Ajker Patrika

রয়টার্সের প্রতিবেদন /সর্বোচ্চ ক্ষমতা পেয়েই ওয়াশিংটন কব্জায় নিতে ট্রাম্পের নির্মম চাল

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ৩২
Thumbnail image
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএএনএন

ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বসেছেন মাত্র পাঁচ দিন হলো। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেই তিনি মার্কিন প্রশাসনে দ্রুততা ও দক্ষতার সঙ্গে নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দিয়েছেন। এটি প্রমাণ করে যে, তিনি যেসব কট্টর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেগুলো নিছক কথার ফুলঝুরি ছিল না।

এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট তাঁর প্রথম মেয়াদের মতো এবারও ফেডারেল প্রশাসন পুনর্গঠনের প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাঁর মতে, অনেক কর্মকর্তাই ‘শত্রুভাবাপন্ন’। তিনি শত শত সরকারি কর্মকর্তার দপ্তর পুনর্বণ্টন বা তাদের বরখাস্ত করার মতো পদক্ষেপ নিয়েছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপও নিয়েছেন।

ট্রাম্প দায়িত্ব নিয়েই সামরিক বাহিনীকে দক্ষিণে মেক্সিকো সীমান্তে মোতায়েন করেছেন, ইউএস কোস্টগার্ড প্রধানকে বরখাস্ত করেছেন এবং একাধিক নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। এসব নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তিনি পরিবেশ-জলবায়ুগত ইস্যু থেকে শুরু করে নাগরিকত্ব নীতিমালার মতো বিষয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি ২৬টি নির্বাহী আদেশ জারি করেন।

তবে সম্ভবত ট্রাম্পের সবচেয়ে বিতর্কিত পদক্ষেপ ছিল ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিল হামলায় জড়িত প্রায় দেড় হাজার সমর্থককে ক্ষমা করা। এই হামলা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ক্যাপিটলের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে বিবেচিত হয়।

ট্রাম্পের মিত্ররা তাঁর এই কার্যক্রমকে বিশেষ বাহিনীর আকস্মিক অভিযানের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁর সমর্থকদের এই হামলা মার্কিন ফেডারেল কর্মী, শ্রমিক সংগঠন, অধিকার সংস্থা এবং এমনকি সংবাদমাধ্যমকেও হতচকিত করে দিয়েছিল। তারা বলছেন, দ্বিতীয় মেয়াদের আগে ৪ বছর ট্রাম্পের ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় তার রক্ষণশীল মিত্রদের কয়েক বছরের পরিশ্রমের ফলে এই কার্যক্রম সম্ভব হয়েছে। ট্রাম্পের রক্ষণশীল মিত্ররাই ট্রাম্পের জন্য এসব বিষয়ে নীতিগত পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন, যাতে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই তা কার্যকর করা যায়।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে হোয়াইট হাউসের প্রধান কৌশলবিদ ও বর্তমানে ট্রাম্পের মূল পলিসি অ্যাডভাইজর স্টিভ ব্যানন এই বিষয়ে বলেন, ‘এটি (ট্রাম্পের মিত্ররা) ফেডারেল সরকার দখল করার সেনা দল।’

তবে বিরোধীরা বলছেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানকে বিকৃত করছেন এবং নির্বাহী ক্ষমতার সীমা অতিরিক্ত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তাদের দাবি, এই পদক্ষেপগুলো দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার চেয়ে রূপান্তর ঘটানো এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রতিশোধ নেওয়ার দিকে বেশি মনোযোগী।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই ট্রাম্প কয়েক ডজন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তার নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করেন। এই কর্মকর্তারা একসময় অভিযোগ করেছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টারকে নিয়ে কিছু নেতিবাচক সংবাদ রাশিয়ার প্রভাব বাড়ানোর কার্যক্রমের অংশ।

ইরান থেকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে এমন তিন সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সরিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। এমনকি তাঁর প্রশাসনের সমালোচক ও সেনাপ্রধান জেনারেল মার্ক মিলির ছবি পেন্টাগনের এক করিডর থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল থেকেও অনেক পেশাদার কূটনীতিককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ, ট্রাম্পের প্রতি তাদের আনুগত্য নিয়ে সন্দেহ আছে। এর ফলে ট্রাম্প নিজের অনুগত ব্যক্তিদের ১০০ টিরও বেশি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের পদে বসানোর সুযোগ পেয়েছেন।

মার্কিন থিংক ট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো উইলিয়াম গ্যালস্টন বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) সহজে শত্রুতার কথা ভুলে যান না।’

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের তুলনায় গত পাঁচ দিনের পদক্ষেপগুলো সম্পূর্ণ আলাদা, এমনকি তাঁর বিরোধীরাও এ কথা স্বীকার করেন। প্রথম মেয়াদে দলীয় বিভক্তি এবং দুর্বল প্রস্তুতির কারণে অনেক উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ইতিহাস নিয়ে কাজ করা নিক্সন প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরির সাবেক পরিচালক টিমোথি নাফটালি বলেন, ‘এসব পদক্ষেপের ব্যাপকতা এবং দ্রুততার দিক থেকে বলা যায়, তাঁর (ট্রাম্পের) দল যে প্রস্তুতি নিয়েছে, তা সত্যিই অসাধারণ।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনেক নীতিই ‘প্রজেক্ট ২০২৫’—এর সঙ্গে খাপে খাপ মিলে যায়। এটি বিভিন্ন রক্ষণশীল সংগঠনের একটি উদ্যোগ। এই সংগঠনটি ট্রাম্পের সম্ভাব্য ফিরে আসার প্রস্তুতি হিসেবে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করেছে। যদিও ট্রাম্প গত বছর এই প্রকল্প থেকে দূরত্ব তৈরি করে বলেছিলেন, তিনি এর কিছু জানেন না। তবে তারপরও তাঁর অনেক সাবেক উপদেষ্টা এতে গভীরভাবে জড়িত ছিলেন এবং ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে এর প্রভাব স্পষ্ট।

এ ছাড়া, ‘প্রজেক্ট ২০২৫’ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ থেকে পেশাদার কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। সেটা বাস্তবায়িত হয়েছে। শিডিউল-এফ নামে নতুন এক ধরনের কর্মী শ্রেণি তৈরি করার পরামর্শও দিয়েছিল এই প্রজেক্ট। যার ফলে লক্ষাধিক কর্মীকে বরখাস্ত করা সহজ হবে।

ট্রাম্প ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সিতেও (ফেমা) পরিবর্তনের প্রস্তাবও দিয়েছেন। যার ফলে ফেডারেল সরকারের অনেক কাজ অঙ্গরাজ্যগুলোতে স্থানান্তরিত হবে। এটিও ‘প্রজেক্ট ২০২৫’—এর আরেকটি সুপারিশ ছিল। এ বিষয়ে স্টিভ ব্যানন বলেন, ‘ট্রাম্পের প্রতি গভীরভাবে বিশ্বাসী অনেক নীতিগত ও রাজনৈতিক ব্যক্তি ২০২১ সাল থেকেই তাঁর পুনরাগমন নিয়ে কাজ করছেন। আর এখন আমরা তার ফলাফল দেখতে পাচ্ছি।’

ট্রাম্পের এজেন্ডা সামনে বড় বাধার মুখোমুখি হতে পারে। অনেক সমর্থকই স্বীকার করেছেন, তাঁর প্রশাসনের প্রথম কয়েক সপ্তাহ হয়তো ক্ষমতার শীর্ষ সময় হতে পারে। ট্রাম্পের অনেক নির্বাহী আদেশ সাংবিধানিক আইনের সীমাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী অভিবাসীদের সন্তানদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার বাতিলের আদেশ ইতিমধ্যেই ফেডারেল কোর্ট স্থগিত করেছে।

এ ছাড়া, তাঁর অন্যান্য প্রতিশ্রুতি ও আদেশও অঙ্গরাজ্য ও অধিকার রক্ষা সংগঠনগুলোর মামলা মোকাবিলা করছে, যা তার প্রশাসনের সময়সীমার বড় অংশ আইনি জটিলতায় আটকে রাখতে পারে।

দুই বছর পর হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস তথা প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখা ট্রাম্পের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। মধ্যবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের দল সাধারণত আসন হারায়। যদি তা হয়, ট্রাম্পের জন্য আইন প্রণয়নের পথ আরও সংকীর্ণ হয়ে যাবে।

ট্রাম্পের আইন ও বিচার সংক্রান্ত ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা মাইক ডেভিস বলেন, ‘আমেরিকান ভোটারদের কাছ থেকে ট্রাম্প স্পষ্ট ম্যান্ডেট পেয়েছেন ওয়াশিংটনে বড় ধরনের সংস্কার আনার জন্য। কিন্তু তিনি যদি দ্রুত তা বাস্তবায়ন করতে না পারেন, তবে সেই রাজনৈতিক ম্যান্ডেট ম্লান হয়ে যাবে।’

রয়টার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত