Ajker Patrika

ক্ষেপণাস্ত্র পাচার: যুক্তরাষ্ট্রে এক পাকিস্তানির ৪০ বছরের কারাদণ্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ২৮
একটি নৌকায় করে ক্ষেপণাস্ত্রের সরঞ্জাম পাচার করছিলেন মুহাম্মদ পালোয়ান। ছবি: মার্কিন জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট
একটি নৌকায় করে ক্ষেপণাস্ত্রের সরঞ্জাম পাচার করছিলেন মুহাম্মদ পালোয়ান। ছবি: মার্কিন জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট

ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের কাছে ইরান থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সরঞ্জাম পাচারের দায়ে পাকিস্তানি নাগরিক মুহাম্মদ পালোয়ানকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত ৪০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার এই সাজার রায় ঘোষণা করা হয়। ওই অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলাকালে আরব সাগরে দুজন মার্কিন নেভি সিল ডুবে মারা যান।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আরব সাগরে মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি অভিযানের সময় পালোয়ানকে তাঁর ‘ইউনুস’ নামের মাছ ধরার নৌকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। নৌকাটিতে ইরান-নির্মিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের যন্ত্রাংশ, যুদ্ধজাহাজ-বিধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের উপাদান এবং একটি ওয়ারহেড পাওয়া যায়। মার্কিন ফেডারেল প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, এগুলো ছিল ‘ইরান অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে সরবরাহ করা সবচেয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থার মধ্যে কয়েকটি।’

এই অভিযানের সময়ই দুই মার্কিন নেভি সিল অফিসার ক্রিস্টোফার চেম্বারস এবং নাথান গেজ ইনগ্রাম পানিতে পড়ে যান। অতিরিক্ত সরঞ্জাম বহন করার কারণে তাঁরা দ্রুত ডুবে যান। ১০ দিন পর তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে নৌকার আটজন কর্মী জানান, তাঁদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই কাজে যুক্ত করা হয়েছিল। তাঁরা জানতেন, মাছ ধরার কাজ করছেন। পালোয়ানকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কর্মীদের নিজের কাজে মনোযোগ দিতে বলেন।

অন্যদিকে পালোয়ান নিজেই জানতেন এই কার্গো কতটা বিপজ্জনক। জানুয়ারির সেই শেষ যাত্রার আগে স্ত্রীকে পাঠানো টেক্সট মেসেজে তিনি নিজেকে ‘জিন্দা লাশ’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। আদালতের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত সেই বার্তায় স্ত্রীকে তিনি লেখেন: ‘শুধু দোয়া করো যেন নিরাপদে ফিরে আসতে পারি।’ উত্তরে স্ত্রী কেন এমন কথা বলছেন জানতে চাইলে তিনি জবাব দেন: ‘প্রিয়, কাজের ধরনটাই এমন।’

এই যাত্রার জন্য পালোয়ানকে ১ কোটি ৪০ লাখ ইরানি রিয়াল (প্রায় ৩৩ হাজার ২৭৪ মার্কিন ডলার) দেওয়া হয়েছিল। এটিকে প্রসিকিউটররা ‘বিপজ্জনক কাজের পারিশ্রমিক’ বা ‘ডেঞ্জার মানি’ বলে উল্লেখ করেছেন।

মার্কিন কর্তৃপক্ষের দাবি, এ চোরাচালানটি ইসলামিক রেভল্যুশন গার্ড কর্পসের সঙ্গে যুক্ত দুই ইরানি ভাই, ইউনুস এবং শাহাব মিরকাজেই অর্থায়ন ও সমন্বয় করেছিলেন। এই দুই ভাই এখনো ফেরার এবং তাঁরা ইরানেই রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হুতিরা গাজায় হামাসের সমর্থনে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে টার্গেট করে হামলা চালাত।

হুতিদের তৎপরতার কারণে লোহিত সাগর দিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজের যাতায়াত নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। যুক্তরাজ্যের একটি থিংকট্যাংকের মতে, প্রাথমিক হামলার পর লোহিত সাগর দিয়ে শিপিং ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে গিয়েছিল এবং সেই হার এখনো বজায় আছে। এর ফলে জাহাজগুলোকে দক্ষিণ আফ্রিকা ঘুরে দীর্ঘ পথ (প্রায় ১০-১২ দিন অতিরিক্ত সময়) নিতে হচ্ছে; যার ফলে প্রতি ট্রিপে আনুমানিক অতিরিক্ত ১ মিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে।

পালোয়ানকে সন্ত্রাসবাদে সহায়তা, গণবিধ্বংসী অস্ত্র কর্মসূচিতে সহায়তা এবং কর্মীদের হুমকি দেওয়াসহ পাঁচটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। পালোয়ানের আইনজীবী দণ্ড কমানোর জন্য আবেদন জানালেও আদালত অপরাধের প্রকৃতি এবং ভয়াবহতা বিবেচনায় সর্বোচ্চ ৪০ বছরের সাজা বহাল রাখেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত