Ajker Patrika

চার্লি কার্ক ইস্যুতে মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের জেরে বন্ধ হয়ে গেল জিমি কিমেলের শো

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বন্ধ হয়ে গেল জিমি কিমেলের জনপ্রিয় শো ‘জিমি কিমেল লাইভ’। ছবি: সংগৃহীত
বন্ধ হয়ে গেল জিমি কিমেলের জনপ্রিয় শো ‘জিমি কিমেল লাইভ’। ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় উপস্থাপক ও কমেডিয়ান জিমি কিমেলের লেট নাইট টক শো ‘জিমি কিমেল লাইভ’-এর সম্প্রচার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে ডিজনি মালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেল এবিসি। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ রক্ষণশীল রাজনৈতিক কর্মী ও বিতার্কিক চার্লি কার্কের সন্দেহভাজন হত্যাকারীকে ঘিরে কিমেলের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর এ সিদ্ধান্ত এল। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবিসির এক মুখপাত্র ওই শো বন্ধ হয়ে যাওয়ার তথ্য জানালেও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

কিমেলও এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘জিমি কিমেল লাইভ’ বন্ধের ঘোষণা আসার কয়েক ঘণ্টা আগে কিমেলকে শাস্তি দিতে এবিসির ওপর প্রকাশ্যে চাপ দিয়েছেন ট্রাম্প প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। তিনি এবিসির স্থানীয় স্টেশনগুলোর সম্প্রচারের লাইসেন্স দেন। ওই কর্মকর্তার চাপের পরপরই কিমেলের শো বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘোষণাটি এল।

গতকাল বুধবার হলিউডে শোয়ের রেকর্ডিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জিমি কিমেল। তখন আকস্মিকভাবে অনুষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয় এবিসি। যা কিমেল তো বটেই, পুরো হলিউডের জন্যই একটি বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে, এবিসির সঙ্গে যুক্ত দুটি বড় টেলিভিশন নেটওয়ার্ক জানায়, তারা জিমি কিমেলের অনুষ্ঠান সম্প্রচার থেকে সরে আসবে। ওই দুই নেটওয়ার্কের এই ঘোষণার পর ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের অনুকম্পা পেতে মিডিয়া মালিকেরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘটনার পরপরই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা সংগঠনগুলো এবিসির এ পদক্ষেপকে কাপুরুষোচিত বলে নিন্দা জানায়।

অন্যদিকে, কিমেলের শো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্য থেকে উল্লাস প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিমেলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছে ট্রাম্পের। নিজ মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে তিনি লিখেছেন, ‘এবিসির অনেক আগেই এটা করা উচিত ছিল। তবে, দেরিতে হলেও কারা সাহস করতে পেরেছে। এখন শুধু জিমি (ফেলন) আর সেথ (মেয়ার্স) বাকি রইল। তাদের রেটিংও ভয়াবহ। করে ফেল, এনবিসি!!!’

এর আগে, গত সোমবার রাতে তার মনোলগে জিমি কিমেল মন্তব্য করেছিলেন, ম্যাগা (MAGA) আন্দোলন রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছে এবং প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে চার্লি কার্কের হত্যাকারী, টাইলার রবিনসন, তাদের কেউ নয়। কিমেল বলেন, ‘ম্যাগা গ্যাং সেই ছেলেটিকে নিজ দলের কেউ নয় বলে চিত্রায়িত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের জন্য যা দরকার তাই করছে। তবে, তাদের আঙুল তোলার মাঝে, শোকও ছিল।’

এই মন্তব্যকে ‘অসভ্য আচরণ’ বলে অভিহিত করেছেন ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশনের (এফসিসি) চেয়ারম্যান ব্রেনডান কার। ডানপন্থী পডকাস্টার বেনি জনসনের পডকাস্টে গতকাল বুধবার এ কথা বলেন তিনি। ওই পডকাস্টে তিনি বলেন, প্রয়োজনে এফসিসি ডিজনিকে জিমেলকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এবিসির সহকারী লাইসেন্স বাতিল করার পথ নিতে পারে।

কার বলেন, ‘আমরা সহজ বা কঠিন পথে এগোতে পারি। কোম্পানিগুলো আচরণ পরিবর্তনের উপায় খুঁজতে পারে এবং কিমেলের ওপর পদক্ষেপ নিতে পারে, না হলে এফসিসি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।’ তিনি আরও সতর্ক করেছেন, ভবিষ্যতেও সম্প্রচারকরা এ ধরনের চাপের মুখোমুখি হতে পারে।

তবে এফসিসির একমাত্র ডেমোক্র্যাট কমিশনার অ্যানা গোমেজ বলেছেন, ‘একজন ব্যথিত ব্যক্তির রাজনৈতিক সহিংসতা কখনো সাধারণ সেন্সরশিপ বা নিয়ন্ত্রণের যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে ট্রাম্প প্রশাসন ক্রমেই বৈধ অভিব্যক্তিকে দমন করতে সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করছে।’

কিমেলের অনুষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর সিএনএনকে গোমেজ বলেন, ‘প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী, কোনো টেলিভিশন চ্যানেল কী সম্প্রচার করবে তা বলে দেওয়ার অধিকার এফসিসির নেই। এবং কোনো কিছু সম্প্রচারের কারণে এফসিসি তার সম্প্রচার বন্ধও করতে পারে না। আমি কিমেলের শোয়ের ক্লিপ দেখেছি। তিনি কোনো অসত্য দাবি করেননি, শুধু একটি রসিকতা করেছেন। কারও কারও কাছে তা বোকামি মনে হতে পারে কিন্তু এটা কোনো আইনের লঙ্ঘন নয়। প্রথম সংশোধনীর প্রতি সম্মান জানিয়ে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই চাপিয়ের দেওয়ার সংস্কৃতির প্রতিবাদ করা উচিত।’

সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে প্রো-ট্রাম্প ওয়েবসাইট এবং টিভি শো কিমেলের মন্তব্যের সমালোচনা শুরু করে, এবং বুধবার বিষয়টি যখন ভাইরাল হয়, তখন কিছু এবিসি সহযোগী স্টেশনের মালিকও মুখ খোলার প্রয়োজন বোধ করেন।

অনেকেই বলছেন, জিমি কিমেলের অনুষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে, কনজারভেটিভ কর্মী চার্লি কার্কের হত্যাকে ঘিরে মতামত ও মন্তব্য কতটা রাজনীতিকৃত হয়ে গেছে যে, কার্কের প্রতি নেতিবাচক বা আপত্তিকর মন্তব্যকারীদের চাকরিও খোয়াতে হতে পারে!

এ ছাড়া, চলতি সপ্তাহেই নিউ ইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মানহানি মামলা করেছেন ট্রাম্প। আরও কিছু মিডিয়া হাউসের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন মামলা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত