Ajker Patrika

হাসি, আনন্দ ও মুমিনের জীবনচর্চা

কাউসার লাবীব
মুসলিম। ছবি: সংগৃহীত
মুসলিম। ছবি: সংগৃহীত

হাসি মানব চরিত্রের এক স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যের প্রতীক। জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আমাদের জীবনে পালাক্রমে আসে। ইসলাম এই মানবিক অনুভূতিকে শুধু অনুমোদনই দেয় না, বরং এটিকে কল্যাণ ও পুণ্যের মাধ্যমে রূপান্তরিত করেছে। তবে মুমিনের জীবনচর্চায় হাসি বা আনন্দের প্রকাশ হবে সর্বদা পরিমিত ও মার্জিত।

ইসলামে হাসিমুখে কথা বলা বা অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাকে সদকা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজই সদকা, আর এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো অন্য ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা।’ সামান্য এই মুচকি হাসি এক নীরব ভাষার মতো, যা দূরের মানুষকে আপন করে তোলে, ক্লান্ত মনে প্রশান্তি আনে এবং উত্তম চরিত্রের পরিচয় বহন করে।

হাসি ও আনন্দের পাশাপাশি মুমিনের জীবনচর্চায় উত্তম কথা বলাকেও ইসলামে একপ্রকার সদকা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের মানুষের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করতে এবং কোমল ভাষায় সম্বোধন করতে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে শয়তান তাদের মাঝে সংঘর্ষ তৈরি করতে না পারে। মোটকথা, ইসলামে হাসি হলো ভালোবাসা বিলানোর, সওয়াব অর্জনের এবং সম্পর্ক সুদৃঢ় করার একটি মাধ্যম। মুমিন এই হাসি ও আনন্দকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে কাজে লাগায়, যা তাকে ইহকাল ও পরকালের কল্যাণের দিকে নিয়ে যায়।

আনন্দের সীমা ও পরিমিতির গুরুত্ব

যদিও হাসি-আনন্দ মানুষের জীবনে বৈধ, তবে তা অবশ্যই শরিয়তের গণ্ডিতে থাকতে হবে। কারণ ইসলামে হাসির ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা বা অট্টহাসি দেওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। মুমিনের হাসি হবে মুচকি, যাতে কণ্ঠনালির আলজিভ দেখা না যায়। উচ্চস্বরে হাসা ইসলামে নিষিদ্ধ। এমনকি ফিকহের দৃষ্টিকোণ থেকে, নামাজরত অবস্থায় অট্টহাসি দিলে অজুও নষ্ট হয়ে যায়।

রাসুল (সা.) সতর্ক করেছেন, ‘তোমরা বেশি হাসবে না। কেননা অধিক হাসি অন্তরের মৃত্যু ঘটায়।’ অর্থাৎ, মাত্রাতিরিক্ত হাসি মানুষকে আল্লাহবিমুখ করে তোলে এবং আধ্যাত্মিকতার মৃত্যু ঘটায়। ইসলাম হাসি বা কৌতুকের ক্ষেত্রে কিছু ক্ষতিকর দিক চিহ্নিত করে সেগুলোকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। এগুলো হলো—

এক. মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া: মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলা মারাত্মক গর্হিত কাজ। রাসুল (সা.) এ ধরনের মিথ্যাবাদীদের জন্য ধ্বংসের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

দুই. তাচ্ছিল্য করা: অন্যের সম্মানহানি করা বা কোনো মুসলিম ভাইকে তাচ্ছিল্য করে হাসা ইসলামে অনুমোদিত নয়। ব্যক্তিকে মন্দ প্রমাণ করার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে তার ভাইকে তুচ্ছ মনে করে।

তিন. শরিয়তের সীমা পেরোনো: পরিবার বা সঙ্গীদের সঙ্গে হাসি-কৌতুক, কবিতা আবৃত্তি বা স্মৃতিচারণ দোষের নয়, যদি তাতে মিথ্যার মিশ্রণ না ঘটে এবং শরিয়তের সীমা পেরিয়ে না যায়।

ইসলামে হাসি ও আনন্দ মানবজীবনের প্রাকৃতিক অংশ হলেও তা সর্বদা পরিমিত ও মার্জিত হওয়া উচিত। মুমিনের হাসি হলো সদকা, সম্পর্ক সুদৃঢ় করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি মাধ্যম। তবে অতিরিক্ত হাসি, মিথ্যা বা তাচ্ছিল্যের হাসি ইসলামের দৃষ্টিতে অনুমোদিত নয়। তাই সত্য, সৌজন্য ও সীমাবদ্ধতার সঙ্গে হাসি ও আনন্দকে ব্যবহার করলে মুমিনের জীবন হবে শান্তিপূর্ণ, কল্যাণময় এবং আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৪ হাজার এএসআই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি

দেড় মাস ধরে কর্মস্থলে নেই সহকারী কমিশনার, নিয়োগ বাতিল করল সরকার

দনবাস রাশিয়ার দখলে চলে গেছে, সেটা মেনেই যুদ্ধ শেষ করো—জেলেনস্কিকে ট্রাম্প

জুবায়েদ হত্যার নেপথ্যে ‘প্রেমের সম্পর্ক’, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আটক ৩

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

এলাকার খবর
Loading...