Ajker Patrika

বাইডেনের ‘অটোপেনে’ সই করা সব নথি বাতিল করছেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাইডেন অটোপেন ব্যবহার করে যেসব নথি সই করেছেন সেগুলো সব বাতিল করছেন ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
বাইডেন অটোপেন ব্যবহার করে যেসব নথি সই করেছেন সেগুলো সব বাতিল করছেন ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তিনি তাঁর পূর্বসূরি জো বাইডেনের সই করা সব নথি বাতিল করছেন। এর মধ্যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে নির্বাহী ক্ষমতাবলে বাইডেন যেসব ক্ষমার আদেশ দিয়েছিলেন সেগুলোও রয়েছে। ট্রাম্পের দাবি, তাঁর পূর্বসূরি বাইডেন অটোপেন ব্যবহার করে এই নথিগুলোতে সই করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, অটোপেন হলো এমন একটি যন্ত্র, যা দিয়ে কারও সই হুবহু নকল করা যায়। সাধারণত প্রচুর নথিপত্র বা আনুষ্ঠানিক কাগজে নির্ভুলভাবে সই করার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। আমেরিকার দুই প্রধান দলের প্রেসিডেন্টরাই চিঠি বা ঘোষণাপত্রে সইয়ের জন্য এটি ব্যবহার করে এসেছেন। তাই ট্রাম্পের এ ধরনের পদক্ষেপ নজিরবিহীন। আইন বিশেষজ্ঞরা এটিকে সাবেক প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত উল্টে দেওয়ার জন্য একটি ঠুনকো অজুহাত বলে মনে করছেন।

মার্কিন ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান পলিটিফ্যাক্ট জানাচ্ছে, আইন বিশারদেরা প্রায় সবাই একমত যে, সংবিধান অনুযায়ী অনেক নথিপত্র—ক্ষমার আদেশসহ—আইনত কার্যকর করতে প্রেসিডেন্টকে নিজ হাতে সই করতেই হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। তা ছাড়া, ফেডারেল আইনেও এমন কোনো ব্যবস্থা নেই, যার মাধ্যমে একজন প্রেসিডেন্ট তার আগের প্রেসিডেন্টের ক্ষমার আদেশ বাতিল করতে পারেন।

ট্রাম্প এবং তাঁর সমর্থকেরা নানা ভিত্তিহীন দাবি করেছেন। তাঁরা বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন এই যন্ত্রটি ব্যবহার করায় তাঁর কাজগুলো বাতিল হয়ে গেছে, অথবা তিনি পুরোপুরি সচেতন ছিলেন না। তবে বাইডেন ক্ষমার আদেশে অটোপেন ব্যবহার করেছিলেন কি না, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ‘যাঁরা এই ধরনের সই করা ক্ষমা, সাজা মওকুফ বা অন্য কোনো আইনি নথি পেয়েছেন, তাঁদের জানানো হচ্ছে যে—এই নথিটি সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে এবং এর কোনো আইনি বৈধতা নেই।’

জানুয়ারিতে ক্ষমতা ছাড়ার আগে বাইডেন বেশ কিছু ব্যক্তিকে ক্ষমা করেছিলেন। এর মধ্যে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন—যেমন তাঁর দুই ভাই ও বোন। বাইডেনের বক্তব্য ছিল, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তদন্ত থেকে তিনি তাঁদের রক্ষা করতে চান। তিনি অহিংস মাদক অপরাধীদের সাজা মওকুফও করেছিলেন।

ফক্স নিউজের খবর অনুযায়ী, ট্রাম্পের এই বাতিল করার চেষ্টা বাইডেনের ছেলে হান্টারের ক্ষমার ওপর প্রভাব ফেলবে না। কারণ জানা যায়, ওই কাগজটিতে বাইডেন কলম দিয়েই সই করেছিলেন। তবে সংবাদমাধ্যমটি অনুমান করেছে যে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ড. অ্যান্থনি ফাউচিকে প্রভাবিত করতে পারে। বাইডেনের ক্ষমার তালিকায় থাকা অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হলেন—অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল মার্ক মিলি, ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার তদন্তকারী হাউস কমিটির সদস্যরা এবং সাবেক রিপাবলিকান প্রতিনিধি লিজ চেনি ও অ্যাডাম কিনজিংগার।

ট্রাম্প তাঁর উসকানিমূলক ভঙ্গি এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের প্রতি অপছন্দের জন্য পরিচিত। তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বাইডেনের অটোপেন ব্যবহারের বিষয়টি বারবার তুলে ধরেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলেছেন যে বাইডেন নিজে নন, বরং তাঁর সহকারীরাই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতেন। তবে বাইডেন ও তাঁর সাবেক সহকারীরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জোর দিয়ে বলেছেন, দেশ পরিচালনায় প্রেসিডেন্টের সক্রিয় ভূমিকা ছিল।

হাতে লেখা নথিপত্রের জন্য যান্ত্রিক প্রতিলিপি যন্ত্র ব্যবহার শুরু হয়েছিল টমাস জেফারসনের সময় থেকে। তিনি পলিগ্রাফ যন্ত্র ব্যবহার করতেন। জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে বিচার বিভাগ যুক্তি দিয়েছিল যে, আইনি প্রয়োজনে—এমনকি আইন সই করার ক্ষেত্রেও—অটোপেন ব্যবহার করা আর প্রেসিডেন্টের নিজস্ব সইয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

অটোপেন ব্যবহার করা হয়েছে এমন দাবি করে ক্ষমার আদেশ বাতিল করার চেষ্টা আইনি দিক থেকে খুবই দুর্বল। সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমার আদেশ লিখিত হতে হবে—এমন কোনো কঠোর নিয়ম নেই, সেখানে সই করার বাধ্যবাধকতা তো আরও কম। ট্রাম্প অবশ্য আইনি নজিরের তোয়াক্কা না করে সরাসরি সিদ্ধান্ত নিতে এবং পরে আদালতকে তা সামলাতে দিতে পছন্দ করেন। তবে অটোপেন এর আগে কখনো এমন বড়সড় আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রূপের ঈর্ষায় ৩ মেয়েশিশুকে চুবিয়ে হত্যা, দেখে ফেলায় রেহাই পায়নি নিজের ছেলে

কে এই কৃষ্ণ নন্দী, তাঁকে জামায়াত প্রার্থী করল কেন

এবার ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষককে বরখাস্ত, পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার

জাপানের ‘লৌহমানবী’ কি দেশকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন

এলাকার খবর
Loading...