Ajker Patrika

জিলহজের প্রথম দশকের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও আমল

শাব্বির আহমদ
আপডেট : ২৩ মে ২০২৫, ১২: ০৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আরবি বর্ষপঞ্জির সর্বশেষ মাস জিলহজ। এ মাসেই মুসলমানরা কোরবানি করেন, মক্কায় গিয়ে হজ আদায় করেন। ইসলামে এ মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে জিলহজ মাসের প্রথম দশকের শ্রেষ্ঠত্বের কথা পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এসেছে বারবার।

জিলহজের প্রথম দশকের গুরুত্ব

শ্রেষ্ঠত্ব বোঝাতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা এই দিনগুলোর নামে শপথ করেছেন। তিনি বলেন, ‘শপথ ফজরের। এবং ১০ রাতের। (সুরা ফজর: ১-২)। মুফাসসিরদের মতে, এখানে ফজর বলতে বিশেষভাবে জিলহজের ১০ তারিখের ফজর বোঝানো হয়েছে। আর যে ১০ রাতের শপথ করা হয়েছে, তা হলো জিলহজের প্রথম ১০ রাত। এই রাতগুলোর মর্যাদার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজ মাসের প্রথম দশকের আমলের চেয়ে অধিক মহৎ এবং প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। (মুসনাদে আহমদ: ৫৪৪৬)

শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ জিলহজ মাসের প্রথম দশকের বেশ কিছু আমল সম্পর্কে লিখেছেন শাব্বির আহমদ।

রোজা রাখার ফজিলত

জিলহজ মাসের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা উত্তম। নবী করিম (সা.) এই দিনগুলোতে রোজা রাখতেন। (সুনানে আবু দাউদ: ২৪৩৭)। ৯ দিন না পারলে এর মধ্যে যে কয়দিন সম্ভব হয় রোজা রাখলেও সওয়াব পাওয়া যাবে। বিশেষ করে ৯ তারিখ অর্থাৎ ঈদের আগের দিন অবশ্যই রোজা রাখার চেষ্টা করা। কেননা এই এক দিনের রোজার ফলে এক বছর আগের ও এক বছর পরের মোট দুই বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়ার কথা হাদিসে উল্লেখ আছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি আশা করি, আরাফাহর দিন অর্থাৎ জিলহজের ৯ তারিখের রোজার ফলে আল্লাহ তাআলা এক বছর আগের ও এক বছর পরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (সহিহ্ মুসলিম: ১১৬২)

জিলহজের প্রথম দশকে চুল-নখ না কাটা

জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে কোরবানির পশু জবাই করার আগপর্যন্ত নখ, চুল, গোঁফ ও অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকা সওয়াবের কাজ। যাঁরা কোরবানি করবেন এবং যাঁরা সামর্থ্যের অভাবে কোরবানি করবেন না, সবার জন্যই এই আমল করা উত্তম। তবে যে ব্যক্তি কোরবানি করবেন, তাঁর জন্য এ আমলটি তুলনামূলক অত্যধিক গুরুত্ব রাখে।

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরবানি করার ইচ্ছে করবে, সে যেন জিলহজের নতুন চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে। (জামে তিরমিজি: ১৫২৩)। অন্য হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমাকে আজহার দিন (১০ জিলহজ) ঈদ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাকে আল্লাহ তাআলা এই উম্মতের জন্য (ঈদ হিসেবে) নির্ধারণ করেছেন।’ এক ব্যক্তি তখন জানতে চাইলেন, ‘(যদি আমার কোরবানির পশু ক্রয়ের সামর্থ্য না থাকে), কিন্তু আমার কাছে এমন উট বা বকরি থাকে, যার দুধ পান করার জন্য বা মাল বহন করার জন্য তা প্রতিপালন করি—আমি কি তা কোরবানি করতে পারি?’ নবীজি বললেন, ‘না। বরং তুমি (ঈদের দিন) তোমার মাথার চুল, নখ ও গোঁফ কেটে ফেলো এবং নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করো। এ-ই আল্লাহর নিকট তোমার কোরবানি।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৭৮৯)।

এমনকি সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়িরাও এ দিনগুলোতে শিশুদের চুল-নখ কাটা অপছন্দ করতেন। (মুসতাদরাকে হাকিম: ৭৫৯৫)

বেশি বেশি তাকবির বলা

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ও আবু হুরায়রা (রা.)-এর আমল ছিল—জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন তাঁরা তাকবির বলতে বলতে বাজারের দিকে যেতেন। তাঁদের এই আমল দেখে অন্যরাও তাকবির বলতেন। (সহিহ্ বুখারি: ৯৬৯)। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা জিলহজের প্রথম দশকে অধিক পরিমাণে তাকবির (আল্লাহু আকবার), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এবং তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) পাঠ করো। (শুআবুল ইমান: ৩৭৫৮, তবারানি: ৫৩৪)।

তাকবিরে তাশরিক পাঠ

৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক বলা আবশ্যক। পুরুষ-নারী, মুকিম-মুসাফির সবার এই আমল করতে হবে। এমনকি ৯ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত কোনো নামাজ কাজা হয়ে গেলে—এ কাজা ওই দিনগুলোতে আদায় করলে সে কাজা নামাজের পরও তাকবিরে তাশরিক পড়বে। পুরুষেরা তাকবির বলবে উচ্চ স্বরে আর নারীরা নিম্ন স্বরে। (ফাতাওয়া শামি: ২ / ১৭৮)

পশু কোরবানি

এ মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল কোরবানি। ত্যাগ ও আনন্দের আয়োজন এই কোরবানি সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই করতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি নিজ প্রতিপালকের জন্য নামাজ আদায় করো ও কোরবানি করো।’ (সুরা কাউসার: ২)

প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন যেসব মুসলিম নর-নারী ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের মধ্যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবেন, তাঁর ওপর কোরবানি আবশ্যক। নবীজি (সা.) বলেন, ‘কোরবানির দিনের আমলগুলোর মধ্য থেকে পশু কোরবানি করার চেয়ে কোনো আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় নয়। কিয়ামতের দিন এ কোরবানির পশুকে তার শিং, পশম, ক্ষুরসহ উপস্থিত করা হবে। আর কোরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা সন্তুষ্ট মনে কোরবানি করো।’ (জামে তিরমিজি: ১৪৯৩)

হজ আদায়

সুস্থ ও সামর্থ্যবান হলে জিলহজ মাসের প্রথম দশকের নির্ধারিত সময়ে হজ আদায় করতে হবে। কেননা, যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁদের ওপর হজ ফরজ। যাঁদের হজ আল্লাহ কবুল করে নেবেন, তাঁদের নিশ্চিত প্রতিদান জান্নাত। (জামে তিরমিজি: ৮১০)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় শুধু একটি দল—প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের যে ব্যাখ্যা দিল প্রেস উইং

মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়েছিলেন বলেই কি জামিন পেলেন না অধ্যাপক আনোয়ারা

হঠাৎ ব্যাংকের ভেতরে সবাই অচেতন

সৌদি আরবে পুরুষের ‘অবাধ্য’ হলে নারীর যে পরিণতি হয়

নাহিদের সাবেক পিএ আতিক মোর্শেদের স্ত্রী জুঁইকে দুদকে তলব

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত