আপনার জিজ্ঞাসা
সানা উল্লাহ মুহাম্মাদ কাউসার
প্রশ্ন: আমাদের দেশে মাঝেমধ্যেই হিল্লা বিয়ের কথা শোনা যায়। ইসলামে কি এই বিয়ে বৈধ? বিস্তারিত জানতে চাই। হামিদা খানম, ঢাকা
উত্তর: আমাদের দেশে ইসলামের অনেক বিধানের বিকৃত প্রচলন ঘটেছে। হিল্লা বিয়ে তেমনই একটি বিষয়। হিল্লা বিয়ে বলতে বোঝানো হয়, তালাকপ্রাপ্ত নারীকে চুক্তিভিত্তিক এক দিনের জন্য অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে রেখে ফের আগের স্বামীর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। ইসলামে এই পদ্ধতির বিয়েকে সম্পূর্ণ হারাম বলা হয়েছে। (শরহে কানজ: ২ / ১৩৪; ফিকহুস সুন্নাহ: ২ / ৪২-৪৩ পৃ.)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেছেন, ‘রাসুল (সা.) হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত করেছেন।’ (তিরমিজি: ১১১৯ ও ১১২০; আবু দাউদ: ২০৭৬; ইরওয়াউল গালিল,৬ / ৩০৮-৩০৯)
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের ভাড়াটে পাঁঠা সম্পর্কে অবহিত করব না?’ তাঁরা বললেন, ‘হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল।’ তিনি বললেন, ‘সে হলো হিল্লাকারী। আল্লাহ হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় তাদের উভয়কে লানত করেছেন।’ (ইবনে মাজাহ: ১৯৩৬; মুসতাদরাক হাকিম: ২৮৪৩-২৮৪৪; সহিহুল জামি: ২৫৯৬)
শুধু তা-ই নয়, অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.)-এর যুগে হিল্লা বিয়েকে ব্যভিচার হিসেবে গণ্য করা হতো।’ হজরত ওমর (রা.) হিল্লা সম্পর্কে বলেন, ‘আমার কাছে হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় তাদের পেশ করা হলে আমি তাদের “রজম”, অর্থাৎ প্রস্তরাঘাত করব।’ (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ৩৬১৯১; বায়হাকি, আস-সুনান আল-কুবরা: ১৪১৯১; ইগাসাতুল লাহফান, ১ / ৪১১)
হিল্লা বিয়ের প্রচলন যেভাবে
রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর মানুষ ধীরে ধীরে ধর্ম থেকে দূরে সরে আসার কারণে মুসলিম সমাজে তালাকের প্রবণতা বেড়ে যায়। ফলে এর সমাধানের জন্য একশ্রেণির আলেমদের মাধ্যমে হিল্লা বিয়ের মতো কুপ্রথা সমাজে চালু হয়ে পড়ে। এর জন্য সুরা বাকারার ২৩০ নম্বর আয়াতের বিকৃত ব্যাখ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়। আয়াতটি হলো—
‘অতঃপর যদি সে স্ত্রীকে তালাক দেয়, তাহলে ওই স্ত্রী তার জন্য হালাল হবে না। তবে যদি দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির সঙ্গে তার বিয়ে হয় এবং সে তাকে তালাক দেয়, তাহলে এ ক্ষেত্রে প্রথম স্বামী এবং এই নারী যদি আল্লাহর সীমারেখার মধ্যে অবস্থান করতে পারবে বলে মনে করে, তাহলে তাদের উভয়ের জন্য পরস্পরের দিকে ফিরে আসায় কোনো ক্ষতি নেই।...’ (সুরা বাকারা: ২৩০)
এ আয়াতের ওপর ভিত্তি করেই মূলত হিল্লা বিয়ের পক্ষে কিছু আলেম রায় প্রদান করলেও পরবর্তী সময়ে প্রায় সব বিজ্ঞ আলেম তাদের প্রচলন করা বিকৃত পদ্ধতির এই ‘হিল্লা বিয়ে’কে নিষিদ্ধ করেছেন এবং এটিকে একটি ভ্রান্ত ও প্রচলিত কুসংস্কার হিসেবে পরিগণিত করেছেন।’ (শরহে কানজ: ২ / ১৩৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ: ২ / ৪২-৪৩ পৃ.)
আয়াতের প্রকৃত ব্যাখ্যা
আয়াতটি কাদের জন্য প্রযোজ্য, তা স্পষ্ট হতে আমাদের পরবর্তী ২৩২ নম্বর আয়াতের দিকে নজর দিতে হবে। সেখানে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের তালাক দেওয়ার পর যখন তারা ইদ্দত পূর্ণ করে নেয়, তখন তাদের নিজেদের প্রস্তাবিত স্বামীদের সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারে তোমরা বাধা দিয়ো না, যখন তারা প্রচলিত পদ্ধতিতে পরস্পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে সম্মত হয়।...’ (সুরা বাকারা-২৩২)।
আয়াতে তালাকপ্রাপ্ত নারীর ইদ্দত পালনের পর অন্য কোনো পুরুষকে বিয়ে করার বৈধতার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, তখন যেন আগের স্বামী কোনোরূপ বাধার সৃষ্টি করে তার অধিকার খর্ব না করে। যদি বিয়ের পরে সেই স্বামী ছেড়ে দেয়, তাহলে পূর্বের স্বামী বিয়ে করাতে আপত্তি নেই। এত চমৎকার একটি পদ্ধতির ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে হিল্লার মতো জঘন্য একটি প্রথা সমাজে চালু হওয়া জাতির জন্য এক অশনিসংকেত।
এ ছাড়া বাংলাদেশে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের মাধ্যমে ‘হিল্লা বিয়ে বলে যে বিয়ে প্রচলিত ছিল, সেটি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশে হিল্লা বিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ এবং আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
উত্তর দিয়েছেন: সানা উল্লাহ মুহাম্মাদ কাউসার, শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক
প্রশ্ন: আমাদের দেশে মাঝেমধ্যেই হিল্লা বিয়ের কথা শোনা যায়। ইসলামে কি এই বিয়ে বৈধ? বিস্তারিত জানতে চাই। হামিদা খানম, ঢাকা
উত্তর: আমাদের দেশে ইসলামের অনেক বিধানের বিকৃত প্রচলন ঘটেছে। হিল্লা বিয়ে তেমনই একটি বিষয়। হিল্লা বিয়ে বলতে বোঝানো হয়, তালাকপ্রাপ্ত নারীকে চুক্তিভিত্তিক এক দিনের জন্য অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে রেখে ফের আগের স্বামীর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। ইসলামে এই পদ্ধতির বিয়েকে সম্পূর্ণ হারাম বলা হয়েছে। (শরহে কানজ: ২ / ১৩৪; ফিকহুস সুন্নাহ: ২ / ৪২-৪৩ পৃ.)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেছেন, ‘রাসুল (সা.) হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত করেছেন।’ (তিরমিজি: ১১১৯ ও ১১২০; আবু দাউদ: ২০৭৬; ইরওয়াউল গালিল,৬ / ৩০৮-৩০৯)
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের ভাড়াটে পাঁঠা সম্পর্কে অবহিত করব না?’ তাঁরা বললেন, ‘হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল।’ তিনি বললেন, ‘সে হলো হিল্লাকারী। আল্লাহ হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় তাদের উভয়কে লানত করেছেন।’ (ইবনে মাজাহ: ১৯৩৬; মুসতাদরাক হাকিম: ২৮৪৩-২৮৪৪; সহিহুল জামি: ২৫৯৬)
শুধু তা-ই নয়, অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.)-এর যুগে হিল্লা বিয়েকে ব্যভিচার হিসেবে গণ্য করা হতো।’ হজরত ওমর (রা.) হিল্লা সম্পর্কে বলেন, ‘আমার কাছে হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় তাদের পেশ করা হলে আমি তাদের “রজম”, অর্থাৎ প্রস্তরাঘাত করব।’ (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ৩৬১৯১; বায়হাকি, আস-সুনান আল-কুবরা: ১৪১৯১; ইগাসাতুল লাহফান, ১ / ৪১১)
হিল্লা বিয়ের প্রচলন যেভাবে
রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর মানুষ ধীরে ধীরে ধর্ম থেকে দূরে সরে আসার কারণে মুসলিম সমাজে তালাকের প্রবণতা বেড়ে যায়। ফলে এর সমাধানের জন্য একশ্রেণির আলেমদের মাধ্যমে হিল্লা বিয়ের মতো কুপ্রথা সমাজে চালু হয়ে পড়ে। এর জন্য সুরা বাকারার ২৩০ নম্বর আয়াতের বিকৃত ব্যাখ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়। আয়াতটি হলো—
‘অতঃপর যদি সে স্ত্রীকে তালাক দেয়, তাহলে ওই স্ত্রী তার জন্য হালাল হবে না। তবে যদি দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির সঙ্গে তার বিয়ে হয় এবং সে তাকে তালাক দেয়, তাহলে এ ক্ষেত্রে প্রথম স্বামী এবং এই নারী যদি আল্লাহর সীমারেখার মধ্যে অবস্থান করতে পারবে বলে মনে করে, তাহলে তাদের উভয়ের জন্য পরস্পরের দিকে ফিরে আসায় কোনো ক্ষতি নেই।...’ (সুরা বাকারা: ২৩০)
এ আয়াতের ওপর ভিত্তি করেই মূলত হিল্লা বিয়ের পক্ষে কিছু আলেম রায় প্রদান করলেও পরবর্তী সময়ে প্রায় সব বিজ্ঞ আলেম তাদের প্রচলন করা বিকৃত পদ্ধতির এই ‘হিল্লা বিয়ে’কে নিষিদ্ধ করেছেন এবং এটিকে একটি ভ্রান্ত ও প্রচলিত কুসংস্কার হিসেবে পরিগণিত করেছেন।’ (শরহে কানজ: ২ / ১৩৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ: ২ / ৪২-৪৩ পৃ.)
আয়াতের প্রকৃত ব্যাখ্যা
আয়াতটি কাদের জন্য প্রযোজ্য, তা স্পষ্ট হতে আমাদের পরবর্তী ২৩২ নম্বর আয়াতের দিকে নজর দিতে হবে। সেখানে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের তালাক দেওয়ার পর যখন তারা ইদ্দত পূর্ণ করে নেয়, তখন তাদের নিজেদের প্রস্তাবিত স্বামীদের সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারে তোমরা বাধা দিয়ো না, যখন তারা প্রচলিত পদ্ধতিতে পরস্পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে সম্মত হয়।...’ (সুরা বাকারা-২৩২)।
আয়াতে তালাকপ্রাপ্ত নারীর ইদ্দত পালনের পর অন্য কোনো পুরুষকে বিয়ে করার বৈধতার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, তখন যেন আগের স্বামী কোনোরূপ বাধার সৃষ্টি করে তার অধিকার খর্ব না করে। যদি বিয়ের পরে সেই স্বামী ছেড়ে দেয়, তাহলে পূর্বের স্বামী বিয়ে করাতে আপত্তি নেই। এত চমৎকার একটি পদ্ধতির ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে হিল্লার মতো জঘন্য একটি প্রথা সমাজে চালু হওয়া জাতির জন্য এক অশনিসংকেত।
এ ছাড়া বাংলাদেশে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের মাধ্যমে ‘হিল্লা বিয়ে বলে যে বিয়ে প্রচলিত ছিল, সেটি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশে হিল্লা বিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ এবং আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
উত্তর দিয়েছেন: সানা উল্লাহ মুহাম্মাদ কাউসার, শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক
ঈদের দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল ঈদের নামাজ আদায় করা। তাই প্রস্তুতি গ্রহণ করে আগে আগে ঈদগাহে চলে যাওয়া উচিত। তবে অপ্রত্যাশিতভাবে ঈদের জামাত ছুটে গেলে অথবা অংশ বিশেষ না পেলে করণীয় হলো—
২ ঘণ্টা আগেখুশির বার্তা নিয়ে হাজির হয় ঈদ। ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে। তবে বছরে মাত্র দুইবার এই নামাজ পড়ার ফলে অনেকেরই এর নিয়মকানুন মনে থাকে না। ঈদের নামাজ সংক্রান্ত যেসব বিষয় মনে রাখতে হবে, তা হলো—
২০ ঘণ্টা আগেআকাশে জিলহজের বাঁকা চাঁদ হাসি দেওয়ার দশম দিন উদ্যাপিত হয় ঈদুল আজহা। এটি মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব। ঈদুল আজহা মনের সব কালিমা দূর করে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে, মান-অভিমান বিসর্জন দিয়ে একতা, সমদর্শিতা, ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের দিন। যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজের
১ দিন আগেজুমার দিন মুসলমানদের জন্য খুবই বরকত ও ফজিলতপূর্ণ দিন। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বিশেষভাবে এ দিনের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। এই দিনের নামে একটি সুরাও স্থান পেয়েছে কোরআনুল কারিমে।
১ দিন আগে