Ajker Patrika

তুরস্কের বিরুদ্ধে মেঘ চুরির অভিযোগ করছেন খরা কবলিত ইরানিরা

আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ২৩: ৪০
তুরস্কের বিরুদ্ধে মেঘ চুরির অভিযোগ করছেন খরা কবলিত ইরানিরা

পাশাপাশি দুটি দেশ ইরান ও তুরস্ক। সীমান্তের এক পাশে তুরস্কের আকাশে মেঘের ঘনঘটা আর পর্বতশৃঙ্গ তুষার আবৃত। সীমান্তের আরেক পাশেই ইরানের আকাশে মেঘের ছিটেফোঁটাও নেই, দেশজুড়ে চলছে খরা। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে জলবায়ুর ধরনে এত পার্থক্য কেন? এ নিয়ে ইরানিরা নানা প্রশ্ন তুলছে।

কেউ কেউ বলছে, তুর্কিরা কোনো ভাবে ইরানের মেঘ চুরি করছে! ‘মেঘ চুরি’ বলতে এমন বিশ্বাস বা অভিযোগকে বোঝায় যে, একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে ভারী মেঘ তাড়িয়ে নিজেদের এলাকায় নিতে প্রযুক্তির ব্যবহার।

ক্লাউড সিডিংয়ের মাধ্যমে এ চুরি সম্ভব। ক্লাউড সিডিং হলো একটি কৃত্রিমভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তন কৌশল, যেভাবে হালকা মেঘের ভেতরে এমন কিছু উপাদান ছড়িয়ে দেওয়া হয় যাতে মেঘ ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি বা তুষার হয়ে ঝরার উপযোগী হয়।

তবে এ প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। ক্লাউড সিডিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি ঝুঁকির কথাও উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

যুক্তরাষ্ট্রের মেইনে অবস্থিত কলবি কলেজের আবহাওয়া বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানের ঐতিহাসিক জেমস ফ্লেমিং বলেন, ‘ক্লাউড সিডিংয়ের সবচেয়ে বিরূপ প্রভাব হলো, এতে সন্দেহের অবকাশ থাকে যে, পার্শ্ববর্তী দেশ বৃষ্টি চুরির চেষ্টা করছে বা গোপনে পরিবেশগত বিরোধ বাঁধানোর চেষ্টা করছে।’

ফ্লেমিং আরও বলেন, ‘মেঘ কখনো এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকে না। এগুলো ক্ষণস্থায়ী যা গতিশীল পরিবেশে গঠিত এবং ক্রমাগত মিলিয়ে যেতে থাকে।’

তবে যে দেশের মেঘে ক্লাউড সিডিং করা হচ্ছে কোনো নিশ্চয়তা নেই যে, ওই দেশেই বৃষ্টি নামবে। কারণ মেঘ আকাশে ভেসে বেড়াতে থাকে।

মধ্যপ্রাচ্যে তীব্র খরা ও কম বৃষ্টিপাতের কারণে দেশগুলো তাদের আকাশের মেঘ থেকে যত বেশি সম্ভব বৃষ্টি নামানোর বিকল্প সব ব্যবস্থা যাচাই করে দেখছে। ইরান, তুরস্ক, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো আবহাওয়া পরিবর্তন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ কারণে চলমান উত্তেজনার মধ্যে নতুন করে পরিবেশগত শত্রুতার দুয়ার আরও উন্মোচিত হতে পারে।

ইরানে মেঘ চুরির বিষয়টি এর আগেও অনেকবার শিরোনাম হয়েছে। ইরানে খরার জন্য দেশটির সরকার বেশ কয়েকটি দেশকে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী বলে সন্দেহ করে আসছে। এর আগে ২০১৮ সালে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দেশটির জলবায়ুতে পরিবর্তন এবং মেঘ ও তুষার চুরির জন্য ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে দোষারোপ করেছিলেন।

এর কয়েক বছর আগে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। তিনি দাবি করেন, শত্রুরা কোনো না কোনো ভাবে ইরানের মেঘ ধ্বংস বা সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তবে এ দুই দাবিই উড়িয়ে দিয়েছিল ইরানের আবহাওয়া অধিদপ্তর ও অন্যান্য পরিবেশ সংক্রান্ত সংগঠন।

জাতিসংঘের ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট ফর ওয়াটার, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হেলথের পরিচালক কাবেহ মাদানি বলেন, ইরান ও তুরস্কের মধ্যে দুই ধরনের আবহাওয়া বিরাজ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় কাজ করে। বেশি বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে কোনো দেশের কাছাকাছি কয়টি সমুদ্র আছে, বায়ু কোন দিকে প্রবাহিত হয় এবং উচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কতটা কাছে—এসব প্রভাব ফেলে।

ইরানের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এ বছর শীতকালে ইরানের গড় বৃষ্টিপাত সন্তোষজনক নয়। দীর্ঘ সময়ের তুলনায় এবার শীতে বৃষ্টিপাত ৬২ শতাংশ কমে হয়েছে। তবে ইরানের এমন খরা নতুন নয় এবং কেউ তাদের মেঘও চুরি করছে না। গত গ্রীষ্মেও ইরানের বেশ কয়েকটি প্রদেশে খরা দেখা দেয়। অনেক মানুষই রাস্তায় দাঁড়িয়ে লাইন ধরে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করেছে।

২০২১ সালে ইরানের দক্ষিণ পশ্চিমে ও মধ্য ইরানে নদী, হ্রদ ও জলাশয় শুকিয়ে পানির ঘাটতি এতটাই প্রকট হয়ে যায় যে, দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখা দেয়। তৃষ্ণার্ত উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে নিরাপত্তা বাহিনীর বল প্রয়োগ করতে হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত