Ajker Patrika

ছেলেবেলার ঈদ মিস করি

নাজিয়া হক অর্ষা
আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৪৭
ছেলেবেলার ঈদ মিস করি

ছেলেবেলার ঈদ, বড়বেলার ঈদ
ছোটবেলায় আমরা একটা ভাড়া বাসায় থাকতাম—অনেকগুলো পরিবার থাকত সেই বাড়িতে। ঈদের দশ-পনেরো দিন আগে ঈদের জামাকাপড় কেনা হতো। এই বাড়ির ছেলেমেয়েদের পোশাক ওই বাড়ির ছেলেমেয়রা দেখবে না, এমন একটা ব্যাপার ছিল। আমরা তিন বোন। আমাদের পোশাকের রঙের সঙ্গে যেন আশপাশের বাড়ির কারও পোশাকের রং মিলে না যায়, এটা খুব করে ভাবতাম। মোটকথা,ঈদের আগের দিন পর্যন্ত নতুন জামা কাউকে দেখানো যাবে না—এমন একটা ব্যাপার ছিল।
 
ঈদের মেহেদি
চাঁদরাতে আমাদের মধ্য়ে একটা উত্তেজনা কাজ করত হাতে মেহেদি পরা নিয়ে। আমরা ছোটরা সবাই গোল হয়ে বসতাম, আমাদের ফুপুরা, চাচিরা এক এক করে আমাদের হাতে মেহেদি পরিয়ে দিতেন। এই জিনিসগুলো এখন খুব মিস করি। এগুলো এখন আর হয়ে ওঠে না। 

ঈদকার্ড 
ঈদকার্ড কেনার ব্যাপারটা খুবই আনন্দদায়ক ছিল আমার কাছে। তখন এলাকার মোড়ে মোড়ে ছোট ছোট প্যান্ডেল করে ঈদকার্ড বিক্রি করা হতো দুই টাকা বা পাঁচ টাকা দামে। হাতখরচ বাঁচিয়ে কার্ড কিনে মা, বাবা, মামা, বন্ধুবান্ধব ও চাচাতো-মামাতো ভাইবোনদের দিতাম। তারপর ঈদের সালামি–ছোট ছোট সবকিছু মিলেই ছিল ঈদের আনন্দ।

ঈদের পোলাও-মাংস
সপ্তাহে প্রতি শুক্রবারই হয়তো পোলাও-মাংস রান্না হতো। তবে ঈদের পোলাও-মাংস আমার কাছে একটু আলাদাই লাগত। ঈদের সেমাই, পায়েস ছিল অনেক বেশি স্পেশাল। সারা বছরই হয়তো কমবেশি এই সেমাই, পায়েস খাওয়া হতো। কিন্তু ঈদের দিন সেই খাবারগুলো ছিল 
অন্য রকম। 

ছোটবেলার ঈদ মানে রাস্তার মোড়ে প্যান্ডেল, ঈদকার্ড, সাউন্ডবক্স আর একটা চটপটির দোকানঈদের জামা
ছোটবেলায় সকালে ঈদের জামা পরে বের হয়ে যেতাম। পুরো এলাকা ঘুরে দুপুরে বাড়ি ফিরতাম। এরপর খাওয়াদাওয়া করে ঈদের কাপড় পাল্টে একটা আরামদায়ক জামা পরে বিকেলবেলা শিশুপার্ক বা চিড়িয়াখানা, এমন কোথাও ঘুরতে যেতাম। এখন দেখা যায়, ঈদের দিন বাসাতেই থাকা হয়। কারণ সাধারণত ঈদের দিন আমাদের বাসায় আত্মীয়স্বজন আসেন। যদি বের হই তাহলে সেটা ঈদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন। 

ঈদে এখন যা মিস করি
এখন তো বড় হয়ে গেছি। ছোটবেলার অনেক ব্যাপার আর নেই। ছোটবেলায় যেমন হিসাব করতাম–কয়টা রোজা গেল, ঈদ আর কয়দিন পর। এখন ব্যস্ততা, দায়িত্ব অনেক বেশি। দেখা গেল, কাজ করছি, কেউ হয়তো বলল, তিন দিন পর ঈদ—তখন চমকে উঠি। তখন সবার জন্য কেনাকাটা, ঈদের বাজার এসব নিয়ে ভাবার ব্যাপার থাকে। ফলে আগের মতো ওই উত্তেজনা থাকে না। ঈদের সালামি এখন দিই, পাই কম। আগে সালামি পাওয়ার একটা 
আনন্দ ছিল।
এখন কেউ কাউকে ঈদকার্ড দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, তেমন দেখাও যায় না। ছোটবেলায় দেখতাম এলাকার ছেলেরা, আমার কাজিনরাও ঈদে বড় একটা স্পিকার এনে গলির মোড়ে বিভিন্ন গান বাজাত। তার পাশেই হয়তো একটা ঈদকার্ডের দোকান, তার পাশেই আবার একটা চটপটির দোকান। এখন তো বেশির ভাগ মানুষ দেখি সুন্দর জামাকাপড় পরে সেজেগুজে সারাক্ষণ ছবিই তুলে যাচ্ছে। কেউ কারও সঙ্গে খুব একটা কথাও বলে না, কোলাকুলিও খুব কম করতে দেখি।

রান্নাঘরের উষ্ণ আমেজ
ঈদের দিন সকালটা খুব উপভোগ করি এখনো। মায়ের সঙ্গে আমরা তিন বোন মিলে রান্না করি। ঈদের আগের দিন মসলা তৈরি করে রাখা, কী কী রান্না হবে, সেগুলোর একটা তালিকা তৈরি করা, সবার মধ্য়ে রান্নার কাজটা ভাগাভাগি করে নেওয়া—কে পোলাও রান্না করবে, কে সেমাই রান্না করবে, কে রোস্ট রান্না করবে। সব মিলে ঈদের দিন সকালে রান্নাঘরের আমেজটা খুব ভালো থাকে। যখন দুপুরবেলা খেতে বসি, তখন আমরা নম্বর দিই, কার রান্না কত ভালো হয়েছে। মিষ্টিজাতীয় খাবার আমি পছন্দ করি। তবে আমার এখনো মনে হয় যে এ ধরনের খাবার কতটুকু দুধ-চিনিতে সুস্বাদু হয়, সেটা আরও শিখতে হবে।

যা খেতে ভালোবাসি
বরাবরই যে ধরনের খাবার পছন্দ করিতা হলো ভাত, ছোট মাছ ভাজা ও চচ্চড়ি, সরিষা ভর্তা, আলুভর্তা, সব ধরনের ভাজি, ডিমভাজি, আলুভাজি। এগুলোর ব্যাপারে আমার কখনো অবসাদ আসেনি। এছাড়া ফ্রাইড রাইস, নুডলস, বাটারবন আমার পছন্দ। কখনো কখনো প্লেন কেক, লেমন কেক ভালো লাগে। মিষ্টিজাতীয় খাবারের মধ্য়ে পুডিং, পেস্ট্রি, প্যানকেক আমার খুব পছন্দ। সুযোগ হলে আমি বাসায় মাঝে মাঝে প্যানকেক বানাই। পিৎজা খেতে আগে পছন্দ করতাম না, কিন্ত এবার সাহরিতে আমি কয়েকবার পিৎজা অর্ডার করেছি। 

এবং টেলিভিশন 
দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর হয়তো টিভি দেখা হয়। সাত দিনব্যাপী যে ঈদের অনুষ্ঠান থাকে টেলিভিশনে, সেখান থেকে বেছে বেছে দেখা হয়। অবশ্য দুই বছর ধরে টেলিভিশন তেমন দেখা হয় না বললেই চলে। ঈদের অনুষ্ঠানগুলোর মধ্য়ে সিলেক্ট করে রাখা অনুষ্ঠানগুলো দুই-তিন সপ্তাহ পর যখন অনলাইনে চলে আসে, তখন দেখে নিই। তাতে সময় নষ্ট কম হয়।

যা পরতে ভালোবাসি
পোশাকের ব্যাপারটা আসলে মুড আর আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। কুর্তি আমার সব সময়ই পছন্দ। এ ছাড়া সুতির টপস, টি-শার্ট, কাফতান ট্রাউজার আরামদায়ক। এরপর আমার পছন্দের হচ্ছে শাড়ি। একেক সময় একেক রং ভালো লাগে। কখনো হয়তো উষ্ণ রং ভালো লাগে, কখনো আবার একটু হালকা রং। তবে সব সময়ই আমার সংগ্রহে সাদা, ক্রিম, পার্পল, হলুদ রঙের পোশাক থাকে। এই রংগুলো খুব আরাম দেয়। 

অনুলিখন: সানজিদা সামরিন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

চলন্ত বাসে ‘অজ্ঞান’ ঢাবি মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক, সিসিইউতে ভর্তি

৩য় শ্রেণির কর্মচারীর অঢেল সম্পদ

সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জাতিসংঘের ফলকার তুর্কের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল আইএসপিআর

সিএমএইচে মাগুরার শিশুটির অবস্থা অপরিবর্তিত: আইএসপিআর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত