আমজাদ ইউনুস
কুব্বাত আস-সাখরা ৬৯১ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত ইসলামি স্থাপত্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। আরবি কুব্বা অর্থ গম্বুজ আর সাখরা অর্থ পাথর। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায়, ‘পাথরের গম্বুজ’। ইংরেজিতে এটি ‘দি ডোম অব দ্য রক’ নামে পরিচিত। জেরুজালেমের পুরোনো শহরের টেম্পল মাউন্টের ওপর এর অবস্থান। মুসলমানদের কাছে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় কারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখান থেকেই মহানবী (সা.) মিরাজে গমন করেছিলেন।
এটি ইহুদিদের কাছে টেম্পল মাউন্ট নামে পরিচিত। একে জেরুজালেমের প্রথম এবং দ্বিতীয় মন্দিরের স্থান বলে বিশ্বাস করা হয়। খ্রিষ্টানদের জন্য স্থানটি যিশুর জীবনের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্থান বলে বিশ্বাস করা হয়।
উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ৬৮৫ খ্রিষ্টাব্দে এই গম্বুজের নির্মাণকাজ শুরু করেন। ৬৯১ খ্রিষ্টাব্দে কাজ শেষ হয়। এই বরকতময় কাজের জন্য তিনি নিজে প্রচুর অর্থ নিয়ে রাজমিস্ত্রি ও প্রকৌশলীদের সঙ্গে বায়তুল মোকাদ্দাসে যান এবং পুণ্যবান ব্যক্তিত্ব রাজা ইবনে হাইওয়া (রহ.)-কে এ কাজের দায়িত্ব সোপর্দ করেন।
গম্বুজটিকে প্রাসাদের আকারে নির্মাণ করা হয়। এর চারটি দরজা বানানো হয়। ছাদে শালকাঠের ৬০ হাজার টুকরো দিয়ে কারুকার্য করা হয়। ১ হাজার প্রদীপ দিয়ে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। এর স্থাপত্য ও মোজাইক বাইজেন্টাইন চার্চ ও প্রাসাদের আদলে গড়ে তোলা হয়েছিল। খলিফা আবদুল মালিক দুজন প্রকৌশলীকে দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিক বাইসানের বাসিন্দা রাজা ইবনে হাইওয়া ও খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের খ্রিষ্টান দাস জেরুজালেমের ইয়াজিদ ইবনে সালাম।
গম্বুজটি তৈরিতে প্রায় ১ লাখ স্বর্ণমুদ্রা খরচ হয়েছিল। ঐতিহাসিকেরা এটি নির্মাণের রাজনৈতিক কারণ বর্ণনা করেছেন।
খলিফা আবদুল মালিকের প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের তখন মক্কায় খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছিলেন। আবদুল মালিক সিরিয়াবাসীকে বিশেষভাবে আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের সংস্পর্শ থেকে বিরত রাখার জন্য জেরুজালেমে কাবার অনুরূপ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর এ স্থাপত্য নির্মাণ করেন।
আবার অনেকেই এর পেছনে ধর্মীয় কারণ বর্ণনা করেন। আরবরা সিরিয়া জয় করার পর খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের গির্জা ও উপাসনালয়ের কারুকার্য ও মনোরম শোভা অবলোকন করে অভিভূত হওয়ার এবং হীনম্মন্যতায় ভোগার আশঙ্কা ছিল। এ আশঙ্কাকে ভিত্তি করে খলিফা আবদুল মালিক জেরুজালেমে ‘কুব্বাত আস সাখরা’ নির্মাণ করেন এবং আরবদের মনোযোগ এদিকে নিবদ্ধ রাখেন।
মুহাম্মদ ইবনে কালাউনের শাসনামলে এর জন্য তামার দরজা তৈরি করা হয়েছিল। ১১৮৭ সালের ২ অক্টোবর সুলতান সালাউদ্দিন জেরুজালেম জয় করেন। কুব্বাত আস-সাখরাকে পুনরায় মুসলিম স্থান হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এর চূড়ায় স্থাপিত ক্রুশ সরিয়ে চাঁদ স্থাপন করা হয়। নিচে পাথরের চারপাশে কাঠের আবরণ দেওয়া হয়। সালাউদ্দিনের ভাতিজা আল মালিক আল মুয়াজ্জাম ইসা ভবনের পুনর্গঠনের দায়িত্ব পালন করেন।
১৪৬৭ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান আশরাফ কাইতবে স্থাপনাটির প্রধান প্রবেশদ্বারের তামার দরজাগুলো নবায়ন করেন। সিসা দিয়ে আবৃত ড্রামের ওপর স্থাপিত কুব্বাত আস সাখরা প্রধান আকর্ষণ কাঠের তৈরি স্বর্ণমণ্ডিত গোলাকার অপূর্ব সুন্দর গম্বুজ। কুব্বাত আস-সাখরার অভ্যন্তরে গোলাকার বৃত্তাকৃতির করে সাজানো স্তম্ভগুলোর অর্ধবৃত্তাকৃতি খিলানের ওপর কাঠের তৈরি বিখ্যাত গম্বুজটি নির্মাণ করা হয়। গম্বুজের ওপরের অংশ স্বতন্ত্র ও নান্দনিক অলংকরণে সজ্জিত। এর শিলালিপি থেকে বোঝা যায়, এটি খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীতে ইবনে কালাউন তৈরি করেছিলেন।
১৯৯৪ সালের সংস্কারে এই গম্বুজে স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া হয়। কুব্বাত আস-সাখরার অভ্যন্তরীণ দেয়াল এবং বাইরের সম্মুখভাগের নিচের অংশগুলো রঙিন মোজাইকে আচ্ছাদিত।মোজাইকগুলো কাচ, পাথর ও সিরামিকের ছোট, রঙিন টুকরো দিয়ে গঠিত। কোরআন ও অন্যান্য ইসলামি গ্রন্থ থেকে শিলালিপি তৈরি করার জন্য ক্যালিগ্রাফিক, জটিল জ্যামিতিক নিদর্শন এবং শৈলীযুক্ত ফুলের মোটিফ যত্নসহকারে সাজানো হয়েছে।
বর্তমান গম্বুজের বেশির ভাগ অংশ খ্রিষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর নির্মিত শৈলীতে অবশিষ্ট আছে। খলিফা আল-জাহিরের আমলে গম্বুজের নিচে সুরা আল-ইসরা লেখা হয়েছিল।
লেখক: শিক্ষক ও অনুবাদক
কুব্বাত আস-সাখরা ৬৯১ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত ইসলামি স্থাপত্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। আরবি কুব্বা অর্থ গম্বুজ আর সাখরা অর্থ পাথর। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায়, ‘পাথরের গম্বুজ’। ইংরেজিতে এটি ‘দি ডোম অব দ্য রক’ নামে পরিচিত। জেরুজালেমের পুরোনো শহরের টেম্পল মাউন্টের ওপর এর অবস্থান। মুসলমানদের কাছে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় কারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখান থেকেই মহানবী (সা.) মিরাজে গমন করেছিলেন।
এটি ইহুদিদের কাছে টেম্পল মাউন্ট নামে পরিচিত। একে জেরুজালেমের প্রথম এবং দ্বিতীয় মন্দিরের স্থান বলে বিশ্বাস করা হয়। খ্রিষ্টানদের জন্য স্থানটি যিশুর জীবনের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্থান বলে বিশ্বাস করা হয়।
উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ৬৮৫ খ্রিষ্টাব্দে এই গম্বুজের নির্মাণকাজ শুরু করেন। ৬৯১ খ্রিষ্টাব্দে কাজ শেষ হয়। এই বরকতময় কাজের জন্য তিনি নিজে প্রচুর অর্থ নিয়ে রাজমিস্ত্রি ও প্রকৌশলীদের সঙ্গে বায়তুল মোকাদ্দাসে যান এবং পুণ্যবান ব্যক্তিত্ব রাজা ইবনে হাইওয়া (রহ.)-কে এ কাজের দায়িত্ব সোপর্দ করেন।
গম্বুজটিকে প্রাসাদের আকারে নির্মাণ করা হয়। এর চারটি দরজা বানানো হয়। ছাদে শালকাঠের ৬০ হাজার টুকরো দিয়ে কারুকার্য করা হয়। ১ হাজার প্রদীপ দিয়ে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। এর স্থাপত্য ও মোজাইক বাইজেন্টাইন চার্চ ও প্রাসাদের আদলে গড়ে তোলা হয়েছিল। খলিফা আবদুল মালিক দুজন প্রকৌশলীকে দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিক বাইসানের বাসিন্দা রাজা ইবনে হাইওয়া ও খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের খ্রিষ্টান দাস জেরুজালেমের ইয়াজিদ ইবনে সালাম।
গম্বুজটি তৈরিতে প্রায় ১ লাখ স্বর্ণমুদ্রা খরচ হয়েছিল। ঐতিহাসিকেরা এটি নির্মাণের রাজনৈতিক কারণ বর্ণনা করেছেন।
খলিফা আবদুল মালিকের প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের তখন মক্কায় খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছিলেন। আবদুল মালিক সিরিয়াবাসীকে বিশেষভাবে আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের সংস্পর্শ থেকে বিরত রাখার জন্য জেরুজালেমে কাবার অনুরূপ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর এ স্থাপত্য নির্মাণ করেন।
আবার অনেকেই এর পেছনে ধর্মীয় কারণ বর্ণনা করেন। আরবরা সিরিয়া জয় করার পর খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের গির্জা ও উপাসনালয়ের কারুকার্য ও মনোরম শোভা অবলোকন করে অভিভূত হওয়ার এবং হীনম্মন্যতায় ভোগার আশঙ্কা ছিল। এ আশঙ্কাকে ভিত্তি করে খলিফা আবদুল মালিক জেরুজালেমে ‘কুব্বাত আস সাখরা’ নির্মাণ করেন এবং আরবদের মনোযোগ এদিকে নিবদ্ধ রাখেন।
মুহাম্মদ ইবনে কালাউনের শাসনামলে এর জন্য তামার দরজা তৈরি করা হয়েছিল। ১১৮৭ সালের ২ অক্টোবর সুলতান সালাউদ্দিন জেরুজালেম জয় করেন। কুব্বাত আস-সাখরাকে পুনরায় মুসলিম স্থান হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এর চূড়ায় স্থাপিত ক্রুশ সরিয়ে চাঁদ স্থাপন করা হয়। নিচে পাথরের চারপাশে কাঠের আবরণ দেওয়া হয়। সালাউদ্দিনের ভাতিজা আল মালিক আল মুয়াজ্জাম ইসা ভবনের পুনর্গঠনের দায়িত্ব পালন করেন।
১৪৬৭ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান আশরাফ কাইতবে স্থাপনাটির প্রধান প্রবেশদ্বারের তামার দরজাগুলো নবায়ন করেন। সিসা দিয়ে আবৃত ড্রামের ওপর স্থাপিত কুব্বাত আস সাখরা প্রধান আকর্ষণ কাঠের তৈরি স্বর্ণমণ্ডিত গোলাকার অপূর্ব সুন্দর গম্বুজ। কুব্বাত আস-সাখরার অভ্যন্তরে গোলাকার বৃত্তাকৃতির করে সাজানো স্তম্ভগুলোর অর্ধবৃত্তাকৃতি খিলানের ওপর কাঠের তৈরি বিখ্যাত গম্বুজটি নির্মাণ করা হয়। গম্বুজের ওপরের অংশ স্বতন্ত্র ও নান্দনিক অলংকরণে সজ্জিত। এর শিলালিপি থেকে বোঝা যায়, এটি খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীতে ইবনে কালাউন তৈরি করেছিলেন।
১৯৯৪ সালের সংস্কারে এই গম্বুজে স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া হয়। কুব্বাত আস-সাখরার অভ্যন্তরীণ দেয়াল এবং বাইরের সম্মুখভাগের নিচের অংশগুলো রঙিন মোজাইকে আচ্ছাদিত।মোজাইকগুলো কাচ, পাথর ও সিরামিকের ছোট, রঙিন টুকরো দিয়ে গঠিত। কোরআন ও অন্যান্য ইসলামি গ্রন্থ থেকে শিলালিপি তৈরি করার জন্য ক্যালিগ্রাফিক, জটিল জ্যামিতিক নিদর্শন এবং শৈলীযুক্ত ফুলের মোটিফ যত্নসহকারে সাজানো হয়েছে।
বর্তমান গম্বুজের বেশির ভাগ অংশ খ্রিষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর নির্মিত শৈলীতে অবশিষ্ট আছে। খলিফা আল-জাহিরের আমলে গম্বুজের নিচে সুরা আল-ইসরা লেখা হয়েছিল।
লেখক: শিক্ষক ও অনুবাদক
মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম কোরবানি। কোরবানির গোশত নিজে এবং ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাইকে খাওয়ানো যায়। আল্লাহ তাআলার জন্য পশু জবাই করা হলেও তার মাংস আমাদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ মনে করেন, কোরবানির মাংস তিন ভাগে...
৩ ঘণ্টা আগেদ্বিতীয় হিজরিতে কোরবানির বিধান আসার পর থেকে যত বছর আল্লাহর নবী (সা.) জীবিত ছিলেন, প্রতিবছর কোরবানি দিয়েছেন। নবী করিম (সা.)-এর সাহাবিরাও এই ইবাদতে খুব যত্নশীল ছিলেন। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) দুটি ভেড়া কোরবানি দিতেন।
৭ ঘণ্টা আগেদরজায় কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। এই ঈদের অন্যতম ইবাদত পশু কোরবানি করা—তাই পশু কিনতে ভিড় বাড়ছে হাটমুখী মানুষের। কোরবানির পশুর বিধান হলো, তা যদি এই পরিমাণ ল্যাংড়া হয় যে, জবাই করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে অক্ষম—তাহলে সেই পশু দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হবে না।
১৮ ঘণ্টা আগেতাহাজ্জুদ মুমিনের মর্যাদার সোপান। রবের প্রিয় হওয়ার অন্যতম মাধ্যম। ফরজ নামাজের পরই তাহাজ্জুদের স্থান। তাহাজ্জুদের মাধ্যমে পাপ মুছে যায়। আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সরাসরি সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তাহাজ্জুদ প্রাণহীন হৃদয় সজীব করার শ্রেষ্ঠ উপায়। তাহাজ্জুদের বিশেষ পাঁচ পুরস্কার রয়েছে—
২১ ঘণ্টা আগে