Ajker Patrika

কাশ্মীরে হামলার অভিযোগ অস্বীকার, দায় স্বীকারের বার্তাকে সাইবার অ্যাটাক বলল টিআরএফ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ২৩: ১৬
পেহেলগামের ঘটনার পর থেকে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ছবি: সংগৃহীত
পেহেলগামের ঘটনার পর থেকে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তাইয়েবার সহযোগী সংগঠন হিসেবে পরিচিত দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। সংগঠনটি তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ‘মিথ্যা, প্রমাণ ছাড়া তড়িঘড়ি করে দায় চাপানো ও কাশ্মীরি প্রতিরোধকে হেয় করার জন্য সাজানো অভিযানের অংশ’ বলে আখ্যায়িত করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আজ শনিবার (২৬ এপ্রিল) এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে গোষ্ঠীটি দাবি করে, ঘটনার পরপরই তাদের একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে অননুমোদিত বার্তা পোস্ট করা হয়েছিল। এই পোস্ট ছিল ‘সমন্বিত সাইবার আক্রমণের ফল, যা ভারতের ডিজিটাল যুদ্ধাস্ত্রের একটি পরিচিত কৌশল।’

অন্যদিকে এই পোস্টের ভিত্তিতেই বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর চালানো ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নামে পরিচিত ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। ২০১৯ সালে আত্মপ্রকাশ করা এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার (LeT) একটি শাখা বা সহযোগী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, টিআরএফ সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন ফোরামগুলোতে ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নাম ব্যবহার করে এবং সেখানেই তারা ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় গতকালের হামলার দায় স্বীকার করেছে।

কিন্তু টিআরএফ দাবি করেছে, ‘একটি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার পর আমরা প্রমাণ পেয়েছি, এটি সমন্বিত সাইবার আক্রমণের ফল।’ তারা জোর দিয়ে বলেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে এই পোস্টের পেছনে ‘ভারতীয় সাইবার-গোয়েন্দা কর্মীদের আঙুলের ছাপ’ পাওয়া গেছে। টিআরএফ আরও অভিযোগ করেছে, এ ধরনের কৌশল নতুন নয় এবং ভারত অতীতেও ‘নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি’ করেছে।

টিআরএফ জানিয়েছে, তারা এ ঘটনার পেছনের কারণ ও উৎস খুঁজে বের করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।

এদিকে এই হামলার ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তান প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। ভারত এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং তাদের বিরুদ্ধে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করা। এ ছাড়া আটারি-ওয়াঘা সমন্বিত চেকপোস্ট বন্ধ করা, সার্ক ভিসা স্কিমে নিষেধাজ্ঞা, পাকিস্তানি হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা বা সামরিক কর্মকর্তাদের (নৌ ও বিমান) ‘পার্সোনা নন-গ্রাটা’ বা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা উল্লেখযোগ্য।

পাল্টা হিসেবে পাকিস্তানও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন তারা ভারতীয় বিমান সংস্থার জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমার ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া শিমলা চুক্তিসহ সব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিত করারও হুমকি দেয়।

এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে ‘নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য তদন্তে’ অংশ নিতে ইসলামাবাদের প্রস্তুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। অ্যাবোটাবাদে একটি সামরিক একাডেমিতে তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তান যেকোনো নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত।’ তিনি আরও বলেন, ‘পেহেলগামের সাম্প্রতিক ট্র্যাজেডি এই চলমান দোষারোপের খেলার আরেকটি উদাহরণ, যা অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত...একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে পাকিস্তান যেকোনো নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত।’

প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়ে বলেন, তারা ‘দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সম্পূর্ণ সক্ষম ও সর্বদা প্রস্তুত। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বেপরোয়া অনুপ্রবেশ ঠেকিয়ে দিয়ে আমাদের সেনাবাহিনী এর প্রমাণ দিয়েছে।’

প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ খ্যাত পেহেলগামের বাইসারান অঞ্চলে পর্যটকদের ওপর বর্বর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এতে ২৬ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত