Ajker Patrika

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করে মার্কিন কংগ্রেসে প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৪: ০৭
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করে মার্কিন কংগ্রেসে প্রস্তাব

স্বাধীনতার ৫২তম বার্ষিকী উপলক্ষে মার্কিন কংগ্রেসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং এর উল্লেখযোগ্য আর্থসামাজিক অগ্রগতির স্বীকৃতি ও প্রশংসা করে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাসের পক্ষ থেকে সাউথ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান জো উইলসন কংগ্রেসে গত ২৯ মার্চ এই প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও এর দোসরদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের কথা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয় এবং বলা হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ ছিল গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার সংগ্রাম। 

এতে বলা হয়, বিগত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধন করেছে। বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি, যার মাথাপিছু জিডিপি বেড়ে ২০২১ সালে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৫৭ মার্কিন ডলারে, যা এখন তার আঞ্চলিক প্রতিবেশীর চেয়ে অনেক বেশি। 

রেজুলেশনে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৯ বিলিয়ন থেকে ৪৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। গড় আয়ু ৪৭ বছর থেকে বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে। বয়স্ক সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদন, দারিদ্র্য হ্রাস, উন্নত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ প্রশমনসহ আর্থসামাজিক খাতে যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। 

প্রস্তাবে বলা হয় বাংলাদেশ সফলভাবে মডারেট মুসলিম সমাজ ব্যবস্থা বজায় রেখেছে, উগ্রবাদ দমন করেছে, এবং দেশটির জনগণ বন্দুকের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পরিবর্তে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি সমর্থন বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। 

প্রস্তাবে বলা হয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য বৃহত্তম রপ্তানি বাজার এবং বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের একটি বৃহত্তম উৎস। বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয়, বাণিজ্যিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহযোগিতার মাধ্যমে মার্কিন অর্থনীতিতেও অবদান রেখে চলছে। 

রেজুলেশনে আরও বলা হয়, প্রতিবেশী মিয়ানমার দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা রোধে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে যে উদারতার পরিচয় দিয়েছে, আমেরিকার জনগণ তার প্রশংসা করে। মিয়ানমারে সৃষ্ট এই সংকট মোকাবিলায় মানবিক সহায়তা বাবদ সবচেয়ে বেশি অর্থ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। 

এতে আরও বলা হয়, বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে বৃহৎ সৈন্য প্রেরণকারী দেশ, যা আমেরিকার জনগণের কাছে সর্বদা প্রশংসা অর্জন করেছে। উভয় দেশই অর্জিত সমৃদ্ধি বিনিময়ের জন্য তাদের জনগণের সঙ্গে জনগণ এবং সরকারের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক আরও উন্নত করতে চায়।

বর্তমান এবং ভবিষ্যতে পারস্পরিক অর্থনৈতিক, সামাজিক ও জাতীয় নিরাপত্তার লক্ষ্য অর্জনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গঠনমূলক অংশীদার থাকার আন্তরিক দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে বলেও রেজুলেশনে মন্তব্য করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের এক ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে চালু, সক্ষমতা কত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সুবিনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত
সুবিনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সুবনসিরির আটটি ইউনিটের মধ্যে একটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই প্রকল্পটির পূর্ণাঙ্গ উদ্বোধন হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভারতের জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচপিসি)।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানিয়েছে, এনএইচপিসি লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—অরুণাচল প্রদেশ ও আসাম সীমান্তে অবস্থিত সুবনসিরি লোয়ার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ২৫০ মেগাওয়াট ইউনিটের ‘ওয়েট কমিশনিং’ গত শুক্রবার শুরু হয়েছে। সংস্থাটির এক মুখপাত্র দ্য হিন্দুকে বলেছেন, ‘ওয়েট কমিশনিং মূলত টারবাইনের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিষয় পরীক্ষা করার একটি প্রক্রিয়া, যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় না। পানির প্রবাহে এই পরীক্ষামূলক চালনা চার থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত চলতে পারে।’

জানা গেছে, ২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সুবনসিরি লোয়ার প্রকল্পে রয়েছে আটটি ইউনিট, প্রতিটির ক্ষমতা ২৫০ মেগাওয়াট। মুখপাত্র জানান, ‘এই আটটির মধ্যে চারটি ইউনিট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। পরবর্তী ধাপে অন্তত দুটি ইউনিট সমন্বয় করা হবে, যাতে প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যায়।’

অরুণাচল প্রদেশ ও আসামের সীমানার গেরুকামুখে অবস্থিত সুবনসিরি লোয়ার প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে আসামে বাঁধবিরোধী আন্দোলন ও নিম্নপ্রবাহে পরিবেশগত ক্ষতির আশঙ্কায় প্রকল্পের কাজ স্থগিত করা হয়।

এরপর, ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে পুনরায় কাজ শুরু হয়। সেই সময় এনএইচপিসি প্রকল্পটিতে বাড়তি নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণমূলক পরিবেশ–সংরক্ষণ ব্যবস্থা যুক্ত করে। এনএইচপিসি চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভূপেন্দর গুপ্তা পরীক্ষামূলক এই কাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই অর্জন এনএইচপিসির প্রকৌশল দক্ষতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি কেবল একটি প্রকল্প–মাইলফলক নয়, বরং ভারতের পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও স্বনির্ভর জ্বালানি ভবিষ্যতের দিকে অগ্রযাত্রার প্রতীক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শাশুড়িকে রাখতে আপত্তি স্ত্রীর, যুবকের আত্মহত্যা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

শাশুড়ির দায়িত্ব নিতে আপত্তি জানিয়েছেন স্ত্রী। এ কারণে এক যুবক আবাসিক ভবনের ১৫ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারতের বৃহত্তর ফরিদাবাদে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

িহত ব্যক্তির নাম যোগেশ কুমার। মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রের বাসিন্দা। গুরুগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেডিওথেরাপিস্ট হিসাবে কাজ করতেন। ৯ বছর আগে নেহা রাওয়াত নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। ছয় বছরের একটি সন্তান রয়েছে এ দম্পতির।

যোগেশের স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন তাঁর চাচা প্রকাশ সিং। তিনি বলেন, যোগেশকে তাঁর স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন হয়রানি করছিলেন। তারা চাইতেন না যোগেশের মা তাদের সঙ্গে থাকুক।

প্রকাশ সিং অভিযোগে বলেন, যোগেশ ও নেহা আগে নয়ডাতে থাকতেন। নেহা সেখানে চাকরি করতেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কর্মরত থাকায় সন্তানের ঠিকমতো যত্ন নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না বলে যোগেশ তাঁর মাকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। নেহা এতে রাজি হননি।

ছয় মাস আগে যোগেশ সন্তানকে নিয়ে ফরিদাবাদের সেক্টর ৮৭-এর পার্ল সোসাইটিতে চলে আসেন। নেহা নয়ডাতে থেকে যান। এ সময় যোগেশ সন্তানের দেখভাল করতে তাঁর মাকে নিয়ে আসেন।

যোগেশের চাচা অভিযোগে আরও বলেন, এক মাস আগে ওই বাসায় এসে যোগেশের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন নেহা। সে সময় যোগেশের মায়ের সেখানে থাকা নিয়ে আপত্তি তোলেন তিনি।

পরে নেহার দুই ভাই আশীষ রাওয়াত ও অমিত রাওয়াত এসে যোগেশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এসব নিয়ে যোগেশ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে তাঁর চাচা প্রকাশ সিং অভিযোগে বলেন।

চাচার অভিযোগ অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার যোগেশ নেহাকে নিয়ে গোয়ালিয়রে যান। ফেরার পথে নেহাকে নয়ডায় নামিয়ে দিয়ে একাই পার্ল সোসাইটির ফ্ল্যাটে ফিরে আসেন। পরদিন শুক্রবার রাতে পার্ল সোসাইটির ১৫ তলা থেকে লাফ দেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।

এ ঘটনায় ভুপানি থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে যোগেশের স্ত্রী নেহা রাওয়াত, তাঁর বাবা-মা বীর সিং রাওয়াত ও শান্তি রাওয়াত এবং দুই ভাই আশীষ ও অমিত রাওয়াতের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

ভুপানি থানার এসএইচও ইন্সপেক্টর সংগ্রাম দাহিয়া বলেন, ‘আমরা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সেনাবাহিনীর বেতন দিতে ট্রাম্পকে ১৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান, রহস্যময় দাতাটি কে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর এক বন্ধু তাঁকে ১৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছেন যাতে, মার্কিন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের বেতন দেওয়া যায়। কারণ, মার্কিন সরকারে শাটডাউন তথা অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ফলে, সরকার রাষ্ট্রীয় কোনো কাজের ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে পারছে না। তবে কে এই অর্থ দিয়েছেন তাঁর পরিচয় প্রকাশিত হয়নি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবর বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা দানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই অর্থ ১৩ লাখ ২০ হাজার সেনাসদস্যের বেতন প্রদানে ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। তবে প্রতিরক্ষা দপ্তর দাতার পরিচয় প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে এ নিয়ে উঠেছে নৈতিকতার প্রশ্ন।

শনিবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ওই দাতা ‘আমার বড় সমর্থক’ এবং ‘মার্কিন নাগরিক।’ তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে সরকার কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে, কারণ কংগ্রেস এখনো বাজেট অনুমোদনে ব্যর্থ। গত সপ্তাহে প্রশাসন সাময়িকভাবে সেনাদের বেতন দিয়েছে, সামরিক গবেষণার বাজেট থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার সরিয়ে এনে। তবে মাসের শেষের বেতন দিবসে কী হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।

রোববার অচলাবস্থার ২৫ তম দিন পার হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম অচলাবস্থাগুলোর একটি হতে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র শন পারনেল শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই দান এমন শর্তে দেওয়া হয়েছে যে তা সেনাসদস্যদের বেতন ও ভাতার খরচ মেটাতে ব্যবহার করা হবে।’ তিনি জানান, দপ্তরের ‘সাধারণ উপহার গ্রহণের নীতিমালা’ অনুযায়ী এই অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে।

ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবারই দানের বিষয়টি আভাস দিয়েছিলেন, তবে তখনো দাতার নাম গোপন রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তিনি স্বীকৃতি চান না।’ শনিবার এশিয়া সফরে রওনা হওয়ার আগে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি এক অসাধারণ ভদ্রলোক, এক দেশপ্রেমিক, এক মহান পৃষ্ঠপোষক। তিনি প্রচারবিমুখ।’

ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি চান না তাঁর নাম বলা হোক—যা আমার পরিচিত রাজনীতির জগতে বেশ অস্বাভাবিক। সেখানে তো সবাই চায় তাদের নাম উচ্চারিত হোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘তিনি ১৩০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন যেন সেনারা বেতন পায়। এটা বিশাল অঙ্কের অর্থ। তিনি আমার বড় সমর্থকও বটে।’

এই অর্থ সেনাপ্রতি প্রায় ১০০ ডলারের সমান। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস প্রতিরক্ষা বাজেট পুনর্বিন্যাস করে বেতন দিতে পেরেছিল, কিন্তু ৩১ অক্টোবরের পরবর্তী বেতন দিবসে কী হবে, তা অনিশ্চিত রয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কংগ্রেস এমন কোনো বিল পাস করতে পারেনি যা সেনাদের বেতন নিশ্চিত রাখবে।

অচলাবস্থার কারণে অধিকাংশ সরকারি কর্মী ছুটিতে আছেন বা বেতন ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিরক্ষা দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, ১০ হাজার ডলারের বেশি দান নৈতিকতা পর্যালোচনার আওতায় আসে, যাতে নিশ্চিত করা যায় দাতার কোনো ব্যবসায়িক দাবি, মামলা, বা প্রতিরক্ষা দপ্তরের সঙ্গে কোনো স্বার্থ সংঘাত নেই।

বিদেশি নাগরিকের দান হলে তা আরও কঠোর যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়। যদিও পেন্টাগন মাঝে মাঝে দান গ্রহণ করে, সাধারণত সেই অর্থ স্কুল, হাসপাতাল, লাইব্রেরি, জাদুঘর বা সমাধিক্ষেত্রের মতো নির্দিষ্ট প্রকল্পে ব্যয় হয়। তবে এবার সেনাবাহিনীকে বেতন দিতে নাম-গোপন দান গ্রহণে সমালোচনা উঠেছে।

সিনেটের প্রতিরক্ষা বরাদ্দ উপকমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য, ডেলাওয়্যারের সিনেটর ক্রিস কুনস বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনীকে নাম-গোপন দানের অর্থে চালানো এক ভয়াবহ নজির। এতে আশঙ্কা তৈরি হয় যে আমাদের সৈন্যরা বিদেশি শক্তির হাতে ‘কেনা সৈন্যে’ পরিণত হচ্ছে কি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের নাগরিকত্ব বাতিল করল মাদাগাস্কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ক্ষমতাচ্যুত মাদাগাস্কারের সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। ছবি: সংগৃহীত
ক্ষমতাচ্যুত মাদাগাস্কারের সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। ছবি: সংগৃহীত

গত সপ্তাহে মাদাগাস্কারে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। এবার তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করেছে দায়িত্ব নেওয়া নতুন সরকার।

নতুন প্রধানমন্ত্রী হেরিনৎসালামা রাজাওনারিভেলো স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, স্থানীয় আইন অনুযায়ী, যারা বিদেশি নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন তাঁরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাদাগাস্কারের নাগরিকত্ব হারাবেন।

প্রায় এক দশক আগে ফরাসি নাগরিকত্ব লাভ করেন ৫১ বছর বয়সী রাজোয়েলিনা। এ কারণে ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক মাস আগে তিনি ফরাসি নাগরিকত্বের কথা প্রকাশ করেন। সন্তানদের ফ্রান্সে পড়াশোনার সুবিধার জন্য এই নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন বলে যুক্তি দেখান তিনি। সে সময় নির্বাচনে তাঁর প্রার্থিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তবে সেই দাবি উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি এবং জয়ী হন।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিদ্যুৎ ও পানির সংকট নিয়ে ‘জেন জি মাদা’ নামে তরুণদের ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজোয়েলিনা প্রথমে তাঁর জ্বালানি মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেন, পরে পুরো মন্ত্রিসভাকেই ভেঙে দেন। কিন্তু তাতেও তাঁর পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলন থামেনি।

বিক্ষোভকারীরা আশা করেছিলেন, রাজোয়েলিনা পদত্যাগ করবেন, যাতে দেশটি একটি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে এগোতে পারে।

কিন্তু তিনি ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। শেষ পর্যন্ত কর্নেল মাইকেল রান্ড্রিয়ানিরিনার নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির ক্ষমতা দখল করা হয়। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান রাজোয়েলিনা।

গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজোয়েলিনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, তিনি একটি ‘নিরাপদ স্থানে’ আছেন এবং দেশের নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতেই আছে। তখন গুঞ্জন ওঠে, তিনি ফরাসি একটি বিমানে পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে দেশটির অধিকাংশ নাগরিকের বিশ্বাস, রাজোয়েলিনা দুবাইয়ে আত্মগোপনে আছেন।

এই ভিডিওর ঘণ্টাকয়েক পরেই পার্লামেন্ট তাঁকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয়। এরপর সেনারা প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে হামলা চালিয়ে সিনেট, সাংবিধানিক আদালত ও জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। কেবল জাতীয় সংসদকে রেখে অন্য সব প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করা হয়।

বর্তমানে রান্ড্রিয়ানিরিনা শপথ গ্রহণ করেছেন এবং নতুন সরকার গঠন করেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশে নির্বাচন আয়োজন করা হবে।

১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে মাদাগাস্কার অভ্যুত্থানের ইতিহাসে ভরা। ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্টবিরোধী আন্দোলনের পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় আনা হয়। তিনি তখন মাত্র ৩৩ বছর বয়সী এক সাবেক ডিজে। পরে সেনাবাহিনী গঠিত একটি ট্রানজিশনাল কাউন্সিল তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষণা করে। ২০১৮ সালে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের বর্জিত এক ‘নির্বাচনে’ তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত