ইসলাম ডেস্ক
বর্তমানে আমাদের সমাজে সবচেয়ে প্রচলিত ও উদ্বেগজনক একটি আচরণ হলো কাউকে নিয়ে উপহাস করা বা কথায় কথায় গালি দেওয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং আধুনিকতার প্রভাবে ‘ট্রল’ বা ঠাট্টা-বিদ্রূপ, ‘স্ল্যাং’ বা অশালীন ভাষা ব্যবহার এখন যেন একধরনের স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রাপ্তবয়স্ক থেকে শুরু করে নাবালক শিশুদের মুখেও এসব শব্দ এখন স্বাভাবিক। এমনকি, কাউকে নিয়ে ট্রল না করা বা গালির ব্যবহার না জানা লোকদের অনেক ক্ষেত্রে যুগসচেতন হিসেবেই গণ্য করা হয় না। মেসেঞ্জার গ্রুপে তথাকথিত নিকনেম দেওয়ার নামেও একে অপরের প্রতি গর্হিত ও মন্দ নাম এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা আধুনিকতার অংশ বলে ভুল করা হচ্ছে। অথচ, শান্তির ধর্ম ইসলাম এসব গর্হিত কাজ থেকে মুমিনদের কঠোরভাবে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
উপহাস ও মন্দ নামে ডাকা: কোরআনের কঠোর হুঁশিয়ারি
ইসলামি নীতিশাস্ত্রে কাউকে উপহাস করা বা মন্দ নামে ডাকা মারাত্মক অপরাধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, কোনো পুরুষ যেন অপর পুরুষকে উপহাস না করে। কেননা, হতে পারে যাকে উপহাস করা হচ্ছে, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম। আর কোনো নারীও যেন অপর কোনো নারীকে উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হচ্ছে, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করবে না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডাকবে না। আল্লাহর ওপর ইমান আনার পর কাউকে মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ। যারা এ ধরনের আচরণ হতে নিবৃত্ত না হয় তারাই জালিম।’ (সুরা হুজুরাত: ১১)
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা এমন আচরণকারীকে সরাসরি জালিম বা অত্যাচারী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। অথচ আমরা প্রতিদিনের আড্ডায় হাসির ছলে বন্ধুদের কত গর্হিত নামে ডাকি, যা এই ঐশী নির্দেশের সম্পূর্ণ বিরোধী।
গালি দেওয়া: নিজের পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেওয়া
একজন মুসলমান কখনোই অপর মুসলমানকে অশ্লীল ভাষায় গালি দিতে পারে না। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজে বয়োজ্যেষ্ঠরাও গালি বা স্ল্যাং থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। এ ব্যাপারে রাসুল (সা.)-এর একটি কঠিন সতর্কবাণী রয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘কবিরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো নিজের পিতা-মাতাকে লানত করা।’
জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপন পিতা-মাতাকে কোনো লোক কীভাবে লানত করতে পারে?’
জবাবে তিনি বলেন, ‘যে অন্যের পিতাকে গালি দেয়, তখন সে তার নিজের পিতাকে গালি দেয়। যে অন্যের মাকে গালি দেয়, তখন সে তার মাকে গালি দেয়।’ (সহিহ্ বুখারি: ৫৯৭৩)
এই হাদিস প্রমাণ করে, সামান্য গালির মাধ্যমে আমরা না জেনে কবিরা গুনাহে লিপ্ত হচ্ছি এবং নিজেদের আল্লাহর ক্রোধের পাত্র বানাচ্ছি।
শত্রু ও মৃত ব্যক্তিকেও গালি নয়
বর্তমানে সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়েও অনেকে গালমন্দকে হাতিয়ার বানিয়ে ফেলেন। কিন্তু শান্তির ধর্ম ইসলামে শত্রুকেও গালমন্দ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
মক্কা বিজয়ের পর রাসুল (সা.) তাঁর ঘোর শত্রু আবু জাহেলের ছেলে ইকরামাকে (যিনি তখন ইসলাম গ্রহণ করেননি) আসতে দেখে সাহাবিদের বলে দিয়েছিলেন, ‘ইকরামা ইবনে আবু জাহেল তোমাদের কাছে আসছে। অতএব, তোমরা তার পিতাকে গালি দিয়ো না। কেননা, মৃতদের গালি দেওয়া জীবিতদের কষ্ট দেয়। অথচ মৃত ব্যক্তি পর্যন্ত তা পৌঁছায় না।’ (সিরাতে ইবনে হিশাম)
ইসলাম যেখানে একজন কাফের বা কঠিন শত্রুর পিতাকেও গালি দিতে নিষেধ করেছে, সেখানে আমরা দিনের পর দিন ঠাট্টার ছলে অপর মুসলমানকে গালি দিয়ে যাচ্ছি। প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করতে আমরা মরিয়া হয়ে উঠি।
অথচ পবিত্র কোরআনে মুমিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে, আর যখন মূর্খরা তাদের (অশালীন ভাষায়) সম্বোধন করতে আসে তখন তাদের বলে—সালাম।’ (সুরা ফুরকান: ৬৩)
সুতরাং, আধুনিকতা বা তথাকথিত ‘স্মার্টনেস’-এর নামে ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও অশালীন ভাষা ব্যবহার করা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি গর্হিত ও জুলুমের কাজ। একজন মুমিনের কর্তব্য হলো নিজেকে সংযত রাখা এবং নম্র ও মার্জিত ভাষার মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা।
লেখক: মাইফুল জামান ঝুমু, শিক্ষার্থী, ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বর্তমানে আমাদের সমাজে সবচেয়ে প্রচলিত ও উদ্বেগজনক একটি আচরণ হলো কাউকে নিয়ে উপহাস করা বা কথায় কথায় গালি দেওয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং আধুনিকতার প্রভাবে ‘ট্রল’ বা ঠাট্টা-বিদ্রূপ, ‘স্ল্যাং’ বা অশালীন ভাষা ব্যবহার এখন যেন একধরনের স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রাপ্তবয়স্ক থেকে শুরু করে নাবালক শিশুদের মুখেও এসব শব্দ এখন স্বাভাবিক। এমনকি, কাউকে নিয়ে ট্রল না করা বা গালির ব্যবহার না জানা লোকদের অনেক ক্ষেত্রে যুগসচেতন হিসেবেই গণ্য করা হয় না। মেসেঞ্জার গ্রুপে তথাকথিত নিকনেম দেওয়ার নামেও একে অপরের প্রতি গর্হিত ও মন্দ নাম এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা আধুনিকতার অংশ বলে ভুল করা হচ্ছে। অথচ, শান্তির ধর্ম ইসলাম এসব গর্হিত কাজ থেকে মুমিনদের কঠোরভাবে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
উপহাস ও মন্দ নামে ডাকা: কোরআনের কঠোর হুঁশিয়ারি
ইসলামি নীতিশাস্ত্রে কাউকে উপহাস করা বা মন্দ নামে ডাকা মারাত্মক অপরাধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, কোনো পুরুষ যেন অপর পুরুষকে উপহাস না করে। কেননা, হতে পারে যাকে উপহাস করা হচ্ছে, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম। আর কোনো নারীও যেন অপর কোনো নারীকে উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হচ্ছে, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করবে না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডাকবে না। আল্লাহর ওপর ইমান আনার পর কাউকে মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ। যারা এ ধরনের আচরণ হতে নিবৃত্ত না হয় তারাই জালিম।’ (সুরা হুজুরাত: ১১)
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা এমন আচরণকারীকে সরাসরি জালিম বা অত্যাচারী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। অথচ আমরা প্রতিদিনের আড্ডায় হাসির ছলে বন্ধুদের কত গর্হিত নামে ডাকি, যা এই ঐশী নির্দেশের সম্পূর্ণ বিরোধী।
গালি দেওয়া: নিজের পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেওয়া
একজন মুসলমান কখনোই অপর মুসলমানকে অশ্লীল ভাষায় গালি দিতে পারে না। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজে বয়োজ্যেষ্ঠরাও গালি বা স্ল্যাং থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। এ ব্যাপারে রাসুল (সা.)-এর একটি কঠিন সতর্কবাণী রয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘কবিরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো নিজের পিতা-মাতাকে লানত করা।’
জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপন পিতা-মাতাকে কোনো লোক কীভাবে লানত করতে পারে?’
জবাবে তিনি বলেন, ‘যে অন্যের পিতাকে গালি দেয়, তখন সে তার নিজের পিতাকে গালি দেয়। যে অন্যের মাকে গালি দেয়, তখন সে তার মাকে গালি দেয়।’ (সহিহ্ বুখারি: ৫৯৭৩)
এই হাদিস প্রমাণ করে, সামান্য গালির মাধ্যমে আমরা না জেনে কবিরা গুনাহে লিপ্ত হচ্ছি এবং নিজেদের আল্লাহর ক্রোধের পাত্র বানাচ্ছি।
শত্রু ও মৃত ব্যক্তিকেও গালি নয়
বর্তমানে সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়েও অনেকে গালমন্দকে হাতিয়ার বানিয়ে ফেলেন। কিন্তু শান্তির ধর্ম ইসলামে শত্রুকেও গালমন্দ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
মক্কা বিজয়ের পর রাসুল (সা.) তাঁর ঘোর শত্রু আবু জাহেলের ছেলে ইকরামাকে (যিনি তখন ইসলাম গ্রহণ করেননি) আসতে দেখে সাহাবিদের বলে দিয়েছিলেন, ‘ইকরামা ইবনে আবু জাহেল তোমাদের কাছে আসছে। অতএব, তোমরা তার পিতাকে গালি দিয়ো না। কেননা, মৃতদের গালি দেওয়া জীবিতদের কষ্ট দেয়। অথচ মৃত ব্যক্তি পর্যন্ত তা পৌঁছায় না।’ (সিরাতে ইবনে হিশাম)
ইসলাম যেখানে একজন কাফের বা কঠিন শত্রুর পিতাকেও গালি দিতে নিষেধ করেছে, সেখানে আমরা দিনের পর দিন ঠাট্টার ছলে অপর মুসলমানকে গালি দিয়ে যাচ্ছি। প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করতে আমরা মরিয়া হয়ে উঠি।
অথচ পবিত্র কোরআনে মুমিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে, আর যখন মূর্খরা তাদের (অশালীন ভাষায়) সম্বোধন করতে আসে তখন তাদের বলে—সালাম।’ (সুরা ফুরকান: ৬৩)
সুতরাং, আধুনিকতা বা তথাকথিত ‘স্মার্টনেস’-এর নামে ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও অশালীন ভাষা ব্যবহার করা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি গর্হিত ও জুলুমের কাজ। একজন মুমিনের কর্তব্য হলো নিজেকে সংযত রাখা এবং নম্র ও মার্জিত ভাষার মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা।
লেখক: মাইফুল জামান ঝুমু, শিক্ষার্থী, ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
রবিউস সানির এই জুমা আমাদের শেখায় যে ধর্ম কেবল রীতিনীতি নয়, বরং আত্মার পরিচর্যা। প্রতিটি আমলের মাধ্যমে আমরা শুধু ইবাদত করি না, বরং নিজেদের হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করি। এই বদলটাই জুমার আসল মাহাত্ম্য। এদিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—তুমি এখনো বদলাতে পারো, তুমি এখনো ভালো হতে পারো।
২ ঘণ্টা আগেনামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৮ ঘণ্টা আগেরাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও মহব্বত ইমানের অন্যতম মৌলিক শর্ত। তাঁর প্রতি ভালোবাসা ছাড়া পূর্ণ মুমিন হওয়া সম্ভব নয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের প্রাণের চেয়ে অধিক প্রিয়।’ (সুরা আহজাব: ৬)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন...
১ দিন আগেনামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১ দিন আগে