Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের’ জয়গান বাইডেন-মোদির মুখে

আপডেট : ২৩ জুন ২০২৩, ১৪: ৫৮
যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের’ জয়গান বাইডেন-মোদির মুখে

জাঁকজমক ও বর্ণিল আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভ্যর্থনা জানিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের’ জয়গান গাইলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মোদির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই দেশের সম্পর্ককে ‘একুশ শতকের’ জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরেন তিনি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য উদ্বেগ দেখিয়ে মোদিকে ভিসা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। সেই মোদিই এখন গুরুত্বপূর্ণ মিত্র, বিশেষ আমন্ত্রণে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক প্রটোকল নিয়ে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্রে। বাইডেনের সঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার আগে তাঁর সম্মানে নানা আয়োজন করা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের সাউথ লনে মোদিকে সশস্ত্র সালাম দেওয়া হয়। এরপর জমকালো নৈশভোজেও অংশ নেন মোদি। এর আগে হোয়াইট হাউসে পৌঁছালে জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন তাঁকে স্বাগত জানান। সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও উপস্থিত ছিলেন। হোয়াইট হাউসে তাঁকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

অভ্যর্থনার আনুষ্ঠানিকতা শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন নরেন্দ্র মোদি ও বাইডেন। মোদি সেখানে বলেন, ‘আমি তিন দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলাম এবং বাইরে থেকে হোয়াইট হাউস দেখেছিলাম। এই প্রথম ভারতীয়-আমেরিকানদের জন্য হোয়াইট হাউসের এই বিশাল ফটক খুলে দেওয়া হলো।’

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদি কখনো সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে চাননি। এবারই প্রথম সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন তিনি। ভারতের গণতন্ত্র ও মুসলমানদের অবস্থা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘গণতন্ত্র আমাদের চেতনা, রক্তে মিশে আছে। আমাদের সংবিধান, আমাদের সরকার ধর্ম, বর্ণ, জাতের ভিত্তিতে কোনো বিভেদ করে না।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভারতের প্রেসিডেন্ট নরেন্দ্র মোদিমোদিকে স্বাগত জানাতে অনেক ভারতীয় তখন হোয়াইট হাউসের সামনে ভিড় করেছিলেন। আবার একদল বিক্ষোভাকারীও মোদির সফরের বিরোধিতা করে সেখানে বিক্ষোভ করেন। এর আগে মোদি মার্কিন কংগ্রেসে বক্তব্য রাখেন। তাঁকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান কংগ্রেসম্যানরা।

২০১৪ সালের ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর বিজেপি নেতা মোদিকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেই যুক্তরাষ্ট্রই এখন তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে দেখে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মধ্যে নিজ স্বার্থ রক্ষায় আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ভারতকে সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করে ওয়াশিংটন। তবে এই মনোভাব কখনো পুরোপুরি মেনে নেয়নি দিল্লি।

কংগ্রেসে বক্তব্য দেওয়ার সময় চীনের নাম উল্লেখ না করে মোদি বলেন, জবরদস্তি এবং সংঘর্ষের কালো মেঘ ইন্দো-প্যাসিফিকের ওপর ছায়া ফেলেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়েও রাশিয়ার নাম মুখে আনেননি মোদি। এই ইস্যুতে তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের মাধ্যমে ইউরোপে যুদ্ধ ফিরে এসেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার কোনো সমালোচনা করেনি মোদি সরকার। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সামরিক সরঞ্জাম আমদানিতে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং মস্কোর সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিক্ষিত সম্পর্কের কারণেই রাশিয়ার বিপক্ষে যায় এমন কিছু বলছে না ভারত।

এর ফলে ওয়াশিংটন ও দিল্লির সম্পর্কে কিছু সময়ের জন্য টানাপোড়েন তৈরি করে। তবে গতকাল বাইডেনের গলায় ভিন্ন সুর শোনা গেছে। বাইডেন দুই দেশের ইতিবাচক সম্পর্কে মনযোগ দিতে বেশি আগ্রহী। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী। তিনি দুই দেশের সম্পর্ককে ‘একুশ শতকের অন্যতম সুস্পষ্ট সম্পর্ক’ হিসেবে অভিহিত করেন।

মার্কিন কংগ্রেসকে মোদি বলেন, এটি বিশ্বের দুটি বৃহৎ গণতন্ত্রের একত্রিত হওয়া। তিনি আরও বলেন, দুই দেশের বন্ধুত্ব সম্পর্ক ‘পুরো বিশ্বের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে’। দুই দেশের ব্যাপক এবং বিশ্ব-কৌশলগত অংশীদারিত্বে একটি ‘নতুন অধ্যায়’ যুক্ত হয়েছে।

তবে মোদির সফর সবাই উদ্‌যাপন করছে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী এমন সময় যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন, যখন তিনি ভিন্নমত দমনের জন্য কঠোর সমালোচনার মুখোমুখি। তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারও সংখ্যালঘুদের সহিংসতা ও বৈষম্য থেকে রক্ষার জন্য যথেষ্ট কাজ করেনি বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। অনেকে তাঁর এই সফরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। যদিও ভারতের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী প্রবাসী তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন, যাদের মধ্যে সিলিকন ভ্যালির সিইও রয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভারতের প্রেসিডেন্ট নরেন্দ্র মোদিবেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট সদস্য কংগ্রেসে মোদির বক্তৃতা বয়কট করেছেন। তাঁদের একজন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ টুইটারে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সফরের সময় এমন কোনো ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ কূটনৈতিক প্রটোকল দেওয়া উচিত নয়, যার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।

আড়ম্বর অনুষ্ঠান এবং প্যারেড ছাড়াও মোদির সঙ্গে বাণিজ্যক বিষয়েও আলোচনার অগ্রগতি হয় গতকাল। দুই দেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ছয়টি অসামান্য বিরোধ নিষ্পত্তি করতে সম্মত হয়েছে এবং জেনারেল ইলেকট্রিক এবং মাইক্রোনের সঙ্গে চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে।

মোদি হোয়াইট হাউসে যাওয়ার আগেই গতকাল সামরিক চুক্তির ঘোষণা আসে। যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের অ্যারোস্পেস ইউনিটের সঙ্গে ভারতের ‘হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড’ (হ্যাল)-এর চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির ফলে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করবে তারা। এই চুক্তির আওতায় জেনারেল ইলেকট্রিকের তৈরি ই-৪১৪ ইঞ্জিন এখন ভারতে তৈরি হবে।

এদিকে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি চুক্তি সই হয়েছে গতকাল। এই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মেমোরি চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোন টেকনোলজি ভারতে ৮২ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। ভারতের গুজরাটে নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। সেখানে চিপ সংযোজন, পরীক্ষা করা হবে।

মাইক্রন জানিয়েছে, এই বিনিয়োগে সহযোগিতা করছে গুজরাট সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে মোট বিনিয়োগ গিয়ে ঠেকবে ২৭৫ কোটি মার্কিন ডলারে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ আসবে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে। ২০ শতাংশ আসবে গুজরাট সরকার থেকে। আর বাকি অর্থ দেবে তারা।

বিবিসি ও রয়টার্স অবলম্বনে রাকিব হাসান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ০০
জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি
জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি।

বিস্তারিত আসছে....

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিউইয়র্ক মেয়র নির্বাচন: ভোট গণনা শেষ, ‘জিততে যাচ্ছেন মামদানি’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি
জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। গণনাও শুরু হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই নির্বাচনে অন্তত ২০ লাখ ভোটার ভোট দিয়েছেন। নির্বাচনী তথ্য সংগ্রহকারী প্ল্যাটফর্ম ডিসিশন ডেস্ক এইচকিউ জানিয়েছে, জোহরান মামদানিই জিতবেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ভোট গণনা সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশের আশা করা হচ্ছে। প্রার্থীদের সমর্থকেরা ফলাফলের অপেক্ষায় নানা স্থানে আয়োজন করেছে ওয়াচ পার্টি।

মামদানির নির্বাচনী অনুষ্ঠান হচ্ছে ডাউনটাউন ব্রুকলিনের ঐতিহাসিক কনসার্ট ভেন্যু ব্রুকলিন প্যারামাউন্টে। অন্যদিকে, কুমো তাঁর নির্বাচনী আয়োজন করেছেন ম্যানহাটনের মিডটাউনের জিগফেল্ড থিয়েটারে। রিপাবলিকান প্রার্থী স্লিওয়া তাঁর নির্বাচনী পার্টির আয়োজন করেছেন ম্যানহাটনের আপার ওয়েস্ট সাইডের একটি রেস্তোরাঁয়, যেটি মূলত ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব ইলেকশন জানিয়েছে, ১৯৮৯ সালের পর এবারই প্রথম ভোটার উপস্থিতি ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। স্থানীয় সময় রাত ৯টায় ভোটকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার আগেই বোর্ড এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানায়।

এদিকে, নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে জোহরান মামদানির প্রচারশিবিরের প্রেস সেক্রেটারি ডোরা পেকেক আল–জাজিরাকে বলেন, ‘আজ যা দেখছি, তা এক বছরের পরিশ্রম আর এক বছরের আন্দোলনের ফল। ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি আমাদের জন্য সত্যিই ভালো খবর। প্রাইমারিতেও এটি আমাদের পক্ষে গিয়েছিল, এবারও সেটি আমাদের পক্ষে যাবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা নতুন মানুষকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করছি।’

অপরদিকে, নির্বাচনে নিয়ে কাজ করা স্বাধীন সংস্থা ডিসিশন ডেস্ক এইচকিউ ইতোমধ্যেই মামদানিকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত কেবল এই সংস্থাটিই এমন ঘোষণা দিয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছে, ‘ডিসিশন ডেস্ক এইচকিউ জানাচ্ছে যে, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানিই জিততে যাচ্ছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাদ্দাফির পুত্রকে মুক্ত করতে লেবাননে গেল লিবিয়ার প্রতিনিধিদল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৫
মুয়াম্মার গাদ্দাফির পঞ্চম পুত্র হানিবাল। ছবি: সংগৃহীত
মুয়াম্মার গাদ্দাফির পঞ্চম পুত্র হানিবাল। ছবি: সংগৃহীত

মুয়াম্মার গাদ্দাফির পঞ্চম পুত্র হানিবাল গাদ্দাফিকে মুক্ত করতে লেবাননের বৈরুতে পৌঁছেছে লিবিয়ার একটি প্রতিনিধিদল। সম্প্রতি হানিবালের মুক্তির জন্য ১১ মিলিয়ন ডলারের জামিন দাবি করেছিল লেবাননের আদালত। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৩৪ কোটি টাকা।

লিবিয়ার সাবেক শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পুত্র হানিবাল ২০১৫ সাল থেকে কোনো বিচার ছাড়াই লেবাননের কারাগারে বন্দী আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি লেবাননের প্রভাবশালী শিয়া ধর্মীয় নেতা মুসা আল সদরের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য লুকিয়ে রেখেছেন।

মুসা আল সদর ১৯৭৮ সালে গাদ্দাফির আমন্ত্রণে লিবিয়ায় সফরে যান এবং সেখান থেকেই তিনি নিখোঁজ হন। সদর যখন নিখোঁজ হন, হানিবাল তখন মাত্র দুই বছরের শিশু। তাই এই বিষয়ে কোনো তথ্য গোপনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন তিনি।

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, গত মাসে (অক্টোবর) লেবাননের আদালত হানিবালকে ১১ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে মুক্তির নির্দেশ দেন। তবে হানিবালের আইনজীবীরা তখন দাবি করেন, বিপুল এই অর্থ পরিশোধে তিনি সক্ষম নন। এ ছাড়া আদালতের আদেশ অনুযায়ী, হানিবালকে মুক্তি দেওয়া হলেও লেবানন ছেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অতীতে তিনি বন্দী অবস্থায় অনশন ধর্মঘটও পালন করেছিলেন।

এদিকে হানিবালের দেশ লিবিয়ান এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হানিবাল হয়তো লেবানন ও লিবিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের অংশ হিসেবে ছাড়পত্র পেতে পারেন।

লিবিয়ার প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইব্রাহিম দবাইবাহ। তিনি ত্রিপোলির জাতীয় একতা সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দবাইবাহর ভাগনে। মুয়াম্মার গাদ্দাফির পরিবারের সঙ্গে দবাইবাহ পরিবারের একসময় শক্তিশালী ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল।

প্রতিনিধিদলটি লেবাননের প্রেসিডেন্ট সহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য ও ত্রিপোলি-ভিত্তিক সরকারের যোগাযোগ ও রাজনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী ওয়ালিদ এল লাফি সরাসরি হানিবালের মামলার উল্লেখ না করে জানান, তাঁরা দুই দেশের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও বিচারিক সম্পর্ক আবারও চালু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত এবং আশা করি এই সফর শিগগির দৃশ্যমান ফলাফল দেবে।’

তিনি জানান, আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে লেবাননের পক্ষ থেকে যথেষ্ট সাড়া পাওয়া গেছে। লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউনসহ দেশটির সংসদের স্পিকার নাবিহ বের্রি এই আলোচনার প্রতি ইতিবাচক মনোভব দেখিয়েছেন।

উল্লেখ্য, নাবিহ বেররি হলেন ‘আমাল আন্দোলন’ এর নেতা। বহু বছর আগে লিবিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ মুসা আল সদরই এই আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সদরের নিখোঁজ হওয়া এখনো লেবাননে গভীর অনুভূতি জাগায়। সদরের সঙ্গে তাঁর দুই সঙ্গী, শেখ মুহাম্মদ ইয়াকুব ও সাংবাদিক আব্বাস বাদরেদ্দিনও নিখোঁজ হয়েছিলেন। তাই হানিবালের মুক্তির বিষয়ে সব ধরনের সমাধান ও চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে ইয়াকুবের পরিবার।

২০১১ সালে গৃহযুদ্ধের সময় লিবিয়া ত্যাগ করেছিলেন হানিবাল। পরে তিনি তাঁর লেবানিজ স্ত্রী আলিন স্কাফ ও সন্তানদের নিয়ে সিরিয়ায় বসবাস করছিলেন। কিন্তু স্থানীয় একটি সশস্ত্র গ্রুপ তাঁকে অপহরণ করে লেবানন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়। তখন থেকেই তিনি লেবাননের কারাগারে আছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মামদানিকে ভোট না দিতে নিউইয়র্কের ইহুদিদের প্রতি ট্রাম্পের আহ্বান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানিকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি স্থানীয় ইহুদিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁরা যেন মামদানিকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। ট্রাম্পের মতে, মামদানিকে ভোট দেওয়া মানে ‘বোকামি’।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘জোহরান মামদানি একজন ইহুদিবিদ্বেষী। এটা জেনেও কোনো ইহুদি ব্যক্তি যদি তাকে ভোট দেয়, তাহলে সে স্বঘোষিত ও প্রমাণিত ইহুদিবিদ্বেষী। সেই সঙ্গে সে একজন বোকা মানুষ!!!’

এর আগে গত রোববার (২ নভেস্বর) মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএসের ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি নিউইয়র্কে একজন কমিউনিস্ট মেয়র হয়, তাহলে ওখানে অর্থ পাঠানো মানে সেই অর্থের অপচয় করা। তাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিউইয়র্কে অনেক অর্থ দেওয়া আমার জন্য কঠিন হবে।’

ওই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি বিল দে ব্লাসিওকে দেখেছি—কতটা খারাপ মেয়র ছিলেন তিনি। কিন্তু মামদানি দে ব্লাসিওর চেয়ে খারাপ।’

ট্রাম্প নিজে নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় বেড়ে উঠেছেন। যদিও তিনি একজন রিপাবলিকান, সাক্ষাৎকারে কার্যত তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকেই সমর্থন দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কুমোর ভক্ত নই, তবে যদি খারাপ এক ডেমোক্র্যাট আর এক কমিউনিস্টের মধ্যে বেছে নিতে হয়, তাহলে আমি সব সময় খারাপ ডেমোক্র্যাটকেই বেছে নেব।’

৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি নিজেকে ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় দেন। তবে তিনি কমিউনিস্ট হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে রসিকতা করে তিনি বলেন, ‘আমি মূলত এক স্ক্যান্ডিনেভীয় রাজনীতিকের মতো; শুধু একটু গা-চামড়ায় বাদামি।’

আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৩৪ বছর বয়সী মামদানি নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার দৌড়ে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত