Ajker Patrika

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

কে জিতছেন, কেন জিতছেন

জাহীদ রেজা নূর, নিউইয়র্ক থেকে
কমলা নাকি ট্রাম্প—কে করবেন শাসন তা বেছে নিতে ভোট দিলেন ভোটাররা। গতকাল নিউইয়র্কে ভোট দিতে আসেন এক নারী। ছবি: এএফপি
কমলা নাকি ট্রাম্প—কে করবেন শাসন তা বেছে নিতে ভোট দিলেন ভোটাররা। গতকাল নিউইয়র্কে ভোট দিতে আসেন এক নারী। ছবি: এএফপি

এই লেখাটি যখন তৈরি হচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে ৪ নভেম্বরের রাত সাড়ে ৯টা। বাংলাদেশ ততক্ষণে ৫ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দেখা পেয়েছে। লেখাটি যখন ছাপা হবে ততক্ষণে মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল একটু একটু করে প্রকাশ পেতে থাকবে। বিজয়ের পাল্লা কমলা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকছে, সেটা আজকের পত্রিকার পাঠক ততক্ষণে জেনে যাবেন।

তাই এই লেখাটি তৈরি হবে নির্বাচনের আগের কিছু কথা নিয়ে। কোন কথা ফলল, তা এই লেখা দেখে সবাই একটু ঝালিয়ে নিতে পারেন। মিলিয়ে দেখতে পারেন, জয়ের ব্যাপারে যে ভবিষ্যদ্বাণী দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো ফলছে কি না।

ট্রাম্পের বিজয়ের ব্যাপারে পাঁচটি কারণ দেখানো হয়েছিল। প্রথমেই বলা হয়েছিল, দেশজুড়ে এই মুদ্রাস্ফীতির কালে ট্রাম্প ক্ষমতায় নেই, সেটাই তাঁর বিজয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে। দেশের অর্থনীতি যে ভালো নেই, সেটা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। প্রতিদিন বাড়তি মূল্য দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার কারণে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টের প্রতি নাখোশ হচ্ছে জনগণ। করোনার মতো ভয়ংকর এক দুঃস্বপ্নের পর মুদ্রাস্ফীতি যে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে, তা সত্তরের দশকের পর যুক্তরাষ্ট্র আর কখনোই দেখেনি। এ কারণেই ট্রাম্প জনগণকে এই প্রশ্নটি স্বচ্ছন্দে করতে পারছেন, ‘আপনারা কি চার বছর আগের তুলনায় এখন ভালো আছেন?’

না, ভালো নেই। চার বছর আগেই তো ট্রাম্প ক্ষমতা হারিয়েছিলেন বাইডেনের কাছে।

২০২৪ সালে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। করোনার প্রভাবে মুদ্রাস্ফীতি তার একটি বড় কারণ। যুক্তরাষ্ট্রের এক-চতুর্থাংশ মানুষ কেবল দেশের অগ্রগতি হচ্ছে বলে মনে করেন। বাকিরা চাইছেন এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার।

ট্রাম্পের একটা ইতিবাচক দিক হলো, নানা ধরনের স্ক্যান্ডালের পরও তাঁর জনপ্রিয়তা কখনো ৪০ শতাংশের নিচে নামেনি। ২০২১ সালে ক্যাপিটলের ঘটনায় ফৌজদারি মামলা হওয়ার পরও ৪০ শতাংশ মানুষ তাঁর ওপর সমর্থন বজায় রেখেছে। যখন ডেমোক্র্যাটরা এবং রিপাবলিকান দলের একটি অংশ ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য বলে মনে করছেন, তখন রিপাবলিকান সমর্থকেরা ট্রাম্পকে ‘উইচ হান্টিং-এর শিকার’ বলে মনে করছেন। জনমত জরিপে কমলা আর ট্রাম্পের অবস্থান সমানে সমান। তাই ট্রাম্প আক্রোশের শিকার—এই কথা প্রচার করতে পারলে এবং এ কারণে তাঁর দিকে দোদুল্যমানদের ভোট গেলে ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা আছে।

অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় ট্রাম্পকে ভোটারদের বহুলাংশে সমর্থন করে। বাইডেনের শাসনামলে অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে, এটাই ট্রাম্পের জন্য ট্রাম্প কার্ড হয়ে উঠতে পারে।

উচ্চশিক্ষিত নন, এ রকম ভোটাররা একটু বেশি সংখ্যায় ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে ট্রাম্পের ভাগ্য খুলবে। এই শ্রেণির মানুষই মনে করে থাকেন, তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন, তাঁদের মনে রাখেনি সরকার। ফলে তাঁদের ভোট অবধারিতভাবে যাবে ট্রাম্পের দিকে। সম্প্রতি দেখা গেছে, এ কারণেই ট্রেড ইউনিয়নগুলোর নেতৃত্ব ডেমোক্র্যাটদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, রিপাবলিকানরা সেখানে জায়গা করে নিচ্ছেন।

গ্রাম ও উপশহরের ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে পারলে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের দিকে পা বাড়িয়ে রাখতেই পারেন।

অস্থিতিশীল হয়ে আছে পৃথিবী। এ সময় শক্তিশালী নেতৃত্ব পছন্দ করে মানুষ। এই হিসেবে ট্রাম্পকে শক্তিশালী মানুষ হিসেবেই মনে করে থাকেন বিশ্বনেতারা। ট্রাম্প বলে থাকেন, তিনি হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন কোনো বড় যুদ্ধে জড়ায়নি যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে বহু মার্কিন নাগরিক এ সময় ইউক্রেন ও ইসরায়েলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা অপচয় করছে বলে বাইডেনের প্রতি নাখোশ হয়ে আছেন।

পুরুষ ভোটারদের এক অংশ স্রেফ পুরুষ হওয়ার কারণেই ট্রাম্পকে ভোট দেবেন।

এ তো গেল ট্রাম্পের পক্ষের কথা। কমলার বিজয়ের পক্ষেও রয়েছে এ রকম পাঁচটি কারণ। একেবারে প্রথম কারণটি হলো, কমলা ট্রাম্প নন। ট্রাম্পের মতো যখন-তখন যেকোনো কথা বলে ফেলেন না তিনি। যা বলেন, যুক্তি দিয়ে ভেবেচিন্তে বলেন। ২০২০ সালে যখন রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে রেকর্ডসংখ্যক ভোট পেয়েছিলেন ট্রাম্প, তখন সে নির্বাচনে কিন্তু ৭০ লাখ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন বাইডেন। আর এবার কমলা হ্যারিস তো বলে যাচ্ছেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় গেলে কী সর্বনাশই-না হবে যুক্তরাষ্ট্রের। ট্রাম্পকে ফ্যাসিস্ট এবং গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলেও প্রচারণা চালিয়েছেন কমলা। বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, অনেকেই মনে করেন, দেশটি বেসামাল হয়ে যাচ্ছে। এই ভোটারদের কেউ কেউ যদি দেশকে নির্দিষ্ট পথে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কমলার ওপর নির্ভর করে থাকেন, তাহলে কমলার জয় ঠেকানো যাবে না।

কমলা বাইডেনও নন। এটাও তাঁর একটি ইতিবাচক দিক। বাইডেন যদি শেষপর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকতেন, তাহলে ডেমোক্র্যাট শিবির মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যেত যে ট্রাম্পই হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ডেমোক্র্যাটরা সংঘবদ্ধ হয়ে কমলার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে নির্ঘাত পরাজয়ের জায়গায় নিজেরা আবারও জয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারছে।

নারীদের ব্যাপারে ইতিবাচকভাবে সোচ্চার কমলা। দেশের নারী ভোটারদের বহুলাংশই কমলাকে ভোট দেবেন। ২০২২ সালে গর্ভপাতবিরোধী সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর এই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে। ফলে নারীরা তাঁদের সুস্পষ্ট অবস্থান নিশ্চয়ই পরিষ্কার করতে চাইবেন এই নির্বাচনে। তা ছাড়া দেশ প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছে—এই জায়গা থেকেও নারীদের ভোট কমলার দিকে যাবে।

বলা হচ্ছে, বর্ষীয়ান মানুষ ও উচ্চশিক্ষিত সম্প্রদায়ের ভোট যাবে কমলার বাক্সে। এই শ্রেণির মানুষ ভোটকেন্দ্রে এসে থাকেন। অপর দিকে ট্রাম্প মূলত তরুণ ও স্বল্পশিক্ষিত মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়। এই তরুণ ও স্বল্পশিক্ষিত মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনীহ থাকে। নিউইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, কমলা ট্রাম্পের কাছে পিছিয়ে আছেন সেই শ্রেণির ভোটারদের কারণে, যাঁরা নিবন্ধিত ভোটার কিন্তু ২০২০ সালে ভোট দিতে যাননি।

আরও একটি কারণে কমলা জয়ী হতে পারেন। তিনি নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে অনেক টাকা খরচ করেছেন। কমলা নির্বাচনী যুদ্ধে নেমেছেন জুলাই মাসে, এরপরই তিনি নির্বাচনী তহবিল হিসেবে এই টাকা সংগ্রহ করতে পেরেছেন। অপর দিকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকেই ট্রাম্প নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ করছিলেন। কিন্তু কমলার মতো এত টাকা সংগ্রহ করতে পারেননি।

দুই দিকের যুক্তিগুলো দেওয়া হলো। এই লেখা পড়ার সময়ই হয়তো যুক্তিগুলোর কোনটি বাস্তবিক অর্থে কাজ করেছে, তা জেনে যাবেন আপনি। জেনে যাবেন, পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৪
বাবা সাজিদ আকরাম ও ছেলে নাভিদ আকরাম। ছবি: সংগৃহীত
বাবা সাজিদ আকরাম ও ছেলে নাভিদ আকরাম। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসব চলাকালে প্রাণঘাতী হামলায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশ করেছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, হামলাকারী দুজন সম্পর্কে বাবা ও ছেলে।

পুলিশ জানায়, হামলাকারীরা হলেন ৫০ বছর বয়সী সাজিদ আকরাম ও তাঁর ২৪ বছর বয়সী ছেলে নাভিদ আকরাম। সাজিদ আকরাম পেশায় ফলবিক্রেতা ও নাভিদ পড়া শেষে এখন কিছু করছিলেন না।

সাজিদ ঘটনাস্থলে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। অন্যদিকে নাভিদকে আটক করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি গুরুতর হলেও স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছেন।

পুলিশের এক বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দুজন হামলাকারী ভিড়ের ওপর দীর্ঘনল বন্দুক ব্যবহার করে গুলি চালান। সাজিদ আকরামের নামে ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্রের বৈধ লাইসেন্স ছিল। হামলায় এসব অস্ত্রই ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।

দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দুজন পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, তাঁরা দক্ষিণ উপকূলে মাছ ধরতে যাচ্ছেন।

অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক জানান, সাজিদ আকরাম ১৯৯৮ সালে শিক্ষার্থী ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখেন। ২০০১ সালে সেটি পার্টনার ভিসায় রূপান্তরিত হয়। এরপর থেকে রেসিডেন্ট রিটার্ন ভিসাতে দেশটিতে বসবাস করে আসছিলেন তিনি।

নাভিদের মা ভেরেনা জানান, গুলির ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে রোববার সকালে ছেলে শেষবারের মতো পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তিনি বলেন, ‘ও আমাকে ফোন করে বলেছিল, মা, আমি একটু সাঁতার কেটেছি। স্কুবা ডাইভিং করেছি। আমরা এখন খেতে যাচ্ছি। আজ খুব গরম। বাড়িতেই থাকব।’

ভেরেনা আরও জানান, ছেলে তাঁকে বলেছিল, বাবার সঙ্গে জারভিস বে এলাকায় আছে।

ঘটনাস্থলের ছবিতে ছেলেকে শনাক্ত করতে পারেননি ভেরেনা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সহিংসতা বা উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ছেলের জড়িত থাকার কথা তিনি বিশ্বাস করেন না।

ভেরেনা বলেন, ‘ওর কাছে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র নেই। ও বাইরে ঘোরাফেরা করে না। বন্ধুদের সঙ্গে মেশে না। মদ্যপান করে না, ধূমপান করে না, খারাপ জায়গায় যায় না। ও শুধু কাজে যায়, বাড়ি ফেরে, শরীরচর্চা করে, এই পর্যন্তই।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে কেউ এমন একজন ছেলেই চাইবে। আমার ছেলে খুব ভালো।’

দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাভিদ আকরাম পেশায় একজন ইটশ্রমিক ছিলেন। তবে প্রায় দুই মাস আগে তাঁর কর্মস্থল দেউলিয়া হয়ে পড়ায় তিনি চাকরি হারান। এরপর থেকে নাভিদ নতুন কাজের খোঁজ করছিলেন বলে জানান তাঁর মা।

ভেরেনা আরও জানান, তাঁর ছেলে ক্যাব্রামাটা হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছে। তিনি বলেন, ‘নাভিদ খুব একটা মিশুক ছিল না এবং অনলাইনে বেশি সময় কাটাত বলেও মনে হয়নি। তাঁর শখের মধ্যে ছিল মাছ ধরা, স্কুবা ডাইভিং, সাঁতার কাটা ও শরীরচর্চা।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২০২২ সালের একটি পোস্টে নাভিদ আকরামকে ট্যাগ করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, তিনি পশ্চিম সিডনির হেকেনবার্গে অবস্থিত আল-মুরাদ ইনস্টিটিউট থেকে কোরআন শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন।

২০০৪ সালে কেনা তিন কক্ষের একটি বাড়িতে বসবাস পরিবারটির। এর আগে ক্যাব্রামাটায় থাকত তারা। ওই বাড়িতে বাবা–মা, ২২ বছর বয়সী এক বোন ও ২০ বছর বয়সী এক ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন নাভিদ। তাঁর মা গৃহিণী।

গত রোববার অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে পরিচিত সার্ফিং সৈকতে এই গুলির ঘটনা ঘটে। দেশটির সমুদ্রপ্রেমের প্রতীক হিসেবে পরিচিত পর্যটনকেন্দ্রটিতে হঠাৎ এই হামলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী ছিল ১০ বছরের এক কন্যাশিশু। সে একটি শিশু হাসপাতালে মারা যায়। সবচেয়ে বেশি বয়সী নিহত ব্যক্তির বয়স ছিল ৮৭ বছর।

এ ঘটনায় আরও ৪২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আবারও পোল্যান্ডে সেনা পাঠাচ্ছে জার্মানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চলতি বছরের শুরুর দিকের একটি অনুশীলনের সময় জার্মান বাহিনী কিছু সদস্য ও সামরিক ট্রাক এবং অন্যান্য সরঞ্জাম। ছবি: এএফপি
চলতি বছরের শুরুর দিকের একটি অনুশীলনের সময় জার্মান বাহিনী কিছু সদস্য ও সামরিক ট্রাক এবং অন্যান্য সরঞ্জাম। ছবি: এএফপি

জার্মানি আবারও প্রতিবেশী পোল্যান্ডে আবারও সৈন্য পাঠাচ্ছে। তবে, এবার দেশটি দখল করতে নয়, বরং রাশিয়া ও বেলারুশের সঙ্গে পোল্যান্ডের যে সীমান্ত আছে তা সুরক্ষিত করতে। জার্মান সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকো।

খবরে বলা হয়েছে, বেলারুশ ও রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত পোল্যান্ডের পূর্ব সীমান্তে সৈন্য পাঠাচ্ছে জার্মানি। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ২০২৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে কয়েক ডজন জার্মান সেনা পোল্যান্ডের ‘ইস্ট শিল্ড’ মিশনে যোগ দেবে। এই মিশনটি প্রাথমিকভাবে ২০২৭ সালের শেষ পর্যন্ত চলবে।

প্রতিবেদনে জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রের ভাষ্য অনুসারে, জার্মান সৈন্যরা মূলত ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশলগত কাজে মনোযোগ দেবে। মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই কাজের মধ্যে রয়েছে—সামরিক অবস্থান তৈরি, ট্রেঞ্চ বা পরিখা খনন, কাঁটাতার বসানো এবং ট্যাংক-বিরোধী বাধা নির্মাণ।

উল্লেখ্য, ‘ইস্ট শিল্ড’ হলো গত বছর ওয়ারশ ঘোষিত ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের একটি কর্মসূচি, যার উদ্দেশ্য তাদের পূর্ব সীমান্তের নিরাপত্তা আরও মজবুত করা।

এর আগে, নাৎসি জার্মানির নেতা অ্যাডলফ হিটলার ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর ভোরবেলায় পোল্যান্ডে সেনা পাঠান। এই আক্রমণই ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হিসেবে ধরা হয়। কারণ, এর দুই দিনের মাথায় ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পোল্যান্ড অভিযানে জার্মানি স্থল, নৌ ও আকাশপথে একযোগে হামলা চালায়, যাকে পরে ‘ব্লিৎজক্রিগ’ বা বজ্রগতির যুদ্ধকৌশল নামে পরিচিত করা হয়।

বিভিন্ন ঐতিহাসিক গবেষণা অনুযায়ী, এই আক্রমণে হিটলার আনুমানিক ১৫ লাখ জার্মান সৈন্য মোতায়েন করেছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিল প্রায় আড়াই থেকে ৩ হাজার ট্যাংক এবং ২ হাজারের বেশি যুদ্ধবিমান, যা সেই সময় ইউরোপের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় ভয়ংকরভাবে আধুনিক ও সংগঠিত সামরিক শক্তি হিসেবে বিবেচিত হতো। সংখ্যার জোর আর কৌশলগত প্রস্তুতির কারণে পোল্যান্ড মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পরাজিত হয় এবং ইউরোপ যুদ্ধের আগুনে জড়িয়ে পড়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিল্লিতে ঘন ধোঁয়াশায় ৪০ ফ্লাইট বাতিল, বিলম্বিত ৩০০

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ঘন ধোঁয়াশার কারণে ‘অরেঞ্জ’ সতর্কতা জারি করেছে আইএমডি। ছবি: মানি কনট্রোল
ঘন ধোঁয়াশার কারণে ‘অরেঞ্জ’ সতর্কতা জারি করেছে আইএমডি। ছবি: মানি কনট্রোল

ঘন ধোঁয়াশায় ঢেকে গেছে ভারতের রাজধানী দিল্লির আকাশ। শহরটির বায়ুমান ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ বা সিভিয়ার পর্যায়ে থাকায় কমে গেছে দৃশ্যমানতা। এতে বিমান ও ট্রেন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। আজ ঘন ধোঁয়াশার কারণে ‘অরেঞ্জ’ সতর্কতা জারি করেছে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি)।

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (সিপিসিবি)-এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, আজ সোমবার সকাল ৬টায় দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ছিল ৪৫৬। চলতি মৌসুমে এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন বায়ুমান।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দিল্লির অক্ষরধাম এলাকায় বিষাক্ত ধোঁয়ার ঘন স্তর দেখা যায়। সেখানে একিউআই রেকর্ড করা হয় ৪৯৩।

অন্য ভিডিওগুলোতেও বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ দৃশ্যমানতার অভাব দেখা গেছে। এর মধ্যে বারাপুল্লা ফ্লাইওভার এলাকায় একিউআই ছিল ৪৩৩ এবং বারাখাম্বা রোডে ছিল ৪৭৪।

উল্লেখ্য, একিউআই শূন্য থেকে ৫০ হলে তা ‘ভালো’, ৫১ থেকে ১০০ ‘সন্তোষজনক’, ১০১ থেকে ২০০ ‘মাঝারি’, ২০১ থেকে ৩০০ ‘খারাপ’, ৩০১ থেকে ৪০০ ‘খুব খারাপ’ এবং ৪০১ থেকে ৫০০ হলে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ হিসেবে ধরা হয়।

এদিকে ঘন ধোঁয়াশার কারণে ফ্লাইট বিলম্ব হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার ২৪–এর তথ্য অনুযায়ী, দিল্লি বিমানবন্দরে ৩০০টি উড্ডয়ন ও ৪০টি অবতরণ বিলম্বিত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দিল্লি বিমানবন্দর যাত্রীদের জন্য একটি পরামর্শ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। সর্বশেষ ফ্লাইট তথ্য জানার জন্য যাত্রীদের নিজ নিজ এয়ারলাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এতে কোনো অসুবিধা হলে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’

ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্বের বিষয়ে যাত্রীদের সতর্ক করেছে বেসরকারি বিমানসংস্থা ইন্ডিগোও।

এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, ‘আজ সকালে দিল্লিতে ঘন কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। এর ফলে বিমান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে এবং বিমানবন্দরে দীর্ঘ অপেক্ষা এড়াতে দিনের বিভিন্ন সময়ে আগামভাবে কিছু ফ্লাইট বাতিল করা হতে পারে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ভ্রমণের পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ হলে এই পরিস্থিতি যে কতটা অসুবিধাজনক, তা আমরা বুঝি। যাত্রীদের আশ্বস্ত করছি, সব বিমানবন্দরে আমাদের দলগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে, যেন কার্যক্রম যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখা যায় এবং পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্পর্কে আপনাদের নিয়মিত জানানো যায়।’

ইন্ডিগো আরেকটি পোস্টে যাত্রীদের বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় অতিরিক্ত সময় হাতে রাখার পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, বিষাক্ত ধোঁয়াশার কারণে সড়কে যান চলাচল ধীরগতির হতে পারে।

এদিকে এয়ার ইন্ডিয়া তাদের সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, ‘ঘন কুয়াশাজনিত দুর্বল দৃশ্যমানতার কারণে দিল্লি ও উত্তর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিমান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।’

অন্যদিকে, কম দৃশ্যমানতার কারণে দিল্লিতে আগমন ও প্রস্থানকারী ৯০ টির বেশি ট্রেন ছয় থেকে সাত ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বিত হয়েছে।

দূষণের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় গত শনিবার বায়ুমান ব্যবস্থাপনা কমিশন (সিএকিউএম) তাদের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান (গ্র্যাপ)–এর আওতায় সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা, অর্থাৎ স্টেজ–৪, কার্যকর করে। এর অংশ হিসেবে দিল্লি–এনসিআর এলাকায় সব ধরনের নির্মাণ ও ভাঙাচোরা কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। প্রতিকূল আবহাওয়াজনিত পরিস্থিতিকে দূষণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া দিল্লি সরকার সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরের ৫০ শতাংশ কর্মীকে বাসা থেকে কাজ করার নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত (দশম শ্রেণি বাদে) সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে হাইব্রিড পদ্ধতিতে সরাসরি ও অনলাইনে ক্লাস পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুদানে যোদ্ধা পাঠাচ্ছে আরব আমিরাতের ঠিকাদার, ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা দিলেন কলম্বিয়ানদের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিদ্রোহীরা আল ফাশের শহর দখল করার পর অর্ধলক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
বিদ্রোহীরা আল ফাশের শহর দখল করার পর অর্ধলক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

সুদানের বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) পক্ষে লড়ার জন্য কলম্বিয়ার ভাড়াটে সৈনিক নিয়োগের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েক জন ব্যক্তি ও সংস্থার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে এই যোদ্ধা সরবরাহের ক্ষেত্রে বহুল আলোচিত সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) জড়িত থাকার কথা নিষেধাজ্ঞায় উল্লেখ করা হয়নি।

লন্ডন থেকে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ ৪ ব্যক্তি ও ৪টি সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির কথা জানিয়েছে। এসব ব্যক্তি ও সংস্থা কলম্বিয়ার সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মীদের নিয়োগের সঙ্গে জড়িত একটি ‘আন্তঃদেশীয় নেটওয়ার্কের’ অংশ ছিল।

মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, কলম্বিয়ার এসব যোদ্ধা আরএসএফ-কে ‘কৌশলগত ও কারিগরি দক্ষতা শিখিয়েছে, ইনফ্যান্ট্রি এবং আর্টিলারিম্যান, ড্রোন পাইলট, গাড়িচালক এবং প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করেছে, এমনকি কেউ কেউ শিশুদেরও প্রশিক্ষণ দিয়েছে।’ যোদ্ধারা সুদানের বেশ কয়েকটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে বলেও এতে বলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে খার্তুম, ওমদুরমান, করদোফান ও এল-ফাশেরের লড়াই।

অক্টোবরে আরএসএফ এল-ফাশেরে ঝটিকা আক্রমণের সময় ব্যাপক গণহত্যা ও নির্যাতন চালায়। এর কিছু ঘটনা আরএসএফের নিজস্ব যোদ্ধাদের মাধ্যমে নথিভুক্ত হয়েছে এবং স্যাটেলাইট চিত্র দ্বারা তা প্রমাণিত হয়েছে। ট্রেজারি বিভাগ বলেছে, ‘সুদানে কলম্বিয়ার যোদ্ধাদের উপস্থিতি বহু ব্যক্তি ও সংস্থার সাহায্য ছাড়া সম্ভব হতো না, যাদের বেশিরভাগই কলম্বিয়ার।’

বোগোতাভিত্তিক নিয়োগ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিসেস এজেন্সি এবং এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা আরব আমিরাতে থাকা কলম্বিয়ার সাবেক সেনা কর্মকর্তা আলভারো আন্দ্রেস কুইজানো বেসেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কুইজানোর স্ত্রী ক্লদিয়া ভিভিয়ানা অলিভারোস ফোরো এই প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ম্যানেজার। তাঁকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।

কলম্বিয়ার সংবাদমাধ্যম লা সিয়া ভেসিয়ার ফাঁস করা নথি অনুসারে, আরব আমিরাতে নিবন্ধিত একটি কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিসেস এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি করেছিল সুদানে কাজ করার জন্য শত শত সাবেক সৈন্য সরবরাহ করতে। আমিরাতি ওই কোম্পানি গ্লোবাল সিকিউরিটি সার্ভিসেস গ্রুপ নিজেদেরকে ‘ইউএই সরকারের একমাত্র সশস্ত্র বেসরকারি নিরাপত্তা পরিষেবা প্রদানকারী’ হিসেবে পরিচয় দেয়। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় এর কোনো উল্লেখ নেই। তদন্তকারী সংস্থা দ্য সেন্ট্রির গত মাসের এক প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়, কলম্বিয়ার ভাড়াটে সৈনিক সরবরাহকারী আমিরাতি ব্যবসায়ীরা ইউএই-এর ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুক্ত।

নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত অন্য সংস্থাগুলো হলো—পানামাভিত্তিক গ্লোবাল স্টাফিং এসএ এবং কলম্বিয়াভিত্তিক ফার্ম মেইন গ্লোবাল কর্প এসএএস ও কমার্সিয়ালাইজাদোরা সান বেনিটো। কলম্বিয়ার নাগরিক মনিকা মুনিওজ উক্রোস এবং কলম্বিয়ার-স্প্যানিশ দ্বৈত নাগরিক মাতেও আন্দ্রেস ডুকে বোতেরোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

ট্রেজারি বিভাগ জানায়, ‘আজকের পদক্ষেপের ফলস্বরূপ, ওপরের বর্ণিত বা অবরুদ্ধ ব্যক্তি বা সংস্থাদের যুক্তরাষ্ট্রে বা মার্কিন ব্যক্তিবর্গের দখলে বা নিয়ন্ত্রণে থাকা সমস্ত সম্পত্তি এবং সম্পত্তির স্বার্থ অবরুদ্ধ করা হয়েছে এবং তা রিপোর্ট করতে হবে।’

সেপ্টেম্বরে, সুদান আরএসএফ-এর পক্ষে লড়ার জন্য কলম্বিয়ার ভাড়াটে সৈনিকদের পৃষ্ঠপোষকতা করার অভিযোগে ইউএই-এর বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করে।

জাতিসংঘে সুদানের প্রতিনিধি বলেছিলেন যে, খার্তুম আটক যোদ্ধাদের কাছ থেকে নথি সংগ্রহ করেছে, যেখানে দেখা যায় যে ইউএই-এর দুটি বেসরকারি নিরাপত্তা কোম্পানি ভাড়াটে সৈনিকদের নিয়োগ দিয়েছে। ইউএই অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, এসব প্রমাণ ‘মনগড়া।’

গত ৭ আগস্ট সুদানের বিমান বাহিনী ইউএই-এর বলে কথিত একটি বিমান গুলি করে ভূপাতিত করে। এটি কলম্বিয়ার ৪০ জন ভাড়াটে সৈনিক বহন করছিল। সঙ্গে ছিল আরএসএফ-এর ব্যবহারের জন্য অস্ত্র ও সরঞ্জামের চালান। বিমানটিতে থাকা ভাড়াটে সৈন্যরা সবাই মারা গিয়েছিলেন বলে জানা যায়। ইউএই এতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে।

আধুনিক অনিয়মিত যুদ্ধে কলম্বিয়ার ভাড়াটে সৈনিকরা এখন খুবই কাঙ্ক্ষিত। দেশটির মধ্যে গেরিলা ও মাদক চক্রের বিরুদ্ধে কয়েক দশকের সংঘাত এক স্থিতিশীল সরবরাহ তৈরি করেছে এই রণক্লান্ত সাবেক যোদ্ধাদের। ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শন ম্যাকফেট মিডেল ইস্ট আইকে বলেন, ‘কলম্বিয়ার সেনারা চমৎকার, তাদের অনেক যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আছে এবং তারা খুবই ভালো যোদ্ধা। তারা চেইন অব কমান্ড মেনে চলে, তাদের শৃঙ্খলা ভালো, আর একজন আমেরিকান ভাড়াটে সৈনিকের যা খরচ হয়, তার এক-চতুর্থাংশেই তাদের পাওয়া যায়।’

ইউক্রেনে শত শত কলম্বিয়ান লড়াই করছে, অন্যরা লিবিয়ার ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ ছাড়াও আফগানিস্তান ও ইরাকে কাজ করেছে। সুদানের যুদ্ধের প্রসঙ্গে লা সিয়া ভেসিয়া জানায়, কলম্বিয়ার যোদ্ধারা দুটি পথ ব্যবহার করছে। একটি পথ হলো উত্তর লিবিয়ার বেনগাজি হয়ে। সেখানে লিবীয় ঠিকাদাররা তাদের পাসপোর্ট জব্দ করেছে বলে জানা যায় এবং সুদানে আরএসএফ-এ যোগদানের জন্য তাদের যাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফিরতে দেয়নি।

অন্য পথটি হলো স্পেন থেকে ইথিওপিয়া ভ্রমণ, তারপর সোমালিয়ার বোসাসো সমুদ্রবন্দর শহরে গিয়ে চাদের রাজধানী এন’ডজামেনা হয়ে সবশেষে দারফুরের আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত শহর নিয়ালার উদ্দেশে উড়ে যাওয়া।

অক্টোবরে মিডল ইস্ট আই বিশেষ ফুটেজ সংগ্রহ করে। যেখানে দেখা যায় কয়েক ডজন কলম্বিয়ান সেনা সোমালিয়ার বোসাসো বিমানবন্দরে বিমান থেকে নামছে এবং কাছেই কলম্বিয়ার ভাড়াটে সৈনিকদের রাখা একটি শিবিরের দিকে যাচ্ছে। প্রতিবেদনটিতে ‘অঘোষিত ভারী লজিস্টিক্যাল সরঞ্জামাদি’ পরিবহনের জন্য বোসাসো ব্যবহারের বিশদ বিবরণও ছিল। বন্দরের একাধিক সূত্র জানিয়েছিল, এসব সরঞ্জাম ইউএই সরবরাহ করছিল এবং চূড়ান্ত গন্তব্য ছিল সুদানের আরএসএফ।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের কয়েক দিন পর, সোমালিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্বীকার করেন যে—এমন বিমান চলাচল ঘটছে। মন্ত্রী আরও যোগ করেন, সরকার কলম্বিয়ার ভাড়াটে সৈনিকদের বোসাসো থেকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছে, তবে তা নিশ্চিত করা যায়নি।

মিডল ইস্ট আই ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে রিপোর্ট করেছিল, ইউএই লিবিয়া, চাদ এবং উগান্ডাজুড়ে বিস্তৃত সরবরাহ লাইন ও জোটের এক জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আরএসএফ-কে অস্ত্র সরবরাহ করছিল। ক্রমবর্ধমান প্রমাণ সত্ত্বেও, আবুধাবি এই আধাসামরিক গোষ্ঠীকে সমর্থন করার কথা অস্বীকার করে।

সুদানের যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বাধীন সুদান সেনা এবং মোহামেদ হামদান দাগালোর নেতৃত্বাধীন আরএসএফ-এর মধ্যে দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনা প্রকাশ্য সংঘাতে রূপ নেয়। আরএসএফকে নিয়মিত সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা নিয়ে মতবিরোধের কারণে এই সহিংসতা শুরু হয়েছিল। কিন্তু তা দ্রুতই দেশব্যাপী যুদ্ধে পরিণত হয়, যাতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আরএসএফ যোদ্ধারা দারফুরে গণহত্যাসহ ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। সুদান সেনার বিরুদ্ধেও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত