Ajker Patrika

রয়টার্স এক্সক্লুসিভ

বিধ্বংসী ড্রোন বেচতে ৩৮ বছর আগের ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তির নতুন ব্যাখ্যা আনছেন ট্রাম্প

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯: ০৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

৩৮ বছর পুরোনো ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তির নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর লক্ষ্য, উন্নত মার্কিন সামরিক ড্রোন ও ভারী অস্ত্র বিভিন্ন দেশের কাছে বিক্রির পথ উন্মোচন করা। এতে সৌদি আরবসহ একাধিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ‘রিপার’ ধরনের ভারী সামরিক ড্রোন কিনতে পারবে। এ নীতি অস্ত্র ব্যবসায় চীন, তুরস্ক ও ইসরায়েলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এক মার্কিন কর্মকর্তা ও এ বিষয়ে অবগত চারজন ব্যক্তি বিষয়টি ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ নতুন ব্যাখ্যার ফলে ১০০টিরও বেশি এমকিউ-৯ ড্রোন সৌদি আরবের কাছে বিক্রির পথ খুলে যাবে। সৌদি আরব চলতি বছরের বসন্তে ড্রোনগুলো কেনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিল এবং এটি গত মে মাসে ঘোষিত ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রচুক্তির অংশ হতে পারে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও ইউরোপের মিত্র দেশগুলোও এ ধরনের ড্রোন কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

ড্রোনগুলোকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সমমাত্রার হিসেবে চিহ্নিত করলে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৭ সালে স্বাক্ষরিত ৩৫ দেশের মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম (এমটিসিআর) চুক্তিকে পাশ কাটাতে পারবে। এর ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোসহ বহু দেশ মার্কিন উন্নত ড্রোনগুলো কিনতে সক্ষম হবে।

এক মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এ নতুন নীতির আওতায় জেনারেল অ্যাটোমিকস, ক্রাটোস ও অ্যান্ডুরিলের মতো বড় বড় মার্কিন ড্রোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো স্টেট ডিপার্টমেন্টের ‘বৈদেশিক সমরাস্ত্র বিক্রি’ প্রক্রিয়ার আওতায় সহজেই আন্তর্জাতিক বাজারে ড্রোন ও যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি করতে পারবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সামরিক বিক্রি কর্মসূচির একটি ‘বড় সংস্কারের’ প্রথম ধাপ।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

বর্তমান ব্যাখ্যায় এমটিসিআর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র বহু সামরিক ড্রোন বিদেশে বিক্রির অনুমোদন পায় না, যদি না কোনো গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখানো হয় এবং ক্রেতা আন্তর্জাতিক আইন মেনে ব্যবহার করতে রাজি থাকে।

এমটিসিআর মূলত দূরপাল্লার গণবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের বিস্তার রোধে গঠিত হয়েছিল। ড্রোন তখনো আবিষ্কৃত হয়নি, তবে দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম ও অস্ত্র বহনের সক্ষমতার কারণে পরে ড্রোনকে এ চুক্তির আওতাভুক্ত করা হয়।

বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা

মার্কিন ড্রোন নির্মাতারা বর্তমানে তীব্র বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার মুখে রয়েছে। ইসরায়েলি, চীনা ও তুর্কি প্রতিদ্বন্দ্বীরা অনেক কম শর্তে এসব অস্ত্র বিক্রি করছে।

চীন ও ইসরায়েল এমটিসিআরের সদস্য নয়, ফলে তারা মধ্যপ্রাচ্যে সহজেই ড্রোন বিক্রি করছে। তুরস্ক ১৯৯৭ সালে এমটিসিআরে যোগ দিলেও তাদের বায়রাক্তার টিবি-২ ড্রোন তুলনামূলক হালকা ও স্বল্পপাল্লার হওয়ায় আলাদা মানদণ্ডে বিবেচিত হয়। ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে এসব ড্রোন ব্যবহৃত হচ্ছে। রাশিয়া নিজস্ব ও ইরানি ড্রোন ব্যবহার করছে ইউক্রেনে হামলার জন্য।

উন্নত প্রযুক্তি শত্রুর হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের কাছে বড় আকারের উন্নত ড্রোন বিক্রি বা দান করেনি।

সামরিক ড্রোন ও বেসামরিক প্রযুক্তি থেকে অভিযোজিত ড্রোন এখন আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে বিবেচিত হওয়ায় বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা তুঙ্গে। কেননা এসব ড্রোন যুদ্ধবিমানের সঙ্গে ‘উইংম্যান’ হিসেবে উড়তে সক্ষম।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ‘শীর্ষ ড্রোন সরবরাহকারী’ হয়ে উঠবে। তুরস্ক ও চীনের বাজার দখল করবে।

নতুন ড্রোন বিক্রির নির্দেশিকা ঘোষণার সঠিক তারিখ এখনো নির্ধারণ হয়নি। বিদেশি সামরিক বিক্রি কর্মসূচির সংস্কার চলতি বছরে ঘোষিত হওয়ার কথা। বর্তমানে এর বাস্তবায়ন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ পরিবর্তনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ও উন্নত জেট ইঞ্জিনচালিত ড্রোন নির্মাতারা উপকৃত হবে।

তবে সব ধরনের ড্রোন বিক্রি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ‘বিদেশি সামরিক বিক্রি প্রক্রিয়ার’ আওতায় থাকবে, যেখানে গ্রাহকের দেশের আঞ্চলিক পরিস্থিতি, মানবাধিকার রেকর্ড ও অস্ত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সক্ষমতা বিবেচনা করা হবে।

সম্ভাব্য প্রথম ক্রেতা সৌদি আরব

নতুন ব্যাখ্যার আওতায় প্রথম বড় ড্রোনের চালান বিক্রি হতে পারে সৌদি আরবের কাছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১ সালে ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের ভূমিকার কারণে অস্ত্র বিক্রিতে কড়াকড়ি করেছিলেন। সে যুদ্ধে সৌদি আরবের ব্যবহৃত মার্কিন অস্ত্রের কারণে বহু বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছিল।

তবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন আক্রমণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সম্পর্ক আবার ঘনিষ্ঠ হয়েছে।

হোয়াইট হাউস এই উদ্যোগকে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বাণিজ্যঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের বড় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উপস্থাপন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে মানবাধিকার ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণকর্মীরা সতর্ক করেছেন, এর ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার মতো অঞ্চলে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা আরও বাড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত