Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ‘আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ’ বেলুন, চীনের দুঃখপ্রকাশ

যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ‘আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ’ বেলুন, চীনের দুঃখপ্রকাশ

যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে উড়া একটি সন্দেহজনক নজরদারি বেলুনকে ঘিরে আলোচনা চলছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এটিকে চীনের উচ্চতর ‘নজরদারি’ বেলুন হিসেবে আখ্যায়িত করলেও চীনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এটি ‘আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ’ বেলুন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় অনিচ্ছাকৃত প্রবেশের জন্য এক বিবৃতিতে দুঃখপ্রকাশ করেছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

আজ শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে বিবিসি, আল জাজিরা ও এএফপি। 

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এই উড়োজাহাজের গতি সীমিত। এটি ‘মনুষ্যহীন বেসামরিক বিমানযান’। বাতাসের কারণে পরিকল্পিত রুট থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। প্রধানত আবহাওয়া সংক্রান্ত উদ্দেশে ও গবেষণায় এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় অনিচ্ছাকৃত প্রবেশের জন্য চীন অনুতপ্ত। 

বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চীন। অপ্রত্যাশিতভাবে বাতাসে এটি উড়ে গেছে। 

প্রসঙ্গত, গত বুধবার মন্টানা রাজ্যের ওপরে বেলুনটি উড়তে দেখা যায়। এর আগে বেলুনটি আলাস্কার অ্যালেউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জ ও কানাডার মধ্য দিয়ে উড়েছিল। 

বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তারা বেলুনটিকে গুলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্তে থেকে সরে এসেছেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বেলুনটিকে গুলি করার নির্দেশ দিলে এফ-২২ যুদ্ধবিমান প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু ওই দিনই প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন এবং মার্কিন জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলিসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা গোয়েন্দা বেলুনটির হুমকি মূল্যায়ন করতে জরুরি বৈঠক করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন, গুলি করা হলে বেলুনটির ধ্বংসাবশেষ মানুষের জন্য বিপদ ঘটাতে পারে। তাই তাঁরা গুলি না করার পরামর্শ দেন। 

উল্লেখ্য, মন্টানা একটি জনবহুল রাজ্য। এখানে বেলুনটি ধ্বংস হলে বাসিন্দাদের ক্ষতি হতে পারে। এই এলাকায় তিনটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ফিল্ড রয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, বেলুনটি সম্ভবত তথ্য সংগ্রহের জন্য সংবেদনশীল সাইটের ওপর দিয়ে উড়ছিল। 

প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, বেলুনটি যুক্তরাজ্যের জন্য এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো হুমকি নয়। কারণ আমাদের কর্মকর্তারা জানেন, বেলুনটি এখন সুনির্দিষ্টভাবে কোথায় আছে এবং কোন কোন এলাকা অতিক্রম করছে। 

বাণিজ্যিক উড়োজাহাজগুলো যে উচ্চতায় উড্ডয়ন করে, বেলুনটি সেই উচ্চতার ওপরে থাকায় এটি উড়োজাহাজ চলাচলের জন্যও তেমন হুমকি নয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা। 

প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বেইজিংয়ে চীনা কর্মকর্তাদের কাছেও বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। 

এদিকে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার পেন্টাগন এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করেছে। তবে সংবাদ সম্মেলনে পেন্টাগনের কর্মকর্তারা বেলুনটির বর্তমান অবস্থান প্রকাশ করেননি এবং এ ব্যাপারে বিশদ কোনো বিবরণও দেননি। তাঁরা শুধু বলেছেন, এ ধরনের নজরদারি বেলুন বেশ কয়েক বছর ধরেই শনাক্ত করা হচ্ছে। তবে এই বেলুনটি দীর্ঘ সময় ধরে উড়তে দেখা যাচ্ছে। 

মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর মার্কো রুবি চীনা নজরদারি বেলুনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি এক টুইটার পোস্টে বলেছেন, ‘গত পাঁচ বছরে বেইজিং আমাদের ওপর তাদের নজরদারি নির্লজ্জভাবে বাড়িয়েছে।’ 

মন্টানার গভর্নর গ্রেগ জিয়ানফোর্টে এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত। 

বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে অন্য এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) পরিচালক উইলিয়াম বার্নস বেলুনটির বিষয়ে উল্লেখ না করে বলেছেন, ‘বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে চীন।’ 

বিবিসি বলেছে, আগামী সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের চীন সফরের কথা রয়েছে। এমন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনের গোয়েন্দা বেলুন দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত