Ajker Patrika

তোশাখানা মামলার রায়ে চ্যালেঞ্জ বুশরা বিবির

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫: ১১
তোশাখানা মামলার রায়ে চ্যালেঞ্জ বুশরা বিবির

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) তোশাখানা মামলার রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছেন। পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।

এর এক দিন আগেই তোশাখানা ও সাইফার মামলায় দোষী সাব্যস্তের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করেন ইমরান খান।

তোশাখানা দুর্নীতির এক মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে ১৪ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন পাকিস্তানের জবাবদিহি আদালত। রায়ে ইমরান ও বুশরাকে ১০ বছরের জন্য সরকারি পদে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া দুজনকে ১৫৪ কোটি পাকিস্তানি রুপি জরিমানা করা হয়েছে।

গতকাল আপিল দায়েরের সময় বুশরা বিবি দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ের পেছনে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের ইন্ধন ছিল। তিনি আরও দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক নিয়ন্ত্রক সৈয়দ ইনামুল্লাহ শাহের মিথ্যা বিবৃতির ওপর ভিত্তি করেই তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।

বুশরা বিবির মতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাঁর সামরিক সচিবকে তোশাখানায় গ্রাফট জুয়েলারি সেট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু মামলার কৌঁসুলিরা অভিযোগ করেন, জুয়েলারি সেটটি জমা করা হয়নি। আপিলের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সাজা স্থগিতের জন্য আদালতকে অনুরোধ বুশরা বিবি।

অন্যদিকে, আপিলে ইমরান খান দাবি করেন যে, তাঁদের কৌঁসুলিরা আদালতকে পূর্ণ সহায়তা দিলেও ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করেই পরিচালিত হয়েছিল তাঁর মামলা।

আরও অভিযোগ করা হয় যে, উন্মুক্ত বিচারের জন্য ইসলামাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশ থাকার পরও জনসাধারণ, মিডিয়া ইত্যাদিকে নির্দ্বিধায় বিচারের সাক্ষী হতে দেওয়া হয়নি, বরং সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ও তাদের আইনজীবীদের না জানিয়েই আদালতের কক্ষ পরিবর্তন করে গোপনে কার্যক্রম পরিচালনা করে হয়েছিল।

সরকারি উপহার সংরক্ষণাগার তোশাখানায় থাকা উপহারসামগ্রী এবং বিক্রয় থেকে আয়ের বিশদ বিবরণ প্রকাশ না করার অভিযোগে ক্ষমতাসীন জোট সরকার ২০২২ সালের আগস্টে ইমরানের বিরুদ্ধে স্পিকারের কাছে অভিযোগ দেয়। তিনি পরে সেটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সিকান্দার সুলতান রাজার কাছে পাঠান।

তবে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া লিখিত জবাবে ইমরান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর প্রাপ্ত কমপক্ষে চারটি উপহার বিক্রি করার কথা স্বীকার করেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাঁর জবাবের সপক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ২১.৫৬ মিলিয়ন রুপি দিয়ে উপহারগুলো সংগ্রহ করেছিলেন, তা বিক্রি করে প্রায় ৫৮ মিলিয়ন রুপি পাওয়া গেছে। উপহারগুলোর মধ্যে রয়েছে—একটি গ্রাফ হাতঘড়ি, এক জোড়া কাফ লিংক, একটি দামি কলম এবং একটি আংটি—এসব মিলিয়ে একটি সেট; অন্য তিনটি উপহারের মধ্যে রয়েছে চারটি রোলেক্স ঘড়ি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘গ্রে জোনে’ হাজার হাজার রুশ সেনা, কোণঠাসা ইউক্রেনের বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পোকরোভস্ক শহরটি দখলে নিতে পারলে রাশিয়া পুরো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য সুবিধা পেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
পোকরোভস্ক শহরটি দখলে নিতে পারলে রাশিয়া পুরো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য সুবিধা পেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরোভস্কে রুশসেনারা বড় ধরনের আক্রমণ চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেনারেল ওলেক্সান্দর সিরস্কি। এই শীর্ষ সামরিক কমান্ডার আরও জানান, তাঁর সেনারা সেখানে ‘বিরূপ পরিস্থিতি’র মুখোমুখি হয়েছে। হাজার হাজার রুশ সেনা সেখানে অবস্থান নেওয়ায় তাঁরা অবরুদ্ধ অবস্থায় পড়েছে।

‘গ্রে জোন’-এ পরিণত হওয়া পোকরোভস্ক শহর একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন ও সরবরাহ কেন্দ্র। শহরটি দখল করতে পারলে রাশিয়া পুরো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য সুবিধা পেতে পারে।

এদিকে মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ইউক্রেনীয় সেনারা আত্মসমর্পণ করছে এবং হেলিকপ্টারে নেমে আসার পর তাদের ১১ জন বিশেষ বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছে। তবে কিয়েভ এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

শনিবার টেলিগ্রামে দেওয়া পোস্টগুলোতে জেনারেল সিরস্কি জানান, পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক অঞ্চলে অবস্থানরত সামরিক কমান্ডারদের কাছ থেকে সরাসরি সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে তিনি আবারও ফ্রন্টলাইনে ফিরে গেছেন।

রুশ বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ লাইনে হামলা করতে থাকায় সেগুলো রক্ষায় বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান কমান্ডার।

স্বল্পদৈর্ঘ্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সিরস্কি ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভসহ অন্যান্য কমান্ডারদের সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রের মানচিত্র পর্যালোচনা করছেন। তবে ভিডিওটি কবে এবং কোথায় ধারণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য পায়নি বিবিসি।

রাশিয়া এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দখল করার চেষ্টা করছে। আর বিশেষ বাহিনী মোতায়েনের এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, কিয়েভ যেকোনো মূল্যে ওই শহরটি ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

বিশেষ বাহিনীর অভিযানের তত্ত্বাবধান করতে ওই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভের অবস্থান নেওয়া সম্পর্কে ইউক্রেনীয় গণমাধ্যম আগেই জানিয়েছিল।

গতকাল শনিবার ইউক্রেনের ৭ম র‍্যাপিড রেসপন্স কর্পস জানিয়েছে, পোকরোভস্কে ইউক্রেনীয় সেনারা তাদের ‘কৌশলগত অবস্থান উন্নত করেছে’, তবে পরিস্থিতি এখনো ‘কঠিন ও পরিবর্তনশীল’।

এর আগে শুক্রবার রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন, পোকরোভস্কের প্রতিরক্ষা এখন ‘অগ্রাধিকারমূলক’ বিষয়।

রাশিয়া-দখলকৃত আঞ্চলিক রাজধানী দোনেৎস্কের পশ্চিমে অবস্থিত এই কৌশলগত শহরটিতে রুশ অগ্রগতির খবর ক্রমেই বাড়ছে।

শুক্রবার রাতে সংবাদ সংস্থাগুলোর সঙ্গে শেয়ার করা কিছু ছবিতে দেখা গেছে, একটি ইউক্রেনীয় ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার পোকরোভস্কের কাছে প্রায় ১০ জন সেনাকে নামাচ্ছে। যদিও ছবিগুলোর স্থান ও সময় যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা পোকরোভস্ক শহরের উত্তর-পশ্চিমে ইউক্রেনীয় সামরিক গোয়েন্দা বিশেষ বাহিনীর অবতরণ প্রচেষ্টা নস্যাৎ করেছে এবং হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসা ১১ জন সেনাকে হত্যা করেছে।

ইউক্রেনের ওপেন-সোর্স মনিটরিং গ্রুপ ডিপস্টেট অনুমান করছে, পোকরোভস্কের প্রায় অর্ধেক এলাকা এখন ‘গ্রে জোন’-এ পরিণত হয়েছে, যেখানে কোনো পক্ষই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই।

দোনেৎস্কের এক সামরিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী ঘেরাও হয়ে পড়েনি, তবে তাদের সরবরাহ লাইনগুলোতে রুশ সেনারা গোলাবর্ষণ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) জানিয়েছে, সাম্প্রতিক পাল্টা আক্রমণে পোকরোভস্কের উত্তরে ইউক্রেনীয় বাহিনী সামান্য অগ্রগতি করেছে, তবে শহরটি এখনও মূলত বিতর্কিত ‘ধূসর এলাকা’ হিসেবেই রয়ে গেছে।

মস্কো চাইছে দোনেৎস্ক ও পার্শ্ববর্তী লুহানস্ক অঞ্চল (যা সম্মিলিতভাবে দনবাস নামে পরিচিত) কিয়েভ শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়ার হাতে তুলে দিক, এমনকি সেই অংশগুলোও যেগুলো বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে নেই।

কিয়েভের ধারণা, পোকরোভস্ক দখলের মাধ্যমে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে চায় যে তাদের সামরিক অভিযান সফল হচ্ছে এবং সেই যুক্তিতে পশ্চিমা দেশগুলো যেন রাশিয়ার দাবিগুলো মেনে নেয়।

এদিকে ক্রেমলিনের শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিতে ব্যর্থতার কারণে ওয়াশিংটন ক্রমবর্ধমানভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এর ফলশ্রুতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নির্ধারিত শীর্ষ বৈঠকের পরিকল্পনাও বাতিল করেছেন।

জেলেনস্কি প্রকাশ্যে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছেন, যার মাধ্যমে বর্তমান ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ থামিয়ে সংঘাতটিকে স্থিতাবস্থায় আনার কথা বলা হয়েছে।

তবে পুতিন এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি এখনো সেই দাবিগুলোতেই অনড় রয়েছেন, যেগুলো কিয়েভ ও এর পশ্চিমা মিত্ররা ইউক্রেনের বাস্তবিক আত্মসমর্পণ হিসেবে দেখছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাজ্যে চলতি ট্রেনে ছুরিকাঘাত, গুরুতর আহত ৯

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ০৬
ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে চলতি ট্রেনে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। ছবি: এএফপি
ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে চলতি ট্রেনে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। ছবি: এএফপি

ইংল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলের কেমব্রিজের কাছে এক ট্রেনে সিরিজ ছুরিকাঘাতের ঘটনায় ৯ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার রাতে এই ঘটনা ঘটে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার একে ‘ভয়াবহ ঘটনা’ আখ্যা দিয়েছেন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ জানিয়েছে, পুরো ঘটনার পটভূমি ও উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখতে সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট তদন্তে সহায়তা করছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর ‘প্লেটো’ নামে একটি বিশেষ সতর্ক সংকেত জারি করা হয়। এ সংকেতটি সাধারণত বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা দেখা দিলে দেওয়া হয়। পরে সেটি প্রত্যাহার করা হয়। হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু জানায়নি পুলিশ।

ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশের প্রধান সুপারিনটেনডেন্ট ক্রিস কেইসি বলেন, ‘ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে তা জানার জন্য জরুরি তদন্ত চলছে। এ মুহূর্তে কোনো অনুমান করা ঠিক হবে না।’

কেমব্রিজশায়ার পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৯ মিনিটে হান্টিংডন স্টেশনে জরুরি কল পেয়ে সশস্ত্র পুলিশ সেখানে পৌঁছায়। তারা ট্রেনটি থামিয়ে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। ইস্ট অব ইংল্যান্ড অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস জানায়, ঘটনাস্থলে বড় আকারের উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছে। সেখানে বহু অ্যাম্বুলেন্স, কৌশলগত কর্মকর্তা ও বিপজ্জনক এলাকা উদ্ধার দল পাঠানো হয়েছে। সংস্থাটি নিশ্চিত করেছে, একাধিক আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি দেখেছেন একজন যাত্রী দৌড়ে সবাইকে সতর্ক করছেন—‘ওদের হাতে ছুরি, আমাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।’ প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, ওই ব্যক্তির ‘পুরো শরীর রক্তাক্ত’ ছিল। ট্রেন থামার আগেই তিনি মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়।

অন্য কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আহত যাত্রীরা ছুরি হাতে থাকা হামলাকারীর কাছ থেকে দৌড়ে পালাচ্ছিলেন। পরে দেখা যায়, সশস্ত্র পুলিশ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বড় ছুরি হাতে এক ব্যক্তির দিকে অস্ত্র তাক করেছে। পরে তাঁকে টেজার গান দিয়ে অচল করে আটক করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছেন, ছয় থেকে আটজন আহত হয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, আহত ব্যক্তিদের সংখ্যা ১২ পর্যন্ত হতে পারে। পুলিশ জানিয়েছে, হামলাটি ঘটেছে ডনকাস্টার থেকে লন্ডন কিংস ক্রসগামী সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটের ট্রেনে, পিটারবোরো স্টেশন ছাড়ার কিছুক্ষণ পর।

প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ‘এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি লেখেন, ‘হান্টিংডনের কাছে ট্রেনে যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগের। আহতদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই এবং জরুরি সেবাদানকারী সব দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এলাকাবাসীকে পুলিশের নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়া ‘আক্রমণের প্রস্তুতি’ নিতে যুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে ট্রাম্পের নির্দেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ২৮
নাইজেরিয়ায় আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে পেন্টাগণকে নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
নাইজেরিয়ায় আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে পেন্টাগণকে নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার বলেছেন, তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক আক্রমণের জন্য প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করছেন, দেশটি খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে যথেষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছে না। নাইজেরিয়া এই অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, নাইজেরিয়ায় ‘খ্রিষ্টানদের ব্যাপক হারে হত্যা’ করা হচ্ছে। এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ না দিয়েই তিনি লেখেন, যুক্তরাষ্ট্র নাইজেরিয়ায় ‘তৎক্ষণাৎ সব সাহায্য ও সহায়তা বন্ধ করে দেবে’। তিনি নাইজেরিয়ার সরকারকে এই সমস্যা সমাধানে ‘দ্রুত কাজ করতে’ সতর্ক করেছেন।

নাইজেরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘সম্ভবত এখনই সেই কলঙ্কিত দেশে অস্ত্র হাতে ঢুকে সেই ইসলামি জঙ্গিদের পুরোপুরি ধ্বংস করে দেবে, যারা এই ভয়াবহ অপরাধ করছে।’

তবে বাস্তবতা বলছে, দুই ধর্মের মানুষই হামলার শিকার হয়েছে—খ্রিষ্টান ও মুসলমান দুই সম্প্রদায়ই। দেশটিতে সহিংসতার কারণ ভিন্ন ভিন্ন। কিছু ঘটনা ধর্মকে ব্যবহার করে সৃষ্ট। কিছু সংঘর্ষ কৃষক ও গবাদি পশুপালকদের মধ্যে সংকুচিত সম্পদের জন্য। এ ছাড়া আছে সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত উত্তেজনাও। যদিও খ্রিষ্টানরা লক্ষ্যবস্তু হয়েছে, তবে স্থানীয় প্রতিবেদনগুলো বলছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিকার মুসলিম। তারা মূলত দেশটির উত্তরাঞ্চলে বসবাস করে, যা প্রধানত মুসলিম অধ্যুষিত।

ট্রাম্প আরও হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে আমাদের ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার বা যুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে সম্ভাব্য পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিচ্ছি। যদি আমরা আক্রমণ করি, তা হবে দ্রুত, নৃশংস এবং মিষ্টি—ঠিক যেমন জঙ্গিরা আমাদের প্রিয় খ্রিষ্টানদের ওপর হামলা করে! সতর্কতা: নাইজেরিয়ার সরকার তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নাও।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পের এই মন্তব্যের স্ক্রিনশট পোস্ট করে লিখেছেন, ‘জি, স্যার।’

এর আগে গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টান ধর্ম এক অস্তিত্বের সংকটের মুখে। হাজার হাজার খ্রিষ্টানকে হত্যা করা হচ্ছে। কট্টর ইসলামপন্থীরা এই গণহত্যার জন্য দায়ী। আমি এই কারণে নাইজেরিয়াকে একটি “বিশেষ উদ্বেগের দেশ” ঘোষণা করছি।’

তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন, ১৯৯৮-এর অধীনে এই সিপিসি ক্যাটাগরি তৈরি করা হয়েছিল ধর্মীয় নিপীড়ন পর্যবেক্ষণ এবং তা বন্ধ করার পক্ষে কথা বলার জন্য। সাধারণত কংগ্রেস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দ্বিদলীয় গ্রুপ ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘ সুপারিশের ভিত্তিতেই এই তকমা দেওয়া হয়।

ট্রাম্প এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মতামত না নিয়েই দ্রুত তদন্তের জন্য হাউস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস কমিটি এবং দুই রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য—রিপ্রেজেনটেটিভ রাইলি মুর ও টম কোলকে নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্পের এই অভিযোগগুলো ডানপন্থী আইনপ্রণেতারা বহু দিন ধরে প্রচার করে আসছেন। তাঁদের ভাষ্য, যা নাইজেরিয়ার অভ্যন্তরীণ সংঘাতকে কেবল কট্টর ইসলামপন্থীদের দ্বারা খ্রিষ্টানদের ওপর আক্রমণ হিসেবে তুলে ধরে।

নাইজেরিয়া মূলত দুটি অংশে বিভক্ত: সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর এবং প্রধানত খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দক্ষিণ। এক দশকের বেশি সময় ধরে উগ্রবাদী গোষ্ঠী বোকো হারামের সহিংস আক্রমণের ফলে দেশটি চরম অস্থিরতা ও বাস্তুচ্যুতির সম্মুখীন হয়েছে। এর পাশাপাশি পানি ও চারণভূমির মতো সম্পদের সংকট নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছে। এর ফলে প্রধানত খ্রিষ্টান কৃষক এবং মুসলিম পশুপালকদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নাইজেরিয়া সরকার দাবি করে, এই সংঘর্ষগুলোতে প্রাথমিকভাবে ধর্মের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চুক্তি ভেঙে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল, চালাচ্ছে হামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলি আগ্রাসনে তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে গাজাবাসী। তারপরও ত্রাণের আশায় বিভিন্ন জায়গায় এভাবেই ভিড় করে থাকে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি: আনাদোলু
ইসরায়েলি আগ্রাসনে তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে গাজাবাসী। তারপরও ত্রাণের আশায় বিভিন্ন জায়গায় এভাবেই ভিড় করে থাকে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি: আনাদোলু

গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল এখন পর্যন্ত চুক্তিতে নির্ধারিত মানবিক সহায়তার খুব অল্প অংশই গাজায় ঢুকতে দিয়েছে। শনিবার এক বিবৃতিতে গাজার সরকারি জনসংযোগ কার্যালয় জানিয়েছে, চুক্তিতে প্রতিশ্রুত পরিমাণের খুব সামান্য অংশ ত্রাণই গাজায় ঢুকতে দিয়েছে ইসরায়েল।

গাজার সরকারি জনসংযোগ কার্যালয় জানিয়েছে, ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩ হাজার ২০৩টি বাণিজ্যিক ও ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। অর্থাৎ, গড়ে দিনে ১৪৫টি ট্রাক ঢুকতে পেরেছে। অথচ, চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ৬০০টি ট্রাক প্রবেশের কথা ছিল। অর্থাৎ মাত্র ২৪ শতাংশ সহায়তাই গাজায় ঢুকেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর এই বাধার কঠোর নিন্দা জানাই। ২৪ লাখের বেশি মানুষের ওপর যে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে, তার পূর্ণ দায় ইসরায়েলের।’ গাজার কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে মানবিক সহায়তা বিনা শর্তে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।

যুদ্ধবিরতির পর ত্রাণের পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও গাজার মানুষ এখনো খাদ্য, পানি, ওষুধসহ জরুরি জিনিসের তীব্র সংকটে ভুগছে। অনেক পরিবার এখনো আশ্রয়হীন। তাদের বাড়িঘর ও মহল্লা ইসরায়েলের দুই বছরের ধারাবাহিক হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র ফারহান হক বৃহস্পতিবার জানান, ইসরায়েলের নির্দেশে ত্রাণবাহী কনভয়ের রুট পরিবর্তনের কারণে সহায়তা বিতরণ সীমিত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘এখন সব কনভয়কে মিসরের সীমান্তঘেঁষা ফিলাডেলফি করিডর দিয়ে যেতে হচ্ছে, তারপর সংকীর্ণ উপকূলীয় সড়ক ধরে গাজায় ঢুকতে হচ্ছে। এই সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত ও অতিরিক্ত ভিড়ে ঠাসা।’

জাতিসংঘ বলেছে, ত্রাণ কার্যক্রম বাড়াতে নতুন প্রবেশপথ ও অভ্যন্তরীণ রুট দরকার। অন্যদিকে, যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙে ইসরায়েলি সেনারা গাজাজুড়ে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল শনিবার ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান, ট্যাংক ও কামান দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এলাকায় গোলাবর্ষণ করে। উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পের পূর্বে বেশ কিছু আবাসিক ভবনও ধ্বংস করেছে।

আল–জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম জানান, খান ইউনিসে প্রত্যক্ষদর্শীরা ‘নিরবচ্ছিন্ন ভারী গোলাবর্ষণ ও ড্রোন হামলার’ কথা বলেছেন, যা এখনো বসতবাড়ি ও কৃষিজমিতে চলছে। তিনি আরও জানান, গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা বলেছে, ইসরায়েলি ড্রোনের কারণে তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারছে না। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ৫৯৪ জন।

ইসরায়েলি নেতারা বলছে, হামাস যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে, কারণ তারা সব মৃত ইসরায়েলি বন্দীর মরদেহ ফেরত দেয়নি। হামাসের দাবি, গাজার ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ও ইসরায়েলের বাধার কারণে মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ জটিল হয়ে পড়েছে। শুক্রবার রাতে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি জানিয়েছে, তারা হামাসের কাছ থেকে পাওয়া তিনজনের মরদেহ ইসরায়েলে হস্তান্তর করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানায়, পরীক্ষায় দেখা গেছে এই মরদেহগুলো অবশিষ্ট ১১ জন মৃত ইসরায়েলি বন্দীর মধ্যে কারও নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত