Ajker Patrika

পরস্পর সাক্ষাতে যেভাবে সওয়াব পাওয়া যায়

আবরার নাঈম 
পরস্পর সাক্ষাতের আদব। ছবি: সংগৃহীত
পরস্পর সাক্ষাতের আদব। ছবি: সংগৃহীত

‎ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম মানুষকে শিখিয়েছে পরস্পর সাক্ষাতে কী করণীয় ও বর্জনীয়। নিম্নে পরস্পর সাক্ষাতের কতিপয় আদব তুলে ধরা হলো—

১. কথার আগে সালাম
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, ‘কথা-বার্তা বলার আগেই সালাম বিনিময় হবে।’ (জামে তিরমিজি: ২৬৯৯)

২. হাসিমুখে কথা বলা
‎আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুল (সা.) আমাকে বললেন, ‘তুমি কোনো ভালো কাজকে তুচ্ছ মনে করো না। যদিও তুমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতে পার।’ (রিয়াজুস সালেহিন: ৭০০)

৩. মুসাফাহা করা
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটা লোক বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের মধ্য থেকে কোনো লোক তার ভাইয়ের সঙ্গে কিংবা তার বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তার সামনে কি মাথা নত করবে?’ তিনি বললেন, ‘না।’ সে বলল, ‘তাহলে কি তাকে জড়িয়ে ধরে চুমা দেবে?’ তিনি বললেন, ‘না।’ সে বলল, ‘তাহলে কি তার হাত ধরে তার সঙ্গে মুসাফাহা করবে?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ (রিয়াজুস সালেহিন: ৮৯৩)

হজরত আবুল খাত্তাব কাতাদা (রা.) বলেন, আমি আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘রাসুল (সা.)-এর সাহাবিদের মধ্যে কি মুসাফাহা (করমর্দন) করার প্রথা ছিল?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ (রিয়াজুস সালেহিন: ৮৯০)

হজরত বারা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, দুজন মুসলমান সাক্ষাৎকালে মুসাফাহা করলে একে অপর থেকে পৃথক হওয়ার পূর্বেই তাদের (গুনাহ) মাফ করে দেওয়া হয়। (রিয়াজুস সালেহিন: ৮৯২)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যেভাবে অন্যদের ভুল শুধরে দিতেন নবীজি

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভুল করা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। জীবন চলার পথে ছোট-বড় ভুল সবারই হয়। কিন্তু সে ভুলকে কীভাবে সংশোধন করতে হবে, তা মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ হজরত মুহাম্মদ (সা.) শিখিয়ে গেছেন। তিনি ভুলকে লজ্জা বা অপমানের কারণ হিসেবে দেখেননি; বরং এটিকে ইতিবাচক পরিবর্তনের একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। মহানবী (সা.) কঠোরতা নয়, বরং ভদ্রতা, কোমলতা, সহানুভূতি এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে মানুষের ভুলত্রুটি শুধরেছেন।

ভুল সংশোধনে তাঁর প্রথম কৌশল ছিল কৌশলগত নীরবতা এবং ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ। তিনি সরাসরি সমালোচনা না করে এমনভাবে আচরণ করতেন, যেন ভুলকারী নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পারে। একবার সাহাবিদের কোনো কাজে ভুল দেখতে পেলে তিনি তাঁদের ছেড়ে অন্য পথে হেঁটেছেন, যা দেখে তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। আবার কখনো কখনো, বিশেষ করে যখন ভুলটি গুরুতর হতো, তখন তিনি কথার পুনরাবৃত্তি করে এর গুরুত্ব বোঝাতেন। তাঁর আরেকটি অসাধারণ পদ্ধতি ছিল দুর্বল ও অসহায়দের প্রতি কোমল আচরণ। একইভাবে, তিনি মানুষকে আল্লাহর ক্ষমতা ও করুণার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভুল থেকে ফিরিয়ে আনতেন।

মানুষের মর্যাদা রক্ষা ছিল তাঁর ভুল সংশোধনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। তিনি কখনো জনসমক্ষে কাউকে লজ্জা দিতেন না। তাই অনেক সময় তিনি বলতেন, ‘লোকদের কী হয়েছে যে তারা এমন এমন কাজ করছে!’ এভাবে তিনি ব্যক্তির পরিচয় গোপন রেখে সাধারণ ভুলকারীদের সতর্ক করতেন। এমনকি যারা বারবার একই ভুল করত, তাদেরও তিনি তিরস্কারের পরিবর্তে ভালোবাসা ও দোয়া করতেন। তাঁর এই সহানুভূতিশীল পদ্ধতি প্রমাণ করে, ভুল শুধরানোর মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিকে পরিশুদ্ধ করা, অপমান করা নয়।

রাসুল (সা.)-এর এ কৌশলগুলো আমাদের শেখায়, ভুল সংশোধন একটি শিল্প, যেখানে ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং সম্মানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু একটি ত্রুটি দূর করার বিষয় নয়; বরং ব্যক্তির অন্তরকে আলোকময় করে তোলার এক মহৎ প্রক্রিয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বাংলা, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১০ মিনিট
ফজর০৫: ১১ মিনিট০৬: ৩০ মিনিট
জোহর১১: ৫৩ মিনিট০৩: ৩৬ মিনিট
আসর০৩: ৩৭ মিনিট০৫: ১২ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৪ মিনিট০৬: ৩৩ মিনিট
এশা০৬: ৩৪ মিনিট০৫: ১০ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মিসরে কোরআন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হাফেজ আনাসকে বিমানবন্দরে সংবর্ধনা

ইসলাম ডেস্ক 
৭০টি দেশকে হারিয়ে বাংলাদেশি হাফেজ আনাসের বিশ্বজয়। ছবি: সংগৃহীত
৭০টি দেশকে হারিয়ে বাংলাদেশি হাফেজ আনাসের বিশ্বজয়। ছবি: সংগৃহীত

মিসরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত ৩২তম আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হাফেজ আনাস বিন আতিককে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় প্রথমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এর তাঁকে ছাদখোলা বাসে ঢাকার রাজপথে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

বিমানবন্দরে সংবর্ধনায় অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন বিশ্বজয়ী হাফেজ আনাস।
বিমানবন্দরে সংবর্ধনায় অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন বিশ্বজয়ী হাফেজ আনাস।

এ সময় বিশ্বজয়ী হাফেজ আনাস তাঁর অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা যে দেশের ক্বারীদের তিলাওয়াত শুনে কেরাত শিখি, সে দেশের প্রতিযোগিতায় আমার এই অর্জন সত্যিই অনেক আনন্দের। কেরাতের রাজধানীখ্যাত মিসরে গিয়ে এ বিজয় অর্জন বেশ কঠিন ছিল। তবে আমার ওস্তাদ, মা-বাবা এবং দেশের মানুষের দোয়ায় তা সম্ভব হয়েছে।’

হাফেজ আনাসের ওস্তাদ শায়খ নেছার আহমদ আন নাছিরী বলেন, ‘তৃতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বিশ্ব জয় করেছে আমার প্রিয় ছাত্র হাফেজ আনাস। সে বারবার বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করছে। এবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত ৩২তম আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে সে আবারও সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।’

হাফেজ আনাস ও তার ওস্তাদ শায়েখ নেছার আহমদ আন নাছিরীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
হাফেজ আনাস ও তার ওস্তাদ শায়েখ নেছার আহমদ আন নাছিরীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

শায়খ নেছার আহমদ আন নাছিরী জানান, গত শনিবার (৭ ডিসেম্বর) কায়রোতে আনুষ্ঠানিকভাবে ৩২তম আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন হয়। চার দিনব্যাপী এই আয়োজনে বিশ্বের ৭০টি দেশের প্রতিযোগীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রথম হয় বাংলাদেশ।

নেছার আহমদ আরও জানান, হাফেজ আনাস বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত জাতীয় বাছাইপর্বে প্রথম স্থান অর্জন করে এই বৈশ্বিক মঞ্চে অংশগ্রহণের যোগ্যতা লাভ করেন।

প্রসঙ্গত, হাফেজ আনাস রাজধানীর মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার ছাত্র। তাঁর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের লোপাড়া গ্রামে। এর আগেও হাফেজ আনাস বিন আতিক সৌদি আরব ও লিবিয়ায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুমার নামাজ ছেড়ে দেওয়ার ভয়াবহ পরিণতি

শরিফ আহমাদ
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জুমার দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। জুমার নামাজ প্রসঙ্গে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, জুমার দিন যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা ত্যাগ করো। এটিই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পারো।’ (সুরা জুমুআ: ৯) তাই আল্লাহর আদেশ মেনে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করতে হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর এই আদেশ অমান্য করে, জুমার নামাজ ত্যাগ করে, তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তাঁরা রাসুল (সা.)-কে মিম্বরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, ‘মানুষ যেন জুমার নামাজ ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকে। অন্যথায় আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরে মোহর এঁটে দেবেন। এরপর তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৮৬৫)

মুনাফিক ব্যক্তি ছাড়া কোনো মুসলমান ফরজ নামাজ ত্যাগ করতে পারে না। নামাজ আদায়ে বিলম্ব হলে প্রকৃত মুমিনের হৃদয়ে অপরাধপ্রবণতা কাজ করে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিশেষ অপারগতা ছাড়া জুমার নামাজ তরক করে, তার নামে মুনাফিক উপাধি লেখা হয় এমন কিতাবে, যার লেখা মোছা যায় না এবং পরিবর্তনও করা যায় না।’ (কিতাবুল উম্ম: ১/২৩৯)

শুক্রবার জুমার নামাজ ছুটে গেলে সেদিনের জোহরের নামাজ আদায় করতে হয়। নামাজের কাফফারা দিতে হয়। সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা ওজরে জুমার নামাজ ত্যাগ করে, সে যেন এক দিনার সদকা করে। যদি তার পক্ষে এক দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) সদকা করা সম্ভব না হয়, তবে যেন অর্ধ দিনার সদকা করে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১০৫৩)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত