Ajker Patrika

লেবাননে ১৩৪ কোটি টাকা জামিনে গাদ্দাফিপুত্র হান্নিবালকে মুক্তির নির্দেশ, নেই সামর্থ্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২: ১৫
হান্নিবাল গাদ্দাফি। ছবি: সংগৃহীত
হান্নিবাল গাদ্দাফি। ছবি: সংগৃহীত

লিবিয়ার প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির ছেলে হান্নিবাল গাদ্দাফি প্রায় এক দশক ধরে লেবাননে বন্দী। এবার লেবাননের আদালত ১ কোটি ১০ লাখ ডলারে (প্রায় ১৩৪ কোটি টাকা) জামিনে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তাঁর আইনজীবীরা জানিয়েছেন, হান্নিবালের কাছে এই অর্থ পরিশোধের সামর্থ্য নেই।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ছাড়াই লেবাননে বন্দী আছেন হান্নিবাল গাদ্দাফি। এবার বিচারক জাহের হামাদার স্বাক্ষরিত নির্দেশে তাঁর মুক্তির পাশাপাশি লেবানন ত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে।

সম্প্রতি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর হান্নিবালের আইনজীবীরা আদালতের কাছে তাঁর মুক্তির আবেদন করেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি বৈরুতের পুলিশ সদর দপ্তরে আটক রয়েছেন। আটক অবস্থায় এর আগে বহুবার তিনি অনশন করেছেন। এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে বেশ কয়েকবার তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

লেবানন সরকারের অভিযোগ, হান্নিবাল গাদ্দাফি ১৯৭৮ সালে লিবিয়া সফরের সময় নিখোঁজ হওয়া শিয়াপন্থী ধর্মগুরু ইমাম মুসা আল-সাদরের বিষয়ে তথ্য গোপন করেছেন। তবে হান্নিবাল দাবি করেছেন, তিনি নির্দোষ এবং অন্যায়ের শিকার। ইমাম মুসা আল-সাদরের লিবিয়া সফরের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র দুই বছর। তাই এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

২০২৩ সালে লিবিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল সিদ্দিক আল সউর আনুষ্ঠানিকভাবে লেবাননের কাছে তাঁর মুক্তির অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

হান্নিবাল গাদ্দাফি ২০১১ সালে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় দেশ ছাড়েন, যখন তাঁর পিতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি বিদ্রোহীদের হাতে সিরতে শহরে নিহত হন। পরে তিনি তাঁর লেবানিজ স্ত্রী আলিন স্কাফ ও সন্তানদের নিয়ে সিরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু একসময় তাঁকে অপহরণ করে লেবাননে নিয়ে যায় একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং তাঁকে লেবানন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়।

উল্লেখ্য, হান্নিবাল গাদ্দাফি মুয়াম্মার গাদ্দাফির পঞ্চম পুত্র। গাদ্দাফির মোট সাতজন পুত্র ও এক কন্যা ছিল। গাদ্দাফির পরিবারের সদস্যদের ভাগ্য ২০১১ সালের লিবিয়া বিপ্লবের পর নানা দিকে ছড়িয়ে যায়। তাঁর অন্য সন্তানদের মধ্যে সবার বড় মুহাম্মদ গাদ্দাফি ২০১১ সালে ত্রিপোলি দখলের সময় আত্মসমর্পণ করেন এবং পরে ওমানে আশ্রয় পান। বর্তমানে সেখানে তিনি শান্ত জীবন যাপন করছেন বলে জানা যায়।

দ্বিতীয় পুত্র সাইফ আল-ইসলামকে একসময় লিবিয়ার রাজনীতিতে গাদ্দাফির উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হতো। বিপ্লবের পর তিনি গ্রেপ্তার হন ও লিবিয়ার জিনতান শহরে বন্দী ছিলেন। পরে তিনি মুক্তি পান এবং বর্তমানে লিবিয়ার রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন।

তৃতী১য় পুত্র আল-সাদি ছিলেন ফুটবলার। তিনি ইতালির সিরি আ’ লিগেও খেলেছেন। বিপ্লবের পর তিনি নাইজারে পালিয়ে গিয়েছিলেন, পরে তাঁকে লিবিয়ায় প্রত্যর্পণ করা হয়। দীর্ঘদিন লিবিয়ার কারাগারে থাকার পর ২০২১ সালে তিনি মুক্তি পান। বর্তমানে শান্ত জীবন যাপন করছেন বলে ধারণা করা হয়।

চতুর্থ পুত্র মুতাসিম বিল্লাহ গাদ্দাফি লিবিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন। বাবার মতোই ২০১১ সালে সিরতে শহরে বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন তিনি।

ষষ্ঠ পুত্র সাইফ আল-আরব গাদ্দাফি রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় ছিলেন না। তারপরও ২০১১ সালে ন্যাটো বাহিনীর বিমান হামলায় তিনি নিহত হন।

সপ্তম পুত্র খামিস গাদ্দাফি লিবিয়ার সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি নিহত হন।

গাদ্দাফির একমাত্র কন্যা আইশা গাদ্দাফি একজন আইনজীবী এবং জাতিসংঘ দূত ছিলেন। ২০১১ সালে তিনি আলজেরিয়ায় আশ্রয় নেন, পরে ওমানে চলে যান। বর্তমানে সেখানেই পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত