
পিএল–৪৮০ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি বিশেষ কর্মসূচির নাম। ১৯৫৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘পাবলিক ল’ ৪৮০’ বা ‘ফুড ফর পিস’ কর্মসূচির অধীনে এটি চালু করা হয়। এটি ছিল মূলত সোভিয়েত–মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধকালীন কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি আগাগোড়াই একটি কূটনৈতিক চাল হলেও, শিক্ষা সম্প্রসারণে এই কর্মসূচি খুবই ব্যতিক্রম একটি ভূমিকা রেখেছে।
১৯৯৬ সালে অনন্যা বাজপেয়ি, তখন ডক্টরাল শিক্ষার্থী। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেনস্টেইন লাইব্রেরিতে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বইয়ের ঐতিহাসিক সংগ্রহ আবিষ্কার করেন তিনি।
বর্তমানে ভারতের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর অনন্যা সম্প্রতি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ, হার্ভার্ড ও কলম্বিয়ার মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দক্ষিণ এশিয়া লাইব্রেরিতে সময় কাটিয়েছি। কিন্তু শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অসীম সম্পদ রয়েছে, তার সঙ্গে কিছুই তুলনীয় নয়।’
১৩২ বছর পুরোনো শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত ৮ লাখের বেশি বই রয়েছে। এটি এই অঞ্চলের গবেষণার জন্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান সংগ্রহ। কিন্তু এই বিশাল দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য সংকলন সেখানে কীভাবে পৌঁছাল?
এর উত্তরই হলো প্রজেক্ট পিল–৪৮০।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডুইট ডি. আইজেনহাওয়ার কর্তৃক স্বাক্ষরিত ‘পাবলিক ল’ ৪৮০’ শীর্ষক আইনের অধীনে এই কর্মসূচি চালু করা হয়। এই আইন ভারতসহ অন্যান্য দেশকে মার্কিন শস্য স্থানীয় মুদ্রায় কিনতে সাহায্য করেছিল। এতে দেশগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কিছুটা নিরসন করে, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বৃত্ত কমিয়ে দেয়। ভারত ১৯৫০ এবং ১৯৬০–এর দশকের খাদ্য সংকটের সময়ে এই খাদ্য সহায়তার অন্যতম বৃহৎ গ্রাহক ছিল।
এই কর্মসূচির অধীনে স্থানীয় মুদ্রার তহবিল আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ন্যূনতম খরচে সরবরাহ করা হয়। এই তহবিল ব্যবহার করে ভারতীয় ভাষায় লেখা স্থানীয় বই, সাময়িকী, ফনোগ্রাফ রেকর্ড এবং অন্যান্য মাধ্যম সংগ্রহ করা হয়। এতে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুই ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষণার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। অবশ্য ওই সময় ভারতের ‘প্রাচীনত্ব আইন’ অনুযায়ী পাণ্ডুলিপি বাদ দেওয়া হয়েছিল।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল সাউথ এশিয়া লাইব্রেরির পরিচালক জেমস নাই বলেন, ‘পিএল–৪৮০ শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরও ৩০ টির বেশি মার্কিন সংগ্রহে চমৎকার এবং অপ্রত্যাশিত প্রভাব ফেলেছে।’
দক্ষিণ এশিয়া থেকে এই বিশাল সংগ্রহ গড়ে তোলা সহজ কাজ নয়।
১৯৫৯ সালে দিল্লিতে ৬০ জন ভারতীয় সদস্যের একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়। শুরুতে সরকারি প্রকাশনা সংগ্রহে মনোযোগ দেওয়া হলেও, পাঁচ বছরের মধ্যে এই কর্মসূচি বই এবং সাময়িকী অন্তর্ভুক্ত করতে সম্প্রসারিত করা হয়। মরিন এলপি প্যাটারসন দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক একটি শীর্ষস্থানীয় গ্রন্থপঞ্জিকার ছিলেন। তিনি বলেন, ১৯৬৮ সালের মধ্যে ২০টি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় এই ক্রমবর্ধমান সংগ্রহ থেকে বই–পুস্তক ও নথিপত্র পাচ্ছিল।
১৯৬৯ সালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে প্যাটারসন উল্লেখ করেন, পিএল–৪৮০ কর্মসূচির শুরুর দিনগুলোতে ভারতীয় দলটিকে একটি বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় দেশের বই সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছিল। শৌখিন বই বিক্রেতাদের খুঁজে খুঁজে বের করতে হয়েছে।
ভারতের বিশালতা এবং সাহিত্যিক জগতের জটিলতার কারণে, কোনো একক বিক্রেতা এই সংগ্রহের দায়িত্ব নিতে পারেনি।
পরিবর্তে, বিভিন্ন প্রকাশনা কেন্দ্র থেকে বিক্রেতাদের নির্বাচন করা হয়েছিল, যারা নির্দিষ্ট ভাষা বা ভাষা গোষ্ঠীগুলোর ওপর মনোযোগ দিতেন। এই সহযোগিতা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছিল। বিক্রেতারা নিশ্চিত না হওয়া শিরোনামগুলো অনুমোদনের জন্য পাঠাতেন। চূড়ান্ত নির্বাচন দিল্লি অফিসের হাতে ছিল।
কর্মসূচিটি সমস্ত ভাষায় ভারতীয় কথাসাহিত্য সংগ্রহের ওপর জোর দিয়েছিল। প্যাটারসন লেখেন, এই নীতির ফলে অনেক গোয়েন্দা গল্প এবং সাময়িক জনপ্রিয় উপন্যাস সংগৃহীত হয়েছিল।
১৯৬৩ সালে বই সংগ্রহের পছন্দ ‘গবেষণা স্তরের বিষয়’–এ সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল। অনেক ভাষায় কথাসাহিত্য বাছাই অর্ধেকে নেমে আসে। ১৯৬৬ সালের মধ্যে ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তান থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজারের বেশি বই ও সাময়িকী পাঠানো হয়েছিল আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। এর মধ্যে ভারত ৬ লাখ ৩৩ হাজারটির বেশি বই–পুস্তক সরবরাহ করেছিল।
১৯৬৭ সালে এক মার্কিন লাইব্রেরি বৈঠকের প্রতিবেদনে বলা হয়, আমরা ১০০ থেকে ১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের ইতিহাস, ভারতের হস্তশিল্প, হিন্দু সংস্কৃতি এবং ব্যক্তিত্ব: একটি মনঃসমীক্ষণমূলক গবেষণা এবং আরও অনেক কিছু পাঠিয়েছি।
তবে, প্রশ্ন থেকে যায় পিএল–৪৮০ কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বই অপসারণ কি এই অঞ্চলের সাহিত্যিক সম্পদ কমিয়ে দিয়েছে? এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গ্রন্থাগারিক টড মাইকেলসন–অ্যামবেলাং।
স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যে পিএল–৪৮০ তহবিলের আওতায় তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া কেন্দ্র একুশ শতকের মধ্যে ২ লাখ শিরোনামের বই–পুস্তক সংগ্রহ করেছে।
মাইকেলসন-অ্যামবেলাং বলেন, পিএল–৪৮০–এর মতো কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বই অপসারণ ‘জ্ঞান বৈষম্য’ তৈরি করে। গবেষকদের প্রায়ই এই সাহিত্য সম্পদে পেতে পশ্চিমে যেতে হয়।
এদিকে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই সময় ভারত থেকে সংগৃহীত সব বই এখনো তাদের কাছে রয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। ভারতের ফ্লেম ইউনিভার্সিটির মায়া দোদের মতে, অনেক বই, যা বর্তমানে ভারতে পাওয়া যায় না, সেগুলো শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সংগ্রহে পাওয়া যায়। এসব বইয়ের ওপর ‘পিএল–৪৮০’ স্ট্যাম্প বা ছাপ থাকে।
তবে এর পক্ষে মাইকেলসন-অ্যামবেলাং যুক্তি দিয়েছেন—বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, পিএল–৪৮০ কর্মসূচির মাধ্যমে আসা বই দক্ষিণ এশিয়ায় এখনো পাওয়া যায়। তবে সংরক্ষণ একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ সাদা পিঁপড়া, পোকামাকড় এবং তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার নিয়ন্ত্রণের অভাবে বইগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর বিপরীতে, পশ্চিমা দেশগুলোর গ্রন্থাগারে সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রচেষ্টার কারণে বেশির ভাগ উপকরণ ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে।
এরপরও মাইকেলসন-অ্যামবেলাং পশ্চিমা গ্রন্থাগারগুলোকে ‘ঔপনিবেশিক আর্কাইভ’ বলতে চান। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, ‘আংশিকভাবে এ কারণেই এগুলোকে ঔপনিবেশিক আর্কাইভ বলা যায় যে, এই গ্রন্থাগারগুলো একাডেমিকদের জন্য কাজ করে, প্রায়ই তারা নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরের ব্যক্তিদের বাদ দেয়। লাইব্রেরিয়ানরা দক্ষিণ এশীয় উপকরণ ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যগুলো বোঝেন, তবে কপিরাইট আইনগুলো এ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরি করে, এটি বৈষম্য আরও বাড়িয়ে তোলে।’
পিএল–৪৮০ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটল যেভাবে
জেমস নাই বলেন, ১৯৮০–র দশকে কর্মসূচিটি শেষ হওয়ার পরে, আর্থিক বোঝা আমেরিকান গ্রন্থাগারগুলোর ওপর পড়ে। আমেরিকার গ্রন্থাগারগুলোকে এখন সম্পদ নির্বাচন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সরবরাহের খরচ বহন করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিল্লির লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের ফিল্ড অফিসের মাধ্যমে বই ও সাময়িকী কিনতে বছরে ১ লাখ ডলারের বেশি খরচ করে।
অবশ্য অনন্যা মিসেস বাজপেয়ি মনে করেন, শস্যের বিনিময়ে বই সংগ্রহের এই চুক্তি একটি ইতিবাচক ফলাফল এনেছে। তিনি সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, কিন্তু শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর গবেষণা ভারতীয় ও ইউরোপীয় ভাষা—ফরাসি, জার্মান, মারাঠি এবং হিন্দি—এবং ভাষাবিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন, নৃতত্ত্ব এবং আরও অনেক বিষয়ে বিস্তৃত ছিল। তিনি বলেন, ‘রিজেনস্টেইন লাইব্রেরিতে আমি কখনোই আমার প্রয়োজনীয় বই খুঁজে পেতে ব্যর্থ হইনি।’
তিনি বলেন, ‘বইগুলো নিরাপদে আছে, এগুলোর মূল্যবান, চাইলেই পাওয়া যায়। আমি ভারতের প্রতিটি অঞ্চলে গ্রন্থাগার, আর্কাইভ এবং প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছি এবং আমাদের দেশের বই সংক্রান্ত গল্প সর্বত্রই করুণ। এখানে বইগুলো হারিয়ে গেছে, ধ্বংস হয়েছে, অবহেলিত পড়ে রয়েছে বা প্রায়ই প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না।’

পিএল–৪৮০ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি বিশেষ কর্মসূচির নাম। ১৯৫৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘পাবলিক ল’ ৪৮০’ বা ‘ফুড ফর পিস’ কর্মসূচির অধীনে এটি চালু করা হয়। এটি ছিল মূলত সোভিয়েত–মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধকালীন কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি আগাগোড়াই একটি কূটনৈতিক চাল হলেও, শিক্ষা সম্প্রসারণে এই কর্মসূচি খুবই ব্যতিক্রম একটি ভূমিকা রেখেছে।
১৯৯৬ সালে অনন্যা বাজপেয়ি, তখন ডক্টরাল শিক্ষার্থী। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেনস্টেইন লাইব্রেরিতে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বইয়ের ঐতিহাসিক সংগ্রহ আবিষ্কার করেন তিনি।
বর্তমানে ভারতের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর অনন্যা সম্প্রতি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ, হার্ভার্ড ও কলম্বিয়ার মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দক্ষিণ এশিয়া লাইব্রেরিতে সময় কাটিয়েছি। কিন্তু শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অসীম সম্পদ রয়েছে, তার সঙ্গে কিছুই তুলনীয় নয়।’
১৩২ বছর পুরোনো শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত ৮ লাখের বেশি বই রয়েছে। এটি এই অঞ্চলের গবেষণার জন্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান সংগ্রহ। কিন্তু এই বিশাল দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য সংকলন সেখানে কীভাবে পৌঁছাল?
এর উত্তরই হলো প্রজেক্ট পিল–৪৮০।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডুইট ডি. আইজেনহাওয়ার কর্তৃক স্বাক্ষরিত ‘পাবলিক ল’ ৪৮০’ শীর্ষক আইনের অধীনে এই কর্মসূচি চালু করা হয়। এই আইন ভারতসহ অন্যান্য দেশকে মার্কিন শস্য স্থানীয় মুদ্রায় কিনতে সাহায্য করেছিল। এতে দেশগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কিছুটা নিরসন করে, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বৃত্ত কমিয়ে দেয়। ভারত ১৯৫০ এবং ১৯৬০–এর দশকের খাদ্য সংকটের সময়ে এই খাদ্য সহায়তার অন্যতম বৃহৎ গ্রাহক ছিল।
এই কর্মসূচির অধীনে স্থানীয় মুদ্রার তহবিল আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ন্যূনতম খরচে সরবরাহ করা হয়। এই তহবিল ব্যবহার করে ভারতীয় ভাষায় লেখা স্থানীয় বই, সাময়িকী, ফনোগ্রাফ রেকর্ড এবং অন্যান্য মাধ্যম সংগ্রহ করা হয়। এতে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুই ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষণার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। অবশ্য ওই সময় ভারতের ‘প্রাচীনত্ব আইন’ অনুযায়ী পাণ্ডুলিপি বাদ দেওয়া হয়েছিল।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল সাউথ এশিয়া লাইব্রেরির পরিচালক জেমস নাই বলেন, ‘পিএল–৪৮০ শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরও ৩০ টির বেশি মার্কিন সংগ্রহে চমৎকার এবং অপ্রত্যাশিত প্রভাব ফেলেছে।’
দক্ষিণ এশিয়া থেকে এই বিশাল সংগ্রহ গড়ে তোলা সহজ কাজ নয়।
১৯৫৯ সালে দিল্লিতে ৬০ জন ভারতীয় সদস্যের একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়। শুরুতে সরকারি প্রকাশনা সংগ্রহে মনোযোগ দেওয়া হলেও, পাঁচ বছরের মধ্যে এই কর্মসূচি বই এবং সাময়িকী অন্তর্ভুক্ত করতে সম্প্রসারিত করা হয়। মরিন এলপি প্যাটারসন দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক একটি শীর্ষস্থানীয় গ্রন্থপঞ্জিকার ছিলেন। তিনি বলেন, ১৯৬৮ সালের মধ্যে ২০টি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় এই ক্রমবর্ধমান সংগ্রহ থেকে বই–পুস্তক ও নথিপত্র পাচ্ছিল।
১৯৬৯ সালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে প্যাটারসন উল্লেখ করেন, পিএল–৪৮০ কর্মসূচির শুরুর দিনগুলোতে ভারতীয় দলটিকে একটি বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় দেশের বই সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছিল। শৌখিন বই বিক্রেতাদের খুঁজে খুঁজে বের করতে হয়েছে।
ভারতের বিশালতা এবং সাহিত্যিক জগতের জটিলতার কারণে, কোনো একক বিক্রেতা এই সংগ্রহের দায়িত্ব নিতে পারেনি।
পরিবর্তে, বিভিন্ন প্রকাশনা কেন্দ্র থেকে বিক্রেতাদের নির্বাচন করা হয়েছিল, যারা নির্দিষ্ট ভাষা বা ভাষা গোষ্ঠীগুলোর ওপর মনোযোগ দিতেন। এই সহযোগিতা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছিল। বিক্রেতারা নিশ্চিত না হওয়া শিরোনামগুলো অনুমোদনের জন্য পাঠাতেন। চূড়ান্ত নির্বাচন দিল্লি অফিসের হাতে ছিল।
কর্মসূচিটি সমস্ত ভাষায় ভারতীয় কথাসাহিত্য সংগ্রহের ওপর জোর দিয়েছিল। প্যাটারসন লেখেন, এই নীতির ফলে অনেক গোয়েন্দা গল্প এবং সাময়িক জনপ্রিয় উপন্যাস সংগৃহীত হয়েছিল।
১৯৬৩ সালে বই সংগ্রহের পছন্দ ‘গবেষণা স্তরের বিষয়’–এ সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল। অনেক ভাষায় কথাসাহিত্য বাছাই অর্ধেকে নেমে আসে। ১৯৬৬ সালের মধ্যে ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তান থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজারের বেশি বই ও সাময়িকী পাঠানো হয়েছিল আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। এর মধ্যে ভারত ৬ লাখ ৩৩ হাজারটির বেশি বই–পুস্তক সরবরাহ করেছিল।
১৯৬৭ সালে এক মার্কিন লাইব্রেরি বৈঠকের প্রতিবেদনে বলা হয়, আমরা ১০০ থেকে ১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের ইতিহাস, ভারতের হস্তশিল্প, হিন্দু সংস্কৃতি এবং ব্যক্তিত্ব: একটি মনঃসমীক্ষণমূলক গবেষণা এবং আরও অনেক কিছু পাঠিয়েছি।
তবে, প্রশ্ন থেকে যায় পিএল–৪৮০ কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বই অপসারণ কি এই অঞ্চলের সাহিত্যিক সম্পদ কমিয়ে দিয়েছে? এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গ্রন্থাগারিক টড মাইকেলসন–অ্যামবেলাং।
স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যে পিএল–৪৮০ তহবিলের আওতায় তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া কেন্দ্র একুশ শতকের মধ্যে ২ লাখ শিরোনামের বই–পুস্তক সংগ্রহ করেছে।
মাইকেলসন-অ্যামবেলাং বলেন, পিএল–৪৮০–এর মতো কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বই অপসারণ ‘জ্ঞান বৈষম্য’ তৈরি করে। গবেষকদের প্রায়ই এই সাহিত্য সম্পদে পেতে পশ্চিমে যেতে হয়।
এদিকে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই সময় ভারত থেকে সংগৃহীত সব বই এখনো তাদের কাছে রয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। ভারতের ফ্লেম ইউনিভার্সিটির মায়া দোদের মতে, অনেক বই, যা বর্তমানে ভারতে পাওয়া যায় না, সেগুলো শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সংগ্রহে পাওয়া যায়। এসব বইয়ের ওপর ‘পিএল–৪৮০’ স্ট্যাম্প বা ছাপ থাকে।
তবে এর পক্ষে মাইকেলসন-অ্যামবেলাং যুক্তি দিয়েছেন—বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, পিএল–৪৮০ কর্মসূচির মাধ্যমে আসা বই দক্ষিণ এশিয়ায় এখনো পাওয়া যায়। তবে সংরক্ষণ একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ সাদা পিঁপড়া, পোকামাকড় এবং তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার নিয়ন্ত্রণের অভাবে বইগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর বিপরীতে, পশ্চিমা দেশগুলোর গ্রন্থাগারে সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রচেষ্টার কারণে বেশির ভাগ উপকরণ ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে।
এরপরও মাইকেলসন-অ্যামবেলাং পশ্চিমা গ্রন্থাগারগুলোকে ‘ঔপনিবেশিক আর্কাইভ’ বলতে চান। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, ‘আংশিকভাবে এ কারণেই এগুলোকে ঔপনিবেশিক আর্কাইভ বলা যায় যে, এই গ্রন্থাগারগুলো একাডেমিকদের জন্য কাজ করে, প্রায়ই তারা নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরের ব্যক্তিদের বাদ দেয়। লাইব্রেরিয়ানরা দক্ষিণ এশীয় উপকরণ ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যগুলো বোঝেন, তবে কপিরাইট আইনগুলো এ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরি করে, এটি বৈষম্য আরও বাড়িয়ে তোলে।’
পিএল–৪৮০ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটল যেভাবে
জেমস নাই বলেন, ১৯৮০–র দশকে কর্মসূচিটি শেষ হওয়ার পরে, আর্থিক বোঝা আমেরিকান গ্রন্থাগারগুলোর ওপর পড়ে। আমেরিকার গ্রন্থাগারগুলোকে এখন সম্পদ নির্বাচন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সরবরাহের খরচ বহন করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিল্লির লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের ফিল্ড অফিসের মাধ্যমে বই ও সাময়িকী কিনতে বছরে ১ লাখ ডলারের বেশি খরচ করে।
অবশ্য অনন্যা মিসেস বাজপেয়ি মনে করেন, শস্যের বিনিময়ে বই সংগ্রহের এই চুক্তি একটি ইতিবাচক ফলাফল এনেছে। তিনি সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, কিন্তু শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর গবেষণা ভারতীয় ও ইউরোপীয় ভাষা—ফরাসি, জার্মান, মারাঠি এবং হিন্দি—এবং ভাষাবিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন, নৃতত্ত্ব এবং আরও অনেক বিষয়ে বিস্তৃত ছিল। তিনি বলেন, ‘রিজেনস্টেইন লাইব্রেরিতে আমি কখনোই আমার প্রয়োজনীয় বই খুঁজে পেতে ব্যর্থ হইনি।’
তিনি বলেন, ‘বইগুলো নিরাপদে আছে, এগুলোর মূল্যবান, চাইলেই পাওয়া যায়। আমি ভারতের প্রতিটি অঞ্চলে গ্রন্থাগার, আর্কাইভ এবং প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছি এবং আমাদের দেশের বই সংক্রান্ত গল্প সর্বত্রই করুণ। এখানে বইগুলো হারিয়ে গেছে, ধ্বংস হয়েছে, অবহেলিত পড়ে রয়েছে বা প্রায়ই প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না।’

পিএল–৪৮০ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি বিশেষ কর্মসূচির নাম। ১৯৫৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘পাবলিক ল’ ৪৮০’ বা ‘ফুড ফর পিস’ কর্মসূচির অধীনে এটি চালু করা হয়। এটি ছিল মূলত সোভিয়েত–মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধকালীন কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি আগাগোড়াই একটি কূটনৈতিক চাল হলেও, শিক্ষা সম্প্রসারণে এই কর্মসূচি খুবই ব্যতিক্রম একটি ভূমিকা রেখেছে।
১৯৯৬ সালে অনন্যা বাজপেয়ি, তখন ডক্টরাল শিক্ষার্থী। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেনস্টেইন লাইব্রেরিতে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বইয়ের ঐতিহাসিক সংগ্রহ আবিষ্কার করেন তিনি।
বর্তমানে ভারতের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর অনন্যা সম্প্রতি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ, হার্ভার্ড ও কলম্বিয়ার মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দক্ষিণ এশিয়া লাইব্রেরিতে সময় কাটিয়েছি। কিন্তু শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অসীম সম্পদ রয়েছে, তার সঙ্গে কিছুই তুলনীয় নয়।’
১৩২ বছর পুরোনো শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত ৮ লাখের বেশি বই রয়েছে। এটি এই অঞ্চলের গবেষণার জন্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান সংগ্রহ। কিন্তু এই বিশাল দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য সংকলন সেখানে কীভাবে পৌঁছাল?
এর উত্তরই হলো প্রজেক্ট পিল–৪৮০।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডুইট ডি. আইজেনহাওয়ার কর্তৃক স্বাক্ষরিত ‘পাবলিক ল’ ৪৮০’ শীর্ষক আইনের অধীনে এই কর্মসূচি চালু করা হয়। এই আইন ভারতসহ অন্যান্য দেশকে মার্কিন শস্য স্থানীয় মুদ্রায় কিনতে সাহায্য করেছিল। এতে দেশগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কিছুটা নিরসন করে, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বৃত্ত কমিয়ে দেয়। ভারত ১৯৫০ এবং ১৯৬০–এর দশকের খাদ্য সংকটের সময়ে এই খাদ্য সহায়তার অন্যতম বৃহৎ গ্রাহক ছিল।
এই কর্মসূচির অধীনে স্থানীয় মুদ্রার তহবিল আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ন্যূনতম খরচে সরবরাহ করা হয়। এই তহবিল ব্যবহার করে ভারতীয় ভাষায় লেখা স্থানীয় বই, সাময়িকী, ফনোগ্রাফ রেকর্ড এবং অন্যান্য মাধ্যম সংগ্রহ করা হয়। এতে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুই ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষণার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। অবশ্য ওই সময় ভারতের ‘প্রাচীনত্ব আইন’ অনুযায়ী পাণ্ডুলিপি বাদ দেওয়া হয়েছিল।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল সাউথ এশিয়া লাইব্রেরির পরিচালক জেমস নাই বলেন, ‘পিএল–৪৮০ শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরও ৩০ টির বেশি মার্কিন সংগ্রহে চমৎকার এবং অপ্রত্যাশিত প্রভাব ফেলেছে।’
দক্ষিণ এশিয়া থেকে এই বিশাল সংগ্রহ গড়ে তোলা সহজ কাজ নয়।
১৯৫৯ সালে দিল্লিতে ৬০ জন ভারতীয় সদস্যের একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়। শুরুতে সরকারি প্রকাশনা সংগ্রহে মনোযোগ দেওয়া হলেও, পাঁচ বছরের মধ্যে এই কর্মসূচি বই এবং সাময়িকী অন্তর্ভুক্ত করতে সম্প্রসারিত করা হয়। মরিন এলপি প্যাটারসন দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক একটি শীর্ষস্থানীয় গ্রন্থপঞ্জিকার ছিলেন। তিনি বলেন, ১৯৬৮ সালের মধ্যে ২০টি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় এই ক্রমবর্ধমান সংগ্রহ থেকে বই–পুস্তক ও নথিপত্র পাচ্ছিল।
১৯৬৯ সালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে প্যাটারসন উল্লেখ করেন, পিএল–৪৮০ কর্মসূচির শুরুর দিনগুলোতে ভারতীয় দলটিকে একটি বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় দেশের বই সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছিল। শৌখিন বই বিক্রেতাদের খুঁজে খুঁজে বের করতে হয়েছে।
ভারতের বিশালতা এবং সাহিত্যিক জগতের জটিলতার কারণে, কোনো একক বিক্রেতা এই সংগ্রহের দায়িত্ব নিতে পারেনি।
পরিবর্তে, বিভিন্ন প্রকাশনা কেন্দ্র থেকে বিক্রেতাদের নির্বাচন করা হয়েছিল, যারা নির্দিষ্ট ভাষা বা ভাষা গোষ্ঠীগুলোর ওপর মনোযোগ দিতেন। এই সহযোগিতা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছিল। বিক্রেতারা নিশ্চিত না হওয়া শিরোনামগুলো অনুমোদনের জন্য পাঠাতেন। চূড়ান্ত নির্বাচন দিল্লি অফিসের হাতে ছিল।
কর্মসূচিটি সমস্ত ভাষায় ভারতীয় কথাসাহিত্য সংগ্রহের ওপর জোর দিয়েছিল। প্যাটারসন লেখেন, এই নীতির ফলে অনেক গোয়েন্দা গল্প এবং সাময়িক জনপ্রিয় উপন্যাস সংগৃহীত হয়েছিল।
১৯৬৩ সালে বই সংগ্রহের পছন্দ ‘গবেষণা স্তরের বিষয়’–এ সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল। অনেক ভাষায় কথাসাহিত্য বাছাই অর্ধেকে নেমে আসে। ১৯৬৬ সালের মধ্যে ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তান থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজারের বেশি বই ও সাময়িকী পাঠানো হয়েছিল আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। এর মধ্যে ভারত ৬ লাখ ৩৩ হাজারটির বেশি বই–পুস্তক সরবরাহ করেছিল।
১৯৬৭ সালে এক মার্কিন লাইব্রেরি বৈঠকের প্রতিবেদনে বলা হয়, আমরা ১০০ থেকে ১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের ইতিহাস, ভারতের হস্তশিল্প, হিন্দু সংস্কৃতি এবং ব্যক্তিত্ব: একটি মনঃসমীক্ষণমূলক গবেষণা এবং আরও অনেক কিছু পাঠিয়েছি।
তবে, প্রশ্ন থেকে যায় পিএল–৪৮০ কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বই অপসারণ কি এই অঞ্চলের সাহিত্যিক সম্পদ কমিয়ে দিয়েছে? এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গ্রন্থাগারিক টড মাইকেলসন–অ্যামবেলাং।
স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যে পিএল–৪৮০ তহবিলের আওতায় তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া কেন্দ্র একুশ শতকের মধ্যে ২ লাখ শিরোনামের বই–পুস্তক সংগ্রহ করেছে।
মাইকেলসন-অ্যামবেলাং বলেন, পিএল–৪৮০–এর মতো কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বই অপসারণ ‘জ্ঞান বৈষম্য’ তৈরি করে। গবেষকদের প্রায়ই এই সাহিত্য সম্পদে পেতে পশ্চিমে যেতে হয়।
এদিকে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই সময় ভারত থেকে সংগৃহীত সব বই এখনো তাদের কাছে রয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। ভারতের ফ্লেম ইউনিভার্সিটির মায়া দোদের মতে, অনেক বই, যা বর্তমানে ভারতে পাওয়া যায় না, সেগুলো শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সংগ্রহে পাওয়া যায়। এসব বইয়ের ওপর ‘পিএল–৪৮০’ স্ট্যাম্প বা ছাপ থাকে।
তবে এর পক্ষে মাইকেলসন-অ্যামবেলাং যুক্তি দিয়েছেন—বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, পিএল–৪৮০ কর্মসূচির মাধ্যমে আসা বই দক্ষিণ এশিয়ায় এখনো পাওয়া যায়। তবে সংরক্ষণ একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ সাদা পিঁপড়া, পোকামাকড় এবং তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার নিয়ন্ত্রণের অভাবে বইগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর বিপরীতে, পশ্চিমা দেশগুলোর গ্রন্থাগারে সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রচেষ্টার কারণে বেশির ভাগ উপকরণ ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে।
এরপরও মাইকেলসন-অ্যামবেলাং পশ্চিমা গ্রন্থাগারগুলোকে ‘ঔপনিবেশিক আর্কাইভ’ বলতে চান। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, ‘আংশিকভাবে এ কারণেই এগুলোকে ঔপনিবেশিক আর্কাইভ বলা যায় যে, এই গ্রন্থাগারগুলো একাডেমিকদের জন্য কাজ করে, প্রায়ই তারা নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরের ব্যক্তিদের বাদ দেয়। লাইব্রেরিয়ানরা দক্ষিণ এশীয় উপকরণ ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যগুলো বোঝেন, তবে কপিরাইট আইনগুলো এ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরি করে, এটি বৈষম্য আরও বাড়িয়ে তোলে।’
পিএল–৪৮০ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটল যেভাবে
জেমস নাই বলেন, ১৯৮০–র দশকে কর্মসূচিটি শেষ হওয়ার পরে, আর্থিক বোঝা আমেরিকান গ্রন্থাগারগুলোর ওপর পড়ে। আমেরিকার গ্রন্থাগারগুলোকে এখন সম্পদ নির্বাচন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সরবরাহের খরচ বহন করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিল্লির লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের ফিল্ড অফিসের মাধ্যমে বই ও সাময়িকী কিনতে বছরে ১ লাখ ডলারের বেশি খরচ করে।
অবশ্য অনন্যা মিসেস বাজপেয়ি মনে করেন, শস্যের বিনিময়ে বই সংগ্রহের এই চুক্তি একটি ইতিবাচক ফলাফল এনেছে। তিনি সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, কিন্তু শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর গবেষণা ভারতীয় ও ইউরোপীয় ভাষা—ফরাসি, জার্মান, মারাঠি এবং হিন্দি—এবং ভাষাবিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন, নৃতত্ত্ব এবং আরও অনেক বিষয়ে বিস্তৃত ছিল। তিনি বলেন, ‘রিজেনস্টেইন লাইব্রেরিতে আমি কখনোই আমার প্রয়োজনীয় বই খুঁজে পেতে ব্যর্থ হইনি।’
তিনি বলেন, ‘বইগুলো নিরাপদে আছে, এগুলোর মূল্যবান, চাইলেই পাওয়া যায়। আমি ভারতের প্রতিটি অঞ্চলে গ্রন্থাগার, আর্কাইভ এবং প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছি এবং আমাদের দেশের বই সংক্রান্ত গল্প সর্বত্রই করুণ। এখানে বইগুলো হারিয়ে গেছে, ধ্বংস হয়েছে, অবহেলিত পড়ে রয়েছে বা প্রায়ই প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না।’

পিএল–৪৮০ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি বিশেষ কর্মসূচির নাম। ১৯৫৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘পাবলিক ল’ ৪৮০’ বা ‘ফুড ফর পিস’ কর্মসূচির অধীনে এটি চালু করা হয়। এটি ছিল মূলত সোভিয়েত–মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধকালীন কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি আগাগোড়াই একটি কূটনৈতিক চাল হলেও, শিক্ষা সম্প্রসারণে এই কর্মসূচি খুবই ব্যতিক্রম একটি ভূমিকা রেখেছে।
১৯৯৬ সালে অনন্যা বাজপেয়ি, তখন ডক্টরাল শিক্ষার্থী। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেনস্টেইন লাইব্রেরিতে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বইয়ের ঐতিহাসিক সংগ্রহ আবিষ্কার করেন তিনি।
বর্তমানে ভারতের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর অনন্যা সম্প্রতি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ, হার্ভার্ড ও কলম্বিয়ার মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দক্ষিণ এশিয়া লাইব্রেরিতে সময় কাটিয়েছি। কিন্তু শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অসীম সম্পদ রয়েছে, তার সঙ্গে কিছুই তুলনীয় নয়।’
১৩২ বছর পুরোনো শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত ৮ লাখের বেশি বই রয়েছে। এটি এই অঞ্চলের গবেষণার জন্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান সংগ্রহ। কিন্তু এই বিশাল দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য সংকলন সেখানে কীভাবে পৌঁছাল?
এর উত্তরই হলো প্রজেক্ট পিল–৪৮০।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডুইট ডি. আইজেনহাওয়ার কর্তৃক স্বাক্ষরিত ‘পাবলিক ল’ ৪৮০’ শীর্ষক আইনের অধীনে এই কর্মসূচি চালু করা হয়। এই আইন ভারতসহ অন্যান্য দেশকে মার্কিন শস্য স্থানীয় মুদ্রায় কিনতে সাহায্য করেছিল। এতে দেশগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কিছুটা নিরসন করে, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বৃত্ত কমিয়ে দেয়। ভারত ১৯৫০ এবং ১৯৬০–এর দশকের খাদ্য সংকটের সময়ে এই খাদ্য সহায়তার অন্যতম বৃহৎ গ্রাহক ছিল।
এই কর্মসূচির অধীনে স্থানীয় মুদ্রার তহবিল আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ন্যূনতম খরচে সরবরাহ করা হয়। এই তহবিল ব্যবহার করে ভারতীয় ভাষায় লেখা স্থানীয় বই, সাময়িকী, ফনোগ্রাফ রেকর্ড এবং অন্যান্য মাধ্যম সংগ্রহ করা হয়। এতে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুই ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষণার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। অবশ্য ওই সময় ভারতের ‘প্রাচীনত্ব আইন’ অনুযায়ী পাণ্ডুলিপি বাদ দেওয়া হয়েছিল।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল সাউথ এশিয়া লাইব্রেরির পরিচালক জেমস নাই বলেন, ‘পিএল–৪৮০ শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরও ৩০ টির বেশি মার্কিন সংগ্রহে চমৎকার এবং অপ্রত্যাশিত প্রভাব ফেলেছে।’
দক্ষিণ এশিয়া থেকে এই বিশাল সংগ্রহ গড়ে তোলা সহজ কাজ নয়।
১৯৫৯ সালে দিল্লিতে ৬০ জন ভারতীয় সদস্যের একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়। শুরুতে সরকারি প্রকাশনা সংগ্রহে মনোযোগ দেওয়া হলেও, পাঁচ বছরের মধ্যে এই কর্মসূচি বই এবং সাময়িকী অন্তর্ভুক্ত করতে সম্প্রসারিত করা হয়। মরিন এলপি প্যাটারসন দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক একটি শীর্ষস্থানীয় গ্রন্থপঞ্জিকার ছিলেন। তিনি বলেন, ১৯৬৮ সালের মধ্যে ২০টি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় এই ক্রমবর্ধমান সংগ্রহ থেকে বই–পুস্তক ও নথিপত্র পাচ্ছিল।
১৯৬৯ সালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে প্যাটারসন উল্লেখ করেন, পিএল–৪৮০ কর্মসূচির শুরুর দিনগুলোতে ভারতীয় দলটিকে একটি বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় দেশের বই সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছিল। শৌখিন বই বিক্রেতাদের খুঁজে খুঁজে বের করতে হয়েছে।
ভারতের বিশালতা এবং সাহিত্যিক জগতের জটিলতার কারণে, কোনো একক বিক্রেতা এই সংগ্রহের দায়িত্ব নিতে পারেনি।
পরিবর্তে, বিভিন্ন প্রকাশনা কেন্দ্র থেকে বিক্রেতাদের নির্বাচন করা হয়েছিল, যারা নির্দিষ্ট ভাষা বা ভাষা গোষ্ঠীগুলোর ওপর মনোযোগ দিতেন। এই সহযোগিতা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছিল। বিক্রেতারা নিশ্চিত না হওয়া শিরোনামগুলো অনুমোদনের জন্য পাঠাতেন। চূড়ান্ত নির্বাচন দিল্লি অফিসের হাতে ছিল।
কর্মসূচিটি সমস্ত ভাষায় ভারতীয় কথাসাহিত্য সংগ্রহের ওপর জোর দিয়েছিল। প্যাটারসন লেখেন, এই নীতির ফলে অনেক গোয়েন্দা গল্প এবং সাময়িক জনপ্রিয় উপন্যাস সংগৃহীত হয়েছিল।
১৯৬৩ সালে বই সংগ্রহের পছন্দ ‘গবেষণা স্তরের বিষয়’–এ সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল। অনেক ভাষায় কথাসাহিত্য বাছাই অর্ধেকে নেমে আসে। ১৯৬৬ সালের মধ্যে ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তান থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজারের বেশি বই ও সাময়িকী পাঠানো হয়েছিল আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। এর মধ্যে ভারত ৬ লাখ ৩৩ হাজারটির বেশি বই–পুস্তক সরবরাহ করেছিল।
১৯৬৭ সালে এক মার্কিন লাইব্রেরি বৈঠকের প্রতিবেদনে বলা হয়, আমরা ১০০ থেকে ১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের ইতিহাস, ভারতের হস্তশিল্প, হিন্দু সংস্কৃতি এবং ব্যক্তিত্ব: একটি মনঃসমীক্ষণমূলক গবেষণা এবং আরও অনেক কিছু পাঠিয়েছি।
তবে, প্রশ্ন থেকে যায় পিএল–৪৮০ কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বই অপসারণ কি এই অঞ্চলের সাহিত্যিক সম্পদ কমিয়ে দিয়েছে? এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গ্রন্থাগারিক টড মাইকেলসন–অ্যামবেলাং।
স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যে পিএল–৪৮০ তহবিলের আওতায় তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া কেন্দ্র একুশ শতকের মধ্যে ২ লাখ শিরোনামের বই–পুস্তক সংগ্রহ করেছে।
মাইকেলসন-অ্যামবেলাং বলেন, পিএল–৪৮০–এর মতো কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বই অপসারণ ‘জ্ঞান বৈষম্য’ তৈরি করে। গবেষকদের প্রায়ই এই সাহিত্য সম্পদে পেতে পশ্চিমে যেতে হয়।
এদিকে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই সময় ভারত থেকে সংগৃহীত সব বই এখনো তাদের কাছে রয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। ভারতের ফ্লেম ইউনিভার্সিটির মায়া দোদের মতে, অনেক বই, যা বর্তমানে ভারতে পাওয়া যায় না, সেগুলো শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সংগ্রহে পাওয়া যায়। এসব বইয়ের ওপর ‘পিএল–৪৮০’ স্ট্যাম্প বা ছাপ থাকে।
তবে এর পক্ষে মাইকেলসন-অ্যামবেলাং যুক্তি দিয়েছেন—বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, পিএল–৪৮০ কর্মসূচির মাধ্যমে আসা বই দক্ষিণ এশিয়ায় এখনো পাওয়া যায়। তবে সংরক্ষণ একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ সাদা পিঁপড়া, পোকামাকড় এবং তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার নিয়ন্ত্রণের অভাবে বইগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর বিপরীতে, পশ্চিমা দেশগুলোর গ্রন্থাগারে সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রচেষ্টার কারণে বেশির ভাগ উপকরণ ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে।
এরপরও মাইকেলসন-অ্যামবেলাং পশ্চিমা গ্রন্থাগারগুলোকে ‘ঔপনিবেশিক আর্কাইভ’ বলতে চান। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, ‘আংশিকভাবে এ কারণেই এগুলোকে ঔপনিবেশিক আর্কাইভ বলা যায় যে, এই গ্রন্থাগারগুলো একাডেমিকদের জন্য কাজ করে, প্রায়ই তারা নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরের ব্যক্তিদের বাদ দেয়। লাইব্রেরিয়ানরা দক্ষিণ এশীয় উপকরণ ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যগুলো বোঝেন, তবে কপিরাইট আইনগুলো এ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরি করে, এটি বৈষম্য আরও বাড়িয়ে তোলে।’
পিএল–৪৮০ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটল যেভাবে
জেমস নাই বলেন, ১৯৮০–র দশকে কর্মসূচিটি শেষ হওয়ার পরে, আর্থিক বোঝা আমেরিকান গ্রন্থাগারগুলোর ওপর পড়ে। আমেরিকার গ্রন্থাগারগুলোকে এখন সম্পদ নির্বাচন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সরবরাহের খরচ বহন করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিল্লির লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের ফিল্ড অফিসের মাধ্যমে বই ও সাময়িকী কিনতে বছরে ১ লাখ ডলারের বেশি খরচ করে।
অবশ্য অনন্যা মিসেস বাজপেয়ি মনে করেন, শস্যের বিনিময়ে বই সংগ্রহের এই চুক্তি একটি ইতিবাচক ফলাফল এনেছে। তিনি সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, কিন্তু শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর গবেষণা ভারতীয় ও ইউরোপীয় ভাষা—ফরাসি, জার্মান, মারাঠি এবং হিন্দি—এবং ভাষাবিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন, নৃতত্ত্ব এবং আরও অনেক বিষয়ে বিস্তৃত ছিল। তিনি বলেন, ‘রিজেনস্টেইন লাইব্রেরিতে আমি কখনোই আমার প্রয়োজনীয় বই খুঁজে পেতে ব্যর্থ হইনি।’
তিনি বলেন, ‘বইগুলো নিরাপদে আছে, এগুলোর মূল্যবান, চাইলেই পাওয়া যায়। আমি ভারতের প্রতিটি অঞ্চলে গ্রন্থাগার, আর্কাইভ এবং প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছি এবং আমাদের দেশের বই সংক্রান্ত গল্প সর্বত্রই করুণ। এখানে বইগুলো হারিয়ে গেছে, ধ্বংস হয়েছে, অবহেলিত পড়ে রয়েছে বা প্রায়ই প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না।’

এশিয়ার সবচেয়ে নবীন রাষ্ট্র পূর্ব তিমুর আজ রোববার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের ১১ তম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে যুক্ত হয়েছে। পর্তুগিজ শাসনের সময় প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট অর্থনৈতিক মুক্তি ও আঞ্চলিক জোটভুক্ত হওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার পূর্ণতা মিলল।
৩৩ মিনিট আগে
দুই বছরের যুদ্ধ শেষে গাজা এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অঞ্চলটি এখন ৬ কোটি ১০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে। অঞ্চলটির মোট ভবনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে এটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
১ ঘণ্টা আগে
সুদানের এমন একটি অঞ্চল আছে, যেখানে গেলে মনে হবে দেশে কোনো অশান্তি নেই, কোনো গৃহযুদ্ধ চলছে না। সে জায়গাটি হলো জেবেল মারা পর্বতমালা। দারফুর অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত এই সবুজ ভূখণ্ডটি দেশের বাকি অংশের সঙ্গে এক মর্মান্তিক বৈপরীত্য তুলে ধরে।
১ ঘণ্টা আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্রডকাস্টার স্টিভ ব্যাননের মতে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে হলে এখন আর দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে কাজ হবে না, বরং একটি ‘ত্রিরাষ্ট্রীয় সমাধান’ প্রয়োজন। যেখানে মুসলিম ফিলিস্তিন ও ইহুদি ইসরায়েলের মধ্যে থাকবে একটি ‘খ্রিষ্টান রাষ্ট্র।’
১ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

এশিয়ার সবচেয়ে নবীন রাষ্ট্র পূর্ব তিমুর আজ রোববার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের ১১ তম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে যুক্ত হয়েছে। পর্তুগিজ শাসনের সময় প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট অর্থনৈতিক মুক্তি ও আঞ্চলিক জোটভুক্ত হওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার পূর্ণতা মিলল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর পূর্ব তিমুরের আসিয়ানে অন্তর্ভুক্তি বাস্তবায়িত হলো। যদিও এই সদস্যপদকে কোনো বড় পরিবর্তনের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে না, তবুও এটি দেশটির প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা এবং প্রধানমন্ত্রী জানানা গুসমাওয়ের জন্য এক প্রতীকী বিজয়। এই দুজনই যারা দেশটির স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক।
আজ রোববার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে আয়োজিত আসিয়ানের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে পূর্ব তিমুরের পতাকা মঞ্চে স্থাপন করা হলে করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো হল। এভাবেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় তাদের নতুন অধ্যায়।
প্রধানমন্ত্রী জানান গুসমাও এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে দেশের জন্য এক নতুন সূচনা হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই নতুন সূচনা দেশটিকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ‘অসীম সুযোগ’ এনে দেবে।
তিমুর-লেস্তে নামেও পরিচিত এই দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। এটি এশিয়ার দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি। প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষুদ্র অর্থনীতির দেশটি এখন আশা করছে, আসিয়ানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অন্তর্ভুক্ত অর্থনৈতিক কাঠামোর সুবিধা পাবে—যার মোট আকার ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার।
গুসমাও বলেন, ‘তিমুর-লেস্তের জনগণের জন্য এটি শুধু একটি স্বপ্নপূরণ নয়, বরং আমাদের দীর্ঘ যাত্রার এক শক্তিশালী স্বীকৃতি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যোগদান আমাদের জাতির মানসিকতার প্রমাণ—একটি নবীন গণতন্ত্র, যা জন্ম নিয়েছে সংগ্রামের ভেতর থেকে। এটি কোনো যাত্রার সমাপ্তি নয়।’
তিন শতাব্দী ধরে পর্তুগালের শাসনে থাকা পূর্ব তিমুর ১৯৭৫ সালে হঠাৎ করে স্বাধীন হয়, তবে পরে দেশটি প্রতিবেশী ইন্দোনেশিয়ার দখলে চলে যায়। দীর্ঘ ও রক্তাক্ত সংগ্রামের পর ২০০২ সালে দেশটি পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৯৯৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ৭৫ বছর বয়সী রামোস-হোর্তা ১৯৭০-এর দশকেই পূর্ব তিমুরকে আসিয়ানে যুক্ত করার ধারণা তোলেন, যেন আঞ্চলিক সংহতির মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা যায়।
গত সেপ্টেম্বর চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রামোস-হোর্তা বলেন, পূর্ব তিমুরকে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে এবং আসিয়ানের ওপর কোনো বোঝা হয়ে ওঠা চলবে না। বরং সীমান্তবিরোধ বা দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বিরোধের মতো বিষয়গুলোয় নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে জোটকে সহায়তা করতে পারে দেশটি।
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমরা যদি আসিয়ানের সংঘাত-নিরসন প্রক্রিয়াগুলোকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখতে পারি, সেটাই হবে মূল বিষয়। আসিয়ানের প্রতিটি দেশেই আমরা আলোচনার সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিতে পারি।’

এশিয়ার সবচেয়ে নবীন রাষ্ট্র পূর্ব তিমুর আজ রোববার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের ১১ তম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে যুক্ত হয়েছে। পর্তুগিজ শাসনের সময় প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট অর্থনৈতিক মুক্তি ও আঞ্চলিক জোটভুক্ত হওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার পূর্ণতা মিলল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর পূর্ব তিমুরের আসিয়ানে অন্তর্ভুক্তি বাস্তবায়িত হলো। যদিও এই সদস্যপদকে কোনো বড় পরিবর্তনের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে না, তবুও এটি দেশটির প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা এবং প্রধানমন্ত্রী জানানা গুসমাওয়ের জন্য এক প্রতীকী বিজয়। এই দুজনই যারা দেশটির স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক।
আজ রোববার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে আয়োজিত আসিয়ানের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে পূর্ব তিমুরের পতাকা মঞ্চে স্থাপন করা হলে করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো হল। এভাবেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় তাদের নতুন অধ্যায়।
প্রধানমন্ত্রী জানান গুসমাও এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে দেশের জন্য এক নতুন সূচনা হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই নতুন সূচনা দেশটিকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ‘অসীম সুযোগ’ এনে দেবে।
তিমুর-লেস্তে নামেও পরিচিত এই দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। এটি এশিয়ার দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি। প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষুদ্র অর্থনীতির দেশটি এখন আশা করছে, আসিয়ানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অন্তর্ভুক্ত অর্থনৈতিক কাঠামোর সুবিধা পাবে—যার মোট আকার ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার।
গুসমাও বলেন, ‘তিমুর-লেস্তের জনগণের জন্য এটি শুধু একটি স্বপ্নপূরণ নয়, বরং আমাদের দীর্ঘ যাত্রার এক শক্তিশালী স্বীকৃতি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যোগদান আমাদের জাতির মানসিকতার প্রমাণ—একটি নবীন গণতন্ত্র, যা জন্ম নিয়েছে সংগ্রামের ভেতর থেকে। এটি কোনো যাত্রার সমাপ্তি নয়।’
তিন শতাব্দী ধরে পর্তুগালের শাসনে থাকা পূর্ব তিমুর ১৯৭৫ সালে হঠাৎ করে স্বাধীন হয়, তবে পরে দেশটি প্রতিবেশী ইন্দোনেশিয়ার দখলে চলে যায়। দীর্ঘ ও রক্তাক্ত সংগ্রামের পর ২০০২ সালে দেশটি পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৯৯৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ৭৫ বছর বয়সী রামোস-হোর্তা ১৯৭০-এর দশকেই পূর্ব তিমুরকে আসিয়ানে যুক্ত করার ধারণা তোলেন, যেন আঞ্চলিক সংহতির মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা যায়।
গত সেপ্টেম্বর চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রামোস-হোর্তা বলেন, পূর্ব তিমুরকে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে এবং আসিয়ানের ওপর কোনো বোঝা হয়ে ওঠা চলবে না। বরং সীমান্তবিরোধ বা দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বিরোধের মতো বিষয়গুলোয় নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে জোটকে সহায়তা করতে পারে দেশটি।
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমরা যদি আসিয়ানের সংঘাত-নিরসন প্রক্রিয়াগুলোকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখতে পারি, সেটাই হবে মূল বিষয়। আসিয়ানের প্রতিটি দেশেই আমরা আলোচনার সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিতে পারি।’

১৩২ বছর পুরোনো শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত ৮ লাখের বেশি বই রয়েছে। এটি এই অঞ্চলের গবেষণার জন্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান সংগ্রহ। কিন্তু এই বিশাল দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য সংকলন সেখানে কীভাবে পৌঁছাল?
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
দুই বছরের যুদ্ধ শেষে গাজা এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অঞ্চলটি এখন ৬ কোটি ১০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে। অঞ্চলটির মোট ভবনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে এটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
১ ঘণ্টা আগে
সুদানের এমন একটি অঞ্চল আছে, যেখানে গেলে মনে হবে দেশে কোনো অশান্তি নেই, কোনো গৃহযুদ্ধ চলছে না। সে জায়গাটি হলো জেবেল মারা পর্বতমালা। দারফুর অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত এই সবুজ ভূখণ্ডটি দেশের বাকি অংশের সঙ্গে এক মর্মান্তিক বৈপরীত্য তুলে ধরে।
১ ঘণ্টা আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্রডকাস্টার স্টিভ ব্যাননের মতে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে হলে এখন আর দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে কাজ হবে না, বরং একটি ‘ত্রিরাষ্ট্রীয় সমাধান’ প্রয়োজন। যেখানে মুসলিম ফিলিস্তিন ও ইহুদি ইসরায়েলের মধ্যে থাকবে একটি ‘খ্রিষ্টান রাষ্ট্র।’
১ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দুই বছরের যুদ্ধ শেষে গাজা এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অঞ্চলটি এখন ৬ কোটি ১০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে। অঞ্চলটির মোট ভবনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে এটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের মুখে ১০ অক্টোবর ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এটি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ভয়াবহ সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে গাজা পুনর্গঠনের পথ খুলে দিয়েছে। কিন্তু এই পুনর্গঠনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা—এই বিপুল ধ্বংসাবশেষ সরানো।
২০২৫ সালের ৮ জুলাই পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রায় ১ লাখ ৯৩ হাজার ভবন আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে। জাতিসংঘের স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ সংস্থা ইউএনওস্যাটের তথ্যমতে, এটি গাজার মোট স্থাপনার প্রায় ৭৮ শতাংশ। ২০২৫ সালের ২২-২৩ সেপ্টেম্বর তোলা গাজা সিটির ছবির বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘ জানায়, শহরটির আরও ভয়াবহ অবস্থা। সেখানে ৮৩ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।
গাজার এই ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ ৬ কোটি ১৫ লাখ টন। তুলনা করলে এটি নিউইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ওজনের প্রায় ১৭০ গুণ এবং গাজার প্রতি বর্গমিটারে প্রায় ১৬৯ কেজি ধ্বংসাবশেষ জমে আছে।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) তথ্যমতে, এই ধ্বংসাবশেষের দুই-তৃতীয়াংশই তৈরি হয়েছে যুদ্ধের প্রথম পাঁচ মাসে। যুদ্ধবিরতির আগের কয়েক মাসে ধ্বংসযজ্ঞ আরও বেড়েছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে শুধু রাফাহ ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৮০ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৫ সালের আগস্টে প্রকাশিত ইউএনইপির প্রাথমিক এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই ধ্বংসাবশেষ গাজার জনগণের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, অন্তত ৪৯ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ পুরোনো ভবনের অ্যাসবেস্টস দ্বারা দূষিত হতে পারে, বিশেষ করে শরণার্থীশিবিরগুলোর আশপাশে—উত্তরের জাবালিয়া, মধ্যাঞ্চলের নুসেইরাত ও আল-মাঘাজি, এবং দক্ষিণের রাফাহ ও খান ইউনিসে।
এ ছাড়া অন্তত ২৯ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ শিল্পাঞ্চল থেকে আসা ‘বিপজ্জনক বর্জ্যে’ দূষিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইসরায়েল যে তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করে, তাতে গাজায় অন্তত ৬৮ হাজার ২৮০ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক মানুষ। এই সংখ্যা হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া, যা জাতিসংঘ নির্ভরযোগ্য হিসেবে গণ্য করে।

দুই বছরের যুদ্ধ শেষে গাজা এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অঞ্চলটি এখন ৬ কোটি ১০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে। অঞ্চলটির মোট ভবনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে এটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের মুখে ১০ অক্টোবর ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এটি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ভয়াবহ সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে গাজা পুনর্গঠনের পথ খুলে দিয়েছে। কিন্তু এই পুনর্গঠনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা—এই বিপুল ধ্বংসাবশেষ সরানো।
২০২৫ সালের ৮ জুলাই পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রায় ১ লাখ ৯৩ হাজার ভবন আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে। জাতিসংঘের স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ সংস্থা ইউএনওস্যাটের তথ্যমতে, এটি গাজার মোট স্থাপনার প্রায় ৭৮ শতাংশ। ২০২৫ সালের ২২-২৩ সেপ্টেম্বর তোলা গাজা সিটির ছবির বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘ জানায়, শহরটির আরও ভয়াবহ অবস্থা। সেখানে ৮৩ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।
গাজার এই ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ ৬ কোটি ১৫ লাখ টন। তুলনা করলে এটি নিউইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ওজনের প্রায় ১৭০ গুণ এবং গাজার প্রতি বর্গমিটারে প্রায় ১৬৯ কেজি ধ্বংসাবশেষ জমে আছে।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) তথ্যমতে, এই ধ্বংসাবশেষের দুই-তৃতীয়াংশই তৈরি হয়েছে যুদ্ধের প্রথম পাঁচ মাসে। যুদ্ধবিরতির আগের কয়েক মাসে ধ্বংসযজ্ঞ আরও বেড়েছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে শুধু রাফাহ ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৮০ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৫ সালের আগস্টে প্রকাশিত ইউএনইপির প্রাথমিক এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই ধ্বংসাবশেষ গাজার জনগণের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, অন্তত ৪৯ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ পুরোনো ভবনের অ্যাসবেস্টস দ্বারা দূষিত হতে পারে, বিশেষ করে শরণার্থীশিবিরগুলোর আশপাশে—উত্তরের জাবালিয়া, মধ্যাঞ্চলের নুসেইরাত ও আল-মাঘাজি, এবং দক্ষিণের রাফাহ ও খান ইউনিসে।
এ ছাড়া অন্তত ২৯ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ শিল্পাঞ্চল থেকে আসা ‘বিপজ্জনক বর্জ্যে’ দূষিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইসরায়েল যে তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করে, তাতে গাজায় অন্তত ৬৮ হাজার ২৮০ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক মানুষ। এই সংখ্যা হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া, যা জাতিসংঘ নির্ভরযোগ্য হিসেবে গণ্য করে।

১৩২ বছর পুরোনো শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত ৮ লাখের বেশি বই রয়েছে। এটি এই অঞ্চলের গবেষণার জন্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান সংগ্রহ। কিন্তু এই বিশাল দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য সংকলন সেখানে কীভাবে পৌঁছাল?
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
এশিয়ার সবচেয়ে নবীন রাষ্ট্র পূর্ব তিমুর আজ রোববার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের ১১ তম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে যুক্ত হয়েছে। পর্তুগিজ শাসনের সময় প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট অর্থনৈতিক মুক্তি ও আঞ্চলিক জোটভুক্ত হওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার পূর্ণতা মিলল।
৩৩ মিনিট আগে
সুদানের এমন একটি অঞ্চল আছে, যেখানে গেলে মনে হবে দেশে কোনো অশান্তি নেই, কোনো গৃহযুদ্ধ চলছে না। সে জায়গাটি হলো জেবেল মারা পর্বতমালা। দারফুর অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত এই সবুজ ভূখণ্ডটি দেশের বাকি অংশের সঙ্গে এক মর্মান্তিক বৈপরীত্য তুলে ধরে।
১ ঘণ্টা আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্রডকাস্টার স্টিভ ব্যাননের মতে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে হলে এখন আর দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে কাজ হবে না, বরং একটি ‘ত্রিরাষ্ট্রীয় সমাধান’ প্রয়োজন। যেখানে মুসলিম ফিলিস্তিন ও ইহুদি ইসরায়েলের মধ্যে থাকবে একটি ‘খ্রিষ্টান রাষ্ট্র।’
১ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

সুদানের এমন একটি অঞ্চল আছে, যেখানে গেলে মনে হবে দেশে কোনো অশান্তি নেই, কোনো গৃহযুদ্ধ চলছে না। সে জায়গাটি হলো জেবেল মারা পর্বতমালা। দারফুর অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত এই সবুজ ভূখণ্ড দেশের বাকি অংশের সঙ্গে এক মর্মান্তিক বৈপরীত্য তুলে ধরে।
আড়াই বছরের সংঘাতে জর্জরিত সুদানের ২৫ মিলিয়ন মানুষ (জনসংখ্যার অর্ধেক) তীব্র খাদ্যের সংকটে ভুগছে। জাতিসংঘের মতে, ৬ লাখের বেশি মানুষ সরাসরি দুর্ভিক্ষকবলিত। তখন জেবেল মারার কৃষকেরা অতিরিক্ত ফলন নিয়ে বিপাকে।
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মতো অনুকূল জলবায়ু এবং অতি-উর্বর মাটির কারণে জেবেল মারা হলো ফলের স্বর্গ। প্রতিদিন সকালে নারীরা উজ্জ্বল পোশাকে, শিশুদের সঙ্গে নিয়ে গাধার পিঠে চড়ে ফসলের খেতে যান। সেখানে জন্মায় দেশের দুর্লভ ফসল—বাদাম, কমলা, আপেল ও স্ট্রবেরি। এই অঞ্চলের অরগানিক কমলা স্বাদের জন্য একসময় গোটা সুদানে প্রশংসিত ছিল।
কিন্তু এই প্রাচুর্যই এখন অভিশাপ। গলো শহরের একজন কমলা বিক্রেতা হাফিজ আলী হতাশা নিয়ে বলেন, ‘আমরা প্রায় বিনা মূল্যে কমলা বিক্রি করি, এমনকি কখনো কখনো পচে যাওয়ার ভয়ে বাজারে যাওয়ার পথেই ফেলে দিতে হয়।’
এ পার্বত্য অঞ্চলটি হলো সুদান লিবারেশন আর্মি—আবদুলওয়াহিদ গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ ভূখণ্ড। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বর্তমান যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান নিলেও ২০০৩ সালে দারফুর সংঘাতের সময় থেকেই তারা খার্তুম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো শান্তিচুক্তি সই করেনি। দুই দশকের বেশি সময় ধরে তারা এখানকার ‘মুক্ত এলাকা’ নিয়ন্ত্রণ করছে।

বর্তমানে চারদিকে যুদ্ধ চলায় জেবেল মারা ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। পশ্চিম ও উত্তরে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এবং তাদের সহযোগী আরব মিলিশিয়ারা প্রধান রাস্তাগুলো অবরোধ করে রেখেছে। দক্ষিণে সুদান সেনাবাহিনী প্রায় প্রতি সপ্তাহে আরএসএফের অবস্থানে বোমা হামলা চালাচ্ছে, যার ফলে বেসামরিক লোকেরাও প্রাণ হারাচ্ছে। আগে আরএসএফের নিয়ন্ত্রণ এখনো অক্ষত।
এর ফলে স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এল-ফাশের (১৩০ কিলোমিটার দূরে) বা চাদ সীমান্তের তিনের (২৭৫ কিলোমিটার দূরে) মতো জাতীয় বাজারগুলোতে পণ্য পৌঁছাতে পারছেন না।
পণ্য পরিবহনের এই দুঃস্বপ্ন নতুন নয়। তাভিলাতে ফল বিক্রেতা ইউসুফ তার অভিজ্ঞতা জানান: ‘মাত্র ১২ কিলোমিটার পথ পেরোতেও পাহাড় এবং কাদামাটির কারণে সারা দিন গাড়ি চালাতে হতো।’ এখন অনিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
সুদান লিবারেশন আর্মি—আবদুলওয়াহিদ গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের ঠিক প্রান্তে অবস্থিত তাভিলা এখন একটি অস্থায়ী বাজারে পরিণত হয়েছে। আরএসএফের অবরোধ থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এখানে অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে ফলের দাম কম। কিছু সাহসী ব্যবসায়ী এই বাজার থেকে পণ্য কিনে চরম বিপজ্জনক পথে অবরুদ্ধ এল-ফাশের শহরে পাচারের চেষ্টা করেন।
মধ্য দারফুরে, প্রধান ফুর জাতিগোষ্ঠী এবং আরব যাযাবর নেতাদের মধ্যে সম্প্রতি একটি ভঙ্গুর অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ায় কিছু এলাকায় সীমিত ব্যবসা শুরু হয়েছে। সুদান লিবারেশন আর্মি নিয়ন্ত্রিত নেরতিতি শহরে বাজার আবার চালু হয়েছে, সেখানে আরব নারীরা টক দই এবং ফুর কৃষকেরা ফল ও সবজি আনছেন।
তবে বাজারের একজন ব্যবসায়ী সতর্ক করে বলেন, ‘বাজার সপ্তাহে মাত্র একবার খোলে। চুক্তি হওয়ার পরেও রাস্তায় এখনো সশস্ত্র ডাকাতি হয়, ভ্রমণ এখনো বিপজ্জনক।’
প্রতি বৃহস্পতিবার, বাজার দিনে, নেরতিতি এবং আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত জালিঙ্গেইয়ের মধ্যে চেকপয়েন্টের সংখ্যা বেড়ে দুই ডজনের বেশি হয়। এই চেকপয়েন্টগুলো আরএসএফ যোদ্ধা, আরব মিলিশিয়া বা কখনো কখনো একজন সাদা পোশাকের সশস্ত্র ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়। যারা জোর করে চাঁদা দাবি করে। যাত্রীরা নীরব দর্শকের মতো তাকিয়ে থাকলেও চালকেরা দর-কষাকষি করার চেষ্টা করেন।
জেবেল মারা অঞ্চলে ফেরার পথে পাহাড়ের প্রতিটি রাস্তায় সুদান লিবারেশন আর্মির নিজস্ব চেকপয়েন্ট রয়েছে। সেখানেও সশস্ত্র লোকেরা চাঁদা দাবি করে এবং ব্যাগ তল্লাশি করে। সুদানের অন্যান্য অঞ্চলে বহুল ব্যবহৃত ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমের মতো ‘নিষিদ্ধ’ জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়।
জেবেল মারা অঞ্চলে আপেক্ষিক শান্তি থাকলেও অন্য এলাকার সংঘাতের স্পষ্ট ছাপ এখানে বিদ্যমান। প্রতিদিন এল-ফাশেরসহ অন্যান্য যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এলাকা থেকে মানুষ বোঝাই লরি গলোর দিকে আসছে। মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো এতগুলো চেকপয়েন্ট পেরিয়ে আসতে না পারায় এই শরণার্থীরা স্কুল, ক্লিনিক এবং অন্যান্য পাবলিক স্পেসে আশ্রয় নিলেও খুব সামান্য বা কোনো সাহায্যই পাচ্ছে না।
সুদান লিবারেশন আর্মির নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের কার্যত রাজধানী গলো শহরে, এল-ফাশের থেকে পালিয়ে আসা এক নারী তাঁর ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। তিনি এখন ২৫টি সদ্য আগত পরিবারের সঙ্গে একটি শ্রেণিকক্ষে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো আয়রোজগার নেই, কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। আমি নার্স ছিলাম, আমি চাষাবাদও করতে পারি, কিন্তু এখানকার জমি সব ব্যক্তিগত। আমরা জানি না কী করব।’
যখন তিনি কথা বলছিলেন, তখন অসুস্থ, বয়স্করা মেঝেতে শুয়ে ছিলেন, শিশুরা ক্ষুধার যন্ত্রণায় চিৎকার করছিল। তবে কিছুটা স্বস্তি এই যে, গলো থেকে যে খাবার বের করা যায়নি, অর্থাৎ নিরাপত্তার কারণে খাদ্যপণ্য দূরবর্তী বাজারে না নিতে পারার কারণে যে বাড়তি সরবরাহ, তা অন্তত এই শরণার্থীদের কাজে আসবে।
এই হলো জেবেল মারা অঞ্চলের বাস্তবতা—এক সবুজ পাহাড়ের অদ্ভুত জগৎ! ঝরনার নদী, রসালো ফলের প্রাচুর্য, কিন্তু চারদিকে যুদ্ধ এবং আতঙ্কিত শরণার্থীদের ভিড়। এক ফল ব্যবসায়ী হতাশ হয়ে বলেন, ‘আমরা এই দুই যুদ্ধরত পক্ষের ওপর থেকে সব আশা হারিয়ে ফেলেছি। আমরা শুধু আমাদের কমলাগুলো বেচতে চাই।’

সুদানের এমন একটি অঞ্চল আছে, যেখানে গেলে মনে হবে দেশে কোনো অশান্তি নেই, কোনো গৃহযুদ্ধ চলছে না। সে জায়গাটি হলো জেবেল মারা পর্বতমালা। দারফুর অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত এই সবুজ ভূখণ্ড দেশের বাকি অংশের সঙ্গে এক মর্মান্তিক বৈপরীত্য তুলে ধরে।
আড়াই বছরের সংঘাতে জর্জরিত সুদানের ২৫ মিলিয়ন মানুষ (জনসংখ্যার অর্ধেক) তীব্র খাদ্যের সংকটে ভুগছে। জাতিসংঘের মতে, ৬ লাখের বেশি মানুষ সরাসরি দুর্ভিক্ষকবলিত। তখন জেবেল মারার কৃষকেরা অতিরিক্ত ফলন নিয়ে বিপাকে।
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মতো অনুকূল জলবায়ু এবং অতি-উর্বর মাটির কারণে জেবেল মারা হলো ফলের স্বর্গ। প্রতিদিন সকালে নারীরা উজ্জ্বল পোশাকে, শিশুদের সঙ্গে নিয়ে গাধার পিঠে চড়ে ফসলের খেতে যান। সেখানে জন্মায় দেশের দুর্লভ ফসল—বাদাম, কমলা, আপেল ও স্ট্রবেরি। এই অঞ্চলের অরগানিক কমলা স্বাদের জন্য একসময় গোটা সুদানে প্রশংসিত ছিল।
কিন্তু এই প্রাচুর্যই এখন অভিশাপ। গলো শহরের একজন কমলা বিক্রেতা হাফিজ আলী হতাশা নিয়ে বলেন, ‘আমরা প্রায় বিনা মূল্যে কমলা বিক্রি করি, এমনকি কখনো কখনো পচে যাওয়ার ভয়ে বাজারে যাওয়ার পথেই ফেলে দিতে হয়।’
এ পার্বত্য অঞ্চলটি হলো সুদান লিবারেশন আর্মি—আবদুলওয়াহিদ গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ ভূখণ্ড। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বর্তমান যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান নিলেও ২০০৩ সালে দারফুর সংঘাতের সময় থেকেই তারা খার্তুম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো শান্তিচুক্তি সই করেনি। দুই দশকের বেশি সময় ধরে তারা এখানকার ‘মুক্ত এলাকা’ নিয়ন্ত্রণ করছে।

বর্তমানে চারদিকে যুদ্ধ চলায় জেবেল মারা ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। পশ্চিম ও উত্তরে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এবং তাদের সহযোগী আরব মিলিশিয়ারা প্রধান রাস্তাগুলো অবরোধ করে রেখেছে। দক্ষিণে সুদান সেনাবাহিনী প্রায় প্রতি সপ্তাহে আরএসএফের অবস্থানে বোমা হামলা চালাচ্ছে, যার ফলে বেসামরিক লোকেরাও প্রাণ হারাচ্ছে। আগে আরএসএফের নিয়ন্ত্রণ এখনো অক্ষত।
এর ফলে স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এল-ফাশের (১৩০ কিলোমিটার দূরে) বা চাদ সীমান্তের তিনের (২৭৫ কিলোমিটার দূরে) মতো জাতীয় বাজারগুলোতে পণ্য পৌঁছাতে পারছেন না।
পণ্য পরিবহনের এই দুঃস্বপ্ন নতুন নয়। তাভিলাতে ফল বিক্রেতা ইউসুফ তার অভিজ্ঞতা জানান: ‘মাত্র ১২ কিলোমিটার পথ পেরোতেও পাহাড় এবং কাদামাটির কারণে সারা দিন গাড়ি চালাতে হতো।’ এখন অনিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
সুদান লিবারেশন আর্মি—আবদুলওয়াহিদ গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের ঠিক প্রান্তে অবস্থিত তাভিলা এখন একটি অস্থায়ী বাজারে পরিণত হয়েছে। আরএসএফের অবরোধ থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এখানে অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে ফলের দাম কম। কিছু সাহসী ব্যবসায়ী এই বাজার থেকে পণ্য কিনে চরম বিপজ্জনক পথে অবরুদ্ধ এল-ফাশের শহরে পাচারের চেষ্টা করেন।
মধ্য দারফুরে, প্রধান ফুর জাতিগোষ্ঠী এবং আরব যাযাবর নেতাদের মধ্যে সম্প্রতি একটি ভঙ্গুর অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ায় কিছু এলাকায় সীমিত ব্যবসা শুরু হয়েছে। সুদান লিবারেশন আর্মি নিয়ন্ত্রিত নেরতিতি শহরে বাজার আবার চালু হয়েছে, সেখানে আরব নারীরা টক দই এবং ফুর কৃষকেরা ফল ও সবজি আনছেন।
তবে বাজারের একজন ব্যবসায়ী সতর্ক করে বলেন, ‘বাজার সপ্তাহে মাত্র একবার খোলে। চুক্তি হওয়ার পরেও রাস্তায় এখনো সশস্ত্র ডাকাতি হয়, ভ্রমণ এখনো বিপজ্জনক।’
প্রতি বৃহস্পতিবার, বাজার দিনে, নেরতিতি এবং আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত জালিঙ্গেইয়ের মধ্যে চেকপয়েন্টের সংখ্যা বেড়ে দুই ডজনের বেশি হয়। এই চেকপয়েন্টগুলো আরএসএফ যোদ্ধা, আরব মিলিশিয়া বা কখনো কখনো একজন সাদা পোশাকের সশস্ত্র ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়। যারা জোর করে চাঁদা দাবি করে। যাত্রীরা নীরব দর্শকের মতো তাকিয়ে থাকলেও চালকেরা দর-কষাকষি করার চেষ্টা করেন।
জেবেল মারা অঞ্চলে ফেরার পথে পাহাড়ের প্রতিটি রাস্তায় সুদান লিবারেশন আর্মির নিজস্ব চেকপয়েন্ট রয়েছে। সেখানেও সশস্ত্র লোকেরা চাঁদা দাবি করে এবং ব্যাগ তল্লাশি করে। সুদানের অন্যান্য অঞ্চলে বহুল ব্যবহৃত ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমের মতো ‘নিষিদ্ধ’ জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়।
জেবেল মারা অঞ্চলে আপেক্ষিক শান্তি থাকলেও অন্য এলাকার সংঘাতের স্পষ্ট ছাপ এখানে বিদ্যমান। প্রতিদিন এল-ফাশেরসহ অন্যান্য যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এলাকা থেকে মানুষ বোঝাই লরি গলোর দিকে আসছে। মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো এতগুলো চেকপয়েন্ট পেরিয়ে আসতে না পারায় এই শরণার্থীরা স্কুল, ক্লিনিক এবং অন্যান্য পাবলিক স্পেসে আশ্রয় নিলেও খুব সামান্য বা কোনো সাহায্যই পাচ্ছে না।
সুদান লিবারেশন আর্মির নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের কার্যত রাজধানী গলো শহরে, এল-ফাশের থেকে পালিয়ে আসা এক নারী তাঁর ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। তিনি এখন ২৫টি সদ্য আগত পরিবারের সঙ্গে একটি শ্রেণিকক্ষে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো আয়রোজগার নেই, কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। আমি নার্স ছিলাম, আমি চাষাবাদও করতে পারি, কিন্তু এখানকার জমি সব ব্যক্তিগত। আমরা জানি না কী করব।’
যখন তিনি কথা বলছিলেন, তখন অসুস্থ, বয়স্করা মেঝেতে শুয়ে ছিলেন, শিশুরা ক্ষুধার যন্ত্রণায় চিৎকার করছিল। তবে কিছুটা স্বস্তি এই যে, গলো থেকে যে খাবার বের করা যায়নি, অর্থাৎ নিরাপত্তার কারণে খাদ্যপণ্য দূরবর্তী বাজারে না নিতে পারার কারণে যে বাড়তি সরবরাহ, তা অন্তত এই শরণার্থীদের কাজে আসবে।
এই হলো জেবেল মারা অঞ্চলের বাস্তবতা—এক সবুজ পাহাড়ের অদ্ভুত জগৎ! ঝরনার নদী, রসালো ফলের প্রাচুর্য, কিন্তু চারদিকে যুদ্ধ এবং আতঙ্কিত শরণার্থীদের ভিড়। এক ফল ব্যবসায়ী হতাশ হয়ে বলেন, ‘আমরা এই দুই যুদ্ধরত পক্ষের ওপর থেকে সব আশা হারিয়ে ফেলেছি। আমরা শুধু আমাদের কমলাগুলো বেচতে চাই।’

১৩২ বছর পুরোনো শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত ৮ লাখের বেশি বই রয়েছে। এটি এই অঞ্চলের গবেষণার জন্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান সংগ্রহ। কিন্তু এই বিশাল দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য সংকলন সেখানে কীভাবে পৌঁছাল?
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
এশিয়ার সবচেয়ে নবীন রাষ্ট্র পূর্ব তিমুর আজ রোববার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের ১১ তম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে যুক্ত হয়েছে। পর্তুগিজ শাসনের সময় প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট অর্থনৈতিক মুক্তি ও আঞ্চলিক জোটভুক্ত হওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার পূর্ণতা মিলল।
৩৩ মিনিট আগে
দুই বছরের যুদ্ধ শেষে গাজা এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অঞ্চলটি এখন ৬ কোটি ১০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে। অঞ্চলটির মোট ভবনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে এটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
১ ঘণ্টা আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্রডকাস্টার স্টিভ ব্যাননের মতে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে হলে এখন আর দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে কাজ হবে না, বরং একটি ‘ত্রিরাষ্ট্রীয় সমাধান’ প্রয়োজন। যেখানে মুসলিম ফিলিস্তিন ও ইহুদি ইসরায়েলের মধ্যে থাকবে একটি ‘খ্রিষ্টান রাষ্ট্র।’
১ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্রডকাস্টার স্টিভ ব্যাননের মতে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে হলে এখন আর দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে কাজ হবে না, বরং একটি ‘ত্রিরাষ্ট্রীয় সমাধান’ প্রয়োজন। যেখানে মুসলিম ফিলিস্তিন ও ইহুদি ইসরায়েলের মধ্যে থাকবে একটি ‘খ্রিষ্টান রাষ্ট্র।’
গত শুক্রবার নিজের ‘ওয়ার রুম’ পডকাস্টে ব্যানন বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর তথাকথিত ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ বা ‘বৃহত্তর ইসরায়েলের’ স্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন। এই ধারণা বাইবেলে উল্লিখিত ভূমিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, যা নীলনদ থেকে ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। সমালোচকদের মতে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা এবং পশ্চিম তীরে দখলদার বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে নেতানিয়াহু এই পরিকল্পনাই বাস্তবে চালিয়ে যাচ্ছেন।
ব্যানন বলেন, ‘নেতানিয়াহুর এই গ্রেটার ইসরায়েল প্রকল্প তাঁর নিজের মুখেই বিস্ফোরিত হয়েছে…এটা ইসরায়েলকেই ধ্বংস করেছে। তাই এখন তিন-রাষ্ট্র সমাধানের পথে যেতে হবে। এর একটি রাষ্ট্র হতে হবে জেরুজালেমের খ্রিষ্টান রাষ্ট্র। আমাদের পবিত্র ভূমিতে একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র দরকার। এতে অন্তত আগামী ২০-৩০ বছরের মধ্যে সবকিছু কিছুটা গুছিয়ে যাবে।’
এর আগেও ব্যানন এমন মন্তব্য করেছিলেন। চলতি মাসের শুরুতে তিনি বলেন, গাজায় শান্তি সম্ভব নয়, যদি ‘শুধু মুসলমান আর ইহুদিরাই’ এখানে থাকে। তবে কীভাবে একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র গঠন করা হবে বা সেটি কীভাবে অঞ্চলে স্থিতি আনবে, সে বিষয়ে তিনি কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।
ব্যাননের মতে, ইসরায়েল এখন ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ভেসেল স্টেট বা রক্ষিত রাষ্ট্র’, আর হামাস ‘একটি ক্ষুদ্র খেলোয়াড়।’ তিনি বলেন, গাজার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না এদের কেউই। বরং কাতার গাজার পুনর্গঠনের অর্থায়ন করবে, আর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে তুরস্ক।
তিনি আরও দাবি করেন, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় ওয়াশিংটন প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা না বললেও, সেটির কাঠামোতে এক ধরনের ‘প্রোটো-ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের’ বা ‘আদি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের’ ইঙ্গিত রয়েছে। তাঁর মতে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে।
উল্লেখ্য, চলতি অক্টোবরের শুরুর দিকে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার আওতায় ইসরায়েল ও হামাস একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। পরিকল্পনাটিতে ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, এবং আন্তর্জাতিক ‘বোর্ড অব পিসের’ তত্ত্বাবধানে অন্তর্বর্তী ফিলিস্তিনি প্রশাসনের অধীনে একটি নিরস্ত্রীকৃত গাজার কথা বলা হয়েছে।
যদিও উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে, তবু এই সপ্তাহে তারা আবারও অস্ত্রবিরতির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্রডকাস্টার স্টিভ ব্যাননের মতে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে হলে এখন আর দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে কাজ হবে না, বরং একটি ‘ত্রিরাষ্ট্রীয় সমাধান’ প্রয়োজন। যেখানে মুসলিম ফিলিস্তিন ও ইহুদি ইসরায়েলের মধ্যে থাকবে একটি ‘খ্রিষ্টান রাষ্ট্র।’
গত শুক্রবার নিজের ‘ওয়ার রুম’ পডকাস্টে ব্যানন বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর তথাকথিত ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ বা ‘বৃহত্তর ইসরায়েলের’ স্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন। এই ধারণা বাইবেলে উল্লিখিত ভূমিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, যা নীলনদ থেকে ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। সমালোচকদের মতে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা এবং পশ্চিম তীরে দখলদার বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে নেতানিয়াহু এই পরিকল্পনাই বাস্তবে চালিয়ে যাচ্ছেন।
ব্যানন বলেন, ‘নেতানিয়াহুর এই গ্রেটার ইসরায়েল প্রকল্প তাঁর নিজের মুখেই বিস্ফোরিত হয়েছে…এটা ইসরায়েলকেই ধ্বংস করেছে। তাই এখন তিন-রাষ্ট্র সমাধানের পথে যেতে হবে। এর একটি রাষ্ট্র হতে হবে জেরুজালেমের খ্রিষ্টান রাষ্ট্র। আমাদের পবিত্র ভূমিতে একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র দরকার। এতে অন্তত আগামী ২০-৩০ বছরের মধ্যে সবকিছু কিছুটা গুছিয়ে যাবে।’
এর আগেও ব্যানন এমন মন্তব্য করেছিলেন। চলতি মাসের শুরুতে তিনি বলেন, গাজায় শান্তি সম্ভব নয়, যদি ‘শুধু মুসলমান আর ইহুদিরাই’ এখানে থাকে। তবে কীভাবে একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র গঠন করা হবে বা সেটি কীভাবে অঞ্চলে স্থিতি আনবে, সে বিষয়ে তিনি কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।
ব্যাননের মতে, ইসরায়েল এখন ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ভেসেল স্টেট বা রক্ষিত রাষ্ট্র’, আর হামাস ‘একটি ক্ষুদ্র খেলোয়াড়।’ তিনি বলেন, গাজার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না এদের কেউই। বরং কাতার গাজার পুনর্গঠনের অর্থায়ন করবে, আর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে তুরস্ক।
তিনি আরও দাবি করেন, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় ওয়াশিংটন প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা না বললেও, সেটির কাঠামোতে এক ধরনের ‘প্রোটো-ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের’ বা ‘আদি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের’ ইঙ্গিত রয়েছে। তাঁর মতে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে।
উল্লেখ্য, চলতি অক্টোবরের শুরুর দিকে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার আওতায় ইসরায়েল ও হামাস একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। পরিকল্পনাটিতে ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, এবং আন্তর্জাতিক ‘বোর্ড অব পিসের’ তত্ত্বাবধানে অন্তর্বর্তী ফিলিস্তিনি প্রশাসনের অধীনে একটি নিরস্ত্রীকৃত গাজার কথা বলা হয়েছে।
যদিও উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে, তবু এই সপ্তাহে তারা আবারও অস্ত্রবিরতির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

১৩২ বছর পুরোনো শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত ৮ লাখের বেশি বই রয়েছে। এটি এই অঞ্চলের গবেষণার জন্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান সংগ্রহ। কিন্তু এই বিশাল দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য সংকলন সেখানে কীভাবে পৌঁছাল?
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
এশিয়ার সবচেয়ে নবীন রাষ্ট্র পূর্ব তিমুর আজ রোববার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের ১১ তম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে যুক্ত হয়েছে। পর্তুগিজ শাসনের সময় প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট অর্থনৈতিক মুক্তি ও আঞ্চলিক জোটভুক্ত হওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার পূর্ণতা মিলল।
৩৩ মিনিট আগে
দুই বছরের যুদ্ধ শেষে গাজা এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অঞ্চলটি এখন ৬ কোটি ১০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে। অঞ্চলটির মোট ভবনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে এটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
১ ঘণ্টা আগে
সুদানের এমন একটি অঞ্চল আছে, যেখানে গেলে মনে হবে দেশে কোনো অশান্তি নেই, কোনো গৃহযুদ্ধ চলছে না। সে জায়গাটি হলো জেবেল মারা পর্বতমালা। দারফুর অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত এই সবুজ ভূখণ্ডটি দেশের বাকি অংশের সঙ্গে এক মর্মান্তিক বৈপরীত্য তুলে ধরে।
১ ঘণ্টা আগে