ধর্ম ও জীবন ডেস্ক

ইসলাম উন্নত জীবনের পথ দেখায়। চালচলন, কথাবার্তা, খাওয়া-দাওয়াসহ জীবনের সব ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) উম্মতকে উত্তম শিষ্টাচার শিখিয়েছেন। আর প্রকৃত মুসলিমরা যুগ যুগ ধরে তা মান্য করে আসছে। আজ আমরা মহানবী (সা.)-এর খাবার গ্রহণের সুন্নত ও আদবগুলো জানব।
আল্লাহর নামে শুরু করা
রাসুল (সা.) খাওয়ার শুরুতে সব সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতেন এবং তাঁর সঙ্গীদেরও তা বলতে উৎসাহিত করতেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে এবং ডান হাতে খাবার খাও। এবং তোমার দিক থেকে খাও।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৬৭; তিরমিজি, হাদিস: ১৯১৩)। অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘যখন তোমরা খাবার খেতে শুরু করো, তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বলো— বিসমিল্লাহি আওওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু। (রিয়াজুস সালেহিন: ৭২৯)
সোনা-রুপার পাত্রে না খাওয়া
সোনা-রুপার পাত্রে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘তোমরা সোনা-রুপার পাত্রে পানাহার কোরো না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৩৩; মুসলিম, হাদিস: ২০৬৭)
খাওয়ার আগে-পরে হাত ধোয়া
খাওয়ার আগে হাত ধোয়া মুস্তাহাব। খাওয়ার পরে হাত ধোয়া সুন্নত। (তুহফাতুল আহওয়াজি: ৫ / ৪৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৭৪৮৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪৯৩)
ডান হাতে খাওয়া
রাসুল (সা.) আজীবন ডান হাত দিয়ে খাবার খেয়েছেন এবং বাঁ হাত দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দিয়ে পানাহার কোরো না। কেননা, শয়তান বাম হাতে পানাহার করে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৯১২)
বসে খাওয়া
বসে পানাহার করাই মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন দাঁড়িয়ে পান না করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ২০২৬)
মাটিতে বসে খাওয়া
মহানবী (সা.) মাটির ওপর বসে খাবার খেতেন। (শুআবুল ইমান, হাদিস: ৭৮৪৩)। মাটির ওপর বসে খাওয়ার অর্থ—সমতল স্থানে খাওয়া এবং পাত্র ওপরে রেখে না খাওয়া।
তিন আঙুলে খাওয়া
শুকনো খাবার তিন আঙুলে খাওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) শুকনো খাবার খাওয়ার সময় বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল ব্যবহার করতেন। (মুসলিম, হাদিস: ২০৩২)। তবে অসুবিধা হলে সব আঙুল ব্যবহার করা যাবে।
দস্তরখান ব্যবহার করা
খাবার পড়ে গেলে তুলে খাওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। এই সুন্নত আদায়ের জন্য আরেকটি সহায়ক আদব হলো দস্তরখান বিছানো। নবী (সা.) চামড়ার দস্তরখানায় খাবার খেতেন। (বুখারি, হাদিস: ৫৪১৫)। দস্তরখানা পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খাওয়া যায়।
খাওয়ার সময় বিনয়ী হওয়া
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করে বিনয়ের সঙ্গে খাওয়া উচিত। মহানবী (সা.) বলতেন, ‘দাসের মতো খাই, দাসের মতো বসি।’ (শুআবুল ইমান, হাদিস: ৫৫৭২)
উপুড় হয়ে শুয়ে না খাওয়া
উপুড় হয়ে শুয়ে খাওয়া আদবের খেলাপ। মহানবী (সা.) উপুড় হয়ে খেতে নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৩৭০; আবু দাউদ, হাদিস: ৩৭৭৪)
প্লেটের একপাশ থেকে খাওয়া
খাবার প্লেটের এক পাশ থেকে খাওয়া সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘খাবারের মধ্যখানে বরকত নাজিল হয়। তোমরা একপাশ থেকে খাও। মধ্যখান থেকে নয়।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৮০৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৭৭)
পড়ে গেলে উঠিয়ে খাওয়া
খাওয়ার সময় কিছু পড়ে গেলে তা উঠিয়ে ময়লা পরিষ্কার করে খাওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) এমনটি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৪২১৮; মুসলিম, হাদিস: ২০৩৪)
হেলান না দেওয়া
কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে খেতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। আবু হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-এর দরবারে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, ‘আমি হেলান দেওয়া অবস্থায় কোনো কিছু খাই না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৯০; তিরমিজি, হাদিস: ১৯৮৬)
খাবারের দোষ না ধরা
রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষত্রুটি ধরতেন না। তাঁর পছন্দ হলে খেতেন আর অপছন্দ হলে ত্যাগ করতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৯৮, ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৩৮২)
খাবারে ফুঁক না দেওয়া
খাবারের মধ্যে ফুঁক দেওয়া অনেক রোগ সৃষ্টির কারণ। রাসুল (সা.) খাবারে ফুঁ দিতে নিষেধ করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কখনো খাবারে ফুঁক দিতেন না। ফুঁক দিতেন না কোনো কিছু পানকালেও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৪১৩)
পরিমিত খাওয়া
ভোজনবিলাসিতায় নিরুৎসাহিত করে ইসলাম। অতিভোজন নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো পাত্র মানুষ পূর্ণ করে না। মানুষের জন্য পিঠ সোজা রাখার মতো খাওয়াই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি খেতে হলে সে যেন পেটের তিন ভাগের এক ভাগ খাবারের জন্য, এক ভাগ পানির জন্য এবং এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বরাদ্দ রাখে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮০; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৩৪৯)
যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাক
ঘরে সব সময় ভালো খাবার থাকে না। তাই যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। (মুসলিম, হাদিস: ২০৫২)
একসঙ্গে বেশি খাবার মুখে না দেওয়া
খাবার সামনে এলে একসঙ্গে অনেক খাবার মুখে পুরে না দেওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। খাওয়ার সময় কয়েকটি খেজুর একসঙ্গে মুখে পুরে দিতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। (মুসলিম, হাদিস: ২০৪৫; বুখারি, হাদিস: ২৪৫৫)
খাবার অপচয় না করা
খাবার অপচয় করা কঠিন গুনাহ। কোরআনে আল্লাহ তাআলা অপচয়কারীকে ‘শয়তানের ভাই’ আখ্যা দিয়েছেন। অন্য আয়াতে বলেছেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো; কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা: আরাফ, আয়াত: ৩১)
প্রতিযোগিতা করে না খাওয়া
একত্রে খাবার খাওয়ার সময় সবার চেয়ে বেশি খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। বরং সবার চেয়ে কম খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে সবার সমান খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। আর খাওয়ার সময় ভালো জিনিসটি আগেভাগে তুলে না খাওয়া এবং বড় বড় লোকমা মুখে পুরে না দেওয়া। মহানবী (সা.) সঙ্গীর অনুমতি ছাড়া একসঙ্গে দুটি করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ২৪৫৫; মুসলিম, হাদিস: ২০৪৫)
পানীয় তিন শ্বাসে পান করা
পানীয় এক নিশ্বাসে পান না করে তিন শ্বাসে পান করা সুন্নত। পাত্রের ভেতরে নিশ্বাস ফেলা উচিত নয়। মহানবী (সা.) তিন শ্বাসে পানি পান করতেন এবং বলতেন, ‘এতে বেশি তৃপ্তি আসে, পিপাসার কষ্ট থেকে অথবা কোনো ব্যাধি সৃষ্টির হাত থেকে বাঁচা যায় এবং হজম, পরিপাক ও দেহের উপকার বেশি হয়।’ (মুসলিম, হাদিস: ২০২৮)
বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান না করা
কলসি, জগ বা এ জাতীয় বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান করা উচিত নয়। মহানবী (সা.) এভাবে পান করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি: হাদিস: ৫৬২৭ ও ৫৬২৯; মুসলিম, হাদিস: ১৬০৯)
আঙুল ও প্লেট চেটে খাওয়া
খাবার গ্রহণের পর আঙুল ও প্লেট চেটে খাওয়ার কথা বলেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ খাবার খেলে আঙুল চেটে না খেয়ে হাত মুছবে না। কারণ সে জানে না, কোন খাবারে বরকত আছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৩৮০৯; মুসলিম, হাদিস: ২০৩৩)
অপ্রয়োজনীয় আলাপ না করা
খাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কথা বলতে অসুবিধা নেই। খাবারের মেন্যু নিয়ে আলাপ করতেও সমস্যা নেই। বরং মহানবী (সা.) এমনটি করেছেন। তবে অহেতুক গল্পগুজব এড়িয়ে যাওয়া উচিত। (বুখারি, হাদিস: ৩৩৪০; মুসলিম, হাদিস: ১৯৪)
খাবার শেষে কুলি করা
খাবার শেষে কুলি করে মুখের ভেতর পরিষ্কার করে নেওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) খাবার শেষে কুলি করতেন। (বুখারি, হাদিস: ৫৩৯০)
পরিবেশনকারী সবার শেষে খাওয়া
যে ব্যক্তি খাবার পরিবেশন করবেন, তাঁর জন্য মুস্তাহাব হলো, তিনি সবার শেষে খাবেন। মহানবী (সা.) এমনটি করেছেন এবং বলেছেন, ‘যে লোকদের পানি পান করায়, সে যেন সবার শেষে পান করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৮১)
একাকী না খেয়ে একত্রে খাওয়া
একাকী না খেয়ে একাধিক লোক একত্রে খাওয়া ভালো। মহানবী (সা.) বলেন, ‘একজনের খাবার দুই জনের জন্য, দুজনের খাবার চার জনের জন্য এবং চার জনের খাবার আট জনের জন্য যথেষ্ট।’ (মুসলিম, হাদিস: ৫৪৮৯; তিরমিজি, হাদিস: ১৮২০; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৫৪)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা একসঙ্গে খাও এবং পৃথক পৃথক খেয়ো না। কারণ জামাতের সঙ্গে খাওয়ায় বরকত আছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৮৭)
খাওয়ার সময় কেউ এলে তাঁকে ডাকা
খাওয়ার সময় বাইরে থেকে কেউ এলে তাঁকে খাবারের দস্তরখানে ডাকা মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৯৯)
খাওয়ার আগে যাচাই করা
খাওয়ার আগে হালাল-হারাম যাচাই করা সুন্নত। খাবারের উৎস সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) খাবার সম্পর্কে না জেনে তা গ্রহণ করতেন না। (বুখারি, হাদিস: ৫৩৯১)
পরিচারকদের সঙ্গে নিয়ে খাওয়া
খাবার প্রস্তুতকারী পরিচারককে সঙ্গে নিয়ে খাওয়া সুন্নত। তা সম্ভব না হলে খাবারের ভালো অংশ থেকে তাঁর জন্য রেখে দেওয়া উচিত। (বুখারি, হাদিস: ৫৪৬০; মুসলিম, হাদিস: ১৬৬৩)
দোয়া পড়া
খাবার খাওয়া শেষ হলে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করা উচিত। রাসুল (সা.) খাবার শেষে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাতেন। দোয়া পড়তেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) খাওয়া শেষে এই দোয়া পাঠ করতেন।
الْحَمْدُ لله الَّذِي أَطْعَمَنَا، وَسَقَانَا، وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আতআমানা, ওয়াসাকানা, অজাআলানা মুসলিমিন।
অর্থ: সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং মুসলিম বানিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৫০)
আল্লাহ তাআলা আমাদের খাবার গ্রহণের সুন্নত ও আদবগুলো পালন করার তাওফিক দিন।

ইসলাম উন্নত জীবনের পথ দেখায়। চালচলন, কথাবার্তা, খাওয়া-দাওয়াসহ জীবনের সব ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) উম্মতকে উত্তম শিষ্টাচার শিখিয়েছেন। আর প্রকৃত মুসলিমরা যুগ যুগ ধরে তা মান্য করে আসছে। আজ আমরা মহানবী (সা.)-এর খাবার গ্রহণের সুন্নত ও আদবগুলো জানব।
আল্লাহর নামে শুরু করা
রাসুল (সা.) খাওয়ার শুরুতে সব সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতেন এবং তাঁর সঙ্গীদেরও তা বলতে উৎসাহিত করতেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে এবং ডান হাতে খাবার খাও। এবং তোমার দিক থেকে খাও।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৬৭; তিরমিজি, হাদিস: ১৯১৩)। অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘যখন তোমরা খাবার খেতে শুরু করো, তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বলো— বিসমিল্লাহি আওওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু। (রিয়াজুস সালেহিন: ৭২৯)
সোনা-রুপার পাত্রে না খাওয়া
সোনা-রুপার পাত্রে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘তোমরা সোনা-রুপার পাত্রে পানাহার কোরো না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৩৩; মুসলিম, হাদিস: ২০৬৭)
খাওয়ার আগে-পরে হাত ধোয়া
খাওয়ার আগে হাত ধোয়া মুস্তাহাব। খাওয়ার পরে হাত ধোয়া সুন্নত। (তুহফাতুল আহওয়াজি: ৫ / ৪৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৭৪৮৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪৯৩)
ডান হাতে খাওয়া
রাসুল (সা.) আজীবন ডান হাত দিয়ে খাবার খেয়েছেন এবং বাঁ হাত দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দিয়ে পানাহার কোরো না। কেননা, শয়তান বাম হাতে পানাহার করে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৯১২)
বসে খাওয়া
বসে পানাহার করাই মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন দাঁড়িয়ে পান না করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ২০২৬)
মাটিতে বসে খাওয়া
মহানবী (সা.) মাটির ওপর বসে খাবার খেতেন। (শুআবুল ইমান, হাদিস: ৭৮৪৩)। মাটির ওপর বসে খাওয়ার অর্থ—সমতল স্থানে খাওয়া এবং পাত্র ওপরে রেখে না খাওয়া।
তিন আঙুলে খাওয়া
শুকনো খাবার তিন আঙুলে খাওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) শুকনো খাবার খাওয়ার সময় বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল ব্যবহার করতেন। (মুসলিম, হাদিস: ২০৩২)। তবে অসুবিধা হলে সব আঙুল ব্যবহার করা যাবে।
দস্তরখান ব্যবহার করা
খাবার পড়ে গেলে তুলে খাওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। এই সুন্নত আদায়ের জন্য আরেকটি সহায়ক আদব হলো দস্তরখান বিছানো। নবী (সা.) চামড়ার দস্তরখানায় খাবার খেতেন। (বুখারি, হাদিস: ৫৪১৫)। দস্তরখানা পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খাওয়া যায়।
খাওয়ার সময় বিনয়ী হওয়া
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করে বিনয়ের সঙ্গে খাওয়া উচিত। মহানবী (সা.) বলতেন, ‘দাসের মতো খাই, দাসের মতো বসি।’ (শুআবুল ইমান, হাদিস: ৫৫৭২)
উপুড় হয়ে শুয়ে না খাওয়া
উপুড় হয়ে শুয়ে খাওয়া আদবের খেলাপ। মহানবী (সা.) উপুড় হয়ে খেতে নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৩৭০; আবু দাউদ, হাদিস: ৩৭৭৪)
প্লেটের একপাশ থেকে খাওয়া
খাবার প্লেটের এক পাশ থেকে খাওয়া সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘খাবারের মধ্যখানে বরকত নাজিল হয়। তোমরা একপাশ থেকে খাও। মধ্যখান থেকে নয়।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৮০৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৭৭)
পড়ে গেলে উঠিয়ে খাওয়া
খাওয়ার সময় কিছু পড়ে গেলে তা উঠিয়ে ময়লা পরিষ্কার করে খাওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) এমনটি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৪২১৮; মুসলিম, হাদিস: ২০৩৪)
হেলান না দেওয়া
কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে খেতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। আবু হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-এর দরবারে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, ‘আমি হেলান দেওয়া অবস্থায় কোনো কিছু খাই না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৯০; তিরমিজি, হাদিস: ১৯৮৬)
খাবারের দোষ না ধরা
রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষত্রুটি ধরতেন না। তাঁর পছন্দ হলে খেতেন আর অপছন্দ হলে ত্যাগ করতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৯৮, ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৩৮২)
খাবারে ফুঁক না দেওয়া
খাবারের মধ্যে ফুঁক দেওয়া অনেক রোগ সৃষ্টির কারণ। রাসুল (সা.) খাবারে ফুঁ দিতে নিষেধ করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কখনো খাবারে ফুঁক দিতেন না। ফুঁক দিতেন না কোনো কিছু পানকালেও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৪১৩)
পরিমিত খাওয়া
ভোজনবিলাসিতায় নিরুৎসাহিত করে ইসলাম। অতিভোজন নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো পাত্র মানুষ পূর্ণ করে না। মানুষের জন্য পিঠ সোজা রাখার মতো খাওয়াই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি খেতে হলে সে যেন পেটের তিন ভাগের এক ভাগ খাবারের জন্য, এক ভাগ পানির জন্য এবং এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বরাদ্দ রাখে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮০; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৩৪৯)
যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাক
ঘরে সব সময় ভালো খাবার থাকে না। তাই যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। (মুসলিম, হাদিস: ২০৫২)
একসঙ্গে বেশি খাবার মুখে না দেওয়া
খাবার সামনে এলে একসঙ্গে অনেক খাবার মুখে পুরে না দেওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। খাওয়ার সময় কয়েকটি খেজুর একসঙ্গে মুখে পুরে দিতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। (মুসলিম, হাদিস: ২০৪৫; বুখারি, হাদিস: ২৪৫৫)
খাবার অপচয় না করা
খাবার অপচয় করা কঠিন গুনাহ। কোরআনে আল্লাহ তাআলা অপচয়কারীকে ‘শয়তানের ভাই’ আখ্যা দিয়েছেন। অন্য আয়াতে বলেছেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো; কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা: আরাফ, আয়াত: ৩১)
প্রতিযোগিতা করে না খাওয়া
একত্রে খাবার খাওয়ার সময় সবার চেয়ে বেশি খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। বরং সবার চেয়ে কম খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে সবার সমান খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। আর খাওয়ার সময় ভালো জিনিসটি আগেভাগে তুলে না খাওয়া এবং বড় বড় লোকমা মুখে পুরে না দেওয়া। মহানবী (সা.) সঙ্গীর অনুমতি ছাড়া একসঙ্গে দুটি করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ২৪৫৫; মুসলিম, হাদিস: ২০৪৫)
পানীয় তিন শ্বাসে পান করা
পানীয় এক নিশ্বাসে পান না করে তিন শ্বাসে পান করা সুন্নত। পাত্রের ভেতরে নিশ্বাস ফেলা উচিত নয়। মহানবী (সা.) তিন শ্বাসে পানি পান করতেন এবং বলতেন, ‘এতে বেশি তৃপ্তি আসে, পিপাসার কষ্ট থেকে অথবা কোনো ব্যাধি সৃষ্টির হাত থেকে বাঁচা যায় এবং হজম, পরিপাক ও দেহের উপকার বেশি হয়।’ (মুসলিম, হাদিস: ২০২৮)
বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান না করা
কলসি, জগ বা এ জাতীয় বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান করা উচিত নয়। মহানবী (সা.) এভাবে পান করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি: হাদিস: ৫৬২৭ ও ৫৬২৯; মুসলিম, হাদিস: ১৬০৯)
আঙুল ও প্লেট চেটে খাওয়া
খাবার গ্রহণের পর আঙুল ও প্লেট চেটে খাওয়ার কথা বলেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ খাবার খেলে আঙুল চেটে না খেয়ে হাত মুছবে না। কারণ সে জানে না, কোন খাবারে বরকত আছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৩৮০৯; মুসলিম, হাদিস: ২০৩৩)
অপ্রয়োজনীয় আলাপ না করা
খাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কথা বলতে অসুবিধা নেই। খাবারের মেন্যু নিয়ে আলাপ করতেও সমস্যা নেই। বরং মহানবী (সা.) এমনটি করেছেন। তবে অহেতুক গল্পগুজব এড়িয়ে যাওয়া উচিত। (বুখারি, হাদিস: ৩৩৪০; মুসলিম, হাদিস: ১৯৪)
খাবার শেষে কুলি করা
খাবার শেষে কুলি করে মুখের ভেতর পরিষ্কার করে নেওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) খাবার শেষে কুলি করতেন। (বুখারি, হাদিস: ৫৩৯০)
পরিবেশনকারী সবার শেষে খাওয়া
যে ব্যক্তি খাবার পরিবেশন করবেন, তাঁর জন্য মুস্তাহাব হলো, তিনি সবার শেষে খাবেন। মহানবী (সা.) এমনটি করেছেন এবং বলেছেন, ‘যে লোকদের পানি পান করায়, সে যেন সবার শেষে পান করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৮১)
একাকী না খেয়ে একত্রে খাওয়া
একাকী না খেয়ে একাধিক লোক একত্রে খাওয়া ভালো। মহানবী (সা.) বলেন, ‘একজনের খাবার দুই জনের জন্য, দুজনের খাবার চার জনের জন্য এবং চার জনের খাবার আট জনের জন্য যথেষ্ট।’ (মুসলিম, হাদিস: ৫৪৮৯; তিরমিজি, হাদিস: ১৮২০; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৫৪)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা একসঙ্গে খাও এবং পৃথক পৃথক খেয়ো না। কারণ জামাতের সঙ্গে খাওয়ায় বরকত আছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৮৭)
খাওয়ার সময় কেউ এলে তাঁকে ডাকা
খাওয়ার সময় বাইরে থেকে কেউ এলে তাঁকে খাবারের দস্তরখানে ডাকা মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৯৯)
খাওয়ার আগে যাচাই করা
খাওয়ার আগে হালাল-হারাম যাচাই করা সুন্নত। খাবারের উৎস সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) খাবার সম্পর্কে না জেনে তা গ্রহণ করতেন না। (বুখারি, হাদিস: ৫৩৯১)
পরিচারকদের সঙ্গে নিয়ে খাওয়া
খাবার প্রস্তুতকারী পরিচারককে সঙ্গে নিয়ে খাওয়া সুন্নত। তা সম্ভব না হলে খাবারের ভালো অংশ থেকে তাঁর জন্য রেখে দেওয়া উচিত। (বুখারি, হাদিস: ৫৪৬০; মুসলিম, হাদিস: ১৬৬৩)
দোয়া পড়া
খাবার খাওয়া শেষ হলে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করা উচিত। রাসুল (সা.) খাবার শেষে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাতেন। দোয়া পড়তেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) খাওয়া শেষে এই দোয়া পাঠ করতেন।
الْحَمْدُ لله الَّذِي أَطْعَمَنَا، وَسَقَانَا، وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আতআমানা, ওয়াসাকানা, অজাআলানা মুসলিমিন।
অর্থ: সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং মুসলিম বানিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৫০)
আল্লাহ তাআলা আমাদের খাবার গ্রহণের সুন্নত ও আদবগুলো পালন করার তাওফিক দিন।
ধর্ম ও জীবন ডেস্ক

ইসলাম উন্নত জীবনের পথ দেখায়। চালচলন, কথাবার্তা, খাওয়া-দাওয়াসহ জীবনের সব ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) উম্মতকে উত্তম শিষ্টাচার শিখিয়েছেন। আর প্রকৃত মুসলিমরা যুগ যুগ ধরে তা মান্য করে আসছে। আজ আমরা মহানবী (সা.)-এর খাবার গ্রহণের সুন্নত ও আদবগুলো জানব।
আল্লাহর নামে শুরু করা
রাসুল (সা.) খাওয়ার শুরুতে সব সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতেন এবং তাঁর সঙ্গীদেরও তা বলতে উৎসাহিত করতেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে এবং ডান হাতে খাবার খাও। এবং তোমার দিক থেকে খাও।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৬৭; তিরমিজি, হাদিস: ১৯১৩)। অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘যখন তোমরা খাবার খেতে শুরু করো, তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বলো— বিসমিল্লাহি আওওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু। (রিয়াজুস সালেহিন: ৭২৯)
সোনা-রুপার পাত্রে না খাওয়া
সোনা-রুপার পাত্রে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘তোমরা সোনা-রুপার পাত্রে পানাহার কোরো না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৩৩; মুসলিম, হাদিস: ২০৬৭)
খাওয়ার আগে-পরে হাত ধোয়া
খাওয়ার আগে হাত ধোয়া মুস্তাহাব। খাওয়ার পরে হাত ধোয়া সুন্নত। (তুহফাতুল আহওয়াজি: ৫ / ৪৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৭৪৮৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪৯৩)
ডান হাতে খাওয়া
রাসুল (সা.) আজীবন ডান হাত দিয়ে খাবার খেয়েছেন এবং বাঁ হাত দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দিয়ে পানাহার কোরো না। কেননা, শয়তান বাম হাতে পানাহার করে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৯১২)
বসে খাওয়া
বসে পানাহার করাই মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন দাঁড়িয়ে পান না করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ২০২৬)
মাটিতে বসে খাওয়া
মহানবী (সা.) মাটির ওপর বসে খাবার খেতেন। (শুআবুল ইমান, হাদিস: ৭৮৪৩)। মাটির ওপর বসে খাওয়ার অর্থ—সমতল স্থানে খাওয়া এবং পাত্র ওপরে রেখে না খাওয়া।
তিন আঙুলে খাওয়া
শুকনো খাবার তিন আঙুলে খাওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) শুকনো খাবার খাওয়ার সময় বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল ব্যবহার করতেন। (মুসলিম, হাদিস: ২০৩২)। তবে অসুবিধা হলে সব আঙুল ব্যবহার করা যাবে।
দস্তরখান ব্যবহার করা
খাবার পড়ে গেলে তুলে খাওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। এই সুন্নত আদায়ের জন্য আরেকটি সহায়ক আদব হলো দস্তরখান বিছানো। নবী (সা.) চামড়ার দস্তরখানায় খাবার খেতেন। (বুখারি, হাদিস: ৫৪১৫)। দস্তরখানা পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খাওয়া যায়।
খাওয়ার সময় বিনয়ী হওয়া
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করে বিনয়ের সঙ্গে খাওয়া উচিত। মহানবী (সা.) বলতেন, ‘দাসের মতো খাই, দাসের মতো বসি।’ (শুআবুল ইমান, হাদিস: ৫৫৭২)
উপুড় হয়ে শুয়ে না খাওয়া
উপুড় হয়ে শুয়ে খাওয়া আদবের খেলাপ। মহানবী (সা.) উপুড় হয়ে খেতে নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৩৭০; আবু দাউদ, হাদিস: ৩৭৭৪)
প্লেটের একপাশ থেকে খাওয়া
খাবার প্লেটের এক পাশ থেকে খাওয়া সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘খাবারের মধ্যখানে বরকত নাজিল হয়। তোমরা একপাশ থেকে খাও। মধ্যখান থেকে নয়।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৮০৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৭৭)
পড়ে গেলে উঠিয়ে খাওয়া
খাওয়ার সময় কিছু পড়ে গেলে তা উঠিয়ে ময়লা পরিষ্কার করে খাওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) এমনটি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৪২১৮; মুসলিম, হাদিস: ২০৩৪)
হেলান না দেওয়া
কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে খেতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। আবু হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-এর দরবারে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, ‘আমি হেলান দেওয়া অবস্থায় কোনো কিছু খাই না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৯০; তিরমিজি, হাদিস: ১৯৮৬)
খাবারের দোষ না ধরা
রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষত্রুটি ধরতেন না। তাঁর পছন্দ হলে খেতেন আর অপছন্দ হলে ত্যাগ করতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৯৮, ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৩৮২)
খাবারে ফুঁক না দেওয়া
খাবারের মধ্যে ফুঁক দেওয়া অনেক রোগ সৃষ্টির কারণ। রাসুল (সা.) খাবারে ফুঁ দিতে নিষেধ করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কখনো খাবারে ফুঁক দিতেন না। ফুঁক দিতেন না কোনো কিছু পানকালেও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৪১৩)
পরিমিত খাওয়া
ভোজনবিলাসিতায় নিরুৎসাহিত করে ইসলাম। অতিভোজন নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো পাত্র মানুষ পূর্ণ করে না। মানুষের জন্য পিঠ সোজা রাখার মতো খাওয়াই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি খেতে হলে সে যেন পেটের তিন ভাগের এক ভাগ খাবারের জন্য, এক ভাগ পানির জন্য এবং এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বরাদ্দ রাখে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮০; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৩৪৯)
যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাক
ঘরে সব সময় ভালো খাবার থাকে না। তাই যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। (মুসলিম, হাদিস: ২০৫২)
একসঙ্গে বেশি খাবার মুখে না দেওয়া
খাবার সামনে এলে একসঙ্গে অনেক খাবার মুখে পুরে না দেওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। খাওয়ার সময় কয়েকটি খেজুর একসঙ্গে মুখে পুরে দিতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। (মুসলিম, হাদিস: ২০৪৫; বুখারি, হাদিস: ২৪৫৫)
খাবার অপচয় না করা
খাবার অপচয় করা কঠিন গুনাহ। কোরআনে আল্লাহ তাআলা অপচয়কারীকে ‘শয়তানের ভাই’ আখ্যা দিয়েছেন। অন্য আয়াতে বলেছেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো; কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা: আরাফ, আয়াত: ৩১)
প্রতিযোগিতা করে না খাওয়া
একত্রে খাবার খাওয়ার সময় সবার চেয়ে বেশি খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। বরং সবার চেয়ে কম খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে সবার সমান খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। আর খাওয়ার সময় ভালো জিনিসটি আগেভাগে তুলে না খাওয়া এবং বড় বড় লোকমা মুখে পুরে না দেওয়া। মহানবী (সা.) সঙ্গীর অনুমতি ছাড়া একসঙ্গে দুটি করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ২৪৫৫; মুসলিম, হাদিস: ২০৪৫)
পানীয় তিন শ্বাসে পান করা
পানীয় এক নিশ্বাসে পান না করে তিন শ্বাসে পান করা সুন্নত। পাত্রের ভেতরে নিশ্বাস ফেলা উচিত নয়। মহানবী (সা.) তিন শ্বাসে পানি পান করতেন এবং বলতেন, ‘এতে বেশি তৃপ্তি আসে, পিপাসার কষ্ট থেকে অথবা কোনো ব্যাধি সৃষ্টির হাত থেকে বাঁচা যায় এবং হজম, পরিপাক ও দেহের উপকার বেশি হয়।’ (মুসলিম, হাদিস: ২০২৮)
বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান না করা
কলসি, জগ বা এ জাতীয় বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান করা উচিত নয়। মহানবী (সা.) এভাবে পান করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি: হাদিস: ৫৬২৭ ও ৫৬২৯; মুসলিম, হাদিস: ১৬০৯)
আঙুল ও প্লেট চেটে খাওয়া
খাবার গ্রহণের পর আঙুল ও প্লেট চেটে খাওয়ার কথা বলেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ খাবার খেলে আঙুল চেটে না খেয়ে হাত মুছবে না। কারণ সে জানে না, কোন খাবারে বরকত আছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৩৮০৯; মুসলিম, হাদিস: ২০৩৩)
অপ্রয়োজনীয় আলাপ না করা
খাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কথা বলতে অসুবিধা নেই। খাবারের মেন্যু নিয়ে আলাপ করতেও সমস্যা নেই। বরং মহানবী (সা.) এমনটি করেছেন। তবে অহেতুক গল্পগুজব এড়িয়ে যাওয়া উচিত। (বুখারি, হাদিস: ৩৩৪০; মুসলিম, হাদিস: ১৯৪)
খাবার শেষে কুলি করা
খাবার শেষে কুলি করে মুখের ভেতর পরিষ্কার করে নেওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) খাবার শেষে কুলি করতেন। (বুখারি, হাদিস: ৫৩৯০)
পরিবেশনকারী সবার শেষে খাওয়া
যে ব্যক্তি খাবার পরিবেশন করবেন, তাঁর জন্য মুস্তাহাব হলো, তিনি সবার শেষে খাবেন। মহানবী (সা.) এমনটি করেছেন এবং বলেছেন, ‘যে লোকদের পানি পান করায়, সে যেন সবার শেষে পান করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৮১)
একাকী না খেয়ে একত্রে খাওয়া
একাকী না খেয়ে একাধিক লোক একত্রে খাওয়া ভালো। মহানবী (সা.) বলেন, ‘একজনের খাবার দুই জনের জন্য, দুজনের খাবার চার জনের জন্য এবং চার জনের খাবার আট জনের জন্য যথেষ্ট।’ (মুসলিম, হাদিস: ৫৪৮৯; তিরমিজি, হাদিস: ১৮২০; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৫৪)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা একসঙ্গে খাও এবং পৃথক পৃথক খেয়ো না। কারণ জামাতের সঙ্গে খাওয়ায় বরকত আছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৮৭)
খাওয়ার সময় কেউ এলে তাঁকে ডাকা
খাওয়ার সময় বাইরে থেকে কেউ এলে তাঁকে খাবারের দস্তরখানে ডাকা মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৯৯)
খাওয়ার আগে যাচাই করা
খাওয়ার আগে হালাল-হারাম যাচাই করা সুন্নত। খাবারের উৎস সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) খাবার সম্পর্কে না জেনে তা গ্রহণ করতেন না। (বুখারি, হাদিস: ৫৩৯১)
পরিচারকদের সঙ্গে নিয়ে খাওয়া
খাবার প্রস্তুতকারী পরিচারককে সঙ্গে নিয়ে খাওয়া সুন্নত। তা সম্ভব না হলে খাবারের ভালো অংশ থেকে তাঁর জন্য রেখে দেওয়া উচিত। (বুখারি, হাদিস: ৫৪৬০; মুসলিম, হাদিস: ১৬৬৩)
দোয়া পড়া
খাবার খাওয়া শেষ হলে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করা উচিত। রাসুল (সা.) খাবার শেষে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাতেন। দোয়া পড়তেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) খাওয়া শেষে এই দোয়া পাঠ করতেন।
الْحَمْدُ لله الَّذِي أَطْعَمَنَا، وَسَقَانَا، وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আতআমানা, ওয়াসাকানা, অজাআলানা মুসলিমিন।
অর্থ: সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং মুসলিম বানিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৫০)
আল্লাহ তাআলা আমাদের খাবার গ্রহণের সুন্নত ও আদবগুলো পালন করার তাওফিক দিন।

ইসলাম উন্নত জীবনের পথ দেখায়। চালচলন, কথাবার্তা, খাওয়া-দাওয়াসহ জীবনের সব ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) উম্মতকে উত্তম শিষ্টাচার শিখিয়েছেন। আর প্রকৃত মুসলিমরা যুগ যুগ ধরে তা মান্য করে আসছে। আজ আমরা মহানবী (সা.)-এর খাবার গ্রহণের সুন্নত ও আদবগুলো জানব।
আল্লাহর নামে শুরু করা
রাসুল (সা.) খাওয়ার শুরুতে সব সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতেন এবং তাঁর সঙ্গীদেরও তা বলতে উৎসাহিত করতেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে এবং ডান হাতে খাবার খাও। এবং তোমার দিক থেকে খাও।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৬৭; তিরমিজি, হাদিস: ১৯১৩)। অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘যখন তোমরা খাবার খেতে শুরু করো, তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বলো— বিসমিল্লাহি আওওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু। (রিয়াজুস সালেহিন: ৭২৯)
সোনা-রুপার পাত্রে না খাওয়া
সোনা-রুপার পাত্রে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘তোমরা সোনা-রুপার পাত্রে পানাহার কোরো না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৩৩; মুসলিম, হাদিস: ২০৬৭)
খাওয়ার আগে-পরে হাত ধোয়া
খাওয়ার আগে হাত ধোয়া মুস্তাহাব। খাওয়ার পরে হাত ধোয়া সুন্নত। (তুহফাতুল আহওয়াজি: ৫ / ৪৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৭৪৮৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪৯৩)
ডান হাতে খাওয়া
রাসুল (সা.) আজীবন ডান হাত দিয়ে খাবার খেয়েছেন এবং বাঁ হাত দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দিয়ে পানাহার কোরো না। কেননা, শয়তান বাম হাতে পানাহার করে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৯১২)
বসে খাওয়া
বসে পানাহার করাই মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন দাঁড়িয়ে পান না করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ২০২৬)
মাটিতে বসে খাওয়া
মহানবী (সা.) মাটির ওপর বসে খাবার খেতেন। (শুআবুল ইমান, হাদিস: ৭৮৪৩)। মাটির ওপর বসে খাওয়ার অর্থ—সমতল স্থানে খাওয়া এবং পাত্র ওপরে রেখে না খাওয়া।
তিন আঙুলে খাওয়া
শুকনো খাবার তিন আঙুলে খাওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) শুকনো খাবার খাওয়ার সময় বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল ব্যবহার করতেন। (মুসলিম, হাদিস: ২০৩২)। তবে অসুবিধা হলে সব আঙুল ব্যবহার করা যাবে।
দস্তরখান ব্যবহার করা
খাবার পড়ে গেলে তুলে খাওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। এই সুন্নত আদায়ের জন্য আরেকটি সহায়ক আদব হলো দস্তরখান বিছানো। নবী (সা.) চামড়ার দস্তরখানায় খাবার খেতেন। (বুখারি, হাদিস: ৫৪১৫)। দস্তরখানা পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খাওয়া যায়।
খাওয়ার সময় বিনয়ী হওয়া
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করে বিনয়ের সঙ্গে খাওয়া উচিত। মহানবী (সা.) বলতেন, ‘দাসের মতো খাই, দাসের মতো বসি।’ (শুআবুল ইমান, হাদিস: ৫৫৭২)
উপুড় হয়ে শুয়ে না খাওয়া
উপুড় হয়ে শুয়ে খাওয়া আদবের খেলাপ। মহানবী (সা.) উপুড় হয়ে খেতে নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৩৭০; আবু দাউদ, হাদিস: ৩৭৭৪)
প্লেটের একপাশ থেকে খাওয়া
খাবার প্লেটের এক পাশ থেকে খাওয়া সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘খাবারের মধ্যখানে বরকত নাজিল হয়। তোমরা একপাশ থেকে খাও। মধ্যখান থেকে নয়।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৮০৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৭৭)
পড়ে গেলে উঠিয়ে খাওয়া
খাওয়ার সময় কিছু পড়ে গেলে তা উঠিয়ে ময়লা পরিষ্কার করে খাওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) এমনটি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৪২১৮; মুসলিম, হাদিস: ২০৩৪)
হেলান না দেওয়া
কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে খেতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। আবু হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-এর দরবারে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, ‘আমি হেলান দেওয়া অবস্থায় কোনো কিছু খাই না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৯০; তিরমিজি, হাদিস: ১৯৮৬)
খাবারের দোষ না ধরা
রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষত্রুটি ধরতেন না। তাঁর পছন্দ হলে খেতেন আর অপছন্দ হলে ত্যাগ করতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৯৮, ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৩৮২)
খাবারে ফুঁক না দেওয়া
খাবারের মধ্যে ফুঁক দেওয়া অনেক রোগ সৃষ্টির কারণ। রাসুল (সা.) খাবারে ফুঁ দিতে নিষেধ করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কখনো খাবারে ফুঁক দিতেন না। ফুঁক দিতেন না কোনো কিছু পানকালেও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৪১৩)
পরিমিত খাওয়া
ভোজনবিলাসিতায় নিরুৎসাহিত করে ইসলাম। অতিভোজন নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো পাত্র মানুষ পূর্ণ করে না। মানুষের জন্য পিঠ সোজা রাখার মতো খাওয়াই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি খেতে হলে সে যেন পেটের তিন ভাগের এক ভাগ খাবারের জন্য, এক ভাগ পানির জন্য এবং এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বরাদ্দ রাখে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮০; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৩৪৯)
যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাক
ঘরে সব সময় ভালো খাবার থাকে না। তাই যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। (মুসলিম, হাদিস: ২০৫২)
একসঙ্গে বেশি খাবার মুখে না দেওয়া
খাবার সামনে এলে একসঙ্গে অনেক খাবার মুখে পুরে না দেওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। খাওয়ার সময় কয়েকটি খেজুর একসঙ্গে মুখে পুরে দিতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। (মুসলিম, হাদিস: ২০৪৫; বুখারি, হাদিস: ২৪৫৫)
খাবার অপচয় না করা
খাবার অপচয় করা কঠিন গুনাহ। কোরআনে আল্লাহ তাআলা অপচয়কারীকে ‘শয়তানের ভাই’ আখ্যা দিয়েছেন। অন্য আয়াতে বলেছেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো; কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা: আরাফ, আয়াত: ৩১)
প্রতিযোগিতা করে না খাওয়া
একত্রে খাবার খাওয়ার সময় সবার চেয়ে বেশি খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। বরং সবার চেয়ে কম খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে সবার সমান খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। আর খাওয়ার সময় ভালো জিনিসটি আগেভাগে তুলে না খাওয়া এবং বড় বড় লোকমা মুখে পুরে না দেওয়া। মহানবী (সা.) সঙ্গীর অনুমতি ছাড়া একসঙ্গে দুটি করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ২৪৫৫; মুসলিম, হাদিস: ২০৪৫)
পানীয় তিন শ্বাসে পান করা
পানীয় এক নিশ্বাসে পান না করে তিন শ্বাসে পান করা সুন্নত। পাত্রের ভেতরে নিশ্বাস ফেলা উচিত নয়। মহানবী (সা.) তিন শ্বাসে পানি পান করতেন এবং বলতেন, ‘এতে বেশি তৃপ্তি আসে, পিপাসার কষ্ট থেকে অথবা কোনো ব্যাধি সৃষ্টির হাত থেকে বাঁচা যায় এবং হজম, পরিপাক ও দেহের উপকার বেশি হয়।’ (মুসলিম, হাদিস: ২০২৮)
বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান না করা
কলসি, জগ বা এ জাতীয় বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান করা উচিত নয়। মহানবী (সা.) এভাবে পান করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি: হাদিস: ৫৬২৭ ও ৫৬২৯; মুসলিম, হাদিস: ১৬০৯)
আঙুল ও প্লেট চেটে খাওয়া
খাবার গ্রহণের পর আঙুল ও প্লেট চেটে খাওয়ার কথা বলেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ খাবার খেলে আঙুল চেটে না খেয়ে হাত মুছবে না। কারণ সে জানে না, কোন খাবারে বরকত আছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৩৮০৯; মুসলিম, হাদিস: ২০৩৩)
অপ্রয়োজনীয় আলাপ না করা
খাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কথা বলতে অসুবিধা নেই। খাবারের মেন্যু নিয়ে আলাপ করতেও সমস্যা নেই। বরং মহানবী (সা.) এমনটি করেছেন। তবে অহেতুক গল্পগুজব এড়িয়ে যাওয়া উচিত। (বুখারি, হাদিস: ৩৩৪০; মুসলিম, হাদিস: ১৯৪)
খাবার শেষে কুলি করা
খাবার শেষে কুলি করে মুখের ভেতর পরিষ্কার করে নেওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) খাবার শেষে কুলি করতেন। (বুখারি, হাদিস: ৫৩৯০)
পরিবেশনকারী সবার শেষে খাওয়া
যে ব্যক্তি খাবার পরিবেশন করবেন, তাঁর জন্য মুস্তাহাব হলো, তিনি সবার শেষে খাবেন। মহানবী (সা.) এমনটি করেছেন এবং বলেছেন, ‘যে লোকদের পানি পান করায়, সে যেন সবার শেষে পান করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৮১)
একাকী না খেয়ে একত্রে খাওয়া
একাকী না খেয়ে একাধিক লোক একত্রে খাওয়া ভালো। মহানবী (সা.) বলেন, ‘একজনের খাবার দুই জনের জন্য, দুজনের খাবার চার জনের জন্য এবং চার জনের খাবার আট জনের জন্য যথেষ্ট।’ (মুসলিম, হাদিস: ৫৪৮৯; তিরমিজি, হাদিস: ১৮২০; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৫৪)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা একসঙ্গে খাও এবং পৃথক পৃথক খেয়ো না। কারণ জামাতের সঙ্গে খাওয়ায় বরকত আছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৮৭)
খাওয়ার সময় কেউ এলে তাঁকে ডাকা
খাওয়ার সময় বাইরে থেকে কেউ এলে তাঁকে খাবারের দস্তরখানে ডাকা মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৯৯)
খাওয়ার আগে যাচাই করা
খাওয়ার আগে হালাল-হারাম যাচাই করা সুন্নত। খাবারের উৎস সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) খাবার সম্পর্কে না জেনে তা গ্রহণ করতেন না। (বুখারি, হাদিস: ৫৩৯১)
পরিচারকদের সঙ্গে নিয়ে খাওয়া
খাবার প্রস্তুতকারী পরিচারককে সঙ্গে নিয়ে খাওয়া সুন্নত। তা সম্ভব না হলে খাবারের ভালো অংশ থেকে তাঁর জন্য রেখে দেওয়া উচিত। (বুখারি, হাদিস: ৫৪৬০; মুসলিম, হাদিস: ১৬৬৩)
দোয়া পড়া
খাবার খাওয়া শেষ হলে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করা উচিত। রাসুল (সা.) খাবার শেষে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাতেন। দোয়া পড়তেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) খাওয়া শেষে এই দোয়া পাঠ করতেন।
الْحَمْدُ لله الَّذِي أَطْعَمَنَا، وَسَقَانَا، وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আতআমানা, ওয়াসাকানা, অজাআলানা মুসলিমিন।
অর্থ: সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং মুসলিম বানিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৫০)
আল্লাহ তাআলা আমাদের খাবার গ্রহণের সুন্নত ও আদবগুলো পালন করার তাওফিক দিন।

মানসিক অশান্তি থাকলে কোনো কাজেই মন বসে না। সারাক্ষণ অস্থিরতা বিরাজ করে। কাজে স্থিরতা আসার পূর্বশর্ত হলো মানসিক শান্তি। কোরআন-সুন্নাহয় এই অশান্তি বা অস্থিরতা ভাব দূর করার অনেক দোয়া রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
৭ ঘণ্টা আগে
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৪ ঘণ্টা আগে
‘হে ইমানদারগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দেব না, যা তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?’ এর পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তা এই যে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করবে—এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে!’
১ দিন আগে
বর্তমান সময়ের শিশুরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম প্রযুক্তি জ্ঞান, ইংরেজি শেখা, বিভিন্ন খেলায় পারদর্শিতা অর্জন ইত্যাদি। এসব বিষয় সম্পর্কে জানার যেমন দরকার আছে, তেমনি শিশুর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মচর্চার শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
১ দিন আগেমাহমুদ হাসান ফাহিম

মানসিক অশান্তি থাকলে কোনো কাজেই মন বসে না। সারাক্ষণ অস্থিরতা বিরাজ করে। কাজে স্থিরতা আসার পূর্বশর্ত হলো মানসিক শান্তি। কোরআন-সুন্নাহয় এই অশান্তি বা অস্থিরতা ভাব দূর করার অনেক দোয়া রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
১. ‘আল্লাহুম্মা রাহমাতাকা আরজু, ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি তারফাতা আইন, ওয়া আসলিহ লি শানি কুল্লাহু, লা ইলাহা ইল্লাহ আনতা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে রহমত (মনের প্রশান্তি) চাই। আপনি এক মুহূর্তও আমাকে নফসের ওপর ছেড়ে দিয়েন না। বরং আপনিই আমার সমস্ত বিষয় ঠিক করে দিন। আপনি ছাড়া (মনের অস্থিরতা ও বিপদ থেকে রক্ষাকারী) কোনো ইলাহ নেই।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৫০০২)
২. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আজিমুল হালিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদি ওয়া রাব্বুল আরশিল কারিম।’ অর্থ: ‘মহান, সহনশীল আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আরশের অধিপতি, মহান আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আসমান ও জমিনের রব এবং সম্মানিত আরশের রব আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। (সহিহ্ মুসলিম: ৬৬৭২)
৩. ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজান, ওয়াল আজযি ওয়াল কাসাল, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবন, ওয়া জিলাইদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশান থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই।’ (সহিহ্ বুখারি: ২৬৯৪)
৪. ‘আল্লাহু, আল্লাহু রাব্বি; লা উশরিকু বিহি শাইআ।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি আমার প্রভু, আল্লাহ। আমি আপনার সঙ্গে কাউকে শরিক করি না।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৫২৫)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কোনো কারণে মনে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে উল্লিখিত দোয়াগুলো পড়া। এতে মনের অস্থিরতা ও পেরেশান দূর হবে ইনশা আল্লাহ।
লেখক: মাদ্রাসাশিক্ষক, টঙ্গী, গাজীপুর

মানসিক অশান্তি থাকলে কোনো কাজেই মন বসে না। সারাক্ষণ অস্থিরতা বিরাজ করে। কাজে স্থিরতা আসার পূর্বশর্ত হলো মানসিক শান্তি। কোরআন-সুন্নাহয় এই অশান্তি বা অস্থিরতা ভাব দূর করার অনেক দোয়া রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
১. ‘আল্লাহুম্মা রাহমাতাকা আরজু, ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি তারফাতা আইন, ওয়া আসলিহ লি শানি কুল্লাহু, লা ইলাহা ইল্লাহ আনতা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে রহমত (মনের প্রশান্তি) চাই। আপনি এক মুহূর্তও আমাকে নফসের ওপর ছেড়ে দিয়েন না। বরং আপনিই আমার সমস্ত বিষয় ঠিক করে দিন। আপনি ছাড়া (মনের অস্থিরতা ও বিপদ থেকে রক্ষাকারী) কোনো ইলাহ নেই।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৫০০২)
২. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আজিমুল হালিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদি ওয়া রাব্বুল আরশিল কারিম।’ অর্থ: ‘মহান, সহনশীল আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আরশের অধিপতি, মহান আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আসমান ও জমিনের রব এবং সম্মানিত আরশের রব আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। (সহিহ্ মুসলিম: ৬৬৭২)
৩. ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজান, ওয়াল আজযি ওয়াল কাসাল, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবন, ওয়া জিলাইদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশান থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই।’ (সহিহ্ বুখারি: ২৬৯৪)
৪. ‘আল্লাহু, আল্লাহু রাব্বি; লা উশরিকু বিহি শাইআ।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি আমার প্রভু, আল্লাহ। আমি আপনার সঙ্গে কাউকে শরিক করি না।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৫২৫)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কোনো কারণে মনে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে উল্লিখিত দোয়াগুলো পড়া। এতে মনের অস্থিরতা ও পেরেশান দূর হবে ইনশা আল্লাহ।
লেখক: মাদ্রাসাশিক্ষক, টঙ্গী, গাজীপুর

চালচলন, কথাবার্তা, খাওয়া-দাওয়াসহ জীবনের সব ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) উম্মতকে উত্তম শিষ্টাচার শিখিয়েছেন। আর প্রকৃত মুসলিমরা যুগ যুগ ধরে তা মান্য করে আসছে।
১৬ নভেম্বর ২০২২
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৪ ঘণ্টা আগে
‘হে ইমানদারগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দেব না, যা তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?’ এর পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তা এই যে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করবে—এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে!’
১ দিন আগে
বর্তমান সময়ের শিশুরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম প্রযুক্তি জ্ঞান, ইংরেজি শেখা, বিভিন্ন খেলায় পারদর্শিতা অর্জন ইত্যাদি। এসব বিষয় সম্পর্কে জানার যেমন দরকার আছে, তেমনি শিশুর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মচর্চার শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
১ দিন আগেইসলাম ডেস্ক

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ১১ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
| নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
|---|---|---|
| তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ০৪: ৪৪ মিনিট |
| ফজর | ০৪: ৪৫ মিনিট | ০৬: ০০ মিনিট |
| জোহর | ১১: ৪৩ মিনিট | ০৩: ৪৫ মিনিট |
| আসর | ০৩: ৪৬ মিনিট | ০৫: ২২ মিনিট |
| মাগরিব | ০৫: ২৪ মিনিট | ০৬: ৩৮ মিনিট |
| এশা | ০৬: ৩৯ মিনিট | ০৪: ৪৪ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ১১ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
| নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
|---|---|---|
| তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ০৪: ৪৪ মিনিট |
| ফজর | ০৪: ৪৫ মিনিট | ০৬: ০০ মিনিট |
| জোহর | ১১: ৪৩ মিনিট | ০৩: ৪৫ মিনিট |
| আসর | ০৩: ৪৬ মিনিট | ০৫: ২২ মিনিট |
| মাগরিব | ০৫: ২৪ মিনিট | ০৬: ৩৮ মিনিট |
| এশা | ০৬: ৩৯ মিনিট | ০৪: ৪৪ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

চালচলন, কথাবার্তা, খাওয়া-দাওয়াসহ জীবনের সব ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) উম্মতকে উত্তম শিষ্টাচার শিখিয়েছেন। আর প্রকৃত মুসলিমরা যুগ যুগ ধরে তা মান্য করে আসছে।
১৬ নভেম্বর ২০২২
মানসিক অশান্তি থাকলে কোনো কাজেই মন বসে না। সারাক্ষণ অস্থিরতা বিরাজ করে। কাজে স্থিরতা আসার পূর্বশর্ত হলো মানসিক শান্তি। কোরআন-সুন্নাহয় এই অশান্তি বা অস্থিরতা ভাব দূর করার অনেক দোয়া রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
৭ ঘণ্টা আগে
‘হে ইমানদারগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দেব না, যা তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?’ এর পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তা এই যে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করবে—এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে!’
১ দিন আগে
বর্তমান সময়ের শিশুরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম প্রযুক্তি জ্ঞান, ইংরেজি শেখা, বিভিন্ন খেলায় পারদর্শিতা অর্জন ইত্যাদি। এসব বিষয় সম্পর্কে জানার যেমন দরকার আছে, তেমনি শিশুর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মচর্চার শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
১ দিন আগেইসলাম ডেস্ক

মানুষের অভাব পূরণের প্রয়োজন থেকে ব্যবসার উৎপত্তি। সুপ্রাচীন কাল থেকে ব্যবসা বৈধ জীবিকা নির্বাহের এক অনন্য উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জন্য ব্যবসা শুধু একটি পেশা নয়, গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন (সুরা বাকারা: ২৭৫)
পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে আজকের আধুনিক যুগ পর্যন্ত ব্যবসায়ের অসংখ্য ধরন বা শ্রেণি বিদ্যমান। কিন্তু মানুষের মধ্যে দুই ধরনের ব্যবসা থাকতে পারে:
এক. বস্তুগত ব্যবসা, যা দুনিয়াবি প্রয়োজন পূরণে একে অপরের সঙ্গে করে থাকে।
দুই. আধ্যাত্মিক ব্যবসা, যা আত্মার সন্তুষ্টির জন্য মহান আল্লাহর সঙ্গে হয়।
মহান আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় ব্যবসা করা নিঃসন্দেহে ইবাদতের একটি অংশ। তা ছাড়া মুনাফা অর্জনের অভিপ্রায়ে লাভজনক খাতে মূলধন, শ্রম ও মেধা বিনিয়োগ করা হয়। ফলস্বরূপ লাভ এবং ক্ষতির আশঙ্কা থাকে প্রায় সমান।
কিন্তু পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা এমন এক ব্যবসার সুসংবাদ দিয়েছেন, যেখানে ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই—আছে লাভ আর লাভ। সুরা সফফাতের ১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দেব না, যা তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?’ এর পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তা এই যে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করবে—এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে!’
অর্থাৎ কোরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর সঙ্গে ব্যবসার মূলধন হিসেবে তিনটি বিষয়কে উল্লেখ করেছেন:
এক. আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনা। আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস, মুখে স্বীকার এবং তদনুযায়ী আমল এই ব্যবসার শ্রেষ্ঠ মূলধন।
দুই. দ্বীনি কাজে ধন-সম্পদ ব্যয় করা। আপাতদৃষ্টিতে দ্বীনের জন্য সম্পদ ব্যয়ের ফলে মনে হয় তা কমেছে। কিন্তু আল্লাহর সঙ্গে আর্থিক এই ব্যবসা ক্ষতিবিহীন এবং অন্তহীন, যা দুনিয়া এবং আখিরাতের সম্পদকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে; যা কখনো ধ্বংস হবে না।’ (সুরা ফাতির: ২৯)
তিন. জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। জিহাদ নিয়ে বর্তমান সমাজে ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান। কিন্তু জিহাদ বলতে কেবল যুদ্ধকেই বোঝানো হয় না। বরং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যেকোনো প্রচেষ্টা। যেমন, নিজের ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান এবং দ্বীনের জন্য নিজের জীবন কিংবা নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করা অথবা দ্বীনকে রক্ষা করার অন্য যেকোনো প্রচেষ্টা জিহাদের অংশ।
যেকোনো ব্যবসায় ক্রেতা অপরিহার্য। তবে বান্দা এবং রবে এই ব্যবসায় ক্রেতা যিনি, তিনি হলেন মহান আল্লাহ। তিনি কী কিনে নিচ্ছেন এবং বিনিময়ে আমরা কী লাভ করছি, তা সুরা তওবার ১১১ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুমিনদের নিকট থেকে তাদের জান ও মালকে জান্নাতের বিনিময়ে।’
মহান রবের সঙ্গে ব্যবসার লাভ এবং উপকারিতা সম্পর্কে সুরা সফফাতের ১২ নম্বর আয়াতে তিনি আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নহর প্রবাহিত এবং স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহাসাফল্য।’
ব্যবসায়ের চিরাচরিত ঝুঁকি থাকলেও খোদার সঙ্গে লেনদেনে কোনো প্রকার ঝুঁকি নেই। নিশ্চিত লাভের আশায় মুমিনগণ আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করতে নিভৃতে ইবাদত করে। ওয়াল্লাহি মুমিনদের জন্য এর থেকে বড় ব্যবসা একটিও নেই।
লেখক: শারমিন আক্তার, শিক্ষার্থী, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ।

মানুষের অভাব পূরণের প্রয়োজন থেকে ব্যবসার উৎপত্তি। সুপ্রাচীন কাল থেকে ব্যবসা বৈধ জীবিকা নির্বাহের এক অনন্য উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জন্য ব্যবসা শুধু একটি পেশা নয়, গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন (সুরা বাকারা: ২৭৫)
পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে আজকের আধুনিক যুগ পর্যন্ত ব্যবসায়ের অসংখ্য ধরন বা শ্রেণি বিদ্যমান। কিন্তু মানুষের মধ্যে দুই ধরনের ব্যবসা থাকতে পারে:
এক. বস্তুগত ব্যবসা, যা দুনিয়াবি প্রয়োজন পূরণে একে অপরের সঙ্গে করে থাকে।
দুই. আধ্যাত্মিক ব্যবসা, যা আত্মার সন্তুষ্টির জন্য মহান আল্লাহর সঙ্গে হয়।
মহান আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় ব্যবসা করা নিঃসন্দেহে ইবাদতের একটি অংশ। তা ছাড়া মুনাফা অর্জনের অভিপ্রায়ে লাভজনক খাতে মূলধন, শ্রম ও মেধা বিনিয়োগ করা হয়। ফলস্বরূপ লাভ এবং ক্ষতির আশঙ্কা থাকে প্রায় সমান।
কিন্তু পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা এমন এক ব্যবসার সুসংবাদ দিয়েছেন, যেখানে ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই—আছে লাভ আর লাভ। সুরা সফফাতের ১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দেব না, যা তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?’ এর পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তা এই যে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করবে—এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে!’
অর্থাৎ কোরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর সঙ্গে ব্যবসার মূলধন হিসেবে তিনটি বিষয়কে উল্লেখ করেছেন:
এক. আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনা। আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস, মুখে স্বীকার এবং তদনুযায়ী আমল এই ব্যবসার শ্রেষ্ঠ মূলধন।
দুই. দ্বীনি কাজে ধন-সম্পদ ব্যয় করা। আপাতদৃষ্টিতে দ্বীনের জন্য সম্পদ ব্যয়ের ফলে মনে হয় তা কমেছে। কিন্তু আল্লাহর সঙ্গে আর্থিক এই ব্যবসা ক্ষতিবিহীন এবং অন্তহীন, যা দুনিয়া এবং আখিরাতের সম্পদকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে; যা কখনো ধ্বংস হবে না।’ (সুরা ফাতির: ২৯)
তিন. জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। জিহাদ নিয়ে বর্তমান সমাজে ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান। কিন্তু জিহাদ বলতে কেবল যুদ্ধকেই বোঝানো হয় না। বরং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যেকোনো প্রচেষ্টা। যেমন, নিজের ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান এবং দ্বীনের জন্য নিজের জীবন কিংবা নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করা অথবা দ্বীনকে রক্ষা করার অন্য যেকোনো প্রচেষ্টা জিহাদের অংশ।
যেকোনো ব্যবসায় ক্রেতা অপরিহার্য। তবে বান্দা এবং রবে এই ব্যবসায় ক্রেতা যিনি, তিনি হলেন মহান আল্লাহ। তিনি কী কিনে নিচ্ছেন এবং বিনিময়ে আমরা কী লাভ করছি, তা সুরা তওবার ১১১ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুমিনদের নিকট থেকে তাদের জান ও মালকে জান্নাতের বিনিময়ে।’
মহান রবের সঙ্গে ব্যবসার লাভ এবং উপকারিতা সম্পর্কে সুরা সফফাতের ১২ নম্বর আয়াতে তিনি আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নহর প্রবাহিত এবং স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহাসাফল্য।’
ব্যবসায়ের চিরাচরিত ঝুঁকি থাকলেও খোদার সঙ্গে লেনদেনে কোনো প্রকার ঝুঁকি নেই। নিশ্চিত লাভের আশায় মুমিনগণ আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করতে নিভৃতে ইবাদত করে। ওয়াল্লাহি মুমিনদের জন্য এর থেকে বড় ব্যবসা একটিও নেই।
লেখক: শারমিন আক্তার, শিক্ষার্থী, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ।

চালচলন, কথাবার্তা, খাওয়া-দাওয়াসহ জীবনের সব ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) উম্মতকে উত্তম শিষ্টাচার শিখিয়েছেন। আর প্রকৃত মুসলিমরা যুগ যুগ ধরে তা মান্য করে আসছে।
১৬ নভেম্বর ২০২২
মানসিক অশান্তি থাকলে কোনো কাজেই মন বসে না। সারাক্ষণ অস্থিরতা বিরাজ করে। কাজে স্থিরতা আসার পূর্বশর্ত হলো মানসিক শান্তি। কোরআন-সুন্নাহয় এই অশান্তি বা অস্থিরতা ভাব দূর করার অনেক দোয়া রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
৭ ঘণ্টা আগে
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৪ ঘণ্টা আগে
বর্তমান সময়ের শিশুরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম প্রযুক্তি জ্ঞান, ইংরেজি শেখা, বিভিন্ন খেলায় পারদর্শিতা অর্জন ইত্যাদি। এসব বিষয় সম্পর্কে জানার যেমন দরকার আছে, তেমনি শিশুর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মচর্চার শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
১ দিন আগেইসলাম ডেস্ক

বর্তমান সময়ের শিশুরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম প্রযুক্তি জ্ঞান, ইংরেজি শেখা, বিভিন্ন খেলায় পারদর্শিতা অর্জন ইত্যাদি। এসব বিষয় সম্পর্কে জানার যেমন দরকার আছে, তেমনি শিশুর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মচর্চার শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ইসলামিক ভাবধারায় শিশু বিকশিত হলে তার মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সমাজবোধ, সুষ্ঠু আচরণ, সততা, সত্যবাদিতা ও সময়নিষ্ঠতার শিক্ষালাভ করে। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা শিশুর মধ্যে আল্লাহভীতি সৃষ্টি করে, ফলে সে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে। এ জন্য প্রথমেই দরকার শিশুর পরিবারের সবার মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষাদান।
শিশু সবচেয়ে বেশি সময় কাটায় তার পরিবারের সঙ্গে। এ জন্য পরিবারের সবার করণীয় শিশুর সঙ্গে ইসলামিক ভাবধারার আচরণ করা, ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য গল্পের মাধ্যমে শোনানো, আল্লাহভীতি সৃষ্টি করা, আল্লাহর ৯৯ নামের অর্থ ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি।
এ ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা নিয়মিত নামাজ, রোজা, কোরআন পাঠ, সত্য ও সদাচরণ করলে শিশুরা তা অনুসরণ করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চরিত্র ও আচরণের মাধ্যমে ধর্মীয় মূল্যবোধ যদি শেখানো যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হবে আলোকিত ও দায়িত্বশীল। শিক্ষকেরা যদি নিজেদের আচরণের মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার উদাহরণ দিতে পারেন, তবে সে প্রভাব অনেক গভীর হবে।
বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ শিশু প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে। ছোট থেকেই ভিডিও গেমস ও অন্যান্য কনটেন্ট দেখায় তাদের আচার-আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসে, যা তাদের মানসিক বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। কিন্তু ইসলামিক ভাবধারায় শিশু বেড়ে উঠলে তার মধ্যে ইতিবাচক চিন্তাধারা জাগ্রত হয়, যা তার ভবিষ্যৎ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করে। ধর্মীয় শিক্ষা শিশুর মস্তিষ্ক ও আত্মাকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে। এটি তাকে শেখায় কীভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কীভাবে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হয় এবং কীভাবে নিজের জীবনের উদ্দেশ্য বুঝে এগিয়ে যেতে হয়।
একটি সমাজ তখনই সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হয়, যখন সে সমাজের শিশুরা নৈতিক গুণাবলি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে গড়ে ওঠে। এ শিক্ষা শুধু আখিরাতের জন্য কল্যাণকর নয়; বরং দুনিয়ার জীবনকেও শান্তিপূর্ণ করে তোলে। তাই সমাজের সব স্তরে শিশুদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষার চর্চা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: রাখি আক্তার, শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা

বর্তমান সময়ের শিশুরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম প্রযুক্তি জ্ঞান, ইংরেজি শেখা, বিভিন্ন খেলায় পারদর্শিতা অর্জন ইত্যাদি। এসব বিষয় সম্পর্কে জানার যেমন দরকার আছে, তেমনি শিশুর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মচর্চার শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ইসলামিক ভাবধারায় শিশু বিকশিত হলে তার মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সমাজবোধ, সুষ্ঠু আচরণ, সততা, সত্যবাদিতা ও সময়নিষ্ঠতার শিক্ষালাভ করে। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা শিশুর মধ্যে আল্লাহভীতি সৃষ্টি করে, ফলে সে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে। এ জন্য প্রথমেই দরকার শিশুর পরিবারের সবার মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষাদান।
শিশু সবচেয়ে বেশি সময় কাটায় তার পরিবারের সঙ্গে। এ জন্য পরিবারের সবার করণীয় শিশুর সঙ্গে ইসলামিক ভাবধারার আচরণ করা, ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য গল্পের মাধ্যমে শোনানো, আল্লাহভীতি সৃষ্টি করা, আল্লাহর ৯৯ নামের অর্থ ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি।
এ ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা নিয়মিত নামাজ, রোজা, কোরআন পাঠ, সত্য ও সদাচরণ করলে শিশুরা তা অনুসরণ করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চরিত্র ও আচরণের মাধ্যমে ধর্মীয় মূল্যবোধ যদি শেখানো যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হবে আলোকিত ও দায়িত্বশীল। শিক্ষকেরা যদি নিজেদের আচরণের মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার উদাহরণ দিতে পারেন, তবে সে প্রভাব অনেক গভীর হবে।
বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ শিশু প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে। ছোট থেকেই ভিডিও গেমস ও অন্যান্য কনটেন্ট দেখায় তাদের আচার-আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসে, যা তাদের মানসিক বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। কিন্তু ইসলামিক ভাবধারায় শিশু বেড়ে উঠলে তার মধ্যে ইতিবাচক চিন্তাধারা জাগ্রত হয়, যা তার ভবিষ্যৎ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করে। ধর্মীয় শিক্ষা শিশুর মস্তিষ্ক ও আত্মাকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে। এটি তাকে শেখায় কীভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কীভাবে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হয় এবং কীভাবে নিজের জীবনের উদ্দেশ্য বুঝে এগিয়ে যেতে হয়।
একটি সমাজ তখনই সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হয়, যখন সে সমাজের শিশুরা নৈতিক গুণাবলি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে গড়ে ওঠে। এ শিক্ষা শুধু আখিরাতের জন্য কল্যাণকর নয়; বরং দুনিয়ার জীবনকেও শান্তিপূর্ণ করে তোলে। তাই সমাজের সব স্তরে শিশুদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষার চর্চা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: রাখি আক্তার, শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা

চালচলন, কথাবার্তা, খাওয়া-দাওয়াসহ জীবনের সব ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) উম্মতকে উত্তম শিষ্টাচার শিখিয়েছেন। আর প্রকৃত মুসলিমরা যুগ যুগ ধরে তা মান্য করে আসছে।
১৬ নভেম্বর ২০২২
মানসিক অশান্তি থাকলে কোনো কাজেই মন বসে না। সারাক্ষণ অস্থিরতা বিরাজ করে। কাজে স্থিরতা আসার পূর্বশর্ত হলো মানসিক শান্তি। কোরআন-সুন্নাহয় এই অশান্তি বা অস্থিরতা ভাব দূর করার অনেক দোয়া রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
৭ ঘণ্টা আগে
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৪ ঘণ্টা আগে
‘হে ইমানদারগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দেব না, যা তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?’ এর পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তা এই যে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করবে—এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে!’
১ দিন আগে