের খোনোমা গ্রাম। এটি ভারতের প্রথম পরিবেশবান্ধব গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। পাহাড় ঘেরা এই গ্রামের জনগণ একসময় শিকারনির্ভর জীবনে অভ্যস্ত ছিল। এখন গ্রামজুড়ে পরিষ্কার রাস্তা, কাঠের ছাদের ঐতিহ্যবাহী ঘর আর সবুজ ধানখেত মিলে তৈরি করেছে পোস্টকার্ডের মতো দৃশ্য। গ্রামটির মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস করে, তারা অতিথিপরায়ণ এবং নিজেদের সংস্কৃতি গর্বের সঙ্গে তুলে ধরে।
এই গ্রামগুলো শুধু ভ্রমণের জন্যই পরিচিতি পায়নি। এসব গ্রাম আমাদের শিখিয়েছে, আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শুধু সরকারের নির্দেশ থাকলেই হয় না। কমিউনিটি উদ্যোগ, সচেতনতা ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে পরিবেশ ও জীবনধারা পরিচ্ছন্ন তো বটেই, উন্নত করাও সম্ভব।
সূত্র: ট্রিপ অ্যাডভাইজার, ফোর্বস, ইন্ডিয়া ট্রাভেল

আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে।
১৭ আগস্ট ২০২২
এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত।
৯ ঘণ্টা আগে
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন।
৯ ঘণ্টা আগে
অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি...
১০ ঘণ্টা আগেছন্দা ব্যানার্জি

এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত। এই রূপ শুধু প্রকৃতিতেই নয়, বাঙালির খাবারের ঐতিহ্যেও ফুটে উঠেছে।
হেমন্তের খাবার বাঙালির কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। এই সময় নতুন ফসলের আমেজ নিয়ে আসে নতুন স্বাদ ও গন্ধ। নতুন চালের ভাত বাঙালির কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। এখন যে সবজির ফলন হয়, ফুল ফোটে, ফল হয়, তা দুই বাংলার মানুষের বিশেষ আকর্ষণ আর ঐতিহ্যেরও বটে।
বাংলায় হেমন্তের খাদ্য উৎসব শুরু হয় আশ্বিনের সংক্রান্তি থেকে। কথায় আছে, আশ্বিনে রাঁধে কার্তিকে খায়। কেউ কেউ বলেন ডাকসংক্রান্তি, আবার কেউ নলসংক্রান্তি। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে রাঢ়বঙ্গের দেশঘরে, ব্রত আর পার্বণের দিন শুরু হয় সে সময় থেকে। কৃষিজীবন আর অ-কৃষিজাত শাকসবজি, আনাজের কাছে ফিরে যাওয়ার দিন শুরু হয়। প্রায় হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাসের মধ্যে ভেসে ওঠে খানিকটা খড়কুটোর মতো—গাডুর ডাল, সজলান্ন কিংবা ব্রতের ভাত।
গোলাভরা আউশের আশ্বাস আর খেতভরা আমনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে গর্ভিণী ধানের সাধভক্ষণ—নলসংক্রান্তি। এই ধান্য লক্ষ্মীর পূজা আসলে পৃথিবীর কাছে ফিরে যাওয়ার দিন। গ্রাম-বাংলার অ-কৃষিজাত কন্দমূল ও গাছগাছালিকে চিনে নেওয়ার সময়ও হেমন্তকাল। বাংলাদেশে কত রকমের যে কচু ছিল, সেই সব দিয়ে, শালুকের গোড়া, মটর বা খেসারির ডাল দিয়ে যে গাডুর ডাল রান্না হয়, সেই ডালকে মানুষ বলে ‘আসমবারি’।
এই হেমন্তের শুরুতে আসে ধন্বন্তরি বা অশ্বিনী দেবের পূজা। এদের ডাকপুরুষও বলে। সেই পূজার উপোস ভাঙতে এই ডাল আর ব্রতের ভাত খাওয়া হয়। ব্রতের ভাত রান্না হয় শ্যামা চালে। রেসিপি আলাদা। এই ভাতের সঙ্গে ডাল, নারকেল, পাকা কলা, গুড়, গ্রাম-বাংলার চালের পিঠা সব দেবতাকে নিবেদন করে তারপর খাওয়া হয়। আসলে হেমন্ত ঋতুতে এই পূজাগুলো আমাদের শেখায়, কোন শস্য কখন খেতে হয়, কোন শস্য বিষাক্ত কোন সময়ে।
হেমন্ত ঋতুতে ফসল কাটাকে কেন্দ্র করে নবান্ন উৎসব হয়। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব এই নবান্ন। নতুন আমন ধান কাটার পর তা থেকে চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব এটি। কাঁচা দুধ, ছোট-বড় ছোলা, মটর, গোটা মটর, গোটা সবুজ মুগসহ ভেজানো ডালজাতীয় সব শস্যদানা, কামরাঙা, পানিফল, পেয়ারা, কমলালেবু, নারকেল ইত্যাদি হেমন্তে উৎপাদিত নানান ফলের টুকরা আর আমন ধান থেকে হওয়া নতুন চাল দিয়ে নবান্ন উৎসব হয়।
বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ফসল তোলার পরের দিনেই নতুন চালের পায়েস, ক্ষীর, পিঠা আত্মীয়স্বজন এবং পড়শিদের ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়। হেমন্ত ঋতুর শুরুতে খেজুর ও তালগাছের রস গ্রাম-বাংলার অত্যন্ত প্রিয় পানীয়। ভোরে সূর্যের তেজ বাড়ার আগেই তা করতে হয় এই পানীয়। এই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় খেজুর বা তালের গুড়।
হেমন্তে নতুন চাল থেকে তৈরি হয় খই। নতুন গুড় ও খই তৈরি হয় মোয়া, খেজুরের নতুন গুড়ের পায়েস, ক্ষীর, পিঠের আয়োজনে উৎসব শুরু হয়ে যায় পৌষ পার্বণের আগেই। এ ছাড়া হেমন্তকালের শুরুতে নদী, নালা, পুকুর, খাল, বিল—এসবের জল শুকিয়ে যেতে শুরু করে। এই সময় অন্যান্য পরিচিত মাছের সঙ্গে পুঁটি, চাঁদা, খলসে, গেঁড়ি গুগলি এবং কাঁকড়া পাওয়া যায় প্রচুর। তাই সাধারণ বাঙালি ঘরে এসব দিয়ে রান্না করা হয় বিভিন্ন পদ। এসব খাবার শরীরে পুষ্টি ও প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করে পুরো বছরের জন্য।
এই সবকিছু মিলিয়ে হেমন্তের সুঘ্রাণ দুই বাংলায় ছড়িয়ে থাকে।
ছন্দা ব্যানার্জি, রন্ধনশিল্পী ও খাদ্যবিষয়ক লেখক

এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত। এই রূপ শুধু প্রকৃতিতেই নয়, বাঙালির খাবারের ঐতিহ্যেও ফুটে উঠেছে।
হেমন্তের খাবার বাঙালির কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। এই সময় নতুন ফসলের আমেজ নিয়ে আসে নতুন স্বাদ ও গন্ধ। নতুন চালের ভাত বাঙালির কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। এখন যে সবজির ফলন হয়, ফুল ফোটে, ফল হয়, তা দুই বাংলার মানুষের বিশেষ আকর্ষণ আর ঐতিহ্যেরও বটে।
বাংলায় হেমন্তের খাদ্য উৎসব শুরু হয় আশ্বিনের সংক্রান্তি থেকে। কথায় আছে, আশ্বিনে রাঁধে কার্তিকে খায়। কেউ কেউ বলেন ডাকসংক্রান্তি, আবার কেউ নলসংক্রান্তি। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে রাঢ়বঙ্গের দেশঘরে, ব্রত আর পার্বণের দিন শুরু হয় সে সময় থেকে। কৃষিজীবন আর অ-কৃষিজাত শাকসবজি, আনাজের কাছে ফিরে যাওয়ার দিন শুরু হয়। প্রায় হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাসের মধ্যে ভেসে ওঠে খানিকটা খড়কুটোর মতো—গাডুর ডাল, সজলান্ন কিংবা ব্রতের ভাত।
গোলাভরা আউশের আশ্বাস আর খেতভরা আমনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে গর্ভিণী ধানের সাধভক্ষণ—নলসংক্রান্তি। এই ধান্য লক্ষ্মীর পূজা আসলে পৃথিবীর কাছে ফিরে যাওয়ার দিন। গ্রাম-বাংলার অ-কৃষিজাত কন্দমূল ও গাছগাছালিকে চিনে নেওয়ার সময়ও হেমন্তকাল। বাংলাদেশে কত রকমের যে কচু ছিল, সেই সব দিয়ে, শালুকের গোড়া, মটর বা খেসারির ডাল দিয়ে যে গাডুর ডাল রান্না হয়, সেই ডালকে মানুষ বলে ‘আসমবারি’।
এই হেমন্তের শুরুতে আসে ধন্বন্তরি বা অশ্বিনী দেবের পূজা। এদের ডাকপুরুষও বলে। সেই পূজার উপোস ভাঙতে এই ডাল আর ব্রতের ভাত খাওয়া হয়। ব্রতের ভাত রান্না হয় শ্যামা চালে। রেসিপি আলাদা। এই ভাতের সঙ্গে ডাল, নারকেল, পাকা কলা, গুড়, গ্রাম-বাংলার চালের পিঠা সব দেবতাকে নিবেদন করে তারপর খাওয়া হয়। আসলে হেমন্ত ঋতুতে এই পূজাগুলো আমাদের শেখায়, কোন শস্য কখন খেতে হয়, কোন শস্য বিষাক্ত কোন সময়ে।
হেমন্ত ঋতুতে ফসল কাটাকে কেন্দ্র করে নবান্ন উৎসব হয়। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব এই নবান্ন। নতুন আমন ধান কাটার পর তা থেকে চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব এটি। কাঁচা দুধ, ছোট-বড় ছোলা, মটর, গোটা মটর, গোটা সবুজ মুগসহ ভেজানো ডালজাতীয় সব শস্যদানা, কামরাঙা, পানিফল, পেয়ারা, কমলালেবু, নারকেল ইত্যাদি হেমন্তে উৎপাদিত নানান ফলের টুকরা আর আমন ধান থেকে হওয়া নতুন চাল দিয়ে নবান্ন উৎসব হয়।
বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ফসল তোলার পরের দিনেই নতুন চালের পায়েস, ক্ষীর, পিঠা আত্মীয়স্বজন এবং পড়শিদের ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়। হেমন্ত ঋতুর শুরুতে খেজুর ও তালগাছের রস গ্রাম-বাংলার অত্যন্ত প্রিয় পানীয়। ভোরে সূর্যের তেজ বাড়ার আগেই তা করতে হয় এই পানীয়। এই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় খেজুর বা তালের গুড়।
হেমন্তে নতুন চাল থেকে তৈরি হয় খই। নতুন গুড় ও খই তৈরি হয় মোয়া, খেজুরের নতুন গুড়ের পায়েস, ক্ষীর, পিঠের আয়োজনে উৎসব শুরু হয়ে যায় পৌষ পার্বণের আগেই। এ ছাড়া হেমন্তকালের শুরুতে নদী, নালা, পুকুর, খাল, বিল—এসবের জল শুকিয়ে যেতে শুরু করে। এই সময় অন্যান্য পরিচিত মাছের সঙ্গে পুঁটি, চাঁদা, খলসে, গেঁড়ি গুগলি এবং কাঁকড়া পাওয়া যায় প্রচুর। তাই সাধারণ বাঙালি ঘরে এসব দিয়ে রান্না করা হয় বিভিন্ন পদ। এসব খাবার শরীরে পুষ্টি ও প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করে পুরো বছরের জন্য।
এই সবকিছু মিলিয়ে হেমন্তের সুঘ্রাণ দুই বাংলায় ছড়িয়ে থাকে।
ছন্দা ব্যানার্জি, রন্ধনশিল্পী ও খাদ্যবিষয়ক লেখক

আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে।
১৭ আগস্ট ২০২২
বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন...
৫ ঘণ্টা আগে
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন।
৯ ঘণ্টা আগে
অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি...
১০ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মেষ
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন। যদি ভাবা সম্ভব না হয়, তবে ভাবুন, ‘হতে পারে এটা আমার জীবনের সেরা কেনাকাটা!’ জ্যোতিষীরা বলছেন, প্রিয়জনের কুকর্মের জন্য বাড়িতে বিবাদ হতে পারে। সম্ভবত আপনার প্রিয়জন লুকিয়ে রাখা চকলেট বা রিমোট কন্ট্রোল চুরি করেছে—এর চেয়ে বড় কুকর্ম আর কী হতে পারে! কেউ যদি ‘বিনিয়োগ করুন, দ্বিগুণ হবে’ বলে, তবে দৌড়ে পালান। দৌড়াতে না পারলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকুন।
বৃষ
অফিসে কোনো সহকর্মীর সঙ্গে বিবাদ হতে পারে। মনে রাখবেন, বৃষ রাশির জাতক হিসেবে আপনার জেদ বা একগুঁয়েমি ষাঁড়ের মতোই খ্যাত! অফিসের ঝগড়াটা সম্ভবত বড় কোনো বিষয় নিয়ে হবে না—হতে পারে কে এসির তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি কমিয়েছিল, অথবা কে শেষ বিস্কুটটা খেলো। যদি কেউ কোনো ‘অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে অধিক চর্চা’ করতে নিষেধ করে, তবে ধরে নিন সে আপনার নতুন প্রতিভাবান সহকর্মী, যে আপনার কফির বয়াম চুরি করতে পারে। অবসাদ এড়াতে, দুপুরে একটা শর্ট ন্যাপ নিন। যদি বস ধরে ফেলে, বলুন—ধ্যান করছিলাম, নক্ষত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছিলাম। আজ শান্ত থাকুন। যদি খুব রাগ হয়, তবে চেঁচানোর বদলে মনে মনে রবীন্দ্রসংগীত শুনুন।
মিথুন
নতুন প্রকল্পে কাজ শুরুর আগে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করে নিন। আপনার শত্রু আজ সক্রিয় থাকবে, কিন্তু আর্থিক লাভের সম্ভাবনাও রয়েছে। আপনার ‘নতুন প্রকল্প’ যদি হয় ফ্রিজের পুরোনো খাবার পরিষ্কার করা, তবে সত্যিই ভালোভাবে চিন্তা করুন—গ্যাস মাস্ক লাগবে কি না। বন্ধুরা আজ আপনার সঙ্গে ভালো সময় কাটাবে, কারণ আপনার নতুন আয়ের খবর তারা জেনে গেছে। শত্রু সক্রিয় মানে এই নয় যে কেউ আপনার ক্ষতি করবে; হতে পারে সে শুধু আপনার ফেসবুক পোস্টগুলোতে ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দিয়ে যাবে। এর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক আর কী আছে! আজ দ্বৈত-চরিত্রটি কাজে লাগান। এক মিথুন কাজ করবে, অন্য মিথুন হিসাব রাখবে।
কর্কট
দাম্পত্য জীবন সুখে কাটবে এবং প্রায় সব কাজই পূর্ণ হবে। তবে কথা বলার সময় সাবধান থাকুন। আপনার দাম্পত্য জীবন সুখে কাটবে কারণ...সম্ভবত সঙ্গী আজ সারা দিন ব্যস্ত থাকবেন এবং রিমোট কন্ট্রোলটির ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য পাবেন। আপনার সব কাজ পূর্ণ হবে, এমনকি সেই কাজটিও—যেটা গত তিন সপ্তাহ ধরে ‘পরে করব’ বলে ফেলে রেখেছিলেন। সাবধানতা অবলম্বন করে কথা বলুন—বিশেষ করে যখন কেউ জিজ্ঞেস করবে, ‘তুমি কি আমার জন্য কিছু কিনেছ?’ মিথ্যা বলা বারণ। যাত্রা শুভ।
সিংহ
পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন। অন্য কারও বিবাদে জড়াবেন না। আয় বাড়বে। আয় বাড়ার সুসংবাদ শুনেছেন, তাই আজ নিজেকে রাজা বা রানির মতো অনুভব করবেন। তবে অন্য কারও বিবাদে জড়াবেন না। কারণ, যেই মুহূর্তে মাঝখানে মধ্যস্থতা করতে যাবেন, সবাই আপনার বিরুদ্ধেই জোট বাঁধবে—সিংহ মশাই, সাবধান! ‘সামাজিক কাজে অংশ নিতে পারেন’ মানে সম্ভবত পাড়ার কোনো জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রচুর খাবার খেতে পারেন। আপনার মনোমুগ্ধকর মনোভাব আজ কাজে লাগান—কিন্তু বিল মেটানোর সময় ভেজা বিড়াল হয়ে থাকুন।
কন্যা
আলস্য করবেন না। অচেনা ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকুন। ব্যবসা সংক্রান্ত কাজ পূর্ণ হবে। গ্রহরা যেন আজ আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে শাসিয়ে গেছে—‘আলস্য নৈব নৈব চ!’ যদি সকালে অ্যালার্ম বাজানোর পরও বিছানায় থাকার চেষ্টা করেন, তবে ধরে নিন, গ্রহদের কাছ থেকে কড়া বার্তা আসবে। অচেনা ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকুন, কারণ আজকের দিনে আপনার সবচেয়ে অচেনা ব্যক্তিটি হতে পারে সেই যিনি নিজেকে ‘ডায়েট চার্ট’ বা ‘ব্যালেন্স শিট’ বলে দাবি করছেন। আলস্য না করে অন্তত একবার টেবিল গুছিয়ে নিন—সেটাই আজ আপনার সবচেয়ে বড় সাফল্য। পরিবারে আনন্দের পরিবেশ থাকবে, কারণ আপনি অবশেষে কাজ শুরু করেছেন!
তুলা
চাকরিজীবীরা সুখবর পাবেন। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। ঝুঁকি নেবেন না। চাকরিজীবীরা সুখবর পাবেন, যেমন—বস অবশেষে আপনার পাঠানো ই-মেলের রিপ্লাই দিয়েছেন। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন, কিন্তু সাবধান—সেটা যেন টিভি দেখার প্রতিযোগিতা না হয়। ‘ঝুঁকি নেবেন না’ মানে হলো, আজ কোনোমতেই সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করবেন না যে তার ওজন বেড়েছে কিনা। নতুন মানুষদের সঙ্গে দেখা হতে পারে, কিন্তু তারা আপনাকে নতুন দায়িত্বের ফাঁদে ফেলতে পারে—তাই হাসি-খুশি থাকুন, কিন্তু নীরব। আনন্দে দিন কাটবে, যদি আপনি মনের ভেতরের বিচারপতিকে আজ ছুটি দিতে পারেন।
বৃশ্চিক
আবেগগত যোগাযোগে আরও ভালো থাকবেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হবে এবং শুভ সংবাদ পাবেন। আজ আবেগগতভাবে এত ভালো থাকবেন যে পথে কুকুর দেখলেও তাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করতে পারে! আপনার ‘শুভ সংবাদ’ সম্ভবত এটাই যে আপনি পুরোনো প্যান্টের পকেটে কিছু টাকা খুঁজে পেয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হবে—যেমন ধরুন, আপনি ইউটিউবের শর্টস দেখা শেষ করে অবশেষে মূল বা লং ভিডিও দেখা শুরু করবেন। অন্যদের আকৃষ্ট করার জন্য কথা বলার সময় সুন্দর থাকুন। তবে সুন্দর কথাগুলো যেন লোন বা ধার চাওয়ার জন্য ব্যবহার না হয়। আর্থিক বিষয়গুলো গতি পাবে, তাই আজই পুরোনো লোনগুলো পরিশোধ করার কথা ভাবুন...যদি পকেটে কিছু থাকে।
ধনু
নিজেকে অস্বস্তিকর ও চাপের মধ্যে অনুভব করতে পারেন। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকুন এবং খাওয়া-দাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন। আপনি অস্বস্তিকর বোধ করবেন কারণ আপনার মন আপনাকে সারা বিশ্বে ঘোরার জন্য চাপ দিচ্ছে, কিন্তু আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ঘরে বসে নেটফ্লিক্স দেখতে বলছে। ‘খাওয়া-দাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন’ এই পরামর্শটি আপনার জন্য আজ সম্পূর্ণ হাস্যকর। গ্রহরা কি জানে না যে, পৃথিবীতে এত মুখরোচক খাবার থাকতে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব? নেতিবাচক আবেগ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন, যেমন ধরুন—অন্যের খাবার শেষ হয়ে গেলেও আপনার প্লেটে আরও আছে, এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। ইতিবাচক থাকুন! আজ আপনি যা কিছু খাবেন, সেটাই আপনার জন্য শক্তি—এই সহজ সত্যিটা মেনে নিন।
মকর
লক্ষ্যের ওপর মনোযোগ বজায় থাকবে। কাঙ্ক্ষিত অফার পাবেন এবং কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। মকর রাশির জাতক হিসেবে আপনার লক্ষ্যের ওপর মনোযোগ বজায় থাকবে—বিশেষ করে, যদি লক্ষ্যটি হয় সময়মতো রাতের খাবার খাওয়া। আর আপনি কাঙ্ক্ষিত অফার পাবেন! সম্ভবত কোনো প্রিয় রেস্টুরেন্টে বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি-এর অফার। কাজের গতি কার্যকর থাকবে, যার ফলে অফিস থেকে সবার আগে বেরোনোর সুযোগ পাবেন। পেশাগত স্বাচ্ছন্দ্য বাড়বে— চেয়ারটা আজ আপনাকে সবচেয়ে বেশি আরাম দেবে। ব্যক্তিগত জীবনে ধৈর্য ও ধর্ম নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে—বিশেষ করে যখন কেউ আপনাকে কাজ শেখাতে আসে।
কুম্ভ
কাজের ব্যস্ততা বাড়তে পারে। স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন এবং পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিন। কাজের ব্যস্ততা বাড়বে, কারণ সমস্ত কাজ ফেলে রেখে নতুন করে কাজ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আজ যোগব্যায়াম করুন। যদি যোগব্যায়াম করতে আলস্য লাগে, তবে অন্তত ফ্রিজ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করুন, সেটাও একপ্রকার ব্যায়াম। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিন—কিন্তু তার আগে নিশ্চিত হন যে, তাদের টিভি সিরিয়ালের সময়টা নষ্ট করছেন না। আজকের দিনটি স্বাভাবিক হতে চলেছে, মানে কোনো অলৌকিক ঘটনা না ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। ক্যারিয়ারে রাজনীতির শিকার হওয়া এড়িয়ে চলুন। অর্থাৎ, বসের কানের কাছে কোনো গসিপ করতে যাবেন না।
মীন
প্রেমের জীবনে আজ একটি চমকের সম্মুখীন হতে পারেন। আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো। শরীরকে বিশ্রাম দিন। প্রেমের জীবনে ‘চমক’ হয়তো এটাই যে, আপনার সঙ্গী আজ নিজেই শেষ চকলেটটি না খেয়ে আপনার জন্য রেখে দিয়েছে। আপনার আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো, কিন্তু সেটার ব্যবহার করে একটা লটারি না কেটে বরং নিজের জন্য একটা ভালো কফি কিনুন। শরীরকে বিশ্রাম দিন—কিন্তু বিশ্রাম নিতে নিতে যদি ঘুমিয়ে পড়েন, তবে গ্রহরা আপনাকে দোষ দেবে না। কর্মক্ষেত্রের কাজ দ্রুত শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরুন। জ্যোতিষীরা বলছেন, পরিবারের সঙ্গে পার্কে বা সিনেমা দেখতে যেতে পারেন। যদি সিনেমা দেখতে ভালো না লাগে, তবে একাই বারান্দায় বসে প্রকৃতির নাটক দেখতে পারেন! আপনার নেওয়া একটি দৃঢ় পদক্ষেপ আজ ইতিবাচক ফল দেবে। হয়তো অবশেষে জামাকাপড় কাচার কাজটা শুরু করে দিয়েছেন!

মেষ
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন। যদি ভাবা সম্ভব না হয়, তবে ভাবুন, ‘হতে পারে এটা আমার জীবনের সেরা কেনাকাটা!’ জ্যোতিষীরা বলছেন, প্রিয়জনের কুকর্মের জন্য বাড়িতে বিবাদ হতে পারে। সম্ভবত আপনার প্রিয়জন লুকিয়ে রাখা চকলেট বা রিমোট কন্ট্রোল চুরি করেছে—এর চেয়ে বড় কুকর্ম আর কী হতে পারে! কেউ যদি ‘বিনিয়োগ করুন, দ্বিগুণ হবে’ বলে, তবে দৌড়ে পালান। দৌড়াতে না পারলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকুন।
বৃষ
অফিসে কোনো সহকর্মীর সঙ্গে বিবাদ হতে পারে। মনে রাখবেন, বৃষ রাশির জাতক হিসেবে আপনার জেদ বা একগুঁয়েমি ষাঁড়ের মতোই খ্যাত! অফিসের ঝগড়াটা সম্ভবত বড় কোনো বিষয় নিয়ে হবে না—হতে পারে কে এসির তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি কমিয়েছিল, অথবা কে শেষ বিস্কুটটা খেলো। যদি কেউ কোনো ‘অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে অধিক চর্চা’ করতে নিষেধ করে, তবে ধরে নিন সে আপনার নতুন প্রতিভাবান সহকর্মী, যে আপনার কফির বয়াম চুরি করতে পারে। অবসাদ এড়াতে, দুপুরে একটা শর্ট ন্যাপ নিন। যদি বস ধরে ফেলে, বলুন—ধ্যান করছিলাম, নক্ষত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছিলাম। আজ শান্ত থাকুন। যদি খুব রাগ হয়, তবে চেঁচানোর বদলে মনে মনে রবীন্দ্রসংগীত শুনুন।
মিথুন
নতুন প্রকল্পে কাজ শুরুর আগে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করে নিন। আপনার শত্রু আজ সক্রিয় থাকবে, কিন্তু আর্থিক লাভের সম্ভাবনাও রয়েছে। আপনার ‘নতুন প্রকল্প’ যদি হয় ফ্রিজের পুরোনো খাবার পরিষ্কার করা, তবে সত্যিই ভালোভাবে চিন্তা করুন—গ্যাস মাস্ক লাগবে কি না। বন্ধুরা আজ আপনার সঙ্গে ভালো সময় কাটাবে, কারণ আপনার নতুন আয়ের খবর তারা জেনে গেছে। শত্রু সক্রিয় মানে এই নয় যে কেউ আপনার ক্ষতি করবে; হতে পারে সে শুধু আপনার ফেসবুক পোস্টগুলোতে ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দিয়ে যাবে। এর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক আর কী আছে! আজ দ্বৈত-চরিত্রটি কাজে লাগান। এক মিথুন কাজ করবে, অন্য মিথুন হিসাব রাখবে।
কর্কট
দাম্পত্য জীবন সুখে কাটবে এবং প্রায় সব কাজই পূর্ণ হবে। তবে কথা বলার সময় সাবধান থাকুন। আপনার দাম্পত্য জীবন সুখে কাটবে কারণ...সম্ভবত সঙ্গী আজ সারা দিন ব্যস্ত থাকবেন এবং রিমোট কন্ট্রোলটির ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য পাবেন। আপনার সব কাজ পূর্ণ হবে, এমনকি সেই কাজটিও—যেটা গত তিন সপ্তাহ ধরে ‘পরে করব’ বলে ফেলে রেখেছিলেন। সাবধানতা অবলম্বন করে কথা বলুন—বিশেষ করে যখন কেউ জিজ্ঞেস করবে, ‘তুমি কি আমার জন্য কিছু কিনেছ?’ মিথ্যা বলা বারণ। যাত্রা শুভ।
সিংহ
পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন। অন্য কারও বিবাদে জড়াবেন না। আয় বাড়বে। আয় বাড়ার সুসংবাদ শুনেছেন, তাই আজ নিজেকে রাজা বা রানির মতো অনুভব করবেন। তবে অন্য কারও বিবাদে জড়াবেন না। কারণ, যেই মুহূর্তে মাঝখানে মধ্যস্থতা করতে যাবেন, সবাই আপনার বিরুদ্ধেই জোট বাঁধবে—সিংহ মশাই, সাবধান! ‘সামাজিক কাজে অংশ নিতে পারেন’ মানে সম্ভবত পাড়ার কোনো জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রচুর খাবার খেতে পারেন। আপনার মনোমুগ্ধকর মনোভাব আজ কাজে লাগান—কিন্তু বিল মেটানোর সময় ভেজা বিড়াল হয়ে থাকুন।
কন্যা
আলস্য করবেন না। অচেনা ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকুন। ব্যবসা সংক্রান্ত কাজ পূর্ণ হবে। গ্রহরা যেন আজ আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে শাসিয়ে গেছে—‘আলস্য নৈব নৈব চ!’ যদি সকালে অ্যালার্ম বাজানোর পরও বিছানায় থাকার চেষ্টা করেন, তবে ধরে নিন, গ্রহদের কাছ থেকে কড়া বার্তা আসবে। অচেনা ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকুন, কারণ আজকের দিনে আপনার সবচেয়ে অচেনা ব্যক্তিটি হতে পারে সেই যিনি নিজেকে ‘ডায়েট চার্ট’ বা ‘ব্যালেন্স শিট’ বলে দাবি করছেন। আলস্য না করে অন্তত একবার টেবিল গুছিয়ে নিন—সেটাই আজ আপনার সবচেয়ে বড় সাফল্য। পরিবারে আনন্দের পরিবেশ থাকবে, কারণ আপনি অবশেষে কাজ শুরু করেছেন!
তুলা
চাকরিজীবীরা সুখবর পাবেন। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। ঝুঁকি নেবেন না। চাকরিজীবীরা সুখবর পাবেন, যেমন—বস অবশেষে আপনার পাঠানো ই-মেলের রিপ্লাই দিয়েছেন। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন, কিন্তু সাবধান—সেটা যেন টিভি দেখার প্রতিযোগিতা না হয়। ‘ঝুঁকি নেবেন না’ মানে হলো, আজ কোনোমতেই সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করবেন না যে তার ওজন বেড়েছে কিনা। নতুন মানুষদের সঙ্গে দেখা হতে পারে, কিন্তু তারা আপনাকে নতুন দায়িত্বের ফাঁদে ফেলতে পারে—তাই হাসি-খুশি থাকুন, কিন্তু নীরব। আনন্দে দিন কাটবে, যদি আপনি মনের ভেতরের বিচারপতিকে আজ ছুটি দিতে পারেন।
বৃশ্চিক
আবেগগত যোগাযোগে আরও ভালো থাকবেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হবে এবং শুভ সংবাদ পাবেন। আজ আবেগগতভাবে এত ভালো থাকবেন যে পথে কুকুর দেখলেও তাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করতে পারে! আপনার ‘শুভ সংবাদ’ সম্ভবত এটাই যে আপনি পুরোনো প্যান্টের পকেটে কিছু টাকা খুঁজে পেয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হবে—যেমন ধরুন, আপনি ইউটিউবের শর্টস দেখা শেষ করে অবশেষে মূল বা লং ভিডিও দেখা শুরু করবেন। অন্যদের আকৃষ্ট করার জন্য কথা বলার সময় সুন্দর থাকুন। তবে সুন্দর কথাগুলো যেন লোন বা ধার চাওয়ার জন্য ব্যবহার না হয়। আর্থিক বিষয়গুলো গতি পাবে, তাই আজই পুরোনো লোনগুলো পরিশোধ করার কথা ভাবুন...যদি পকেটে কিছু থাকে।
ধনু
নিজেকে অস্বস্তিকর ও চাপের মধ্যে অনুভব করতে পারেন। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকুন এবং খাওয়া-দাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন। আপনি অস্বস্তিকর বোধ করবেন কারণ আপনার মন আপনাকে সারা বিশ্বে ঘোরার জন্য চাপ দিচ্ছে, কিন্তু আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ঘরে বসে নেটফ্লিক্স দেখতে বলছে। ‘খাওয়া-দাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন’ এই পরামর্শটি আপনার জন্য আজ সম্পূর্ণ হাস্যকর। গ্রহরা কি জানে না যে, পৃথিবীতে এত মুখরোচক খাবার থাকতে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব? নেতিবাচক আবেগ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন, যেমন ধরুন—অন্যের খাবার শেষ হয়ে গেলেও আপনার প্লেটে আরও আছে, এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। ইতিবাচক থাকুন! আজ আপনি যা কিছু খাবেন, সেটাই আপনার জন্য শক্তি—এই সহজ সত্যিটা মেনে নিন।
মকর
লক্ষ্যের ওপর মনোযোগ বজায় থাকবে। কাঙ্ক্ষিত অফার পাবেন এবং কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। মকর রাশির জাতক হিসেবে আপনার লক্ষ্যের ওপর মনোযোগ বজায় থাকবে—বিশেষ করে, যদি লক্ষ্যটি হয় সময়মতো রাতের খাবার খাওয়া। আর আপনি কাঙ্ক্ষিত অফার পাবেন! সম্ভবত কোনো প্রিয় রেস্টুরেন্টে বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি-এর অফার। কাজের গতি কার্যকর থাকবে, যার ফলে অফিস থেকে সবার আগে বেরোনোর সুযোগ পাবেন। পেশাগত স্বাচ্ছন্দ্য বাড়বে— চেয়ারটা আজ আপনাকে সবচেয়ে বেশি আরাম দেবে। ব্যক্তিগত জীবনে ধৈর্য ও ধর্ম নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে—বিশেষ করে যখন কেউ আপনাকে কাজ শেখাতে আসে।
কুম্ভ
কাজের ব্যস্ততা বাড়তে পারে। স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন এবং পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিন। কাজের ব্যস্ততা বাড়বে, কারণ সমস্ত কাজ ফেলে রেখে নতুন করে কাজ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আজ যোগব্যায়াম করুন। যদি যোগব্যায়াম করতে আলস্য লাগে, তবে অন্তত ফ্রিজ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করুন, সেটাও একপ্রকার ব্যায়াম। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিন—কিন্তু তার আগে নিশ্চিত হন যে, তাদের টিভি সিরিয়ালের সময়টা নষ্ট করছেন না। আজকের দিনটি স্বাভাবিক হতে চলেছে, মানে কোনো অলৌকিক ঘটনা না ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। ক্যারিয়ারে রাজনীতির শিকার হওয়া এড়িয়ে চলুন। অর্থাৎ, বসের কানের কাছে কোনো গসিপ করতে যাবেন না।
মীন
প্রেমের জীবনে আজ একটি চমকের সম্মুখীন হতে পারেন। আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো। শরীরকে বিশ্রাম দিন। প্রেমের জীবনে ‘চমক’ হয়তো এটাই যে, আপনার সঙ্গী আজ নিজেই শেষ চকলেটটি না খেয়ে আপনার জন্য রেখে দিয়েছে। আপনার আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো, কিন্তু সেটার ব্যবহার করে একটা লটারি না কেটে বরং নিজের জন্য একটা ভালো কফি কিনুন। শরীরকে বিশ্রাম দিন—কিন্তু বিশ্রাম নিতে নিতে যদি ঘুমিয়ে পড়েন, তবে গ্রহরা আপনাকে দোষ দেবে না। কর্মক্ষেত্রের কাজ দ্রুত শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরুন। জ্যোতিষীরা বলছেন, পরিবারের সঙ্গে পার্কে বা সিনেমা দেখতে যেতে পারেন। যদি সিনেমা দেখতে ভালো না লাগে, তবে একাই বারান্দায় বসে প্রকৃতির নাটক দেখতে পারেন! আপনার নেওয়া একটি দৃঢ় পদক্ষেপ আজ ইতিবাচক ফল দেবে। হয়তো অবশেষে জামাকাপড় কাচার কাজটা শুরু করে দিয়েছেন!

আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে।
১৭ আগস্ট ২০২২
বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন...
৫ ঘণ্টা আগে
এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত।
৯ ঘণ্টা আগে
অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি...
১০ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি ও ছবি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
উপকরণ
ইলিশের রিং পিস ৫ থেকে ৬ টুকরা, হলুদগুঁড়া এক চা-চামচ, শুকনা মরিচ ৭ থেকে ৮টি, রসুনের কোয়া ১২ থেকে ১৪টি, সিরকা ৬ থেকে ৭ টেবিল চামচ, সরিষাবাটা ৪ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, সরিষার তেল ৬ থেকে ৭ টেবিল চামচ।
প্রণালি
রিং পিস করা ইলিশ মাছ লবণ মাখিয়ে নেওয়ার পর ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর শুকনা মরিচ, রসুনের কোয়া, সরিষাবাটা, লবণ, হলুদগুঁড়া, সিরকা দিয়ে ব্লেন্ডারে অথবা পাটায় পেস্ট করে নিন। এবার হাঁড়িতে সরিষার তেল দিন। তারপর পেস্ট করা মিশ্রণটি দিয়ে নেড়ে নিন। এরপর লবণ দিয়ে মাখা মাছ দিয়ে এপিঠ-ওপিঠ করে হালকা ভেজে ঢাকনা দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে রান্না করুন ১০ মিনিট। তারপর নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন ইলিশের উল্লাস।

অতিথি আপ্যায়নে পাতে আমিষের এক পদ তুলে না দিলে আপ্যায়ন যেন অপূর্ণ থাকে। রাঁধতে যখন হবে, একটু ভিন্ন স্বাদের আমিষ রেঁধে মন ভরিয়ে দিতে পারেন অতিথির। চেনা আমিষের ভিন্ন পদের রেসিপি ও ছবি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
উপকরণ
ইলিশের রিং পিস ৫ থেকে ৬ টুকরা, হলুদগুঁড়া এক চা-চামচ, শুকনা মরিচ ৭ থেকে ৮টি, রসুনের কোয়া ১২ থেকে ১৪টি, সিরকা ৬ থেকে ৭ টেবিল চামচ, সরিষাবাটা ৪ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, সরিষার তেল ৬ থেকে ৭ টেবিল চামচ।
প্রণালি
রিং পিস করা ইলিশ মাছ লবণ মাখিয়ে নেওয়ার পর ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর শুকনা মরিচ, রসুনের কোয়া, সরিষাবাটা, লবণ, হলুদগুঁড়া, সিরকা দিয়ে ব্লেন্ডারে অথবা পাটায় পেস্ট করে নিন। এবার হাঁড়িতে সরিষার তেল দিন। তারপর পেস্ট করা মিশ্রণটি দিয়ে নেড়ে নিন। এরপর লবণ দিয়ে মাখা মাছ দিয়ে এপিঠ-ওপিঠ করে হালকা ভেজে ঢাকনা দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে রান্না করুন ১০ মিনিট। তারপর নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন ইলিশের উল্লাস।

আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে।
১৭ আগস্ট ২০২২
বিশ্বের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ বা শহর নিয়ে প্রতিবছর আলোচনা হয়। কিন্তু এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলোতে শহরের আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সেসব গ্রামে আলাদা করে কোনো নিয়ম বেঁধে দেওয়া নেই পরিষ্কার রাখার জন্য। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে পরিচ্ছন্ন...
৫ ঘণ্টা আগে
এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতির ঋতু হেমন্ত। নীরব আবেগে ঠাসা। শেষ শরতে ছাতিমের গন্ধে হেমন্ত আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের ঘ্রাণ নিয়ে। ধান উৎপাদনের ঋতু বলে একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। বর্ষার শেষের দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে উঠত, আর হেমন্তের অঘ্রানে পেকেও যেত।
৯ ঘণ্টা আগে
আপনার অর্থভাগ্য আজ ‘খুব খারাপ’ ঘোষণা হয়ে গেছে (সূত্রমতে, ঋণগ্রস্ত হতে পারেন)। এর অর্থ, ওয়ালেট আজ আন্তর্জাতিক ছুটি ঘোষণা করেছে এবং পকেটের অবস্থা ম্যালেরিয়া রোগীর মতো—একেবারে রুগ্ণ। আজ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন।
৯ ঘণ্টা আগে