Ajker Patrika

আফ্রিকার নান্দনিক স্থাপত্যের ৫ মসজিদ

ইজাজুল হক, ঢাকা
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৩, ১৮: ৩৮
আফ্রিকার নান্দনিক স্থাপত্যের ৫ মসজিদ

মসজিদ ইসলামি সভ্যতার আঁতুড়ঘর। মদিনার মসজিদে নববি থেকেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রাষ্ট্রপরিচালনা করতেন। মুসলমানেরা যেখানেই বসতি স্থাপন করেছেন, সেখানেই গড়ে তুলেছেন মসজিদ। আফ্রিকাও এর ব্যতিক্রম নয়। ৫০ হিজরিতে সাহাবিদের যুগে প্রথম আফ্রিকায় মসজিদ নির্মিত হয়। এখানে আফ্রিকা মহাদেশের ঐতিহাসিক ও নান্দনিক স্থাপত্যের পাঁচটি মসজিদের কথা তুলে ধরা হলো—

 ১. গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স, আলজিয়ার্স, আলজেরিয়া
আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অবস্থিত বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনারের মসজিদ গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স। আরবিতে একে বলা হয় জামেউল জাজায়ের। এর মিনারের উচ্চতা ৮৭০ ফুট। আফ্রিকার সবচেয়ে উঁচু ভবন এটি। ৪৩ তলাবিশিষ্ট মিনারটির ৩৭তম তলায় রয়েছে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। সেখান থেকে দেখা যায় আলজেরিয়া উপসাগর ও ভূমধ্যসাগরের বিশাল জলরাশির অপরূপ সৌন্দর্য। আয়তনের দিক থেকে এটি পৃথিবীর তৃতীয় এবং আফ্রিকার সর্ববৃহৎ মসজিদ। নির্মাণে খরচ হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। 

মসজিদ কমপ্লেক্সের মোট আয়তন চার লাখ বর্গমিটার। একসঙ্গে ১ লাখ ৩৭ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন এ মসজিদে। এখানে একটি মাদ্রাসা, ১০ লাখ বই ও ৬ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি লাইব্রেরি, জাদুঘর, বাণিজ্যিক ভবন, রেস্তোরাঁ, প্লাজা, পার্ক, খোলা চত্বর, সংস্কৃতি কেন্দ্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন এবং ফলের বাগান রয়েছে। 

এ মসজিদের নকশা করেছেন জার্মান প্রকৌশলীরা। নির্মাণ করেছে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এ মসজিদের নির্মাণসামগ্রী। চীন, আলজেরিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের দুই লাখ তিন হাজার লোক এর নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত ছিল। মসজিদে বিদ্যুতের জন্য সোলার প্যানেল, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও বহুবিধ ব্যবহারের আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে।

 ২. দ্বিতীয় হাসান মসজিদ, কাসাব্লাংকা, মরক্কো
মরক্কোর বাণিজ্যিক রাজধানী কাসাব্লাংকায় অবস্থিত দ্বিতীয় হাসান মসজিদ বিশ্বের বড় মসজিদগুলোর একটি। আটলান্টিক মহাসাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ মসজিদ নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী ও সুউচ্চ মিনারের কারণে বিখ্যাত। এটি প্রায় শতভাগ মুসলমানের দেশ মরক্কোর সবচেয়ে বড় মসজিদ এবং প্রধানতম পর্যটনকেন্দ্রও। স্থপতি মিশেল পিনশোর নকশায় ১৯৮৬ সালে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ১৯৯৩ সালে মহানবী (সা.)-এর জন্মদিনে উদ্বোধন করা হয়। 

ইসলামি স্থাপত্যশৈলী ও মরক্কোর ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলীর মিশেলে মসজিদের নকশা করা হয়। মসজিদের একেকটি অংশ বিশ্বের একেকটি বিখ্যাত মসজিদের অনুকরণে নকশা করা হয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে ছয় হাজার শিল্পী ও কারিগর মসজিদের ভেতর ও বাইরের দৃষ্টিনন্দন নকশা, মোজাইক, দামি পাথর ইত্যাদি বসানোর কাজ করেন। কিছু গ্রানাইটের স্তম্ভ এবং ৫৬টি বিশাল ঝাড়বাতি ইতালি থেকে আনা হয়। অন্য সব উপাদান মরক্কোর বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা হয়। মসজিদের কিছু অংশ সমুদ্রের পানিতে ভাসমান, সেখানে স্বচ্ছ কাচের ওপর দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় সমুদ্রের উচ্ছলতা। 

৯ হেক্টর জায়গাজুড়ে অবস্থিত এ মসজিদে একসঙ্গে ১ লাখ ১০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটির ভেতরে ২৫ হাজার এবং বাইরের চত্বরে ৮০ হাজার মুসল্লি দাঁড়াতে পারেন। নারীদের জন্য রয়েছে আরও ৫ হাজার আসন। মসজিদের মূল হলঘরটি আয়তাকার, এর দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার, প্রস্থ ১০০ মিটার এবং উচ্চতা ৬০ মিটার। হলঘরের বিশাল ছাদ ৭৮টি বিরাট স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ৩ হাজার ৪০০ বর্গমিটারের এ ছাদের অর্ধেক অংশ যান্ত্রিকভাবে উন্মুক্ত করার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। ছাদ বন্ধ থাকলে অর্ধশতাধিক ঝাড়বাতি মসজিদে আলো ছড়িয়ে রাখে। আর উন্মুক্ত করে দিলে সূর্যের আলো ও চাঁদের জোছনা উপভোগ করতে পারেন মুসল্লিরা।   ৩. আল-আজহার মসজিদ, কায়রো, মিসর
মিসরের কায়রোতে অবস্থিত বিশ্ববিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মসজিদটিই আল-আজহার মসজিদ হিসেবে পরিচিত। ৯৭২ সালে জাওহার আল-সিকিলির নতুন প্রতিষ্ঠিত রাজধানী কায়রোর জন্য এটি নির্মাণ করা হয় এবং রমজানের ৭ তারিখ এটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। আজ-জাহরা হজরত ফাতিমা (রা.)-এর উপাধি। আজ-জাহরা থেকেই আল-আজহার শব্দের উৎপত্তি। ফাতেমি আমলে নির্মিত হওয়ায় হজরত ফাতিমার পবিত্র স্মৃতির উদ্দেশে এর নাম রাখা হয় আল-আজহার। 
 
প্রতিষ্ঠার পর ৯৮৯ সালে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ৩৫ জন ইসলামি পণ্ডিতকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। এরপর ধীরে ধীরে মসজিদটি বিকশিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে তা অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। পুরো বিশ্বে যা আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত। আল-আজহার দীর্ঘদিন ধরে সুন্নি ধর্মতত্ত্ব ও ইসলামি আইন অধ্যয়নের জন্য মুসলিম বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠান বিবেচিত হয়ে আসছে। 

প্রতিষ্ঠার পর আইয়ুবি শাসনামলে এই বিদ্যালয় অবহেলার শিকার হয়। কারণ, শিয়া ইসমাইলিদের হাতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আইয়ুবি রাজবংশ আল-আজহারকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়নি। অবশ্য মামলুক শাসনামল থেকে আজ পর্যন্ত ভালোই উন্নতি করেছে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান এবং মিসরের ইসলামের প্রতীক মনে করা হয়। 

  ৪. কায়রুয়ান জামে মসজিদ, কায়রুয়ান, তিউনিশিয়া
তিউনিসিয়ার কায়রুয়ান জামে মসজিদের আফ্রিকার সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ। ৫০ হিজরি সালে সাহাবি হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর অন্যতম সামরিক কমান্ডার উকবা বিন নাফি (রহ.) ৯ হাজার বর্গমিটার জায়গার ওপর এটি নির্মাণ করেন। তিউনিসিয়ার কায়রুয়ান শহরও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন বলে কায়রুয়ান জামে মসজিদকে উকবা জামে মসজিদও বলা হয়। 

কায়রুয়ান মসজিদ থেকেই আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম আজান উচ্চারিত হয়েছিল বলে। শুরুতে এই মসজিদের আয়তন ছিল অনেক ছোট। অত্যন্ত সাধাসিধেভাবে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন শাসনামলে মসজিদের আয়তন ও শান-শওকত বৃদ্ধি পায়। মসজিদটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে একটি শক্তিশালী দুর্গ মসজিদটিকে বেষ্টন করে রেখেছে। 

কাইরুয়ান মসজিদে পাঁচটি গম্বুজ ও নয়টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। এই মসজিদের মেহরাবের কাছে নিচু ছাদবিশিষ্ট আরেকটি কক্ষ রয়েছে। যার নাম মাকসুরা। খলিফাদের নামাজ আদায় এবং তাদের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এই বিশেষ কক্ষ মাকসুরা নির্মাণ করা হয়েছিল। এই কক্ষের ভেতরে দাঁড়িয়ে মসজিদে অবস্থানরত মুসল্লিদের দেখা যাওয়ার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে এক জামাতে নামাজ আদায় করা যেত। 

কায়রুয়ান জামে মসজিদের প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে ইট ও পাথর দিয়ে। এই প্রাচীরের ভেতরেই তৈরি করা হয়েছে বড় বড় স্তম্ভ। আয়তাকার এসব কারুকাজ তিন স্তরবিশিষ্ট। এর দ্বিতীয় স্তরের কারুকাজ প্রথম স্তরের চেয়ে ছোট এবং তৃতীয় স্তরেরটি দ্বিতীয় স্তরের চেয়ে ছোট। কিন্তু নিচে দাঁড়িয়ে মিনারের দিকে তাকালে তিন স্তরের কারুকাজই সমান মনে হয়। কাইরুয়ান জামে মসজিদের মিম্বর খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছে এবং এটি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পুরোনো মিম্বর হিসেবে পরিচিত। 

  ৫. দ্য গ্রেট মস্ক অব ডিজেনি, মালি
প্রাচীন সভ্যতার দেশ মালির ডিজেনি মসজিদের নির্মাণশৈলী এখন পর্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তিমুক্ত। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাটির মসজিদ। মাটি, বালু ও পানির সাহায্যে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদটি। অবশ্য দেয়ালের গাঁথুনি শক্ত করতে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর তালগাছের কাঠ ব্যবহার হয়েছে। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ‘টোরন’। ১২০০ থেকে ১৩০০ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে তৈরি হয় মসজিদটি। মালির সুলতান কনবরু ইসলাম গ্রহণের পর তার রাজপ্রাসাদ ভেঙে ফেলে সেখানে এ মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদের পূর্ব দিকে নিজের বসবাসের জন্য অন্য একটি প্রাসাদ তৈরি করেন। তার পরবর্তী উত্তরাধিকারীরা এ মসজিদের দুটি মিনার নির্মাণ করেন এবং পরে মসজিদটির চারপাশের দেয়াল নির্মাণ করা হয়। 

মসজিদের দেয়ালগুলো নকশা করা। শুধু নকশা নয়, তালগাছের কাঠ মসজিদের দেয়ালে এমনভাবে গেঁথে দেওয়া হয়েছে, যাতে মাটির দেয়াল সহজে ধসে না যায়। এ ছাড়া শতাধিক মিনার সদৃশ ছোট ছোট কাঠামো রয়েছে। প্রতি বছর স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্যোগে মসজিদটির সংস্কারকাজ চলে। প্রচণ্ড গরমের দিনেও মসজিদের ভেতর অত্যন্ত ঠান্ডা থাকে। মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ৩ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। ১৯৮৮ সালে ইউনেসকো এ মসজিদটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। 

মসজিদের দেয়াল ও ছাদের ভার বহন করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ৯০টি মজবুত কাঠের কলাম। মসজিদের অভ্যন্তরে আলো-বাতাস প্রবেশের জন্য ছাদ ও দেয়ালে রাখা হয়েছে একাধিক জানালা। তবে সমস্যা হয় বর্ষা মৌসুমে। এ সময় বৃষ্টির পানিতে মসজিদের দেয়াল ও ছাদ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মসজিদের সংস্কারকাজে অংশগ্রহণ করাকে ডিজেনির বাসিন্দার গর্বের বিষয় মনে করেন। মসজিদ সংস্কারের এমন ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার নজির সম্ভবত বর্তমান বিশ্বের আর কোথাও নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যেভাবে অন্যদের ভুল শুধরে দিতেন নবীজি

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভুল করা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। জীবন চলার পথে ছোট-বড় ভুল সবারই হয়। কিন্তু সে ভুলকে কীভাবে সংশোধন করতে হবে, তা মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ হজরত মুহাম্মদ (সা.) শিখিয়ে গেছেন। তিনি ভুলকে লজ্জা বা অপমানের কারণ হিসেবে দেখেননি; বরং এটিকে ইতিবাচক পরিবর্তনের একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। মহানবী (সা.) কঠোরতা নয়, বরং ভদ্রতা, কোমলতা, সহানুভূতি এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে মানুষের ভুলত্রুটি শুধরেছেন।

ভুল সংশোধনে তাঁর প্রথম কৌশল ছিল কৌশলগত নীরবতা এবং ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ। তিনি সরাসরি সমালোচনা না করে এমনভাবে আচরণ করতেন, যেন ভুলকারী নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পারে। একবার সাহাবিদের কোনো কাজে ভুল দেখতে পেলে তিনি তাঁদের ছেড়ে অন্য পথে হেঁটেছেন, যা দেখে তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। আবার কখনো কখনো, বিশেষ করে যখন ভুলটি গুরুতর হতো, তখন তিনি কথার পুনরাবৃত্তি করে এর গুরুত্ব বোঝাতেন। তাঁর আরেকটি অসাধারণ পদ্ধতি ছিল দুর্বল ও অসহায়দের প্রতি কোমল আচরণ। একইভাবে, তিনি মানুষকে আল্লাহর ক্ষমতা ও করুণার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভুল থেকে ফিরিয়ে আনতেন।

মানুষের মর্যাদা রক্ষা ছিল তাঁর ভুল সংশোধনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। তিনি কখনো জনসমক্ষে কাউকে লজ্জা দিতেন না। তাই অনেক সময় তিনি বলতেন, ‘লোকদের কী হয়েছে যে তারা এমন এমন কাজ করছে!’ এভাবে তিনি ব্যক্তির পরিচয় গোপন রেখে সাধারণ ভুলকারীদের সতর্ক করতেন। এমনকি যারা বারবার একই ভুল করত, তাদেরও তিনি তিরস্কারের পরিবর্তে ভালোবাসা ও দোয়া করতেন। তাঁর এই সহানুভূতিশীল পদ্ধতি প্রমাণ করে, ভুল শুধরানোর মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিকে পরিশুদ্ধ করা, অপমান করা নয়।

রাসুল (সা.)-এর এ কৌশলগুলো আমাদের শেখায়, ভুল সংশোধন একটি শিল্প, যেখানে ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং সম্মানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু একটি ত্রুটি দূর করার বিষয় নয়; বরং ব্যক্তির অন্তরকে আলোকময় করে তোলার এক মহৎ প্রক্রিয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বাংলা, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১০ মিনিট
ফজর০৫: ১১ মিনিট০৬: ৩০ মিনিট
জোহর১১: ৫৩ মিনিট০৩: ৩৬ মিনিট
আসর০৩: ৩৭ মিনিট০৫: ১২ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৪ মিনিট০৬: ৩৩ মিনিট
এশা০৬: ৩৪ মিনিট০৫: ১০ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মিসরে কোরআন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হাফেজ আনাসকে বিমানবন্দরে সংবর্ধনা

ইসলাম ডেস্ক 
৭০টি দেশকে হারিয়ে বাংলাদেশি হাফেজ আনাসের বিশ্বজয়। ছবি: সংগৃহীত
৭০টি দেশকে হারিয়ে বাংলাদেশি হাফেজ আনাসের বিশ্বজয়। ছবি: সংগৃহীত

মিসরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত ৩২তম আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হাফেজ আনাস বিন আতিককে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় প্রথমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এর তাঁকে ছাদখোলা বাসে ঢাকার রাজপথে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

বিমানবন্দরে সংবর্ধনায় অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন বিশ্বজয়ী হাফেজ আনাস।
বিমানবন্দরে সংবর্ধনায় অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন বিশ্বজয়ী হাফেজ আনাস।

এ সময় বিশ্বজয়ী হাফেজ আনাস তাঁর অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা যে দেশের ক্বারীদের তিলাওয়াত শুনে কেরাত শিখি, সে দেশের প্রতিযোগিতায় আমার এই অর্জন সত্যিই অনেক আনন্দের। কেরাতের রাজধানীখ্যাত মিসরে গিয়ে এ বিজয় অর্জন বেশ কঠিন ছিল। তবে আমার ওস্তাদ, মা-বাবা এবং দেশের মানুষের দোয়ায় তা সম্ভব হয়েছে।’

হাফেজ আনাসের ওস্তাদ শায়খ নেছার আহমদ আন নাছিরী বলেন, ‘তৃতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বিশ্ব জয় করেছে আমার প্রিয় ছাত্র হাফেজ আনাস। সে বারবার বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করছে। এবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত ৩২তম আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে সে আবারও সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।’

হাফেজ আনাস ও তার ওস্তাদ শায়েখ নেছার আহমদ আন নাছিরীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
হাফেজ আনাস ও তার ওস্তাদ শায়েখ নেছার আহমদ আন নাছিরীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

শায়খ নেছার আহমদ আন নাছিরী জানান, গত শনিবার (৭ ডিসেম্বর) কায়রোতে আনুষ্ঠানিকভাবে ৩২তম আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন হয়। চার দিনব্যাপী এই আয়োজনে বিশ্বের ৭০টি দেশের প্রতিযোগীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রথম হয় বাংলাদেশ।

নেছার আহমদ আরও জানান, হাফেজ আনাস বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত জাতীয় বাছাইপর্বে প্রথম স্থান অর্জন করে এই বৈশ্বিক মঞ্চে অংশগ্রহণের যোগ্যতা লাভ করেন।

প্রসঙ্গত, হাফেজ আনাস রাজধানীর মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার ছাত্র। তাঁর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের লোপাড়া গ্রামে। এর আগেও হাফেজ আনাস বিন আতিক সৌদি আরব ও লিবিয়ায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুমার নামাজ ছেড়ে দেওয়ার ভয়াবহ পরিণতি

শরিফ আহমাদ
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জুমার দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। জুমার নামাজ প্রসঙ্গে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, জুমার দিন যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা ত্যাগ করো। এটিই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পারো।’ (সুরা জুমুআ: ৯) তাই আল্লাহর আদেশ মেনে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করতে হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর এই আদেশ অমান্য করে, জুমার নামাজ ত্যাগ করে, তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তাঁরা রাসুল (সা.)-কে মিম্বরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, ‘মানুষ যেন জুমার নামাজ ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকে। অন্যথায় আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরে মোহর এঁটে দেবেন। এরপর তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৮৬৫)

মুনাফিক ব্যক্তি ছাড়া কোনো মুসলমান ফরজ নামাজ ত্যাগ করতে পারে না। নামাজ আদায়ে বিলম্ব হলে প্রকৃত মুমিনের হৃদয়ে অপরাধপ্রবণতা কাজ করে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিশেষ অপারগতা ছাড়া জুমার নামাজ তরক করে, তার নামে মুনাফিক উপাধি লেখা হয় এমন কিতাবে, যার লেখা মোছা যায় না এবং পরিবর্তনও করা যায় না।’ (কিতাবুল উম্ম: ১/২৩৯)

শুক্রবার জুমার নামাজ ছুটে গেলে সেদিনের জোহরের নামাজ আদায় করতে হয়। নামাজের কাফফারা দিতে হয়। সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা ওজরে জুমার নামাজ ত্যাগ করে, সে যেন এক দিনার সদকা করে। যদি তার পক্ষে এক দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) সদকা করা সম্ভব না হয়, তবে যেন অর্ধ দিনার সদকা করে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১০৫৩)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত