অনলাইন ডেস্ক
জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড মার্কিন মানসে এক দগদগে ক্ষত হয়ে রয়ে গেছে। সেই মুহূর্তের প্রচণ্ড ধাক্কা রিচার্ড ও’কনেলের কবিতা ‘নেক্রোসে’ চিত্রিত হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘মাথাটি পেছনের দিকে ঝুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে খুলি...।’ ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বরের ডালাসের ডিলি প্লাজায় সেই ভয়াবহ কয়েক সেকেন্ড এক রহস্য রেখে গেছে, যা এখনো সমাধান হয়নি। এমনকি সদ্য প্রকাশিত ৮০ হাজার নথির পরও সেই রহস্য অনুদ্ঘাটিত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত নথির প্রকাশ নতুন করে সেদিনের ঘটনাগুলো নিয়ে জল্পনা-কল্পনা উসকে দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জেএফকে সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টস সফরকালে ট্রাম্প আমেরিকানদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের জানার জন্য অনেক কিছুই আছে এতে।’ এবং তিনি জানান, তাঁর প্রশাসন কোনো তথ্য গোপন রাখবে না।
এর আগে, ২০১৭ সালে ট্রাম্প অতিরিক্ত নথি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যদিও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে হাজারো নথির কিছু অংশ অবশ্য প্রকাশ করা হয়নি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কেনেডি হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি রবার্ট এফ. কেনেডি ও মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত বাকি সব নথি প্রকাশের নির্দেশ দেন।
সর্বশেষ প্রকাশিত নথিপত্রের অংশ হিসেবে নতুনভাবে চিহ্নিত ১ হাজার ১২৩টি ফাইল প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষক ও বিশ্লেষকেরা এখন এসব নথি পর্যালোচনা করে নতুন তথ্য অনুসন্ধান করছেন।
জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ডের রাতেই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জে গ্যারেট আন্ডারহিল আতঙ্কিত অবস্থায় ওয়াশিংটন ছেড়ে পালিয়ে যান। তিনি নিউজার্সিতে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি স্পষ্টতই ভীত ও বিচলিত ছিলেন। প্রকাশিত নথিতে পাওয়া এক মেমো অনুযায়ী, আন্ডারহিল অভিযোগ করেন যে, সিআইএর ভেতরের একটি ‘ছোট গোষ্ঠী’ কেনেডি হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।
প্রকাশিত নথির তথ্য অনুসারে, আন্ডারহিল নাকি তাঁর বন্ধু শার্লিন ফিটসিমন্সকে বলেছিলেন, জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ডের পেছনে সিআইএ যুক্ত ছিল। তিনি বলেন, ‘(লি হার্ভে) অসওয়াল্ড স্রেফ বলির পাঁঠা।’ আন্ডারহিল দাবি করেন, প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীরা ‘ভয়ংকর কিছু একটা করেছে’ এবং তাঁরা অস্ত্র চোরাচালান, মাদক ব্যবসা ও অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।
পরিচিত সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা, পরামর্শক এবং সামরিক বিষয়ে লেখক হিসেবে আন্ডারহিলের অতীত তাঁর আশঙ্কাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। ১৯৬৭ সালের ১৯ জুলাই তারিখের এক নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যেসব বন্ধুর কাছে আন্ডারহিল গিয়েছিলেন, তারা বলেছেন, তিনি তখন নেশাগ্রস্ত ছিলেন না, কিন্তু প্রবলভাবে আতঙ্কিত ছিলেন। তাঁরা জানান, আন্ডারহিল দাবি করেছিলেন যে, অস্ত্র চোরাচালান, মাদক ব্যবসা এবং অন্যান্য অবৈধ কাজে জড়িত সিআইএর একটি চক্র, যারা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছিল, তারাই কেনেডিকে হত্যা করেছে। নাকি কেনেডি এই অনিয়মের কথা জানতে পেরেছিলেন এবং এ সম্পর্কে প্রকাশ্যে বলার আগেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল।’
যদিও বন্ধুরা সব সময় আন্ডারহিলকে সম্পূর্ণ বাস্তববাদী ও যুক্তিবাদী বলে চিনতেন, প্রথমে তারা তাঁর বক্তব্যকে গুরুত্ব দেননি। এ বিষয়ে নথিতে বলা হয়, তাঁর এক বন্ধু বলেন, ‘আমার মনে হয়, এর প্রধান কারণ ছিল—আমরা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে, সিআইএর ভেতরে এমন একটি দুর্নীতিগ্রস্ত গোষ্ঠী থাকতে পারে, যারা মাফিয়ার মতোই নির্মম এবং আরও দক্ষ।’
প্রাণের ভয়ে আন্ডারহিল কেনেডি হত্যাকাণ্ডের পরপরই ওয়াশিংটন ছেড়ে পালিয়ে যান এবং তাঁর বন্ধুদের জানান, তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হতে পারেন। তবে এর ছয় মাসেরও কম সময় পর ১৯৬৪ সালের ৮ মে আন্ডারহিলকে ওয়াশিংটনে তাঁর নিজ অ্যাপার্টমেন্টে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁর মাথা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ছিল। সরকারিভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলে ঘোষণা করা হলেও বেশ কিছু অসংগতি নানা গুজবকে উসকে দিয়েছে। যেমন— তিনি ডানহাতি হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মাথার বাম কানের পেছনে গুলি কীভাবে হলো?
আন্ডারহিলের মৃতদেহ প্রথম দেখতে পান দ্য নিউ রিপাবলিকের এক ব্যক্তি—অ্যাশার ব্রাইনস। প্রকাশিত গোপন নথিতে বলা হয়েছে, ‘আন্ডারহিলের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে ঘোষণা দেওয়া মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাঁর দেহ আবিষ্কার করেন তাঁর লেখালেখির সহযোগী দ্য নিউ রিপাবলিকে অ্যাশার ব্রাইনস।’
নথিতে বলা হয়, ‘তাঁর (আন্ডারহিল) মাথার বাঁ কানের পেছনে গুলি লেগেছিল, আর একটি অটোমেটিক পিস্তল পাওয়া যায় তাঁর শরীরের বাঁ পাশে। বিষয়টি অদ্ভুত। কারণ ব্রাইনস জানান, আন্ডারহিল ছিলেন ডানহাতি। ব্রাইনসের ধারণা, ওই পিস্তলে সাইলেন্সার লাগানো ছিল, কারণ ওই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের বাসিন্দারা কোনো গুলির শব্দ শোনেননি। দেখা যাচ্ছে, আন্ডারহিল কয়েক দিন আগেই মারা গিয়েছিলেন।’
১৯১৫ সালে ব্রুকলিনে জন্মগ্রহণ করা আন্ডারহিল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গোয়েন্দা জগতে প্রবেশ করেন। সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে (এমআইএস) তাঁর কাজের জন্য তাঁকে যুদ্ধ বিভাগ থেকে দক্ষতার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। যুদ্ধের পর সিআইএ তাঁকে নিয়োগের বিষয়ে বিবেচনা করলেও নথিপত্রে দেখা যায়, তাঁকে সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয় এবং সীমিত মাত্রায় গোপন তথ্যের প্রবেশাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি আন্ডারহিল সাংবাদিক ও পরামর্শক হিসেবে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি ‘লাইফ’ ও ‘এসকোয়ার’ পত্রিকায় লিখতেন এবং প্রায়শই মার্কিন সামরিক প্রস্তুতির সমালোচনা করতেন। তাঁর সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর যোগাযোগ অব্যাহত ছিল, বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে। তিনি একবার এফবিআই এবং সিআইএকে হারমান অ্যাক্সেলব্যাঙ্ক সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিলেন। এই ব্যক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক সরঞ্জাম ও স্থাপনার ছবি বিক্রি করতেন।
নতুন প্রকাশিত নথিগুলো লি হার্ভে ওসওয়াল্ডের ভূমিকা নিয়ে আগের সন্দেহগুলোকেই আরও জোরদার করেছে। সরকারিভাবে বলা হয়, ওসওয়াল্ড একাই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন। কিন্তু এই বক্তব্যের অসংগতি আছে। গুলির সময়কাল, বুলেটের গতিপথ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য থেকে দ্বিতীয় একজন বন্দুকধারীর সম্ভাবনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
ডালাসের ডিলে প্লাজায় প্রেসিডেন্ট কেনেডি ও তাঁর গাড়িবহরের ওপর হামলার মুহূর্ত ধারণকারী কোম্পানি জাপ্রুডার ফিল্মের চিত্র থেকে দেখা যায় যে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর কেনেডির মাথা পেছনের দিকে নড়ে যায়। অথচ, প্রচলিত ধারণা, গুলিগুলো পেছন থেকে করা হয়েছিল।
ওসওয়াল্ডের অতীত রহস্য আরও ঘনীভূত করে। সাবেক মেরিন সদস্য ওসওয়াল্ড ১৯৫৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে পালিয়ে যান। পরে তিনি এক রুশ নারীকে বিয়ে করে তাঁকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন। তাঁর সঙ্গে কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রোপন্থী ও বিরোধী উভয় গোষ্ঠীর যোগাযোগ ছিল বলে প্রমাণ আছে। পাশাপাশি কেনেডি হত্যাকাণ্ডের আগে থেকেই তাঁকে সিআইএ ও এফবিআই নজরদারিতে রেখেছিল। এসব কারণেই অনেকে সন্দেহ করেন যে, তিনি একা কাজ করেননি।
সম্প্রতি নবগঠিত টাস্কফোর্স অন দ্য ডিক্লাসিফিকেশন অব ফেডারেল সিক্রেটসের প্রধান আনা পলিনা লুনা ‘দুজন বন্দুকধারী’ তত্ত্বকে সমর্থন করেছেন। তাঁর এই অবস্থান বহুদিন ধরে প্রচলিত ওয়ারেন কমিশনের উপসংহারকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
প্রকাশিত নথিপত্রে স্যামুয়েল জর্জ কামিংস নামে এক ব্যক্তির বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। কামিংস অস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সংযোগ ছিল। তিনি সিআইএ-তে অস্ত্র বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন এবং বিদেশি অস্ত্র কেনা ও বিতরণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নথিপত্রে উল্লেখ আছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতেন, যার মধ্যে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডি অন্যতম। এমনকি তিনি কিউবা বিরোধী গোপন অস্ত্র চুক্তির সঙ্গেও যুক্ত থাকতে পারেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
কামিংসের কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল আর্মামেন্ট করপোরেশন (ইন্টারার্মকো) বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে অস্ত্র সরবরাহ করত। যদিও জন এফ. কেনেডি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর সরাসরি কোনো সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে তাঁর কার্যক্রম ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগ ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বরের একটি ঘটনার পটভূমি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
আরেকটি দীর্ঘদিনের রহস্য হলো কেন জ্যাক রুবি। তিনি ডালাসের এক নাইটক্লাব মালিক। তাঁর সংগঠিত অপরাধচক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ছিল। কেনেডি হত্যার দুই দিন পর তিনি ওসওয়াল্ডকে গুলি করেছেন। যদিও রুবি দাবি করেছিলেন, তিনি শোকের বশে এটি করেছেন, তবে সন্দেহবাদীরা মনে করেন, তিনি ওসওয়াল্ডকে চুপ করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, যাতে সে আরও তথ্য প্রকাশ করতে না পারে।
রুবির বিচার এবং কারাগারে থাকার সময় ক্যানসারে তাঁর মৃত্যুর ঘটনা সন্দেহ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। রহস্য আরও ঘনীভূত হয় যখন জানা যায় যে, কারাগারে রুবির চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ডাক্তারদের একজন লুইস জোলিয়ন ওয়েস্ট ছিলেন সিআইএ-এর মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প ‘এমকেআল্ট্রা’—এর সঙ্গে জড়িত গবেষক।
জেএফকে হত্যাকাণ্ডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বস্তুগত প্রমাণ এখনো বিতর্কিত রয়ে গেছে। বিশেষ করে ‘ম্যাজিক বুলেট’ তত্ত্ব। যেখানে দাবি করা হয় যে, একটি মাত্র গুলি প্রেসিডেন্ট কেনেডি এবং টেক্সাসের গভর্নর জন কনেলিকে একসঙ্গে আঘাত করেছিল—এই ধারণাকে বহু বিশ্লেষক অবিশ্বাস্য বলে মনে করেন।
এনডিটিভি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান
জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড মার্কিন মানসে এক দগদগে ক্ষত হয়ে রয়ে গেছে। সেই মুহূর্তের প্রচণ্ড ধাক্কা রিচার্ড ও’কনেলের কবিতা ‘নেক্রোসে’ চিত্রিত হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘মাথাটি পেছনের দিকে ঝুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে খুলি...।’ ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বরের ডালাসের ডিলি প্লাজায় সেই ভয়াবহ কয়েক সেকেন্ড এক রহস্য রেখে গেছে, যা এখনো সমাধান হয়নি। এমনকি সদ্য প্রকাশিত ৮০ হাজার নথির পরও সেই রহস্য অনুদ্ঘাটিত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত নথির প্রকাশ নতুন করে সেদিনের ঘটনাগুলো নিয়ে জল্পনা-কল্পনা উসকে দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জেএফকে সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টস সফরকালে ট্রাম্প আমেরিকানদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের জানার জন্য অনেক কিছুই আছে এতে।’ এবং তিনি জানান, তাঁর প্রশাসন কোনো তথ্য গোপন রাখবে না।
এর আগে, ২০১৭ সালে ট্রাম্প অতিরিক্ত নথি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যদিও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে হাজারো নথির কিছু অংশ অবশ্য প্রকাশ করা হয়নি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কেনেডি হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি রবার্ট এফ. কেনেডি ও মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত বাকি সব নথি প্রকাশের নির্দেশ দেন।
সর্বশেষ প্রকাশিত নথিপত্রের অংশ হিসেবে নতুনভাবে চিহ্নিত ১ হাজার ১২৩টি ফাইল প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষক ও বিশ্লেষকেরা এখন এসব নথি পর্যালোচনা করে নতুন তথ্য অনুসন্ধান করছেন।
জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ডের রাতেই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জে গ্যারেট আন্ডারহিল আতঙ্কিত অবস্থায় ওয়াশিংটন ছেড়ে পালিয়ে যান। তিনি নিউজার্সিতে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি স্পষ্টতই ভীত ও বিচলিত ছিলেন। প্রকাশিত নথিতে পাওয়া এক মেমো অনুযায়ী, আন্ডারহিল অভিযোগ করেন যে, সিআইএর ভেতরের একটি ‘ছোট গোষ্ঠী’ কেনেডি হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।
প্রকাশিত নথির তথ্য অনুসারে, আন্ডারহিল নাকি তাঁর বন্ধু শার্লিন ফিটসিমন্সকে বলেছিলেন, জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ডের পেছনে সিআইএ যুক্ত ছিল। তিনি বলেন, ‘(লি হার্ভে) অসওয়াল্ড স্রেফ বলির পাঁঠা।’ আন্ডারহিল দাবি করেন, প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীরা ‘ভয়ংকর কিছু একটা করেছে’ এবং তাঁরা অস্ত্র চোরাচালান, মাদক ব্যবসা ও অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।
পরিচিত সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা, পরামর্শক এবং সামরিক বিষয়ে লেখক হিসেবে আন্ডারহিলের অতীত তাঁর আশঙ্কাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। ১৯৬৭ সালের ১৯ জুলাই তারিখের এক নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যেসব বন্ধুর কাছে আন্ডারহিল গিয়েছিলেন, তারা বলেছেন, তিনি তখন নেশাগ্রস্ত ছিলেন না, কিন্তু প্রবলভাবে আতঙ্কিত ছিলেন। তাঁরা জানান, আন্ডারহিল দাবি করেছিলেন যে, অস্ত্র চোরাচালান, মাদক ব্যবসা এবং অন্যান্য অবৈধ কাজে জড়িত সিআইএর একটি চক্র, যারা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছিল, তারাই কেনেডিকে হত্যা করেছে। নাকি কেনেডি এই অনিয়মের কথা জানতে পেরেছিলেন এবং এ সম্পর্কে প্রকাশ্যে বলার আগেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল।’
যদিও বন্ধুরা সব সময় আন্ডারহিলকে সম্পূর্ণ বাস্তববাদী ও যুক্তিবাদী বলে চিনতেন, প্রথমে তারা তাঁর বক্তব্যকে গুরুত্ব দেননি। এ বিষয়ে নথিতে বলা হয়, তাঁর এক বন্ধু বলেন, ‘আমার মনে হয়, এর প্রধান কারণ ছিল—আমরা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে, সিআইএর ভেতরে এমন একটি দুর্নীতিগ্রস্ত গোষ্ঠী থাকতে পারে, যারা মাফিয়ার মতোই নির্মম এবং আরও দক্ষ।’
প্রাণের ভয়ে আন্ডারহিল কেনেডি হত্যাকাণ্ডের পরপরই ওয়াশিংটন ছেড়ে পালিয়ে যান এবং তাঁর বন্ধুদের জানান, তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হতে পারেন। তবে এর ছয় মাসেরও কম সময় পর ১৯৬৪ সালের ৮ মে আন্ডারহিলকে ওয়াশিংটনে তাঁর নিজ অ্যাপার্টমেন্টে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁর মাথা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ছিল। সরকারিভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলে ঘোষণা করা হলেও বেশ কিছু অসংগতি নানা গুজবকে উসকে দিয়েছে। যেমন— তিনি ডানহাতি হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মাথার বাম কানের পেছনে গুলি কীভাবে হলো?
আন্ডারহিলের মৃতদেহ প্রথম দেখতে পান দ্য নিউ রিপাবলিকের এক ব্যক্তি—অ্যাশার ব্রাইনস। প্রকাশিত গোপন নথিতে বলা হয়েছে, ‘আন্ডারহিলের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে ঘোষণা দেওয়া মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাঁর দেহ আবিষ্কার করেন তাঁর লেখালেখির সহযোগী দ্য নিউ রিপাবলিকে অ্যাশার ব্রাইনস।’
নথিতে বলা হয়, ‘তাঁর (আন্ডারহিল) মাথার বাঁ কানের পেছনে গুলি লেগেছিল, আর একটি অটোমেটিক পিস্তল পাওয়া যায় তাঁর শরীরের বাঁ পাশে। বিষয়টি অদ্ভুত। কারণ ব্রাইনস জানান, আন্ডারহিল ছিলেন ডানহাতি। ব্রাইনসের ধারণা, ওই পিস্তলে সাইলেন্সার লাগানো ছিল, কারণ ওই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের বাসিন্দারা কোনো গুলির শব্দ শোনেননি। দেখা যাচ্ছে, আন্ডারহিল কয়েক দিন আগেই মারা গিয়েছিলেন।’
১৯১৫ সালে ব্রুকলিনে জন্মগ্রহণ করা আন্ডারহিল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গোয়েন্দা জগতে প্রবেশ করেন। সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে (এমআইএস) তাঁর কাজের জন্য তাঁকে যুদ্ধ বিভাগ থেকে দক্ষতার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। যুদ্ধের পর সিআইএ তাঁকে নিয়োগের বিষয়ে বিবেচনা করলেও নথিপত্রে দেখা যায়, তাঁকে সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয় এবং সীমিত মাত্রায় গোপন তথ্যের প্রবেশাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি আন্ডারহিল সাংবাদিক ও পরামর্শক হিসেবে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি ‘লাইফ’ ও ‘এসকোয়ার’ পত্রিকায় লিখতেন এবং প্রায়শই মার্কিন সামরিক প্রস্তুতির সমালোচনা করতেন। তাঁর সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর যোগাযোগ অব্যাহত ছিল, বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে। তিনি একবার এফবিআই এবং সিআইএকে হারমান অ্যাক্সেলব্যাঙ্ক সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিলেন। এই ব্যক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক সরঞ্জাম ও স্থাপনার ছবি বিক্রি করতেন।
নতুন প্রকাশিত নথিগুলো লি হার্ভে ওসওয়াল্ডের ভূমিকা নিয়ে আগের সন্দেহগুলোকেই আরও জোরদার করেছে। সরকারিভাবে বলা হয়, ওসওয়াল্ড একাই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন। কিন্তু এই বক্তব্যের অসংগতি আছে। গুলির সময়কাল, বুলেটের গতিপথ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য থেকে দ্বিতীয় একজন বন্দুকধারীর সম্ভাবনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
ডালাসের ডিলে প্লাজায় প্রেসিডেন্ট কেনেডি ও তাঁর গাড়িবহরের ওপর হামলার মুহূর্ত ধারণকারী কোম্পানি জাপ্রুডার ফিল্মের চিত্র থেকে দেখা যায় যে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর কেনেডির মাথা পেছনের দিকে নড়ে যায়। অথচ, প্রচলিত ধারণা, গুলিগুলো পেছন থেকে করা হয়েছিল।
ওসওয়াল্ডের অতীত রহস্য আরও ঘনীভূত করে। সাবেক মেরিন সদস্য ওসওয়াল্ড ১৯৫৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে পালিয়ে যান। পরে তিনি এক রুশ নারীকে বিয়ে করে তাঁকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন। তাঁর সঙ্গে কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রোপন্থী ও বিরোধী উভয় গোষ্ঠীর যোগাযোগ ছিল বলে প্রমাণ আছে। পাশাপাশি কেনেডি হত্যাকাণ্ডের আগে থেকেই তাঁকে সিআইএ ও এফবিআই নজরদারিতে রেখেছিল। এসব কারণেই অনেকে সন্দেহ করেন যে, তিনি একা কাজ করেননি।
সম্প্রতি নবগঠিত টাস্কফোর্স অন দ্য ডিক্লাসিফিকেশন অব ফেডারেল সিক্রেটসের প্রধান আনা পলিনা লুনা ‘দুজন বন্দুকধারী’ তত্ত্বকে সমর্থন করেছেন। তাঁর এই অবস্থান বহুদিন ধরে প্রচলিত ওয়ারেন কমিশনের উপসংহারকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
প্রকাশিত নথিপত্রে স্যামুয়েল জর্জ কামিংস নামে এক ব্যক্তির বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। কামিংস অস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সংযোগ ছিল। তিনি সিআইএ-তে অস্ত্র বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন এবং বিদেশি অস্ত্র কেনা ও বিতরণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নথিপত্রে উল্লেখ আছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতেন, যার মধ্যে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডি অন্যতম। এমনকি তিনি কিউবা বিরোধী গোপন অস্ত্র চুক্তির সঙ্গেও যুক্ত থাকতে পারেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
কামিংসের কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল আর্মামেন্ট করপোরেশন (ইন্টারার্মকো) বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে অস্ত্র সরবরাহ করত। যদিও জন এফ. কেনেডি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর সরাসরি কোনো সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে তাঁর কার্যক্রম ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগ ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বরের একটি ঘটনার পটভূমি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
আরেকটি দীর্ঘদিনের রহস্য হলো কেন জ্যাক রুবি। তিনি ডালাসের এক নাইটক্লাব মালিক। তাঁর সংগঠিত অপরাধচক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ছিল। কেনেডি হত্যার দুই দিন পর তিনি ওসওয়াল্ডকে গুলি করেছেন। যদিও রুবি দাবি করেছিলেন, তিনি শোকের বশে এটি করেছেন, তবে সন্দেহবাদীরা মনে করেন, তিনি ওসওয়াল্ডকে চুপ করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, যাতে সে আরও তথ্য প্রকাশ করতে না পারে।
রুবির বিচার এবং কারাগারে থাকার সময় ক্যানসারে তাঁর মৃত্যুর ঘটনা সন্দেহ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। রহস্য আরও ঘনীভূত হয় যখন জানা যায় যে, কারাগারে রুবির চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ডাক্তারদের একজন লুইস জোলিয়ন ওয়েস্ট ছিলেন সিআইএ-এর মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প ‘এমকেআল্ট্রা’—এর সঙ্গে জড়িত গবেষক।
জেএফকে হত্যাকাণ্ডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বস্তুগত প্রমাণ এখনো বিতর্কিত রয়ে গেছে। বিশেষ করে ‘ম্যাজিক বুলেট’ তত্ত্ব। যেখানে দাবি করা হয় যে, একটি মাত্র গুলি প্রেসিডেন্ট কেনেডি এবং টেক্সাসের গভর্নর জন কনেলিকে একসঙ্গে আঘাত করেছিল—এই ধারণাকে বহু বিশ্লেষক অবিশ্বাস্য বলে মনে করেন।
এনডিটিভি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান
একটি সাইকেল নিয়ে চীনের লি দোংজু যখন বাড়ি ছেড়েছিলেন, তত দিনে তাঁর বয়স হয়ে গিয়েছিল ৫৬ বছর। বর্তমানে ৬৬ বছরের এই দাদিমা সাইকেলে চড়েই এখন পর্যন্ত তিনটি মহাদেশের ১২টি দেশ একাই একাই ঘুরে ফেলেছেন।
২১ মিনিট আগেতুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) এই নেতা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত। কয়েক দিন পরে সিএইচপির পক্ষ থেকে একরেম ইমামোগলুকে তুরস্কের প্রেসিডেন
১ ঘণ্টা আগেগত বছরের ৩ মে ব্যতিক্রম স্থাপত্য শৈলীর জেবুন নেসা মসজিদ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল আজকের পত্রিকা। ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় গড়ে ওঠা ওই মসজিদ এবার ঠাঁই করে নিয়েছে বিশ্বের সেরা স্থানগুলো নিয়ে করা টাইম ম্যাগাজিনের তালিকায়।
২ ঘণ্টা আগেসহায়তা নিতে আসা শিশুদের কেউ কেউ এতই ট্রমাটাইজড যে তারা তাদের কষ্টের কথা বলতেও পারে না। তখন তাদের ছবি আঁকতে বলা হয়। তাদের আঁকা ছবি থেকেই ধারণা করতে পারা যায়, কতটা কষ্ট-আতঙ্ক আছে তাদের মনে!
২ ঘণ্টা আগে